![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বন্ধুত্ব কি ? এক বিখ্যাত মনীষী বলতে চেয়েছেন ," Friendship is a type of relationship between two who care about each other"
সত্য কথা । তবে শুধু কেয়ার টা থাকলেই হবে না সাথে সেক্রিফাইস আর প্যারা দেওয়ার অসাধারন ক্ষমতাও থাকতে হবে ।
আমার ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়া হয় নি , আগেই অনেক লেখায় বলেছি । ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি হলাম নতুন এক স্কুলে মে বি ৪৮ বা ৪৯ নং পশ্চিম ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হবে । নেকজাহান প্রাইমারি হিসেবেই সর্বজন স্বীকৃত । স্কুল নতুন হলেও বেশীর ভাগ ছাত্র ছাত্রী আগে থেকেই পরিচিত ছিল , তাই আর খুব একটা নতুন লাগে নি ।তবে টিচার সবাই নতুন ।টিচার বলতে সবাই শিক্ষিকা । অর্থাৎ পুরুষ বিহীন টিচার প্যানেল । প্রথম দিন ভর্তি হওয়ার সময় পান খেতে খেতে চমৎকার ভাষায় প্রশ্ন ছুড়তে থাকলো ঝর্না ম্যাডাম , আমাদের প্রধান শিক্ষিকা। নতুন স্কুল সম্পর্কে যতটা উচ্ছাস নিয়ে এসেছিলাম , ততোটাই মিইয়ে যেতে থাকলাম প্রশ্নবাণে । ম্যাডাম একের পর এক ইয়রকার ,বাউন্সার ,আউটসুইং দিচ্ছে আর আমি বলে বলে পরাস্থ হচ্ছি ।ম্যাডাম বলে , ট্রান্সসিলেশন কর মুসুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে , আমি ম্যাডামের পিছনে দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ফকফকা রোদ
। উনি জিজ্ঞাস করেন বল ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল , আমি চিন্তা করি তাহলে আর ডাক্তার আইসা কি লাভ হইল
মাঝখান থেকে মনে হয় ভিজিটের টাকাটা গেল । উনি জিজ্ঞাস করেন সম্পূরক কোন কি , আমি ভাবি এই টা বাংলা না সমাজ থেকে প্রশ্ন করল ? কিন্তু যখন দেখলাম শেষে কোন আছে পটাপট বলে দিলাম যে কোন চাদার সম্পূর্ণ অংশ কেই সম্পূরক কোন বলে, কেননা আমার কাছে তখন কোণ মানেই চাঁদা
। আমার উত্তর শুনে আব্বু চিন্তিত হইলেন ,আর ম্যাডাম চূড়ান্ত রকমের হতাশ হইলেন । শেষ পর্যন্ত অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবন করে সিদ্ধান্ত জানাইলেন , ভর্তি করা যাবে কিন্তু পড়তে হবে । আব্বুও বেশ শাসিয়ে দিলেন পড়তে হবে ।
তো ক্লাস শুরু হল লাইলি ম্যাডামের ইংরেজি ক্লাস দিয়ে । অনেকদিন না পড়ায় আমি সব ভুলে গেছি । কিছু পারি না আর ম্যাডাম আমার দিকে হতাশার দৃষ্টি নিয়ে তাকায় , আমি ও বাধ্য ছেলের মত ম্যাডাম কে পুনঃপুন হতাশ করে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে পাশের চালের কলের দিকে তাকিয়ে থাকি । তবে গানে গানে ভরপুর বুলবুলি ম্যাডামের ক্লাস ছিল অতি চমৎকার । সবাই তালি দিতাম আর গাইতাম ,We shall over come, We shall over come , We shall over come... someday ... কিন্তু দুঃখিত ম্যাডাম আমি এখনো কিছুই অভারকাম করতে পারি নি বরং সব জট পাকিয়ে ফেলেছি ।
তবে নুরী ম্যাডামের ক্লাস ছিল অতিব সুন্দর , ঐ ক্লাস থেকেই মূলত শিখেছি কিভাবে ক্লাসের সময়কে মূল্যবান করে তুলতে হয় , কিভাবে আড্ডা ঘুমে ক্লাস পার করিতে হয় ।তবে এ সময় বেশ কিছু ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ । সাইম নামে এক ছেলে ছিল যার কাজ ছিল নানা রকমের অপকর্ম করে সর্বদা পরিবেশ উত্তপ্ত রাখা , তবে আমাদের লাইলি ম্যাডামও কম কীসের ? নাখে খদ দেওয়া , এক পায়ে বেঞ্চের উপর দাঁড়ানো হেন কোন ব্যবস্থা নেই যে উনি ব্যবহার করেন নি । কিন্তু সাইম ছিল রিয়েল প্ল্যেয়ার । এত সহজে হার মানবে কেন ? প্রতিদিন নিত্য নতুন ফন্দি আঁটত । আর ম্যাডামও ওর পেছনে দিব্যি লেগে থাকতো ।
ক্লাসের প্রথম দিকে দুটি বেঞ্চ এক সাথে করে আমরা ৪ জন বসতাম । একজন শাওন , বিয়ে ঠা করে এখন সন্তানের বাবা । তবে ওর বিয়ে টা বেশ রোমাঞ্চের যোগান দিয়েছে । সেদিকে আর না যায় । তবে ছেলেটার কাছে আমি কৃতজ্ঞ , সমস্ত স্কুল লাইফ ও আমাকে সাইকেলের পেছনে নিয়ে ঘুরেছে।সুখী পরিবার হোক তোর ।
বাকি ২ জন শান্ত আর মেহেদী । একজন আগাগোড়া নিরামিষ , তবে এখন প্রেমটেম করে বেশ আমিষবান হচ্ছে , তবে মনে হয় ছেলেটার সমস্যা ছিল, না হলে বছরের পর বছর একটা ছেলে ফাস্ট হয় কি করে ? আর একজন মেহেদী । আমার মা বাবা আত্মীয়স্বজন বাদ দিলে ওর সাথে আমার সব থেকে দীর্ঘ সম্পর্ক , সেই প্লে গ্রুপ থেকে ।ওর বিষয়ে আর একটু পরে আসবো ।তারপর কোন রকম পাস পুস করে ৫ম শ্রেণীতে উঠলাম । এবার বেশ ঝামেলায় পড়ে গেলাম বৃত্তি নামক এক বৃত্তে , আর সুযোগ নাই এখন পড়তে হবে ।
মেহেদী ই প্রথম ইসলামপুর অজিত ও সাইফুল স্যার এর বৃত্তি কোচিং এর খোজ আনে । শুরু হল নতুন জীবন । উত্তেজনায় ভরপুর । রিক্সা ঠিক করা হল প্রতিদিন ৪ জন মিলে কোচিং এ যাই । এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে , সেই কচি বয়েসেই আমাদের রোম্যান্টিক করে দিল । ছেলে মেয়ের একসাথে কোচিং গুলোতে এই জন্যেই মে বি রেজাল্ট ভাল হয় , কারন সেখানে প্রেস্টিজ ইস্যু বলে একটা বিষয় থাকে । সেখানেই পরিচয় সাদমান , কাফি, লাবন ,রনি , মেহেদী ,প্রনয়, রাব্বিদের সাথে । তবে লাবণকে আগে থেকেই চিনতাম । কি দুর্দান্ত জীবন সবাই তোখড় স্টুডেন্ট , অগত্যাই পড়াশুনা করতে হয় । এক এক জন ছাত্রী কি মেধাবী ! ঝর্না ম্যাডামের ভাগ্নি নীলিমা , সোমা , সেতু , আর মন্ত্রীর নাতনি । এই মন্ত্রীর নাতনীটা একটা আলাদা বিনোদন ছিল ।প্রনয় নাকি একবার কি যেন দেখে ফেললো ।পরে সেটা একটা আলদা হিস্টোরি হয়ে গেল ।এত কিছুর মধ্যে একটা আলাদা পাওয়া ছিল অজিত স্যার । স্যার আপনি শতআয়ু হোন । যুগ যুগ ধরে আপনার মত টিচার রা আমার মত নির্বোধ দের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাক । ছেলেপেলে শুধু টিচার দেখে ভয় না পেয়ে আনন্দের সাথে কিছু শিখুক ।
তারপর স্কুল শুরু হল , নতুন জীবন । বিশাল ক্লাস , হাজারো ছাত্র । তমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা । আবারও যথারীতি ফাস্ট শান্ত । তারপর নতুন করে আরও কিছু ছেলেপেলের সাথে পরিচয় হল ইসমাইল , স্বপন ,মুন্না ,আরাফাত ।জীবন বয়ে চলতে থাকলো তার গতিতেই । একে একে নতুন ক্লাসে উঠছি , পরিবর্তন হচ্ছে এক সময় হেড স্যার শান্তর বাবা চলে গেল , আইজুল স্যার এল । নতুন নিয়ম হল , নতুন ইউনিফর্ম এল । কিন্তু সবার মধ্যে আগের প্রানবন্ত ব্যপারটা টা ফুরিয়ে গেল । তবে স্কুল এ যে দুটো স্যার এর কথা ভুলা সম্ভব না, তাঁদের একজন ওমর স্যার আর এক জন হালিম স্যার । এই কোণ ওই কোণ কে এভাবে ছেদ করল , এই টা ওই টার ভেতর দিয়ে গেল । অদ্ভুত ,কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে ক্লাসে কেউ কথা বলতে পারত না , সে কি ক্লাস নিত সম্ভবত সেও ভাল করে বুঝত না আর আমদের তো বুঝার প্রশ্নই উঠে না , কিন্তু সবাই ক্লাসে এমন ভাব নিয়ে থাকতো যে এক জন গতিতে নোবেল পাবে পাবে অবস্থা :প । আর হালিম স্যার মানেই আলাদা উত্তেজনা । সব প্রশ্ন দাগাই দিত । এখন আপনাকে সব মুখস্থ করতে হবে , না হইলে পশ্চাৎদেশের অবস্থা খারাপ ।
স্কুলের কোচিং এর জীবনটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ । আগে তো আমরা কেউ মেয়েদের সাথে কথা বলতাম না , কিন্তু পপুলার কোচিং এ আসার পর রীতিটা চালু হল । তারপর কিভাবে কিভাবে জানি সম্পর্ক গুলো অন্যখাতে বাক নিতে থাকলো । এর মধ্যে কেউ সফল ,কেউ ব্যর্থ । ইসমাইল হারিয়ে গেল আমবাড়িয়াতে ,কিন্তু গলিপথ আর খুজে পেল না । স্বপন রোমান রাজত্ব কায়েম করার আগেই দখল করে নিল অন্য কোন প্রতাপশালী । জুয়েল ফেরারি প্রেমিক হয়ে ঘুরে ফেরল পৃথিবী ।এখনও সে আকর্ষণেই ছেলেটা বুদ হয়ে আছে । তারপরও কিছু সম্পর্কের সুন্দর পরিনতি ভালো লাগায় । রনি সিমির নাকি সব কিছু ঠিক ঠাক , সেতু র নাকি এখন সুখের সংসার । শাওন , কাফি দের হাতেও নাকি এখন নরম স্পর্শের ছোঁয়া ।
আর শ্যালা দোস্ত তোকে বলছি তাড়াতাড়ি বিয়ে কর । ডাক্তার হতে হতে অনেক দেরী ।এত দিন ওয়েট করতে পারব না, ভাতিজা দরকার ক্রিকেট খেলবো ।
সুখে থাক সম্পর্ক গুলো , লাল খামে ভালোবাসার আদান প্রদান করুক ছেলে মেয়ে গুলো ।দুয়া করি তাড়াতাড়িই পরিণতি পাক প্রনয় গুলো বৈধতাই ।
দেখতে দেখতে কত টা বেলা গড়িয়ে গেল । সেদিনের ছোট্ট ছেলে পেলে গুলো আজ সবাই ২০ বছরের তরুন । চোখে মুখে স্বপ্নের ছটা নিয়ে সবাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে , সাথে বড় হওয়ার প্রচণ্ড আকাঙ্খায় সবাই ব্যস্ত ।
জীবন সবাইকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে , অবস্থানটা তাই বিক্ষিপ্ত ।কিন্তু ছোট্ট সম্পর্কের চারাগাছটি আজ শিকড় গজিয়ে ডাল পালা শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে ফেলেছে । তাই ভুলে যাওয়া আর সম্ভব না , ভালো থাক তোরা । স্বপ্নের চেয়েও বড় হো সবাই ।।
©somewhere in net ltd.