নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।

মোগল সম্রাট

মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারেনা...ও বন্ধু...

মোগল সম্রাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

একনায়কতন্ত্র ছাড়া অশান্ত আরব এবং বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫



আরব বিশ্বে একনায়কতন্ত্র পতনের পর গণতন্ত্রের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা পরিণত হয়েছে দীর্ঘ রক্তাক্ত অস্থিরতায়। লিবিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়া প্রত্যেকটি দেশেই জনগণের মুক্তির স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ, বিভক্তি ও ধ্বংসে গড়িয়েছে।
গণতন্ত্রের ধারণা যতটা আকর্ষণীয়, বাস্তবতায় তা টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নৈতিক নেতৃত্ব যার কোনোটিই ওই সমাজগুলোতে পরিপক্ক হয়নি।

গাদ্দাফীর লিবিয়া একসময় ছিল আফ্রিকার সবচেয়ে উচ্চ জীবনমানের দেশ। কিন্তু গাদ্দাফী পতনের পর গত ১৩ বছর ধরে লিবিয়া এক ছিন্নভিন্ন রাষ্ট্র। এখনো কোনো স্থায়ী সরকার গঠন সম্ভব হয়নি। ইয়েমেন আজ মানবিক বিপর্যয়ের প্রতীক। মিশরে মুবারক পতনের পর গণতন্ত্রের স্বল্পস্থায়ী রোমাঞ্চ শেষ হয় ভয়াবহ বিশৃঙ্খলায় পরে আবার সামরিক নেতৃত্বেই সমাজ স্থিতিশীল হয়।

ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের কঠোর শাসনের পতন মানুষকে মুক্তি দেয়নি বরং জাতিগত দ্বন্দ্ব, সন্ত্রাসবাদ আর দুর্নীতির বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সেখানে। আর সিরিয়া পরিণত হয়েছে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে।

শুধু রাজতন্ত্রভিত্তিক দেশগুলো যেমনঃ সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত তুলনামূলক স্থিতিশীল।

এখানে একটি কঠিন সত্য পরিষ্কার হয়ে ওঠেঃ যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুর্বল, যেখানে সমাজ ধর্মীয় বিভাজনে ভাঙা, সেখানে গণতন্ত্রের অর্থ হলো ক্ষমতার শূন্যতা। আর সেই শুণ্যতা সঙ্গে সঙ্গেই দখল করে নেবে উগ্র সশস্ত্র গোষ্ঠী, বিদেশি শক্তি কিংবা ধর্মীয় সংগঠন।

গণতন্ত্র কেবল ভোটের প্রক্রিয়া নয়; এটি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, ন্যায্য প্রতিযোগিতা, জবাবদিহি ও সহনশীলতার ফসল। আরব দুনিয়ায় সেই সংস্কৃতি অনুপস্থিত ছিল; তাই একনায়কতন্ত্র সরালেও গণতন্ত্র টেকেনি।

বাংলাদেশের জন্য শিক্ষাঃ
বাংলাদেশে আমরা এখন এমন এক জটিল সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি যেখানে নামমাত্র গণতন্ত্র টিকে আছে বটে, কিন্তু কার্যত রাজনীতির প্রতিটি স্তরে ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়কতা, দলীয় আনুগত্য ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা গভীরভাবে শেকড় গেড়েছে। যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে আমাদের গণতন্ত্রও সেই আরব ধাঁচের নির্বাচনী নাটকে এ রূপ নিতে পারে যেখানে ভোট হবে, কিন্তু জনগণের ইচ্ছা নয়, কেবল ক্ষমতার ভারসাম্য বদলানোর জন্য।

আরব দেশগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছেঃ
- একনায়কতন্ত্রের পতন স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণতন্ত্র আনে না; বরং তা বিশৃঙ্খলা আনতে পারে।
- গণতন্ত্রের ভিত্তি কেবল নির্বাচন নয়, বরং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং নাগরিক নৈতিকতা।
- যে সমাজে নেতৃত্ব ব্যক্তিকেন্দ্রিক, দল রাষ্ট্রের চেয়ে বড়, এবং ভিন্নমত দমনই স্বাভাবিক সেখানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ আরব দুনিয়ার মতই অনিশ্চিত।

আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে তীব্র দুর্নীতি, দলীয় আনুগত্য ও নেতৃত্বের দীর্ঘমেয়াদী একচ্ছত্র প্রভাব দেখা যাচ্ছে তার যদি গুনগত কোন পরিবর্তন না আসে, তাহলে ভবিষ্যৎ দৃশ্যপট খুব আলাদা হবে বলে মনে হয় না। আরব বিশ্বে যেমন একদিকে গণতন্ত্রের নামে অরাজকতা, অন্যদিকে শৃঙ্খলার নামে একনায়কতন্ত্রের ফাঁদে বন্দি। বাংলাদেশও সেই দুই মেরুর মাঝপথে দাঁড়িয়ে। এখন প্রশ্ন একটাই আমরা কি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক, নীতিনিষ্ঠ গণতন্ত্র গড়ে তুলব, নাকি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখব নতুন রূপে?



ঢাকা,
০৪ নভেম্বর ২০২৫।


ছবিঃ অন্তর্জাল।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সব কিছুর মুলের সুশাসনের অভাব, ফটকা উন্নয়ন ও দমন- পীড়ন । যেসব দেশে এক নায়কতন্ত্র ছিল সেটা পতনের পর ভ্যাকুয়াম পুরণ করতে দক্ষিণপন্থীরা মানুষকে বোঝায় যে ইহাই সুশাসনের পথ । আর কোনো উপায় নেই । মানুষ সেই ধোকায় পড়ে আরো বড়ো বিপদ ডেকে আনে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.