নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতা এবং সমসাময়িক

কবি আলমগীর গৌরিপুরী

আ‌মি নি‌জে‌কে একজন ক‌বি দাবী ক‌রি । কারন ক‌বিতা আমার প্রা‌ণের স্পন্দন , ত‌বে গল্প আমার ম‌নের খোরাক ।

কবি আলমগীর গৌরিপুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

২১-শে ফেব্রুয়ারি এবং স্বপ্ন বসন্ত

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪

"মম গিভ মি এ কাপ অব টী " সকালের ঘুম ভাঙ্গার পরপরই বেডে শুয়েশুয়ে "মা" কে ডেকে বললো তূর্য।
পাশের কক্ষ থেকে মায়ের উত্তর "ওয়েট ওয়েট মাই সন, আমার বেবীর তাহলে ঘুম ভেঙ্গেছে?
আই এম কামিং মাই সন।
জাস্ট এ মিনিট।
মা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তূর্যের কক্ষে প্রবেশ করলো। (তূর্য ততক্ষণে ওঠে বসলো)। চায়ের কাপটা তূর্যের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে
-গুড মর্নিং মাই ডিয়ার,
-মর্নিং টু মম।
-হোয়াট'স আর ইউ ফিলিং এট দ্যা মর্নিং মাই সন?
-বেরী নাইস মর্নিং দিস ডে মম,
-ও কে, টেইক টী, হ্যাপি মর্নিং।
এই কথা বলতে বলতে কক্ষ ত্যাগ করলেন মা। মা চলে যাওয়ার পর চা-এ এক চুমুক দিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো তূর্য। আসলেই সকালটা অনেক সুন্দর। "বসন্তের সকাল গুলো একটু বেশিই মনোমুগ্ধকর হয়"। পূবালী বাতাসের স্পর্শ , আর সকালের চা দুইয়ে মিলে এক সতেজ সকাল । তূর্যের ঘুমানোর কক্ষটা পূর্ব দিকে, আর পূর্ব দিকে হওয়ার কারনে জানালা দিয়ে
সকালের সূর্য অনেক আগেই ঘরে প্রবেশ করেছে। এখন সকাল নয়টা বাজে। আর তূর্যের সকাল হয় নয়টায়। আধুনিক বাংলার শহরের ছেলে-মেয়েরা একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠে। ছয় তলা বিশিষ্ট বাড়িতে তূর্যরা পঞ্চম তলায় থাকে। দুইটা বেড রুম, একটা ড্রয়িং রুম, রান্নার জন্য আরেক টা রুম নিয়েই তাদের ফ্ল্যাটটি। আবাসিক প্রকল্প এলেকার বাড়ি গুলো একটু পরিকল্পিতই হয়। তূর্যের মা খুব গোছালো একজন নারী। সব সময় ঘরটাকে চকচকা করে রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে অনার্স, মাষ্টার্স শেষ করার পর এখন গৃহিণীর কাজেই নিজেকে নিয়োগ দিয়েছেন।
তূর্য ইংলিশ মিডিয়ামে "ও" লেভেলে পড়ে ।
খুব স্মার্ট, বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে কথা বলে। তবে বেশির ভাগ সময় ইংরেজীতে কথা বলে। মাঝেমাঝে বাংলিশ ভাষায় কথা বলে। যে ভাষা শহরের আধুনিক সমাজে স্মার্ট বাংলা ভাষা হিসাবে পরিচিত।
"সম্ভাবিলিটি" শব্দটি বাংলিশ ভাষাভাষি সমাজেরই সৃষ্টি।

বসন্তের বিকেল, ঢাকা শহরের সমস্ত গাছের পাতা গুলো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে, রাস্তা দিয়ে হাটলে গাছের পাতাগুলো পায়ের সাথে ধাক্কা খেলে এক ধরনের অদ্ভুত শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি হয় । যা মনের ভিতর চঞ্চল অনুভূতি তৈরি করে, মনে হয় এই পথের মাঝেই যদি সমাধি হতো খুব খারাপ হতো না। এমনই এক অনুভূতি নিয়ে আনমনে হেটে চলেছে সাজু। জিন্সের প্যান্ট, সবুজ রং-এর টি শার্ট, পায়ে চটি জুতা, মাঝারি ধরনের কোঁকড়া চুল, সুঠাম দেহ,মাঝারি গড়নের শরীর, শ্যামা বর্ণের ছেলেটির হাটা দেখলে যে কেউই বলবে রাস্তার সাথে তাঁর যেন জনম জনমের সম্পর্ক।
তাদের প্রেমে আবেগের উৎস শুকনা পাতাগুলো। সাজু হেটে চলেছে শহীদ মিনারের রাস্তা ধরেই। কিছুদুর যাওয়ার পর হঠাৎ তাঁর হাটা থেমে গেল। ডান দিকে ফিরে তাকালো " রাস্তার ডান পাশেই শহীদ মিনার স্বমহীমায় দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। সাজু শহীদ মিনারের আপাদমস্তক ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলো।
ঠোঁটের কোণে একটা আনন্দের হাসি তৈরি হল, আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
-তোমাদের আত্মত্যাগ এ জাতি কোনদিন ভুলবে না, পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। তোমরা নিশ্চয়ই অনেক আনন্দ পাচ্ছ, তোমাদের ত্যাগ আজ এই বাংলা ভাষাকে অনেক মর্যাদাবান করেছে। এখন ২১ ফ্রেবুয়ারীকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসাবে পালন করা হয়।
তোমাদের নামগুলো উচ্চারণ করতে আমার এত ভাল লাগে কেন, বলোতো? (সাজুর চোখের কোণে অশ্রু ছলছল করছে)
কি সুন্দর নাম তোমাদের
সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত।
তোমরা নিশ্চয়ই বসন্তের চঞ্চলতাকে অনেক বেশি ভালবাসতে?
সাজু চোখ মুছতে মুছতে
" থাক তোমাদের এসব বলে কি হবে, তোমরা তো শুনতেই পাওনা। তোমাদের সাথে কথা বলে কি লাভ?
তোমরা যদি শুনতে পেতে তাহলে তো প্রতিবাদই করতে। যখন
তোমাদের রেখে যাওয়া আমানত "বাংলা ভাষার" ঐতিহ্যকে আমরা উৎসুক হয়ে নষ্ট করছি প্রতিনিয়ত। যদি দেখতে পেতে তাহলে অনেক লজ্জা পেতে তোমরা।

স্বকথন থামিয়ে রাস্তার পাশেই দাড়িয়ে শহীদ মিনারের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে সাজু।
হঠাৎ একটা সাইকেল ডান দিক থেকে এসে শরীরে ধাক্কা দিলো। খুব জোরেই ধাক্কাটা লেগেছে। মনে হয় হাতটা কেটে গেছে। সাইকেলটা মাটিতে পড়ে ঠাস করে একটা শব্দ হলো। সাইকেল চালক ছেলেটিও পড়ে গেল।
"স্যরি ভাইয়্যা, আই এম বেরী স্যরি"
সাইকেলটা উঠাতে উঠাতে বললো ছেলেটি।
শরীরে সাইকেলের ধাক্কা লাগার কারনে সাজুর মনে যতটুকু না রাগ জন্মেছে তার চেয়ে বেশি রাগ জন্মিল যখন ছেলেটি ইংরেজীতে স্যরি বলেলো। রাগটা নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে জিঙ্গেস করলো,
-তোমার নাম কি?
-আই এম তূর্য, প্লিজ ফরগিভ মি।
-তোমাকে মাফ করতে পারি যদি তুমি আমার সাথে কিছুক্ষণ বসে গল্প কর।
-ওকে নো প্রবলেম,
-তাহলে চলো আমরা শহীদ মিনারের ঐ খানটাই বসি। (আঙ্গুল দিয়ে শহীদ মিনারের নিচের সিঁড়িটা দেখিয়ে বললো সাজু)
-ওকে লেটস গো।
ছেলেটা তার শরীর থেকে ধুলিময়লা এক হাত দিয়ে পরিষ্কার করছে, আরেক হাতে সাইকেলটা ধরে সাজুর সাথে শহীদ মিনারের সিঁড়ির দিকে হাটছে। সাইকেলটা দাড় করিয়ে রেখে দুইজন পাশাপাশি বসলো।
সাজু জিঙ্গেস কললো,
-তোমার নাম কি?
-আইম তূর্য,
-তুমি কি কর?
-স্টুডেন্ট। ইউ?
-আমিও ছাত্র।
সাজু বাংলায়ই সব কথা বলতেছিল"।
-ডন্ট ইউ আন্ডাস্টেন্ট ইংলিশ?
-আমি না বুঝলে তোমার কথার উত্তর দিচ্ছি কিভাবে? (একটু তাচ্ছিল্য করে)
তুমি কি বাংলা বলতে পার?
-ইয়েস আই ক্যান।
-তাহলে বলোতো "প্যাকপ্যাক" মানে কি?
-আই ডুন্ট নৌ, হোয়াট ইজ প্যাকপ্যাক?
-প্যাকপ্যাক একটা পাখির ডাক,
এবার তূর্য ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় খুবই আশ্চর্য হয়ে "পাখির ডাক! হোয়াটস দি নেইম অব পাখি?
-এই পাখির নাম হল হাঁস,
- হাঁস দেখতে কেমন?
-পাখির মত, পানিতে ভেসে বেড়ায়।
-ও আই ক্যান আন্ডারস্টেন্ট, ইটস ডাক।
এই কথা শেষ হতেই সাজু হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দিলো,
-ও আমার পরিচয় দেয়নি তোমাকে, আমার নাম, সাজু। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছি।
-ভাইয়্যা আইম "ও" লেভেল স্টুডেন্ট।
- হুম, আচ্ছ তুমি কি জান তুমি এখন কোথায় বসে আছো?
-ইয়েস, শহীদ মিনারের লাস্ট সিঁড়িতে?
- বলোতো এই শহীদ মিনার কেন তৈরি করা হয়েছে?
-আমি যতটুকু জানি ২১-শে ফেব্রুয়ারি সেলিব্রেশন করার জন্য মেইড করা হয়েছে।
-কেন একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয়?
-আই ডুন্ট নৌ' কেন ভাইয়্যা প্লিজ টেল মি? এই কথা বলে উত্তর শোনার প্রত্যাশায় সাজুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে তূর্য।
সাজু মনেমনে খুব বিরক্ত এবং লজ্জা পেল,নিচের দিকে মাথাটা ঝুকিয়ে দিয়ে চুপ করে বসে রইলো। আজ যেন এই বাংলার মানুষকে বুঝানোর জন্য আরো একটা ভাষা আন্দোলন দরকার।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আর কোন প্রশ্ন না করে বলা শুরু করলো,
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের দুটি ভূখন্ড হয়। একটি পশ্চিম পাকিস্তান অন্যটি পূর্ব পাকিস্তান। পাকিস্তানের ৫৬ ভাগ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান শাসক গোষ্টি উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষনা করে।
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক এবং সারা বাংলাদেশের শিক্ষিত জনতা দাবি জানায়। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ২৬ শে জানুযারি ঢাকায় এক জনসভায় ভাষনে বলেন "উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তারপ ঢাকায় সকল ধরনের মিটিং মিছিলের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১-শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে বের হয়। তখন সেই মিছিলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। তখন রফিক, সফিক,বরকত, সালাম, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকে শাহাদাত বরন করেছিলেন। তাঁদের স্মরণেই প্রতিবছর ২১-শে ফেব্রুয়ারি "শহীদ দিবস" হিসাবে পালনা করা হয়। ১৯৯৯ সালে এই দিনটি "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা" দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পায়।

দেখ তূর্য ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস অনেক লম্বা। আমি তোমাকে এর কিছু অংশ বলেছি মাত্র।তুমি ইংরেজী মিডিয়ামের একজন ছাত্র। আচ্ছা ইংরেজী মিডিয়ামে পড়লে কি বাংলা বলতে কোন নিষেধ আছে?
-নো
-তুমি বাংলা সিনেমা দেখ?
-নো
-বাংলা গান শোন?
-সাম টাইম, হোয়েন আই লিসন এফএম রেডিও ।
সাজু একটু গম্ভীর হয়ে ---
-আসলে বাঙালী জাতি তার নিজস্ব ঐতিহ্য দিনদিন নষ্ট করে চলেছে। নিজেদের সংস্কৃতির বুকের উপর দাড়িয়ে পর সংস্কৃতিকে সাদরে বরণ করে চলেছে। আমরা এটা ভুলে যাচ্ছি যে, সমগ্র পৃথিবীর শতশত ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার অবস্থান ৪র্থ স্থানে এখনো আছে।
আমাদের আলাদা সংস্কৃতি আছে।
দেখ তূর্য তোমাকে এসব কথা বলার কারন হল "আজকের যুবক কালকের উজ্জল ভবিষ্যৎ" আমরাই তো বাংলাদেশকে পৃথিবী দরবারে উপস্থাপন করবো, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক কিন্তু বাঙালী ছিল। তিনিও বাংলাকে পৃথিবীর দরবারে উপস্থাপন করেছেন। তিনি কি নিজের ভাষা সংস্কৃতি ছেড়ে দিয়েছিলেন? এ কথা বলার পর সাজু থেমে গেলো।

একটা চাপা নিরবতা নেমে এলো চারপাশে। মনে হচ্ছে দুর থেকে একটা চাপা কষ্টের সুর ভেসে আসছে। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ল্যাম্প পোস্টের সোডিয়াম বাতি গুলো জ্বলে উঠেছে।
তূর্য অবাক হয়ে সাজুর কথাগুলো শুধু শুনেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে স্বপ্নের মাঝে চলছে সবকিছু।
নিরবতা ভেঙ্গে আবার
-না তিনি বাংলার সংস্কৃতিকে ভুলে যাননি। তিনিও তো বাঙালী ছিল আমরাও তো বাঙালী। তাহলে তাঁর আর আমাদের মাঝে এত পার্থক্য কেন?
কেন আমরা পর সংস্কৃতির ধারক হচ্ছি?
এর কোন সদুত্তর কি আছে?। একটু থেমে সাজু নিজেই বললো -নাই।
দেখ
আধুনিক সমাজের চিত্রকে পরিবর্তন করার জন্য তোমার আমার মত যুবকদের প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে।
তাহলে আর "সালাম,রফিক, বরকত, জব্বারের আত্মা কষ্ট পাবে না।
তোমার সাথে অনেক কথাই বললাম
চল এবার উঠি, এ কথা বলতে বলতে দুই জনে উঠে দাড়ালো।
সাজু তূর্যের পিঠে হাত রেখে,
শুন তূর্য, তোমার সাইকেলের আঘাতে আমার হাত থেকে রক্ত ঝরছে এতে আমি বিন্দু মাত্রও রাগ করিনি। দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।
কিন্তু আমি যখন দেখলাম তোমার মত একটা কলেজ পড়ুয়া ছেলে বাংলা না বলে পরভাষায় আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তখন আমার মনটা অনেক বেশিই খারাপ হয়েছিল।
ঠিক আছে তুমি যাও, রাত হয়ে যাচ্ছে।
তূর্যের সাইকেলের চাকা ঘুরতে ঘুরতে এক সময় সাজুর চোখের আড়াল হয়ে গেল। সোডিয়াম বাতির চমৎকার আলোতে আরো একবার শহীদ মিনারকে প্রাণ ভরে দেখলো সাজু। তারপর রাস্তার শুকনা পাতা মাড়িয়ে হাটতে হাটতে
হারিয়ে গেল দিগন্তে হয়তবা নিজ গন্তব্যে।

আজ খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গলো তূর্যের। রাতটা যেন স্বপ্নের মাঝেই চলে গেল। মনে হচ্ছে গতকালের সন্ধ্যা এই মাত্র শেষ হল। সূর্য উঠার আগেই আজ সে জেগেছে। জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে।
মনেমনে বলছে
- বাহিরের সকাল এত সুন্দর হয়! জীবনে এই প্রথম সে সকাল উপভোগ করছে। কাক গুলো ডাকছে। কাকের ডাক যেন নতুন মনে হচ্ছে । গতদিন বাসায় ফিরার সময় একটা নজরুল সংগীতের সিডি কিনে এনেছিল। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে নজরুল সংগীত শুনছে। আর খোলা আকাশ এবং পূবালী বাতাসের স্নিগ্ধতা উপভোগ করছে।
এত সকাল সকাল নজরুল সংগীতের আওয়াজ শুনে "মা" অবাক হয়ে গেলেন।
তূর্যের কক্ষে নজরুল সংগীত!
"মা" ধীরে ধীরে কোন শব্দ না করে তূর্যের কক্ষে প্রবেশ করলেন।
খোকাকে গ্রিলের পাশে আনমনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে, আস্তে আস্তে তূর্যের কাঁধে হাত দিল।
মায়ের হাতের স্পর্শ পেয়ে তূর্যের আবেগ আরো বেড়ে গেল,
সে গ্রিল থেকে মুখ ফিরিয়ে মায়ের বুকে নিজের মাথা রেখে কাঁদতে লাগলো,
"আম্মু আমি বাঙালী, আমি শুদ্ধ করে খাটি বাংলা ভাষা বলতে চাই। আমি বাঙালী সংস্কৃতি লালন করতে চাই।"
তূর্যের মুখে প্রথম আম্মু ডাক শুনে "মা"র চোখের কোণে অশ্রু টলমল করছে। কারন তূর্য আগে কোনদিন তার মাকে আম্মু বলে ডাকেনি। মম বলে ডাকতো।
"মা" চাপা কণ্ঠে
বাবা আমরা যে বাঙালী সেটা দিন দিন ভূলেই যাচ্ছিলাম। তুমি আমার ভুল ভেঙ্গে দিলে। তূর্যের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে
তুমি কাঁদছো কেন বাবা? আমরা আজ থেকে বাংলাতেই কথা বলবো।
"ডিভিডিটা বন্ধ করো, আমরা দুইজন বাংলা ভাষাতে গান করবো,
তূর্য চোখ মুছতে মুছতে রিমোটের বোতাম চেপে ডিভিডি টা বন্ধ করলো।
দুই জনে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে, গলায় গানের সুর
"আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই, আমি আমার আমিকে যেন চিরদিন এই বাংলায় খুজে পাই।
বাংলা গানের সুর বাতাসের সাথে মিশে সারা বাংলায় ছড়িয়ে পরেছে সকালের সূর্য পূর্ব গগনে জেগে উঠার আগেই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০১

নূসরাত তানজীন লুবনা বলেছেন: খুবই ভালো লিখেছেন
ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্টরা অনুপ্রেরণা না নিয়ে যেতে পারবে না যদি লেখাটা পড়ে !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.