![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আব্দুর রউফ কল রিসিভ করলো...
-হ্যালো
ওপাশ থেকে নারী কন্ঠ
-তুমি আব্দুর রউফ?
-জ্বি না।
-মিথ্যা কথা, তুমিই আব্দুর রউফ।
-জ্বি আমিই আব্দুর রউফ।
-মিথ্যা বললা কেন?
-জ্বি মানে...ইয়ে..মানে...
-কি.. ইয়ে মানে।
-জ্বি?
-কি জ্বি, তুমি কি ভয় পাচ্ছো আমাকে। আমি রেশমী, চিনতে পারছো?
-জ্বি না।
-জ্বি না মানে? সবাই বলে তুমি নাকি আমাকে খুব পছন্দ করো অথচ তুমি আমাকে চিনতেই পারতেছো না?
-না মানে বললাম যে আমি ভয় পাচ্ছি না।
-ও আচ্ছা, তাহলে তুমি সত্যি আমাকে পছন্দ করো?
-জ্বি
-কেন?
-জানিনা
-জানো না?
-জ্বি
-তাহলে বললা কেন জানো না? বলো কেন পছন্দ করো।
-না মানে বললাম যে,জ্বি,আমি জানি না আমি আপনাকে কেন পছন্দ করি।
-উফ! তুমি নিজেও কনফিউজড আমাকেও কনফিউস করে দিচ্ছো।
-জ্বি
-ধ্যাত! আবার জ্বি।
-তুমি কি জ্বি ছাড়া আর কিছু বলতে পারো না?
-জ্বি।
-বলো প্লিজ... প্লিজ (রাগত স্বরে)
-না মানে আমি বললাম যে, জ্বি আপনি ঠিক ধরছেন,আমি জ্বি ছাড়া তেমন কিছু বলতে পারি না। তবে এইটা শুধু আপনার সাথে কথা বলার সময়ই হয়!
-তুমি আমাকে ভালোবাসো?
রেশমীর এই প্রশ্ন শুনে আব্দুর রউফের জ্বর এসেছিলো। একশো তিন ডিগ্রী জ্বর।
আব্দুর রউফ আমার বন্ধু মানুষ। অনেকগুলো বিকেল,সন্ধ্যা আর সিগারেট সাক্ষী আমাদের বন্ধুত্বের। সেই খাতিরে তাকে দেখতে যাওয়া। খালি হাতে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবেই এক প্যাকেট গোল্ড লিফ নিয়েছিলাম। অসুস্থ্য শরীর নিকোটিন নিতে পারে না ঠিকই, তবে সব কিছুরই কিছু ব্যতিক্রম বিদ্যমান। আব্দুর রউফ ব্যতিক্রম একজন। অসুস্থ্য শরীরেও সে লিফের প্যাকেটটা দেখে যতটা খুশি হয়েছিলো, অসম্ভব সুন্দরী কোন মেয়ে তখন ওকে প্রপোজ করলেও অতটা খুশি সে হতো না বলেই আমার ধারণা। আমি আবার মনের ব্যাপারগুলোকেই গুরুত্ব দেই বেশী।
-জ্বর এখন কেমন?
-কমছে কিছুটা,কেমন আছিস?
-ভালো।হঠাৎ জ্বরের আগমন?
-বিরাট সমস্যা।
-খুলে বল।
-চল বাইরে কোথাও বসি।
-এই শরীর নিয়া?
-ব্যাপার না,চল।
কলেজের পুকুর পাড়ে বসলাম আমরা। আব্দুর রউফ সিগারেট ধরিয়ে বলল
-রেশমী নামে কাউকে চিনিস?
-নাতো
-চিনবি না, আমি তখন নানার বাড়িতে থেকে ওখানকার একটা স্কুলে ক্লাস এইটে পড়তাম।
-বল
-রেশমী নামের একটা মেয়েকে আমি অসম্ভব পছন্দ করতাম, এখনো করি।
-কখনো বলিস নাই তো?
-মেয়েটা তখন ক্লাস নাইনে পড়তো।
-আমাদের বড়? মানে তোর চেয়ে এক বছর সিনিয়র?
-হুম
-তুই পারিসও। প্রেমে পড়ার মেয়ে পাইস নাই আর দুনিয়াতে?
-ভালোবাসা বয়স টয়স দেখে হয় নাকি গাঁধা।
-তাহলে কি দেখে হয়?
-এইটা হয়ে যায়। আচ্ছা শোন তারপরের কাহিনী।
-হুম বল।
-মেয়েটাকে আমি যেমন ভালোবাসতাম তেমন ভয়ও পাইতাম।
-কেন?
-কি জানি, হয়ত ঐ বয়সের ব্যাপারটাই মনে অদ্ভুত রকমের ভয়ের সৃষ্টি করত, আমি অবশ্য ভয়ের কারণ নিয়ে মাথা ঘামাই নাই।এখনো ঘামাইতে চাই না। তুই শোন।
-হুম বল।
-আমি রেশমীকে পছন্দ করি এটা আমার বন্ধু বান্ধবী ওর বন্ধু বান্ধবী সবাই জানতো। ব্যাপারটা নিয়ে অনেক হাসা হাসি হইত।কাজেই ওদের কারো সামনে পড়লে আমি বিব্রত বোধ করতাম খুব।রেশমী আমাকে বুঝাইতে আসত, অনেকভাবে বুঝাইতো, আমি যেন এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলি।
আমি ওকে বলতে চাইতাম যে ওর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু আমার মুখ দিয়ে শুধু বের হইত জ্বি আচ্ছা, জ্বি আচ্ছা।ও যাই বলত,আমি উত্তরে বলতাম,জ্বি আচ্ছা।আমি আসলে ওর সামনে পড়লেই নার্ভাস ফিল করতাম।
(সিগারেট শেষ,আরেকটা ধরিয়ে শুরু করল আবার...)
তখন আমাদের এইটের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ছুটি চলতেছে। আমি ফুফুর বাড়ি বগুড়ায় গেছি। একবন্ধু আমাকে ফোন করে বলল রেশমী আত্মহত্যা করছে। তখন সিটিসেল মোবাইল আমার, এলকাটেল!(হাতের মোবাইলটা দেখিয়ে)
-হুম বল।
-প্রথমে শুনে আমি একটু একটু বিশ্বাস করছিলাম।মনটা ভীষণ খারাপ ছিলো সারাদিন।পরে রাতে বুঝতে পারলাম বন্ধু আমার ফাজলামী করছে।
-কীভাবে বুঝলি?
-কারণ রাতে আমাকে রেশমী ফোন করছিলো।
-আইচ্ছালা। তারপর?
-তারপর থেকে রেগুলার এই দিনে আমার জ্বর আসে।(হাসতে হাসতে)
-মানে? কি বলতেছিস? কিছুই তো বুঝলাম না।
-রেশমীর একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো,সেই ছেলে রেশমীকে ধোকা দিয়ে অন্য একজনকে বিয়া করছিলো। তাই রেশমী আত্মহত্যা করছিলো।
-তুই যে এখনি বললি তোর ঐ ফ্রেন্ড ইয়ার্কি মারছিলো!
-না, আমিই ইয়ার্কি মেরে একটু প্যাঁচায় বললাম তোকে।
(হাসতে হাসতে)
-শালা! কেন?
-গল্প বললে একটু ঘুড়ায়-প্যাচায় বলতে হয় তাই।
-তাহলে সেইদিন রাতে রেশমী তোকে ফোন করে নাই?
-করছিলো
-গাজাখুঁরি গল্প শুনাইস? আমাকে পিচ্চি পাইছিস?
-তুই শুন আগে, তারপর তোর যা মনে হবে তাই!
-বল।
-রাতে ফোন আসলো।কথা বললাম। বরাবরের মতো, ওর প্রত্যেকটা কথার উত্তরেই আমি জ্বি আচ্ছা আর জ্বি না ছাড়া কিছুই বলতে পারি নাই। শুধু যখন জিজ্ঞাসা করছিলো আমি ওকে ভালোবাসি কিনা? তখন আমার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হয় নাই। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারছিলাম খুব জ্বর আসছে,জ্বরের ঠ্যালায় ঘুমায় পড়ছিলাম, মানে অজ্ঞান আর কি। পরদিন সকালে ওর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হলাম।রাতে যে একটা মৃত মানুষ আমাকে ফোন করছে এই ব্যাপারটা মনের ভুল ভেবে ভুলে গেলাম।
কিন্তু বছর ঘুরে যখন আবার ওর মৃত্যুর তারিখটা আসলো, আমার মনে ছিলো না, রাতে ওর কল আসলো। বিশ্বাস কর...
-এক মিনিট,ওর কল আসলে স্ক্রীনে কি দেখায়?
-হ্যা, মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার ফোনে রেশমী নামে কোন নাম্বার সেইভ করা নাই। কিন্তু ঐদিন স্ক্রিনে রেশমী লেখা উঠছিলো।প্রথমবার আমি খেয়ালই করি নাই!
-তুই ভয় পাইস নাই?
-সেইটাই তো বলতে চাচ্ছি। আমি একটুও ভয় পাই নাই।কিন্তু ওর সাথে কথা বলার সময় আগের মতই, জ্বি আর জ্বি না ছাড়া কিছুই বলতে পারি নাই। বাকি সব নরমাল মনে হইছিলো আমার কাছে।
কি কথা হয়েছিলো জিজ্ঞেস করতেই আব্দুর রউফ উপরের ফোনালাপের অংশটুকু বর্ণনা করলো।
-তাহলে প্রত্যেক বছর ২৭ আগস্ট রেশমী কল করে তোকে,মানে রেশমীর ভূত কল করে?
-হ্যা বন্ধু, আর এই জন্যই আমি প্রত্যেক বছর ২৭ আগস্ট একশ তিন ডিগ্রীধারী জ্বরে ভুগী। (সজোরে হেসে)
-প্রত্যেকবার একই কথা হয়?
-হ্যা।
-তুই যাই বল, আমি তোর এই গাঁজাখুরি গল্প এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলাম,হুহ!
-প্রমাণ চাই তোর?
-হুম চাই।
-ওকে নেক্সট ইয়ার ২৭ আগস্ট তুই আমার সাথে থাকবি।
-ডান।
এক বছর পর;
-হ্যালো
-হ্যা,দোস্ত বল।
-তাহলে চলে আয় আমার বাড়ি।
-কেন বলতো?(আমার মনে ছিলো না)
-ভুলে গেলি, আমি তো প্রমাণ দিতে চাইছিলাম। ২৭ আগস্টের জ্বরের। প্রমাণ নিবি না? চলে আয়।
-ও আসলেই তো, ভুলেই গেছিলাম রে। এক্ষনি আসতেছি, ওয়েইট।
আমি আর আব্দুর রউফ শুয়ে আছি, দুইটা মোবাইল আব্দুর রউফের। সেই এলকাটেল ফোনটা আমাদের দুইজনের মাঝে রাখা,এই মোবাইলটাতেই আজকে রাতে একজন মৃত মানুষ কল করবে, ভাবতেই গা ছমছম করছে আমার।আব্দুর রউফ তার অন্য মোবাইলে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।চোখ বন্ধ ওর। রেশমীর কল আসলে ডেকে দিতে বলেছে।আমি আছি অপেক্ষায়। সময় যাচ্ছে,কল আসছে না।
একটা সময় আব্দুর রউফ নিজেই হেডফোন খুলে অন্য ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,
-কিরে কল আসছে তুই বুঝতে পারিস নাই?ডেকে দিবি না আমাকে।
আমি কিছু বলতে পারলাম না, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি,আব্দুর রউফ কথা বলছে রেশমীর সাথে। একটা সময় ওর কথা থেমে গেলো,ঘুমিয়ে পড়ল ও। গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।আমার রাতটা কাটল ঘামতে ঘামতে। আমার সন্দেহই ঠিক।
সকালে চায়ের পর্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ কারো সাথে কোন কথা বললাম না।আমি ওকে ওষুধ দিয়ে বললাম
-তুই যে মানসিকভাবে অসুস্থ্য সেটা কি বুঝতে পারতেছিস?
-পারতেছি।
-তুই জানিস যেই মোবাইল দিয়ে তুই রাতে রেশমীর সাথে কথা বলছিস সেই মোবাইলের... (আমাকে থামিয়ে দিয়ে)
-সেই মোবাইলের ব্যাটারী এখনো তোর পকেটে।
-সব কিছুই তো বুঝতে পারতেছিস, তোর কি মনে হয়না যে তোর একজন সাইকিয়াট্রিস্টকে সব খুলে বলা দরকার?
-আগে তুই বল, তুই ব্যাটারী টা খুলে নিলি কেন?
-কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম সম্পূর্ণ ব্যাপারটা তোর মনের ভুল।আর তুই খুব সুন্দরভাবে আমাকে গল্প টা বলছিলি জন্য সেই পরিবেশে আমার মস্তিষ্কও কিছুটা বিভ্রান্ত ছিলো।আমারো তোর মত ভুল হতে পারতো। আমার ভুল না হওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করার জন্যই ব্যাটারীটা খুলে নেয়া। ব্যাটারী টা খুলে নেয়ায় আমার মস্তিষ্ক স্ট্রং লজিক পেয়ে যায় যে এই মোবাইলটায় আর কোন কল আসার প্রশ্নই উঠে না।
-গ্রেট।
-এখন তুই বল একজন সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিবি কিনা?
-না।
-না মানে? কেন না?
-কারণ আমি সমাধানটা জানি।
-কি সমাধান?
-এই মোবাইলটা ছাড়া অন্য কোন মোবাইলে রেশমীর কলটা আসে না। পাঁচ বছর থেকে আমার সাথে এটা ঘটছে। একবার আমি বুদ্ধি করে এই মোবাইলটা বাড়িতে রেখে চলে গেলাম এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতে।সেইবার আমার অন্য ফোনটায় রেশমীর কল আসে নাই।
-আজব! তাহলে তুই এই ফোন টা নষ্ট করে দিচ্ছিস না কেন?
-কি দরকার? আমার তো অন্য কোন সমস্যা হয় না।সারা বছর তো আমি ভালোই থাকি।আর রেশমীকে আমি সত্যি খুব ভালোবাসি। দুই তিনদিন জ্বরে ভুগার ভয়ে যদি ফোনটা নষ্ট করি তাহলে তোর আর কোনদিনও রেশমীর কন্ঠ শুনতে পারবো না দোস্ত।
-বুঝলাম, কিন্তু পরে যদি সমস্যাটা বাড়ে?
-আরে ধুর,পরের হিসাব পরে হবে। সিগারেট দে...
তর্কে আব্দুর রউফের সাথে পেরে ওঠা আমার সাধ্যের বাইরে। লজিক থাকুক আর না থাকুক সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবে,জানি। আর এখানে তো প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপার স্যাপার। হাল ছেড়ে দিয়ে সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দেই ওর দিকে। আব্দুর রউফের এক হাতে ঐতিহাসিক সেই মোবাইল, আরেক হাতে সিগারেট।
২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৮
ফয়সাল হোসেন শুভ বলেছেন: ভাল লাগল পড়ে অনেক
৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৫৬
মানবী বলেছেন: সুন্দর সাবলীল লেখা!
"মেয়েটা তখন ক্লাস নাইনে পড়তো।
-আমাদের বড়? মানে তোর চেয়ে এক বছর সিনিয়র?
-হুম
-তুই পারিসও। প্রেমে পড়ার মেয়ে পাইস নাই আর দুনিয়াতে?
-ভালোবাসা বয়স টয়স দেখে হয় নাকি গাঁধা।"
.... এই লাইন কয়টি নিয়ে আপত্তি। আমাদের দেশের এই মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী। আমরা হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর উদাহরন টেনে একাধিক বিয়ের বৈধতে দিতে চেষ্টা করি, রসুলের সুন্নত। রসুল(সঃ) যে ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছরের বিবি খাদিজা কে বিয়ে করেছিলেন এই উদাহরন যেনো কিভাবে বেমালুম ভুলে যাই!
সম্প্রতি আমার এক আত্মীয় তার চেয়ে ২ বছরের বড় মেয়েকে বিয়ে করেছে, কেউ এই কথাটি উল্লেখ করলেই আমি এমনিভাবেই প্রতিবাদ করি। আমাদের সত্যিকারের আধুনিক হয়ে উঠতে এমন মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী।
পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ।
৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:০৫
গেম চেঞ্জার বলেছেন: আব্দুর রউফের সাথে আছি। চ্যালুট।
৫| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৭
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার সাবলীল আপনার লেখা। ভালো লাগলো।