![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈদ আমার কাছে আদর্শ একটা ঘুমের দিন। আর কেনই বা হবেনা? এই একটা দিনের জন্য গোটা মাস জুড়ে কত দৌড়াদৌড়ি। আপিস সামলায়ে রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু কেনাকাটা, নিজের এবং সবার। তারপর আছে ইফতারের দাওয়াত পাওয়া ও দেওয়া। সেই সাথে দুর্বিষহ ট্রাফিক জ্যাম। এমনকি চাঁদরাত এও শান্তি নাই, ফাকা ঢাকা উদযাপন, উইন্ডো শপিং তো থাকেই। আর এসবের মাঝে পকেটের টাকা উড়তে উড়তে সর্বশান্ত হওয়ার যোগাড় হওয়ার দুঃখ তো আর বললাম ই না।
আরও থাকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়, মুঠোফোন, ফেসবুক, নানা জায়গার বার্তা, ঈদ উপলক্ষে নতুন কেনা বইগুলি উলটে পালটে দেখা। এসব করে ঘুমাতে ঘুমাতে দেখলাম দিনের আলো দেখা যায়। তার উপর বৃষ্টি। জেগে থাকার নিরুৎসাহ আরো বেড়ে গেল, আর বাবা হবেই বা না কেন, আমার কি জামাই, শশুর-শাশুরি আছে যাদের জন্য ঈদের দিন লাল শাড়ি হয়ে পটের বিবি হয়ে বসে থাকতে হবে, না আছে বয়ফ্রেন্ড, যার সাথে বিকেল বেলা বের হয়ে দাত কেলান ম্যান্ডেটরি!!!
কাজেই দ্বিগুণ খুশি হয়ে ঘুমাতে গিয়ে চোখটা বন্ধ করতে না করতেই দেখি ফোন মশাই কাঁপিতেছে। উঠানো মাত্রই শুনি দুলাভাইর বাজখাই গলা। ঈদের দিনে ঘুমানর অপরাধে সে পারলে আমার বাপ মা তুলে গাল দেয়, নেহাত আমার বাপ মা তার আপন শ্বশুর-শাশুড়ি বলে এ যাত্রা রক্ষা। আমি করুন গলায় বললাম ঈদের দিন সকালে একটা নিরীহ বাচ্চাকে এভাবে ধমকানোর মানে কি? এবার আমার দুলাভাইর গলা আরও চরম মাত্রায়, ফাজিল বেটি সকাল এখন?? বিকাল ৩টা বাজে। আমারো চক্ষু চড়কগাছ কথা শুনে। যাই হোক ধমকি ধামকি খায়ে কোন মতে হস্তি শরীর বিছানা থেকে উঠায়ে আটা ময়দা সুজি মাইখা রেডি হইলাম, বাসা থিকা বের হওয়ার জন্য। এবং সেখানেও মহা হিসাব, এমন জায়গায় যাওয়া লাগবে যেখানে গেলে সালামি দাওয়া লাগবেনা, উলটা পাওয়া যাবে। সকল হিসাব-কিতাব শেষে গালি দাওয়া দুলাভাইটারেই মনে হইল যথার্থ। কাজেই চল সেখানেই।
কিন্তু বের হতে হতেই মনটা ভাল হয়ে গেল। পুরান ঢাকায় ঈদ মানেই মোড়ে মোড়ে এলাকার পোলাপানের জমায়েত, রাস্তাঘাটে বাহারি আলোকসজ্জা, হই-হুল্লোড়, গান-বাজনা, আর রঙবেরঙের জামাকাপড়। মেঘলা দিনে সানগ্লাস পড়া যুবক, লাল, নীল ঝিকঝিক পাঞ্জাবী, সাদা, সবুজ স্যান্ডেল।। মেয়েদের পাখি, কিরণমালা, আর ইট-পাথর ভরা জামা, বাহারি রঙ, মুখের লাজুক হাসি দেখে ভালই লাগছিল। রাস্তায় মানুষ জন, সবাই ই আছে উৎসবের মেজাজে, তুলছে নানা ঢং এ সেলফি। পুরান ঢাকা পার হয়ে যাচ্ছি আর দেখছি মানুষের আনন্দিত মুখ। নিউ মার্কেট, গাউসিয়া পার হতে হতে মনে হচ্ছিল ভূতুড়ে এলাকা। আর পুরো বৃষ্টিস্নাত ফাকা ঢাকা জুড়ে কেমন ফুরফুরে মেজাজ।
যদিও সবখানেই একরকম না। রাইফেল স্কয়ার পার হতে হতে দেখলাম এক জুটি জমায়ে ঝগড়া করে যাচ্ছে। শুটকা-পাতলা গার্লফ্রেন্ড কে তার জিম করা মাসলম্যান বয়ফ্রেন্ড কিছুতেই মানাতে পারছেনা। সে বারবার চেস্টলক করে গার্লফ্রেন্ডকে চলে যাওয়া থেকে আটকাতে যাচ্ছে। আর গার্লফ্রেন্ড মোটামুটি যেই দৃষ্টি দিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বয়ফ্রেন্ড এর গায়ে শুটকির গন্ধ। হায়রে, মাসলম্যান বয়ফ্রেন্ড জানেনা, অভিমানের শক্তি বাহুবলের চেয়েও বেশি। আর একটু এগোতেই দেখলাম, এক নতুন দম্পতি, জামাই হেভিসে বউরে ঝাইড়া যাইতেসে, আর বেচারি শুকনা মুখ করে সামনের দিকে তাকায় আছে।বউটার চেহারা দেইখা কি যে মায়া লাগতেসিল, বলার মত না... সুখের কথা হইল গোমড়া মুখ এর চেয়ে হাসি মুখের সংখ্যাই বেশি।
তারচেয়ে বড় কথা ঈদ এর সময় বের হওয়া মানেই চোখ এবং মনের যথেষ্ট খোরাকের যোগান দেওয়া, কেননা এইদিন কমবেশি সকল ছেলেকেই দেখতে সুন্দর লাগে। আর যেহেতু আমার রিকশায় অন্য কোন পোলা থাকেনা, কাজেই দৃষ্টি এবং মনোযোগ অনেকখানিই আমার দিকে থাকে, আর নিজেরে মনে হয় একদিনের এঞ্জেলিনা জোলি। ...
যাই হোক, সবকিছু পেড়িয়ে বৃষ্টি ছাপিয়ে গিয়ে পৌঁছাইলাম বইন এর শ্বশুরবাড়ি। সেই বাড়িতে মোটামুটি অতিথিদের বন্যা। আর মজার মজার খাবার এর কথা নাই বললাম। সুখের বিষয়, সেই বাড়িতে অনেকগুলি ফুটুগ্রাফার আছে, যাদের এই দক্ষতা আছে আমার মত হস্তিনীকে কিছুটা দেখনসই করে তুলার। কাজেই নানা ঢং এ, নানা পোজ এ শুরু হইল ছবি তুলা। যদিও, বাড়িতে ঢুকা মাত্রই আমার দুলাভাই আমারে বলল, আমার জামাটা দেখতে মাছের আইশ এর মত, আর আমাকেও লাগছে মাছের মত। প্রথমে একটু মায়া মায়া চেহারা করে বল্ললাম, অন্তত এটা বলতে পারতা যে মারমেইড এর মত লাগতেসে। কিন্তু দেখি বদ বেটারে কিছুতেই লাইন এ আনা যায়না। তখন সব ঝাইড়া বললাম, হাহ... জিবনে এমন সুন্দর মাছ দেখসস??? অবশেষে ঈদের রাতের পার্টি করতে বোন দুলাভাইরে কাউয়া ভিজা বানায়, বাড়িতে নিয়াসছি।
যখন ছোট ছিলাম, তখন ঈদের দিন টারে মনে হইত কি জানি কি... কেননা সেদিন সারাদিন কেউ বকা দেয়না। কাক ডাকা ভোরে উঠে মায়ের সেমাই পরটা ভাজা দেখতাম, বাবার নামাজের জন্য রেডি হওয়া দেখতাম, বাবা নামাজ পড়ে ফিরত আসার আগে আগে রেডি হয়ে বসে থাকতাম সালাম করে সালামি নিতে। আর চলত চাচাত-ফুপাত ভাইবোনদের সাথে দর কষাকষি, আমরা ওদের বাড়ি যাব্ না ওরা আসবে। ঈদের দ্বিতীয় আর তৃতীয় দিনগুলিতেও থাকতো দাওয়াত আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া। আর ঈদের তৃতীয় দিন রাতে মনটা খারাপ হয়ে যেত চিন্তা করে যে ঈদের দিন শেষ, এখন আবার পড়তে বসতে হবে। এখন আর সেই আমেজ নেই, কেউ বকা দেয়না, আর পড়তে বসতেও নাই জোরাজুরি। বাবা নাই, কাজেই বাবার নামাজের আগে রেডি হওয়ার তাড়াও নেই। এখন আছে পড়তে বসার চেয়েও বড় জেলখানা, আর তার নাম অফিস। আল্লাহর রহমত, উহা ৩০ তারিখের আগে খুলবেনা।
যাই হোক, ভাল খারাপ মিলায়ে প্রতিবারের মতই একটা নতুন ঈদ আসে, এবং প্রতি বছরের ঈদেই দেখি জীবন পুরাই বদলায় গেসে, আগের বছর যা ছিলাম, এ বছর তার পুরাই উলটা। হয়ত সামনের বছর আরো বদলাবে। এই পরিবর্তনে এখন এতোটা অভ্যস্ত আমি, যে যাই কিছু হোকনা কেন, চেষ্টা করি বর্তমান যেই সময়, সেই সময়টা পুরোটা উপভোগ করতে।
কথা শেষ করি। আশা করি, বাকি সবাই ও একটা সেরাম ঈদ কাটাইসেন। সবাই আছেন আনন্দে। যারা সকাল থেকে ঈদ মানাচ্ছেন, তারা নিশ্চয়ই এখন ক্লান্ত শরীরে সালামি হিসাব করতেসেন, বা সারাদিনে কি কি ঘটসে তা ভাবছেন, তারা আমার বোরিং লেখাটা পড়ে ঘুমায় যান। আর আমরা যারা রাত জাগা পাখি, তাদের ঈদ শুরু হইছে এখন, এখন আমাদের পার্টির সময়, লাফানির সময়, দাত কেলানির সময়, নাইচা-গায়া পাগলামি করার সময়, নন-স্টপ আড্ডার সময়। (তথ্যটা দিয়া রাখলাম, যাতে একটু খানি জ্বলে আমাদের আনন্দ দেইখা)।
ঈদ মুবারাক সবাইকে। ঈদ শেষে আসেন আমরা কালকের দিনেও একদিনের জন্য হলেও দাত কেলাই, রিকশাওয়ালারে হাসিমুখে ১০ টা টাকা বেশি দেই, আমাদের দিকে বাড়িয়ে দেওয়া হাতগুলিকে খালি হাতে না ফেরাই। আসেন আমরা ঈদ উদযাপন করি দিনে, রাতে, সকালে, সন্ধ্যায়।
ঢাকাইয়া মেজাজে বোলেতো...... আসেন আমরা ঈদ মানাই .........
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
ভীতু রাজকন্যা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ভ্রমরের ডানা
জেনে ভাল লাগল, যে আমার মত মানুষ আরো আছে। মাকে সান্তনা দাওয়া যাবে।
শুভ ব্লগিং।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৪২
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: সুন্দর দিনলিপি। ইদের দিনে ঘুমানো খারাপ না। আমার ও একই মতামত। মিলে গেল দেখছি। শুভ ব্লগিং।