![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপরের হেডলাইন পড়ে যদি কেউ ভাবেন আমি খুব ভাবগম্ভীর জ্ঞানী কোনকিছু লিখব, তাহলে ভুল ভাবছেন। অনার্স মাস্টার্স এই একি বিষয়ে পড়েও এ বিষয়ে আমার ধারনা ক্লাস ওয়ান টু লেভেলের। ভারি ভারি Terminology গুলো কোনদিনই বুঝিনি, এক্সপার্ট রেফারেন্স জানিনা। গ্রামীণ কৃষক যেমন ধানের জৈবিক গঠন বুঝেনা, কিন্তু ধান ফলাতে জানে পেটের দায়ে, এ বিষয়ে আমার পড়াশোনা তেমনি, হাল্কার উপর ঝাপসা। কিন্তু তারপরও এ বিষয়টা পড়ে যতটুকু বুঝতে পেরেছি, সেটা আর কিছু হোক আর না হোক আমার নিজেকে, নিজের চিন্তাকে বদলাতে অনেক সাহায্য করেছে। আর সেটাই আমার চরম পাওয়া, অন্তত আমার কাছে। আজকের লেখাটা মুলত অই পরিবর্তনটার একটা ধারাবিবরণী।
প্রথমেই বলে রাখি দুই মাস আগেও আমি ছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ এর ছাত্রী। ৫ বছর পড়ে কি শিখলাম সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতে গিয়েই দেখলাম যে বইপত্রের জ্ঞানে অর্জন আমার লবডঙ্কা হলেও আমার চিন্তার জায়গায় একটা বেশ ভালই পরিবর্তন হয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আসলেই এমন একটা স্থান যেটা আপনার মানবিক দিকগুলির সেরা জায়গাগুলি বের করে আনতে পারবে, যদি আপনার ইচ্ছা থাকে। আমার অভিজ্ঞতা কেন আমি লিখছি তা জানিনা, হয়ত এটা আমার কাছে খুব মজার মনে হয় তাই, হয়ত আমি চাই আমার আজকের চিন্তাগুলি সংরক্ষন করে রাখতে যেন আজ থেকে ৫ বছর পর আবার ঘুরে দেখতে পারি ভাবনাগুলি। হতে পারে আমি চাই নিজের চিন্তাগুলি জানাতে। একি সাথে কোন অগ্রজ বা এবিষয়ে পারদর্শী যদি আমার এ লেখা দয়া করে পড়ে ধরিয়ে দেয় কোথায় কোথায় আমার বোঝার ভুল আছে, সেটা হবে বাড়তি পাওনা।
তো শুরু করি।...।
একদম ফার্স্ট ইয়ারে উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ এ ভর্তি হওয়ার পর পরিচিত মহলে বেশ হাসাহাসি শুনলাম। যেহেতু সাইন্স এর ছাত্রী ছিলাম, সামাজিক বিজ্ঞান এর বিষয়গুলি নিয়ে ধারনাও কম; কাজেই বুঝতেও পারছিলাম না যে আসলে কি পড়ব!! বারবারি মনে হচ্ছিল আমাকে কি নারিদের এনাটমি পড়াবে?? :o
ক্লাসে গেলাম, প্রথমেই যেই কোর্স এর সাথে পরিচিত হলাম, তার নাম “Introduction to women and gender studies”. নামে Introduction হলেও আজকে মাস্টার্স এর পর এসে বুঝি, এটাই ছিল পুরো সাবজেক্ট এর মাথা। ৫ বছর ধরে যা যা কিছু আমরা পড়ব তার সবচেয়ে সহজতম ছোট্ট ছোট্ট ব্যাখ্যা দিয়ে সাজানো একটা কোর্স, যা খুব সুন্দর করে পোলাপানের মাথায় ঢুকে যায় এবং বেশ টেকসই জ্ঞান, সহজে বের হয়না। যারা জ্ঞানী হন, তারা তো জ্ঞানীই, আমার মত গাধা গরুরা মুলত এই কোর্সের ধারনা দিয়াই চালায় নেয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলব, এই কোর্সটা একি সাথে খুব কোমল ভাবে স্টুডেন্টদের মনে একটা ধাক্কা দেয়, এটা বুঝিয়ে দেয়ার মাধ্যমে যে তার এ পর্যন্ত জানা নারি-পুরুষ সম্পরকে অনেক ধারনাই ভুল হতে পারে। কিভাবে সেটা নিজের জায়গা থেকে বলছি।
কোর্সটা প্রথমেই আমাকে বলল শোন মেয়ে, তোমারে নারির বায়োলজিক্যাল ডেফিনিশন পড়াইতে ডাকিনি, ডেকেছি নারীর সামাজিক ডেফিনিশন পড়াইতে।আর নারী পুরুষের সামাজিক বিভেদটাই জেন্ডার। জানাল বিভিন্ন সমাজে নারীকে কিভাবে দেখা হয়, নারী ও পুরুষের পার্থক্য কিভাবে সামাজিক ধ্যানধারণা অনুযায়ী নির্ধারিত হয় এবং আশ্চর্যজনক ধরে নেয়া হয় যে নারী ও পুরুষের এই পার্থক্যগুলো আসলে জৈবিক। ছোট্ট একটা উদাহরন, women are emotional and men are rational, women are dependent men are independent, women lives in private and men lives in public. এর কোনটাই বায়লজিকাল না, কিন্তু সমাজে বিষয়টা এভাবেই চলতে থাকে যে মেয়ে এবং ছেলে জন্ম থেকেই এভাবে তৈরি হয়।
এ পর্যন্ত পড়েই আমি বই থেকে মাথা উঠায় চারপাশের পৃথিবীর সাথে একটু কথাগুলি মিলায় নিলাম, এবং দেখলাম, আসলেই আমার প্রতি অনেকের ধারনা এমন, আমার নিজের অনেক জায়গায় মনে হয় আমি এমন, আমার মা, বোন প্রতিটা মানুষের ক্ষেত্রেই এই মাপকাঠির খুব বেশি হেরফের হয়না।
তারপর আসল এই সামাজিক পার্থক্য ও নারীকে হেয় করে ভাবার ফলাফল, সারা পৃথিবীতে নারির অবস্থা কিছু চরম সত্য এবং ভয়াবহ রকম শকিং পরিসংখ্যান নিয়ে যখন সামনে আসল মনে হল কোর্সটা বলতেসে ... বাবারা যা ভাইবা আসছ তাতে দুনিয়া জুইড়া নারির অবস্থা কিন্তু বেশি ভালা না, তারা আছে কঠিন মারার উপর। একটা পরিসংখ্যানের শুধু উদাহরন দেইঃ সারা পৃথিবীর ওয়ার্ক লোড এর ১০ ভাগের ৭ ভাগ বহন করে নারী, কিন্তু সারা পৃথিবীতে নারীর মালিকানাধীন সম্পত্তি ১০০ এর ভিতর ১ ভাগের চেয়েও কম।
এবং এই প্রথম আমি নিজে নারী হয়ে নিজের প্রতি সমবেদনা বোধ করলাম, এবং একি সাথে লজ্জিত বোধ করলাম যে আমিও গতানুগতিক চিন্তার বাইরে ভাবতে পারিনি। নিশ্চিত আমার মত আরও অনেক স্টুডেন্ট ই এমনটা ভাবতে পারেন।
তারপর মনে হইল, অই মিয়া এইটাই যদি নিয়ম না হয়, তাইলে এত বছর ধইরা চইলা আসছে কেম্নে এইটা?? উত্তর দিল পরের বিষয়গুলি, Patriarchy. বা পিত্রিতন্ত্র (বানান ভুল, কিন্তু অভ্র তে সঠিক বানানটা আমি লিখতে পারিনা)। জানলাম কিভাবে Patriarchy পরিবার, আইন, শিক্ষা এবং অন্যান্য মুল সামাজিক সংগঠন গুলির মাধ্যমে এই ধারনাগুলি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকায় দেয়, এবং আমরা এটাকেই স্বাভাবিক ভাবতে থাকি। Patriarchy যুগের পর যুগ ধরে প্রবাহিত হতে থাকে socialization এর মাধ্যমে, শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, আইন ইত্যাদি মাধ্যমে।
এ পর্যন্ত আসার পর আবার চারপাশের সাথে মিল খুজলাম এবং পেয়েও গেলাম। সত্যি কথা, মহা রাগ হইসিল। মনে হচ্ছিল, শালার পোলারাতো কম শয়তান না, কি একেক খান ফন্দি বাইর করসে মাইয়া গুলারে দমায় রাখার জন্য। আজকে থেকে এইগুলারে এক হাত দেইখা নিমু।
নারিবাদ, নারী অধিকার এসব বিষয়েও ধারনা পেলাম। বহুজনকে নব্য ফেমিনিস্ট হইতে দেখসি এই এক কোর্স পইড়াই। আর আমার কাছে মনে হইতেসিল, একি ভাই, যা জেনে আসলাম আজ পর্যন্ত, সবি দেখি অন্যরকম। আর এই ইস্যুতে তর্ক-বিবাদের তো অভাব ই নাই। মনে হইত পোলাগো হাজার বছরের মারা দাওয়ার শোধ এই তরকে জিতাই উঠাইতে হবে। খালি তর্ক না কইরা সবটির চামড়া ছিল্লে গায়ের জ্বালাটা কমতো।
একটু খানি সহ্য করার ক্ষমতা দিল একি সেমিস্টারে এন্থ্রপলজি কোর্স। এই কোর্সটা দেখায় দিল মানুষের মধ্যে কত বৈচিত্র্য, কত পার্থক্য সমাজভেদে। এক দেশে যা পুন্য, আরেক দেশে তা পাপ। সবার আগে এই বৈচিত্র্য মানতে হবে। নারীর অবস্থান সব সমাজে কমবেশি এক হলেও আছে ভেদাভেদ বৈষম্যে, আচারে...আরো অনেক কিছুতে। মানবসমাজের কোন নির্দিষ্ট ফরম্যাট নেই। সহ্য করার ক্ষমতা দিল এই কারনে যে আমি সমাজের একটা জায়গা নতুন ভাবে, পরিচিত চিন্তার নতুন রুপ দেখে আমি অস্থির হয়ে গেসিলাম, আর এই সাবজেক্টটা আমাকে দেখায় দিল... নতুন এর কি অভাব রে পাগলা... এই দেখ কত রকমের মানুষ, আর কত রকম সমাজ। নতুনকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নাওয়ার একটা কঠিন ফাউন্ডেশন ছিল এটা আমার জন্য।
আর ছিল সাইকোলজি, যা অই সময়ে কিছু না বুঝে পড়লেও এখন বুঝি, women and gender, reason of difference, discrimination, domination, negative attitude এইগুলির কারন বোঝার ক্ষেত্রে human psychology বোঝার প্রয়োজন প্রচণ্ড এবং মনে হয় এই বিষয়টা আরো পরেও রিপিট হওয়া উচিত কেননা মাত্র ফার্স্ট ইয়ারে এটা বুঝাটা স্টুডেন্টদের জন্য too early.
আর বাকি ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ার জুড়েই কোর্স ছিল সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন মুল ধারার উপর ধারনা, এবং কিভাবে patriarchy, gender discrimination এই জায়গাগুলিতেও বেশ ভালভাবেই established তা খুটিয়ে খুটিয়ে বুঝায় দাওয়া। Political Science, public administration, sociology, economics, international relation প্রতিটা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত থিয়োরিগুলি সম্পরকে প্রাথমিক ধারনা, কিভাবে এই থিওরি গুলি gender biased, এবং কিভাবে এখনও এই যুগে এসেও আমরা এগুলোকে বেদবাক্য ভেবে বসে আছি, জেন্ডার লেন্স থেকে এ বিষয়গুলি দেখলে কেমন হত, তা জানতে পারছিলাম প্রতিটি বিষয়ে।
কখনও অসহ্য হয়ে যেতাম, মনে হত বেশি বাড়াবাড়ি করে, এত ভুল ধরার কি আছে। এখনও বুঝি এতদিনের গোড়া বিশ্বাসের জায়গাগুলি এভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে বলেই এমন লেগেছে, আর কতগুলি জায়গায় হয়ত আসলেই ভুল ধরা হয়েছিল শুধু ভুল ধরার জন্যই। আর সবসময় ই মনে হত, চেনা সামাজিক কাঠামোগুলির মুখোশ একটু একটু করে খুলে যাচ্ছে।চরম confused চিন্তাভাবনা চলত সারাক্ষন। যেমনঃ Care এর মত বিষয় ও যে একটি ভোগ্যপণ্য হতে পারে, product হতে পারে, সেটা মানতে পারছিলাম না, আবার global care chain সেটা প্রমাণসহ দেখিয়ে দিচ্ছে যে দেখ আজকের বাজারে Care ও একটা পন্য, এটার কেনাবেচা হয় এবং পশ্চিমা বিশ্ব তুলনামূলক অনুন্নত দেশ হতে নিজ দেশে অপেক্ষাকৃত কম মুল্যে এ পণ্য আমদানি করে এই সেবা পাওয়ার জন্য। ইকনোমিক্স কোর্সে জানতে পেরেছিলাম এই বিষয়ে।
সবচেয়ে কঠিন ধাক্কার জায়গা ছিল Culture, Society and Religion নামের একটা কোর্স পড়া। মা, মাতৃত্ব এর মত একটা প্রতিষ্ঠিত মহৎ(so called) ধারনার ভিতরেও যে কত ধরনের রাজনীতি, স্বার্থ হাসিলের জায়গা থাকতে পারে তার কিছুটা ধারনা পেয়েছিলাম এখানে। বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করি। আদিম যুগে, প্রতিকুল প্রকৃতি এর সাথে লড়াই করতে গিয়ে মানবজাতির টিকে থাকার সবচেয়ে বড় উপায় ই ছিল বংশবৃদ্ধি করা। আর যেহেতু, কোন ডাক্তার তাদের শিখায়নি যে সন্তান উৎপাদনে নারী ও পুরুষ উভয়েরই ভুমিকা আছে, কাজেই তারা ভাবত নারী অলৌকিক শক্তির অধিকারী। সেকারনেই তারা নারীকে সবচেয়ে সুরক্ষাপূর্ণ স্থানে রাখা শুরু করল, যেন সে সন্তান জন্ম দিয়ে মানবজাতির বংশধারা কে টিকিয়ে রাখতে পারে, পুরুষ বেছে নিল শিকার, নিরাপদ আশ্রয় খোজার মতন কাজগুলি, কেননা তাকে সন্তান ধারন করতে হয়না। নারীও কিন্তু খাদ্য সংগ্রহের কাজ করে যেত নিয়মিত, কিন্তু সেগুলি ছিল মুলত ফল-মুল, শাক সংগ্রহ, জ্বালানী সংগ্রহের কাজ। যেহেতু শিকার একটি ভাগ্যের ব্যাপার, কাজেই নারীর এই সংগ্রাহক ভুমিকাই তার গোত্রের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করত। সুতরাং, নারী পেল মায়ের স্থান, দেবির স্থান, নারী হয়ে উঠল পূজনীয়। ঝামেলাটা শুরু হল যখন উদ্ভাবন শক্তির বিকাশে পুরুষ শিখল কিভাবে শিকার করে আনা খাদ্য সংরক্ষন করতে হয়। কিভাবে পশু পালন করতে হয়। সম্পত্তির মুল্য বিচারে যথার্থ ভাবেই নারীর আনা শাকপাতার তুলনায় পুরুষের গরু, ভেড়া বেশি মুল্য পেল। কাজেই পুরুষ হয়ে উঠল নারীর চেয়ে ধনী। কিন্তু, একই সাথে শুরু হল আরেক্ টি সমস্যার। পুরুষের মৃত্যুর পর তার এই সম্পত্তির ভাগ কে পাবে? নারী বহুগামি হলে তা নির্ধারণ সম্ভব না। কাজেই উত্তরাধিকার নির্ধারণের সমস্যা নিষ্পত্তির জন্যই নারীকে একগামি হতে হল, উদ্ভাবন ঘটল বিবাহ প্রথার। নারী মানবজাতিকে রক্ষাকারী থেকে হয়ে উঠল তার বেছে নেওয়া পুরুষটির বংশধারা রক্ষাকারী। সে হয়ে উঠল পুরুষের মালিকানাধীন, অন্যান্য সন্তান এবং গরু-ভেড়ার সাথে। হারানো সকল শৌর্য এর শোক থেকে মুক্তি দিতে সমাজ নারীকে সান্ত্বনা দিল মাতৃত্বের গৌরব এর কাহিনিতে ভুলিয়ে। সেই সাথে জুড়ে দিল নাড়ির টান, মমতা ইত্যাদি কতগুলো শব্দ যা নারীকে সন্তান লালন-পালন করার উৎসাহ দিল, যা পুরুষ ও করতে কোন সমস্যা ছিলনা, কিন্তু পুরুষ এই ঝামেলার কাজটি নিতে চায়নি।
আজো মাতৃত্ব নারীর কাছে একটা স্ট্যাটাস সিম্বল। মাতৃত্ব নারীর চয়েস না, নারীত্বের প্রমান স্বরূপ। সন্তান ধারনে অক্ষম বা স্বেচ্ছায় মাতৃত্ব কে বেছে না নাওয়া নারিদের যে পরিমান সামাজিক হেয় সহ্য করে যেতে হয়, সেটা খেয়াল করলেই প্রভাবটা বোঝা যাবে। একি সাথে নাড়ির টান, মমতা ইত্যাদি কন্সেপ্ট গুলি নারীর অন্যান্য ক্ষেত্রে বিকাশে বাধা দেয়। যার কারনে নারী সফল ক্যারিয়ার ছেড়ে নির্দ্বিধায় লেগে যান সন্তান পালনে। একজন পুরুষের ক্ষেত্রে যা ভাবাই যায়না, কিন্তু বায়োলজিক্যালি এ কাজটি করতে পুরুষের কোনই ঝামেলা নেই। যে নারী ক্যারিয়ার এর কারনে সন্তান এর লালন পালন নিজ হাতে করতে পারেন না, সমাজ তাকে নিষ্ঠুর উপাধি দেয়, নারী নিজেও কুণ্ঠিত বোধ করে। সেই সাথে সন্তানের সবভাব-চরিত্র কেমন হবে, তার দায় ও মায়েরই।
একি অবস্থা ছিল ধর্ম বিষয়ক আলোচনাতে ও। একটু মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি ধরমের ইতিহাস পরলেই বোঝা যায় যে ধর্ম আসলে কোন আকাশ থেকে নেমে আসা বিষয় না, বরং এটি মানুষেরই তৈরি। আর সে কারনেই মানুষ এবং স্থান বদলালে ধর্মের আচার আচরন, আইন কানুন সবি বদলে যায়। নারীর প্রতি ধর্মের বৈষম্য, দৃষ্টিভঙ্গি এবং সময়ের সাথে বদলে যাওয়াই বলে দেয় যে এই বৈষম্য সৃষ্টিকর্তা করেননি, এর উদ্ভাবক মানুষ ই। অথচ ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে সবচেয়ে সহজভাবে বঞ্চিত করা যায়। এই বিষয়গুলি পড়া ছিল আমার কাছে অসম্ভব মজার, একি সাথে অসম্ভব ভাবে দাগ কেটে যাওয়ার মত।
মুলত এই জায়গাটাই আমার চিন্তায় একটা পরিবর্তন আনে, আর সেটা হল আমার চারপাশে আমি যা দেখি, তার সবটাই সত্যি নয়। সত্যের মধ্যেই অনেক লুকানো সত্য থাকে, থাকে মিথ্যাও। এবং আমি যা দেখি তাকে আমি কিভাবে গ্রহন করি তাকেও প্রভাবিত করে পুরবলব্ধ জ্ঞান। কাজেই তাকেও সঠিক বলা সম্ভব না।
একই সাথে অনেক কুসংস্কার থেকেও মুক্তি মিলছিল। গতানুগতিক ব্যাখ্যাকেই সত্য বলে ধরে নিতে পারছিলাম না আর কোনকিছুতেই। বুঝতে হলে আরও জানতে হবে বলে মনে হত। মুলত তখন থেকেই একটু ভারিক্কি বিষয়ে পড়ার অভ্যাসটা তৈরি হয়, নাইলে আগে কেউ আমারে দড়ি দিয়া বাইন্ধাও অইগুলা পড়াইতে পারতনা।
সেই সাথে প্রতিটি জায়গায় নারীর প্রতি বৈষম্য, অত্যাচার এর বিষয়গুলি বারবার পড়াতে, নারীর সমাজে অবদান, অবমুল্যায়ন এর বিষয়গুলি কিছুটা জানতে পারার পর একটা জিনিস কিছুটা শিখতে পারলাম, আর সেটা হল নারীকে শ্রদ্ধা করা, নারীর কাজকে মুল্যায়ন করা। শুধু ছেলেরা না, মেয়েরা নিজেরাও নিজেদের সঠিক মুল্যায়ন করতে পারেনা, এবং এটা করতে পারাটা আসলেই বেশ কঠিন। সাথে এটাও বুঝতে পারা যে গর্ভ ধারন ছাড়া অন্য কোন জায়গায় নারীর কাজ, পুরুষের কাজ বলে আলাদা কিছু নেই এবং সে পার্থক্যটা শুধুই জৈবিক। এর উপর ভিত্তি করে অন্য জায়গাগুলিতে পার্থক্য করাটা আসলে কঠিন গাধামি, কিন্তু আমরা সহস্রাব্দ বছর ধরেই এটা করে আসছি। এবং আজো এই প্রশ্ন আসলে ছেলেরা যখন শার্ট খুলে ভিন্নতা প্রমান করতে চায় তখন স্থূলবুদ্ধি দেখে হাসি পেলেও দুঃখও লাগে যে এই ধারনাগুলি এতটাই মজ্জাগত যে ঘোর বিজ্ঞানের যুগেও মানুষের মানতে কষ্ট হয়।
থার্ড ইয়ারে এসে যখন এই নতুনত্তে এক্টূ অভ্যস্ত, তখন নারিবাদ সম্পরকে বিশদ কিছু কোর্স পেলাম, জানলাম বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা। সত্যি বলছি বেশিরভাগই মনে হইত বুলশিট, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়।অনেক সময় এটাও মনে হত, আরে এই সমস্যা কি খালি মায়া গো নাকি, পোলাগো ও তো আসে, কই অইটা নিয়া তো কিছু কইলানা। কিন্তু কিছু জায়গা আসলেই ভাবার মত।
আর ছিল Development, শুরুর দিকে এই কোর্সটা একটু খটমটে লাগলেও এটা গোটা বিশ্ব জুড়ে উন্নয়নকে ঘিরে যে রাজনীতি, চিন্তাভাবনা, কুটকচালি সেটার সামান্য ধারনা হলেও দিবে। আর নারী উন্নয়নের বিভিন্ন ধারার পরিবর্তন, ব্যবহার, exploitation , টাও বেশ মজার। একি সাথে আমি এই জায়গায় এসে একটু ঝামেলাতেও পরলাম বুঝতে আর সেটা হল আসলে নারীর জন্য উন্নয়ন কোনটা হবে? Development is a vast and flexible approach. প্রতিটা মানুষের কাছে তার উন্নয়নের মাপকাঠি আলাদা। পশ্চিমা বিশ্বের জেনি উন্নয়ন বলতে যা বোঝে তা মেহেরপুর এর সকিনা কোনদিন জানেইনি। আবার সকিনা যা পেলে খুশি তার কয়েকগুন বেশি জেনির কাছে থাক্লেও উনার সন্তুষ্টি হচ্ছেনা। বিষয়টা প্রতিটি মানুষের কাছে ভিন্ন। এবং এটা যেমন পুরুষের কাছে, তেমনি নারীর কাছেও। এই প্রথম আমার চিন্তা ভাবনা একপেশে নারীর পাশ থেকে সরে গিয়ে নারী পুরুষ দুই দিক থেকেই শুরু হল। এবং মনে হল চিন্তায় ভুল আছে, ভাবতে হবে মানুষের কি প্রয়োজন, শুধু নারীর কি প্রয়োজন তা ভাবলে কাহিনি আগের মতই দাড়ায়, discriminative.
কিন্তু সবচেয়ে খারাপ কাজটা করল অল্প একটু Post modern feminism. Development approach এর সাথে গলা মিলায়ে এক্কেরে সিধা মাথায় বাড়ি দিয়া বলল, অই মিয়া এতদিন যা পইড়া আস্লা তা কি সত্যপুত্র যুধিষ্ঠির এর কথা? তোমার feminism ও biased, এবং এইটা আরও বেশি কইরা নারী পুরুষ বিভেদ বানাইসে। নারিরে আলাদা ভাবে আগে মানুষ না বুইঝা দেখত, এখন বুইঝা দেখে। ঘটনা নারীর না, ঘটনা দুর্বলের প্রতি সবলের। নারী কি নারীর উপর অত্যাচার করেনা, সাহেব বেটি কাজের বেটি মারেনা? জেনি যা খায়, পায়, সকিনা কি তা পায়?? তেমনি চৌধুরি সাহেব ও আবুলরে পিটায়, পল এর যা আছে, কুদ্দুস্ তা চোখেও দেখেনাই। অন্যায় অন্যায় ই, দারিদ্র ও সবার জন্য সমান। খিদা সবারি সমান লাগে। সেইটা নারীর ও, পুরুষের ও। আসল কাহিনি কার Power আছে, তা নিয়া। নারী একটু বেশি খারাপ অবস্থায় ছিল, কিন্তু তোমরা সমস্যাটারে সমস্যা হিসাবে না দেইখা নারীর সমস্যা বানায় ফেল্লা। নারীর কাজের মুল্যায়ন, নারীর বৈশিস্ট এইগুলিন কত ভালা কইতে কইতে তোমরা নিজেরাই যে নারিরে আরও বেশি আলাদা করস, তা দেখনা? তোমরাই বললা, নারী পুরুষের কথা আলাদা করা যাইবনা, এদিকে নারীর কোন দিক ভালা তা কইতে গেলে তো দেখি হুশ থাকেনা। আরেক দিকে আবার, নারী পুরুষের কাজ এক কইতে গিয়া তোমরা নারিরে দিয়া পুরুষের কাজ করাইস, কেন নারীর কাজ কি খারাপ, যে তাগো নিজেরে ভাল ভাবতে হইলে পুরুষের কাজ ই করন লাগব? সবাইরে বায়াসড কয়া দোষ ধর, তুমি আসলে সবচেয়ে বড় বায়াসড।
এই জায়গায় আইসা আমি হয়া গেলাম হতবুদ্ধি। অ মা, এগিন কিয়া কয়? সারারাত রামায়ন পইড়া সিতা কার মা?? তাইলে কি ভাই আগের কথা ঠিক??? না, তাও ঠিক না। বহুত চিন্তা ভাবনার পর আমি ঠিক করলাম, feminism আসলে কিছু পাগলি মহিলার সৃষ্টি। এগোর খায়াদায়া কোন কাম আছিলনা, হের লাইগা এইসব আজিরা কথা লিখত। সেই সাথে ঠিক করলাম, ভাই নারী পুরুষ ভাইবা লাভ নাই, মানুষ নিয়া ভাব। এবং যাই ভাব্বা, এইটা চিন্তা কইরা ভাব্বা যে এইটা চেঞ্জ হইতেও পারে, নাইলে এম্নে হাতুরির বাড়ি ই খাবা। Humanistic Approach এ আরেক্টু ঘি ঢালল development tools এর উপর একটা কোর্স, যেটা Worldwide development initiatives and human development এর উপর ধারনা দিল এবং বুঝাইল কিভাবে আস্তে আস্তে চিন্তাভাবনা Humanistic Approach এর দিকেই আগাচ্ছে। আমিও ভাব্লাম গুষ্টি মারি তোর feminism এর। আজ থেকে আমি development এর লোক।
ফাইনাল ইয়ার আইসা পাইলাম Post modern feminism আরও detailed. সত্যি কথা এইবারো কিছু বুঝিনাই। খালি বুঝতাম Post modern feminism নামে beyond feminism হইতে পারে, কিন্তু আমার কাছে উহা beyond understanding level. তাও কয়েকটা জায়গায় আমার মনে হইছে জিনিস্টা আমার মাথায় হাত বুলায় বলতেসে, রাগ করিস্নারে বেটি, আমিও তোর কথাতেই যাব, খালি একটু ঘুরায় আর কি। তোরা খালি নারী নারী করতেসিস, তাইলে third gender, transgender আর বাকি সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন এর লোক দের কথা কে বলবে? আমিত বলিনাই নারীর কথা বলিস না, আমি বলসি সমস্যার কথা বল আর সমাধানের, তারপর দেখ কে সেটা ফেস করতেসে। মানুষ দেখরে বাপ, নারী পুরুষ না।
আর শেষ দিকে এসে নিজে কি ভাবব সে চিন্তায় এসে আমি ভাবতেসিলাম, আসলে কিছুই পুরাপুরি ঠিক না, আবার কিছু পুরাপুরি ভুল ও না। আমার কাছে যা ঠিক, তা হয়ত অন্যের কাছে ভুল, আর সেটা সেভাবেই মেনে নাওয়া উচিত। সবি পরিবর্তনশীল, কারন মানুষ বদলায়, মানুষ কখনও থেমে থাকেনা। তাই প্রতিটা মানুষের বিশ্বাসকেই সম্মান করা উচিত।
আর সেই সাথে অবশেশে এই চিন্তা টুকু করতে সমর্থ হতে পারলাম যে “আমি হতে ব্যাতিক্রম” মানেই অস্বাভাবিক না, ভুল না। মানুষকে বুঝতে হলে মানুষের ব্যাতিক্রমতাকে সহজভাবে নিতে পারতে হবে, এবং বুঝতে হবে যে বৈচিত্র্যই মানবজাতির সৌন্দর্য। কেউ ব্যাতিক্রম বলে বিভেদ করার মানে সৃষ্টির প্রতি অবজ্ঞা করা। সেটা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদি আর যত রকম ভাবে আজ পর্যন্ত মানুষের বিভেদের মাপকাঠি তৈরি হইসে, তার প্রতিটার জন্য সত্য।
এবং অসম্ভব সত্যি যে এই মানসিক পরিবর্তনটা আসলেই আমাকে অনেক বেশি ভারমুক্ত করে দিসে, কারন মানুষ হিসেবে আমার ঘ্রিনা (বানান ভুল, কিন্তু অভ্র তে সঠিক বানানটা আমি লিখতে পারিনা) করার বা বিভেদ করার মত মানুষের সংখ্যা আজকে নাই ই প্রায়। এমনকি নিজের চারপাশেও আমার আজকাল খটমট প্রায় শূন্যের কোঠায়, কারন আমি প্রত্যেকটি মানুষের মতামত কেই মেনে নেই, ভুল বলে উড়ায় দিতে পারিনা।
এই ভাবনা টাই আরো একটু উস্কে দিল ফিলসফি। ফিলসফি সুন্দর করে বলল... বাবা শত বছর ধরে মানুষ কত কি বলে আসছে্। আজ যা সত্যি ছিল, নতুন জ্ঞান কাল ই তা মিথ্যা করে দিসে। আজ যা বিশ্বাস, কাল তাই ই অবিশ্বাস। তুমি বিশ্বাস করলে ঈশ্বর আছেন, তুমি না বিশ্বাস করলে নাই। চরম সত্য বলে কিছু নাই, শেষ বলে কিছু নাই।
আমার বোঝাটা সঠিক কিনা জানিনা, কিন্তু knowledge-wise এই ধারনা আমাকে একদমই ০ বানায় দিল, কিন্তু এবার আমি তা সহজভাবেই মেনে নিলাম। আমি ঠিক করেই নিলাম, আজ থেকে আমার কাজ শুধু জানতে চাওয়া, আর কিছু নয়, ভুল শুদ্ধ, সত্যি মিথ্যা কিছুই না ভাবা, শুধু জানা। পুরান জিনিস গুলি এখন থেকে এই নতুন ব্ল্যাংক জায়গা থেকে দেখব, আর নতুন টা নাওয়ার সময় অবশ্যই ভাব্ব এটাই শেষ কথা না। সোজা কথায় আজ থেকে আমি নিউট্রাল অবসারভার।
এরকম একটা জায়গা থেকে যখন রিসার্চ এর কোর্স এবং ফিল্ড এক্সপেরিএন্স করলাম ফাইনাল ইয়ারে, তখন মনে হল আসলে এটাই পারফেক্ট টাইম। কেননা ফেমিনিস্ট রিসারচ মানেই মানুষের বিষয় এক্সপ্লোর করা। আর একজন মানুষকে আরেকজন মানুষ যদি এক্সপ্লোর করতে যায় এবং তার আগে থেকেই কিছু গোঁড়া বিশ্বাসের জায়গা থাকে, তাহলে গবেষণায় তার রিফ্লেকশন অবশ্যই হবে। ৪ বছরের একটা লম্বা প্রসেস এর মধ্যে দিয়ে ভেঙ্গে গরে আবার ভেঙ্গে এমন্ একটা জায়গায় দাড় করায়দেয়, যেখানে আপনি সবকিছু মানতে পারবেন, কিন্তু কিছুই চরম সত্য বলে ভাবতে পারবেন না। তাও যে ম্যানিপুলেশন হয়না, তা না। আর রিসারচের কাজে গ্রামে গঞ্জে, নানা পেশার মানুষ, ঘুরে বেড়িয়ে নানা রকম মানুষ দেখা, জানার অভিজ্ঞতার সাথে কিছুর তুলনা হয়না।
এরপরে মাস্টার্স, আরেকটু বড় পরিসরে Development এর ক্ষেত্রে gender debate, contemporary concerns , যা অনেক খানিই Post modern feminism এর সুরে কথা বল্লেও আনে নতুন চিন্তা ভাবনাও।market Strategy, exploitation, capitalism এর প্রভাব দেখলে শুধু নারী নারী করে গলা শুকানো টা অনেকটাই সঙ্কীর্ণ চিন্তা ভাবনা মনে হবে। capitalism is the new god in this competitive world blowing out all the previous discriminative gods. South Asian feminism concern, neo liberalism, sustainable development, green development এর জায়গায় এসে মনে হচ্ছিল যে হ্যা এখন আমার সাবজেক্ট সমসাময়িক বিষয় গুলো নিয়ে ভাবছে। শুধু নারী নারী করে পরে নেই।
সাথে আরও আসল Masculinity Studies. এই বিষয়টা পরিচিত করল এক নতুন থিওরি এর সাথে আর তার নাম, Hegemonic masculinity বা বাংলায় আধিপত্যবাদী পুরুষতন্ত্র। এই কনসেপ্ট টা বলে, আধিপত্যের কতগুলি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। Power ও domination হল তার মধ্যে সবচেয়ে মুখ্য। সারা পৃথিবী জুড়ে রিয়েল ম্যান এর বৈশিষ্ট্য হিসেবে আসলে এই পাওয়ার খাটানোর বৈশিষ্ট্য গুলোই ভাবা হয়। একজন পুরুষ কে শক্তিশালি হতে হবে, বুদ্ধিমান হতে হবে, সৎ হতে হবে, নির্ভরশীলতা, পুরুশালি হাবভাব, রাগি, যুক্তিবাদী, ধনী, সফল, আরো কত কি। এইসব গুনাবলি আসলে পুরুষের না, আসলে আধিপত্য সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় গুনাবলি, যা নারীর জন্য ও প্রযোজ্য হতে পারে। পুরুষকে প্রতিনিয়তই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, নিজেকে প্রমান করতে হয় যে এসব গুনাবলি তার মধ্যে আছে। কোন একটা জায়গায় পড়েছিলাম যে, একজন নারীর তুলনায়, একজন পুরুষের কাছে তার পুরুষত্ব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, Hegemonic masculinity এর এই স্ট্যান্ডার্ড বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে সরে যাওয়া মানেই ওই পুরুষ আর রিয়েল ম্যান থাকতে পারছেন না। এবং এর মানে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে লাঞ্ছনা সহ্য করতে হবে। কিন্তু, সব পুরুষের কি এই স্ট্যান্ডার্ড বৈশিষ্ট্যগুলি ধারন করা সম্ভব? না, সম্ভব না। সে কারনেই পুরুষ তার বৈশিষ্ট্যের ঘাটতিগুলি মেটাতে চান অপেক্ষাকৃত দুর্বলের উপর domination এর মাধ্যমে। আসল কথা আধিপত্য।সেটা নারীর উপর পুরুষের হতে পারে, হতে পারে পুরুষের উপর পুরুষের ও, কিংবা নারীর উপর নারীর, পুরুষের উপর নারীর ও হতে পারে। কেননা, Power ও domination এর কোন জেন্ডার নেই।
আবার এই Hegemonic masculinity এর সাথেই উদ্ভব হয় Emphasized femininity এর। এর অর্থ নারী আধিপত্যের গন্ডির ভেতরে থাকতে থাকতে, এক সময়ে এই আধিপত্যকে সম্পূর্ণ ভাবে মেনে নিতে শুরু করেন, ভাবেন এই আধিপত্যই সত্যি, বাস্তব, প্রাকৃতিক। সেটা কিন্তু সবখেত্রেই সত্যি। একজন মেয়ে কখনও চায়না তার পুরুষ সঙ্গীটি দুর্বল হোক, কেননা Emphasized femininity তাকে বলে সে একজন দুর্বল পুরুষের উপর নির্ভরশীল হতে পারবেনা। Emphasized femininity তাকে Hegemonic masculinity এর পরিপুরক হতে শেখায়। যেমনঃ পুরুষ হবে শক্তিশালি, তাই নারী হবে দুর্বল বা শক্তির প্রদর্শন করবেনা।
এবং এই কোর্স ধারনা দিল, পুরুষ ও ইউনিভার্সাল কোন সংজ্ঞার ভিতরে পড়েনা। আধিপত্যবাদী বৈশিষ্ট্য ধারনের কম্ বেশির উপর নির্ভর করে পুরুষ হয় বিভিন্ন প্রকারের।
এই সাবজেক্ট টা সত্যি সত্যি জেন্ডার স্টাডিজকে কমপ্লিট করে দিল, জেন্ডার স্টাডিজ কে একপেশে থেকে truly Human Oriented করে দিল।
আর সবশেষে জেন্ডার স্টাডিজ আমাকে বদলে দিল অনেক জায়গায়। কি কি জানেন?
প্রথমত, দিল গতানুগতিক প্রতিটি বিষয়কে একটু ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা।
দ্বিতীয়ত, দিল acceptance. নতুন যেকোনো কিছুকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা। যদিনা সেটা কোন সীমা লঙ্ঘন করে, বা অন্যের ক্ষতির কারন হয়।
তৃতীয়ত, শেখাল মানুষকে শ্রদ্ধা করতে। কাউকেই ছোট করে দেখার উপায় নেই, প্রতিটা মানুষের কাছ থেকেই কিছু শেখার আছে। বিনয়ী হতে শিখাল।
চতুর্থত, দিল মানুষকে বোঝার ইচ্ছা। understanding human psychology কখনই নিখুত ভাবে সম্ভব না। কিন্তু আপনি যখন একজন মানুষকে তার মত করে বুঝার চেষ্টা করবেন, তখন কখনই আপনার মতামত তার উপর চাপিয়ে দেওয়ার মত অঘটন ঘটবে না।
তারপর দিল self realization, প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের কাজের কোথায় ভুল ছিল তা ভাবার ক্ষমতা। আমার বাগান আমার তালগাছের যুগ শেষ।
জানার ইচ্ছা এবং পরিসরটাকে অনেক খানি ছড়িয়ে দিল।
Positive minded হতে উতসাহ দিল। প্রতিটি ঘটনার ভাল দিকগুলি আগে খুজে বের চেষ্টা।
Tolerance level বাড়াতে সাহায্য করল, extremist হতে মানা করল। শিখাল thankful হতে।
আর শিখাল মানুষ হতে... বিশ্বাস করতে শিখাল আমি নারী না, পুরুষ না, কালো না সাদা না, মুসলিম না, হিন্দু না, এশিয়ান না, ইউরোপিয়ান না, কোনটাই না...।
সবার আগে আমি মানুষ।
যদি বলি এই সবগুলি আমি শিখে গেছি, তাহলে সেটা হবে চরম hypocrisy। কিন্তু আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি শেখার............ আমার goal মানুষ হওয়া।
আর এই goal টা আমার পক্ষে একা নির্ধারণ করা সম্ভব ছিলনা, যদি জেন্ডার স্টাডিজ না পড়তাম।
Thank you Gender Studies…. Thanks a lot.
৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:৩০
ভীতু রাজকন্যা বলেছেন: লিখে ফেলুন ম্যাডাম, মনে হয় পড়তে ভালই লাগবে। নাহয় ছোট ছোট করে একেক্টা ক্লাস লিখে ফেলবেন। আমরা হয়ে যাব অনলাইন ছাত্রছাত্রী।
২| ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ২:১৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার পরালেখাটা আপনাকে বিমোহিত করেছে, নারীকে আপনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন: জেনেছেন সময়, সমাজ ও পারিবারে নারীর অবস্হান।
প্রতিটি নারীকে েকটা সাবজেক্ট হিসেব, সারমর্ম টুকু পড়ানো দরকার।
আজ কয়দিন আমার কমেন্ট ক্ষমতা ছিল না, তাই আপনার লেখা পড়ার পরও কিছু বলটে পারিনি।
৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:৩২
ভীতু রাজকন্যা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ, সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্য। সত্যি বলতে কি আমি লেখার সময় ই ভাবছিলাম, এত বিশাল লেখা, তার উপর বোরিং বিষয়, আমার লেখাটা কেউ পড়বেনা। কিন্তু, লেখাটা দাওয়ার পর ধারনা টা বদলে যাচ্ছে। ধন্যবাদ ধারনা বদলে দাওয়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:০৫
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
. Kintu shob e amar majorer credits dibe. Ar onek extra class o ache.
Valo laglo. Emon ekta post amaro deya uchit. But ami eto diverse classes korechi je konta chere konta likhbo. Ami amar major er upor joto class korechi tar koyekgun beshi korechi onno class