নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মামুনের ব্লগ

আল মামুন খান

একজন অতি সাধারণ মানুষ যে নিজের মনের আনন্দে লিখতে ভালোবাসে।

আল মামুন খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিষন্ন বারিধারায় # ছোটগল্প

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৫

খাবার টেবিলে আজো বাবা সেই একই কথা তুললেন। শিহাবের সিদ্ধান্তের কথা জানতে চাইলেন।
‘আমিন সাহেব ফাইনালি বিষয়টা ক্লোজ করতে চাইছেন। ওনারা আর কতদিন অপেক্ষা করবেন?’
প্রশ্নটা শিহাবকে করা হলেও শিহাবের মায়ের দিকে তাকিয়ে জানতে চান। রাবেয়া বেগম শুধু শিহাবের দিকে একবার তাকান। যাকে নিয়ে বিষয়টির অবতারণা, সে নীরবে মাথা নিচু করে খেয়ে চলেছে।

বেশ ক’দিন ধরেই শিহাবের বিয়ের ব্যাপারে বাবা-মা প্রেশার দিয়ে আসছেন। মিলিকে ওনারা পছন্দ করেছেন। মিলি পছন্দ করার মত মেয়েই বটে। তবে শিহাব জানিয়েছে, নিজেকে একটু নিজের পায়ে দাড়াতে দিতে। এরপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে।
তবে আজ ওর বাবা একটু বেশীই শক্ত হয়ে সামনে এলেন। তাই শিহাবকে কিছু একটা বলতেই হল।
‘আমাকে দু’দিন সময় দাও।’
‘ওকে, দুদিন মানে দু’দিন ই।’

নিজের রুমে এসে নেটে ঢুকে। রেখাকে ইনবক্সে ইনভাইট করে।
রেখা! দুটি শব্দের একটা নাম। অথচ কতটা আনন্দের শিহরণ বয়ে যায় দেহের প্রতিটি তন্ত্রীতে… শিরায়-উপশিরায়! এই মেয়েটির জন্য কত বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছে, কাটছে… হয়ত সামনেও কাটবে।
একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে নিজের এই মুহুর্তের বিয়ে সংক্রান্ত জটিলতাকে দূর করতে চায়। কিন্তু জীবন নিজেই এক জটিল ঘুর্নাবৃত্ত। এতো সহজেই যদি সব জটিলতার অবসান হত!
রেখার সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হল।
ওকে সবকিছু খুলে বলল। হাতে দু’দিন সময় আছে বাবাকে সিদ্ধান্ত জানানোর।

রেখার নিজের জীবনে সমস্যার অন্ত নেই।
একটা জটিল স্নায়বিক ডিজর্ডারে ভুগে বহুদিন ধরে ওর বাবা বিছানায় শয্যাশায়ী। মাকে হারিয়েছে পাঁচ বছর আগে। সেই থেকে বাবা-ই ওর ধ্যান-জ্ঞান। বাবাকে ঘিরেই দিন-রাত্রির প্রতিটি অণুক্ষণ… কেটে যায় বেলা অবেলার সাঁঝ বেলা।
এরকম এক বিষন্ন ছায়াঢাকা জীবনে শিহাব একটুকরো রোদ্দুর হয়ে স্মিত হাসির তাজা ঝলক হয়ে আসে ওর জীবনে। নিস্তব্ধ জীবনটা হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুহুর্তে ভরে উঠে। সবই ঠিকভাবে এগিয়ে চলছিল। কিন্তু একটু সময়ের অভাব… আর একটু সময় পেলে হয়ত সব ঠিক হয়ে যেত।

একটু আগে শিহাবের সাথে চ্যাটে অনেক আলাপ হল।ওদের সম্পর্কের কথাটা শিহাবের বাসায় জানানোর সময় হয়েছে। এ ব্যাপারে রেখার কাছ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে চাইল শিহাব।
কি বলবে রেখা?
যখনই নিজের নতুন জীবনের কথাটা ওর কল্পনায় এসেছে, একটি অসহায় প্রিয় মুখ সেখানে নির্মম বাস্তবতা হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর বিয়ে হয়ে গেলে বাবার কি হবে?
একটা অনুচ্চারিত প্রশ্নবোধক চিহ্ন ওকে শিহাবের প্রশ্নের উত্তরে তড়িৎ জবাব দিতে দ্বিধাগ্রস্ত করে তোলে। সেও কিছুটা সময় চায়।
একটি নির্দিষ্ট মধ্যরাত ওদের দুজনের সম্পর্কটাকে পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে একটা পলকা সুতার উপর ঝুলে থাকে।

সেদিন মধ্যরাতের কিছুক্ষণ আগে থেকেই নিজের রুমে অস্থির সময় কেটে যাচ্ছিল শিহাবের। রেখার সিদ্ধান্ত জানানোর কথা আজ। আরো মিনিট দশেক বাকী আছে এখনো। এই দশটি মিনিট শিহাবের কাছে যেন দশ যুগের মত মনে হল।

মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে সেই অনেকক্ষণ হল।
রেখা তার সিদ্ধান্তের কথা জানায় নাই। একটা বোবা অনুভূতি নিয়ে ধীরে ধীরে শিহাব ওর বাবার রুমের দিকে এগিয়ে যায়। নিজেকে প্রচন্ড রিক্ত এবং অবসন্ন লাগছে। একটা বোবা অনুভূতির ভিতর থেকে নিজের প্রিয় মানুষটির উপর একটা আদিগন্ত ক্রোধ মিশ্রিত ভালোবাসা সমপরিমাণে ঘৃণার মোড়কে ক্ষণে ক্ষনে উকি দিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিটি মানুষেরই হয়ত প্রিয় কোনো যায়গা থাকে। যেখানে গেলে নিজের অজান্তেই একটা ভালোলাগার আনন্দ মধুর শিহরণ জাগে। রেখার ও এমন একটি যায়গা হল ক্যাম্পাসের বড় দীঘিটির উত্তর পাশের কদম গাছটির তলায়। শিহাবের সাথে কতটা বিহ্বল সময় কেটেছে এইখানে!
আজ সম্পর্কটা যখন একেবারেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, শেষবারের মত কি শিহাবকে অনুভব করতেই রেখা এখানে এসেছে?
হয়তবা… হয়ত না।
আকাশ মেঘে ঢাকা। ক্ষণে ক্ষণে বিজলি আকাশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে দূরত্ব পার হবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে যেন। ইতোমধ্যে টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কদম গাছের পাতার বেষ্ঠনি ভেদ করে মেঘবালিকারা রেখার হৃদয়ের কষ্টকে দূর করতেই যেন নিজেদের স্নেহাশীষ রুপী বারিধারার ঝিরঝিরে বর্ষণ উপহার দিচ্ছে।
সেদিন রাতের কথা ভাবে রেখা।
মাঝরাতের একটু আগে রেখার বাবার শরীরটা প্রচন্ড খারাপের দিকে যায়। পরিচিত ডাক্তারের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে রেখা মোবাইলে করণীয় জেনে নেয়। এর ভিতরে কথা বলা অবস্থায় কারো মোবাইল থেকে কল আসার টোন অনুভব করে।

সেই ফোনটা শিহাবের ছিল।
সে রাতে শিহাবকে আর ফোন করা হয়নি রেখার। অনেক কিছু হয়ত বলার ছিল রেখার… সম্পর্কটিকে একটা পরিণতিও দেয়াও যেত হয়ত… অনেকগুলো যদি এবং হয়ত পেরিয়েও ওরা একও হতে পারত।
কিন্তু সেরাতে রেখার মোবাইলের ব্যালেন্স একেবারে জিরো হয়ে যায় ডাক্তারের সাথে কথা বলে। আর শিহাব সিদ্ধান্ত জানানোর নির্ধারিত মধ্যরাতে রেখা নির্দিষ্ট সময়ে কলব্যাক না করাতে ওকে ফোন করলেও একগেজড পায়।
পরে আর শিহাব ফোন করে না।
একটা প্রচন্ড অভিমানে শিহাব মুখ ফিরিয়ে নেয়।
পরের দিন সকালে রেখা শিহাবকে ফোন করে… অন্তহীন রিং বেজে চলে। এক্সময় ওপাশের ফোনের মালিক বেজে চলার মাঝেই ফোনের গলা টিপে ধরে।
রেখার সাথে শিহাবের সম্পর্কটা ভেঙ্গে যায়।
ভালোবাসাটাও কি ভাঙ্গে? নষ্ট হয়? সম্পর্কের মত ধবংস হয়?

একটু আগে পুকুরের অপর পাশের কালো পীচঢালা পথ দিয়ে ফুলে ফুলে সাজানো একটি সদা গাড়িকে মধ্যমণি করে বেশ কয়েকটি গাড়ি চলে যায়। ঐ সাদা গাড়িটিতে রেখার ভালোবাসার মানুষটি অন্য একজনের হাত ধরে জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রেখার মনে হয়, এই পুকুরকে অতিক্রম করার সময়ে একবারো কি শিহাবের ওদের এই প্রিয় যায়গাটির কথা মনে জেগেছিল? রেখাকে কি একবারো মনে পড়েছিল?

এক বিষণ্ন সন্ধ্যায় বিষন্ন বারিধারায় সিক্ত হতে হতে এক মায়াবতী নারীর হৃদয় পুড়ে যায়… অন্তরটা জ্বলে ক্ষয় হতে থাকে… সম্পর্কগুলো এমন পলকা-হাল্কা হয় কেন? ভালোবাসাটাও কি সময়ের প্রয়োজনে নিজের রঙ পরিবর্তন করতে শিখে গেল?
হায় ভালোবাসা! হায় প্রেম!
প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে নিজের একটি প্রিয় যায়গা থেকে উত্তপ্ত দেহমন নিয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে এক যুবতী ফিরে চলে… উপলব্ধিতে সব নাই হবার অনুভূতি নিয়ে ঠোঁটের কোণে রহস্যময় একচিলতে হাসি লেগেই থাকে।
এই হাসি জীবনের চলার পথের পাথেয়… ভিতরের অবদমিত কষ্টকে শক্তিতে রুপান্তর করে সামনে আগানোর মূলমন্ত্র।
বিষন্ন বারিধারায় কদম গাছটির পাতা ছুয়ে ছুয়ে ভালোবাসা এক যুবতির প্রিয় যায়গাটিকে ঘিরে রাখে। কিন্তু সে একবারো পিছু ফিরে চায় না… হয়ত এই ভালোলাগার যায়গাটিতেও আর আসা হবে না।

(শেষ)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৪

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: এইরকম ঘটনা খুব স্বাভাবিক। প্রেমে পরার আগে প্রেমে পরার পরের প্যাচগুলি মাথায় রেখে যদি কেউ আগাইতো, তাইলে, প্রেমের আর ভালোবাসা হয়ে ওঠা হইতোনা ৮০% খেত্রে। কিন্তু এইটা সত্যি যে প্রচন্ড কস্ট ছাড়া ভালোবাসা কি এইটা বোঝা যায়না। আহা! কতদিন যাইনা ফুলার রোডে...

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬

আল মামুন খান বলেছেন: সুন্দর বললেন ভাই।

"আহা! কতদিন যাইনা ফুলার রোডে..." - এর ভিতর দিয়ে কেমন হৃদয় পোড়া ঘ্রাণ পাচ্ছি বলে মনে হল :(

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: অন্তর্জালের নেটওয়ার্কের ভিতর দিয়েও পোড়া গন্ধ পান?? ভাই, আপনার ঠোটের উপর নাক লাগাইছেন নাকি স্মোক ডিটেক্টর...

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:১৩

আল মামুন খান বলেছেন: হাহ হা হা... না ভাই, দুটোর একটাও নয়। আমি আমার হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে চেষ্টা করলাম।

শুভ সকাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.