নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাস্তবতায় বিশ্বাসী একজন স্বপ্নবিলাসী মানুষ।

নিচু তলাৱ উকিল

আমি স্বপ্নবিলাসী একজন মানুষ

নিচু তলাৱ উকিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প- সরস্বতীপূজা || নিচু তলার উকিল

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৪

সরস্বতীপূজা
নিচু তলার উকিল
'
স্কুল বন্ধ থাকিবার দরুন সেইদিন ঘুম থাকিয়া বহুত দেরী করিয়াই জাগিয়া উঠিয়াছিলুম।নিত্যদিনকার নিয়মতান্ত্রিক কার্যাদি সম্পন্ন করিয়া যখন ভাঙা আয়নার সম্মুখে দাঁড়াইয়া জটধরা চুল গুলোর জট ছাড়াইতে ছাড়াইতে নিজস্ব তেল কালা বদন খানি চাহিয়া দেখিতেছিলুম ঠিক এমতাবস্থায় জঠর মহাশয় চোঁচোঁ করিয়া উঠিল।ইহা যে এমন করিয়া উঠিবে তাহা এক প্রকার নিশ্চিত করিয়াই ঠাওর করিতে পারিয়াছিলুম।গত দিবস রজনীতে জঠরে তেমন কিছুই পড়ে নাই,ভাতের মাড়ের অমৃত ডাইল আর দুমুঠো ভাত ইহাই দিয়া উদরপূর্তি করিয়াছিলুম।কিন্তু আমাদের বাঢীতে এইরূপ ভোজন রোজ রোজ-ই আয়োজন হইয়া থাকে।তৎকালীন সময়ে ভাবিতুম এইরূপ ভোজন মনে হয় শুধু আমাদের বাঢীতেই একমাত্র হইয়া থাকিত।আর দুনিয়ার তাবৎ বাঢীতে রাজ বিলাসী ভোজন হইয়া থাকিত।কিন্তু না উহা যে ভুল ভাবিয়াছিলুম তা বহুদিন বাদে বিভিন্ন ভোজনালয়ে আমার সরব উপস্থিতির মাধ্যমে নির্ণয় করিতে পারিয়াছিলুম যে ঐরূপ ভাবনা গুলো নিতান্তই ভুল ছিল।তখন নিতান্তপক্ষে কৈশরে অবস্থান করিয়াছিলুম বলিয়াই উহা ভাবিবার প্রয়োজন বোধ মনে করিলুম না তবে তৎকালীন সময়ে ভিন্ন আর দশজন ছেলের তুলনায় আমার মেধাশক্তি, চিন্তাশক্তি যে ঢের মন্দ ছিলনা উহা ভাবিতেই আমার বড্ড চমৎকার লাগিত।কিন্তু অদ্যাপি উহা ভাবিয়া ভাবিয়া কোন কুলকিনারা পেলুম না।তাই অগ্যতা ঐরূপ ভাবনা গুলোকে বিসর্জন দিয়া একপ্রকার চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলুম"মা খিদা লাগিয়াছে খাইতে দিতে হইবে"প্রত্যুত্তরে শুধু এতটুকুই মাকে বলিতে শুনিলুম অদ্য ঘরে কোনরূপ খাদ্যাদি নাই।ইহা যে এক প্রকার অনুমিতি উত্তরেই হইবে ইহা বুঝিবার আর বাকী রহিল না।মায়ের উত্তর খানা এক রকম বাধ্য ছেলের মতই মানিয়া লইয়া ঘরের বাহিরে চলিয়া আসিলুম।বাঢীর সম্মুখে গণেশদার দোকানের ভাঙা বেঞ্চে বসিতে বসিতে তাহার সাথে ভাব জমাইতে লাগিলুম।খিদার জ্বালা যে রূপে বাড়িয়া চলিয়াছে ইহা করা যে অমূলক ছিলনা উহা নির্ণয় করিতে পারিয়াছিলুম বটে।এমতাবস্থায় প্রচণ্ড খিদা লইয়া এক খানা নোনতা বিস্কুট খাইবার লোভ কোনক্রমেই সামলাইতে পারিলুম না।যদিও পরক্ষণে খাইবার অভিপ্রায়টাই মোটামুটি জলাঞ্জলি দিতে হইয়াছিল।তদুপরি তো চেষ্টা করিতে দোষের কিছু নাই তাই অগ্যতা চেষ্টায় মননিবেশ করিয়াছিলুম।কোনো কিছু না ভাবিয়া অতি সন্তর্পণে ধীরলয়ে বিস্কুটের বয়ামে ডান হস্তখানা ঢুকাইয়া দিতে দিতে তোষামোদির সহিত বলিয়া উঠিলুম"দাদা তোমারে কিন্তু আজ হেব্বি দেখাচ্ছে একদম উত্তম কুমারের মতন।ইহা শুনিবামাত্র গণেশদা ঠোঁটের কোনাচে মুচকি মুচকি হাসির ঝড় উঠাইয়া এক খানা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছাড়িয়া বলিতে লাগিললেন" কি যে বলিস নারে উকিল তোর বউদি তো আমারে মফিজ্জ্যা বলিয়া ডাকে"।এক নিমিষেই গণেশদার মুখের উক্তি কাড়িয়া লইয়া আমি ইহার প্রতিবাদ করিয়া বলিয়া উঠিলুম আরে দাদা বউদি তোমারে অতি উত্তম ভাল বাসে বলিয়াই তো এমন কথা বলিয়া থাকে,,,,,ইত্যাদি ইত্যাদি। অগ্যতা দোকান থাকিয়া উঠিয়া যাইবার প্রাক্কালে গণেশদাকে বলিতে শুনিলুম"ঐ উকিল এই ডা লইয়া কিন্তু ২৪ টাকা হইয়া গেল পরের বার কিন্তু টাকা লইয়াই আসিতে হইবে,,,,,ইত্যাদি ইত্যাদি।
এক খানা নোনতা বিস্কুট খাইয়া যে পেটের খিদাকে রীতিমতো উসকাইয়া দিলুম উহা এখন ভাল মতই টের পাইতে লাগিলুম।হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল অদ্যতন তো সরস্বতীপূজা। তাৎক্ষণিক নিজের মনে কি যে আনন্দের ঢেউ বহিয়া গেল তা নির্ণয় করিতে পারিলুম না।স্কুলে অদ্যতন খিচুড়ি রান্ধা হইতেছিল উহা খাইবার লোভ কোনরূপেই সামলাইতে পারিলুম না।কিন্তু পরক্ষণে কি জানি একটা চিন্তায় মশগুল হইয়া পড়িলুম।উদ্বেলিত আনন্দ খানা কেমন জানি চুপসাইয়া গেল।পেটের খিদাটা বড্ড বেয়াড়া হইতে লাগিল কিন্তু ভাবিতে লাগিলুম হিন্দুদের পূজার খাবার কি আমাদের ধর্মে বা হাদিসে খাইবার জায়েজ আছে ?আবার ভাবিলুম এইরূপ খাবার ভক্ষণ করাটাও মনে হয় পাপকর্ম।অভাবে কি স্বভাব নষ্ট হয় নাকি স্বভাবে স্বভাব নষ্ট হয়?নাহ কোনভাবেই নিজের ভাবনাকে সঠিক জায়গায় নির্ণয় করিতে পারিলুম না। এমন করিয়া যে ইহাতে ছেদ পড়িবে ভাবিয়া ভাবিয়া অস্থির হইয়া উঠিলুম।তা সত্ত্বেও একাকী যাইবার একটা অদৃশ্য লজ্জাও মনের অভ্যন্তরে কাজ করিতে লাগিল।কিন্তু খিদার জ্বালায় উহাকে বিসর্জন দিয়া স্কুলের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলুম।পথিমধ্যে শরিফুল জ্যাঠার সহিত দেখা হইয়া গেল,উহাকে যাইবার নিমন্ত্রণ করিবা মাত্রই যাইতে রাজি হইয়া গেল বলিয়া নিজের প্রতি নিজেই যে এতটাই খুশি হইয়া উঠিলুম তা ভাবিবার অবকাশ পেলুম না।এক কথায় রাজী হইবারও যে হাজারটা কারণ অবশিষ্ট রহিয়াছে।জঠরের খিদা এমনি একটি অধ্যায় যাহা মানুষকে অপরাধ কর্ম সাধন করিবার একটা মহৎ উসকানিও দিয়া থাকে।হউক সেটা চুরিকর্ম কিংবা ডাকাতি,ছিনতাই। এমতাবস্থায় মানুষের মনুষ্যত্ব গুলো নির্জীব হইয়া চার দেয়ালের মাঝে বন্দি হইয়া পড়িয়া থাকে।আর থাকিবেই না বা কেন?পূজার উদ্দেশ্যে তৈরিকৃত খাবার ভোজন করিলে যে মহাভারত অশুদ্ধ হইয়া যাইবে তা ভাবিবার মানুষ অদ্যকার সমাজে যেমন বহুত আছে তেমনি আবার অশুদ্ধ যে হইবেনা এইরূপ ভাবিবার মানুষও বহুত আছে।
যাহাই হউক উহাও যে আমি উকিলের মতই ছাপোষা বাঢীর ছেলে।অভাব যেইস্থানে সুপারগ্লু আঠার মতো নিত্যদিন লাগিয়াই থাকে।সেইখানে কোথাও যদি একমুঠো মাগনা ভোজন করিয়া উদরপূর্তি করা যায় তাহা হইলে মন্দ কিসে? বিশেষ করিয়া সমাজের যারা অবহেলিত,খুবই দরিদ্র মানুষ দুবেলা দুমুঠো অন্ন যাদের কপালে জুটেনা।অবশেষে স্কুলে গিয়া পৌঁছিলুম বন্ধু সঞ্জয় আর পরেশ আমাদিহকে দেখিয়া কি রূপে যে টানিয়া লইয়া গেল মনে হইল আমরাই যেন অদ্যকার এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হইয়া আসিয়াছি। যাহাই হউক উহাদের খাতির যত্ন দেখিয়া গর্বে আমার বক্ষ খানা তর তর করিয়া ফুলিয়া উঠিল। কিছুক্ষণ পর দুই খানা প্লেটে নানা রকম ফলফলাদি তাহার সহিত গরম গরম খিচুড়ি আসিল। বন্ধু পরেশ নিজের হাতে প্লেট দুইখানা উঠাইয়া দিয়া বলিতে লাগিল "দোস্ত খাওয়া শুরু করিয়া দে"আমি আর সাতপাঁচ কিছু না ভাবিয়া অমনি ময়লাযুক্ত হাত খানা ঢুকাইয়া দিয়া ভক্ষণ করিতে লাগিলাম।পশ্চাৎ থাকিয়া কাহারে জানি বলিতে শুনিলুম আস্তে ভক্ষণ করিবেন দাদা আস্তে, হাত পুড়িয়া যাইবার ভয় আসন্ন।উহার কথাকে কোন রুপ ভ্রুক্ষেপ না করিয়া জোর প্রগ্রাসে চালাইতে লাগিলুম।কি যে তৃপ্তির সহিত খাইয়া উদরপূর্তি করিলুম যা পরক্ষণে বড় বড় ঢেকুর ছাড়িয়া উহার কার্যকারিতার জানান দিতে লাগিলুম আর ভাবিতে লাগিলুম এইতো কদিন আগে পরেশের সাথে একটা ঝগড়া হইয়া গিয়াছিল কি রাগ টাই না করিয়াছিলুম উহার প্রতি কিন্তু অদ্য কেমন করিয়া যে সে আমার নিকট মহান হইয়া উঠিল বুঝিতে পারিলুম না।তাইতো যাইবার প্রাক্কালে উহাকে দুই হাতে জড়াইয়া ধরিয়া পিঠ টা চাপড়াইয়া দিয়া বলিতে লাগিলুম সাবাস বেটা সাবাস সরস্বতী যেন তোদের কে বেশি করিয়া বর দিয়া থাকে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


অনেক কষ্টের কাহিনী

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪২

নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: ঠিক তাই ভাই বাস্তব জীবন এমনটাই হয়।

২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২১

রাজীব নুর বলেছেন: সাধু ভাষা তো ভুলেই গেছি।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০০

নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: তাই নাকি দাদা

৩| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পড়িতে যদ্যাপি যথেষ্ট বেগ পাইত হইয়াছে তথাপি কিয়ৎক্ষন পরেই কাহিনির কষ্টের কাছে তাহা অতীব ক্লিশ মনে হইল!

অতীব কষ্টের এক জীবন সংগ্রামী কাহিনী যথেষ্ট মুন্সিয়ানার সহিত বর্ণনা করিয়াছেন।

+++

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০০

নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভালবাসা জানবেন

৪| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:২৫

প্রামানিক বলেছেন: মন্দ নয়-- ভালই লাগল।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০১

নিচু তলাৱ উকিল বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.