![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানব মনের অনাবিষ্কৃত কল্পজগৎ। অনাস্বাদিত। রহস্যময়ী। ভাষার তেলরঙে তা হোক বাঙ্ময়। প্রকাশিত।
৪৫ থেকে ৪৮ বছর হবে লোকটার। নাম আমীরুল ফারুকী। বনানীর একটা বড় গ্রুপে ডাইরক্টর হিসেবে আছেন। অফিসিয়ালি সুত্রে উনার সাথে পরিচয়। ২৮ দিন ধরে একটা কাজ আটকে যাওয়ায় প্রচন্ড ঝামেলা চলছিলো। আমার উপর দায়ীত্ব এলো ফারুকী সাহেবের থেকে কাজ টা উদ্ধার করে দেয়ার। হাকিমের হুকুম। সেদিনই প্রথম পরিচয় উনার সাথে। চার দিনের মাথায় কাজ টা উদ্ধার হলো। স্যার যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।
.
এরপর থেকে উনার ওখানে যে কাজ গুলো দেয়া হতো সেই ফাইল গুলো আমার দেখতে হতো। ২০০৯ থেকে উনার সাথে কাজ চললেও উনাকে দেখেছিলাম ২০১৫ তে। ইফতারের দাওয়াতে স্যার সহ আমরা পাচঁজন গিয়েছিলাম উনার অফিসে। স্যার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমি অবাক হলাম, উনার কন্ঠ শুনে মনে হয়েছিলো উনি খুব সহজ সরল নরম প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু বাস্তবে উনি খুবই কর্কশ ব্যাবহারের একজন লোক। উনার অফিসের ম্যানেজারও উনার সামনে এসে মূর্তির মতো দাড়িয়ে কাজের রিপোর্ট দেয়। ২০১৫ এর পর উনাদের কোম্পানিতে আর কোন কাজ ছিলোনা বলে উনার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।
.
আমি যখন ২০১৬ তে যখন চাকরীতে ইস্তফা জানালাম, তখন মেইল পেয়ে উনি আমাকে মেইলের উত্তর করলেন। কিছুক্ষন পরেই কল করে সৌজন্যতামুলক খোঁজখবর নিলেন। কিন্তু গতো তিন / চার মাস থেকে তিনি প্রায় প্রতিদিন কল দেন। উদ্দেশ্য হলো তিনি চাকরীর পাশাপাশি নিজেই একটা কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চান। আর এজন্য আমার থেকে উপদেশ সাহায্য চান। প্রথম কয়েকদিন আমি অবাকবনে গিয়েছিলাম। আমার মতো সামান্য একজন ব্যাক্তির কাছে উনি ব্যাবসা সংক্রান্ত উপদেশ চাচ্ছেন? উনাকে উপযুক্ত কয়েকজনের সন্ধান দিলা এ ব্যাপারে উপদেশ পেতে। কিন্তু তিনি প্রতিদিন কল করেই যাচ্ছেন, আর একই বিষয় বার বার বলছিলেন। খুব বিরক্তবোধ করলাম। কিছু বললাম না। কল এড়িয়ে যেতে লাগলাম। উনিও বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল দেয়া শুরু করলেন। বিষয় টা খুব খারাপ লাগায় বেশ কিছু নাম্বার ব্লক লিষ্টে রাখলাম। কিন্তু উনি নতুন নতুন নাম্বার থেকে প্রতিনিয়ত কল করেই যাচ্ছেন। কয়েকবার কথা রেকর্ডও করেছি, কিন্তু উনার বার বার একই প্যাচাল। মাঝে মাঝে কেমন যেনো ফিসফিসয়ে কথা বলেন। আমি কেমন আছি, কি করছি, কেমন যাচ্ছে দিনকাল, এসব নিয়ে কেমন কেমন ভাবে যেনো জিজ্ঞাসা করে।
.
হুমায়ুন আহমেদ এর একটা কথা ভীষণ ভালো লেগেছিলো।
"মেয়েদের তৃতীয় নয়ন থাকে। এই নয়নে সে প্রেমে পড়া বিষয়টি চট করে বুঝে ফেলে। পুরুষের খারাপ দৃষ্টিও বুঝে। মুরুব্বি কোন মানুষ মা- মা বলেপিঠে হাত বুলাচ্ছে – সেই স্পর্শ থেকেও সে বুঝে ফেলে মা ডাকের অংশে ভেজাল কতটুকু আছে।"
হ্যাঁ, আমিও বুঝতে পারি তার এই প্রতিদিন কল করায় ঠিক কেমন ভেজাল আছে। ঘেন্না হয় আমার। বাপের বয়সী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলে যে সম্মান দেখিয়েছি সে সম্মানের যোগ্য তিনি নন। চক্ষুলজ্জা ভুলে এসব লোকের মুখে জুতার বাড়ি মেরে শিক্ষা দেয়াই উচিৎ। এর আগ পর্যন্ত এরা এদের শোধরাবেনা। নিকৃষ্টমনের লোকজনরাই এধরনের কাজ করতে পারে বা এধরনের কাজে আনন্দবোধ করে।
©somewhere in net ltd.