নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাধবী

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৬

দুই


এখনো সে কোন কথা বলছেনা।আমি যে গণক নই, না বললে তার সমস্যা বুঝতে পারবনা- এই সহজ কথাটা এই গাধী মেয়েটাকে কে বোঝাবে? বুঝতে পারছি সে কোন সমস্যায় আছে।গত সপ্তাহেও যখন কথা বলি, ওর গলা ভারী ছিল।অনেক পীড়াপীড়িতে শুধু এটুকু বলেছে - তার বিয়ের কথা হচ্ছে। হওয়াটাই সাভাবিক।এমন রূপবতী-গুণবতী মেয়ে, যাকে পেলে যেকোন পুরুষের জীবন ধন্য হয়ে যাবার কথা - রোজ তার বিয়ের প্রস্তাব আসবে- এতে আর বেশী কথা কি? মাধবী মাস্টার্সে উঠেছে। আমাদের দেশে বিয়ের জন্য এটাই উত্তম সময়।তাছাড়া আমাদের দেশের মেয়েরা কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতার কাছে 'আমানত' বৈ তো নয় ! তা সে যে আর্থ- সামাজিক স্তরেরই হোক।

আমার পেটের মধ্যে কেজিখানেক ইউরিন। লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে ছুটতে ছুটতে এসেছি। এশিয়ার দেশগুলোর মত হলে কথা ছিলনা। রাস্তার পাশে বা যেকোন জায়গায় প্যান্টের চেন খুলে দাঁড়িয়ে গেলেই হল। আশেপাশে কোন টয়লেট দেখছিনা। আমি অপেক্ষা করছি ওর সাথে কথা শেষ করে সবার আগে টয়লেটে যাব।

টেলিফোন বুথের কাঁচের ভিতর দিয়ে দেখলাম শাড়ী পরা দু'টো মেয়ে গল্প করতে করতে হেঁটে যাচছে।বাঙালী অধ্যুষিত ইউরোপের শহরগুলোর রাস্তায় হরহামেশাই এমন দৃশ্য দেখা যায়। তবু শাড়ী পরা কাউকে দেখলে অজানা খুশীতে মন ভরে যায়।কেমন যেন "আপন আপন" অনুভূতি জাগে।ইচ্ছে করে সামনে গিয়ে বলি, "আপু, ভাল আছেন?"

দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি টান হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় বিদেশে এলে। যখনকার কথা বলছি তখন প্রবাসীদের কাছে সবচেয়ে কাঙখিত জিনিস ছিল চিঠি।এখন মোবাইল, ইন্টারনেট হয়েছে। তখন প্রিয়জন-পরিচিতদের একটা চিঠি বা ফোনকল কোটি টাকার চেয়েও দামী মনে হত।সুকান্তের সেই কবিতার মত,
সকালের একটুকরো রোদ একটুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামী।

আমি এদিক থেকে ভাগ্যবান।মাধবী প্রতি সপ্তাহে আমাকে দীর্ঘ চিঠি লেখে।কি যে অসম্ভব সুন্দর সে চিঠি! আমি হাজার বার পড়ি আর সব কষ্ট ভুলে যাই।গত সপ্তাহে ছিল ব্যাংক হলিডে। সব বন্ধ। আমি ভেবেছি ওর চিঠি আসবেনা।অথচ আমার বন্ধুরা এক একটা শয়তানের ডিব্বা।তারা মাধবীর চিঠি লুকিয়ে রেখে বলছে, আগে তারা পড়বে।কি মুশকিল!! কোন মানে হয়? চিঠিতে কতকিছু থাকে- ভালবাসা, স্বপ্ন, অনুপ্রেরণা.....! আরো কত কি! এমন চিঠি দেয়া যায়? ওকে পাবার পর আমি আর কাউকে তেমন মিস করিনা। প্রথম প্রথম মায়ের জন্য মন কেমন করত। এখন সয়ে গেছে।

মাধবী কথা বলছেনা।আমি কান পেতে ওর নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার চেষ্টা করছি।এমন যে আগে কখনো হয়নি, তা নয়।একবার সে বলল, "আমার চিঠি তুমি অন্যদের পড়তে দেবে কেন?" আমি বললাম, "তাতে কি? ওরা আমার বন্ধু। তাছাড়া আমি আগে পড়ে তারপর ওদের দেই।" একটি চিঠিতে কিছু 'বেশি বেশি' ভালবাসার কথা ছিল। সেটা বন্ধুরা পড়েছে শুনে সে কেঁদে ফেলল। এরকম সময়ে আমার আলো, মেঘ, বাতাস বা নিদেনপক্ষে অতিথি পাখি হতে ইচ্ছে করে।সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ঠিক ছুটে আসব তার কাছে। তারপর ওর মুখটা দু'হাতে তুলে ধরে ওর চোখে চুমু খাব। ও হাউমাউ করে কেঁদে উঠে দু'হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরবে। আমি বুকের পাঁজরের মধ্যে ওকে আগলে রেখে বলব, "চুপ চুপ! আমার লক্ষী সোনা!"

আমাদের বাসা থেকে ঠিক চারটা বাসা পর একটি বাড়ীতে একটি প্রতিবন্ধী ছেলে থাকে।বয়স দশ-বারো।মাঝে মাঝে দেখি ওর মা ওর সকুল ব্যাগ ও বড় একটা ব্যাগসহ ওকে একটা গাড়ীতে তুলে দেয়।তার আগে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে গালে-মুখে চুমু খায়। তারপর হাত নেড়ে টাটা দেয়। গাড়ী চলে গেলে ওখানেই কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। কখনো দেখি বাবা-মা দু'জনেই ছেলেকে বিদায় দিচ্ছে।একদিন সকালবেলা ইসাবেলের সাথে দেখা। আলাপ করলাম যেচে। কথার এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনার ছেলেটি কোথায় যায়?" সে যা বলল তা আমাদের দেশে ভাবাও যায়না। এদেশে এসব বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য সরকারী হোম আছে।প্রতি পনেরো দিন পর হোমের লোকেরা এসে এসব শিশুদের নিয়ে যায় পনেরো দিনের জন্য। এই পনেরো দিন এদের লেখাপড়া, যত্ন - সব করে হোমের লোকেরা। পনেরো দিন পর আবার দিয়ে যায়। এটা তারা করে এসব শিশুর বাবা-মাকে রিলিফ দেবার জন্য।রোজ এমন একটি শিশুর যত্ন নিতে গেলে এদের অফিসের কাজের ক্ষতি হবে, তাদের ব্যক্তিগত জীবন আনন্দহীন, বোরিং হবে - তাই। কি অসাধারণ চিন্তা! বিদেশে আসার আগে এদের সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণাগুলো ছিল, কাছ থেকে এদের দেখার পর ধীরে ধীরে সেগুলো চলে যাচ্ছে।
আজ সকালে যখন ইসাবেল ছেলেকে বিদায় দেবার আগে আদর করছিল, তখন দেখে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। গত ২০ দিন বড় আপার সাথে কথা হয়নি। একমাত্র তার বাসাতেই টেলিফোন আছে। সবার খবর আমি ফোনে আপার কাছ থেকে পাই।

আমার গল্পের নাম কি দেব বুঝতে পারছিনা। মনমাধবী? নাকি মাধবীমন? নাকি শুধুই মাধবী? নাম যাই দেই, আমার শুধু গল্প নয়, পুরো পৃথিবী জুড়েই মাধবী ছাড়া আর কিছু নেই।আমার কিছু করার নেই। অনেকবার অনেক চেষটা করেছি। এক মিনিটের জন্যও ওকে মাথা থেকে সরাতে পারিনি।আজ এত বছর পরেও যখন ওর কথা ভাবি, অজান্তেই চোখের কোণ ভিজে ওঠে।ওকে ভালবাসার আগে আমি বুঝতামইনা যে একজন পুরুষমানুষ কি করে কাঁদে? আমি আসার সময় বিমানবন্দরে বিদায় দেবার সময় আমার বোনেরা কেঁদেকেটে হুলস্থুল। আমি কাঁদিনি। আমার কান্না পায়নি।এখন কাঁদি। রোজ কাঁদি।

মাধবীর সাথে যেদিন আমার প্রথম দেখা হয়, সে দিনটাকে আমার জীবনের সবচেয়ে ভাল, নাকি খারাপ দিন বলব, বুঝতে পারিনা।ভাল বলি এজন্য যে, ওর সাথে দেখা না হলে আমার পৃথিবীর কোন কিছুই অনুভব করা হতনা বলে মনে হয়। আর দুঃখের এজন্য যে, ওকে হারানোর পর যে কষ্ট আমি পেয়েছি বা এখনও পাচ্ছি, এর চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল।

দুপুর বারটা।একটি ক্যান্টিনে বসে আমার বন্ধু সুমন ও তার প্রেমিকা বন্যাসহ চা খাচ্ছি।সকাল থেকে আমরা ভার্সিটিতে ঘুরেছি; এক বন্ধুর ছোট বোনের সাথে হলের গেটে দেখা করেছি।ক্যান্টিনে খুব ভীড়। সবাই ছাত্র- ছাত্রী। হঠাৎ সুমন হাত তুলে বেশ খানিকটা দূরের এক টেবিলে ৩/৪ জনের একটি দলের দিকে ইশারা করে বলল, "এই মাধবী!" আমি তাকিয়ে দেখলাম মাধবী নামের সে মেয়েটি দেখতে উজ্জ্বল শ্যামলা, একটু মোটা, ছোটখাট গোলগাল মুখ, তেমন লম্বাও নয়।বন্ধুর ডাকে মেয়েটি খুশীতে ঝলমল করে উঠল। তারপর অনেকটা ছুটে আমাদের টেবিলে এসে বলল, "কি খবর?" তারপর বন্ধুর প্রেমিকার দিকে তাকিয়ে বলল, "তোমার খবর কি?" আমি লক্ষ্য করলাম, মেয়েটির চেহারা ভীষণ মায়াবতী।কথা বলছে খুব আন্তরিকতার সাথে। আমার বন্ধুর সে অনেক কাছের মানুষ, ওর চোখমুখ তা বলে দেয়। আমার সাথে পরিচয় হল সাদামাটাভাবে। যেমন হয় আর কি।তখন আমি কল্পনাও করিনি যে এই মেয়ে আমার সংগে আমৃত্যু এভাবে জড়িয়ে যাবে।

এক বছর পরে এই মাধবীকে দেখেই আমি চোখ সরাতে পারিনি। অসম্ভব সুন্দরী। স্লিম, গায়ের রং ও অনেক পরিস্কার। মানুষের চেহারা এতটা বদলে যায় কিভাবে আমি আজও বুঝিনা।

চলবে..........





মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২

বিজন রয় বলেছেন: পড়লাম।

এখাানেই শেষ কিনা?

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। না।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য। না শেষ না। এটি ধারাবাহিক গল্প। এ গল্পের পরিণতি আমি নিজেও এখনও জানিনা। এ পর্যন্ত ৭০ পৃষ্ঠার মত লিখেছি। অল্প অল্প করে পোস্ট দেব। দেখা যাক পাঠকের ভাল লাগে কিনা।

৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২০

সিফটিপিন বলেছেন: আগে পূর্বের পর্বটা পড়ে আসি।

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৪| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮

আলপনা তালুকদার বলেছেন: নিশ্চয়। ভাল লাগলে বলতে ভুলবেননা কিন্তু। আর খারাপ লাগলে অবশ্যই বলুন। লেখার দূর্বল দিক ধরিয়ে দিন।কৃতজ্ঞ থাকব আজীবন। সেই সাথে উপকৃত হবে পাঠকও। অনেক ধন্যবাদ....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.