![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী
চার
তথাকথিত প্রেম বলতে যা বোঝায় তা আমাদের ছিলনা।আমরা ক্যাম্পাসের জুটিদের মত একসাথে ঘোরা,গাছতলায় বসা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, এখানে- সেখানে সাজুগুজু করে বেড়ানো, কিংবা সন্ধ্যাবেলা কোন নির্জন স্হানে বা রিক্সায় কখনও কাছাকাছি আসিনি।
আমি সকালে ক্লাসে যাবার সময় দেখতাম গাছতলায় একটা জুটি বসে আছে। দুপুরে খেতে আসার সময়ও দেখি তারা স্বমহিমায় বিদ্যমান। বিকেলে লাইব্রেরীতে যাবার, এমনকি সন্ধ্যায় ফেরার সময়ও দেখেছি তারা টোনাটুনির মত গল্পে মশগুল। আমি রুমে ফিরে রুমমেটকে বললাম, "সারাদিনে ওদের সব গল্প ফুরিয়ে যাবার কথা। এখন নিশ্চয় একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছে, আচ্ছা তোমার বাবার কি বিয়ে হয়েছে?"
৪৪ বছরের এ জীবনে আমি মাধবীকে দেখেছি মোট ৯ দিন, তাও খুব অল্প সময়ের জন্য।আমরা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি।ও আমার বছর দু'য়েকের ছোট।দেশে থাকাকালীন আমাদের প্রেম ছিলনা। আমরা পরস্পরকে ভালবেসেছি এখানে আসার পর।আসার দিন বিশেক আগে ওর সাথে আমার দেখা হয় যখন আমি ওর শহরে যাই।ওই সময়টুকু আমাদের কথা হয়েছে খুবই আন্তরিক, বন্ধুর মত। কেন জানিনা ওকে দেখার পরের দিন থেকেই আমি মনে মনে ওকে মিস করতাম। লজ্জায় সেকথা বন্ধু সুমনকে বলিনি। ও কি ভাববে? তাছাড়া মাধবী আমার সম্পর্কে কি ভাবছে, সেটাও আমার কাছে পরিস্কার ছিলনা। ক্লিনিক থেকে সুমনের রুমে আসার পর আমি সারাদিন রুমেই থাকতাম। তখনো আমার নাকে ব্যথা আছে। সুমন ক্লাস, নাইট ডিউটি নিয়ে বিজি ছিল। সে সময়টা আমি মাধবীকে খুব মিস করতাম। কথা বলতে ইচ্ছে করত। মনে মনে আশা করতাম ও আমাকে দেখতে আসুক।
আমি ভাববার চেষ্টা করেছি কেন এত অল্প সময়ে ওকে আমার এত ভাল লেগেছিল? এখন বুঝি, ওর মধ্যে জাদু ছিল। ওর ব্যক্তিত্বের একটা অসাধারণ আকর্ষণ শক্তি ছিল। শুধু আমি না, যেই তাকে একটু কাছ থেকে দেখেছে, সেই তাকে ভালবেসে ফেলেছে এবং আজীবন মনে রেখেছে। খুব সহজে, বিনা চেষ্টায় ও মানুষের মনে গাঢ় ছাপ ফেলে যেতে পারতো। ওব বুদ্ধিদীপ্ত কথা, চিন্তার ব্যাপকতা, সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ক্ষমতা, মানুষকে খুব সহজে আপন করে নেবার সাবলীল যোগ্যতা তার ছিল।
আজ সকালে সাইকেল চালিয়ে ভার্সিটি যাবার সময় দেখি দুটো গাড়ী এক্সিডেন্ট করেছে। বেশী খতিগ্রস্ত গাড়ীর চালক ছেলেটি গুরুতর জখম।আমি দেখলাম স্যুট- টাই পরা এক ভদ্রলোক, কোন অফিস যাত্রী হবেন, ছেলেটিকে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়ী থেকে একা টেনে বের করার চেষ্টা করছেন।ছেলেটি রক্তাক্ত।তাকে বের করতে গিয়ে ভদ্রলোকের পুরো শরীর রক্তে মেখে গেছে।আমিসহ আরো ক'জন এগিয়ে গেলাম।সবাই কাজ ফেলে আহত দু'জনের শুশ্রুষায় ব্যস্ত। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর কি প্রাণান্তকর চেষ্টা! আমাদের দেশে হলে পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরে পড়ত। কে যায় হাসপাতাল-পুলিশের ঝামেলায়?
আমার মনে আছে, একবার বাড়ী যাবার সময় রাস্তায় দূর্ঘটনা কবলিত একটি বাস দেখে ড্রাইভারকে থামতে বলেছিলাম। ড্রাইভার তো থামাইনিই, উপরন্ত অন্য যাত্রীরা বলেছিল- "না না, দেরী হয়ে যাবে।" এই হল আমাদের মানসিকতা! আমাদের কাছে জীবনের চেয়ে সময়, টাকা বা নিজের স্বার্থ বেশী মূল্যবান।আরো অনেক গাড়ীই নিশ্চয় এভাবে পার হয়ে গেছে সেদিন। আহত মানুষগুলোর আর্ত-চিৎকার কেউ শুনেছিল কি?
আমি বুঝতে চেয়েছি - এর কারণ কি? রাস্তায় আহত মানুষ দেখেও কেন আমাদের মনে দয়া হয়না? খুব বেশী আত্মকেন্দ্রিকতা? নাকি পুলিশের হয়রানির ভয়? নাকি ব্যস্ততা? নাকি মানবিকতাবোধের অভাব? উত্তরটা এখনো আমার কাছে অজানা।এদেশে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত, সুশৃংখল।মিনিট দশেক পরেই পুলিশের গাড়ী, এ্যাম্বুলেন্স এসে আহতদের নিয়ে গেল। ইস্! আমাদের দেশটা এরকম হবে কবে?
আমরা কাছাকাছি আসিনি। কিন্তু আমি ওর হাত ধরেছিলাম। সে ছিল এক স্বর্গীয় অনুভূতি! নৌকায় বেড়ানোর পর যখন নদীর খাড়া পাড় বেয়ে আমরা উপরে উঠে আসছিলাম, তখন একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে হলেও মাধবী আমার বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরেছিল। ওকে ছোঁয়া মাত্র আমার সারা শরীরে ভাললাগার এক শিহরণ খেলে যায়। আমি আজও চোখ বুজলে স্পষ্ট দেখি, লাজুক লজ্জাবতী একটি মেয়ে সাঁঝের আলোয় আমার হাত ধরে নদীর পাড় থেকে উঠে আসছে।
সেদিন সন্ধ্যায় মাধবীকে বিদায় দেবার সময় ওর চোখে কষ্ট দেখেছিলাম। আমি কাল চলে যাব। আর আমাদের দেখা হবেনা। ওর বাসার সবচেয়ে কাছে থাকে মাসুম। তাই সেদিন ওকে বাড়ী পৌঁছে দেবার দায়িত্ব পড়ে ওর উপরেই। পরে মাধবী বলেছে, সেদিন ও চেয়েছিল আমি ওর সাথে যাই। বোকা মেয়েটা বলেনি। বললে লাজ- লজ্জার-মাথা খেয়ে আমি ওর পাশে বসতাম।
যখন মাধবীকে প্রথম বলেছিলাম - "ভালবাসি", ও হেসেই খুন! "তোমার মাথা খারাপ হয়েছে। কি বল পাগলের মত? তুমি আমার মুখটাও ভাল করে দ্যাখনি। আমি নিশ্চিত, তুমি বলতে পারবেনা আমার ফেসের ঠিক কোনখানে কাটা দাগ আছে। আর বলছ কিনা ভালবাস??"
সত্যি বলতে পারিনি। সত্যিই ওভাবে ওকে দেখিনি। তেমন সুযোগই হয়নি।হলে নিশ্চয়ই দেখতাম। এখন যেমন খুঁটিয়ে খু্ঁটিয়ে দেখি ওর সবকিছু। শুধু ছবিতে।
ওর ছবি নিয়ে আরেক কাণ্ড! আমি বার বার বলি, ছবি পাঠাও, ছবি পাঠাও। তোমাকে দেখব, তোমাকে ভাল করে দেখব। তোমাকে দেখিনি। বড় অন্যায় হয়ে গেছে। কেন দেখিনি? কেন বুঝিনি দেখাটা কত জরুরী ছিল? এখন দেখার জন্য ছটফট করি। কিন্তু উপায় নেই।ও পাঠায়না।ইচ্ছে করে। আমাকে কষ্ট দেবার জন্য। যখন দেখার, তখন দেখনি।এখন হাপিত্যেষ? আমি আর আমার বন্ধুরা ওর চিঠির প্রেমে পড়ে গেছি। এত সুন্দর করে লেখে! একবার আমি ওর চিঠির প্রশংসা করেছিলাম। উত্তরে সে লিখেছে: আমি লিখি আমার মত খুব সহজ, সাদামাটাভাবে ভাষার অলংকরণ বা শব্দের কারুকাজ ছাড়া।তুমি আসলে চাচ্ছ আমি লিখি। সেটা আমি এমনিতেই লিখব, আমার চিঠির মিথ্যে প্রশংসা না করলেও।
আমি ওকে দেখেছি। বন্ধুরা দেখেনি। শুধু চিঠি পড়েই এতটা মুগ্ধ যে ওকে দেখার জন্য উদগ্রীব। অনেক বলার পর মাধবী ছবি পাঠালো।গাছপালা ঘেরা একটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মৃদু হাসি, আর সেই অন্তর্ভেদী চোখ।কী ভীষণ মায়ায় ভরা! আমার সবচেয়ে ফাজিল বন্ধু আওলাদ দেখে বলল, "দোস্ত! খাওয়া কমাইতে বা চাইলের দোকান বদলাইতে কও। কোলে নিতে গেলে তোমার কোমর ভাংব কইলাম"! কোন মানে হয়? হলই না হয় একটু মোটা। তাই বলে এভাবে বলবে? শালা দেখব, তুই কোন হুরপরী বিয়ে করিস্!
চলবে..............
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৩
আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সবসময়.....
২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১২
কাবিল বলেছেন: ভাল লাগছে, চালিয়ে যান।
শুভ কামনা।
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪২
আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।জ্বি।চালিয়ে যাব। সেজন্যই তো ব্লগ খোলা।
৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৯
বিজন রয় বলেছেন: কেমন আছেন?
পোস্ট দিতে থাকুন, সময় করে পড়বো।
শুভকামনা।
৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০০
আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি, ভাল আছি। ধন্যবাদ। মন্তব্যের অপশন ছাড়া ব্লগারদের সাথে কথা বলার আর কোন পথ আছে কি? জানালে খুশী হব।
ধন্যবাদ, সময় করে আপনি আমার লেখা পড়তে চেয়েছেন বলে। জ্বি, পোস্ট দেব। ভাল থাকবেন সবসময়......
৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩২
বিজন রয় বলেছেন: না, এই ব্লগে আর কোন অপশন নেই অন্য ব্লগারদের সাথে কথা বলার।
তবে অনেকের ফেসবুকে যেয়ে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন।
আর খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলে দুই-একটি কথা এখানেই বলা যেতেই পারে অপটপিকে পারে।
আমি তাতে দোষের কিছু দেখি না।
অনেকে দেখি ই-মেইলও মাঝে মাঝে আদান প্রদান করে।
এই তো, এর বেশি কিছু জানাতে পারছি না।
ভাল লাগল, আমাকে এভাবে জিজ্ঞেষ করার জন্য।
ধন্যবাদ।
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮
আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার জবাবের জন্য। বেশীরভাগেরই চেহারা লুকানো।সবাইকে এফবি বা ইমেইলে পাওয়া সম্ভব নয়।যায়যায়দিনে একবার আমার একটি লেখা একটু বেশীই সাড়া ফেলেছিল। তখন সম্পাদক অফিস থেকে প্রশংসা ও সমালোচনা সমৃদ্ধ ১২৭ খানা চিঠি আমার ঠিকানায় পাঠানো হয়। তারা পাঠক ও লেখক। পরে আমি কিছু চিঠির জবাব দিয়েছিলাম। এরকম সুযোগ থাকলে প্রাইভেসী থাকে। আমি আমার পছন্দের লেখকের সাথে মত বিনিময় করতে পারি।
আবারো ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সবসময়....
৫| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮
ঋতো আহমেদ বলেছেন: 'আমাদের দেশে হলে পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরে পড়ত। কে যায় হাসপাতাল-পুলিশের ঝামেলায়?' .. নিজের দেশকে এভাবে ছোট করা মোটেই ভাল লাগল না । ভাল খারাপ সব দেশেই আছে । বিভিন্ন দিকে ।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩
আলপনা তালুকদার বলেছেন: আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছি। ধন্যবাদ। আপনার দেশপ্রেম দেখে ভাল লাগলো। সেই সাথে অনুরোধ, পরের পর্ব গুলো পড়ুন। আপনার "ভাল না লাগার অনুভূতি" দূর হবে, আমি নিশ্চিত।
আবারো ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। এভাবেই বুকে ধারণ করুন লাল-সবুজের পতাকা। ভাল থাকবেন সবসময়....
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬
আলপনা তালুকদার বলেছেন: কিছুদিন আগে ভারতে এক লোককে একটি অটো ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থেকে লোকটি মারা যায়। আরেক রিক্সাচালক তার পকেট থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে চলে গেলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি বা পুলিশে খবর দেয়নি। হাজার হাজার গাড়ী চলে গেছে সে পথে। কেউ তাকে সাহায্য করেনি। কোন ভারতীয় ব্লগার যদি লেখে তার দেশে এমন ঘটেনা, রেপ হয়না; বা কোন মায়ানমারের ব্লগার বলেন, যে তার দেশে মুসলিম হত্যা হয়না - তাহলে তাকে কি আপনি 'দেশপ্রেমিক' বলবেন? সত্যি সবসময় মিষ্টি হয়না। সত্যকে মিথ্যা বললে বা সত্য গোপন করলে সত্য মিথ্যা হয়ে যায়না।
সরি। সুযোগ থাকলে এ কথাগুলো আপনাকে প্রকাশ্যে বলতাম না। ব্লগে এ কারণে আমার অসুবিধা হচ্ছে। আমি ব্লগে কতদিন টিকতে পারব, বুঝতে পারছিনা।সরি। কিছু মনে করবেন না।
৬| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৯
ঋতো আহমেদ বলেছেন: ব্লগে টেকা না টেকার প্রশ্ন আসছে কেন বুঝতে পারছি না । পাঠক হিসেবে একটা অংশ আমার ভাল না লাগার মন্তব্য জানিয়েছি মাত্র । এছাড়া আপনি খুব ভাল লিখেন ।
আপনার প্রথম প্রতিউত্তর টুকু বেশ ছিল ।
আমি অস্বীকার করছি না যে ওরকম ঘটনা আমার দেশে ঘটে না। অনেক বাজে কিছু এখানে ঘটে। ঠিক তেমনি অন্য দেশেও ঘটে । তাই বলে অন্য দেশের সাথে তুলনা করে নিজের দেশকে ছোট করাটা পাঠক হিসাবে একজন লেখকের কাছে কোনও ভাবেই আমাদের কাম্য নয়।
৭| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩০
প্রামানিক বলেছেন: খুব ভালো লাগল। ধন্যবাদ
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২২
আলপনা তালুকদার বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
শুভ ব্লগিং.....