নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাধবী

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩০



পাঁচ

আজ সতেরো দিন মাধবীর কোন খবর নেই। ফোন ধরেনি, চিঠির জবাব দেয়নি। কাজের মেয়ে ফোন ধরে বলেছে, "আফা বাসায় নাই।" কোথায় গেছে জিজ্ঞেস করার আগেই ফোন কেটে দিয়েছে। পরে আর ফোন ধরেনি। আমি ভেবেছি, ওর চিঠি পেলে সব জানতে পারব। তাই অপেক্ষা করেছি। আমার মনে হচ্ছে ১৭ বছর কেটে গেছে ওর গলা শুনিনা। কি করব বুঝতে পারছিনা। ও কখনও এমন করেনা। বেড়াতে গেলে আগেই জানায়। সুমনকে ফোন করেছিলাম। সেও কিছু জানেনা।আমার কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। বিজি ছিলাম। কিন্তু টেনশন তো যায়না।সুমনকে গতকাল বলেছি, খোঁজ নিয়ে জানাতে। জানায়নি। দেশে থাকলে সব কাজ ফেলে আগে ওর খবর নিতাম। মেয়েটা বড় উদাসীন নিজের ব্যাপারে।একটু খেয়ালীও বটে। সহজে নিজের সমস্যা বলতে চায়না। আমাকেও না।ওর মনের কথা এখন আমি অনুমান করতে পারি ওর গলা শুনে। সেটাও পারিনি।অনেকক্ষণ রিং হচ্ছে। কেউ ফোন ধরছেনা। মাঝে মাঝে ওর আম্মা ফোন ধরেন। আমি অনুমান করি, উনি ভীষণ বিচক্ষণ একজন মানুষ। আমি 'হ্যালো' বলার সাথেই আমার গলা চিনতে পারেন। কোন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি বলেন, "ও তুমি? ধর, মাধবীকে দিচ্ছি।" আমি যে অসীম আকাংখা নিয়ে অত দূর থেকে শুধু একবার মাধবীর কথা শোনার জন্য ফোন করি, সেটা উনি আমার গলা শুনেই টের পান। মাধবীর পরিবার উচ্চশিক্ষিত। সবাই ভীষণ ভাল। শুধু ওর বাবাকে আমার একটু বেশী গম্ভীর আর রাগী মনে হয়েছে। আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। আমি ওনাকে দেখেছি শুধু এক ঝলক।

অনেকক্ষণ পর মাধবী 'হ্যালো' বলল বটে। কিন্তু ওর গলাটা অত মলিন কেন? আমার বুকটা ধ্বক্ করে উঠল।"কি হয়েছে? তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন?" আরও ক্ষীণ গলায় বলল, "আমি অসুস্থ।তুমি টেনশন করবে। তাই বলিনি।"

হঠাৎ ওর এ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করাতে হয়েছে। মাস দুই আগে ইনফেকশন হয়েছিল, অসহ্য ব্যথা। চার দিন ক্লিনিকে ভর্তি ছিল। সে যাত্রা সেরে ওঠে। আবার তীব্র ব্যথা ওঠায় এবার অপারেশন করাতে হয়েছে। কাল রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছে।আমি কিছুই জানিনা।ইচ্ছে করে বলেনি।এই পাগল মেয়েটা কেন বোঝেনা যে, বললেই বরং আমার টেনশন কিছুটা কম হয়। এখন কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।ইস্! যদি যেতে পারতাম! না জানি কত কষ্ট পেয়েছে বেচারা! নিশ্চয় অনেক দূর্বল হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে ওকে কোলে নিয়ে বসে থাকি। রাতে যখন ও ঘুমাবে, আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকব।সারারাত।আমি ভেবে রেখেছি, যখন আমরা সংসার করব, ওকে তেমন কিছুই করতে দেবনা।রান্নাও না। আমি এখানে আসার পর কিছুদিন রেস্টুরেন্টে জব করেছি। আমার রান্নার হাত পাকা হয়ে গেছে তখনই।

এদেশে সবাই নিজের কাজ নিজে করে।সবাই সব কাজ পারে। কোন কাজকে এরা ছোট মনে করেনা। ছেলেদের বা মেয়েদের কাজ বলে কাজের মধ্যে বৈষম্য ও করেনা।এখানে সব কাজ সবার। ছুটির দিনে এরা পরিবারের সবাই মিলে বাড়ী, গাড়ী পরিস্কার করে, বাগানে কাজ করে ইত্যাদি। এদের যত টাকাই থাকুক, এরা নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করে। আবার ছুটির সময় এদেশের ছেলেমেয়েরা পার্ট টাইম জব করে নিজের শখ মেটানোর জন্য। বড়লোকের সন্তান হলেও । জব করার সুযোগও তো থাকা চাই। আমাদের দেশে এমন সুযোগ থাকলে আমাদের ছেলেমেয়েরাও নিশ্চয় বসে থাকতনা।আমি নিজেওতো দেশে থাকতে কোনদিন কিছু করিনি। এখানে এসে কতকিছু শিখলাম!

মাধবী আমার অনেক অনুরোধে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। আসতে চায়নি মোটেই। আমার আর সুমনের জোড়াজুড়িতে এসেছে অনেক আড়ষ্টতা নিয়ে। চোখে-মুখে সেই খুশী নেই। কেমন যেন প্রাণহীন, মলিন। সাদা সালোয়ার-কামিজে তবু ওকে পরীর মত লাগছে। কি সুন্দর হয়েছে দেখতে! আমার চোখ ঝলসে যাবার দশা। অনিচ্ছাসত্বেও আমার চোখ বার বার আটকে যাচ্ছে ওর শরীরের লোভনীয় জায়গাগুলোতে। আমি চোখ সরাচ্ছিনা। কারণ আমি এখনো মনে করি ওর সবকিছু আমার, শুধুই আমার। আজ এক বছর পর ওকে দেখছি। নদীর পাড়ের সেই লজ্জাবতী মেয়েটিকে সেদিন সন্ধ্যায় ছেড়ে গেছিলাম। আজ সকালে সে আবার আমার সামনে।

ওর চুলগুলো সারা পিঠে ছড়ানো, এলোমেলো, তেমন সাজেওনি। খুবই সাদামাটা।আড়চোখে দু'বার আমার দিকে তাকালো। যেন নিজেকে লুকোবার চেষ্টা। খুব আলতো গলায় বলল, "কেমন আছ?" আমি কোন জবাব দেইনি। দিতে পারিনি। কি বলব আমি? আমি সত্যি সত্যি সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে মাধবীর কাছে এসেছি।মাধবীও আমার সামনে।কিন্তু আমরা আর কেউ কারো নই।সুমন আমাদের একান্তে কথা বলার সুযোগ দিয়ে পাশের রুমে গেল বটে। কিন্তু আমাদের কথা ফুরিয়ে গেছে। মাধবী সোফায় আমার পাশে বসল, একটু দূরে। যেন সে আমাকে ছুঁতে চায়না। আমি এখন তার পর হয়ে গেছি। তখনো আমি আশা ছাড়িনি। আজও যেমন ভাবি নরেশ গুহের সেই কবিতার মত -

যদি আজ বিকেলের ডাকে
তার কোন চিঠি পাই?
যদি সে নিজেই এসে থাকে,
যদি এতোকাল পর তার মনে হয়
দেরী হোক - তবু যায়নি সময়।

আমি মাধবীর কাছে সরে এসে দু'হাতে ওর হাত ধরলাম। চোখে ততক্ষণে সমুদ্র। আমি ধরা গলায় বললাম, "ফিরে এসো।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবনা।তুমি জান। তুমি আমাকে বোঝ।" মাধবী হতভম্বের মত ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে। চোখে কোন ভাষা নেই। যেন আমি কি বলেছি, সে শুনতে পায়নি।
যখন দেখা হবে একান্তে, ওকে আমার জড়িয়ে ধরে চুমু খাবার কথা ছিল। সেই মায়াবী চোখ, গোলাপী পুরু ঠোঁট, সেই তুলতুলে গাল।কিন্তু আমার চুমু খেতে ইচ্ছে করছেনা। এমন কি জড়িয়ে ধরতেও না। আমি আমার স্ত্রীর মধ্যে যা যা গুণ চেয়েছি, মাধবীর সব আছে। মেয়েদের শরীর নিয়েও আমার যে বিশেষ পছন্দ ছিল, মাধবীর শরীরও ঠিক তাই। কতবার কল্পনায় ওকে আমি আদর করেছি। এখন ওকে সামনে পেয়েও ইচ্ছে করছেনা। শেষের দিকে মাঝে মাঝে যখন ফোনে আমাদের মধ্যে 'নির্লজ্জ টাইপ' কথা হত, আমি অনায়াসে বলতাম, 'আমার ভারী বুক পছন্দ'।কিন্তু আজ কোনকিছুই আমাকে টানছেনা। আমি ওর কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছি।ও কিছুই বলছেনা। উদ্ভ্রান্তের মত শুধু চেয়ে আছে। যেন একসাথে অনেকগুলো দুঃসংবাদ শুনলে মানুষ যেমন দুঃখে পাথর হয়ে যায় - তেমনি।

চলবে...............




মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২১

শাব্দিক হিমু বলেছেন: ভালো লাগছে। চলুক ...

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ।আমার লেখার দু'জন হেভিওয়েট ভক্ত আছেন। একজন আমেরিকার, আরেকজন অস্ট্রেলিয়ার- দুটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক। এই দুই পাগলের ধারণা - আমি দূর্দান্ত লিখি। তাই ব্লগে নিজেকে যাচাই করা আর কি!
আপনাদের ভাল লাগছে, এটাও কম আশ্চর্যের বিষয় না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সবসময়...


২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৪

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল। ধন্যবাদ

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৭

আলপনা তালুকদার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনি ধৈর্য ধরে সবগুলো পর্ব পড়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.