নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাধবী

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩০




সাত

মাধবী উঠে দাঁড়াল। সে চলে যাবে। আমার আনা হীরার আংটি, উপহার কোনকিছুই সে নেয়নি। সে শুধু যেতে চায়। আমার কাছ থেকে, আমার সামনে থেকে, আমার জীবন থেকে দূরে, অনেক অনেক দূরে। আর বেশীক্ষণ এখানে থাকলে ও নিজেকে সামলাতে পারবেনা। বাঁধ ভেংগে গেলে যেমন তীব্র গতিতে পানি ছুটে আসে, তেমনি এত যত্ন করে লুকিয়ে রাখা তার আবেগ বাঁধ ভেংগে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। ওর মুখটা ফ্যাকাসে। একেবারে মরা মানুষের মত। নতুন বউ এর চেহারা কখনো এত মলিন হয়না। কত স্বপ্ন ছিল আমাদের। মাধবী বলেছিল, "তুমি এলে তোমাকে প্রাণভরে দেখব, সারাদিন তোমাকে ছ্ঁয়ে থাকব, এতদিনের বিরহ সুদে-আসলে উসুল করে নেব।" আজ তার কোন ইচ্ছে নেই। আমার দিকে সে ভাল করে তাকাচ্ছেওনা। পাছে আমি তার মনের কথা চোখের চাহনিতে পড়ে ফেলি, সেই ভয়ে। শুধু মাথা নীচু করে বলল, 'আসি'। বলেই সে যাবার জন্য পা বাড়ালো। এক নিমেষে আমার সবুজ পৃথিবী মরুভূমি হয়ে গেল। আমি চোখের সামনে দেখতে পেলাম, সেই জনমানবহীন মরুভূমিতে আমি একা। আমি ভিখারীর মত ওর হাত চেপে ধরে বললাম, "সোনা আমার, তোমার পায়ে পড়ি, এমন করোনা।" আমার গলার স্বরে বোধহয় এমন কিছু ছিল, যার আঘাতে পাথর ফেটে তীব্র গতিতে পানি বেরিয়ে এলো। ডুকরে কেঁদে উঠে মাধবী আমাকে জড়িয়ে ধরল। সুমনের সামনেই। আমরা লজ্জা পাচ্ছিনা। আমি দু'হাতে মাধবীকে বুকের সাথে জাপটে ধরে আছি। ও ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ওর শরীর আর চুলের সেই মিষ্টি গন্ধ আমার নাকে-মুখে। ওর চোখের পানিতে আমার শার্ট ভিজে যাচ্ছে। এভাবে কত ক্ষণ ছিলাম জানিনা। সুমন বলল, "মাধবী, আমার মনে হয় তোমার এবার যাওয়া উচিত।" আমি আরো শক্ত করে ওকে আঁকড়ে ধরে বললাম, "না, ও যাবেনা।" সুমন কড়া গলায় শাসনের সুরে বলল, "ওকে যেতে দাও।" আমি মাধবীকে যেতে দিলাম। আমাকে অথৈ সমুদ্রে ভেলাহীন একা ফেলে রেখে কাঁদতে কাঁদতে ও চলে গেল। যতক্ষণ দেখা যায়, আমি হতাশ চোখে ওর পথের দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার জীবনের সব আলো নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকার ঘরে একলা ফেলে ও চলে গেছে। সেই থেকে আমি একা। ভীষণ একা। অনেকের মাঝে থেকেও একা। একা, একা, বড় একা...।
আমার এখন মনে হয়, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল মাধবীর শহরে যাওয়া। আমি গেছিলাম দু' টা কারণে। এক, বন্ধু সুমনের আমণ্ত্রণে বেড়াতে; আর দুই, আমার নাকে ছোট একটি পলিপ আছে, সেটি অপারেশন করে ফেলে দিতে। শীতের দেশে যাচ্ছি। নিঃশ্বাস নিতে আরো বেশী সমস্যা হতে পারে। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু বেশীই সাহসী। তাই ওসব অপারেশন-টপারেশন ভয় পাইনা। তাছাড়া ডাক্তার বন্ধু সুমন আছে। সে সব সামলে নেবে। মাধবীর সাথে আমার দেখা হয় সেই অপারেশনের আগেরদিন ক্যান্টিনে। তারপর ও চলে গেছে ক্লাসে, আর আমরা বন্যাকে বাসার কাছাকাছি নামিয়ে দিয়ে ফিরে এলাম মেডিকেলের হোস্টেলে সুমনের রুমে।
পরের দিন সকালে ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছি। বিকেলে ওটি। দুপুরে অপ্রত্যাশিতভাবে মাধবীর ফোন এল। সুমন ওকে বলেছে আজ আমার অপারেশন। তাই ফোন করা। অনেক কথা হল। খুব স্বপ্রতিভ। কোন জড়তা নেই। যেন আমিও সুমনের মতই তার অনেকদিনের চেনা। মাধবীকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও লিখেছিল, "তুমি ভীষণ সাহসী। যেকোন ঝুঁকি নিতে ভয় পাওনা। আর আমি বড্ড ভীতু। বন্ধু হিসেবে তোমাকে ভাল লাগার পেছনে এটাও একটা বড় কারণ। তোমার এই গুণটা আমাকে খানিকটা ধার দেবে?" উত্তরে আমি লিখেছিলাম, "আমি বন্ধুকে গ্রহণ করি বন্ধু হিসেবেই; গুণবান বা গুণহীন হওয়ার কারণে নয়।"
মাধবী লিখল, "তোমার কথার জবাব দেবার আগে ব্যক্তিত্বের সংগা দেই। ব্যক্তিত্ব হল ব্যক্তির এমন কতকগুলো গুণ বা বৈশিষ্টের সমষ্টি যা তাকে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে এবং অন্য ব্যক্তি থেকে আলাদা করে। সত্যবাদিতা বা দানশীলতা গুণটি কম-বেশি আমাদের সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু এই দু'টো গুণ অন্য মানুষদের থেকে আলাদা করেছে মহানবী ( সাঃ) ও হাজী মোহাম্মদ মোহসীনকে। আমি বন্ধুকে গ্রহণ করি বন্ধু হিসেবেই। তবে তার অসাধারণ গুণগুলোকে আমি শ্রদ্ধা করি, আমার নেই বলে তাকে ঈর্ষা করি এবং তা অর্জন করার চেষ্টা করি ( যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা পারিনা)।"
মাধবী, আগে জানলে আমার সবটুকু সাহস তোমাকে দিয়ে দিতাম। আমি বুঝিনি, তুমি এভাবে হেরে যাবে অন্যায়ের কাছে। একটু সাহস করে যদি প্রতিবাদ করতে, আমরা বেঁচে যেতাম। এভাবে মরে বেঁচে থাকতে হতনা।
ঐদিন মাধবী এসেছিল। আমার সাথে দেখা হয়নি। আমি অজ্ঞান ছিলাম। পরে শুনেছি, ও অনেকক্ষণ ছিল। আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হবার পর ফিরে গেছে।
মাথার মধ্যে একসাথে দশটা বোমা ফাটলে যেমন অনুভূতি হবার কথা, আমার ঠিক তেমনি অনুভূতি হয়েছিল যখন শুনেছিলাম মাধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। ভেবেছি সুমন মিথ্যে বলছে। যখন বুঝলাম ঘটনা সত্যি, তখন মরে যেতে ইচছে হয়েছিল। মাধবী রাজী হল কিভাবে? ও জানে ওকে ছাড়া আমি বাঁচবনা। ও এমন কাজ করতে পারেনা। আমি পাগলের মত কাঁদছি। সেই থেকে আমার কান্নার শুরু। গত ষোল বছর ধরে কাঁদছি। এখনও চোখের জল শুকায়নি। এত কান্না আসে কোথা থেকে?

চলবে............

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০৫

বিজন রয় বলেছেন: কেমন আছেন?

আপনি কবিতা লিখেন কি?

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ভাল আছি। ধন্যবাদ।
না। কখনো কবিতা লেখর চেষটা করিনি। তবে কবিতা খুব ভালবাসি। যদিও কবিতা খুব ভাল বুঝিনা।

২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৩

বিজন রয় বলেছেন: নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

ভাল থাকুন অবিরাম।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আপনাকেও একই শুভকামনা জানাই।

৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫২

প্রামানিক বলেছেন: আপনার মাধবী পর্বগুলো ভালো লাগছে। ধন্যবাদ

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: শুনে ভাল লাগছে। ধন্যবাদ।

৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৩

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: হাতে আঁকা গ্রামিন ছবিগুলো কিন্তু বেশ

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: আর আমার লেখা ????? অবেশ, নাকি ????? হা হা হা! মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ছবিগুলো কিন্তু আমার আঁকা নয়। নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানবেন। ভাল থাকবেন সবসময়.....

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১০

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: লেখাগুলো পড়িনি, এটা সাত নম্বর পোষ্ট। সময় পেলে এক থেকে পরে আসবো আপু।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:১২

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ঠিকআছে। ধন্যবাদ...

৬| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৭

অতৃপ্তচোখ বলেছেন: পৃথিবীতে ভালোবাসা ফেলে চলে যাওয়া সব মাধবীরাই একরকম। এরা কখনওই ভাবে না , তার জন্য কেউ কাঁদবে। এরা কাঁদিয়েই সুখী হয়। তবুও তারা ভালোবাসা পেয়ে যায় !

গল্প ভাল লাগলো।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬

আলপনা তালুকদার বলেছেন: মাধবীরা সবসময় ইচ্ছে করে চলে যায়না। কখনো কখনো অনিচ্ছাসত্বেও যেতে বাধ্য হয়। মাধবীর সবগুলো পর্ব পড়তে থাকুন, আপনার ধারণা বদলে যাবে, আমি নিশ্চিত।

আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশী হলাম। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সবসময়....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.