| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীতে এমন কিছু সংখ্যা আছে, যা কাগজে লিখলে ছোট লাগে, কিন্তু ভাবলে শিরদাঁড়ায় কাঁপন ধরে। যেমন: এক ট্রিলিয়ন ডলার। এত টাকা হলে পৃথিবীর অনেক দেশের বাজেট একসাথে মিটে যায়। এটাই হলো বিশ্বব্যাপী যাকাতের সম্ভাব্য পরিমাণ। চারশো বিলিয়ন নয়, পাঁচশোও নয় বরং এক ট্রিলিয়ন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ট্রিলিয়নের বিপুল সম্পদ আজও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে। দরিদ্ররা যথাযথভাবে উপকৃত হচ্ছে না। যদি সেই যাকাতের একটি অংশও বাংলাদেশে আসে, তাহলে দরিদ্রদের মুখে হাসি ফুটবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হবে সবার অধিকার, অর্থনীতি পাবে নতুন শক্তি।
আমরা যারা টিভির খবরে বাজেট শুনে ‘বহুত ট্যাকা’ বলে চোখ বড় করি, তারা জানলে অবাক হবো। বাংলাদেশের পুরো বাজেটই এখনো সত্তর বিলিয়নের ঘরে, তাও বিশ বিলিয়নের ঘাটতি নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে পথ চলছে। আর এই পৃথিবীতে একদিকে ছড়িয়ে আছে যাকাতের মতো বিশাল এক সম্পদ। যেটা ইসলাম বলেছে, সমাজের দরিদ্র মানুষের হক। বাংলাদেশে এখনো ১৯.২ শতাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে।
এখানেই গল্পটা শুরু হয়।
ইসলামের বিধান হলো, যাকাত সমাজে ন্যায় ও সাম্যের ভারসাম্য রক্ষা করবে। এটা ভিক্ষা না। সামর্থ্যের প্রতি অপেক্ষাকৃত কম সামর্থ্যের হক। বাংলাদেশে এর আগেও যাকাতের টাকায় প্রথম পিলার উঠেছে বহু দাতব্য সংস্থা, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেউ দেখেনি, কেউ লিখেনি। কারণ এখানে আলো কম পড়ে। সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের সাহেব এই আলোটাকেই টেনে এনেছেন মঞ্চের সামনে।
তিনি বলেছেন, জামায়াত যদি ক্ষমতায় আসে,তাহলে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা যাকাতকে কাঠামোবদ্ধভাবে বাংলাদেশে আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে! অনেকে হেসেছে। অবজ্ঞার হাসি। আমি হাসি নি। আমি মনে করি, এটা কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয় বরং একটি যুগান্তকারী অর্থনৈতিক চিন্তা। একটি ন্যায্য অর্থনৈতিক স্বপ্ন। বিতর্কের মঞ্চে দাঁড়িয়ে যেই স্বপ্ন আমি নিজেও দেখতাম।
এই চিন্তাটা কোনো একাডেমিক থিওরি নয়। এটা এক ধরনের সাহস। এক ধরনের প্রজ্ঞা। যে প্রজ্ঞা বলে, দারিদ্র সীমার নিচের মানুষদের শুধুই ভোটের খাতা বা মিছিলের মুখ না বানিয়ে। সত্যিকারের মর্যাদার নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে, কিছু বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই যাকাত সেই সিদ্ধান্ত হতে পারে।
সত্যি বলতে কি, এর আগে কোনো সরকার ১৯.২ শতাংশ গরিব মানুষের ভাগ্য বদলাতে চায়নি। চেয়েছে ভোট। নিয়েছে লোক দেখানো প্রকল্প। খুঁজেছে মঞ্চভরা করতালি। গরিব যেন গরিবই থাকে, তাই যেন ছিল অলিখিত শর্ত। কারণ গরিব না থাকলে মিছিল জমে না। পিকেটিং হয় না। পেট্রোলবোমায় আগুন দাউ দাউ করে না। রাজনীতির নাটকে 'ক্লাইম্যাক্স' তৈরি হয় না। এই প্রথম কেউ চাইলো গরিবেরা উঠে আসুক।
আর সেটা চাইলো জামায়াত...
©somewhere in net ltd.