নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সীমানায় অসীম

সহজ সরল সমান

এমাজ আরেফিন

আমার রঙিন পৃথিবীর রঙগুলো সবার সাথে মিলেমিশে একাকার করার জন্যই ব্লগে আসা।

এমাজ আরেফিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

টাঙ্গাইলের চমচম

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:২৭

টাঙ্গাইলের চমচম: ভূবন ভোলানো অনন্য এক স্বাদ







ইন্দো সাব কন্টিনেন্টে যে মিষ্টি ছিল সুপ্রসিদ্ধ, আজও সমান জনপ্রিয়। টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম তার পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে এবেলায়ও কীর্তি ছড়িয়ে আছে। এর গ্রহনযোগ্যতা কিশোর যুবা বৃদ্ধ সবার কাছেই সমান। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানান বর্নের, স্বাদের চমচম তৈরী হলেও ইট রঙের টাঙ্গাইলের এই চমচম অনন্য। এর স্বাদের বৈচিত্র এবং অনন্য স্বাদের জন্য নিজ দেশ সহ দেশের বাইরের অস্যংখ্য দেশে তুমূল জনপ্রিয়। সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই টাঙ্গাইলের চমচম তার নানান আকার আর স্বাদ দিয়ে বুলিয়ে রেখেছে সারা বিশ্ব।



আমরা টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম বলতে এখন যা চিনি বা খাই তা মূলত টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজারের। পোড়াবাড়িতে এখন আর চমচমের সেই জৌলুস নেই। পোড়াবাড়ি এখন ছোট বাজার। ২০/২৫টা দোকান। এর মধ্যে পোড়াবাড়ির চমচমের দোকান মাত্র দুইটা।

পোড়াবাড়ি মানে টাঙ্গাইল এর এই ঐতিহ্যবাহী, যুগ যুগ ধরে প্রসিদ্ধ এই চমচমের ইতিহাস বেশ পুরনো। পোড়াবাড়ি হল ছোট্ট এই গ্রামের নাম। টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ৬ কি.মি. দূরের পথ। ছোট্ট শান্ত এই গ্রামকে ঘিরেই চমচমের সৃষ্টি। আর তার প্রধান অনুসঙ্গ এলেংজানি নদী, এই নদীর পানি। চমচমের প্রথম কারিগর কে ছিল তা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি ইতিহাসের পাতায়। তবে ধারণা করা হয় যশোরধ হালই নামে একজন কারিগর এই চমচমের স্রষ্টা। যারা চমচম এবং আনুসাঙ্গিক মিষ্টান্ন তৈরীর সাথে জড়িত তাদের হালই বলা হয। চমচমের কারিগররাই হালই নামে পরিচিত। হালই ছাড়াও এই গ্রামে ঘোষ আর পাল বংশের লোকেরা জেনারেশন থেকে জেনারশনে মিষ্টি তৈরীর সাথে জড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে।

পোড়াবাড়ি বাজার থেকে একটু পশ্চিমে এগুলেই এলেংজানি নদী। নদীটার প্রকৃত নাম এলেংজানি হলেও অনেকে এটাকে ধলেশ্বরী হিসাবেই জানে। এই এলেংজানি যমুনার একটি শাখা। প্রবীণ বকারিগরদের সাথে কথা বলে জানলাম এর পেছনের কথা। একসময় এই নদীর ধারে পোড়াবাড়ির বাজারে স্টিমারঘাট ছিল। যমুনা থেকে আসা বড় বড় ষ্টিমার, লঞ্চ, কার্গো পোড়াবাড়িতে নোঙ্গর ফেলত। সমাজের নানা ধরনের লোকদের আনাগোনা ছিল এই ঘাটে। বড় বড় রাজরাজরা, জমিদার, পাইকপেয়াদা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবার একমাত্র লক্ষ্য ছিল পোড়াবাড়ির চমচমের আকর্ষন। মৌচাকের মধুর মতো মিষ্টি আর খাঁটি দুধ থেকে বিশেষভাবে তৈরী এই চমচম সবার কাছে ছিল সমান আকর্ষনীয়। পোড়াবাড়িতে আজও যে বিশ্বাস ছড়িয়ে আছে তা হল যশোরধ নামের একজন মুনি আসাম থেকে প্রথম এসেছিলেন পোড়াবাড়িতে। তিনিই প্রথম পোড়াবাড়ির গরুর খাঁটি দুধ, চিনি আর এলংজানি নদীর পানি দিয়ে বিশেষ উপায়ে প্রস্তুত এই চমচমের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল এর স্বাদ।আর এ কারণেই শত চেষ্টা করেও অন্যান্য এলাকার মিষ্টির কারিগররা পোড়াবাড়ির চমচমের ধারে কাছেও ঘেষতে পারে নি। সেই আমলে এই পোড়াবাড়ির ছিল রমরমা অবস্থা। ৫০/৬০টি দোকানে রাতদিন চলত চমচমের বেচাকেনা। নদীপথ, সড়ক পথে দুরদুরান্ত এমনকি ভারতসহ অন্যান্য দেশের ছড়িয়ে পড়ত চমচমের স্বাদ।

এরপরের ইতিহাস ক্ষয়ে যাওয়ার ইতিহাস। পোড়াবাড়ির নিজের ঐশ্বর্য হারিয়ে ফেলার ইতিহাস। আগেই বলেছিলাম চমচমের বিস্তৃতি ছিল মূলত ঘাট আর নদী কেন্দ্রিক। পরিবেশগত কারণে যখন যমুনা থেকে শাখা হিসেবে চলে আসা এলেংজানি প্রস্থে ছোট হতে শুরু করে, কমতে থাকে বড় বড় ব্যবসায়ীদের বড় বড় লঞ্চ ষ্টিমারের আনাগোনা। তার সাথে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে চমচমের প্রসার। কালের বিবর্তনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে থাকে চমচমের বাজারের। কারিগররা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঘাটের এলেংজানির তীর ছেড়ে অর্থ্যাত পোড়াবাড়ি ছেড়ে শহরের দিকে ব্যবসা গুটাতে শুরু করে। এ কারণেই আমি যেদিন পোড়াবাড়ি পৌছলাম, সেখানে চমচমের দোকান মাত্র দুটো। একটা জয় মিষ্টান্ন ভান্ডার আর আরেকটা পুজা চমচম ভান্ডার। জীর্ন অবস্থা দুটোরই।

পোড়াবাড়ি থেকে ব্যবসা সরিয়ে আনা চমচম এর কারিগরদের মধ্যে আদিপুরুষরা আজ আর কেউ বেঁচে নেই। তাদের নাতী আর নাতীর ঘরের ছেলেরা হাল ধরে আছেন চমচমের। তবে এখনকার এ অধ্যায় এখনও প্রায় সমান বৈভবের। আজকের টাঙ্গাইলের এই পোড়াবাড়ির চমচম সমান জনপ্রিয়, বিখ্যাত কারণ এর স্বাদই যে আলাদা।

শহরের পাঁচ আনি বাজার এখনকার টাঙ্গাইলের চমচমের জন্য প্রধান বাজার। এই বাজারে এখন মিষ্টির দোকান প্রায় ৩০টির মতো। এগুলোর মিষ্টিগুলো সব সমান স্বাদের প্রায়। তবে সবচেয়ে পুরনো আর প্রসিদ্ধ দোকানের নাম গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার। পোড়াবাড়ির হালই বংশের রাধা বল্লভ দাস এর পিতামহ এই গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রধান পুরুষ। বল্লভ দাস এর ছেলেরা এখন এই দোকান চালাচ্ছে। প্রতি কেজি চমচমের দাম ১২০ টাকা।



বাংলা, বিহার ছাড়িয়ে সারা ভারতবর্ষজুড়ে এর সুনাম রয়েছে। লালচে রঙের এই সুস্বাদু চমচমের উপরিভাগে চিনির গুঁড়ো থাকে। এর ভেতরের অংশ রসাল নরম।

চমচমের গুণগত মান আর স্বাদ মূলত পানি এবং দুধের ওপরই নির্ভরশীল। এখানে এই দুটি মৌল শর্ত পূরণ হয় বলে এ মিষ্টি স্বাদে, গন্ধে, তৃপ্তিতে অতুলনীয়।

চমচম প্রস্তুত প্রনালী

উপকরনঃ

ছানা -দুধ ৩ লিটার,সাদা ভিনেগার ১৫ চা চামচ

চিনির সিরা-চিনি ১ কাপ, পানি ৪ কাপ



প্রনালীঃ

দুধ জ্বাল দিয়ে ফুটে উঠলে ভিনেগার দিয়ে অল্প আচে জ্বাল দিতে হবে। এরপর পানি ও ছানা আলাদা হয়ে আসলে জ্বাল বন্ধ করে ঠান্ডা করার জন্য রেখে দিতে হবে। ঠান্ডা হলে একটা পরিস্কার কাপড়ে ছানা ঢেলে দিয়ে পানি ও ছানাকে আলাদা করতে হবে। কাপড়ে পেচিয়ে ছানা ৬/৭ ঘন্টা রেখে দিতে হবে যাতে করে ছানাতে কোন পানি না থাকে।



ছানা থেকে পানি আলাদা হলে ছানা ভালো করে ময়ান করতে হবে। যাতে করে ছানার ভিতরে কোন গোটা না থাকে। ছানা ময়ান হলে হাতে একটু তেল অথবা ঘি মাখিয়ে ইচ্ছা মতো আকারে একটা পাত্রে বানিয়ে রাখুন।



পানির মধ্যে চিনি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। সিরা একটু ঘন হয়ে আসলে বানিয়ে রাখা চমচম দিয়ে ২ ঘন্টা জ্বাল দিতে হবে। চমচম রঙ এ এলে জ্বাল কমিয়ে ৮/১০ মিনিট রেখে নামিয়ে নিতে হবে। তারপর ইচ্ছেমত লালচে চিনির গুড়া যোগ করলেই প্রস্তুত হয়ে গেল সুস্বাদু চমচম।





এই পন্যটি রক্ষা করার জন্য আমাদের এখনি এগিয়ে আসা উচিত নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়ত আর এটি দেখতে পাবে না। যদি এটি বিদেশে রপ্তানি উপযোগী করা যায় তবে আমাদের বেকার জনগুষ্টির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এবং বিশ্বের দরবারে আমাদের পদচারনা এগিয়ে যাবে আরও একধাপ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৪৫

এমাজ আরেফিন বলেছেন: এটি হল চমচমের উপর আমাদের ডকুমেন্ট {নেটের সাহায্য নিয়ে করা}

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.