নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প, অনুভূতি আর জীবনের টুকরো কথা

সুম১৪৩২

আমি লিখি আমার দেখা, শোনা আর অনুভবের গল্প। কল্পনা আর বাস্তবের মিলনে গড়ে তুলি নতুন এক জগত। কলমে আমি হলো আমার একান্ত লেখা, শুধু আমার নিজের শব্দের ভুবন।

সুম১৪৩২ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিক্ষিপ্ত খাতা : Coffee Like You

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪১

আমার নয় বছরের আয়ারল্যান্ড জীবনে ৭ থেকে ৮ বার বর্ণবাদ/রেসিজমের শিকার হয়েছি। বেশিরভাগ ঘটনাই ছিল ছোটখাটো, কিন্তু একবার একটা ঘটনা অনেক দূর গিয়েছিল। রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হয়েছিল; এমনকি Garda (আয়ারল্যান্ডের পুলিশদের garda বলে) হস্তক্ষেপ করেছিল। আমিও গ্রেপ্তার হয়েছিলাম—আসলে গ্রেপ্তার বলা ঠিক হবে না, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছিল। কী হয়েছিল সেই দিন…..





সেই দিনের কথা শুরু করার আগে, কিছু কথা বলে নিলে পাঠকেরা ঘটনার প্রেক্ষাপট বুঝতে সুবিধা হবে।

আমার একটা গ্রুপ হয়ে গিয়েছিল। আমার ক্লাসমেট আর কর্মক্ষেত্রের কিছু মানুষ নিয়ে। বেশিরভাগ সময় আমরা সবাই উইকেন্ডে একসাথে ঘুরতে যেতাম। ঠিক তেমনই এক উইকেন্ডে আমরা সবাই একটা নাইটক্লাব থেকে বের হয়েছি। হৈচৈ করতে করতে বাসায় ফিরছি। পথে একজন একজন করে কমতে লাগল। যার বাসার রাস্তা পড়ছে, সে হাত নাড়ছে। শেষে আমি আর Sinead আলাদা হয়ে গেলাম।

পরিকল্পনা ছিল—আমার বাড়ির কাছে একটা ট্যাক্সি বুথ আছে। ওখান থেকেই ট্যাক্সি নেবে। কারণ ওর বাড়ি কাউন্টির দিকে। ট্যাক্সি ওঠার আগে ও স্পাইসি কাবাব খাবে।

আমরা গল্প করতে করতে হাঁটছিলাম। আমার বাড়ির উল্টো পাশে একটা পাকিস্তানি কাবাবের দোকান আছে। তার পাশে ট্যাক্সি বুথ। দোকানটার মালিক ছিলেন আরশাদ ভাই।

আরশাদ ভাই সম্পর্কে একটু বলে রাখি। তিনি সবসময় নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিতেন। কেন দিতেন? সেটা অন্য কোনো দিন লিখব।

আমি আর Sinead দোকানে ঢুকলাম। আমাদের দেখে আরশাদ ভাই জিজ্ঞেস করলেন—
কেমন আছো?
আমরা দু’জনই বললাম—ভালো আছি।
Sinead হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল—
“Arshad, would ya fix me up with a real hot kebab, so? Cheers.”
আরশাদ ভাই Sinead-কে আগে থেকেই চিনতেন। কারণ, ও ড্রিঙ্ক করার পর প্রায়ই আমার সঙ্গে এই দোকানে আসত। তাই ওর স্বভাবের সঙ্গেও আরশাদ ভাই পরিচিত।
Sinead যখন চেঁচিয়ে কাবাব চাইলো, আরশাদ ভাই হেসে উত্তর দিলেন—
“Aray yaar, forget the kebab. You drank too much already. Last time you promised me you won’t. You are my sister, and it makes my heart hurt when I see you like this.
আরশাদ ভাইয়ের কথা শুনে Sinead হেসে হেসে উত্তর দিলো—
“Nooo lads, I just had the five packs, go on, ask Shon yourself.”
আরশাদ ভাই হাসতে হাসতে আবার উত্তর দিলেন—
“Theek hai yaar, I believe you. Chalo, sit karo, Shumon will fix a hot kabab for you.”

Sinead কাস্টমারের বসার জায়গায় চলে গেল। সেখানে মাত্র দু’জন ছেলে বসা। বাকি সব সিট খালি।

আরশাদ ভাইয়ের দোকানের ছোট্ট একটা বিবরণ দিই। এই ঘটনার জন্য বিবরণটা জরুরি।
দোকানটা খুব বড় ছিল না। ছোট্ট একটা কিচেন। সেখানে নান-রুটি আর কাবাব বানানোর জন্য একটা হট স্টিল আর চুলা রাখা ছিল। পাশে সস রাখার জায়গা। কিচেন থেকে একটু দূরে বসার জায়গা। দোকানের ব্যবস্থা এমন ছিল—চাইলে কেউ বসে খেতে পারত। মোটামুটি ১০ থেকে ১২ জনের বসার জায়গা। দোকানের বেশির ভাগ কাস্টমার আসত ডেলিভারির জন্য অপেক্ষা করতে। আবার কেউ চাইলে বসে খেত। বেশিরভাগই টেকওয়ে করত। কিচেন থেকে কাস্টমার বসার জায়গাটা দেখা যেত না। আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো—আমার বাসার একেবারে উল্টো পাশে আরশাদ ভাইয়ের দোকান ছিল। উনি একাই দোকান সামলাতেন। কিছু কিছু উইকেন্ডে, যদি ভিড় বেশি হতো, তখন আমাকে ডাকতেন সাহায্যের জন্য। আমি যেতাম। এজন্য আমি আরশাদ ভাইয়ের দোকানের সব রকম কাবাব বানাতে পারতাম। এমনকি দামের তালিকাও জানতাম।

Sinead-এর কাবাবের অর্ডার নিয়ে আরশাদ ভাই আমাকে বললেন—
“সুমন, কাজের চাপ অনেক। যদি পারো Sinead-এর কাবাবটা তুমি বানিয়ে দাও। পারলে আরও দু’টা কাবাব বানাও। আমি একটা সিগারেট খেয়ে আসি।”
(ছোট্ট একটা ইনফরমেশন দিয়ে রাখি—আরশাদ ভাই কিন্তু পাকিস্তানি। পাকিস্তানেই জন্ম, পাকিস্তানেই বড় হওয়া। কিন্তু উনি দারুণ বাংলা বলতে পারতেন। কারণ, তাঁর বাবা-মা দু’জনই বাঙালি।)

আমি বললাম—
“ওকে ভাই, আপনি যান। Sinead-এর খাবার দিয়ে ওকে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিয়ে আপনাকে হেল্প করব।”

আমি Sinead-এর জন্য কাবাব বানাতে কিচেনে ঢুকলাম। আরশাদ ভাই সিগারেট খেয়ে আবার কিচেনে ঢুকলেন। তাঁর সঙ্গে গল্প করতে করতে কাবাব বানাচ্ছিলাম। হঠাৎ কাস্টমার যেখানে বসে ছিল সেখান থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ ভেসে এল। Sinead-এর গলার আওয়াজ বেশি শোনা যাচ্ছিল। সব কথা বোঝা যাচ্ছিল না, তবে অনেক গালাগালি করছিল।
আরশাদ ভাই আমাকে বললেন—
“সুমন, একটু দেখ তো, কী হয়েছে?”
আমি উত্তর দিলাম—
“আজকে Sinead বেশি ড্রিঙ্ক করে ফেলেছে। যে দিন বেশি ড্রিঙ্ক করে, ওই দিন এরকমই করে। চিল্লাচিল্লি করে। আপনি চিন্তা করবেন না।”

আমরা কাবাব বানানোতে মনোযোগ দিলাম। ওইদিকে চিল্লাচিল্লি চলছেই। Sinead-এর গলাটা বেশি শোনা যাচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবছিলাম—আজকে ও ট্যাক্সিতে উঠবে, ওই ড্রাইভারের খবরই আছে।

হঠাৎ করেই মারামারি আর চিল্লাচিল্লি শুরু হয়ে গেল। আমরা তৎক্ষণাৎ কিচেন কাউন্টার থেকে বেরিয়ে কাস্টমারের দিকে দৌড় দিলাম।
কাস্টমার সাইডে এসে যা দেখলাম আমি আর আরশাদ ভাই পুরোই অবাক। Sinead একজনকে এমনভাবে মেরেছে—ওই ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। আরেকটা ছেলে নাক দিয়ে অহরহ রক্ত ঝরছে, সে Sinead-কে ঘুষি মারছে।

আমি দৌড়ে গিয়ে Sinead-কে থামানোর চেষ্টা করলাম। আরশাদ ভাই ওই ছেলেটাকে সরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ছেলেটা এতটাই আগ্রাসী যে সে মরিয়া হয়ে Sinead-কে মারতে চাইছিল। আরশাদ ভাই থাকায় পারছিল না। Sinead ইতিমধ্যে Mop handle (ফ্লোর মুছার জন্য ব্যবহার করা হয়) তুলে ওই ছেলেকে আঘাত করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। আমি আর আরশাদ ভাই বুঝতেই পারছিলাম না কী হয়েছে। কেন দু’জন মারামারি করছে। আর একজন তো ফ্লোরে পড়ে আছে।

আরশাদ ভাই বললেন—
“সুমন, কী করব? Garda-কে খবর দিতে হবে। কিন্তু Sinead বিপদে পড়বে।”
আমি সত্যিই বুঝতে পারছিলাম না কী করব। তিন বছর ধরে Sinead-কে চিনি। কোনোদিন ওকে রাগতে দেখিনি। আজকে যেন অন্যরকম লাগছিল। কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যে ফ্লোরে পড়ে আছে তাকে দেখে আমি আরশাদ ভাইকে বললাম Garda-কে ফোন দিতে। তখনও আমরা কেউ জানতাম না কেন মারামারি হয়েছে।

যাই হোক, আমি Sinead-কে কিছুটা শান্ত করে কিচেনের পাশে এক চেয়ারে বসালাম। এর মধ্যে Garda এসে গেল। অ্যাম্বুলেন্সও এলো। ফ্লোরে পড়ে থাকা ছেলেটাকে নিয়ে গেল। যার নাক থেকে রক্ত পড়ছিল তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। Sinead-ও একটু আহত, তাকেও চিকিৎসা দেয়া হলো। তখনও পর্যন্ত আমরা কেউ জানতাম না আসল ঘটনা কী।

Garda প্রথমে আরশাদ ভাইকে জিজ্ঞেস করল—কি হয়েছে? আরশাদ ভাই Sinead আর আমার ব্যাপারটা বললেন। তারপর Garda আমাকে জিজ্ঞেস করল—আমরা কোন নাইটক্লাবে গিয়েছিলাম, Sinead কতটা ড্রিঙ্ক করেছে, ইত্যাদি। আমি Sinead-এর ওভারড্রিঙ্ক নিয়ে কিছুটা মিথ্যা বললাম। কারণ আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। এদিকে Sinead অনেকটাই শান্ত। এক মহিলা Garda তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বারবার বলছে—
“Cool down, cool down.”

এইদিকে Garda আহত ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করছিল—কি হয়েছে? ওই ছেলে পুরোই আবোল-তাবোল কথা বলছে; Garda আসলে কিছুই বোঝতে পারছিল না। বোঝা যাচ্ছিল ওই ছেলে অতিরিক্ত মাতাল ছিল। ওই ছেলেটার ব্রেথালাইজার (যেটা দিয়ে ড্রাঙ্কের পরিমাণ জানা যায়) মেশিনে চেক করা হলো; যা পাওয়া গেল সেটা দেখে Garda বুঝতে পারলো—তার এখন কথা বলার মতো অবস্থাই নেই। মেশিনে তার ফলাফল ছিল 0.19%। এরপর Sinead-কে চেক করা হলো—Sinead-এর ফলাফল 0.10%, আর আমার ফলাফল ছিল 0.05%। Sinead এবং ওই ছেলেটাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্বিতীয় অ্যাম্বুল্যান্স চলে গেল। Garda ওই ছেলে ও Sinead-কে নিয়ে যেতে চাইলো, কিন্তু বাধা দিলো আরশাদ ভাই।

আরশাদ ভাই বললেন, “Aray bhai, better you solve this problem here. Sanid is just like my sister. Please, let’s finish it now, I really don’t want her to end up in Garda station.”

Garda বললো, “If ye sort it out here now, you’ll be losin’ your business hours, and that’ll only cause you bother.”

আরশাদ ভাই উত্তরে বললেন, “Shop I am closing, bhai. Better you finish the matter here. If Sinead is at fault, then take her, no issue. Please check the camera also.”

Garda বললো, “Grand so, whatever you like yourself.”

Garda প্রথমে Sinead-কে প্রশ্ন করলো—
“An’ how do ya feel now yourself?”
“I’m grand, yeah.”
“Yeah, I’m grand. Are ya alright to have a chat with us now?”
"yeah."
“So what happened, why did ya hit the two lads?”

Sinead বললো, “They insulted me best friend, callin’ him ‘black’ an’ ignorin’ him, like he was less than the rest of us, which really wound me up inside.”
Sinead আরও বললো, আমি ওদের ভদ্রভাবে বললাম—
“Sure under Irish law, y’know, that carry-on’s not allowed at all. Callin’ someone names or ignorin’ them for skin colour, it’s banned, could land ya in real trouble.”
এর উত্তরে ওরা বললো,
“Forget that black eejit, come with us instead, we’ll have more craic tonight.”

এইটা শুনে Sinead উত্তেজিত হয়ে ওদের মারল। এটাই ছিল Sinead-দের সরাসরি, সরল উত্তর।

পরে সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করে দেখা গেল, ছেলেগুলো Sinead-কে উত্তেজিত করছিল; Sinead কিছুক্ষণ বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো, তারপর দুই পক্ষ একসঙ্গে চেঁচামেচি করতে লাগলো। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো—Sinead প্রথমে আঘাত করেছিল। আর একজন ছেলে ইতিমধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যায়া গেছে; সেই ছেলেটার কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। Sinead-কে গ্রেপ্তার করা ছাড়া Garda-এর আর কোনো উপায় ছিল না।

আমার আর আরশাদ ভাইয়ের মন খারাপ হয়ে গেল। তবে Garda আমাদের আশ্বস্ত করলো—ওই ছেলেগুলো যদি কোনো অভিযোগ না করে, আর Sinead-ও যদি কোনো অভিযোগ না করে, দুই পক্ষ মীমাংসা করে নিলে তারা Sinead-কে ছেড়ে দেবে।

যাই হোক, Sinead আর ওই ছেলেকে গ্রেপ্তার করলো। আমি অনুরোধ করলাম—আমি Garda Station-এ যাবো। যদি কিছু বলার থাকে বলবো। Garda যদিও আমাকে মানা করেছিল, তারপরও আমি গেলাম।

Garda সেন্টারে পৌঁছে আমি Sinead-কে বললাম—
“Sinead, I am here, you just go to the cell and have a little sleep, you will be fine.”
Sinead এখন পুরোপুরি শান্ত। হাসিমুখে বললো—
“You head on home, sure nothin’ will happen. If they don’t make a complaint, I won’t either. But if they do, I’ll be makin’ one meself.”

আমি কিছুই বললাম না। শুধু Sinead-এর সেলে যাওয়া দৃশ্যটা দেখলাম।
আমি সারা রাত Garda Station-এর রিসেপশনে বসে রইলাম। আরশাদ ভাই আমাকে ফোন দিয়ে ওখানকার পরিস্থিতি জিজ্ঞাসা করছিলেন।

আমি টেনশনে ছিলাম—ওই ছেলেটাকে নিয়ে, যাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। খবর জানতে বারবার রিসেপশনে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম, হাসপাতাল থেকে কোনো আপডেট এসেছে কি না। এর মধ্যে Sinead-এর মা সুজানাকে ফোন দিলাম। তিনি ধরলেন না, সম্ভবত ঘুমে ছিলেন। আমি আর ফোন করিনি।

এক সময় হাসপাতাল থেকে খবর এলো। হাসপাতালে নেওয়া ছেলেটি ভালো আছে। নাকে একটু আঘাত পেয়েছে। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে গম্ভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আঘাতটা ততটা মারাত্মক ছিল না। এটা শুনে আমি আশ্বস্ত হলাম। আরশাদ ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি ও আমার মতোই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন—
“আলহামদুলিল্লাহ।”

সারা রাত আমি Garda Station-এ বসেছিলাম। সকাল দশটার দিকে হাসপাতাল থেকে ওই ছেলেটিকে Garda Station-এ নিয়ে আসা হলো। Sinead আর সেই ছেলেকে সেল থেকে বের করে একটা রুমে ঢুকিয়ে দিলো। Garda আমাকে বলল—আমি চাইলে ওই রুমে যেতে পারি। এবং বলল—যদি এখনই দুই পক্ষ মীমাংসা করে নেয়, তাহলে ব্যাপারটা এখানেই শেষ হবে; না হলে কোর্ট পর্যন্ত যাবে।

আমি রাজি হলাম রুমে যাওয়ার জন্য। আমাকে দেখে Sinead জিজ্ঞেস করল—
“Yer ( you are) still here, is it? Did ya go home at all or spend the whole night here?”
আমি উত্তর দিলাম—
“How can I go home while you are here?”
আমার কথাটা শুনে Sinead কেমন খুশি হল—তার মুখে হাসি ফুটে উঠল।

Sinead আর ওই দুই ছেলে, আর আমি—চতুর্মুখে তিনজন Garda নিয়ে রুমে ঢুকলাম।
একজন Garda ওই দুই ছেলেকে উদ্দেশ্য করেই বলল—
“আইরিশ আইনে কেউ যদি রেসিজম করে, তার শাস্তি অনেক গম্ভীর। যদিও এখন পর্যন্ত তোমাদের নামে এই ব্যাপারে কোনো অভিযোগ উঠেনি। যদি অভিযোগ ওঠে আর প্রমাণ হয়, তাহলে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল হতে পারে। আর যেহেতু তোমরা সরাসরি আক্রমনাত্বক ব্যবহার করেনি, তাই বাস্তবে হয়তো কয়েক মাসের জেল আর জরিমানাই হতে পারে।”

তারপর Sinead-এর দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন—
“যেহেতু তুমি প্রথমে আঘাত করেছো, তোমার সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় বছর পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু এ আঘাতটা তুলনায় হালকা, তাই বাস্তবে তার শাস্তি সম্ভবত ছয় মাসের আশেপাশেই হবে।”
Garda সংক্ষেপ করে আইনের কথা বলল। শেষে বললেন—এখন তোমরাই ঠিক করো কী করবে।

দু’টো ছেলেই সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল—
“আসলে আমরা ড্রাঙ্ক ছিলাম, পুরো ব্যাপারটার জন্য আমরা দুঃখিত।”
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল—
“আমরা আসলে ওকে ছোট করার জন্য কিছু বলিনি। কিন্তু ব্যাপারটা হয়ে গেছে। আমরা সত্যিই এই ব্যাপারের জন্য দুঃখিত।”

Sinead-ও বলল—
“আমিও দুঃখিত। আসলে এভাবে প্রথমে মারা ঠিক হয়নি। সুমন আমার খুব ভালো বন্ধু। ওকে কেউ ছোট করলে আমার খারাপ লাগে। হয়তো আমি সেটা নিতে পারিনি, তাই মেরে বসেছি। আমিও দুঃখিত।”

এই বক্তব্য শুনে Garda আমাকে জিজ্ঞাসা করল—
“তোমার কোনো অভিযোগ আছে?”
আমি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম—
“না, আমার কোনো অভিযোগ নেই।”

Garda তখন বলল—
“আমরা একটা প্রাথমিক রেকর্ড রাখলাম। কিন্তু এটাকে অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করলাম না। তোমরা চাইলে যেতে পারো।”

এই কথা শুনে আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমরা সবাই উঠে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম।
সঙ্গে সঙ্গেই এক ছেলে—যাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল—আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি সত্যিই দুঃখিত। তোমাকে আমি কোনোভাবে ছোট করতে চাইনি। দয়া করে কিছু মনে করো না।”
আমি তাকে উত্তর দিলাম,
“আমি কিছুই মনে করিনি।”

আমরা Garda স্টেশন থেকে বের হচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে এক Garda Sinead-কে বলল—
“Ah, you’re very lucky, sure your lad loves ya to bits.”
আমি হেসে দিলাম। Sinead-ও হেসে হেসে উত্তর দিল—
“Ah no, he’s not me boyfriend, he’s me best mate.”

আমরা Garda স্টেশন থেকে বের হয়ে এলাম। ওই ছেলেগুলোও বেরিয়ে এলো। সেই ছেলেটি আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে আবার দুঃখ প্রকাশ করল।
Sinead-কে ট্যাক্সিতে বসিয়ে দিয়ে আমি হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরলাম।

যে কয়েক বার রেসিজমের শিকার হয়েছিলাম, তার মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। বাকিগুলো ছিল ছোটখাটো। আরেকটা ছোট ঘটনা বলে লিখাটা শেষ করব।

আমি কনট্র্যাকচুয়াল ভিত্তিতে একটা এয়ারলাইনে Cabin Crew ছিলাম। একদিন ইংল্যান্ড থেকে ফ্লাইট নিয়ে Cork-এ ফিরছিলাম।
খাবারের ট্রে নিয়ে যাত্রীদের খাবার, চা-কফি সার্ভ করছিলাম। এক বৃদ্ধের কাছে গিয়ে খাবার দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম—
“What do you like sir, tea or coffee?”
— “Coffee.”
— “Black or white coffee, sir?”
উত্তরে ওই বৃদ্ধ বললেন—
“Coffee like you.”
উত্তর শুনেই আমি বুঝে গেলাম তিনি কী বোঝাতে চাইছেন। আমি শান্তভাবে বললাম—
“Ok sir.”
এই কথা বলে আমি তাঁকে White Coffee দিলাম।
সাদা কফি দেখে বৃদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন—
“What’s this ya handed me? I told ya (you), coffee like you!”
তার কথা শুনে আমি হেসে উত্তর দিলাম—
“Sir, my complexion is brown, not black. If you notice, the coffee resembles my colour. Thank you very much, and I hope you enjoy your journey.”

এ কথা বলে আমি খাবারের ট্রে সামনে এগিয়ে নিলাম। একবারও পেছনে ফিরে তাকালাম না। বৃদ্ধও কিছু বললেন না।
মনে খুব ইচ্ছে করছিল বৃদ্ধের প্রতিক্রিয়া দেখার। কিন্তু দেখিনি। ভেবেছিলাম—তাকালে আবার কী না কী ঝামেলা হবে।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৩

আবেদি১২৩ বলেছেন: হাহাহা , লিখা তা ভালো হয়েছে , spcially আপনার answer টা।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০০

সুম১৪৩২ বলেছেন: হাহা, ধন্যবাদ! আপনার ভালো লেগেছে জেনে সত্যিই খুশি হলাম, বিশেষ করে আমার উত্তরটা। আপনার উৎসাহই আমার লেখার সবচেয়ে বড় প্রেরণা।

২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৫৫

মেঠোপথ২৩ বলেছেন: বিক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা পড়তে ভাল লেগেছে। বন্ধুত্ব বড় চমৎকার একটা সম্পর্ক। দ্বীতিয় ঘটনায় প্লেনের বুইড়াকে দারুন একটা শিক্ষা দিয়েছেন।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৪

সুম১৪৩২ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার কথাগুলো ভীষণ অনুপ্রেরণাদায়ক। সত্যিই বন্ধুত্বই সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক, আর দ্বিতীয় ঘটনায় ওভাবে জবাব দিতে পেরে আমি নিজেও স্বস্তি পেয়েছিলাম।

৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৮

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



পড়তে গিয়ে গার্বেজে পরিণত হয়েছেন!

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫

সুম১৪৩২ বলেছেন: ভাই আপনাকে ধন্যবাদ আমার কমেন্ট আর জন্য , আমার পোস্ট আপনার কমেন্ট থাকবে না , এইটা কেমনে কি ? গার্বেজ পোস্ট এ , অবশ্যিই গার্বেজ এ জন্ম নেয়া লোক রাই আসবে। তা ভাইজান, আপনার বাপ্ মা , কোন গার্বেজ এ রেখে আপনারে ছাগল বানাইসে। তবে, আপনারে শুধু ছাগল বানাইসে, আপনার পরিবার, রাম ছাগল বানাইতে পারলো না, আপসোস ভাইজান আপসোস , বড়ই আফসোস । ..

রাম ছাগলের ঘরে গার্বেজ ছাগল পয়দা হইসে ,

৪| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪৬

জনারণ্যে একজন বলেছেন: @ সুমন, প্রথম ঘটনাটি আমার ঠিক রেসি*জম বলে মনে হলো না। 'বুলিয়িং' বললেই বোধকরি মানানসই হতো। তবে দ্বিতীয় ঘটনাটিকে তা বলা যায়। আপনার বান্ধবী চমৎকার একজন মানুষ।

@জেনারেশন একাত্তর, উনি পড়তে যেয়ে কিভাবে 'গার্বেজে' পরিণত হলেন? যা কিছু একটা বললেই তো হলো না, আপনাকে লজিক্যালি এক্সপ্লেইন করতে হবে - কোন কারণে ওনাকে গার্বেজ সাথে তুলনা করলেন।

বাসায় বৌয়ের কাছে *ছায় লাঠির বাড়ি খেয়ে ওই ক্ষোভ এখানে এসে যার-তার উপর ঝাড়লে তো চলবে না।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫১

সুম১৪৩২ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দরভাবে মন্তব্য করার জন্য। আসলেই প্রথম ঘটনাটাকে অনেকটা ‘বুলিয়িং’ বলা যায়, তবে তখন পরিস্থিতিটা আমার জন্য মানসিকভাবে ভীষণ অস্বস্তিকর ছিল। দ্বিতীয় ঘটনাটা নিঃসন্দেহে রেসিজমের মধ্যে পড়ে। আর হ্যাঁ, আমার বান্ধবী সত্যিই অসাধারণ একজন মানুষ

৫| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: জেনারেশন একাত্তর@ জনারণ্যে একজন সহ আমরা সবাই আপনার এক্সপ্লেইন শুনতে চাই । :-B

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭

সুম১৪৩২ বলেছেন: কুতুব ভাই উনি এক্সপ্লানেশন দিতে পারবে না , এক্সপ্লানেশন দিতে হলে, পুরা তা পড়তে হবে , গুগল করতে হবে , আরো অনেক কিছু , উনার মতো ছাগল এর কাছে আপনি এক্সপ্লানেশন খুঁজে লাভ নাই। আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে সাপোর্ট করার জন্য।

৬| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:


ব্যাখ্যা:

ওরা পড়তে গিয়ে ওখানে সিলেটি টোকাই কাবাব ঘরে চাকুরী করে; মদ ও ড্রাগে আছে; বস্তিতে কিংবা মসজিদে থাকে; পড়ালেখা করে না।

জনারণ্য কোথায় থাকে আমি জানি না; কুতুব নিশ্চয় লন্ডন যাননি, গেলে এদের দেখতেন; আমি বেশ কয়েকবার লন্ডন গেছি, এদের দেখেছি।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৯

সুম১৪৩২ বলেছেন: ছাগল, আমি বলছি South Ireland এর এর কথা , North Ireland এ না. লন্ডন আর নর্থ আয়ারল্যান্ড এর লাইফ স্টাইল আর সাথে সাউথ আয়ারল্যান্ড এর লাইফ স্টাইল মিলালে হবে না , আপনার কিছু লিখা পরে আমি বুজতে পারছি। আপনি একটা বড় রকমের ছাগল ছাড়া আর কিছুই না।

৭| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩৩

জনারণ্যে একজন বলেছেন: @ জেনারেশন একাত্তর, আপনার ব্যাখ্যায় আমি সন্তুষ্ট নই। বলেছিলাম, লজিক্যালি এক্সপ্লেইন করতে - সুমনকে ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন 'গার্বেজ' বলা হলো।

আপনি বলেছেন, ওখানে গেছেন, কাকে কাকে দেখেছেন, কি কি করে, ব্লা ব্লা ব্লা । প্লুরাল নাম্বারে বলেছেন।

আমি জানতে চাইছি, সুমনের দেয়া ওই পোস্টের; কোন কারণে ওনাকে ঐটা বললেন।

লজিক্যাল উত্তর, প্লিজ। আশাকরি গার্বেজের মতো অযৌক্তিক উত্তর দেবেন না।

৮| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৩

জনারণ্যে একজন বলেছেন: বাই দ্য ওয়ে, জেনারেশন একাত্তর - আপনার ওই নিউ ইয়র্ক সিটিতে আমি বেশ ক'মাস ছিলাম। এরপরেও কয়েকবার গেছি; যাওয়া হয় এখনো মাঝে মাঝেই।

ওখানকার গড়-পড়তা বাংলাদেশিদের জীবনাচরণ ভালো করেই জানি। এখন ওখানে যা দেখেছি, যা শুনেছি, তাই দিয়ে যদি আপনাকে ডিফাইন করতে চাই - তবে তা আপনার জন্য তা বড়োই লজ্জার কারণ হবে এই প্লাটফর্মে।

ভালো থাকবেন।

৯| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:




জনারণ্য,

নিউইয়র্ক ও আমেরিকায় সবাইকে কাজ করে খেতে হয়; আপনি কানাডায় আছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.