নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক জন গর্বিত ভারতবাসী। মোহনবাগানের মেয়ে।সহ শ্রম কমিশনার, স্বঘোষিত নারীবাদী, জননী, স্ত্রী, কন্যা এবং পুত্রবধূ। আপন খেয়ালে চলি, মনের কথা বলি। আমার ব্লগ amianindita.blogspot.in

আমি অনি

এক জন গর্বিত ভারতবসী।মোহনবাগানের মেয়ে।সহ শ্রম কমিশনার, স্বঘোষিত নারীবাদী, জননী, স্ত্রী, কন্যা এবং পুত্রবধূ। আপন খেয়ালে চলি, মনের কথা বলি। আমার ব্লগ amianindita.blogspot.in

আমি অনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহযাত্রী (পার্ট- ১)

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২০

অনেক দিন আগের কথা, তখন পশ্চিম বঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদল, মুষ্টিমেয় জনগণের দিবাস্বপ্ন মাত্র। রেড জোন আছে বটে, তবে জঙ্গলমহল তখনও লাল হয়নি। মাঝে মাঝেই বিরাপ্পনের নাম শোনা গেলেও, কিষান জীর সাথে বঙ্গবাসী তখনও অপরিচিত। শিলালিপি, লিপিলেখা, ঊষাঙ্গিনি আর নবনী চার ঘনিষ্ট বন্ধু। চার জনেই ডেইলি পাষণ্ড। ১১৩ নং মেদিনীপুর লোকাল এবং ১১৫ নং খড়গপুর লোকালের মহিলা কামরার সব নিত্যযাত্রী এবং সব হকার ওদের চেনে। ওরা একসাথে যায় আবার এক সাথে ফেরে। নবনী এবং উষাঙ্গিনিী এ লাইনে পুরানো পাপী, বহুদিন ধরে যাতায়াত করছে, উষাঙ্গিনির বয়স দেখে যদিও মনে হয় পঞ্চাশ, বাহান্ন এমনকি পঞ্চান্নও হতে পারে, তবে তিনি দাবী করেন তাঁর বয়স নাকি সবে চল্লিশ পেরিয়েছে। কয়েক বৎসর পূর্বেও দোহারা চেহারা ছিল, আজকাল একটু ভারির দিকে। ঘোর কৃষ্ণ বর্ণ। সস্তার কলপ করা চুলে গদগদে করে সিঁদুর পরেন। হাতে শাঁখা, পলা। অধিকাংশ দিনই সিনথেটিক শাড়ি পরেন, কদাচিৎ তাঁত বা সিল্ক। চান করে ভেজা চুল বেঁধে ট্রেনে ওঠেন, উঠেই আগে চুলটা খুলে দেন। চটি খুলে সিটের ওপর বাবু হয়ে বসা ওনার প্রিয়তম অভ্যাস। জোরে জোরে কথা বলেন, কথায় কথায় অট্টহাস্য করেন, মাঝে মাঝে সুর করে গানও গান, অবশ্য চলতি বাংলা সিনেমার গান, না হলে বড় জোর স্বর্গীয় মান্না দে বা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান। গান গাইতে গাইতে সিটে বসে এক পাক নেচেও নেন। অবশ্য কামরা খালি থাকলে তবেই। কোন এক কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। উষাঙ্গিনির পুত্র কন্যা উভয়েই বিবাহিত। বড় নাতিটিরই সপ্তম শ্রেণী হল। স্বামীও ঐ একই অফিসে চাকরী করেন। তবে কলকাতায় পোস্টেড। একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেই ফেলেছিলেন, স্বামীর কাজে খুশি হয়ে কোন এক বড় সাহেব ঊষাঙ্গিনিকে অনুগ্রহ পূর্বক এই চাকরীটী যোগাড় করে দেন। যাই হোক মহিলা কামরার নিত্যযাত্রীদের কাছে উনি খুব একটা জনপ্রিয় নন। কারণ উনি নাকি অনেকের কাছেই টাকা ধার করে রেখেছেন। হকাররাও ওনাকে দেখলে সরে সরে যায়। তবে টাকার পরিমান ৫০০-১০০০ এর মধ্যেই থাকে। উনি সময় সুযোগমত ৫০-১০০ করে শোধও দেন, তবু শিলালিপি আর লিপিলেখাকে নিরালায় পেলেই অন্যান্য মহিলা যাত্রীরা সাবধান করে দেয়। সব মিলিয়ে মানুষটা মন্দ নন। শহুরে পালিশ বিহীন গ্রাম্য মহিলা।
শিলালিপি আর লিপিলেখা সদ্য সদ্য ডেইলি পাষণ্ডগিরি শুরু করেছে। দুজনেরই দপ্তর খড়্গপুর। ওদের বয়সও কাছাকাছি, সমবয়সীই বলা যায়। দুজনেই গৌরী, বেশ হৃষ্টপুষ্ট। শিলালিপি আসে হাওড়া থেকে আর লিপিলেখা ট্রেনে ওঠে বাগনান থেকে। ট্রেনেই ওদের আলাপ, আলাপ থেকে ঘনিষ্টতা হয়ে বর্তমানে ওরা একে অপরের প্রিয়তম বান্ধবী। শিলালিপির বদলির চাকরী, খড়গপুর ওর প্রথম পোস্টিং। বাবা মায়ের দুলালী, প্রথম দিন বৃদ্ধ বাবা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। সমুদ্র নীল জিন্স, সাদা শার্ট আর উঁচু গোড়ালির ফ্যাশন দুরস্ত জুতো পড়ে প্রথম দিন অফিস গিয়েছিল শিলালিপি। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে অফিস পৌছতে লেগেছিল পাক্কা চার ঘণ্টা। জুন মাসের তীব্র গরমে তথা পথশ্রমে ক্লান্ত মোমের পুতুলকে দেখে মেদিনিপুরিয়া বড় সাহেবের মনেও দয়া হয়েছিল, তাই সেদিন তড়িঘড়ি ছেড়ে দেন। সাড়ে তিনটের ট্রেন, লোকাল অবশ্যই, ঐ সময় কোন এক্সপ্রেস ট্রেন থাকে না, ধরার জন্য তিনটের সময় অফিস থেকে বেড়িয়ে যথারীতি চার ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাতটার সময় বাড়ি ঢুকে শিলালিপি হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে। সাথে সাথে মাও খানিক কেঁদে নিলেন। সে কি নাটক বাপ রে বাপ। অবশেষে শিলালিপির বাবা প্রবল চিৎকার চেঁচামিচি করে পাড়ার লোকের ঘুম চটকিয়ে নাটকে যবনিকাপাত করেন। সেদিনের মত নাটক বন্ধ হলেও পরদিন থেকে নতুন নাটক শুরু করে শিলালিপি। মোবাইলের অ্যালার্ম বেজে বেজে থেমে যায়, মা ডেকে ডেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, বাবার চিৎকারে পাড়ার তন্দ্রাচ্ছন্ন সারমেয় কূলের আমেজ নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু শিলালিপির ঘুম আর ভাঙে না। অবশেষে যখন নিদ্রাভঙ্গ হয়, তখন বেলা নটা। অতএব ঐ দিন আর অফিস যাওয়া হয় না। তাতেও শিলালিপির কোন অপরাধ বোধ ছিল না, দিব্যি চান করে ভাত খেয়ে, বাতানুকূল যন্ত্র চালিয়ে একটা সুখী সুখী দিবানিদ্রার উদ্যোগ নিচ্ছিল, সব আমেজ নষ্ট করে দিল একটা ফোন। আগের দিনের স্নেহশীল বড় সাহেবের ফোন, আজ অবশ্য গলায় স্নেহ ছাড়ুন, বিন্দুমাত্র মিষ্টতাও ছিল না। হিমশীতল গলায় ধমকালেন, পুনরায় বিনা সংবাদে বা কোন অগুরুতর কারণে অফিস না গেলে, উনি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। শিলালিপি অনুভব করল বাস্তবিকই গরিবের কথা বাসী হলে কতটা মিষ্টি হয়, বিগত রাত থেকে নানা ভাবে বাবা এই কথাটাই বোঝাবার নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। জনমানসে রাজ কর্মচারীদের সম্পর্কে যাই ধারণা থাকুক না কেন, সরকারি চাকরীতে আদৌ যেমন খুশি চলা যায় না। ঢুকেছ কি মরেছ। বাবা যথার্থই বলেন, “সরকারি চাকরী হল আদতে চাকরগিরি। আর তোরা হলি জনগণের চাকর বাকর, public servant?”
(চলবে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১০

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ভালো লিখেছেন দিদি! শুভেচ্ছা রইল সামহোয়্যারইন ব্লগে লেখার জন্য। স্বাগতম!

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪

আমি অনি বলেছেন: মূল্যবান সময় অপচয় করে আমার লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৯

রানা আমান বলেছেন: লেখাটা খুব ভালো লেগেছে । পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলুম ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৮

আমি অনি বলেছেন: মূল্যবান সময় অপচয় করে আমার লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫২

কালীদাস বলেছেন: মন্দ না।
কয়েকটা প্যারা করলে পড়তে সুবিধা হত।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৫

আমি অনি বলেছেন: মূল্যবান সময় অপচয় করে আমার লেখা পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.