![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেন গত ৪২ বছরে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীরাসহ জাতীয় বিশ্বাসঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হল না? এ প্রশ্নের সাথে আমাদের সমগ্র জাতি ও জনগণের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র এবং সার্বিক মুক্তির প্রশ্নটি সম্পর্কিত।
আওয়ামীলীগ ছিল পূর্ববাংলার জমিদার-জোতদার এবং বড় বুর্জোয়াদের দল। তারা নিজেদের বিকাশের স্বার্থেই পাকিস্তানের পাঞ্জাবী শাসকশ্রেণীর কাছ থেকে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যেই নিজেদের ক্ষমতার অংশীদারিত্ব দাবী করছিল। কিন্তু পূর্ববাংলার শ্রমিক-কৃষক জনগণের জন্য প্রয়োজন ছিল সাম্রাজ্যবাদসহ পশ্চিম পাকিস্তানী উপনিবেশিক শোষণের অবসান এবং জমিদার-জোতদার-বড় বুজোয়াদের হাতে নয়, শ্রমিক-কৃষক-জনগণের হাতে ক্ষমতা। কিন্তু জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে আওয়ামীলীগ পাকিস্তানের উপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনগণের একাংশকেও তার পেছনে সংগঠিত করতে সক্ষম হয়। জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম বেগবান হলে পাকিস্তানী ফ্যাসিস্টরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার মাধ্যমে যুদ্ধাভিযান শুরু করে। এসময় মুসলিমলীগ, জামাত ও আওয়ামীলীগের আপোসকামী প্রথম সারির নেতারাসহ বড় ধণীক ও আমলাদের একাংশ যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। অপরদিকে আওয়ামীলীগের মধ্যম পর্যায়ের নেতা ও ছাত্ররা ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। পূর্ববাংলার জনগণ আওয়ামীলীগের জন্য অপেক্ষা না করেই প্রতিরোধ যুদ্ধে নেমে পড়ে। কিন্তু শেষপর্যন্ত ভারতের হস্তক্ষেপে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী পরাজয় বরণ করলে জনগণের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম অসমাপ্ত থেকে যায়। রুশ-ভারতের তাঁবেদার হিসাবে জমিদার-জোতদার ও বড় বুর্জোয়াদের দল আওয়ামীলীগ ক্ষমতা দখল করে। ফলে লাখো শহীদের আত্মত্যাগ সত্ত্বেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের বিজয় ও ক্ষমতা সম্ভব হয়নি; সম্ভব হয়নি শ্রমিক-কৃষক-জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
পাকিস্তান আন্দোলনে জামাত, মুসলিমলীগ এবং পরবর্তীতে আওয়ামীগের নেতৃত্বাধীন জমিদার-জোতদার, বড় বুর্জোয়ারা ছিল মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ। পাকিস্তান আমলে পূর্ববাংলার শোষক শ্রেণী জামাত, মুসলিমলীগ এবং আওয়ামীলীগে বিভক্ত হয়ে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলেও তাদের মধ্যে শ্রমিক-কৃষক-জনসাধারণকে শোষণ ও শাসনের বিষয়ে শ্রেণীগত স্বার্থের ঐক্য অটুট ছিল এবং তা আজও আছে। ১৯৭১-এর আগে ও পরে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে জোতদার-মহাজন, বড় বুর্জোয়াদের মধ্যে আরেক দফা ভাঙ্গণ সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবহিকতায় আওয়ামীলীগের এবং জামাত ও মুসলিমলীগের একাংশের সমন্বয়ে সামরিক-বেসামরিক আমলাসহ বড় বুর্জোয়া, জোতদার-মহাজনদের নতুন দল বিএনপি-র আবির্ভাব ঘটে। আওয়ামীলীগের এ অংশই মুজিব হত্যার সাথে জড়িত ছিল। এমনকি এ দলের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়া ছিল বাকশালেরই সদস্য। অর্থাৎ মুসলিমলীগ, জামাত, আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এসব দল মূলত একই শাসক-শোষক শ্রেণীর দল। তাদের মধ্যে শাসন ক্ষমতা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকলেও জনগণকেশোষণ-শাসনের প্রশ্নে শ্রেণীগত ঐক্য রয়েছে। আর এ ঐক্যই হল মৌলিক ও প্রধান, বিরোধটা অমৌলিক ও গৌন। কাক যেমন কাকের মাংস খায় না, তেমনি পরস্পর বিরোধ থাকলেও, অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা থাকলেও এরা চরম দ- দিতে চায় না।
একারণেই একাত্তরের পর ভারত-পাকিস্তান সিমলা চুক্তির অধীনে আওয়ামীলীগ ভারতের আজ্ঞাবহন করে পাকিস্তানী ৯০ হাজার সৈন্যসহ গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের সসম্মানে স্বদেশে ফেরত পাঠায়, অপরাধীদের ক্ষমা করে, তাদের বিচার করে না। এ কারণেই ১৯৭৫ সালের পর বিএনপি-র নেতৃত্বে শাসক শ্রেণীর অপর অংশটি সংগঠিত হওয়ার কালে তারা জামাতের নেতৃত্বে শাসক শ্রেণীর চরম প্রতিক্রিয়াশীল অংশটির সাথে হাত মেলায়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল জেনারেল জিয়া এ জাতীয় বিশ্বাসঘাতক-গণহত্যাকারীদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করে, বিনিময়ে পাকিস্তান-সৌদি অক্ষের মদদ নিশ্চিত করে। এ মৌলিক শ্রেণী ও উপদলীয় ঐক্যের কারণেই বিএনপি বারবার জামাতের সাথে জোট গঠন, মন্ত্রীত্ব প্রদানসহ সার্বিক বিকাশে সহায়তা প্রদান করেছে।
এরশাদ সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামসহ নানাভাবে এ প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মব্যবসায়ীদের হাতকে শক্তিশালী করেছে।
প্রতিক্রিয়াশীল জামাতে ইসলামী শাসক শ্রেণীর প্রধান দুই দলের সাথে সুবিধাজনক ঐক্য করে নিজের বিকাশ সাধন করেছে। শ্রমিক-কৃষক-জনগণের প্রতি বৈরী মনোভাবের কারণে জামাতের নেতৃত্বে প্রতিক্রিয়াশীলরা জনগণের মধ্যে ভিত্তি গাড়তে ব্যর্থ হলেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের খাস দালাল সৌদি-পাকিস্তানি আর্থিক ও গোয়েন্দা সহায়তায় একটা মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছে।
সুতরাং মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, সৌদি, পাকিস্তান এবং তাদের দালাল শাসক শ্রেণীর অভ্যন্তরীন এ মৌলিক ঐক্যের কারণেই দীর্ঘ ৪২ বছরেও আমরা পাকিস্তানের সামরিক ফ্যাসিস্ট যুদ্ধাপরাধী-গণহত্যাকারী এবং তাদের দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে পারিনি। একারণেই বিদ্যমান শাসক শ্রেণীর অধীনে তাদের উপদলীয় রাজনৈতিক সংঘাত ও জনদাবীর কারণে গুটি কয়েক দোসরদের প্রতীকী বিচার শুরু হলেও পাকিস্তানি সামরিক ফ্যাসিস্টসহ তাদের সহযোগী গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রকৃত বিচার ও শাস্তির কাজ অনিষ্পন্নই থেকে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এভাবে অটুট থাকছে ধর্ম ব্যবসায়ী এ চরম প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতা, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার।
১৯৪৭ সালের পূর্বে এদেশের জনগণ বৃটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিল। এ লড়াইয়ে পূর্ববাংলার জনগণ মুসলিমলীগের নেতৃত্বে বৃটিশের দালাল জমিদার-বড় বুর্জোয়াদের বন্ধু ভেবেছিল। ফলে বৃটিশের প্রত্যক্ষ উপনিবেশের অবসান হলেও বৃটিশসহ সাম্রাজ্যবাদী শোষণের অবসান ঘটেনি। আর এ ‘বন্ধুরা’ পূর্ববাংলাকে উপনিবেশে পরিণত করে এবং ১৯৭১ সালে ‘গণহত্যা’ উপহার দেয়। ১৯৭১ সালে পূর্ববাংলার জনগণ জোতদার-মহাজন ও বড় বুর্জোয়াদের দল আওয়ামীলীগ ও রুশ-ভারতকে বন্ধু ভেবেছিল। কিন্তু এ ‘বন্ধুরা’ এদেশকে ভারত, রুশ ও পরে মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদের পরোক্ষ উপনিবেশে পরিণত করে। সিরাজ সিকদারসহ জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার তরুন ও বিপ্লবীদের হত্যা করে। বাকশালের পর ফ্যাসিস্ট সামরিক শাসন কায়েম করে। ১৯৯০ সালে আবারো এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনে জনগণ বুর্জোয়া-সামন্তদের শাসকশ্রেণীর দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপিকে বন্ধু মনে করেছিল। তাদের নেতৃত্বে একদফার আন্দোলন করেছিল। সে আন্দোলনে এরশাদের পতন হলেও গত দুই দশক ধরে বছর এ ‘বন্ধুরা’ ক্ষমতায় গিয়ে সংসদীয় স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে। একইসাথে মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের শোষণ-নিপীড়নও অব্যহত রয়েছে। আমরা বৃটিশকে, পাকিস্তানীকে, এরশাদকে উৎখাতের জন্য লড়াই করেছি কিন্তু শ্রমিক-কৃষক-জনগণের দিক থেকে ক্ষমতা দখল ও প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে অগ্রসর হইনি। এ কারণে বৃটিশ, পাকিস্তানি ও এরশাদকে হটিয়ে যেসব গণশত্রুরা ক্ষমতা দখলের জন্য মুখিয়ে ছিল তারা জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছে। তারা ক্ষমতায় গিয়ে শ্রমিক-কৃষক জনগণের উপর শোষণ-নিপীড়নমূলক শাসন অব্যহত রেখেছে। এভাবে বন্ধুবেশী গণশত্রুরাই লড়াইয়ের ফল ভোগ করেছে, জনগণের বিপুল আত্মত্যাগ বৃথা গেছে। ইতিহাস প্রমাণ করছে যে, শাসক শ্রেণী যখনই জনগণের আন্দোলনের নেতৃত্ব কব্জা করেছে তারা তাদের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে আন্দোলনের লক্ষ্যকে সীমিত আকারে নির্ধারণ করে দিয়েছে।
তাই আজ সমগ্র জাতি ও জনগণের উচিত, শাসক শ্রেণীর বিচার-বিচার খেলা ও চক্রান্ত থেকে নিজেদের মুক্ত করে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর সংগ্রামকে মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ এবং তাদের দালাল শাসক শ্রেণীর রাষ্ট্র উচ্ছেদ করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পরিণত করা। জনগণের প্রাণের দাবী বাস্তবায়নের বাস্তব শর্ত সৃষ্টি করি।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৪
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: সাম্রাজ্যবাদি ফাসিস্ট নিপাত যাক
রাজাকার নিপাত যাক
জনতা স্বাধীনতা ফিরে পাক