নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমপারা

আমপারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

(২) ইসরায়েল এর পথে পথেঃ বন্দরে বন্দরে বিড়ম্বনা

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩২


ছবিঃ ইসরায়েল ইমিগ্রেশন পেরুচ্ছি।

প্রায় ২২০০ আস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে এল-আল এয়ার লাইন্সের টিকেট কিনে ফেললাম। সিডনি থেকে হংকং হয়ে তেল-আভিবের বেন গুরিয়ান বিমান বন্দর। এক টানা ২৪ ঘণ্টার মতো ফ্লাইট। ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স করে ফেললাম। ফের যদি কোন অঘটন ঘটে যায়। সাথে যাবে আমার এক মামাতো ভাই। ইসরায়েল নিয়ে তার আগ্রহও অনেক।

এল-আল হল ইসরায়েল এর জাতীয় পতাকাবাহি বিমান পরিবহন সংস্থা। আর ঠিক এই কারণেই বিশ্বের নাম করা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সম্ভাব্য হামলার তালিকার প্রথম সারিতে এর অবস্থান। জঙ্গি হামলা ঠেকাতে অভাবনীয় নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিয়ে থাকে এই বিমান সংস্থা। বিমানে ওঠার আগে প্রতিটি যাত্রীকে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এল-আল হল পৃথিবীর এক মাত্র বিমান সংস্থা, যাদের প্রতিটি যাত্রীবাহী বিমান ক্ষেপনাস্র সজ্জিত থাকে। বিমান বালারা বেশির ভাগই হয়ে থাকে সাদা পোশাকধারী সামরিক বাহিনীর সদস্য। এছাড়া আরও থাকে সাদা পোশাক ধারি সামরিক বাহিনীর সশস্র সদস্য যাদের বলা হয় এয়ার মার্শাল। এটা অবশ্য অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাইট গুলোতেও থাকে। পাইলট হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর সাবেক পাইলটদের। বিমানের ককপিটে থাকে দুই পর্যায়ের নিরাপত্তা দরজা। এত নিরাপত্তার পরেও এই এল-আল এয়ারলাইন্সের বিমানগুলো সব চেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে।

যাত্রার দিন ভোর ৫ টায় বাসা থেকে রওনা হলাম। মামাতো ভাই এর চোখ জ্বল জ্বল করছে উত্তেজনায়। আমিতো একরকম অজানা উত্তেজনা আর আশঙ্কায় সারারাত ঘুমাতে পারিনি। বাসা থেকে বের হবার সময় মামি আর মামাতো ভাই এর বউ করুন চোখে বিদায় জানাল।

কোন ঝামেলা ছাড়াই আমরা সিডনি - হংকং ফ্লাইট পার করে দিলাম। বিমানের জানালা থেকে উপভোগ করেছি অস্ট্রেলিয়ার বিশাল ধূসর বাদামি মরুভূমি। কেয়ামত শুরু হল হংকং নামার পর থেকে। প্লেন থেকে বেরুবার পর দেখি আমাদের নাম লিখা কাগজ উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শনা। সে আমাদের এখানে সেখানে ঘুরাতে ঘুরাতে নিয়ে হাজির করলো তেল-আভিভ গামী বিমানের বোর্ডিং দরজার সামনে। বলে রাখি সিডনি থেকে আমাদের এই পর্যন্ত দুইবার নিরাপত্তা তল্লাশি করা হয়। আমাদের ব্যাগগুলো স্ক্যানারে ওই দুই বারই পরীক্ষা করা হয়। বোর্ডিং দরজায় পৌছার সাথে সাথে আমাকে আর আমার মামাতো ভাই কে আলাদা করে ফেলে ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। চলতে থাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ। আমার নাম কি, বাবা মা এর নাম কি, কেন ইসরায়েল যাবো, কই থাকব, কি করবো, আস্ট্রেলিয়াতে কি করি, কে খরচ দিচ্ছে ইত্যাদি। অন্তত ১৫ - ২০ মিনিট একই প্রশ্ন বার বার করে আমাদের দুই জন কে নিয়ে যাওয়া হল আলাদা একটি কক্ষে। সেখানে আমাদের ব্যাগের প্রতিটি জামা কাপড়ের পকেট, মোবাইল ফোনের ফেসবুক, ইমেইল, ক্যামেরা, SMS ইত্যাদি পরীক্ষা করার পর তারা পাসপোর্ট, টাকা পয়সা, আর মোবাইল ফোন ছাড়া সব কিছু বিমানের ভেতরে চেক-ইন করিয়ে দিল। আমাদের আর কিছুই রাখতে দিল না। তারপর শুরু হল আমাদের দুইজনকে আলাদা করে কাপড় খুলে পরীক্ষা। তল্লাশির নামে ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মীরা যা করে, তাতে আর কিছু না হোক, চাকরি সুবাদে প্রতিদিন শত শত মানুষের সম্মুখ এবং পশ্চাৎ দেশ দেখা তাদের হয়ে যায়। এদের কোন প্রশ্ন করলে খুব কৌশলে এড়িয়ে যায়। কি করছে, কেন এসব করছে জিজ্ঞেস করলে এক গাল হাসি দিয়ে বলে, "সামান্য কিছু প্রশ্ন করবো। তেমন কিছু না।" যদিও তারা আমাদের অসম্মানিত করেনি, কিন্তু নিরাপত্তার নামে এত বাড়াবাড়ি আমি আর কোথাও দেখিনি, তাই খারাপ লাগছিল। পরে চাচাতো ভাই বুঝাল যে নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসরাইলিরা খুবই স্পর্শ কাতর।

নিরাপত্তার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমরা বিমানে উঠলাম ক্লান্ত হয়ে। হাতের ঘড়িটিও ওরা রাখতে দেয়নি। ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সময়ে সময়ে বিমান বালারা খাবার দিয়ে গেছে কয়েকবার। ইসরায়েলি বিমানের খাবার খুব একটা খারাপ লাগেনি। তবে বিমান বালাদের দেখে অন্যরকম লেগেছে। তারা কথা খুব কম বলে। মুখে তেমন একটা হাসি নেই। অপূর্ব সুন্দরী বিমান বালা গুলো কেমন যেন যান্ত্রিক। অন্যান্য এয়ারলাইন্সের বিমান বালারা আরও অনেক হাসিখুশি হয় থাকে।

বিমান ভর্তি ইসরায়েলি দেখে ধারনা করি হংকং-এ তাঁদের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক নিশ্চয়ই গভীর। ঘুমিয়ে পার করে দিলাম অধিকাংশ সময়। বিমান যখন তেল-আভিবের আকাশে, তখন হটাৎ করে বজ্রপাত হল প্লেনের ডানায়। জানালা দিয়ে সেই দৃশ্য দেখে শীতল হয়ে গিয়েছিলাম কয়েক মুহূর্ত। একবার মনে হয়েছিল এটা কি আসলেই বজ্রপাত নাকি গোলার আঘাত। বেঁচে নামবো তো?

আর কোন নাটকীয়তা ছাড়াই বিমান তেল-আভিভ নামলো। রাত তখন ১১টা। আকাশ ছিল অনেক মেঘলা। ঝুর ঝুর করে বৃষ্টি হচ্ছিল বেন-গুরিয়ান বিমান বন্দরে। এত লম্বা বিমান ভ্রমণ জীবনে এই প্রথম। খুব ক্লান্ত লাগছিল। এরা কাস্টমস বা ইমিগ্রেশন এর জন্য কোন ফরম পুরন করতে বলে না। প্লেনের দরজা খুলে যেতেই সবাই একরকম দৌড়ে বেরিয়ে গেল। হয়তো লম্বা ভ্রমণের ক্লান্তি সবাইকে অস্থির করে দিয়েছে।

ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন। আবার জিজ্ঞাসাবাদ। সেই একই পুরানা প্রশ্ন। এক পর্যায়ে আমার বাংলাদেশি পাসপোর্ট অন্য একজন অফিসার কে দিয়ে আমাকে বসতে বলল পাশের এক কামরায়। সেখানে দেখি বিভিন্ন দেশের আরও অনেকে। শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ সব ধরনের মানুষ। বুঝলাম বাঙ্গালী পাসপোর্ট বলে আমাকেই শুধু আটকানো হয়নি। মনে মনে আরও এক দফা জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি, ঠিক এই সময়ে একজন আমার নাম ধরে ডাক দিল। বুঝলাম এবার আমার পালা। ঠিক তখনি আমাকে অবাক করে দিয়ে জানাল আমি যেতে পারি। হাতে ধরিয়ে দিল পাসপোর্ট।

বলে রাখা ভাল, ইসরায়েলে ঢুকার বা বের হবার সময় পাসপোর্টে কোন রকম সিল লাগানো হয় না। পরিবর্তে এরা যাত্রীর ছবি সহ নানা তথ্য লেখা ছোট এক টুকরা কাগজ ধরিয়ে দেয়। আমাকে জানানো হল, বেরিয়ে যাবার সময় এটাই আবার ওদের দেখাতে হবে। পরে জেনেছি কিছু কিছু আরব দেশ ইসরায়েল ভ্রমণের প্রমাণ পেলে আর ঢুকতে দেয় না। এই সমস্যা এড়াতেই গত কয়েক বছর আগে থেকে এমন ব্যাবস্থা নিয়েছে ইসরায়েলি সরকার।



বেন-গুরিয়ান বিমান বন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আরও এক দফা নিরাপত্তা তল্লাশির মুখোমুখি হয়েছিলাম। এবার এক সাথে তিন জন চৌকস নিরাপত্তা কর্মকর্তা আমাদের বাইরে এনে নিশ্চিত করলো আমরা আসলেই ট্যাক্সিতে উঠছি। শুরু হল জেরুজালেম যাত্রা।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩১

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আমার মতে ইস্রাইল ভ্রমণ দোষের কিছু না। কারণ সেখানে অনেক নবী রাসূল জন্মেছে এবং অনেকের কম্রক্ষেত্র ছিল ইস্রাইল। হযরত ওমর ঈস্রাইল ভ্রমণ করেছেন। অনেকে হয়ত ফিলিস্তিনের দমন পীড়নের কথা বলবেন। সেটা হয়ত ঠিক। কিন্তু ইস্রাইল ভ্রমনের বিধি নিষেধ আরোপ করে কোন ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। উলটো তাদের হিংসত বেড়েই চলেছে। তাই এখন স ম য় এসেছে পলিসি মেকার নতুন করে ঠিক করার। তাদের প্রভু যেহেতু আমেরিকা তাই আমেরিকাকে সাথে নিয়েই কিছু করতে নতুবা কাসানিকভ রাইফেল দিয়ে ইস্রাইল কে চাপে ফেলানো যাবে না। মুসলমান হিসেবে ইসরেল কে ঘিনা করতে পারি তাই বলে ইহুদি রাষ্ট ইস্রাইল কে নিষিদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনা। জানেন তো দূবল ঈমান্দারদের নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি আকৃষ্ট থাকে বেশি!

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৪৯

ফয়সাল এম,এফ,কে বলেছেন: যতটুকু জানি বাংলাদেশি পাসপোর্ট ধারিদের ইসরাইলে ভ্রমনে নিষেধাগগা আছে। আপনার কি অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট?

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪০

আমপারা বলেছেন: আমার আগের লেখাটি পড়ুন। আমি বাংলাদেশি পাসপোর্টেই ভিসা নিয়েছি।

৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৯

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: জেনে রাখছি আপনার কাছ থেকে, কোন দিন সম্ভব হলে আমিও চেষ্টা করবো ইসরায়েল ভ্রমণের।

৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৪৭

কালীদাস বলেছেন: কারেকশন: এল আল বিশ্বের একমাত্র এয়ারলাইন, যাদের বিমানে মিসাইল ডিফেন্স সিসটেম আছে, মিসাইল না। কমার্শিয়াল কোন প্লেনই মিসাইল ছোড়ার ক্যাপাবিলিটি রাখে না।

সার্চের একটা ব্যাপার বুঝলাম না। সাধারণত এই সিকিউরিটি সার্চের কাজটা যে এয়ারপোর্ট থেকে ডিপার্চার হচ্ছে যে এয়ারপোর্টের পুলিশ করে। এল আলের ক্ষেত্রেও কি তাই? নাকি ইজরাইলের সিকিউরিটি আলাদাভাবে নিয়োজিত থাকে?

পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০২

আমপারা বলেছেন: ইসরায়েল এর নিজস্ব সিকিউরিটি নিয়োজিত থাকে। জিজ্ঞাসাবাদ, তল্লাশি সব কাজ তারাই করে। লোকাল সিকিউরিটি পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করে মাত্র। এখানে আমার আর অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সামনের লেখা গুলোতে বলব সেসব

৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: যদি পাসপোর্টে কোন সিল না দেয় তাহলে তো কোন প্রুফই থাকলোনা আপনি যে ইসরাইল ভ্রমন করেছেন।

অবশ্য এতে সুবিধা আছে। ব্যাপারটা ভালই হল।

৬| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৪০

গ্রাম বাংলা এবং গ্রামীণ জীবন বলেছেন: জানিনা আল্লাহ কোন দিন ঐ পবিত্র ভূমি আল-আকসা মসজিদ আঙ্গীনায় যেতে পারবকিনা তবে আপনার মাধ্যমে দেখতে পারব এইটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তবে আমি সব সময় বাংলাদেশ কে ভালবাসি আর এইদেশ এর আইন কে শ্রদ্ধা করি।

৭| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০২

রহমান সাম্য বলেছেন: অনেক তথ্য বহুল লেখা, পড়ে ভাল লাগলো. ইসরাইল নিয়ে আপনার আগের (১ম) লেখাটির লিঙ্ক দেন।

৮| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:২৫

তানভীর১৯৯৩ বলেছেন: "This passport is valid for every countries except Israel" - এই লেখা দেখার পরেও ইসরাইলি অফিসিয়ালরা আপনাকে আটকায়নি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.