![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি যখন সপ্তম ক্লাস এ পড়ছি তখন পরিচয় হয় আকাশ স্যার এর সাথে। অংকে বিষয়ে তিনি দূর্দান্ত শিক্ষক ছিলেন। বিদ্যালয়ের কঠিন নির্দেশ থাকায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে কাইকেই পাঠদান করাতে পারতেন না। স্যার এর সাথে খুব সখ্যতা থাকায় একদিন কথায় কথায় জানতে পারলাম মাত্র পনেরো’শো টাকার বিনিময়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি। সেই ছোট্ট বয়সে মনে কষ্ট পেয়েছিলাম কারন পনেরো’শো টাকায় একটা মানুষের জীবন চলেনা।
একদিনের ঘটনা, সপ্তম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষা হবে কিছুদিন পর । জরুরী ক্লাস, তাই আকাশ স্যার ক্লাস নিচ্ছিলেন। একটু লক্ষ করতেই দেখলাম, স্যারের চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিলো। জানতে পারলাম, টাকার কারনে স্যারের বাড়ি ভাড়া বাকি, তাই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে বাড়ির মালিক, সারাদিন তিনি অনাহারে আছেন, তার মা অসুস্থ তাই তাকে টাকা পাঠানোটাও ভীষন জরুরী। তারপরেও ক্লাস নিচ্ছেন। কারন চাকরীটা ছিল তার জন্য অস্তিত্বের লড়াই।
দুই দিন পরে শুনতে পেয়েছিলাম স্যারের মা চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। স্যারকে এর পরে আরো দুই বছর পেয়েছিলাম। কোনদিন আর কাদঁতে দেখিনি।
এমনই ছিল আমাদের আকাশ স্যার।
বলতে কষ্ট হয়, সারা দেশে এরকম অনাহারে, দারিদ্র অবস্থায় আকাশ স্যারের মত হাজারো শিক্ষক তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বড় হয়ে বাস্তবতায় বুঝেছি, এমন অবস্থাটাই খুব সাধারন আমাদের দেশে।
গত দুই দিন যাবত প্রেস ক্লাবের সামনে নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা এমপিওভিুক্তির দাবি জানাচ্ছে। সাংবাদিকতার কাজের খাতিরে দুইদিন ধরে সেখানেই কাজ করতে হচ্ছে।
আমি দেখেছি, তাদের কন্ঠে করুন আহাজারি, আকাশ স্যারের মত পোষাকে প্রচন্ড দারিদ্রতার ছাপ, না খেয়ে অনাহারে শুকনো মুখ দেখে সত্যিই কষ্ট লাগে। যেই শিক্ষকেরা সারাজীবন ছাত্রদের জীবনের মানে শেখায় সেই শিক্ষকেরাই সত্যিকার অর্থে জীবনের মানে খুঁজে পায় না। সারাটি জীবন যে মানুষেরা ছাত্রদের নীতি শেখায়, ন্যায়- অন্যায় অসহায় মানুষের পাশে থাকার শিক্ষা দেয় সেই মহান পেশার সাথে জড়িত মানুষেরা কতটাই অসহায় অবস্থায় জীবন কাটিয়ে দেয়।
একজন শিক্ষককে দেখলাম, তার শরীরে লেখা ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি’।
খুব শান্তিপূর্ণভাবেই শিক্ষকেরা সরকারের কাছে তাদেরকে এমপিওভুক্ত করার দাবি করছিলেন। তাদের এ দাবি, দুমুঠো খাবার জোটার প্রত্যাশায়, এ দাবি ছিল, দারিদ্রতা থেকে কিছুটা মুক্তির পাবার আশায়।
হঠাৎ করেই দুপুরে, প্রায় ৫০০ শিক্ষকের ওপরে ২৫০ এর অধিক অস্ত্রধারী পুলিশ এবং র্যাব ৪৩ রাউন্ড টিয়ার গ্যাস এবং পিপার গ্যাসের মাধ্যমে প্রশাসনিক হামলা চালালো। প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক গুরুতর আহত এবং আহত হয় এই হামলায়। দরিদ্র শিক্ষকেরা যেন কিছুটা হতভম্ব হয়েছে। পরে পাল্টা জবাবে তারাও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে।
ঘটনার পরে এক উর্ধতন পুলিশ জানায়, সরকার পক্ষের নির্দেশেই তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।
সরকারের এই রুপ পুরোনো নয়। যখনই যে কোন প্রয়োজনে আন্দোলন হয়েছে, তখনই নিপীড়িত হয়েছে ভুক্তভোগী মানুষ।
জানতে ইচ্ছা হয় খুব, আর কতটা কাল শিক্ষকেরা দারিদ্রতার জালে বন্দী থাকবে? আর কতটা কাল নিপীড়িত হবে !!! খুব কষ্ট লাগে দেখে একজন শিক্ষকের এমনতর আহাজারি ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি, আর কত কাল থাকব’?
(১) .....
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩৪
শয়ন কুমার বলেছেন: বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর জাতীয়করণের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই সমিতি বিলুপ্ত হলো। এই সমিতির সকল সদস্য এখন থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সদস্য।”
৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৩
অমৃত সুধা বলেছেন: সবার এখনো হয়নি। যাদের বাকি আছে, আগামীকাল থেকে তারা আমরন অনশন কর্মসূচি শুরু করছে। আজকে তাদের ওপরেই নির্যাতন চারানো হয়েছে, কাল যে বি হবে! ছয়জন গুরুতর আহত। তাদের অবস্থা আশংঙ্কাজনক। .... তাদের মৃত্যু হলে তার দায় রাষ্ট্র কি নেবে?
শয়ন মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩২
শয়ন কুমার বলেছেন: লক্ষাধিক শিক্ষকের চাকরী জাতীয়করণ হল । জাতির প্রথম সোপান কিন্তু এই শিক্ষকরাই। এদের মনে খুশী আসলে আমাদের ভাল লাগে, জাতির উপকার হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যার্থতার নজিরের মাঝে এই সরকারের পঞ্চম বর্ষের এমনকি পুরো মেয়াদকালের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ সাফল্যের যুগান্তকারী কাজ এটি ।
Click This Link
Click This Link