নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইতিহাস গবেষক দেওয়ান নুরুল আনওয়ার জালালাবাদের কথা তার গ্রন্থে লিখেছেন খ্রিস্টিয় সপ্তম শতক পর্যন্ত সিলেট কামরুপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল । নিধনপুরে প্রাপ্ত ভাস্করবর্মনের তাম্রলিপি সূত্রে বলা হয়েছে ভাস্করবর্মন খ্রিস্টীয় ৬৫০ সাল পর্যন্ত সমস্ত উত্তর পূর্ব ভারত সহ শ্রীহট্টে রাজত্ব করেছেন । এশিয়াটিক সোসাইটির প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে (Journal) ভাস্করবর্মনের আমন্ত্রনে আগত হিয়েং সাংএর ভ্রমনের লিপিবদ্ধ বর্ণনায় যে ছয়টি দেশের উল্লেক পাওয়া যায় তার মধ্যে সমতট, তাম্রলিপ্ত এবং শিলিচাটল উল্লেখ্য যোগ । উল্লেখিত তথ্য মতে শিলিচাটলই হচ্ছে প্রাচীন শ্রীহট্ট বর্তমান বাংলাদেশের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল সিলেট বিভাগ । ভাস্করবর্মনের পর স্লেচ্ছাদিনাথ শালস্থম্ভ ৬৫০থেকে৬৭৫ দ্বারা বর্মনদের সিংহাসন অধিকৃত হয়েছিল । শালস্থম্ভ নিজেকে ভগদত্ত বংশীয় বা বর্মনদের উত্তরসুরী হিসেবে আখ্যায়িত করেন । শালস্থম্ভের অধঃস্থন রাজা হর্ষবর্মন রাজত্বকাল ৭৩০থেকে৭৫০ পযন্ত অত্র রাজ্যে রাজত্ব করেন । ব্রহ্মপুত্র পরবর্তি সমস্ত রাজ্য সমুহে হর্ষবর্ধনের সময় বিরাট ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির অভিমত রয়েছে । যার সূত্র ধরে সমস্ত বঙ্গ দেশ বিভিন্ন খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত হয়ছে বলে অনুমান করা হয় । ততকালে ত্রিপুরীদের রাজ্য কিরাত ভূমী হতে কাছারে স্থানান্তর হয় এবং শ্রীহট্টের কাছার তরফ এবং মনুকুল প্রদেশ সহ কুমিল্লা ও ঢাকার অনেকাংশ ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয় এবং ততকালে শ্রীহট্টের প্রাচীন লাউড় রাজ্য কামরুপ হতে বিভক্ত হয়ে একটি পৃথক স্বাধীন রাজ্য হিসেবে পরিণত হয় বলে জানা যায় ।
প্রাচীন রাজ্য সমুহের ইতিহাসঃ
স্মৃতি, স্থাপত্য, জনশ্রুতি ও পুরাকীর্তি ইত্যাদির ভিত্তিতে বলা হয় প্রাচীন শ্রীহট্টের লাউড় পর্বতে রাজা ভগদত্তের উপ-রাজধানী ছিল এবং শ্রীহট্টাঞ্চলে ইহাই সর্ব প্রাচীন রাজ্য বলে ধরা হয়। এছাড়া শ্রীহট্ট বা সিলেট বিভাগে আরো একটি প্রাচীন রাজ্যের উল্লেখ রয়েছে। যা প্রাচীন জয়ন্তীয়া রাজ্য নামে খ্যাত। অচ্যূতচরণ চৌধুরী জয়ন্তীয়া রাজ্যকে মহাভারত সময় কালের বলে বর্ণনা দিয়েছেন । মহাভারত সময় কালে জয়ন্তীয়া রাজ্যের অধীশ্বরী ছিলেন প্রমীলা। মহাভারত ও অন্যান্য শাস্ত্র গ্রন্থের বরাতে বলা হয় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ বিবরণীতে মহাবীর অর্জুনের স্ত্রী রাজ্য গমনের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাহা এই জয়ন্তীয়া রাজ্য। মহাবীর অর্জুন যধিষ্টরের অশ্ব মেধযজ্ঞে জয়ন্তীয়া রাজ্যে এসেছিলেন। বীর নারী প্রমীলা কর্তৃক অশ্ব মেধ বেঁধে রাখার কারণ অর্জুনের সাথে রাণীর যুদ্ধ সংঘটিত হয় । অবশেষে জয়ন্তীয়া রাণী অর্জুনের কাছে পরাজিত হলে অর্জুনের সথে তার বিবাহ হয় এবং জয়ন্তীয়া জয়ের পরে বীর অর্জুন তথা হতে মণিপুর রাজ্যে গিয়েছিলেন । উক্ত ঘটনার পর দীর্ঘকাল যাবত জয়ন্তীয়া হিন্দু রাজাদের দ্বারা শাসিত হতো । এগার'শ শতকে জয়ন্তীয়ায় কামদেব নামে অধীপতির রাজত্বের উল্লেখ পাওয়া যায় । মোলব (সম্ভবত মোগলদের অধিকার ভুক্ত কোন সামন্ত রাজ্য) দেশের পণ্ডিত কবিরাজ কামদেবের আমন্ত্রণে জয়ন্তীয়ায় এসেছিলেন এবং জয়ন্তীয়াপতির উৎসাহে তিনি রাধব পণ্ডব নামের শাস্ত্র গ্রন্থের রচনা করেন । কামদেবের সময় কালে জয়ন্তীয়া রাজ্যকে কামরুপের খণ্ড রাজ্য হিসেবে ধরা হতো । কামদেব বংশীয় রাজাদের দীর্ঘ কাল পরে প্রায় ১৫০০শতকে কোচ বা খাসিয়াগণের নিয়ন্ত্রণে জয়ন্তীয়া শাসিত হয় এবং মোগলদের পরে ইহা ইংরেজদের অধিকারে আসে ।
গৌড় রাজ্য সিলেট
গৌড় রাজ্য সিলেট শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ইহার অবস্থান ছিল । ঐতিহাসিক মুমিনুল হকের মতে প্রাচীন লাউড় রাজ্য কামরুপ হতে পৃথক হওয়ার পর প্রায় দশম শতকে লাউড় রাজ্য জয়ন্তীয়া এবং গৌড় রাজ্যে বিভক্ত হয়ে স্বাধীন ভাবে শাসিত হয় । উক্ত রাজবংশের উত্তরসুরী রাজা গোড়ক অত্রাঞ্চলের অধীকার প্রাপ্ত হয়ে তার নামানুসারে রাজ্যের নাম রাখেন গৌড় রাজ্য । ইহার অবস্থান সিলেট শহর ও শহরের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে বহু দুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । এক সময় ইটা রাজ্য ও তরফ রাজ্য এবং প্রতাফগড় রাজ্য সহ আরো অনেকটি রাজ্য গৌড়ের অধীনস্থ ছিল । রাজনৈতিক, ভূগৌলিক, সামাজিক এবং সাহিত্যিক ভাবে গৌড় রাজ্য সিলেট বিভাগের ইতিহাসে সর্বদিগে প্রসিদ্ধ । । রাজা গৌড় গোবিন্দ ছিলেন ইহার শেষ শাসক। রাজা গোবিন্দ সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে বিভিন্ন অভিমত রয়েছে । প্রখ্যাত ঐতিহাসিকঅচ্যুতচরণ চৌধুরী রাজা গোবিন্দকে সমুদ্রতনয় বলে পরিচয় করেন । উল্লেখ্য যে, গোবিন্দ গৌড় রাজ্যের অধিপতি বলে গৌড় গোবিন্দ নামে অভিহিত হন । কথিত আছে তুর্কি সেনাদের বাংলা বিজয়ের পর শ্রীহট্টে মুসলমান জন বসতির আলামত পরিলক্ষিত হয় । সৈয়দ মোস্তফা কামালের মতে ততকালে সিলেটের টুলটিকর মহল্লায় এবং হবিগঞ্জের তরফে মুসলমান বসতি ছিল । উল্লেখ্য যে সিলেটের টুলটিকর মহল্লার বাসীন্দা গাজি বুরহান উদ্দীন তার গৃহে নবজাত শিশুর জন্ম উপলক্ষে গরু জাবাই করলে গৌড় গোবিন্দ তাহা সহ্য করতে না পেরে গাজি বুরহান উদ্দীনের শিশু সন্তানকে নির্মম ভাবে হত্যা করে । কিংবদন্তী মতানুসারে খ্রিস্টীয় ১৩০৩ সালে শাহ জালাল মুজররদ রহ ৩৬০ জন সঙ্গী সহ দিল্লির সুলতান্দের প্রেরিত সিকান্দর গাজীর সাথে গৌড় রাজ্যে উপনীত হলেন । কথিত আছে রাজা গৌড় গোবিন্দ জাদু বিদ্যায় পারদর্শী ছিল এবং শাহ জালাল (রহ) আগমন লক্ষ্য করে বিভিন্ন ভাবে শাহ জালালের গৌড় অনুপ্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। শাহ জালালা (রহ) আধ্যাতিক সাধনায় বিনা সমরে গৌড়ে প্রবেশ করেন এবং গৌড় রাজ্য মুসলমানদের দ্বারা অধিকৃত হয় । এভাবেই গৌড় রাজ্য দিল্লীর সুলতানদের অধিকারে আসে । পরবর্তিতে, সিলেট মোগল শাসনে আসে ১৬১২ সালে ।
জগন্নাথপুর রাজ্য
জগন্নাথপুর রাজ্য হলো সিলেট শহর হতে ২৫ মাইল পশ্চিমে জগন্নাথপুর উপজেলার পান্ডুয়া বর্তমান পেড়ুয়া নামক স্থানে ইহার রাজধানী ছিল । ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে রাজা বিজয় মাণিক্য দ্বারা ইহা স্থাপিত। তত্কালে রাজা বিজয় মাণিক্য লাউড় রাজ্যের অধিপতি ছিলেন । রাজা বিজয় মাণিক্য জগন্নাথ মিশ্র নামক বিপ্রকে দিয়ে বাসুদেব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন । তারপরে জগন্নাথ মিশ্রের নামানুসারে রাজ্যের নাম জগন্নাথপুর রাখেন সেই থেকে জগন্নাথপুর রাজা বিজয় মাণিক্যের রাজ্য বলে ঘোষিত হয় । ১৬ শ শতক পর্যন্ত ইহা প্রাচীন লাউড় রাজ্যের অঙ্গ রাজ্য ছিল । পরবর্তিতে লাউড়ের রাজ বংশের পৃথক রাজ্য হিসেবে খ্যাত হয় । এই রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন রাজা বিজয় মাণিক্যের ছিক্কা মুদ্রা এবং প্রস্তর দ্বারা নির্মিত বাসুদেব মন্দির ।
তরফ রাজ্য
তরফ রাজ্য হলো সিলেট বিভাগের বর্তমান হবিগঞ্জ সদর, মাধবপুর, লাখাই, বাহুবল, চুনারুঘাট, শ্রীমঙ্গল, নবীগঞ্জ এবং বাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, ও নেত্রকোনা জেলার জোয়ানশাহী পরগনা নিয়ে তরফ রাজ্য বিস্তৃত ছিল । ইহার পূর্বনাম তুঙ্গাচল বা রাজপুর, যা ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের অধীন একটি সামন্ত রাজ্য । রাজপুরের সামন্ত তিপ্রা রাজা ত্রপিবিঞ্চু মারা গেলে, রাজকন্যা লালসা দেবিকে বিয়ে করে আচানক নারায়ন ইহার রাজা হন। রাজা আচানক নারায়নের সময় কালে তরফে কয়েকটি মুসলমান পরিবার বসবাস করেছিল। তরফের রাজা আচানক নারায়ন কর্তৃক মুসলমানরা প্রায়ই নির্যাতিত হতেন । ১৩০৩ সালে শাহ জালাল আউলিয়া (রঃ) কর্তৃক গৌড় রাজ্য বিজিত হলে ১৩০৪ সালে শাহ জালাল আউলিয়া (রহ) এর অনুসারী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন (রহ) ১২ জন সঙ্গী সাথীদের নিয়ে তরফ অভিযানে যান। সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে ইহা বিজিত হয়ে গৌড় রাজ্যের অধীনে আসে । সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীন (রহ) এর বিজিত উক্ত ভূমীকে বার আউলিয়ার মুল্লুক বলা হয়ে থাকে ।
প্রতাপগড় রাজ্য
প্রতাপগড় রাজ্য হলো প্রাচীন কালে প্রতাপগড়ের নাম সোণাই কাঞ্চন পুর ছিল । প্রতাপ সিংহ নামে জনৈক হিন্দু রাজা এই স্থানে বসতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ইহার নাম প্রতাপগড় রাখেন । পরবর্তিকালে প্রতাপ সিংহ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে প্রতাপগড়ের এক সাধারণ মুসলমান আমীর আজাফর প্রতাপ সিংহের রাজ বাড়ির অধিকার প্রাপ্ত হন । ওই সময় দেওরালি অঞ্চলে ত্রিপুরার সামান্ত পোরারাজার এক ছোট রাজ্য ছিল । এই পোরা রাজার মাধ্যমে প্রতাপগড় রাজ্যের সমুদয় এলাকা ত্রিপুরিদের অধিকারে আসে । খ্রিস্টীয় চৌদ্দ শতকের শেষভাগে মির্জা মালিক তোরাণি নামের এক যুবক ব্যক্তি দল বল সহ পারস্য হতে ভারতের দিল্লী হয়ে উক্ত দেওরালিতে উপনীত হন এবং ঘটনা ক্রমে পোরারাজার সাথে যুদ্ধ হয় । পোরারাজা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাজার কন্যা উমাকে, মির্জা মালিক তোরাণির কাছে বিবাহউত্তর স্বরাজ্য দান করেন। পরবর্তিকালে মির্জা মালিকের বংশে মালিক প্রতাব নামের এক ব্যক্তি শিকারের জন্য প্রতাপগড়ে উপনীত হন। অতঃপর উপরোল্লেখিত আমীর আজাফরের বংশে বিবাহ করে প্রতাপগড়ের রাজ বাড়ির অধিকার প্রাপ্ত হন। প্রতাপগড় এলাকা তখনকার সময়ে বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। মালিক প্রতাব বন জঙ্গল অপসারণ করিয়া তথায় জন বসতি স্থাপন করেন এবং মসজিদ ইত্যাদি প্রস্তুত করে জঙ্গল ভূমিকে জনপদে পরিণত করেন। সেই থেকে মালিক প্রতাবের নামে প্রতাপগড় প্রতাবগড় নামে পরিচিত হতে থাকে। পরবর্তিকালে ময়মনসিংহের জঙ্গলবাড়ী পর্যন্ত প্রতাবগড় রাজ্য বিস্তৃত ছিল। পরে কাছার রাজ্যের সাথে যুদ্ধ বাঁধলে অত্র রাজ্য কাছারের কমলা রাণীর অধিকারে আসে ।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ ভ্রাদার দিয়েছি আরো দিবো ।
২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৭
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
গুরুত্বপূর্ণ লেখা। চলতে থাকুক।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২০
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ বিগ ভ্রাদার মাইনুল ভাই । বলেছেন এবং যখন লেখায় উৎসাহ দিয়েছেন তখন নিয়মিত চলতে থাকবে ।
দোআ আর্শিবাদ করবেন
৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫২
ঢাকাবাসী বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। ভাল লাগল্ ।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৯
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ আঙ্কেল ভালো থাকবেন
৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০০
গেম চেঞ্জার বলেছেন: চমৎকার!! চালিয়ে যান। এগুলো চর্চা অব্যাহত থাকা উচিত।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৮
আমি মিন্টু বলেছেন: জী চেঞ্জার ভ্রাদার দোআ করবেন সহিসালামত ভাবে যেন শেষ করতে পারি আর এই চর্চা যেন চালিয়ে যেতে পারি ।
ধন্যবাদ আপনাকে শরু থেকে সাথে থাকার জন্য ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: ভাল লাগা রইল ভাই। আরও বিস্তারিত লিখতে পারতেন।
শুভ কামনা রইল।