নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর ছিলেন ভারতবর্ষের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। এবং তিনিই ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। তার পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেণ। বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাঁকে সরিয়ে আকবর নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেণ। কিন্তু আকবর ভারতবর্ষ এবং আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন।
সাম্রাজ্যের রাজপুতদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার স্বার্থে আকবর বিভিন্ন রাজবংশের রাজকন্যাদের বিয়ে করেণ। তবে তার স্ত্রীদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হলেন যোঁধা বাঈ
হীরাবাঈ ছিলেন রাজস্থানের রাজপুত ঘারানার রাজা ভারমালের জ্যেষ্ঠ কন্যা।হীরাবাঈ ১৫৪২ সালের পহেলা অক্টোবার জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন ১৬২৩ সালের ১৯মে প্রায় ৮১ বছর বয়সে।তিনি ছিলেন রাজা ভগবান দাসের বোন এবং রাজা মানসিং এর ফুপু ।এবং তিনিই ছিলেন আকবরের ১ম রাজপুত স্ত্রী।সম্রাট আকবারের সাথে তার বিবাহ হয় ১৫৬২ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী।তিনি শাহাজাদা সেলিমের অর্থাত্ সম্রাট জাহাঙ্গীরের মা।তার আসল নাম রাজকুমারী হীরা কুমারী।আবার তার নাম যোধাবাঈ ছিল নাকি তা নিয়ে বির্তক রয়েছে।তবে বিয়ের পরে তিনি মরিয়ম উজ জামানী নাম ধারন করেন। তিনি ছিলেন আমের রাজেযযর রাজকুমারী। তাঁর মায়ের নাম হল ময়নাবতী এবং তাঁর বোনের নাম হল সুকন্যা দাস। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল সম্ভবত ১৬২৩ সালে।
সম্রাট আকবরের শাসনকাল
রাজ্য শাসনের জন্য আকবর আমলাতন্ত্র চালু করেন এবং প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্বশাসন দান করেন। আকবরের আমলাতন্ত্র বিশ্বের সবথেকে ফলপ্রসু আমলাতন্ত্রের মধ্যে অন্যতম। তিনি প্রত্যেক অঞ্চলে সামরিক শাসক নিয়োগ দেন। প্রত্যেক শাসক তার প্রদেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিল। ক্ষমতার অপব্যবহারের শাস্তি ছিল একমাত্র মৃত্যুদন্ড।
রাজপুতদের সাথে সম্পর্ক
আকবর বুঝতে পেরেছিলেন যে রাজপুত্ররা শত্রু হিসাবে প্রবল কিন্তু মিত্র হিসাবে নির্ভরযোগ্য। আকবরের শাসনকালে তিনি রাজপুত্তদের সাথে সন্ধি করার প্রয়াস করেছিলেন। তবে কিছুটা যুদ্ধের দ্বারা এবং অনেকটাই বিবাহসূত্রের দ্বারা তিনি এই প্রয়াসে সফল হয়েছিলেন। অম্বরের রাজা ভর মল্লের কন্যা জোধাবাঈ এর সাথে তার বিবাহ হয়। ভর মল্লের পুত্র রাজা ভগবন দাস আকবরের সভায় নবরত্নের একজন ছিলেন। ভগবন দাসের পুত্র রাজা মান সিংহ আকবরের বিশাল সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন। রাজা টোডর মল্ল ছিলেন আকবরের অর্থমন্ত্রী। আরেক রাজপুত্র বীরবল ছিলেন আকবরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু এবং প্রিয়পাত্র। বেশিরভাগ রাজপুত্র রাজ্য যখন আকবরের অধীনে চলে আসছে তখন একমাত্র মেওয়ারের রাজপুত রাজা মহারানা উদয় সিংহ মুঘলদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। চিতোরের পতনের পর তিনি উদয়পুর থেকে মেওয়ার শাসন করতেন। তার সুযোগ্য পুত্র মহারানা প্রতাপ সিংহ সারা জীবন মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছিলেন। মেওয়ারের রাজপুতরাই একমাত্র রাজপুত্তের বংশ যাদের কে আকবর তার জীবদ্দশায় জয় করে যেতে পারেননি।
আকবরের সভাসদস্যদের মধ্যে নবরত্ন হিসেবে যারা ইতিহাসখ্যাত হয়ে তিনজন আছেন
১।মিয়া তানসেন
মিয়া তানসেন ১৫০৬ সাল থেকে ১৫৮৯ সাল পযন্ত প্রায় সকল বিশেষজ্ঞের ধারণা মতে উত্তর ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ। বর্তমানে আমরা যে হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সাথে পরিচিত তার মূল স্রষ্টা হলেন সেই তানসেন। তার সেই সৃষ্টি যন্ত্র সঙ্গীতের এক অনবদ্য অবদান। বহু প্রাচীনকালে সৃষ্টি হলেও এখন পর্যন্ত এর প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। তার কর্ম এবং বংশীয় উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমেই মূলত এই ধারাটি আজও টিকে রয়েছে। তিনি মুঘল বাদশাহ আকবরের রাজদরবারের নবরত্নের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তাকে সঙ্গীত সম্রাট নামে ডাকা হতো।
তানসেন ভারতের গোয়ালিয়রে এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুকুন্দ মিস্ত্র ছিলেন একজন কবি। ছোটবেলায় তার নাম ছিল তনু মিস্ত্র[১]। তার বাবা মূলত বিহাটের বাসিন্দা ছিলেন। ছেলের জন্মে তিনি অতি আনন্দিত হন এবং এই জন্মের পিছনে সাধু গাউসের আশীর্বাদ রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন। ছেলের নাম রাখেন রামতনু (রামতনু মিস্ত্র)। ছোটবেলা থেকেই তানসেন সঙ্গীত শিক্ষা করতে শুরু করেন। এই শিক্ষায় তার গুরু ছিলেন বৃন্দাবনের তৎকালীন বিখ্যাত সঙ্গীত শিক্ষক হরিদাস স্বামী। মাত্র ১০ বছর বয়সে তার মেধার ক্ষমতা প্রকাশিত হয়। তার মেধা দেখে স্বামীজি বিস্মিত হন এবং তার বাবাকে বলে নিজের সাথে বৃন্দাবন নিয়ে যান। এই বৃন্দাবনেই তানসেনের মূল ভিত রচিত হয়। বিভিন্ন রাগের সুষ্ঠু চর্চার মাধ্যমে তিনি বিখ্যাত পণ্ডিত শিল্পীতে পরিণত হন। অনেক বিখ্যাত হওয়ার পরও তাই তিনি সময় পেলেই বৃন্দাবন আসতেন।
বৃন্দাবন থেকে বিহাটে ফিরে তানসেন শিব মন্দিরে সঙ্গীত সাধনা শুরু করেন। লোকমুখে বলতে শোনা যায়, তার সঙ্গীতে মন্দিরের দেয়াল আন্দোলিত হত। স্থানীয়রা পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তানসনের সঙ্গীতের কারণেই মন্দিরটি এক দিকে একটু হেলে পড়েছে। তানসেন সম্বন্ধে আরও কিছু অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন বৃক্ষ এবং পাথরকে আন্দোলিত করা, নিজ থেকেই বাতি জ্বালানো এবং যখন বৃষ্টির কোন চিহ্নই নেই তখন বৃষ্টি আনয়ন। বাবা মা এর মৃত্যুর পর তিনি হযরত গাউসের নিকট আসেন।তিনি একই সাথে তানসেনের সাঙ্গীতিক এবং আধ্যাতিক গুরু ছিলেন।তবে তানসেন ইসলাম গ্রহন করেছিলেন কি না তা নির্ভরযোগ্য ভাবে জানা যায় না।এর পক্ষে এবং বিপক্ষে দুইদিকেই প্রচুর মত পাওয়া যায়।যাই হোক শিক্ষা শেষে তিনি মেওয়া বান্ধবগড়ের রাজা রামচন্দ্রের রাজকীয় আদালতে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি মুঘল বাদশাহ আকবরের রাজ দরবারে নবরত্নের একজন হিসেবে সঙ্গীতের সাধনা শুরু করেন। তানসেনের দুজন স্ত্রী এবং পাচ সন্তানের খবর পাওয়া যায়। সন্তানদের নাম হামিরসেন,সুরাটসেন,বিলাস খান,তান্সান্স খান,সরস্বতী দেবী।
গাউসের সমাধি স্থান
গোয়ালিয়রের মহান সুফি সাধক শেখ মুহাম্মদ গাউসের সমাধি কমপ্লেক্সেই মিয়া তানসেনে সমাধি রচিত হয়েছিল। এখনও এটি বিদ্যমান রয়েছে। শেখ মুহাম্মদ গাউস ষোড়শ শতাব্দীর অন্যতম সুফী দরবেশ এবং ফকির ছিলেন। সকল ধর্ম বিশ্বাসের লোকের কাছে তিনি সনামধন্য ছিলেন। গাউস এবং তানসেনের দুইটি সমাধি পাশাপাশি রয়েছে। এছাড়াও এই সমাধি সৌধে অন্যান্য কবর রয়েছে। প্রথাগত মুঘল স্টাইলে এই কমপ্লেক্সটি তৈরি করা হয়েছে। সমাধি ক্ষেত্রটি একটি বিশাল বর্গাকার মাঠের মত যার কেন্দ্র রয়েছে ষড়ভূজ আকৃতির কিছু স্তম্ভ। সমাধি সৌধের দালানগুলোর দেয়ালের মধ্যে পাথর কেটে নকশা করা হয়েছে। দেয়ালের একেক অংশে নকশা একেক রকম। পুরো দালানের উপর বিস্তৃত অংশ জুড়ে একটি বৃহৎ মিনার রয়েছে যা একসময় নীল রঙা টাইল্স দ্বারা আবৃত ছিল। সাধু গাউসের সমাধির ডান পাশে তানসেনের সমাধি অবস্থিত। সমাধিটি একটি বর্ধিত আয়তাকার কাঠামোর উপর অবস্থিত। কাঠামোটি মার্বেল পাথর দ্বারা নির্মিত। এর চারদিকে ছাঁইচবিশিষ্ট eaves প্যাভিলিয়ন রয়েছে যা বিভিন্ন নকশায় সুশোভিত।
তথ্যসূত্রঃ অনলাইন ।
পরের পোস্টেঃ
বীরবল
এবং আবুল ফজল
এই দুইজনের কথা আছে ।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪৩
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই ।
২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪৪
আজমান আন্দালিব বলেছেন: রাজপুত বলতে কি হিন্দু রাজাদের বুঝায়?
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪৪
আমি মিন্টু বলেছেন: রাজপুত বলতে রাজার ছেলে অথবা রাজপুত্তর এবং রাজপুত্রকেই বুঝায় । ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।
৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১৭
ক্থার্ক্থা বলেছেন: সুন্দর শেয়ার ধন্যবাদ ভাই ।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪৫
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও
৪| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫০
জাহেদ মুরাদ বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৩
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৫
প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ