নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চারুকলা থেকে কেন্দ্রিয় মসজিদ : উপলব্ধি থেকে বিক্ষিপ্ত কথামালা

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৬

জ্ঞান কী? কীভাবে জ্ঞান উৎপন্ন হয়? জ্ঞানের উৎস কী? জ্ঞানের প্রকৃতি ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যম কি? জ্ঞানাজনের প্রক্রিয়া ও সুনিদিষ্ট পদ্ধতি কি? জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বা জ্ঞান ভিত্তিক আন্দোলনের স্বরুপ কি? জ্ঞানের ব্যবহার তথা প্রায়োগিক দিক কী? কে জ্ঞানী? জ্ঞান ব্যবস্থাপনার কৌশল কী? জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা কেন? জ্ঞান আহরণ, জ্ঞান বিতরণ, জ্ঞান সংরক্ষণ, জ্ঞান সৃষ্টি- এগুলোর মধ্যকার যোগসূত্র বা সম্পকের ধরণ কেমন? জ্ঞান কেন্দ্রিক কমতৎপরতায় পরিবতনের ধারাবাহিকতা কেমন?



অজ্ঞতার দুভোগ বুঝার জন্যে খুব গভীর উপলব্ধির প্রয়োজন হয়না। তীক্ষ্ণ পযবেক্ষণে সক্ষম না হলেও চারপাশের নিদশন ও বিদ্যমান আলামত কিছু ক্ষেত্রে প্রায় সঠিক ধারণা তৈরিকে সম্ভব করে।তবে পদ্ধতিগত নিভুলতা ছাড়া অভিজ্ঞতা জ্ঞান সব সময় সম্পূণ সত্য নাও হতে পারে। তাই বিবেক বা চিন্তাকেই জ্ঞানের একমাত্র উৎস বলে মনে করার মাঝে বিভ্রান্তির আশংকা তীব্রতর ।শুদ্ধ যুক্তিই কেবল মানুষকে সত্য জ্ঞানের সন্ধান দিতে পারে বলে মনে করার ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে।জ্ঞান কি সত্য ও বিশ্বাসের সমষ্টিগত কোনো বিষয় নাকি একক-এটিও বিবেচনায় আনতে হবে।



যে জ্ঞানটা বিবৃতিমূলক জ্ঞান বা প্রকাশিত তা জানার জন্যে যেভাবে জ্ঞান সাধককে চেষ্টা করতে হয় সেভাবেই বুদ্ধিবৃত্তিক গুণকে সাধারণ স্তরের উধ্বে ওঠানো সম্ভব নয়।মনে রাখা জরুরী যে, তাত্ত্বিক জ্ঞান বস্তু সমন্বয়ের সক্ষমতা দেয় কিন্তু ব্যবহারিক জ্ঞান কীভাবে চলতে হবে, বলতে হবে তার ক্ষমতা দেয়। বিচারিক ক্ষমতাকে প্রবল করতে হলে অভিজ্ঞতা নিভর বোধকে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি সচেতনতার মাত্রাকে সূক্ষ বিবেচনার উপযোগী পযায়ে নিয়ে যেতে হবে।



এটা নি:সন্দেহে সত্য যে, অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও লাভ হয় জ্ঞান । কিন্তু অভিজ্ঞতাটা কি প্রত্যক্ষ নাকি পরোক্ষ-সেটি বুঝাটাও গুরুত্বপূণ।আহসানকে জ্ঞানী হিসেবে বিশ্বাস করা মানে আহসান জ্ঞানী এ বিবৃতিকে সত্য বলে স্বীকার করা।বিশ্বাসটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।কিন্তু এটা যদি প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থায় প্রমাণিত ও গ্রহণযোগ্য হয়, সামষ্টিক পযায়ে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে তবে তা আর ব্যক্তিগত বিষয় থাকেনা। সংকটটা হল পরীক্ষিত নয় এমন বিশ্বাস ভুলও হতে পারে।শুধু তাই নয় অনেকদিনের চচিত ও প্রমাণিত সত্যও সময়ের ব্যবধানে পাল্টে যেতে পারে, মিথ্যা প্রমাণিত হতে পারে। আসলে অনেক ক্ষেত্রে সময় ও স্থানটাও বিবেচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। ফলে পযবেক্ষণ নিভর জ্ঞানকে অনেকে বিশ্বাসগত উপলব্ধির সাথে তুলনা করে শ্রেষ্টত্ব দিতে চান। কেউ যদি জ্ঞানকেই সত্য বিশ্বাসকে নিধারণের ক্ষমতা দিয়ে দেন তখন এনিয়ে বিতক বাড়তেই থাকে।অনেকটা ডিম আগে নাকি মুরগি আগের মত-প্রমাণ আগে নাকি বিশ্বাস আগে?



ধরুণ কৃষক সাদেক।কৃষি বিষয়ে তার কোন প্রশিক্ষণ নেই।অথচ সে বুঝতে পারছে কোন প্রজাতির বীজে ফলন বেশি হচ্ছে, কোন সারটি বেশি কাজ করছে। এই বুঝটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু একজন কৃষিবিদের পক্ষেই এই পাথক্যের যৌক্তিকতা ও কারণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এখন সাদেকের এই ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণটি অন্যত্র বিপরীত ফলাফল আসায় ভুলও প্রমাণিত হতে পারে। ফলে বিশ্বাস পযবেক্ষণকৃত এবং সত্য প্রমাণিত হলেও তা জ্ঞান হিসেবে গৃহীত হচ্ছেনা।শুনলাম বিশ্বাস করলাম কিন্তু সব শুনাই কি সত্য, সব বলাই কি ঠিক, যা দেখি তার প্রকৃত স্বরুপটাই কি দেখি? দ্বিধা, দ্বন্ধ, সংকোচের উধ্বে ওঠে সত্য হিসাবে প্রতিষ্টিত হয়ে ওঠতে সময় লাগে, সুযোগ লাগে।



বিশ্বাসের জন্য বিচার করার বিষয়টি অবশ্য অভ্রান্ত হতে হবে।গাণিতিক বা যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত জ্ঞান আর অভিজ্ঞতালব্ধ বা পযবেক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে একইভাবে বিবেচনা করা যাবে না।গবেষণাগার, ল্যাব আর সমাজ কিংবা পরিবার, কৃত্রিমতা ও প্রাকৃতিক- এক নয়। বিশ্বাসকে কেবল তখন জ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করবে যখন এটা নিভরযোগ্য বিশ্বাস গঠনের প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করা হবে।আস্থার ভিত্তিতে বিশ্বাস আর পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বিচার বিশ্লেষণ করে বিশ্বাস –এক কথা নয় ।অবশ্য আধ্যাত্মিক জ্ঞান আর বৈষয়িক জ্ঞানকে একই যুক্তির মানদন্ডে বিচার করতে চাওয়ার প্রচেষ্টা যৌক্তিক হবে না।অথাৎ জ্ঞান কোনো বিচারীকৃত সত্য বিশ্বাস নয় বরং এর সাথে আরো কিছুর সমষ্টিও।



বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস ঘটতে হবে কারণগতভাবে, সঠিক অথে এবং নিভরযোগ্য আলামতের মাধ্যমে।মনের বাইরে গিয়ে বাহ্যিকভাবে দেখা, শুনা ও বুঝার মত ঘটনার মাধ্যমে জ্ঞান অজন করা সম্ভব।ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে অনুভূত প্রপঞ্চ সত্যের দিকে চালিত করতে পারে।আসলে জ্ঞান অজনের অবস্থা মনোজগতে নিধারিত হয়ে থাকে। তবে যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়, তারা নিজেদের মন দিয়ে জ্ঞানকে উপলব্ধি করার চেষ্টা থাকেন।



বিশুদ্ধ ও বিমূত যুক্তি দ্বারাও জ্ঞান সৃষ্টি হতে পারে। জটিল বিষয়কে বুঝার জন্য সেটাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করার দরকার যেমন পড়ে তেমনি অনেকক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়কে সমন্বয় করে বুঝার প্রয়োজন পড়ে।একটা ব্যপার গুরুত্বপূণ যে, চেতনাকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করলে মানুষের সীমাবদ্ধতার কারণেই ভুল হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।



গবেষণা করার জন্য একটি সুনিদিষ্ট পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। এমন কিছু ব্যাপার আছে যা সব মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয় তবে কিছু মানুষের পক্ষে আয়ত্বে আনা সম্ভব আবার কিছু ব্যাপার আছে যা কোন মানুষের পক্ষেই আয়ত্ব করা সম্ভব নয়।নিজের কিংবা অন্যের অভিজ্ঞতার আলোকে জ্ঞানকে আয়ত্ব করা যায়। পাচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত পাঁচ প্রকারের অনুভূতির সাহায্যে পাঁচ প্রকারের পযবেক্ষণ তৈরি হয়।তবে এই পযবেক্ষণ সবার কাছে সমান অথ বা তাৎপয বহন করতে পারে না।



আমাদের নবী (সা যখন সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠাকল্পে হিলফুল ফুযুল করেন তখন তিনি হেরা গুহায় ধ্যান করতেন না।ড. ইউনুস গ্রামীণ দারিদ্র নারীদের লোন দেয়া শুরু করেন তখন এমন না যে আর কেউ এই অসহায়দের সমস্যাটা দেখেননি। প্রায়োগিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রযোজ্য জ্ঞানই সমাজ পরিবতনে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছে। অবশ্য ডিনামাইটের আবিষ্কারক কিংবা আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব তার প্রয়োগ তাদের উদ্দেশ্যানুযায়ী পরবতীতে হয়নি। অথাৎ জ্ঞানটা হলো চন্দ্র সূযের প্রাকৃতিক নিয়মের মতই সেটা যার মগজ প্রসূতই হোক না কেন সেটা ফ্যাক্টর না বরং কে ব্যবহার করছে, কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে সেটাই বিবেচনার বিষয়।ঠিক একটি অস্র উৎপাদনকারীর চিন্তাধারার বাইরে এসেই সেটির ব্যবহারকারীর দৃস্টিভঙ্গির সক্রিয় প্রতিফলন বিবেচনার ক্ষেত্রে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে জ্ঞান উৎপাদনকারীর কাছ থেকে প্রয়োগকারী বা ব্যবহারকারীর কাছে গেলেই তা স্বথকতা লাভ করে। তবে হ্যাঁ এমনও হতে পারে জ্ঞান উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারী একই ব্যক্তি আবার এমনও হতে পারে উভয়ে ভিন্ন ভিন্ন সত্তা।তাহলে সম্পদের মত জ্ঞানেরও মালিকানা পরিবতন হতে পারে।



জ্ঞানের স্বরুপ নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।মাকড়সা নিপুণ দক্ষতায় বুনে জাল, পাখি অপূর্ব কৌশলে বাঁধে বাসা । বৈচিত্রহীন একই ধরণের কাজের কারণ তাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান। কিন্তু মানুষও যখন তার সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে ছক বাঁধা নিরস অস্তিত্বের স্বাক্ষী হয় সে দৃষ্টান্ত অনাকাংখিত বাস্তবতাকেই হাজির করে। যেহেতু মানুষের শরীরে যতগুলো কোষ রয়েছে তার থেকে ১০ গুণ বেশি জীবাণু ব্যাক্টেরিয়া পরজীবী সেখানে রয়েছে। গর্বের শরীর অণুজীব পরজীব ব্যাক্টেরিয়ার ভাল বাসস্থান ছাড়া কিছুই নয়। তাই শরীর খাটানোই যথেষ্ট নয় মাথা খাটানোকেও আমার গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।অন্যবিধ জ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই বিষয়বস্তুর স্বরুপের উপলব্ধি করতে শিখতে হবে। র্অন্তজ্ঞানকে বাড়াতে হবে। বাহ্যরুপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্তর্নিহিত রুপ আবিষ্কারের প্রয়োজনীয় র্অন্তদৃষ্টি জাগাতে হবে। চিত্তে সৃষ্টি করতে অন্তর্নিহিত গভীর শক্তি, সত্যিকার উপলব্ধি করার ক্ষমতা বাড়াতে হবে।



জ্ঞানভিত্তিক আন্দোলনের নেতৃত্ব কখনোই ফটোকপি হবেনা। যেটা আপনি করছেন সেটা যদি এর চেয়ে ভালো অন্য কেউ করে তবে সেটা আপনি না করলেও চলবে। নিজের প্রত্যাশা অন্যের ওপর না চাপিয়ে সমাজের ভবিষ্যত আকাংখার সাথে প্রাসঙ্গিক স্বপ্ন দেখুন এবং নিজেকে প্রস্তুত করুন।মানুষের বিবেককে জাগানো, অচেতন মনে চেতনা জাগলে, হৃদয়কে আলোকিত করা, অন্তরে যা-সুন্দর, ভাল, কল্যাণকর তার প্রতি আকর্ষণবোধ তৈরি করা, পূণ্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং যাতে পাপ, যেখানে পঙ্কিলতা তা বর্জন করার মানসিকতা তৈরি হয় ধর্মীয় বা নৈতিক জ্ঞান থেকে। যদিও বর্তমানে জ্ঞানের সাথে বাস্তব চিত্রে বেশ অমিল পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধর্মীয় জ্ঞানে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জকারীদের মধ্যেও জ্ঞানীর চেয়ে জ্ঞানপাপীদের সংখ্যাই বেশি দেখা যায়। তোতা পাখির মত মুখস্ত করে ধর্মীয় গভীর জ্ঞান উপলব্ধি হয় না। অনেক হাফেজে কুরআনেরও ধর্মের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না। ধর্মের যে দাবি, যে বক্তব্য, দৃষ্টিভঙ্গি সেটি স্পষ্ট রূপে না বুঝায় অনেক ধরণের কুসংস্কার ও গোঁড়ামী মিলে তৈরি হয় ধর্মান্ধতা। নানা অন্ধবিশ্বাস আর অস্পষ্টতার সমন্বয়ে সৃষ্ট সংকট আর জটিলতার ঘূর্ণাবর্তে অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে প্রয়োজনীয় মনে করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গুরুত্বহীন মনে করে-ফলে ঘোলাটে পরিস্তিতি সৃষ্টি হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয় ডেকে আনে। অপ্রত্যাশিতভাবে বয়ে আনে অভিশাপ। সৃষ্টি হয় নানা বিভ্রান্তির।



ব্যক্তিগতভাবে শুধু ভাবুক জীবনই আমার পছন্দ নয়। আমি স্বপ্নের জগতেই রাজত্ব করা নয় বরং বাস্তব জীবন ও জগৎ সম্পর্কে দারুণ কৌতূহলী। আমার অনুসন্ধিৎসু মন নতুনত্বের সন্ধানে সদা উদগ্রীব হয়ে থাকে। জ্ঞানের জগৎটা বিশাল। জীবন ও জগৎ থেকে, প্রকৃতি থেকে, বাস্তবতা থেকে শিখার আছে। জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য শুধু বই পড়াই যথেষ্ঠ নয়। এতে জ্ঞান পরিপূর্ণ হয় না, শুধু তত্ত্ব তৈরি হয়; সে তত্ত্বের প্রয়োগের জন্য উপযোগী জ্ঞানের শূন্যতা বিরাজ করে। তবে হ্যাঁ তাত্ত্বিকেরও প্রয়োজন আছে; সেটি আমি অস্বীকার করি না। জ্ঞানের আলোকে সর্বস্তরে ছড়ায়ে দিতে হলে জ্ঞানাহরনের পদ্ধতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। সীমিত সিলেবাস সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন আবশ্যক। পৃথিবীতে অনেকেই নিজেকে সীমাবদ্ধ একটা পরিসরে আবদ্ধ করে ফেলতে চায় না, সীমানা বা সীমারেখাকে অতিক্রম করে যায়।



লাইব্রেরীর সংস্পর্শ আমাকে দেয় বিশালতার সন্ধান। মহানায়কদের ঘটনা আমাকে বিরাট পরিধিতে কার্যক্রম পরিচালনার মানসিক প্রস্তুতি জোগায়। প্রেরণা নেয়ার এ এক সর্বোত্তম ঠিকানা যেখান থেকে চর্মচক্ষুর চেয়ে মনের চক্ষু বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। নতুন আশা, বিশ্বাস, উদ্দীপনা পাওয়া যায়। নিজের সীমাবদ্ধতা দুর্বলতা আবিষ্কার করি, সম্ভাবনার বিশালতা অনুধাবণ করি। হতাশা ভুলে আশায় স্বপ্ন দেখি। দারুণ এক অসাধারণ তৃপ্তি লাভ করি। মানসিক প্রশান্তি শরীরকেও সতেজ করে। সকল দিক থেকেই অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠে।



যেখানেই জ্ঞান লাভ হয় সেখানেই আমার আনন্দ। ভালবাসার টানে আমি ছুটে বেড়াই হাসিমুখে, চলি দূর দূরান্তে। ভ্রমণ আমার অনেক প্রিয়। আমার শান্তি সুখের নীড় লাইব্রেরী। কারণ এখানে নানান ধরনের বৈচিত্র্যময় জ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডার। সীমিত এ জীবন শেষ হবে তবু জ্ঞানের বিশাল মজুত থেকে নেয়ার পরিমানটা সর্বোচ্চ পরিমান হবার নয়। যদি বলেন যে সমস্যা কী শুধু ধারণ ক্ষমতার বলব-না। সেটি সবদিক থেকেই। লাইব্রেরীতে জ্ঞানাহরণের মহৎ উদ্দেশ্যে অনেকে ছুটে আসে। মহৎ উদ্দেশ্যই ব্যক্তিকে মহৎ করে তুলে। সুতরাং জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে যারাই আসে তারা মহৎ নিঃসন্দেহে। আর এসব মহৎ ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ, কথাবার্তা সৌভাগ্যের ব্যাপার নিঃসন্দেহে, লাইব্রেরী আমার সবচেয়ে প্রশান্তির জায়গা, পছন্দের জায়গা। মনটা সর্বদা এখানেই থাকতে চায়। বাস্তবতার কারণে সেটা অসম্ভব হলেও দু'একটা বই সব সময় সঙ্গে থাকেই, যাতে সুযোগ পেলেই পড়া যায়। আমি বই প্রেমিক, বই আমার ভালবাসা, আমার প্রেম। বই হচ্ছে আনন্দ ও অবসরের সঙ্গী। বই আমার জীবনের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমার অস্তিত্ব আমি, বই ছাড়া কল্পনা করতেও অপছন্দ করি। কখনো গাড়িতে উঠি। অনেক সময় প্রচণ্ড ভীড় হয়। বসাও যায় না। কাউণ্টারে লাইনেও অনেক সময় দাঁড়ায়ে থাকতে হয় দীর্ঘসময়। বই পড়তে পারি না, ভীষণ কষ্ট হয়। সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতির কারণে নষ্ট হয়। প্রয়োজন অনুভব করি নিজস্ব গাড়ির। তাহলে যানজট যতই হোক সময়টাতো কাজে লাগানো যেত, বই পড়া যেত। আমার জীবন অনেক মূল্যবান। প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত দামী। অহেতুক স্বল্প সময় ব্যয়ও ক্ষতিকর; এতে কোনো কল্যাণ নেই। আড্ডা, গল্প আমার তেমন একটা হয় না। হলেও খুব স্বল্প সময়ের।



চিন্তা করি, যারা লিখে বিশ্বজোড়া সুনাম, সুখ্যাতি ছড়িয়েছেন, মানুষকে আলোকিত করেছেন, সমাজকে শান্তিময় করতে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের লেখা পড়লে, জীবনী পড়লে অনেক কিছুই জানা যাবে, শিখা যাবে; জ্ঞান উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হবে। হৃদয়ের সর্বোচ্চ ভালবাসায় সিক্ত স্থানে সমাসীন বইয়ের সাথে মিতালী করি। যেন মুক্ত বাতাসে দম নেই, প্রশান্তির নিঃস্বাস বের হয়। সময় ও যুগের দাবি পূরণের উপযুক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে উঠার স্বপ্ন দেখি, চেষ্টা করি।

লেখনী তৈরি জ্ঞানচর্চার উচ্চতর মাধ্যম। বক্তার বক্তৃতা শ্রোতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলেও লেখকের লেখা অনন্তকাল ধরে অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছায়। ভাল একজন লেখক তাই লাভ করে চির অমরত্ব। লিখতে হলে বেশি বেশি পড়ার বিকল্প নেই। গড়ে তুলতে হবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক লাইব্রেরী। বিশ্বকবি নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গ্রন্থাগারকে 'মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোলের' সাথে তুলনা গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক নিঃসন্দেহে।



আমাদের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। অজানাকে জানার আগ্রহ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। জ্ঞানের সন্ধানে মানুষ পৃথিবীর দুর্গম অঞ্চল, অপারসমুদ্র ও মহাশূন্যে বিচরণ করে অর্জন করছে নিত্য নতুন জ্ঞান। জ্ঞান আহরণে কার্পণ্য প্রদর্শন বুদ্ধিহীনতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন। যারাই পৃথিবীতে চির অমরত্ব লাভে ধন্য হয়েছেন তারা জ্ঞানহীন ছিলেন না। মানব সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষী কালের ঘূর্ণিপাকের বিবর্তনে সৃষ্ট সমস্যা ও সংকটাপন্ন পৃথিবী যে মহাপুরুষদের আবির্ভাবে ধন্য হয়েছে তারা সবাই জ্ঞান সাধনা করেছে। যাদের প্রেমের অমৃত সেচনে দুঃখ তপ্ত মানব-চিত্ত স্নিগ্ধ হয়, মানব সমাজের যুগ-যুগান্তরের কুক্ষিগত কালিমা ও রশ্মির মধ্য হতে সূর্যের ন্যায় উত্থিত হয়ে পাপের কুহক যারা ভেঙ্গেছেন তারা অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সত্য ও প্রেমে সঞ্জীবিত করে সুন্দর জীবন পথে যিনি টেনে নেবেন তাকে গতানুগতিক হলে চলবে না। যে জ্ঞানী মানসিকভাবে স্বার্থপর ও সংকীর্ণ চিন্তাধারার অধিকারী তার দ্বারা মানবতার খুব বেশি কল্যাণ হয় না। মানসিক স্বার্থপরতা জগতের কোনো কল্যাণকে সাধন করতে পারে না। স্রোতহীন নদীতে যেমন অজস্র শৈবালদল এসে নিজের স্থান দখল করে নেয় এবং স্রোতধারায় বাঁধা সৃষ্টি করে মানসিক স্বার্থপরতা তেমনি ব্যক্তির মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, উন্নতি ও অগ্রগতিকে ব্যাহত করে।



সে নবীনদের দ্বারাই সমাজে গঠনমূলক পরিবর্তন সম্ভব যাদের জ্ঞানসাধনার অদম্য স্পৃহা রয়েছে, নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেবার প্রস্তুতি রয়েছে, নিজেদের মেধা মনন ও যোগ্যতার বিকাশে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে, কর্মস্পৃহা রয়েছে। বড় চিন্তা না করলে বড় কাজ হয় না। সুতরাং শারীরিক শক্তি, ব্যবহার করতে হবে মাটি ও মানুষের কল্যাণে। পরের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মানসিকতা হৃদয়ে এক দারুণ প্রশান্তি ছড়ায়। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে নিজে উদ্যোগী না হলে কখনোই সৌভাগ্যদান করে না। সেটি আশাও করা যায় না।



জ্ঞানী মানুষই সত্যিকার মানুষ। চরিত্রবান, সৎ এবং যথার্থ মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষকে অর্থের দ্বারা কেনা যায় না। অর্থের প্রভাব প্রবল হলে অনেক সময় সত্যের কণ্ঠস্বর শুনা যায় না। জ্ঞানও অর্থ আনতে পারে। এর মানে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন-এটা ঠিক নয়। চাঁদের জন্য লক্ষ স্থির করলে যদি লক্ষ ভ্রষ্টও হয় তবে অন্তত তারকা হওয়া সম্ভব। জ্ঞানীরা মস্তিষ্কের উর্বরতা ও তার প্রয়োগে ফলাফলটা বিচার করেই মূল্যায়ন করে ব্যক্তিকে।আবশ্যকতাবোধ না জাগলে উদ্যমশীলতা জাগে না।আদর্শের তাত্ত্বিকতা ও জগতের বাস্তবতাকে মিলিয়ে বুঝাটা জরুরীঅপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করার অর্থ নিজের জ্ঞানের পরিধিকে সংকীর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ করা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.