নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্লগাররা রাজপথে যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড বা ফাঁসির দাবী নিয়ে। বাংলাদেশে ব্লগারদের আন্দোলন হিসাবে এটি প্রথম নয়।বিএসএফ এর ফেলানী হত্যা নিয়ে বাংলাদেশে সর্বাধিক ও সর্বোচ্চ সংখ্যক যুবক-যুবতী নিয়ে মানববন্ধন করেছিল সামুর ব্লগাররা।তবে এটি প্রচার করার জন্য কিন্তু কোন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, মাইকিং কিংবা কোন পোষ্টারেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। কেবলমাত্র ব্যবহার করা হয়েছে ব্লগ ও ফেইসবুক যেখানে ফেলানী হত্যার প্রতিবাদ জানাতে এক ব্লগার একটি মানববন্ধনের কথা লিখে একটি পোষ্ট দিয়েছিল এবং সেটি স্টিকি করা হয়েছিল এবং তার ফলেই সেখানে সংশ্লিষ্ট সকলে জানতে পারে এবং তারা যে আসবে তার কথাও সেখান থেকেই নিশ্চিত হওয়া গেল এভাবে যে, তারা সেখানে মন্তব্য করে লিখেছিল যে, যে কোন মূল্যে তারা সে মানববন্ধনে উপস্থিত হবে আবার সেখানে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি স্পন্সরও করেছিল।
ইভটিজিং এর প্রতিরোধে ঢাকার মাঝে সর্বাধিক সাড়া জাগানো কর্মসূচী পালন করেছিল সামু। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহকারী নাসেরা বেগমের ভাগ্য পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় সামু। তারা সকল ব্লগারদের মাধ্যমে এই কার্যক্রম হাতে নেয়, যা সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়। এমনকি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাভাষীরাও একে সমর্থন জানায়। এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র একটি কমন প্লাটফর্ম থাকার কারনে যার নাম বাংলা ব্লগিং।
বাংলাদেশে সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে কোন মাইকিং, পোষ্টারিং ও চিঠি ছাড়াই এত বড় একটা মিলনমেলা আয়োজন সম্ভব হয়েছে যাকে মূলত একটি ব্লগ ব্প্লিব হিসেবে অবহিত করা যায়। আমরা এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালীন সময়ে ভারতীয় চ্যনের ই,এস পি, এন এর ধারাভাষ্যকার নভোজিৎ সিং সিধু বাংলাদেশ সম্পর্কে কটুক্তি করাতে তার বিরুদ্ধে ফুসে ওঠেছিল পুরো ব্লগার পরিবার। এখানে তারা দল মত নির্বিশেষে এর প্রতিবাদ করে। একই ভাবে শাহরুখের খানের ঢাকায় কনসার্ট নিয়ে উত্তাল হয়ে পুরো ব্লগ দুনিয়া। অধিকাংশ ব্লগারের মতে বিপ্লবের ক্ষেত্রে ব্লগ আমাদেরকে একটি নতুন ধারণার জন্ম দেয় যা কোন ধরণের সংঘর্ষ ছাড়াও সংঘটিত হতে পারে।
ব্লগারদের আহ্বানে এসব স্বতস্ফূত সাড়া এটাও প্রমাণ করে, বাংলা ব্লগ সাইট ভার্চুয়াল জগতে কমন প্লাটর্ফম হিসাবে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।১৯৯৬ সালে ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েব এর সাথে সংযুক্ত হয় বাংলাদেশ। ২০০০ সাল থেকেই দেশের সরকারী পর্যায়ে শুরু হয় ওয়েব সাইটের ব্যবহার যখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১লক্ষ।অথচ এখন ভার্চুয়াল জগতকে ব্যবহার করা হচ্ছে নানানে উপায়ে। এ্যালেক্সা র্যাং কিং এ বাংলাদেশের সর্বাধিক পঠিত ১৫টি সাইটের মাঝে ব্লগ সাইট আছে দুটি।
ব্লগিং জগতেও যুব সমাজের একটি বড় অংশ জড়িত। এই ব্লগের ফলে যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,লেখক সহ যুব সমাজের বড় একটি চ্যানেলকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যায় আবার তাদের মাধ্যমে একই সময় বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের লোকদের মাঝে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা যায়।ব্লগ চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, আলোচনা-সমালোচনা, লেখালেখি, মতামত, মুক্তচিন্তা ভাগাভাগি করে নেয়ার অনন্য মাধ্যম। ব্লগে সুবিশাল তথ্যভান্ডার সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ, সামাজিক যোগাযোগ ও মত প্রকাশকে তরুণ নবীন সমাজ খুব সানন্দে গ্রহণ করেছে।
ভার্চুয়াল মাধ্যম নতুন প্রতিবাদী বিশ্বের কন্ঠস্বর। বিপ্লব থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবই এখন অনলাইনে হয়। পড়াশুনা, খেলাধুলা সবকিছুই এখন ইন্টারনেটের বদলে হাতের মুঠোয়। যুব সমাজের চেতনার ইতিবাচক পরিবর্তন এর লক্ষ্য ছাড়াও ব্লগের মাধ্যমে বাংলা ভাষার সম্প্রসারনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশে বাংলা ব্লগের প্রচলন ২০০৬ সালের প্রথম দিকে। আর এ ব্লগ চালু হওয়ার পরই যেন এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি হয়ে গেছে। কারণ এখানে কোন ব্যক্তি ব্লগের মাধ্যমে তার মত প্রকাশ, অন্যের লেখায় মন্তব্য প্রদান, বন্ধু নির্বাচন, লেখাপড়ার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বিকাশ, বিতর্ক শেখা সহ মানব জীবনে এক জ্ঞানতাত্ত্বিক বিপ্লব ঘটাতে পারে সহজেই।
বাংলা ব্লগ হলো এমন একটি অনলাইনভিত্তিক প্লাটফর্ম যেখান থেকে একজন ব্লগার অনায়াসেই সারা বিশ্বের মানুষের সাথে তার চিন্তাধারার বিনিময় ও অন্য মানুষের পর্যালোচনা উপভোগ করতে পারে। আর এ ব্লগে কারো প্রবেশ থাকলে বিশ্বে ঘটে যাওয়া যে কোন খবর তিনি নিমিষেই এর আলোচনা, সমালোচনাসহ জানতে পারেন। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় এই মাত্র ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা অনলাইনভিত্তিক নিউজ মিডিয়াগুলোতে আসার আগেই তা ব্লগে প্রকাশ হয়ে যায় এবং ব্লগ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে নিমিষেই পৌছে যায়। উদাহরণ হিসেবে মুসা ইবরাহীমের পর্বতারোহনের কথা বলা যায় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পূর্বেই ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রাথমিক দিকে আমাদের নিজস্ব বাংলা ভাষা দিয়ে বাংলা ব্লগ ব্যবহার শুরু হলেও ক্রমশ ব্লগে নিত্যনতুন শব্দের সৃষ্টি, বাংলা শব্দের বিকৃত রুপের ব্যবহার, প্রকৃত ব্যবহারকারকারীর নাম গোপন রাখার কৌশল সহ আমাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির এক নতুন অবস্থা তৈরী হয়েছে এখানে।
নতুন শব্দের উদ্ভবঃ গদাম মারা (লাথি মারা), পাকি (পাকিস্তান সমর্থক), ভিম্পি/বিম্পি (বিএনপি), আম্লিগ (আওয়ামিলীগ), ভাদা (ভারতপ্রেমিক), ভাকুর(ভারতীয় কুকুর),ছাগু (জামাত শিবির), টেকি (প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের নাম), খিকচ (চাপা হাসির বহি:প্রকাশ), ধইন্যা (ধন্যবাদ), ল্যাঞ্জা বাইর হওয়া (বিতর্কে হেরে যাওয়া), কুত্তালীগ (ছাত্রলীগ), লুলামী করা (মেয়েঘেষা কর্মকান্ডে জড়িত হওয়া), ছাইয়া (ছেলে হয়ে মেয়ের ভান করা)
বাংলা ভাষার বিকৃত রুপঃ শিরাম (সেরকম), চ্রম (চরম), ত্যানা প্যাচানো (জটিল করে তোলা), মুঞ্চায় (মন চায়), ভাল্লাগ্লো (ভালো লাগলো), পিছলানো (কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া), তেব্র(তীব্র)
বিদেশী শব্দের বিকৃত রুপঃ প্লাচাইলাম (ইতিবাচক রেটিং বা ভোট দেয়া), ব্যান (নধহ), ব্লগান (ব্লগিং করা), পোষ্টান/পুষ্টানো (লেখা দেয়া), ইউজান (ব্যবহার), হেল্পান (সহযোগিতা করেন), সিøপান (ঘুমানো), ইত্যাদি।
বিকৃত নামঃ চিকন মিয়া, গেদু মিয়া, নেটবুক,নবীন ছাগু, লালবাতি, প্রেমিক পুরুষ, দুলাভাই, আমার শালী, দুষ্ট ছেলে, ডিজিটাল বাবা, ডিজিটাল ভুত,ভেজা বিলাই,জাকারবার্গের চেলা,গুণধর ইত্যাদি নামে বিভিন্ন একাউন্ট খোলা আছে এসব ব্লগে।
সংক্ষিপ্ত শব্দের ব্যবহারঃ হাহাপগে(হাসতে হাসতে পড়ে গেলাম), হাহালুখুগে (হাসতে হাসতে লূঙ্গি খুলে গেল), চ্রম (চরম),খ্রাপ(খারাপ), পুত্তম(প্রথম),তেব্র(তীব্র)।
মূলত ব্লগে কোন লেখা প্রকাশ করার সময় বা মন্তব্য প্রকাশসহ ব্লগ ব্যবহারের সময় এ শব্দগুলোর বেশ ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। তবে এখানে দেখার বিষয় যে, এমন অনেক ব্লগার আছে যারা ব্লগের কিছু নিয়মাবলীর কারণে তার একাধিক আইডি কিংবা একাউন্টের মাধ্যমে ব্লগ ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে তারা মূল নামের পরিবর্তে অধিকাংশ সময় অন্য কোন সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে যে নামেই ব্লগাররা বেশী পরিচিত হয়ে থাকে।
ব্লগ সামাজিক যোগাযোগে সকল মতের মিলনমেলা। আগে কোন বুদ্ধিজীবি, জ্ঞানী-গুনীজনের কথা শুনতে যাওয়ার সুযোগ নানা কারণে অনেকের ভালেই জুটতোনা। ফলে এর আলোচনা-সমালোচনা দূরে থাক অনেকক্ষেত্রে তাদের কথার সারমর্মটুকুই জানা হতোনা অনেকের। তাছাড়া সেখানে গেলেও তার আলোচনার ব্যাপারে কোন সমর্থন কিংবা প্রতিবাদ করার জন্য মঞ্চে সুযোগ পাওয়া ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু ব্লগ প্রচলনের ফলে এটি সবার হাতের নাগালে চলে আসে এবং এখানে বিভিন্নজনের নানা বিশ্লেষণধর্মী লেখা আপনি পড়তে পারেন এবং আপনার অভিমতটিও প্রকাশ করতে পারেন। ফলে এখানে একই সময়ে সকলের মতামত প্রকাশ করার একটি ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে যা অন্য কোন মাধ্যমে কস্মিণকালেও সম্ভব হতোনা। তাই এই সকল মানুষের কাছে ব্লগের আবির্ভাব একটি আশির্বাদ হিসেবে।
ব্লগের আড্ডা পোষ্ট বিভাগটি বেশ রসাত্মক ও মজাদার। এই বিভাগটি সাধারণত শুরু হয় রাত বারটার পর। এখানে প্রত্যেকের ব্যাক্তিত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সে কোন ধরণের বা শ্রেণীর লোক।গ্রামে আগে দেখা যেত কোন এক বাড়িতে কিংবা কোন দোকানে বসে বিভিন্ন বয়সী লোক মিলিত হয়ে গল্প, পাল্টা গল্প কিংবা গ্রামের কোন মজাদার কাহিনীর নানা দিক নিয়ে রসাত্মক বিশ্লেষণ ইত্যাদি করে সময় পার করতো। কিন্তু বাংলা ব্লগে প্রচলিত এ আড্ডা পোষ্টের মাধ্যমে এখন আর সশরীরে কোন নির্দিষ্ট স্থানে একত্রিত হতে হয়না। কেবল কম্পিউটারের সামনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকেই এ আড্ডায় যুক্ত হয়ে আড্ডা বা গল্পে গল্পে সময় পার করা যায়। সম্প্রতি এক ব্যক্তি ব্লগে নতুন একাউন্ট খুলল যিনি অনেক বেশী আড্ডাবাজ ছিল। কিন্তু তিনি এখন ব্লগের মাধ্যমে একত্রে প্রায় ৪৯৫ জন বন্ধুর সাথে ব্লগে আড্ড দেয় যা ব্লগ ছাড়া ছিল অসম্ভব। তাই আড্ডার ক্ষেত্রে বর্তমান সমাজকে একটি নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশে ব্লগ ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন আমাদের মত প্রকাশ, মেধার বিকাশ, চিন্তার ক্ষেত্র, প্রযুক্তি সহায়তা প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে ঠিক তেমনি হাজার বছরের লালিত বাঙ্গালী ও বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির নানা দিক থেকে অবক্ষয় আসছে ও ভাষার ক্ষেত্রেও জগাখিচুরি অবস্থার তৈরী হয়েছে। আমাদের উচিৎ এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়নের ও প্রযুক্তি থেকে আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন ঘটানো।
তথ্যসূত্র:
Click This Link
Click This Link
বাংলা ব্লগ ও আমাদের সংস্কৃতি, নেছার উদ্দীন ও আব্দুল আহাদ
বাংলা ব্লগ সাইট: ভার্চুয়াল জগতে কমন প্লাটর্ফম, সাব্বির হাসান ফাহিম
©somewhere in net ltd.