নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিরোধীদের মতামতকে অবজ্ঞা করার যে অসুস্থ চর্চা শুরু হয়েছে তা প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মোটেই সুবিধের নয়। দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে গৃহীত সিদ্ধান্ত সব দলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার প্রসঙ্গটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও বাস্তবে নেই। একতরফা সিদ্ধান্তে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা বাড়ার ফলে রাজনৈতিক দলগুলো সার্বজনীন আবেদন হারিয়েছে। নির্বাচিতরা দলীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে ওঠে দেশবাসীর কল্যাণের জন্যে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন না। আসলে পরমত সহিষ্ণুতা ও উদারতা না থাকলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুস্থ স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না। কোন দলভুক্ত থাকার মানে এই নয় অন্যদলের প্রতি বৈরী আচরণ করতে হবে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও পারস্পরিক সহনশীল মনোভাব বিরাজমান থাকার অর্থ হচ্ছে, দু:খ ও বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয় সব ব্যক্ত করে হালকা হতে পারে কিংবা সমস্যা ও সংকট নিয়ে আলাপ-আলোচনা-সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে পারে। চিন্তার ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা ও অস্পষ্টতা কাটিয়ে উঠতে হলে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও মতবিনিময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বই পড়েই উপলব্ধির স্বচ্ছ আলো ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব, প্রকৃত সুফল পেতে হলে ধ্যানের জগতের পাশাপাশি কর্মজগতেও থাকতে হবে।
ছোটবেলায় আমার অসুস্থতায় জর্জরিত ক্ষীণ শরীর বাবা মায়ের জন্যে নানান রকমের উদ্বেগ উৎকন্ঠার কারণ ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হবার পর ছোটবেলাতেই জনসম্মুখে কথা বলার রেওয়াজটাও রপ্ত করেছিলাম। এই বয়সে এসে দেখছি গোটা দেশ ও জাতিই এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দেশকে অশান্তির নরকরাজ্যে পরিণত করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত জননেতারা দেশপ্রেমিকের ছদ্মাবরণে বিষফোড়া কিংবা ক্ষতিকর জীবাণু হয়ে ওঠেছেন তাদের প্রতিরোধক প্রতিষেধক পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ নেই কিংবা অপারেশন বা উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলার দক্ষ ডাক্তারও নেই। ফলে একজন সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে ছোটবেলায় আমাকে নিয়ে আমার মা বাবার উদ্বেগ উৎকণ্ঠার চেয়েও আমি যেন একটু বেশি উদ্বিগ্ন দেশ ও জাতির ভবিষ্যত নিয়ে।
ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হওয়া ব্যক্তির ভবিষ্যতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার মতই। তারপরও মানুষের প্রতি অপরিসীম ভালবাসা ও জাতির প্রতি গভীর দায়িত্ববোধ থেকে যে সমস্ত সাহসী সন্তানরা সত্যকে অণে¦ষণ করে তা জনসম্মুখে তুলে ধরেন তারাই স্যালুট পাওয়ার উপযুক্ত। ব্যক্তিস্বার্থের ব্যাপারে খুবই সরল কিন্তু আদর্শিক ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ও অনমনীয় মানসিকতার মানুষই বড় বেশি প্রয়োজন। লোভ লালসার বশবর্তী হয়ে উর্ধ্বতনদের সুনজর ও কৃপাদৃষ্টি লাভের প্রাণপণ চেষ্টায় রত মানুষ দ্বারা বৃহত্তর কল্যাণ হাসিলের প্রত্যাশা অযৌক্তিক।
যাদের মুখে বঞ্চিত মানুষের প্রতি দরদ উতলে ওঠে অথচ ব্যাপক ধূমধাম ও জাঁকজমকের সাথে ব্যক্তিজীবন পরিচালনা করেন এরা মুনাফিক তুল্য। সুখ শান্তিতে বিলাসী জিন্দেগী যাপন করে নির্যাতিত, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে কাজ করার নৈতিক শক্তি ও আত্মিক প্রেরণা লাভ সম্ভব নয়। অহংকারীদের দাম্ভিকতাই তাকে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য করে তোলে। একবার পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে নৈতিক প্রশ্নে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হলে পরস্পরের মাঝে শুধু বিরাট দূরত্বই তৈরি হয় না। অনেক সময় ভবিষ্যতে আর কোনোদিন দূর করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। মানুষের কর্মকান্ডের কোনটি স্বত:স্ফূর্ত আর কোনটি অবজ্ঞাপ্রসূত তা গভীর পর্যবেক্ষণ ছাড়া উপলব্ধি করা সম্ভব না। এটা ঠিক কারণ ছাড়া কোনো কিছুই ঘটেনা। তবে স্বাভাবিক অবস্থা আর বিশেষ পরিস্থিতির আচরণকে একই পাল্লায় মাপতে যাওয়াটা নিরাপদ নয়।
কারো সহজাত প্রবণতা দীর্ঘদিন গোপন থাকেনা। ব্যক্তিই হউক আর সমষ্টিই হউক সময়ের ব্যবধানে মুখোশ উন্মোচিত হয়। বল বা চাপ প্রয়োগে মানুষের প্রকৃতি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনেও তুলনামূলকভাবে বলবানদের শক্তিশালী ভুমিকাই বেশি তড়িৎ ফল বয়ে আনতে পারে।
অলস জ্ঞানী কর্মে উদ্বুদ্ধ না হয়ে সমালোচনায় উদ্বুদ্ধ হয় কিংবা অন্যের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্রিড়নক হিসাবে ব্যবহিত হয়। ফলে কর্ম ছাড়া ধ্যান করে স্রষ্টা কিংবা সৃষ্টি কারোরই সন্তুষ্ট হাসিল করা সম্ভব নয়।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অভাব অনটন, বিপদ আপদ তথা প্রতিকূল পরিবেশে ধর্মবিদ্বেষী মানুষকেও ধার্মিক হয়ে ওঠতে দেখা যায়। অথচ যখন ক্ষুধাত থাকার সম্ভাবনা নেই, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিয়ে সংকট নেই, মৌল মানবিক চাহিদা মিটে যায় তখন নাস্তিকতাকে আধুনিকতার অংশ মনে করে অনেকে বেপরোয়া জীবন যাপন করে। আসলে সমস্যার মধ্যে যে বসবাস করে সে সমস্যা সমাধানকল্পে নিজ মেধা, যোগ্যতা ও সামর্থ্যকে ব্যবহার করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। কিন্তু যখন কারো কোন সমস্যা থাকেনা, খুব সহজেই প্রয়োজন মিটে যায় তখন সে নিজেই নিজেকে একটি সমস্যা হিসাবে প্রস্তুত করে যা অন্যের জন্যেও অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়। যার কোন সমস্যা নেই সে নিজেই একটি সমস্যা।
অনেকে মনে করে, নেতার উচিৎ প্রতিপক্ষের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি এবং নিজের অনুসারীদের মাঝে ঐক্য গড়ে তোলা। অনেক নির্মম ঘটনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছি বলা না গেলেও বলব, সবসময় এটা ঠিক না। আয় ব্যয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে যেমন হালাল হারাম বেছে চলতে হয় ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম, অত্যাচারের প্রতিবাদ কিংবা অন্যায় আগ্রাসনের প্রতিরোধেও আপনাকে যুক্তিসংগত কৌশল বেছে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে সম্মান প্রদর্শন সম্মান অর্জনের জন্যে জরুরী, অতীতকে স্মরণ রেখে বর্তমাকে কাজে লাগিয়েই ভবিষ্যত গড়ার কাজে মনোযোগী হওয়া দরকার। যখন শৈশবে ছিলাম তখনকার আমার ভাবনা আর যৌবনে এসে শৈশব নিয়ে ভাবনা কখনই এক হবেনা।
রচনার সময়কাল:০৮-০৩-২০১৩ইং
©somewhere in net ltd.