নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দৃশ্য:এক (বাসা থেকে রাস্তায়)
হরতালের দিন!
মায়ের শত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফরিদ তার বন্ধু রিয়াদসহ বেড়িয়ে পড়ল।
-হরতালতো কি হয়েছে? বাসায় কাজ ছাড়া চুপচাপ সারাক্ষণ বসে থাকা যায় নাকি?
-এই খালি! পুরানা পল্টন যাবে?
-যাব। পঞ্চাশ টাকা।
-ঠিক আছে!চল।
ফরিদ:আচ্ছা রিয়াদ তুই কেন মামুনের পিছনে লেগেছিস? দ্যাখ্!অন্যকে ছোট করার প্রচেষ্টা দ্বারা নিজে বড় হওয়া যায়না।তাছাড়া ওর বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।এটাতো আর মামুনের সিদ্ধান্তের ব্যাপার নয় পরিবারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আর মানুষতো আর যন্ত্র নয় যে রিমোর্ট দ্বারা কন্ট্রোল করবি।
রিয়াদ:আসলেই চাকরের কাজ হচ্ছে চাকরী।না হলে তুই এভাবে কথা বলিস।মনে হচ্ছে যেন,অনেক বিধি নিষেধের ভীড়ে অনেকটা কার্টুনের মত হয়ে গেছিস।আমি আছি বিপদে কিভোবে একটু সহযোগিতা করবি সে চিন্তা নেই;আছিস জ্ঞান দেয়ার তালে।আচ্ছা,অন্যের কষ্ট নিয়ে হাস্যরস সৃষ্টি করা বিকৃত সুখীদের কাজ-মনে রাখিস।বাঁশের চেয়ে কঞ্চিকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার স্বভাবটা তোর আর গেলনা।
ফরিদ:তুই রাগছিস কেন? উত্তম কেউ অধমকে নিয়েও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেনা।আর তুই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।আমি বলতে চাইছি যে হুমকি,ধমকি আর ভয়ভীতি দেখিয়ে কি আর বিয়েশাদি হয়।এমন শুভ কাজে কেন বাধাঁ দিচ্ছিস, বলছিস বাঁচতে দিবিনা। এটাতো ঠিক যে,মানুষ মানুষের তৈরি কোন যন্ত্র নয় যে সে তার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঠিক করে দেবে।
রিয়াদ:আসলে মুখরোচক আলাপচারিতা প্রীতি অলসদের ধর্ম।যারা আড্ডায় ভাল সাধারণত তারা কর্মে ভাল হয়না।আমি এসবে নেই।ইদানিং তুই বদলে গেছিস। যাদের সাথে চলাফেরা ওঠাবসা তাতে তোরে দোষ দিয়েই বা কি লাভ? বোকার স্বর্গে জ্ঞানীই মূর্খ।যার নূন আনতে পান্তা ফুরায় তার মুখে এত জ্ঞানী কথা মানায় না।আমি মামুনের বোনকে পছন্দ করি, ভালবাসি, বিয়ে করব-তাতে তোর কি সমস্যা?
ফরিদ:তোর বিয়ে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।সমস্যা হলো তুই জোরজবরদস্তি করছিস।একটি বিয়ে কারো দায়িত্ব কমায়,কারো দায়িত্ব বাড়ায়।আমি নিজেও অবিবাহিত। আর বিয়ে নিয়ে অবিবাহিতরা মুখে যে যাই কিছু বলুক হৃদয়ের অভিব্যক্তি অধিকাংশেরই এক। যারা ব্যতিক্রম তারা হয় অসাধারণ মানুষ কিংবা শয়তানসম কিংবা তাদের অস্তিত্বটাই ত্রুটিপূর্ণ।বৈবাহিক সম্পর্ক গড়া নিয়ে অবিবাহিতদের চেয়ে বিবাহিতদের আগ্রহ বেশি।তুই অবশ্য ব্যতিক্রম।মনে রাখিস, বিয়ে মানেই নিজের কিছু অপছন্দনীয় বিষয় এবং অন্যের কিছু পছন্দনীয় বিষয়কে মেনে নেয়ার সরল স্বীকারোক্তি।একটি বিয়ে হতে পারে সারাজীবনের কান্না কিংবা সারা জীবনের হাসি।তাই তাড়াহুড়া না করে শান্ত মাথায় একটু ভাবতে বলছি।
দৃশ্য:দুই(অফিসে)
বস:কি ফরিদ সাহেব!প্রতিদিনই দেরী!অপদাথ!
ফরিদ:দেখুন!আপনি আমাকে ছাটাই করতে পারেন কিন্তু কটুক্তি করতে পারেন না।আপনি অন্যকে যেভাবে তুলে ধরেন তার মাধ্যমেই আপনার প্রকৃত রুপটা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
বস:কথা না বাড়ানোই ভাল।আসলে পুতুলের মাথায় রাজ মুকুট পড়ালেও সে প্রকৃত রাজা হতে পারেনা।যাকগে! আপনিতো নতুন!ছাত্রজীবনে নাটক ফাটক করেছেন শুনেছি।অভিনেতা সেজে অভিনয় করা আর বাস্তবতা এক করে দেখে লাভ নেই।
দৃশ্য:তিন(অফিস থেকে বাসায়)
ফরিদ:কি মামা চেনাচেনা লাগছে?
রিক্সা চালক:জ্বী মামা!আপনাদের গ্যারেজেই আমার রিক্সাটা রাখি।
ফরিদ:ও আচ্ছা!আচ্ছা আপনার নামকি কামাল?
রিক্সা চালক:হ্যাঁ।
ফরিদ:আপনার কথা শুনেছি।আপনি না গ্যারেজের পাশের বস্তির জরিনারে ভালবাইস্যা বিয়া করলেন; বছর যাইতে না যাইতেই ছাড়াছাড়ি হইল ক্যান?
রিক্সা চালক:আর কইসন্যা বাপু! এক বিয়াই কি আর জীবন যায়নি? অভাবের সংসার সহ্য করবার না পাইর্যা জরিনা আমরে ছাড়ি চলি গ্যাছে।
ফরিদ:কেন রিক্সা চালাইয়াতো ভালই কামাও!নাকি?
রিক্সা চালক:তিনদিন ধইর্যা টানা হরতাল। গাড়ি বাইর করতাম পারিনাই। চাকা না ঘুরলে কি আর পেটের ভাত জুটে। কোন আয়রোজগার নাই। ধনী ধনী নেতারা কি আর আমাগো গরীবের কষ্ট বুঝব? অসহায় মুসলমানদের আল্লাহ আছে আর অসহায় হিন্দুদের ভগবান আছে।
ফরিদ:তাহলে চল কেমনে?
রিক্সা চালক:মাঝে মাঝে নিজে চলি, মাঝে মাঝে আল্লায় চালায়।
ফরিদ:আজকে হরতালে বের হলে যে?
রিক্সা চালক:এত ডরাইলে কি আর জীবন চলে? আজরাইল না আইলে কেউ মারবার পারতু না। জানডারে পকেটে নিয়্যা ঘুরি বুঝছ! শুণ্য হাতে বইস্যা থাকার চাইতে প্রাণডা হাতের মুঠায় নিয়ে হাইট্যা বেড়ান ভাল।
ফরিদ:আচ্ছা!বউটা চলে গেছে আবার বিয়ে করবা না?
রিক্সা চালক:হাতে নাই কানা কড়ি মন চায় নিকা করি। মন চাইলেই কি আর হকল কাম করণ যায়-মিয়া ভাই?
দৃশ্য:চার(বাসায়)
ছোটবোন:আনতে বললাম এককেজি এনেছ পাঁচ কেজি।সত্যি তোমার ঋণ করে ঘি খাওয়ার স্বভাবটা বড্ড বাড়াবাড়ি।
ফরিদ:সবই কপাল।
ছোটবোন:ভাগ্যের দোহাই দিয়ে তুমি নিজের অপরাধ আড়াল করতে চাইছো।আয়রোজগার করিনা বলে গুরুত্ব দেওনা বুঝি? আমি কত কাজ করি তবু মন পাইনা।
ফরিদ:ভুলে যাসনে তুই মেয়ে মানুষ! মেয়ে হয়ে পুরুষের সাথে তুলনা করতে যাসনে। তুই কাজ করবি, কষ্ট করবি; দু:খ-কষ্ট নিরবে সয়ে যাবি। পুরুষের সাথে লাগতে গেলে নারী একসাথে থাকতে পারেনা।
ছোটবোন:আমার কোন মূল্য নেই।এত করলাম তবু কারো মন পেলামনা।
ফরিদ:কি করেছিস রে? তুই খোঁটা দেয়ার মাধ্যমে সকল উপকারকে অর্থহীন করে তুলেছিস। সেই সেবার কোন দরকার নেই যেই সেবা গ্রহণকারীকে সেবাদানকারী কথায় কথায় খোঁটা দেয়।
দৃশ্য:পাঁচ(ছুটির দিনে)
ফরিদ আর শরিফ একসাথে কোথায় যেন বেড়াতে যাবে।সিঁড়ি দিয়ে নামতেই চোখে পড়ল একটি রিক্সা।
-এই খালি!কাকরাইল যাবে?
-হ্যা!যাব।
ফরিদ: বন্ধু খেয়াল করেছো-একসময় যেখানে চাহিদা ছিল দুই টাকা তা আজ হাজারে এসে ঠেকেছে।
শরিফ:তবু আগের মত সুখ শান্তি আনন্দ আজ আর পাইনা।মানুষ আগের চেয়ে বেশি স্বাথপর ও যান্ত্রিক হয়ে গেছে।অনেক সময় মনের অজান্তেই মূল্যবান কিছু ধরে রাখতে আমরা বন্ধনকে কঠিন থেকে কঠিনতর করতে থাকি। এতে হিতে বিপরীত হয়। অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগে বাঁধার রশিটাই একসময় ছিড়ে যায়।
ফরিদ:গতকালকে তুই একটা মূল্যবান কথা বলেছিলি।তুমি কি চাও তাই যতদিন ভাববে অন্যে তোমার কাছে কি চায় সেটা যতদিন বুঝতে চাইবে না বা বুঝতে পারবে না ততদিন তুমি পূর্ণ মানুষ নও।
শরিফ:রিক্সা চালক ভাই! কি খবর আপনার?
রিক্সা চালক:মরতে পারিনাই বইল্যাই বাইচ্যাঁ আছিরে বাপ।
শরিফ:বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম খেলায় জিতেছে। রঙের ছড়াছড়ি, আনন্দ মিছিল। চাচা মিয়া যে এখনও কাজে ব্যস্ত?
রিক্সা চালক:এখন পযন্ত উপোস আছি। আনন্দ করলে আর নীতিকথা শুনলে কি পেটের ক্ষিধে মিটবে? কেবল চাল ডালের পয়সাটা হইছে। বাচ্চাডার খুব জ্বর। ওর অসুধ কিননের লাইগ্যা আরো ট্যাহা দরকার। গরীব রিক্সাআলার আবার কিসের আনন্দ স্ফুর্তি।
শরিফ:আপনারতো বয়স হয়েছে।বড় কোন ছেলে নেই?
রিক্সা চালক:আছে। তার কথা আর কি বলব!যার মশারিড্যা টাংগাইয়্যা হুবার মুরদ নেই, মাছের কাটা বাইচছ্যা দিয়ে খাওয়ান লাগে, কাপড়-চোপড়ও ধুইয়্যা দেওয়ন লাগে-হেই পিইচক্যা পোলাডাও একমেয়ের লগে লাইন লাগাইছে,পালাইছে।সবি কপাল।কতজন আইল গ্যাল আমি মজনু মিয়ার কোন পরিবর্তন ন্যাই; ভাগ্য বদলাইতে দ্যাখলামনা।
শরিফ:শুধু আপনি কেন চাচা; কেউ ভাল নাই!
রিক্সা চালক:কন কি কাহা! ইডা কিম্বা করে সম্ভব অইল? আংগো জন্মই অইছে গোলামী করার লাইগ্যা। আংগো কি আর মুক্তি আছে? আমগো হময় যেরাম বয়সে আমরা ছিলাম মাসুম বাচ্চা হেই বয়সেই আজকালকের ছাওয়াল পাওয়ালরা এক্কেবারে পাইক্ক্যা যায়।
ফরিদ:চাচার কি মেয়ে টেয়ে আছে?
রিক্সা চালক:আছে।
ফরিদ: কাজকাম করেনা?
রিক্সা চালক:মেয়ে মানুষ কি কাজ করব?ঘরে চাল না থাকবার পারে তবে মানইজ্জত বইল্যা কিছু আছে- বুচছুন সাহেব!পেটে ভাত নাইতো কি হয়েছে চরিত্র ঠিক আছে। কোন ভেজাল নেই। কষ্ট কইর্যা ট্যাহা কামাই, কষ্ট কইর্যা চলি। হালাল খাই। হারাম খাওয়া তুলতুলে শরীর না থাকবার পারে। এ নিয়ে কোনই আফসোস্ ন্যাই। বাইরে যিরামি দেহা যাক ভীতরের মনটা বড় ভালো।
শরিফ:মেয়ে কি বড় না ছোট? বিয়েশাদি দেন নাই?
রিক্সা চালক:আর বইলেন না।দিছিলাম,টিকে নাই।ওতো কপাল পুড়া, অলক্ষী। একজনের প্যারালাইস্ট হয়েছে, আরেকজন অর্ধপাগল, ভবিষ্যতে না জানি তার সংস্পর্শে কেউ পূর্ণ পাগল হয়ে যায়।
(অসম্পূণ, ধারাবাহিক)
©somewhere in net ltd.