নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন ও জগতের দ্বন্ধমুখরতা: একটি বিশ্লেষণ

০৯ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৫

যারা সত্যিকারে বড় হতে পারে তারা অন্যকে ছোট না বানায়েও বড় হতে পারে। কাউকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করাটা নিজেকে বেশি গুরুত্বপূণ এবং সবার প্রিয় করে তোলার জন্যে অপরিহায শত নয়।তবু অনেকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে যেয়ে অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।কোন একজন মানুষকেও অন্যায়ভাবে আঘাত করা গোটা মানবজাতিকে অন্যায়ভাবে আঘাত করার শামিল। কখনই কাউকে অযৌক্তিকভাবে আঘাত করাকে বৈধতা দান মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই প্রতিটি মানবপ্রাণকে গভে ধরেছে কোন মা। পেটের ভেতরে আরেকটি জীবন্ত মানুষকে বয়ে বেড়ানোর কষ্ট অবণনীয়। প্রতিটি নতুন প্রাণের আবিভাব ঘটেছে একজন মায়ের প্রসব বেদনা ও রক্তক্ষরণের পর। ফলে এমন জীবন বাজি রেখে যে নবসৃষ্টি তাকে ঘৃণা করাটা রুচিহীন মানসিকতারই বহি:প্রকাশ।



একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখবেন, একটি নবজন্ম নেয়া প্রাণটার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কতজনের কতধরনের অবদানই না রয়েছে? সূযের আলো আর উত্তাপ, গাছ থেকে অক্সিজেন, বাতাসের সাথে মিশে যাওয়া শ্বাস প্রশ্বাস, এই মাটির বুক বিদীণ হয়ে গজিয়ে ওঠা গাছ তাকে ফল দিয়েছে ফুল দিয়েছে, বিশুদ্ধ পানি তাকে বেচে থাকায় সহায়তা করেছে, জলের মাছ তার শারীরিক বৃদ্ধি বিকাশে সহযোগিতা করেছে, অনেকের আলোচনা কিংবা লেখা তার ভেতরে মনুষত্ব জাগিয়েছে, অনেক প্রাণীজ আমিষ তার পুষ্টির চাহিদা পূরণ করেছে। যেই ছাগল গরু ঘাস খড় খেয়ে জীবন ধারণ করেও মানব প্রাণের জন্যে সুস্বাদু দুধ দিয়েছে। সেই দুধ থেকে ঘী, দই, মাখন হয়েছে।যেই হাস মুরগী খুব নিম্ন মানের খাদ্য খেযেছে সেও নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে মুখরোচক ও মজাদার খাদ্য হয়ে ওঠেছে। আমি বলতে চাচ্ছি, এরা প্রত্যেকেই যা নিয়েছে বা যা পেয়েছে তার চেয়ে বেশি দিয়েছে কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু মানুষ।



মানুষের মত এত অকৃতজ্ঞ আর কেউ নেই। সবাই মানুষের জন্যে এত কিছু করে তবু মানুষের কাছ থেকে খুব কমই সুব্যবহার পায়। যেই নদী মাছ দিয়েছে, কোন খরচ ছাড়াই চলাচলের উপযোগী রাস্তা হিসাবে ব্যবহারিত হয়েছে, সকল ময়লা আবজনাকে পেটে ধারণ করে পরিচ্ছন্ন মানব বসতির নিশ্চয়তা বিধানে সহযোগিতা করেছে মানুষ তাকে ভরাট করেছে, ক্ষত বিক্ষত করে বালি উত্তোলন করেছে, জমিতে কিংবা ফসলে দেয়া রাসায়নিক সার কিংবা ক্ষতিকর বিষ বৃষ্টির পানির মাধ্যমে শরীরে মাখায় চিৎকার করেছে-কিন্তু ভ্রুক্ষেপ করেনি মানুষ।যেই পাহাড় ভুমিকম্পের ঝুঁকি কমিয়েছে, প্রাকৃতিক নানান দূযোগের প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে ফলপ্রসূ ভুমিকা রেখেছে, জ্বালানি সরবরাহ করেছে, ফুল-ফল দিয়েছে, নানাবিধ নিরাপত্তার নিশ্চয়তায় ভুমিকা রেখেছে-মানুষ সেই পাহাড়কেই হত্যা করেছে তার আকুতি মিনতিকে মোটেই গুরুত্ব দেয়নি।যেই বনজঙ্গল দিয়েছে- অথনৈতিক সাপোট, প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী সরবরাহের নিশ্চয়তা-এমন উপকারি বন্ধুর বড় শত্রু হয়ে ওঠেছে মানুষ; মানুষ বনের অস্তিত্বে বিলয়ে যেন সবশক্তি নিয়োগ করেছে।



মানুষ ইটভাটা করেছে দালানে থাকবে বলে, মোবাইল টাওয়ার করেছে দূরের পরিচিতজন কিংবা আপনজনের সাথে কথা বলবে বলে, বড় পদার টেলিভিশন তৈরি করেছে জীবনকে উপভোগ্য ও আনন্দঘন বিনোদনের আশায়, শিল্পকারখানা করেছে ভোগ্যপণ্যের মাধ্যমে আরামদায়ক জীবনের স্বপ্নে- কিন্তু স্বাস্থ্য ঝুকিকে বিবেচনা করেনি।বাতাসকে দূষিত করে, পানিকে দূষিত করে যে স্বগরাজ্য বানানো যায়না এই বোধটা দেখা যায়নি। খাবারে ফরমালিন মেশানো, হাইড্রোজ মেশানো, ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো, নকল পণ্য, ভেজাল দ্রব্য-জীবেনকে অনিরাপদ করে তুলেছে।বিশুদ্ধ বাতাসে প্রাণভরে নি:শ্বাস নিতে না পারলে, খাঁটি পানিতে পিপাসা মেটাতে না পারলে, ভেজালমুক্ত সম্পূণ প্রাকৃতিক উপায়ে প্রস্তুতকৃক উপকরণগুলো ক্ষুধা নিবারণের জন্যে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করতে না পারলে-দালানের চাকচিক্য চোখের জ্যাতিকে স্বাভাবিক রাখতে পারবে না, চশমা পরতে হবে, মোজাইক-টাইলসে ঘেরা কাপেটে মোড়ানো রঙবেরঙের আলোকে উজ্জল আলোকিত ঘরেও শান্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আসলে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি দেখতে না পারলে, উদার সুনীল আকাশের রুপ সৌন্দয অবলোকন করতে ব্যথ হলে, পাখির কোলাহল আর নদীর কলকল রব শুনতে না পারলে-কৃত্রিমতা হৃদয়ের প্রশান্তির জন্যে কখনই যথেষ্ট হবেনা।



মাটির মানুষ অথচ মাটির সাথে কোন সম্পক নেই। গাড়িতে-লিফটে-অফিসে-বাসাতে-শপিংমলে সবজায়গায় এসি, দামি আসবাবপত্র কিংবা সৌন্দযবধক উপকরণ,কোথাও কি মাটির সংস্পশ আছে।খেলার মাঠ নেই, নদী কিংবা পুকুরে সাতার কাটা নেই। আর সুইমিংপুল আর স্টেডিয়ামগুলোতে কি আর সবার প্রবেশাধিকার আছে-পযাপ্তও না নিশ্চয়ই।ক্রমশ মাটির পরশ পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।সেই বনভোজন নেই, পাখি ও মৎস শিকারের আনন্দ নেই,চড়ইভাতি রান্না নেই, পুতুল খেলা নেই। মাটি পুড়িয়ে ইট করেছি, পিচ ঢেলে কিংবা ইট দিয়ে মাটিকে আবৃত করেছি।মাটি অবহেলিত, বিষাক্ত,অপমানিত।প্রাণহীন দেহগুলো মাটির কাছে আসে, মাটি তাকে ধারণ করে অথচ সেই দেহগুলো যখন প্রাণবন্ত থাকে মাটিকে বড্ড অবহেলা করে।সত্যি মানুষের মত উদ্ধত স্বভাব কারইবা আছে?



সম্পক কি শুধু মাটির সাথে কমেছে? মোটেই না। কমেছে মানুষের সাথে।যান্ত্রিক, নিরস,প্রাণহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। কেমন যেন গাণিতিক জটিলতা ও যৌক্তিকতার বিশ্লেষণে মানবিকতা,ক্ষমা করার মহত্ব, ত্যাগ ও মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাইভেটকার,প্রাইভেট টিউটর,প্রাইভেট চেম্বার-সব মিলিয়ে প্রাইভেট লাইফ।কমছে যৌথ পরিবার,যৌথ উদ্যোগ।হাটেবাজারে, যানবাহনে, জীবন যাপনে সরাসরি পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া কমছে।এখন খেলার সাথী হচ্ছে কম্পিউটার,ভিডিও গেমস;যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক,টুইটার,মোবাইল ফোন। আজকাল হাতে লেখা চিঠি নেই,রোদে ভিজে ঘমাক্তে দূর দূরান্তে কষ্টকর ভ্রমণ দেখা যায়না।সালাম বিনিময়,মুসাফাহ,কুশল জিজ্ঞাসা ও তথ্য আদান প্রদানে পারস্পরিক দেখা সাক্ষাৎ, বাসায় বেড়ানো কমে যাচ্ছে।একটি এসএমএস, ইমেইল বা কল করে খোঁজখবর নিলেই দায়িত্ব শেষ মনে করছে।সেই মেহমানদারী, আত্মীয়তার সুদৃঢ় বন্ধন,হৃদ্যতাপূণ উষ্ণ অভ্যথনা, আন্তরিক সেবা –প্রাণ খোলা আলাপচারিতা আজ অনেকটাই হারিয়ে গেছে।



যন্ত্র নিভর হয়ে যান্ত্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে মানুষ।আপনি দেখবেন কোন শিল্পকারখানায় যারা মেশিনে কাজ করছে,কম্পিউটারে যারা ডিজাইন-টাইপ-সফটওয়্যারের কাজ করছে যন্ত্র বিচ্ছিন্ন জীবন তারা কল্পনাও করতে পারে না।তারা কেন ডাক্তাররাও আজ মাথা খাটানোর চেয়ে প্যাথলজিস্টদের মেশিনের নিদেশনা তথা প্যাথলজিক্যাল রিপোটের ওপর নিভরশীল হয়ে পড়ছে।ফটোগ্রাফারের আগে যতটা তীক্ষ্ণতা ও সূক্ষতার প্রয়োজন হত এখন ডিজিটাল ক্যামেরা ও বিভিন্ন ধরনের এনিমেশনের সুযোগ থাকায় ততটা মনোযোগ থাকছেনা।আপনি অতীতের লেখকদের হাতে লেখা পান্ডুলিপি যাদুঘরে দেখে অন্যরকম তৃপ্তি বা সুখ অনুভব করেন কিন্তু বতমান লেখকদের হাতেলেখা খুব কমই হয়ে ওঠে।এভাবে শিল্পীর সূক্ষমনন ফুটে উঠা রংতুলির আচড়ে আঁকা শিল্পকম হারিয়ে সবকিছু ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে।মানব মনন ও রুচিশীলতার ছাপ প্রকাশের ক্ষেত্রেও যান্ত্রিকতার ছাপ পড়ছে।ফলে কোনটি প্রকৃত সত্য আর কোনটি আংশিক সত্যি আর কোনটি মিথ্যা তা নিণয় করাটা কঠিন হয়ে পড়েছে।কোনটি কৃত্রিম আর কোনটি প্রাকৃতিক তার পাথক্য নিণয় করাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। কেউ নিজের স্বগরাজ্য বানাতে যেয়ে অনেকের জন্যে নরকরাজ্য গড়ে তুলেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.