নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্পোরেট কালচার ও চাকুরিজীবীদের সংকট (এক)

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৫

গতরাতে এক প্রিয়ভাইয়ের সাথে আলাপচারিতায় তিনি অফিসে জিন্স ও টিশার্ট পরার সুযোগ থাকাকে অফিসের পরিবেশ পছন্দের অন্যতম কারণ বলেছিলেন। তার এই ভাললাগার প্রসঙ্গটি একটু ব্যতিক্রমভাবেই ভাবলাম কারণ অধিকাংশ অফিসেই দেখি নারীরা সুসজ্জিত, ছেলেরা স্যুট টাই পরিহিত। শীতেও স্বল্পবসনা নারী, গরমেও বহু পোশাকে আচ্ছন্ন পুরুষ। এমন অফিস পর্যাপ্ত আলোর দেশেও রাত কি দিন বুঝা যায় না। চেনাজানা এমন অনেক কে দেখি যারা ক‘দিন আগেও টিউশনী করে চলেছে, পাবলিক বাসে রড ধরে ঝুলেছে, ডাল আর আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছে, চাকুরির ইন্টারভিউ দিতে যেয়ে আরেকজনের প্যান্ট-শার্ট-স্যুট টাই ধার করে পড়েছে। এখন তার অফিসে এসি না চললে স্ট্যাটাস থাকে না। এসি চালায় অকারণে, বিদ্যুত খরচ হয়, বিল আসে-পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ে। পেটে খাবার নেই অথচ বাহারি সাজে অফিসারগণ-অনেকটা কার্টুন বা রোবটের মত কাজ করে যায়। নিজের পোশাক নির্ধারণটাও ইচ্ছে স্বাধীনমত হয় না, কর্পোরেট দুনিয়ায় ওয়েল ড্রেসড হওয়াটা খুব জরুরী।



কর্পোরেট অফিসে ড্রেসকোড মানে কিন্তু এটা নয় যে সবাই একই রকম সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট পরবে। যে কর্পোরেট রূপ নারীর মাঝে দেখা যায় সেখানে ব্যবসা মূখ্য, সৌন্দর্য্য নয়। একেক অফিসের একেক রকম নিয়ম অনুযায়ী কোনো অফিসে পুরো ফর্মাল ড্রেসে আসতে হয় যেমন- ফর্মাল শার্ট-প্যান্টের সাথে ব্লেজার বা কোট-টাই, আবার কোনো অফিসে কোট-টাই না পরলেও চলে শুধু ফর্মাল শার্ট-প্যান্ট পরে আসতে হয়। অফিসে পরার পোশাকটি হতে হয় পরিষ্কার ও মানানসই, মার্জিত রঙের হবে। অনেক কর্পোরেট অফিসে অনেক অলংকার পরাকে খুবই দৃষ্টিকটু হিসেবে দেখা হয়।আগে অফিসে শুধু কাজটাই মুখ্য ছিল, পোশাক আশাকের দিকে নজর দিত না অনেকই কিন্তু আধুনিক এই কর্পোরেট যুগে দক্ষতার পাশাপাশি চাই স্মার্টনেস। আর এই স্মার্টনেসটা আসে উপযুক্ত পোশাক পরিধানে, কাজের চাপের মাঝেও হাসিমুখে কথা বলতে পারায়, খুব দক্ষতার সাথে সৃজনশীল উদ্ভাবনের সক্ষমতায়। তাই অফিসে পোশাক পরিধানে হতে হবে ট্রেন্ডি, স্মার্ট, মার্জিত ও শালীন। অফিস আদালতে পরিধেয় ইউনিফর্ম ছাড়া যদি কোন নারীর পোষাকের অনুষঙ্গ যদি থাকে অফিসিয়াল সুবিধা নেবার এবং অথবা বস বা কলিগের দৃষ্টি আর্কষন করার মানসে তবে নারীর পোষাকও কর্পোরেট লালসা দিয়ে প্রভাবিত হতে পারে। আর যদি নারীর অফিসিয়াল ইউনিফর্মই হয় তার জাতীয় ঐহিত্য বর্হিভূত এবং নারীর নিজস্ব অভিরুচির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তাহলে সেটা প্রত্যক্ষভাবেই কর্পোরেট লালসার প্রতীক হয়ে দাড়াঁয়।



ঝুঁকি নিতে অনাগ্রহী, নিশ্চিন্তে নিরাপদে জীবন কাটানোর প্রত্যাশীরা অফিসে আরামে বসে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ভেতরে যাই থাকুক বাইরে খুব চাকচিক্য থাকতে হবে, কাজটা যে নিকৃষ্ট করণিকের সেটা কখনই মাথায় আসবে না। কর্পোরেট দুনিয়ায় নির্ধারিত মাইনেতে কাজ করে এমন লোকদের হিসাব নিকাশ হচ্ছে, কবে বেতন বাড়বে, বোনাস আসবে, বাচ্চার জন্য খরচ হবে –আরেকটা বাচ্চা নেয়া যায় কিনা। বলা হবে কর্পোরেট মানে যৌথ পরিচিতি, সামষ্টিক মন অথচ বাস্তবে আমার টার্গেট, আমার প্রমোশন, আমার বেতন, আমার জীবন- এসব ব্যক্তিক চিন্তা করে যেতে হবে। যারা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে বা পাশ করে বের হয়েছে, সবার লক্ষ্য একটা ভালো চাকুরী। যেগুলো সবচেয়ে বেশি বেতন দেয় তারাই বেশি পছন্দের। একটা স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য সবারই টাকা দরকার হয়, টাকা নিয়ে যতোই বড় কথা বলা হউক না কেনো। চাকুরী করে কোন রকম জীবন চললেও উন্নতির জন্যে দরকার অনেক অনেক ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, কর্পোরেট কম্পানী। কর্পোরেটে চাকুরী পাবার জন্য একের পর এক সিভি জমা দিবে আবার কর্পোরেটকে গালি দিবে সেটা হওয়া উচিত নয়। একটি সফল পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করা এবং সেটিকে সবার নিত্যদিনের ব্যবহার্য করে তোলা একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। অসংখ্য প্রতিভাবান মানুষের অনেক বছরের পরিকল্পনা আর পরিশ্রম রয়েছে এই সেক্টরে ফলে এই পরিশ্রমকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।



তবে এটা স্বীকার করতে হবে, বহুজাতিক কর্পোরেট যুগে আমাদের লোক সংস্কৃতি আজ বিলুপ্ত, ফাস্টফুড-চাইনিজ এর কাছে হারিয়ে গেছে অনেক দেশীয় খাবার। বাংলাদেশী পণ্য এবং খাবারের অভ্যাস ভুলায় মুটিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত টিভি-ইন্টারনেট-ভিডিও গেমসের কারণে চোখে চশমা এখন সাধারণ ব্যাপার। কর্পোরেট বলতে অনেকে সাধারণত বড় কম্পানী-বহুজাতিক কম্পানীগুলোকেই বুঝে। কর্পোরেট এর প্রতি আমাদের ঘৃণা যতোই হোক না কেনো, একটা মুহুর্তও কর্পোরেট এর উৎপাদিত পণ্য ছাড়া চলবেনা। পানি, বাতাস, আর মাটি ছাড়া বেঁচে থাকার জন্য যা যা দরকার তার সবই আসে কর্পোরেট থেকে। অনেকেই একটা ভালো কম্পানীতে ভালো চাকুরী পেলে নিজেদের ধন্য মনে করে।বেসরকরারী প্রতিষ্ঠান এবং কম্পানীগুলো কম্পানীগুলো কাজ শুধু জনসেবার চিন্তা থেকে নয়, বরং মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে করে। কিন্তু এই মুনাফা লাভ করতে গিয়ে ওরা অসংখ্য মানুষকে চাকুরী দেয় আর মানুষের জীবনকে করে দেয় অনেক বেশি আরামদায়ক।



আগে লেবুর শরবৎ, ডাব ইত্যাদি দেশী স্বাস্থসম্মত পানীয় ছিল এখন কোকাকোলা, পেপসি, প্রাণ জুস ছাড়া চলেনা। চুরি, মিথ্যা, ঘুষ-দূর্নীতি, পণ্যে ভেজাল দেয় তবু বড়লোকের ছেলে হলে মেয়ে বিয়ে দিতে আপত্তি নেই অথচ সৎ উচ্চশিক্ষিত কিন্তু ফ্ল্যাট-গাড়ী-বাড়ি-ব্যাংক ব্যালেন্স নেইতো অপছন্দের পাত্র । ঘুষের নাম এখন স্পীড মানি,পার্সেন্টেজ যা উপরি আয় বা বেশতি রোজগার হিসাবে সমাজে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।১লা বৈশাখ, থার্টিফার্ষ্ট নাইট, ভালবাসা দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস উদযাপন পুরোটাই ফানুস, ভিতরে সারবস্তু কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে না। কাজেই পহেলা বৈশাখের দিন যে সুন্দর জামা-কাপড় পরে, পান্থা খেয়ে, নেচে-গেয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আনন্দ-উল্লাস করা হয় তার যৌক্তিকতা কোথায়? আমরা কি আজও দেশের সাধারণ মানুষের জন্য শুভ নব-বর্ষের শুভটা কিছু দিতে পেরেছি?



এখন সামাজিক দায়বদ্ধতা বা কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর অনেক গুরুত্বের সাথে উত্থাপিত হয়। এটা হল একধরনের ব্যবসায়িক শিষ্ঠাচার বা নীতি যা সমাজের প্রতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকে ব্যবসার নিয়মের মধ্য অন্তর্ভূক্ত করে। একটি ব্যবসা নৈতিক ও আইনগত ভাবে পরিচালিত হলেই এর সমস্ত দায়মুক্তি হয়েছে তা বলা যায় না। যে পরিবেশে বা যে সমাজে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেই সমাজের প্রতি প্রতিষ্ঠানের কিছু দায়বদ্ধতা জন্মায়। কয়টি প্রতিষ্ঠান এই দায়বদ্ধতা থেকে কল্যাণমূলক কিছু কাজ করে? সংখ্যায় বেশি নয়। দু:খজনকভাবে বর্তমান কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের কিছু ক্ষেত্রে বেশ নোংরা কালচার তৈরি হয়েছে। যা ব্যাবসায়িক নৈতিকতা বা বিজনেস ইথিক্স এর বাইরে। কিছু অসাধু কর্মকর্তার নিয়ম বহির্ভুত আর্থিক লেনদেনের কারণে অনেকে এখন গিফট ছেড়ে ক্যাশে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। তারপরও অনেকে মনে করে এখনকার কর্পোরেট কালচার অনেক বেশি আধুনিক, অনেক বেশি রুচিশীল, অনেক সৃষ্টিশীল। কর্পোরেট সমাজে সবাই এখন সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা অনুধাবন করা খুবই ভালো, আর দায়িত্ব পালন করা তো আরো ভালো বিষয়। কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতার মানে শুধু দান খয়রাত নয়। ডাকাতি করা টাকা দিয়ে বস্তির লোকের কাছে হিরো বনে যাওয়া সিনেমার নায়কদেরই সাজে, বাস্তবে ওই ধরনের কাজে সমাজের ক্ষতি বই উপকার কিছুই হয় না। তেমনি নিজের কাজে নৈতিকতা বাদ দিয়ে অবৈধ পথে অথবা আইনের মারপ্যাচে অনেক অর্থ উপার্জন করে দান খয়রাত করে দিলেই সেটা কটর্পারেট সামাজিক দায়বদ্ধতা হয়ে গেল একথা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে বাংলাদেশে আজকাল যা কিছু হচ্ছে তার অনেকগুলো সেভাবেই হচ্ছে।





ইসলামী কর্পোরেট কালচার বা অর্ধ ইসলাম ব্যবস্থায় অভ্যস্ত মুসলিমরা ইসলামকে একটু সরলায়ন করেছেন। যেমনঃ মেয়েদের আগাগোড়া পর্দা না করে শালীনভাবে শাড়ী বা সালোয়ার কামিজ পড়তে বলেন। অন্য ধর্মের বন্ধুদের সাথে তাদের আচার-অনুষ্ঠানে যোগদান করে ধর্মের চেয়ে মানবতা বড় বলেন। এরা মাঝেমাঝে নামাজ পড়েন, শবে বরাত-শবে মেরাজের রাতে নামাজ পড়তে যান। জাকির নায়েক-হারুন ইয়াহিয়াদের সম্পর্কে বিরুপ মনোভাব পোষণ করেন। তারা ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলে আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে মেনে চলার কথা বলেন। ধর্মীয় মৌলবাদকে ইসলামের মূল শত্রু হিসাবে আখ্যা দেন, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ঘৃণা করেন না। এরা হিন্দুদের মালাউন বলা, তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে বিদ্রূপ করাকে অপছন্দ করেন।



সাম্প্রতিক সময়ে টেলিভিশন-সংবাদের কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং আরও খোলামেলাভাবে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। সংবাদের শিরোনাম, সংবাদের বিজ্ঞাপন-বিরতি, খেলার সংবাদ, বাণিজ্য-সংবাদ ইত্যাদি নানা স্লট একেকটি কোম্পানির সৌজন্যে প্রচারিত হয়। এভাবে দেখা যাবে, সংবাদের কোনো অংশই আর টেলিভিশনের নিজের নয়, অন্যের সৌজন্যে সেসব প্রচারিত হচ্ছে। বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলো যেমন বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে পত্রিকার ব্যবসায় সহায়তা করে, তেমনি পত্রিকাও তাদের একেবারে সংবাদমূল্যহীন কর্মকাণ্ডকে পত্রিকায় ছেপে দায়বদ্ধতা পূরণের কাজটি করে থাকে। যেমন: জন প্লেয়ারের সমুদ্রসফর অবলীলায় সংবাদপত্রের শেষ পৃষ্ঠায় রঙীন ছবিসহ স্থান করে নেয়। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে দায়বদ্ধতার কারণেই লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা, ফেয়ার এন্ড লাভলি বেনসন এন্ড হেজেস স্টার সার্চ, নেসক্যাফে সঙ্গীত সন্ধ্যা, পেপসি কনসার্ট ইত্যাকার বিষয়গুলো যেকোনো পৃষ্ঠায় সবচেয়ে বড়ো সংবাদ আকারে ছাপা হয়ে থাকে।



কর্পোরেট কালচারে টিমওয়ার্ক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিত্য নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা শক্তি, বিপুল পরিমান মানব সম্পদ, দূরদর্শী বিজনেস প্লান এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যাওয়া যায় অসাধারণ উচ্চতায়। অত্যন্ত চৌকস, বিনয়ী, মেধাবীদের নেতৃত্বে একটি শিল্প গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।কর্পেরেট কালচারে প্রতিষ্ঠানের সাফল্যকে একটি টিম ওয়ার্কের ফসল হিসেবে দেখা হয়, সফলতার কৃতিত্বকে সবার মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়, সবাই কোম্পানিকে নিজের মনে করে কাজ করে। গুনগত মান রক্ষায় আমরা আপোষহীন থেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেখতে হবে কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। বিনিয়োগ দেশী হোক আর বিদেশী হোক বিনিয়োগ ক্ষেত্র আসলে এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন কোন সেক্টরে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ অনেক কম। কোন খাতে বিনিয়োগ বেশি প্রয়োজন, কোনটার চাহিদা বেশি ও লাভের যথেষ্ট সুযোগ আছে তা ভাবতে হয়।



একজন সফল কর্পোরেট লিডার হতে হলে কর্পোরেটকে হতে হয় উচ্চ শিক্ষিত, প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন, সৎ, বিনয়ী, দূরদর্শী, সমস্যার তড়িৎ সমাধান।বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই পারস্পরিক ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় একটি ছোট্ট ভুলও চাকরি হারাবার কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার উত্তম ব্যবহারের জোরেই কেউ হয়ে উঠতে পারে প্রতিষ্ঠানের সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাই একটু এগিয়ে রাখা এবং কর্মক্ষেত্রের সমস্যাগুলোকে সহজে সমাধান করবার জন্য আন্তরিক চেষ্টা থাকা দরকার। কর্পোরেট কালচারে করনীয় হচ্ছে, অপরিচিতজনের সঙ্গে কথাবার্তা শুরুর সময় প্রথমে নিজের পরিচয় দেয়া, অফিসে যারা সিনিয়র তাদের সঙ্গে সব সময় ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করা, সহকর্মী এবং বসের জন্মদিন মনে রেখে একটি ফুলের তোড়া বা ছবির ফ্রেম উপহার দেয়া, অফিসের মধ্যমণি হয়ে উঠতে সবার কাজেই সহযোগিতা করা, কনফারেন্সে গেলে নতুন যোগাযোগ তৈরি করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকা, কর্পোরেট পার্টিতে কেউ ভিজিটিং কার্ড দিলে তার সামনেই কার্ডটি অন্তত একবার পড়া, পার্টিতে যথাসম্ভব কম কথা বলা, মুঠোফোনে এমন রিং টোন দেয়া যা অন্যকে বিরক্ত না করে, পারলে ভাইব্রেশন মোডে দিয়ে রাখা, মিটিং এ থাকলে কিংবা বসের রুমে যাবার আগে মোবাইল সাইলেন্ট মোডে দিয়ে রাখা, নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীদের সাথে সর্বদা ভালো ব্যবহার করা।



কর্পোরেট কালচারটা এমন যে কারো স্বপ্ন গড়ে, আবার কারো স্বপ্ন ভাঙে। আমি দেখেছি টপ ম্যানেজমেন্ট তথা প্রধান কর্তাব্যক্তিরা ছড়ি ঘুড়ায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের ওপর। কারো কারো আচার-আচরণ এমন যে একটু নিচের দিকে যারা কাজ করে, তাদের সালামের জবাব দেবারও প্রয়োজন এরা বোধ করেনা। মাঝে মাঝে এদের সাথে হেসে কথা বললেও বেয়াদবি হয়। অফিসে সবচেয়ে বেশি কষ্ট যারা করে, তারা সবচেয়ে অবহেলিত! যারা ছুটি আর আরামের হাতছানি উপেক্ষা করে, জীবন বাজী রেখে ট্যুর করে বেড়ায়, পরিবারকে সময় আর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত করে, অনেকে বিয়ে করার কথা কল্পনাও করতে পারেনা, তাদের কথা বছর শেষে ভুলেই যান ম্যানেজাররা। ম্যনেজাররা যদিও বা তাদের কারো কারো প্রমোশনের জন্যে সুপারিশ করেন, বিভাগীয় প্রধানরা তা তুড়ি মেরে উড়িযে দেন!



যারা সবসময় দৌড়ের উপর থাকে, দিনের শুরু থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যেন্ত ফোন আসতে থাকে, খাবার-নামাজের সময়ও ফোন বেজে ওঠায় নববিবাহিত স্ত্রী বিরক্ত হয়। ম্যানেজাররা গোপন বৈঠক করে তাদের দোষ-গুণ আলোচনা করেন; আদেশ-উপদেশ দেন; অনেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে ‘কিছু একটা’ গ্রেড দিয়ে বিভাগীয় প্রধানের কাছে জমা দেন। কিছু কর্মকর্তা অফিস কাঁপিযে আদেশ-নির্দেশ দেন সাবঅর্ডিনেটকে। তাদের কর্কশ কন্ঠ অফিস মুখর হয়ে ওঠে; বস্-রা তাদের ‘আউটস্ট্যান্ডিং’ পারফরমেন্স দেখে মেইল করে ‘পিঠ-চাপড়ানি’ দেন। তারা ভাল গ্রেড পান, ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন, অ্যাওয়ার্ড সবই তাদের হস্তগত! আর বঞ্চিতদেরকে ম্যানেজাররা সান্তনা দেন: এবার প্রমোশন দেওয়া গেলনা; পরের বার হবে। কেউ প্রমোশন পেলেও বেতন তেমন বাড়েনা, কেউ কেউ আবার যা পেয়েছে, তাতেই খুশী। বঞ্চিত গোষ্ঠি মনে মনে ফুঁসতে থাকে তবে করার যেন কিছু নেই।



এমন ঘটনা ঘটতে দেখা যায় একদিন কোন কোন বিশেষ বিভাগের কিছু কর্মচারীকে ডেকে হঠাৎ পরীক্ষা নেয়া হয়। পরদিন সকালে তাঁদের কেউ কেউ অফিসে ঢুকতে গিয়ে দেখেন তাঁদের চাকরিই নেই। তারা পরিবারকে কিছু বলতে পারেন না, সমাজে মুখ দেখাতে পারেন না, বিয়ের কথাবার্তা চলা থমকে যায়, মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে ডেকে এনে পরীক্ষায় বসানো মহিলা শারীরিক ও মানসিকভাবে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পরেন এদু:সংবাদে। এই কোম্পানির নীতিনির্ধারকদের নীতিবোধ আর দূরদর্শিতা বলতে কি আর কিছু থাকে!কিছু কোম্পানি যেন তৈরীই হয়েছে লুটে-পুটে খাবার জন্যে। উর্ধ্বতন অনেকে অফিস থেকে সার্বক্ষণিক গাড়ী পান; বছরে কমপক্ষে একবার অফিসের খরচে বিদেশ ভ্রমণ করেন। আর যারা সারা বছর খেটে মরে, বছর শেষে তাদের বেতন নামমাত্র বাড়ে; প্রমোশন হয় তাদের যারা তেলবাজীটা সময়মতো এবং জায়গামতো করতে পারেন। বড় বড় কনফারেন্স করে শ্রেষ্ঠ একজনকে পুরস্কৃত করা হয়; সবাইকে নিয়ে বড় একটা ভোজ হয়, সাথে কনসার্ট থাকে; কোন কোন বছর বিদেশ ভ্রমন চলে, দুই নম্বর পথে বিশেষ সুযোগতো আছেই। বহুজাতিক কোম্পানির মতো দেশীয় কোম্পানীগুলোতে বিদেশীদের দৌরাত্ম নেই, তবে মালিক এবং তার আত্মীয়দের মধ্যে আছে একটা রাজা’ রাজা’ ভাব, প্রজারা তাদের দেখামাত্র কুর্নিশ করতে হয়। নানা রকম উপঢৌকন- উৎকোচে-বিলাসিতায় বন্যা বয়ে যায়, তবে কোম্পানির কর্মচারীদের তা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া গত্যন্তর নেই।



লাখের উপর যার বেতন, তিনি পান গাড়ী, ফার্নিচার কেনার টাকা, টেলিফোন বিল, স্পেশাল অ্যালাউন্স, চাইল্ড অ্যালাউন্স, বিদেশে ছুটি কাটাবার জন্যে অ্যালাউন্স আরো কত কী। আর যে লোক সকাল থেকে কাজ করতে করতে রাত বানিয়ে তারপর বিধ্বস্ত হয়ে লোকাল বাসের ঠাসাঠাসি ভীড়ে চ্যাপ্টা হয়ে বাসায় ফেরে, তার জন্যে বছর শেষে নামমাত্র ইনক্রিমেন্ট! দেশের সরকারি অফিস আদালতের অনেক অনিয়মের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। কিন্তু কর্পোরেট কালচারের নামে এই নিষ্পেষণ চলতে থাকে নীরবে, নিভৃতে যা মিডিয়ায় আসেনা। স্বপ্ন পূরণ করতে এসে অনেকের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। কেউ কেউ ওপরতলার মানুষ হবার অপেক্ষা করে তারপর নিচের মানুষগুলোকে বঞ্চনা করে নিজের বঞ্চনার শোধ তুলে। এ অচ্ছেদ্য এক চক্র থেকে রেহাই পেতে হলে যারা এখনও কর্মজীবনে প্রবেশ করেননি, তারা একটু ভেবে দেখতে পারেন, কোন স্বপ্নের পেছনে ছুটবেন।



প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য তেল মারাটাই মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন । যারা না পারে তারাই কর্পোরেট পৃথিবীতে পেছনের সারির । চাকরের কাজকে চাকুরী বলে। এখানে অনেক শিক্ষিত মানুষকে পরনির্ভরশীল হয়ে করুনভাবে জীবিকা অর্জন করতে হয়। এই অসহায়ত্ব তৈরি হবার কারণ হচ্ছে মালিক পক্ষের তেলের মাথায় তেল ঢালা আর রুক্ষ মাথায় বেল ভাঙ্গার নীতি। আমরা হয়ত সবাই জানি না ,তাই মরীচিকার পেছনে ছুটি । আমরা যারা জানি ,তাদের উচিত অন্যদের জানানো ।কারণ জীবনের জন্য চাকুরী ,চাকুরীর জন্য জীবন নয় ।সেই তেল ঢালা আর বেল ভাঙ্গা ।জানিনা এর অবসান কবে হবে? জীবনটা এত যান্ত্রিক হয়ে গেছে যে হেসে কথা বলাও মানুষ ভুলে গেছে ।পাশে থাকা তো দুরের কথা সবাই নিজের ফায়দা খুঁজে বেড়ায়।



প্রাইভেট বা কর্পোরেট অফিসগুলোতে হিউম্যান রির্সোস ডিপার্টমেন্টের নিকটই ষ্টাফদের কর্মপ্রতিফলনের প্রতিবেদন মুল্যায়নের মাপকাঠি বিদ্যমান। মানবসম্পদ বিভাগই উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট কর্মকর্তা কর্মচারীদের মুল্যায়ন প্রতিবেদন বছরান্তে বা অর্ধবার্ষিকী পিরিয়ডে উপস্থাপন করে। যার উপর ভিত্তি করে ম্যানেজম্যান্ট অধস্তনদের প্রমোশন ডিমোশনের স্কেল নির্ধারন করে। কিন্তু প্রশাসনের ধারনারও বাইরে মানব সম্পদ বিভাগ তাদের অফিস স্টাফদের কতোটা অবমুল্যায়িত করে। এখানে নিয়োগে ঘুষ প্রথা, মুল্যায়নে ব্যক্তিস্বার্থ দেখা হয়। সত্যিকারে যাদের প্রমোশন হওয়ার কথা ঠিক মানব সম্পদ বিভাগের বিভাজনের কারনে তারা অবমুল্যায়িত থেকে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে মুল্যায়নের মাপকাঠি উঠানামা করছে। অতচ এ বিভাগের একমাত্র কর্তব্য হচ্ছে কর্পোরেট হাউজে কর্মরত সকলকে সম্পদ বিবেচনা করে সেই সম্পদের সর্বোচ প্রয়োগ ঘটানো। কিন্তু একচোখা নীতির কারনে অনেক মেধা প্রবঞ্জনার শিকার হচ্ছে। যা ম্যানেজমেন্ট গুনাক্ষরে বুঝতে পারছেনা। এই চিত্র দেশের ৯০ ভাগ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান।



বাহ্যিকভাবে ইন্টেরিওর ডেকোরেশন, অফিসের চাকচিক্য আলাদা আমেজ যোগ করলেও ভিতরটা বেশ ফাকাই থেকে যাচ্ছে। মানব সম্পদ বিভাগ সম্পদ বিনষ্ট করছে। ওয়েস্টার্ন কালচারে কর্পোরেটগুলোতে মানব সম্পদ বিভাগ সত্যিকার অর্থেই এমপ্লয়িদের জন্য কল্যাণকর কর্ম সম্পাদন করছে। যা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ওয়েল রান বলে যে শব্দ রয়েছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়নে সাহায্য করছে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় তা একটু ভিন্নভাবেই চোখে পড়ে। এখানে মানব সম্পদ বিভাগের রোষানলে পড়ে অনেক মেধাবি এমপ্লয়ির করুন অবস্থার কথা শুনা যায়। তাই এ বিভাগ নিয়ে অনেকের মাঝে ভয় ভীতি রয়েছে।





মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০২

রূপস আমীন বলেছেন: ভাল লিখছেন। সুন্দর কথা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.