নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিকিৎসার মান সন্তোষজনক না হলে যাদের মোটামুটি সামর্থ্য আছে তারাও সম্পূর্ন স্বস্তিতে থাকে না। কেউ যায় ইন্ডিয়া-সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড কেউবা বারডেম-পিজি-ডিএমসি-সোহরাওয়ার্দী, কেউবা এ্যাপোলো-স্কয়ার-ল্যাবএইড।শুধু বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর সব দেশেই চিকিৎসা হয় প্রাইভেট ,সরকারী আর পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে তৈরী হাসপাতালগুলোতে। কিছু এনজিও যেমন-লায়ন-এর মত কিছু প্রতিষ্ঠানও অনেক সময় ভাল সার্ভিস দেয়। এনজিও টাইপের চিকিৎসা ভারতের মাদ্রাজে চিকিৎসার খরচ কমায়ে দিয়েছে। প্রচুর টাকা দিয়েও ভাল সাভিস পাওয়া যায়না।রোগীর পেটে কাপড়,কাচি,আন্দাজে বিল বানানো, সামান্য ব্লাড প্রেসার মাপার পর ২৫০০ টাকা বিল দেয়া ইত্যাদি আমাদের দেশের নামকরা হাসপাতালগুলোতে দেখা যায়। আমাদের দেশে ডাক্তার, নার্স,ঔষধ কম্পানী, বিভিন্ন ল্যাব,ক্লিনিক সবাই মিলে একটা বিশাল সিন্ডিকেটের সৃষ্টি করেছে। ফলে কোথায় যাব আমরা?
যখন রাত সাড়ে ১১টার টার সময় বখতিয়ার ও তার বন্ধুসহ (বি নেগেটিভ রক্তের ডোনার) ডিএমসি হাসপাতালে পৌঁছলাম দেখলাম প্রচুর রোগী।সরকারী এহাসপাতালটিতে তিল ধারনের জায়গা নাই। এত রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করা তাদের পক্ষে সম্ভব না হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে সরকার ও কতৃপক্ষ আন্তরিক হলে সামথ্য বাড়িয়ে মান কিছুটা বাড়ানো যেতে পারত। জনবহুল দেশগুলোতে এরকম হবে। ভারতেও তাই । ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান চিকিৎসার ভিন্ন ট্রেন্ড সৃষ্টি করতে পেরেছে। বাংলাদেশে সম্পদের স্বল্পতার কারণে তা অসম্ভব তবে চিকিৎসার বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি তদারকি ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি করতে পারলে এই সমস্যার সমাধান করা কিছুটা হলেও সম্ভবপর হবে ।
ডাক্তারগন যেভাবে বিভিন্ন টেস্টের রিপোটের উপর পূণ ঈমান এনে রোগীর রোগ নির্ণয় করেন তাতে আমি শংকিত। কারণ এক্সরে, সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার মেশিন চালানোর জন্য বেতন কম দেয়ার আশায় অশিক্ষিত অথবা কম শিক্ষিত মানুষকে রাখা হয়। ডাক্তারের ভুল ঔষধ, অপারেশনের ফলে, ক্ষতি হলে, মামলা করা যায় তবে রোগীর যে ক্ষতি হয় তা অপূরণীয়। পৃথিবীর বহু দেশেই ডাক্তারদের অবহেলা, ভুল চিকিৎসার কারনে ক্ষতিপূরন দিতে হয়েছে, জেল যেতে হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এটা সচরাচর কম দেখা যায়। এদেশে প্রায় সব ডাক্তারগণ চাকুরী-প্র্যাকটিস দুটোই করে পৃথিবীর অন্য কোন দেশেই এই ধরনের উন্মুক্ত সুযোগ দেয়া হয়না। আমার মনে হয়, এই সেক্টরের সাথে সম্পৃক্তদের দায়িত্ব জ্ঞান ও মানবিক বোধ সদাজাগ্রত রাখাটা খুব বেশি জরুরী।
আমাদের অনেকেরই ধারণা একজন ডাক্তার ছাড়া চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে অন্যদের মাথা ঘামাবার দরকার নেই। কিন্তু ডাক্তার ডিগ্রী প্রাপ্তরা মানুষকে চিকিৎসা করার লাইসেন্স পান বলে তার পরামর্শ নিভুল হবে এমনটা বলা যায়না। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কিছু ঔষধ কিনে খাওয়া এবং পরামর্শের আলোকে কিছু টেস্ট করানোই সবকিছু নয়। ডাক্তার সমাজে খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারণ বেশীর ভাগ মানুষেরই মৃত্যুর সময় বা মৃত্যু ঘোষনা করার সময় ডাক্তারের দরকার হয়। এখন কথা হচ্ছে সব ডাক্তার সমান না। বাংলাদেশ বর্তমানে সরকারী ভাবে ও বেসরকারী ভাবে ডাক্তারী পড়ার ব্যবস্থা আছে। যারা সরকারী মেডিক্যাল কলেজে পড়ে আর যারা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ে সবার দক্ষতা-যোগ্যতা-জ্ঞান সমান হয় না।
মালিক, চিকিৎসকরা মেডিকেল প্যাকটিস, প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২’ না মেনে রোগীদের থেকে ইচ্ছামতো ফি আদায় করছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের নাগরিকদেরকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করাসহ জীবন ধারনের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ [আর্টিকেল ১৫(ক)] এবং জনগণের পুষ্টিমান বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন নিশ্চিত করা [আর্টিকেল ১৮(১)] রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। এখন বাংলাদেশ সরকার যদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে সদা সচেষ্ট থাকেন এবং সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সত্যিকারাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হন তবে সকল নাগরিকের সুচিকিৎসা পাবার সম্ভাবনাটা কিছুটা হলেও বাড়বে।কিন্তু কে কাকে নিয়ে ভাবে! কে রাখে কার খবর!
সরকার অনুমোদিত ও অননুমোদিত অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো অধিক ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় এসব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে নিম্ন আয়ের মানুষ তেমন সেবা পাচ্ছে না। অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অধিক অর্থ আদায়, প্রতারণা, ভুল চিকিৎসা এবং জবাবদিহি ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ আছে। চিকিৎসা ফি, বেড ও কেবিন ভাড়া, অপারেশন, প্যাথলজি টেস্টের ফি ইত্যাদিও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করছে। নতুন প্রযুক্তি, আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনা খরচের নামে তারা চিকিৎসার খরচ বাড়াচ্ছেন। তাদের ব্যবসায়িক নির্মম মানসিকতার বলি হয়ে জিম্মি রোগীরা নিঃস্ব হচ্ছেন, অনেকে ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। একই চিকিৎসার ফি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভেদে ভিন্ন। সরকারি নীতিমালার তুলনায় ফি কোথাও শতগুণ, কোথাও হাজারগুণ, আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে কয়েক হাজারগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ব্যর্থতার কারণে দেশের শতকরা ৬৮ ভাগ লোক বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।
রোগী ভর্তি ফি, শয্যার ভাড়া একেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একেক রকম। এখানে সরকারি নীতিমালা অবহেলিত, মালিকের ইচ্ছেমতো তা আদায় চলছে। ল্যাবএইডে শয্যার ভাড়া দৈনিক ১ হাজার ৮শ’ থেকে ৫ হাজার, স্কয়ারে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার এবং এ্যাপোলোতে ২ হাজার ৫শ’ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। এসব হাসপাতালে রোগীকে ভর্তির আগে শয্যার মান অনুযায়ী টাকা জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রেও আছে ভিন্নতা। স্কয়ারে শয্যা পেতে ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার, ল্যাবএইডে ১০ হাজার, পপুলারে ৫ হাজার আর এ্যাপোলোতে লাগে ৩০ হাজার টাকা। স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভেদে পরীক্ষার ফিও ভিন্ন। আলট্রাসনোগ্রাম করাতে ল্যাবএইডে ১ হাজার ২শ’, স্কয়ারে ১ হাজার ৫শ’ টাকা, কমফোর্টে লাগে ১ হাজার ৩শ টাকা। ইটিটি করতে স্কয়ারে ২ হাজার ২শ’, ল্যাবএইডে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। এভাবে সব চিকিৎসার ফিও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভেদে ভিন্ন। রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও অন্য এলাকার সাধারণ বেসরকারি হাসপাতালে এ পরীক্ষা করাতে লাগে ২শ থেকে ৩শ টাকা। অভিজাতের তুলনায় সাধারণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষার খরচ অনেক কম।
দেশের অধিকাংশ বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নামসর্বস্ব। সেগুলোতে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, অস্ত্রোপচার কক্ষ (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত), চিকিৎসার জরুরি যন্ত্রপাতি, ওষুধ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ইত্যাদি নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, দেশে বৈধ ২ হাজার ৬০৮টি আর অবৈধ আছে ৫ হাজার ১শ‘ ২২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা ব্যবসার শিকার হচ্ছেন অসহায় রোগীরা। পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলোর দেশে প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা করছে না। বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো ’৮২ সালের অধ্যাদেশ ৩-এর ধারা অনুযায়ী ফি নেয় না। আইনে উল্লেখিত ফি’র তুলনায় শতগুণ, এমনকি কয়েক হাজারগুণ বেশি নেয়া হয়। যেমন, গলব্লাডার অপারেশন ফি সাড়ে ৩ হাজার ও অ্যাপেনডিক্স অপারেশন খরচ ১ হাজার ৬শ’ টাকা। ঢাকার যে কোনো হাসপাতালে গলব্লাডারে কমপক্ষে ৩০ হাজার ও অ্যাপেনডিক্স অপারেশনে ২৫ হাজার টাকা লাগে।
’৮২ সালের অধ্যাদেশে ডাক্তারের ফি ২০ থেকে ৪০ টাকা। রোগীর বাড়িতে গেলে ফি হবে ৪০ থেকে ৮০ টাকা। পদবি অনুযায়ী এর মধ্যেই ফির পরিমাণ নির্ধারণ হবে। আইন অমান্য করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, ছয় মাসের জেল বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। অথচ ঢাকার বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যে কোনো পর্যায়ের চিকিৎসকের ফি কমপক্ষে ৫শ’ টাকা। অভিজাত হাসপাতালগুলোতে কারও হাজার টাকা, অনেকের ফি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। আইন না মানলেও এজন্য কোনো চিকিৎসককে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএমডিসি’র শাস্তি পেতে হয়নি। চীন, তাইওয়ান, আমেরিকা, জার্মানি, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফুড সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে বাংলাদেশে আমদানি হচ্ছে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ। এসব নকল, ভেজাল ও নিষিদ্ধ ক্ষতিকর ওষুধ গ্রহণ করে মানুষ সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরো বেশি অসুস্থ হচ্ছে, এমনকি বহু ক্ষেত্রে জীবনও দিচ্ছে।
নকল ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ গ্রহণের ফলে শরীরে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়ার কারণে অনেক সময় নানা ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দেয়। ওষুধ যখন সেবন করা হয় তখন বোঝার উপায় থাকে না ওষুধটি নকল বা আসল। ওষুধ সেবনের পর কাংখিত ফলাফল পাওয়া না গেলে রোগী ভাবে তার রোগ নির্ণয় ঠিক হয়নি। তখন রোগী অন্য ডাক্তারের কাছে যায়, বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে গিয়ে আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হয়। নকল ভেজাল ওষুধের কারণে শরীরে কোন বিষক্রিয়া বা ক্ষতিকর অবস্থার সৃষ্টি হলে তাকে ওষুধের এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করে রোগীকে অন্য ওষুধ প্রদান করা হয়। মূল দোষী সেই সকল ভেজাল ওষুধটি বরাবরই দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়। অনেক ক্ষেত্রে নকল ভেজাল ক্ষতিকর ওষুধের কারণে কারো স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে বা মৃত্যু হলে দোষ হয় রোগের, নতুবা ডাক্তারের অথবা হাসপাতালের। আমরা খুব কমই ভাবি নকল ভেজাল, নিম্নমানের ওষুধের কারণে বিশ্বের অধিকাংশ রোগী মারা যায়। আমাদের দেশের প্রায় সব বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজস্ব ওষুধের দোকান রয়েছে। এসব ওষুধের দোকানে অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট বা চিকিৎসক নেই। অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ ব্যবহারের পর লেবেল, ওষুধের কৌটা বা শিশি, মোড়ক, ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ বা গ্লাভস ব্যবহারের পর এগুলো রিপ্যাক করে বাজারজাত করে।
যখন মানুষ কোন রোগে আক্রান্ত হয় তখন মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে যায়, পায় না নির্ভরতাও সেই সুযোগে টাকা হাতিয়ে নিয়ে চরম অবহেলার মধ্যে রোগীকে রাখে। ডিএমসি হাসপাতালের ভিতরের পরিবেশ দেখলে সেখানকার স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। হাসপাতালগুলো প্রতিদিন পরিস্কার করা হলেও ঠিকমত দেওয়া হয়না সেভলন বা এন্টিসেপটিক, টয়লেটগুলোতে ব্যবহার করা হয় না কোন জীবানুনাশক বা দুর্গন্ধনাশক কোন কিছু। রোগী ভর্তির ক্ষেত্রেও দেখা যায় সিট থাকতেও টাকার জন্য বেডে দেওয়া হয় না বা বেডে দেওয়া হলেও অবহেলা করা হয়। জরুরি রোগীর সেবায় যদি সময়ক্ষেপন করা হয় তবে জীবনের নিরাপত্তা থাকে না। ডাক্তার থাকা সত্বেও আসতে দেরি অথবা অবহেলা, দালালদের প্রতাপে আর্থিক হয়রানি-চরম বিড়ম্বনা তৈরি করে।
ডিএমসির হাসপাতালেও জরুরি পরীক্ষা করানোর সরঞ্জামের প্রচুর অভাব রয়েছে বা থাকলেও তা ব্যবহারের মত জনবল তৈরি করা হয়নি বলে মনে হল। পিজিতে রক্তের স্যাম্পল নিয়ে যাবার পর সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন জানালেন ডিএমসির হাসপাতালে ঐ পরীক্ষা করার উপকরণও আছে এবং অভিজ্ঞ লোকও আছে। তাহলে কেন হয়রানির শিকার হতে হবে রোগী কিংবা তার স্বজনকে? ডাক্তারদের অপেশাদার মনোভাব সত্যি ভোগান্তি বাড়ায়। সরকারি হাসপাতালের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে চায় না। একদিন গিয়ে সারা মাসের উপস্থিতি দিয়ে আসে । সারা মাস ঐ অঞ্চলের জনসাধারন চিকিৎসা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় ।
প্রাইভেট ভাবে গড়ে উঠা ক্লিনিক বা মেডিকেল হাসপাতালে মানুষ সাধারন জ্বর বা মাথা ব্যাথা নিয়ে গেলেও যতগুলো সম্ভব টেষ্ট করিয়ে প্রচুর পরিমান টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। কিছু কিছু হাসপাতালের সাথে শহরের বড় বড় হাসপাতালগুলোর যোগসাজস থাকে এবং এখানকার রোগীগুলো ওখানে পাঠালে এরাও কমিশন পায়। খুব অস্বাভাবিক রোগী এখানে গেলে তাড়াতাড়ি ছেড়ে না দিয়ে বরং কিছুক্ষন চিকিৎসা দিয়ে টাকা রেখে রোগীকে ছেড়ে দেয়। যারা সন্তান প্রসবের কাছাকাছি সময় এসব ক্লিনিকে যায় তাদের বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে কোন কোন সময়ে সময়ের আগেই সিজারিং করিয়ে ফেলানো হয়। যাতে রোগী ছুটে না যেতে পারে । এমনও বলা হয় যে বাচ্চা উল্টে গেছে বা বাচ্চার পানি স্বল্পতা দেখা দিয়েছে ইত্যাদি।
বাংলাদেশের নাগরিকরা স্বাস্থ্য সেবার পিছনে অর্থ ব্যয় করছেন ঠিকই, কিন্তু পাচ্ছেনা মানসম্মত সেবা৷ বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬৮০টি৷ আর বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক আছে ৩,৪৩৫টি৷ রোগ নির্ণয়ের জন্য বেসরকারি ডায়াগনিস্টিক সেন্টার আছে ৭,২৯৩টি৷ এসব হাসপাতাল বা ক্লিনিককে ঘিরেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসার কাজ চলে৷ বলা হয়ে থাকে, ১০ হাজার লোকের জন্য আছে ৪টি বেড৷ ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৮২’ অনুযায়ী যেকোনো ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিকেল ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স (টিআইএন) ছাড়পত্র, প্রতিষ্ঠানের শয্যাসংখ্যা অনুসারে প্রকার, বর্গফুট অনুসারে প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ, ইনডোর, আউটডোর ও ভৌত সুবিধাদি-জরুরি বিভাগ, ওটি, ওয়াশরুম, লেবার রুম, অপেক্ষাকক্ষ, অফিসকক্ষ, প্রশস্ত সিঁড়ি, জেনারেটর, পোস্ট অপারেটিভ রুম, ইনুস্ট্রমেন্ট রুম, অভ্যর্থনা রুম, স্ট্যাভিলাইজার, চেঞ্জিং রুম, নার্সদের ডিউটিকক্ষ, অস্ত্রোপচার কক্ষের সুবিধা (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, ওটি টেবিল, সাকার মেশিন, জরুরি ওষুধের ট্রে, অক্সিজেন, ওটি লাইট, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ডায়াথার্মি মেশিন, রানিং ওয়াটার, আইপিএস), যন্ত্রপাতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা, সার্বক্ষণিক ডাক্তার-নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের নাম-ঠিকানা, যোগ্যতার সনদপত্র, নিয়োগপত্র, জরুরি অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি ও ওষুধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এ্যাম্বুলেন্স থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠান কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। বৈধ ও অবৈধভাবে গজিয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশতেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও টেকনিশিয়ান এবং যন্ত্রপাতি নেই। যাচাই-বাছাই ছাড়া এ ধরনের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ফলে সাধারণ রোগীরা চরমভাবে বিভ্রান্ত ও ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। সুচিকিৎসার পরিবর্তে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সেবা নিতে এসে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। আবার প্রতিটি ক্লিনিকে একই ডাক্তারের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগীদের আকৃষ্ট করে সেবার নামে প্রতারণা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
দেশে বর্তমানে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ইতিমধ্যে ৪৫৯ টি হাসপাতাল রয়েছে এবং জেলা, বিভাগ ও রাজধানী মিলে আরও ১২৪টি হাসপাতাল রয়েছে এবং এ হাসপাতালগুলোতে সর্বমোট ৪১,৬৫৫টি বেড রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রসারে রয়েছে ২১টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সব মিলিয়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় ৯২,৯২৭ জন জনবল কর্মরত রয়েছে। এছাড়াও সরকার সম্প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ১২,৯৯১ জন কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ দিয়েছে। সরকারের পরিকল্পিত ১৮,০০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১১,৮১৬টি চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ও জনবল নিয়োগও বেড়েছে ক্রমাগতভাবে। বর্তমানে মোট রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের শতকরা ৬৮ ভাগ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত। বেসরকারি উদ্যোগে দেশে গড়ে উঠেছে ২,৯৬৬ টি বেসরকারি রেজিষ্টার্ড হাসপাতাল/ক্লিনিক। যদিও রেজিষ্ট্রেশন বা সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চলছে আরও অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক। ইতিমধ্যে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৫৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ১৪টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, ৮৩টি বেসরকারি হেল্থ টেকনোলজি ইন্সটিটিউট। যদিও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বের হওয়াদের শিক্ষা-দক্ষতার ব্যাপারে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যূরোর এক গবেষণায় দেখা যায় যে, বিভিন্ন রোগ ও স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ ও সেবা নেবার জন্য বাংলাদেশের মানুষদের শতকরা ২৩.৪ ভাগ ওধুধের দোকান বা ফার্মেসিতে যায়, শতকরা ১৯.৭ ভাগ মানুষ পরামর্শ ও ওধুধের জন্য গ্রাম্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হন, শতকরা ১৬.২ ভাগ মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এমবিবিএস বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেন, শতকরা ৯.০ ভাগ মানুষ প্রাইভেট ক্লিনিকে যায়। অপরপক্ষে শতকরা ১২.১ ভাগ মানুষ উপজেলা হাসপাতাল, শতকরা ৯.০ ভাগ মানুষ জেলা হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায় এবং শতকরা ৪.১ ভাগ মানুষ সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক বা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যায়।
আইসিডিডিআরবি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় যে শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যায় এবং মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ মানুষ শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যায়। যদিও বাংলাদেশে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও রাজধানী পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবাদানের জন্য পর্যাপ্ত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাদান কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে ও বহু দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখনও দেশের ৪৩.১% মানুষকে কেন ফার্মেসী ও ডিগ্রীবিহীন ডাক্তারের কাছ থেকে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধের ব্যবস্থাপত্র নিতে হচ্ছে তা বিবেচনার দাবি রাখে।
বাংলাদেশে প্রতি ১০০০ জন মানুষের মধ্যে বিগত ৯০ দিনের অসুস্থ্যতার ইতিহাস নিয়ে হিসাব করলে দেখা যায় যে গড়ে ১৭২ জন মানুষ অসুস্থ্য থাকে। ঐ গবেষণায় আরও দেখা যায় যে, মানুষ একবার রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য হলে গড়ে ৫০০ টাকার বেশি খরচ করতে হয়। তাই হিসাব করে দেখা গিয়েছে যে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর একবার কেউ অসুস্থ্য হলে তার চিকিৎসা ও ওষুধ খরচ বাবদ পরিবারের মোট আয়ের শতকরা ৪০ ভাগ খরচ হয়ে যায়। তাই দেখা যাচ্ছে রোগাক্রান্ত হলে একদিকে যেমন একজন আয় করতে পারছে না অন্যদিকে রোগের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে অর্থাভাবে খাবার, ঘরভাড়া, সন্তানদের শিক্ষা খরচের মত মৌলিক মানবিক প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
হেলথ ওয়াচের একটি জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশে একজন চিকিৎসক গড়ে প্রতিটি রোগীর পেছনে সময় দেন মাত্র ৫৪ সেকেন্ড। সরকারি হাসপাতালে মাঝে মধ্যে ডাক্তারের দেখা পেলেও তারা রোগীকে ২/১ মিনিটের বেশি সময় দেয় না। সুমি যখন শারীরিকভাবে দুর্বল একজন রোগী আর তার সাথে থাকা ছোটবোন ও ভাবী যখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত স্বজন তখনও ডাক্তার দুর্ব্যবহার করেন। একজন চিকিৎসক তার প্রাইভেট চেম্বারে গেলে রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি মনোযোগ দেয় আর ভালভাবে স্বাস্থ্য সমস্যার কথা শুনে নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়ার পাশাপাশি ভালভাবে খোঁজ খবর নেন। সেই চিকিৎসকই রোগী ও তার স্বজনদের সাথে সরকারি হাপতালে খারাপ ব্যবহার করেন।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে লোকবল ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার যন্ত্রপাতির অভাব বা বিকল থাকার কারণে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ডিউটিরত ডাক্তারদের পাওয়া যায় না। আর এ কাজটি কখনো কখনো ওয়ার্ড বয় কিংবা সুইপার দ্বারা করা হয় বলে অভিযোগ আছে। ‘বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০০৪’ শিরোনামে বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৪২.০২ শতাংশ ডাক্তারই তাদের কর্মস্থলে অনুপুস্থিত থাকেন। আপগ্রেডেড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টারগুলোতে ৭৪% ডাক্তার উপস্থিত থাকেন না। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ২০১০ ও ২০১১ সালে সরকার ৪১৩৩ জন অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক)চিকিৎসকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে নিয়োগ দেয়। কিন্তু নিয়োগ পাওয়ার ১ বছরের মাথায় গ্রাম ছেড়ে শহরের হাসপাতালে চলে এসেছেন অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ ডাক্তার। তবে তারা বেতন ভাতা তুলছেন ইউনিয়ন থেকেই।
সরকারি হাসপাতালে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ক্রয়ের নামে বিপুল অর্থ লুটপাট হয়। ১৩০ টাকা দামের ইনজেকশন ৪৮০ টাকা, ৬২ টাকার ইনজেকশন ২০০ টাকা, ১২ টাকার ট্যাবলেট ২৫ টাকায় কিনতে হয়। এমনি করে ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে ১৬ ধরণের ইনজেকশন, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনেছে একটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ কর্ত্তৃপক্ষ। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ২,১৩,১৬,১০০ টাকা। বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট সার্ভে ২০০৮ এর ফলাফলে দেখা যায়, সরকারের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাত কর্মসূচির আওতায় যত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছিল, তার ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। ১৬ শতাংশ যন্ত্রের মোড়কই খোলা হয়নি। ১৭ শতাংশ নষ্ট। বাকি ১৭ শতাংশ ব্যবহারের উপযোগী হলেও ব্যবহার করা হয় না।
দেশে আকাশ ও স্থল পথে বিদেশ থেকে ব্যাপক হারে আসছে জীবন রক্ষাকারী নকল ও ভেজাল ওষুধ। নিম্নমানের এ সব ওষুধ সেবনে মৃত্যুও হার বেড়ে চললেও এই নিয়ে কোন মনিটরিং নেই। এই সকল নিম্নমানের ও ভেজাল ওষুধের মার্কেট গ্রামাঞ্চলে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের একজন অধ্যাপক বলে যে, শুধু ১৯৯২ সালে প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে তিন শতাধিক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ধরা পড়ে। তবে এদেশে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ কিংবা খাদ্যসামগ্রী খেয়ে কেউ মারা গেলে বিচারের কোন নজির নেই। ওষুধের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বা মৃত্যুর পেছনে কাজ করে মূলত: চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত এবং রোগী কর্তৃক গৃহীত ভুল ও ক্ষতিকর ওষুধ। ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের উৎকোচ বা বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অকার্যকর, ক্ষতিকর, অপ্রয়োজনীয় ওষুধের অতিমাত্রায় প্রেসক্রাইব করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।
সারা পৃথিবীতে দেশ হিসেবে আমেরিকায় জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। যার পরিমান প্রতিবছর জনপ্রতি ৭০০০ ডলার। আর কিউবা খরচ করে প্রতিবছর জনপ্রতি ২৫১ ডলার। আমেরিকা সরকারের স্বাস্থ্য খরচ কিউবা সরকারের চেয়ে ২৮ গুণ বেশি হওয়ার প্রেক্ষিতে মানুষের প্রত্যাশিত আয়ু বেশি হবার কথা। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভূত বিষয় হলো উভয় দেশের আয়ু প্রায় সমান। কিউবাতে ৭৭.৬ এবং আমেরিকাতে ৭৭.৫। কিউবাতে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৬.২ জন অথচ আমেরিকায় ৬.৮ জন। স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ে এই বিশাল বৈষম্য সত্বেও স্বাস্থ্য উন্নয়ন সূচকে আমেরিকা ও কিউবার তেমন কোন পার্থক্যই নেই। খরচের পার্থক্যের কারণ হলো আমেরিকায় “স্বাস্থ্য” হলো একটি লাভজনক পণ্য, বাজার যাকে নিয়ন্ত্রণ করে। অপরপক্ষে কিউবাতে “স্বাস্থ্য” হলো একটি অলংঘনীয় মানবাধিকার এবং এই অধিকার রাষ্ট্র তার স্বাস্থ্য কর্মসূচি বিশেষত প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য কর্মসূচীর মাধ্যমে নিশ্চিত করে।
এখন ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ছোট খাট স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়েও নামকরা হাসপাতালের বিখ্যাত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া, ব্যয়বহুল ডায়াগনস্টিক টেস্ট করানো, বিদেশি দামি ওষুধ সেবন করার এক ব্যয়বহুল ও বিলাসবহুল স্বাস্থ্য সংস্কৃতির চালু হয়েছে। অনেকেই ভূলে গেছে যে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার খেয়ে, নিরাপদ পানি পান করে, নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে, নিয়মিত ব্যায়াম করে, স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাস্থ্যকে সুন্দর ও নিরোগ রাখা যায়। সবাই ভাবছে স্বাস্থ্যকে সুন্দর রাখতে হলে অবশ্যই স্বাস্থকে ব্যয়বহুল ও বিলাসবহুল হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা করিয়ে, শরীরের নানা জটিল প্রযুক্তিনির্ভর দামি দামি মেডিক্যাল টেষ্ট করিয়ে, নিয়মিত দামি দামি ওষুধ খেয়ে সুস্থ্য রাখতে হবে। যার ফলশ্রুতিতে, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্র সকল মানুষের স্বাস্থ্যে বাসা বেধেছে নানা অসুস্থতা ও রোগ-শোক। এই ভগ্নস্বাস্থ্যই পরবর্তীতে পরিণত হয় স্বাস্থ্য বাণিজ্যের এক বিশাল শিল্পে। এ স্বাস্থ্য শিল্পকে ঘিরেই ডাক্তার, ক্লিনিক-হাসপাতাল ব্যবসায়ী, ওষুধ কোম্পানির মালিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক সবাই মিলে গড়ে তুলেছে এক বিশাল বাণিজ্য সাম্রাজ্য।
ঔষধ কখনোই নিরাপদ নয়।প্রায় সব ঔষধই অনাকাঙ্ক্ষিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।সরকারী হিসাবে বর্তমানে দেশে পাস করা ডাক্তার হয়েছেন ছত্রিশ হাজার। কর্মরত রয়েছেন বিশ হাজার। এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে মাত্র বাইশ ভাগ প্রশিক্ষিত ও পাশ করা ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ঔষধ কিনে খান। অবশিষ্ট আটাত্তর ভাগ রোগীই হাতুড়ে গ্রাম্য ডাক্তার, প্রশিক্ষণবিহীন ফার্মাসিস্ট, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শে চিকিৎসা এবং ঔষধপত্র সেবন করেন। ঔষধ কোম্পানীগুলিও তাদের লাভের জন্য এ্যান্টিবায়োটিক্স উৎপাদনে বেশী ব্যয় করছে যাতে আরও মুনাফা করতে পারে। তারা চিকিৎসকদের প্রভাবিত করে যাতে দামী ও সর্বাধুনিক এ্যান্টিবায়োটিক্স তাঁরা প্রেসক্রাইব করেন। এ্যান্টিবায়োটিক্সের মাত্রাতিরিক্ত, অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের ফলে এর ফলপ্রসূতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তবুও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কমতি নেই।
২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:১৯
আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। এটা ঠিক যে, স্বাস্থ্য-সূচকের কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হচ্ছে। দেখা যায়, স্বাস্থ্য সচেতনতা, রোগ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ, সেবা গ্রহণ, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। সরকারি সেবার পরিধি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি বিস্তৃত হয়েছে বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্যসেবা। ঔষধ শিল্পে বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। তারপরও একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, বিগত কয়েক দশকের অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র এখনও সন্তোষজনক নয়, সকল মানুষ বিশেষত দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনও স্বাস্থ্যসেবার বাইরেই রয়েছে বলা চলে। সরকারি, বেসরকারি বা বাণিজ্যিক - সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। তবু আশার আলো জাগে যখন দেখি একজন রিকসাওয়ালা তার সব উপার্জন দিয়ে হাসপাতাল চালায়, একজন বিদেশি দেশ ছেড়ে এসে আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবা দেয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে এসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিকা দান কর্মসূচী প্রনয়ন করে । এত মহানুভবতা আছে মানুষের মধ্যে! আবার এই মানুষই টাকার জন্য রক্তচোষা হয়- এ নেতিবাচক দিকটাকেতো আপনি অস্বীকার করতে পারেন না। আর ৮২-সালের আইনের কথার উল্লেখটা মূলত পাঠককে জানাতে, এজন্য নয় যে বর্তমান সময়েও সেটার পুরোপুরি বাস্তবায়নটাই যৌক্তিক মনে করা হয়েছে। তৎকালিন সময়ের উপযোগী সেটা ছিল, বর্তমান সময়ের চাহিদা-বাস্তবতার আলোকে সেধরনের আরেকটি আইন-নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। যাতে চিকিৎসাসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থ রক্ষা হয়, অমানবিক ও অযৌক্তিক কিছু না ঘটে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১১
অমিয় উজ্জ্বল বলেছেন: ৮২ সালের অধ্যাদেশে ডাক্তারের ফি ২০ থেকে ৪০ টাকা। রোগীর বাড়িতে গেলে ফি হবে ৪০ থেকে ৮০ টাকা। পদবি অনুযায়ী এর মধ্যেই ফির পরিমাণ নির্ধারণ হবে। আইন অমান্য করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, ছয় মাসের জেল বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।[/si
একজন বিবেকবান এবং যৌক্তিক মানুষ হলে এই ৮২ সালের রেফারেন্স(ভিজিট ২০-৪০ টাকা) আপনার টানার কথা না। বরং এই বিষয়টির আপডেট হওয়া উচিত বলে দাবি করার কথা। আপনার কথায় মনে হচ্ছে ৮২ সালের(?!) আইন না মেনে এবং ডাক্তাররা ২০ থেকে ৪০ টাকা ভিজিট না নিয়ে খুব অন্যায় করছে।
এক তরফা দৃষ্টিভঙ্গি যে কোন লেখার মান ও বিশ্বস্ততা নষ্ট করে।
হাজারো সীমা বদ্ধতা্র ভেতরেও এই দেশের ডাক্তার রা কাজ করে যাচ্ছেন। খোদ বৃটেনের সবচেয়ে অভিজাত মেডিকেল জার্নাল “ল্যান্সেট” গতজোনুয়ারী সংখ্যায় চিকিৎসাখাতে বাংলাদেশের উন্নতিকে বিস্ময়কর বলছেন। এত অল্প বরাদ্দে তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে এ উন্নতি তাদের ভাষায় “এমেজিং” । বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার এই মূহুর্তে জাপানের সমান সমান।
বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজাত ও ব্যায়বহুল হাসপাতালে হার্ট এর বাইপাস সার্জারী হয় ২.৫ লাখ টাকায়। হার্ট ফাউন্ডেশনে ১ লাখ ৩০ হাজার প্যাকেজ। পৃথিবীর কোন দেশে এটা সম্ভব না। এই দেশে কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু হয়েছিল। ৩ থেকে ৫লাখ টাকায় ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করা হচ্চিল। কিন্তু কিছু মূর্খ নিন্দুক যারা আবার সাংবাদিকতার লাইসেন্স পেয়ে বসে আছে , তাদের অপপ্রচারের কারণে এই কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট এখন বন্ধ।
নেতিবাচক দিকের পাশপাশি ইতিবাচক দিকগুলিও তুলে ধরা উচিত, তাহলেই একটা সমস্যার আসল চিত্র ফুটে উঠে।
বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে সমস্যা নাই এটা বলার কোন সুযোগ নাই। পৃথিবীর সব দেশেই চিকিৎসা খাত একই সাথে মানবিক এবং অর্থকরী।
আপনাদের স্বপ্নের দেশ/ আদর্শ দেশ গুলোতেও চিকিৎসাখাত অনেক বেশী ব্যায়বহুল এবং অনেক বেশী বানিজ্যিক। আমেরিকায় টাকা না থাকলে বা ইনসুরেন্স করা না থাকলে ইমারজেন্সী সেবাও মাগনা পাবেন না। পৃথিবীর খুব কম দেশেই বাংলাদেশের মত সস্তায় চিকিৎসা মেলে।