নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলামে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নিরূপিত হয় নৈতিকতা, নিষ্ঠা ও তাক্বওয়ার ভিত্তিতে। কাজেই যে কোন পেশার লোক সম্মানের পাত্র। কেননা সমাজ জীবনে তথা দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন পেশার লোকের মুখাপেক্ষী হই। এমনকি অধীনস্থ-মজুর, দাস-দাসী, শিক্ষক, জেলে, তাঁতী ও ব্যবসায়ী প্রত্যেকেরই সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কাজেই প্রত্যেক পেশাজীবির অধিকারের প্রতি আমাদের সমান যত্নবান হওয়া এবং সমান সম্মান প্রদর্শন করা উচিৎ। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব দৈহিক, মানসিক ও কৌশলগত শক্তি আছে। এগুলি কাজে বিনিয়োগ করার নাম শ্রম। শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনকারী ব্যক্তি অধীনস্থ। শ্রমের দ্বারা মানুষ তার ভাগ্যের দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম হয়। পৃথিবীর সব মহৎ কাজের পিছনে অজস্র মানুষের শ্রম জড়িত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘মানুষ যতটুকু চেষ্টা করবে, ততটুকু সে পাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শ্রম দিয়ে জীবিকার্জন করার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে বলেন, ‘কারও জন্য নিজ হাতের উপার্জন অপেক্ষা উত্তম আহার্য বা খাদ্য আর নেই। আল্লাহর নবী দাঊদ (আঃ) নিজ হাতের কামাই খেতেন’।
মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
শ্রমের কার্যসময় ঠিক করে দেয়া: হাজিরা খাতায় অফিস সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত লেখা থাকবে, অফিস এন্ট্রি টাইম অবশ্যই নয়টার মধ্যে থাকবে অতচ ডিপারচার টাইম থাকবে না, রাত নয়-দশটা পর্যন্ত কাজ করাবে এটাতো কোন যুক্তিসংগত আচরণ হতে পারেনা। অফিসে আসতে একটু দেরী হলে হলে নানান মৌখিক কৈফিয়ত তলব বা গালাগাল করা হয়। অপমান থেকে পার্সোনাল ফাইলে লাল দাগ পর্যন্ত লাগে। ইনক্রিমেন্ট বন্ধ ও বেতন কর্তন হয়। শেষে চাকুরিচ্যুতির চিঠিও ধরিয়ে দেয়া হয়। পর-পর তিন দিন বিলম্ব হলে একদিনের বেতন কর্তন করা হয়। অফিসে উপস্থিতি সম্পর্কে যেমন কড়াকড়ি আছে তেমন ঘোষিত কার্যসময়ের পরও কোনো কর্মী অফিস ত্যাগ করতে পারেন না। রাত নয়-দশটা পর্যন্ত অফিস চলে। কেউ রাত আটটায় যেতে চাইলে তাকে মালিকের অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি নেয়াও এক ঝক্কি। সেখানে নানাবিধ কৈফিয়ত দিতে হয়। সেক্ষেত্রে মৌখিক তিরস্কার সাধারণ মামুলি ব্যাপার। কেউ কোনো কারণে পূর্বানুমতি ব্যতিরীকে অফিসে যেতে না পারলে তিনি তার চাকুরি আছে কি না সে বিষয়ে আশঙ্কায় অস্থির থাকতে বাধ্য হন। কাটাতে হয় দুঃশ্চিন্তার সময়...আসলে চাকুরি আছে কি না? এসব সম্পূর্ণ অমানবিক ও নীতিবর্জিত।
উপযুক্ত মজুরির নিশ্চয়তা বিধান করা: বেকার সমস্যার প্রাবল্য থাকায় বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে উঁচু পদগুলোর ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা একটু ভালো হলেও নিচের পদের লোকদের জন্য তা অনেক অনেক কম। মালিকরা মেধাসম্পন্ন অধস্থনদের মগজ নিঙড়ে বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞান বের করে নিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব বলে চালিয়ে দেন। এসকল অনিয়ম অনেক প্রতিষ্ঠানের কমবেশি একটি সাধারণ কালচার। অধীনস্থদের নানান ওয়ার্কলোড দিয়ে প্রচণ্ডরকম চাপে রাখা হয় যাতে তারা অন্যদিকে মনোযোগ দিতে না পারে। তার কাজ-ধ্যান-জ্ঞান হবে মালিকের প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা, যাতে মালিক বড় বড় ‘রসগোল্লা’ খেতে পারেন। এই ওয়ার্কলোড ও কার্যসময়ের অতিরিক্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে কোনোরূপ ওভারটাইম নেই। একটি কাজ শেষ হতে না হতেই আরও কয়েকটি কাজ কাঁধে ফেলে দেয়া হয়। কোনো জটিল কাজ সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন করা হলেও মালিক কোনো ধন্যবাদ দেন না-কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন না বরং মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়ার জন্য তিরস্কার করা হয়। এর ফলে ওই কর্মী ওভারটাইম দাবি করতে সাহস পান না। কেননা ইউরোপের মতো সকালে চাকুরি ছেড়ে বিকেলে অন্য একটি জোগাড় করা এই সমাজে সম্ভব নয়। শুধুমাত্র বেকারত্ব থেকে মুক্তির জন্য অনেক অনেক তরুণ-তরুণী শত লাঞ্ছনা মুখ বুজে সহ্য করে বদমেজাজী মালিকদের অধীনে কাজ করে চলেছেন। এসব অন্যায় বন্ধ হওয়া দরকার। উপযুক্ত মজুরির নিশ্চয়তা বিধান করা প্রত্যেক মালিকের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
দুর্ব্যবহার ও পারফরমেন্সের যথাযথ মূল্যায়ন: অধীনস্থগণ কাজের ক্ষেত্রে কোনোরকম শারীরিক অসুস্থতা, কোনো কারণবশত বিলম্ব ইত্যাদির ব্যাখ্যা বা যুক্তি তুলে ধরতে চাইলে বলা হয় তর্ক-বিতর্ক করছে। কোন কাজ দেয়ার পর তা যত কষ্টেরই হউক এই কাজ আমার দ্বারা হবে না, এমন কথা কেউ বলতে পারেন না। ফলে দেখা যায়, অনেক বেকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও ঝাড় দেয়া থেকে শুরু করে মালামাল ওঠানামার কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কোনো পরামর্শ দিলেও যদি তা মালিকের আগে থেকেই নেয়া কোনো একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যায় তবেতো কঠিন পরিস্থিতির তৈরি হয়।মালিকরা অধীনস্থদের মেধা চুরি করে, সব কাজেই তিরস্কার করে, যাতে কোনো কর্মী নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস দেখতে না পায়। ভালো কাজের উপযুক্ত কোনো পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে মালিকেরা খুব অনুদার হবার ফলে অধীনস্থরা মানসিকভাবে হীনমন্যতায় ভোগে এবং নতুন কিছু সৃজনের ক্ষেত্রে উৎসাহি থাকে না। তাই দুর্ব্যবহার না করে ও অধীনস্থদের পারফরমেন্সের যথাযথ মূল্যায়ন করাটা মালিকের দায়িত্ব।
চাকুরির নিরাপত্তা বিধান করা: যখন কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন সেখানে কর্মরতদের চাকুরির নিরাপত্তা নিয়ে কোনোকিছু অতিরিক্ত বলার অপেক্ষা রাখে না। হঠাৎ চাকুরি চলে গেলে যিনি নতুন চাকুরির অন্বেষনে বের হন তার কষ্টটা মারাত্মক। কোনোভাবে ভালো চাকুরির সংস্থান করতে না পেরে একরকম পোড়খাওয়া মানুষ ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সন্ধানে আসেন। দু-একজন ভিন্নও হতে পারে। যে সকল ব্যক্তি চাকুরি পেলে ভেবে নেন যে, বেঁচে থাকার একটি সংস্থান হলো তাঁরা মূলত মুর্খের স্বর্গে বসবাস করেন। কেননা যতদিন অধীনস্থের দেয়ার আছে কিংবা মালিক যতদিন তার কাছ থেকে কিছু আদায় করে নিতে পারেন তা শুষে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। একটি ছুতো বের করলেই হলো। অনেক পোড়খাওয়া ব্যক্তি চাকুরির দুর্মূল্যের বাজারে কোথাও কাজে যোগ দিয়ে তা টিকিয়ে রাখার জন্য শত অপমান-লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মালিক পছন্দ না করলে তাকে অবশ্যই বিদায় হতে হয়। কেননা অনেক পুরোনো কাউকে রেখে তার বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও বর্ধিত বেতন-ভাতা দেয়ার চেয়ে ওই টাকায় দু-তিনজনকে নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী থাকেন অনেকে। এতে প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সংখ্যা বেশি দেখানো যায়। যার কারণে দেখা যায় যে, অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর নতুন নতুন লোকের নিয়োগ এবং পুরোনো লোকের বিদায়। এই প্রবণতা মানবাধিকার নয়, সামাজিকভাবে নানান সমস্যার সৃষ্টি করে চলেছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে মালিকদের চেহারা ও প্রকৃতি দোকান মালিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তবে এ কথাও সত্য যে, সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঢালাওভাবে শ্রম অধিকার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যায়ে সম্পৃক্ত নয়। তবে দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহী পরিষদ আত্মীয় স্বজনে পরিপূর্ণ, কর্মীদের মধ্যে অধিক সংখ্যক তারাই এবং আত্মীয় নন এমন ব্যক্তি তাদের দ্বারা নানাভাবে নিগৃহীত ও শোষণ-বঞ্চনার শিকার। চাকুরির নিরাপত্তা বিধান করা ছাড়া ব্যক্তির কাছ থেকে সর্বোচ্চ সাড়া পাওয়া অসম্ভব।
কাজের ধরন সম্পর্কে অবগত করানো: কাজ করে নেয়ার আগে অধীনস্থকে তার কাজের ধরন সম্পর্কে অবগত করাতে হবে। তাকে এক কাজে নিয়োগ করে তার অনুমতি ছাড়া অন্য কাজে লাগানো উচিত নয়। এমনকি তার সম্মতি ব্যতীত যেকোন কাজে নিয়োগ দান সমীচীন নয়। অধীনস্থ দিয়ে এমন ধরনের কাজ করানো আদৌ সঙ্গত হবে না যা তার জন্য অতি কষ্টকর বা সাধ্যাতীত। সর্বদা মনে রাখতে হবে অধীনস্থ মালিকের হাতের ক্রীড়নক নয়, বরং সে তারই সমমর্যাদার অধিকারী স্বাধীন এক সত্তা। অধীনস্থের পেশা পরিবর্তন বা কর্মস্থল পরিবর্তনে অধিকার থাকবে। এতে কারও হস্তক্ষেপ অর্থই তার স্বাধীন সত্তায় বাধা দানের শামিল। অধীনস্থশ্রেণী উৎপাদনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও মুনাফা লুটে নেয় মালিক শ্রেণী। রাসূলুল্লাহ (সা ঘোষণা করেন, ‘অধীনস্থদেরকে তাদের শ্রমার্জিত সম্পদ হতেও অংশ দিও। কারণ আল্লাহর মজুরকে বঞ্চিত করা যায় না’।
স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা: সমাজের সদস্য হিসাবে অন্যসব মানুষের ন্যায় অধীনস্থেরও মৌলিক অধিকার রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ক্ষেত্রে। এ অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা মালিকদের একান্ত কর্তব্য। অধীনস্থের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে এমন ধরনের কাজ তাদের নিকট হ’তে গ্রহণ করা অনুচিত। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ইবনে হাযম (রহঃ) বলেন, ‘মালিকের জন্য উচিৎ অধীনস্থের নিকট থেকে ততটুকু কাজ নেওয়া, যতটুকু সে সামর্থ্য অনুযায়ী অনায়াসে সুষ্ঠুভাবে করতে পারে। এমন কোন কাজ করতে তাকে বাধ্য করা যাবে না, যার ফলে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটে অথবা তার ক্ষতি হয়।
প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা: অধীনস্থদেরকে সুদক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা মালিক পক্ষের কর্তব্য। অনুরূপভাবে সমাজের অন্যান্য লোকের সন্তানের ন্যায় তাদের সন্তানরাও যেন উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে সে সুযোগ করে দেওয়াও কর্তব্য।
স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া: অধীনস্থরা যেন নিদ্রা ও বিশ্রামসহ সুস্থ থেকে মনযোগের সঙ্গে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করার দায়িত্ব মালিকের উপর বর্তায়। মালিকের পক্ষ থেকে এটি এক ধরনের অনুগ্রহ মনে হ’লেও প্রকৃতপক্ষে এটি তাদের প্রাপ্য অধিকার। ওমর (রাঃ) সরকারী কর্মচারীদেরকে নির্দেশ দিতে গিয়ে বলতেন, ‘সবচেয়ে ভাল এবং সৎ সে-ই যার অধীনস্থ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার সাথে থাকে। আর সবচেয়ে খারাপ সেই, যার অধীনস্থরা অভাব ও অশান্তিতে দিন যাপন করে।
ক্ষতিপূরণের নামে শোষণ না করা : শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করা: যে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে মুনাফা হবার সাথে সাথে লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল বা মালিকের সম্পদের ক্ষতি সাধিত হতে পারে। এতে অর্থপিপাসু ও আত্মসর্বস্ব মালিকগণ জঘন্য লালসার বশবর্তী হয়ে অধীনস্থগণের কাজ খারাপের অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণের নামে শোষণ করতে তৎপর হয়ে উঠে। এটা যথারীতি অধীনস্থের অধিকার হরণ। তাদের শ্রমের যতকিঞ্চিত অবমূল্যায়ন করা যেন না হয় সেদিকে মালিকগণের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ইমাম ইবনে হাযম (রহঃ) বলেন, ‘যাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অধীনস্থ হিসাবে রাখা হয়েছে, তার হাতে যদি ক্ষতি বা কোন কিছু নষ্ট হয়ে যায়, তবে ক্ষতি পূরণের দায়িত্ব অধীনস্থের উপর বর্তায় না। হ্যাঁ, সে যদি ক্ষতি করার ইচ্ছা নিয়ে তা করে তবে অন্য কথা। আর এই ব্যাপারে কোন সাক্ষী না থাকলে মজুরের কথাই গ্রহণযোগ্য হবে কসম সহ’।
নির্ধারিত পারিশ্রমিক না কমানো: অধীনস্থকে নির্দিষ্ট মজুরীর বিনিময়ে নিয়োগ করার পর, উৎপাদন ঘাটতি হলেও তাদের মতামত ব্যতীত সামান্যতম পারিশ্রমিক কম করা যাবে না। ঘাটতির লোকসান মালিককেই বহন করতে হবে।
বিপর্যয় সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকা: অধীনস্থগণের চাকুরীর নিরাপত্তা বিধান করা তাদের অন্যতম অধিকার হিসাবে গণ্য। মালিকগণ ইচ্ছামত অধীনস্থকে চাকুরীচ্যুত করবে কিংবা কথায় কথায় চাকুরী ছাড়ার নোটিশ দিবে এটা মানবতা বিরোধী। তাই অধীনস্থগণ যাতে নিশ্চিন্ত মনে চাকুরী করতে পারে এ ব্যাপারে নিয়োগকারী সংস্থা অভয়বাণী প্রদান করবে। অপরপক্ষে অধীনস্থগণ অসুবিধার কারণে চাকুরী ছাড়তে চাইলে সে সুযোগ তাদের দিতে হবে। এমনিভাবে নিয়োগকারী সংস্থার মারাত্মক অসুবিধা দেখা দিলে সে অধীনস্থের সাথে কৃতচুক্তি বাতিল করতে পারে। এই সকল পরিস্থিতিতে সবকিছু ন্যায়নীতির ভিত্তিতে হচ্ছে কি-না সে দিকে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় সতর্ক দৃষ্টি রাখবে মালিকগণ, যাতে কোন রকমের বিপর্যয় সৃষ্টি না হয়।
দাবী-দাওয়া পেশের সুযোগ দেয়া: অধীনস্থদের অর্থ-উপার্জনের একমাত্র পথ শ্রমের বিনিময় গ্রহণ। মালিকগণ অধীনস্থদের যে অর্থ প্রদান করে থাকে, এতে যদি তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ না হয়, তবে সে স্বীয় প্রয়োজন পূরণার্থে মালিকের নিকট দাবী-দাওয়া পেশ করার অধিকার রাখে। তাদের যথোপযুক্ত দাবী পূরণের কথা উল্লেখ করে মহানবী (ছাঃ) বলেন, ‘অধীনস্থদেরকে যথারীতি খাদ্য ও পোষাক দিতে হবে’।
অধীনস্থদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
অধীনস্থের ব্যাপারে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা হ’ল, ‘কোন ক্ষতি করা চলবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না’।অধীনস্থ নিজের উপর মালিকের কাজের দায়িত্ব নিয়ে এমন এক নৈতিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয় যে, এ কাজ সে অর্থ উপার্জনের জন্য করে না; বরং এর সাথে পরকালের সফলতা জড়িত বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। চুক্তি পূর্ণ করার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো। নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। অধীনস্থের দায়িত্ব চুক্তি মোতাবেক মালিকের প্রদত্ত কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে সম্পাদন করা। ইরশাদ হচ্ছে, ‘অধীনস্থ হিসাবে সেই ব্যক্তি ভাল, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত’ । অধীনস্থ দায়িত্ব গ্রহণের পর কাজে অলসতা প্রদর্শন করলে তার মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তাদের জন্য দুর্ভোগ, যারা ওযনে কম দেয়। ওযন নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং দেওয়ার সময় কম করে দেয়’(মুতাফফিফীন ৮৩/১-৩)। অধীনস্থ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দিবে এটা তার কর্তব্য। আর এ কর্তব্য সুচারুভাবে পালন করলে তার জন্য দ্বিগুণ পুণ্যের কথা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের দ্বিগুণ ছওয়াব প্রদান করা হবে। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হ’ল যে নিজের মালিকের হক আদায় করে এবং আল্লাহর হকও আদায় করে’।
ধর্মের দৃষ্টিতে মালিক ও অধীনস্থদের আচরণ
শুধু ইবাদত-বন্দেগী নিয়ে মশগূল না থেকে ছালাত শেষে জীবিকার্জনের জন্য পৃথিবীতে বের হয়ে পড়ার কথা আল্লাহ বলেছেন। তবে ন্যায় নীতির পথে চলতে হবে। নীতিহীন ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা অবশ্যই বন্ধ করা প্রয়োজন। এজন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া একান্ত জরুরি। নিয়মানুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্ধারিত কার্যসময় কঠোরভাবে অনুসরণ হওয়া উচিৎ। অফিস কার্যসময়ের পরে কাউকে কোনো কাজে বাধ্য করা নীতিবর্জিত। ওভারটাইম পদ্ধতির বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো কর্মীকে অতিরিক্ত কাজের ওয়ার্কলোড দেয়া অমানবিক। শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতসসহ সকল ধরনের শোষণ-বঞ্চনা, নিপীড়ন-নির্যাতন, চাকুরিচ্যুতি প্রবণতা বন্ধ হতে বাধ্য।যেকোন প্রতিষ্ঠানেরই একটি সুসাঞ্জস্যপূর্ণ পদসোপান ও যৌক্তিক বেতনকাঠামো নির্ধারণ হওয়া উচিৎ। পদসোপানের নিচে অবস্থানকারী কর্মীর বেতন-ভাতা অবশ্যই সর্বোচ্চ পদে নিয়োজিত ব্যক্তির বেতন-ভাতার এক তৃতীয়াংশের কম নির্ধারণ করা ন্যায্য নয়। সাপ্তাহিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ছুটির দিনে অফিসিয়াল কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও তা অনেক প্রতিষ্ঠান মানেনা। ওই সব দিন কার্যে বাধ্য করা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও নির্বাহী পরিষদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অধিক মাত্রায় ড্রপআউট কিংবা চাকুরিচ্যুতির মাত্রা বাড়াটা খুব ভাল লক্ষণ নয়।
ইসলামে মালিক-অধীনস্থ সম্পর্ক হবে পিতা-সন্তানের ন্যায়। নিজের পরম আত্মীয়ের মতোই অধীনস্থের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করা, পরিবারের সদস্যদের মতই তাদের আপ্যায়ন করা, অধীনস্থের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার প্রতিটি মুহূর্তের প্রতি মালিকের খেয়াল রাখা এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করা মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘অধীনস্থের শরীরের ঘাম শুকাবার আগেই তার মজুরী দিয়ে দাও’।ওমর (রাঃ) প্রয়োজন ও দেশের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি রেখে বেতন নির্ধারণ করে দিতেন। অনেক সময় অধীনস্থদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মালিকগণ উপযুক্ত মজুরী প্রদান না করে ইচ্ছামত মজুরী দেন এবং অধীনস্থদের প্রবঞ্চিত করেন ও ঠকান। অধীনস্থগণ নীরবে তা সহ্য করে থাকে। এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে। তার মধ্যে একজন হ’ল যে অধীনস্থের নিকট থেকে পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করে, অথচ তার পূর্ণ মজুরী প্রদান করে না’ অধীনস্থদের গুরুত্বপূর্ণ অধিকার কাজের সময় নির্ধারণ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অনেক সময় অধীনস্থদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মালিকগণ উপযুক্ত মজুরী প্রদান না করে ইচ্ছামত মজুরী দেন এবং অধীনস্থদের প্রবঞ্চিত করেন ও ঠকান। অধীনস্থগণ নীরবে তা সহ্য করে থাকে। এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে। তার মধ্যে একজন হ’ল যে অধীনস্থের নিকট থেকে পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করে, অথচ তার পূর্ণ মজুরী প্রদান করে না’ অধীনস্থদের গুরুত্বপূর্ণ অধিকার কাজের সময় নির্ধারণ।
অথচ সেই শেষক তারাই সবার আগে হজ্বের টিকিট কালোবাজারিতে বুকিং দেয়!!
মসজিদে সামনের কাতারে থাকে।!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ধর্মের লেবাসে চলছে অধর্ম!!