নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্দিত্বে হয়রানি, আমিত্বে পেরেশানি ও বিচ্ছিন্নতার সুর: ভালবাসার সন্ধান

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

ভালবাসার আহ্বান-প্রেমময় পৃথিবী গড়তে বন্ধুত্বের আহ্বান, ত্যাগের অনুভূতি সদা জাগ্রত রাখার আহ্বান, পরকে আপন করে তাকে নিজের চেয়েও অগ্রাধিকার দেবার আহ্বান, কল্যাণকামী ও শান্তিপ্রিয় হবার আহ্বান। ভালবাসা প্রকাশ পায় কখনো শ্রদ্ধায়, কখনো স্নেহে, কখনো আন্তরিক ব্যবহারে, কখনো উ অভিনন্দনে, কখনো পরের দু:খে ব্যথিত হওয়ায়,কখনো পরের আনন্দে মানসিক সুখ লাভে, কখনো মুখের হাসিতে, কখনো চোখের অশ্রুতে।যে ভালবাসতে পারে না সে প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। যে যত বেশি ভালবাসতে পারে সেই ততবেশি স্বার্থকতা লাভ করে। যে ভালবাসতে পারে না কোন শব্দেই তার সূক্ষানুভূতি জাগেনা, কোন দৃশ্যেই তার প্রাণচাঞ্চল্য আসেনা, কোন আকুল আহ্বানেই সে ব্যাকুল হয়ে পড়ে না। ভালবাসার প্রকাশ ঘটে কখনো চোখে, কখনো মুখে, কখনো কলমের কালিতে, কখনো সুরে, কখনো ভাষায়, কখনো ক্ষিপ্রতায়, কখনো দৃপ্ত পদচারণায়, কখনো উল্লাসে, কখনো নির্লিপ্ততায়। যে সমাজে হিংসা নেই শুধু ভালবাসা আছে, ঘৃণা করার মানুষ নেই শুধু ভালবাসার মানুষ আছে, কুটিলতায় ভরা মন নেই ভালবাসার মন আছে, ভালবাসার পরিবেশ আছে সে সমাজে স্বর্গসুখ বিরাজ করে।



যে মানুষের ভালবাসা ছড়িয়ে পড়ে মানুষ থেকে প্রকৃতিতে, বৈচিত্রময় জীবজগতে, প্রাণের উচ্ছাস ও আনন্দের মেলাবন্ধনে সে মানবিকতার উচ্চতর স্তরে অবস্থান করে। যেই স্তরে রুচিবোধের মূল্যায়ন আছে, সৃষ্টিশীলতার স্বীকৃতি আছে, বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা আছে, গতিশীলতার চর্চা আছে। যদি ভালবাসার কদর থাকে, ভালবাসার উপযুক্ত প্রয়োগ থাকে, ভালবাসার খাটিত্ব থাকে তবে ভালবাসার শক্তিই জগৎকে সুস্থ ও সুন্দরতম নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত করবে।যে মানুষগুলো ভালবাসা লাভের যোগ্য, ভালবাসতে সক্ষম, ভালবাসার প্রত্যাশী- তাদের মনে ভালবাসার প্রবল বেগ সকল সংকীর্ণতাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।



ভালবেসে যাওয়াটা যদি প্রতিজ্ঞা হয় তবে অন্যরকম এক পবিত্রানুভূতি হৃদয় মনকে আন্দোলিত করবে, কামনার মোহ দূরীভূত হয়ে স্বর্গীয় আলোতে অন্তরটা আলোকোজ্জল হয়ে ওঠবে, লোভ লালসা দূর হয়ে কৃতজ্ঞতাবোধ জাগবে ও মানসিক তুষ্টি লাভ হবে। সত্যিকারের ভালবাসায় অস্থিরতা দূর হবে, ধৈর্যর ও মানসিক শক্তি বাড়বে। আসলে ভালবাসাবোধ থেকে উৎসারিত দৃঢ়তার চূড়ান্ত পরিণতি সাফল্য ও বিজয়। আপনার ভালবাসা যত বেশি ব্যাপক হবে আপনি তত বেশি উদার হবেন, আপনার সহ্য ক্ষমতা ততবেশি বাড়বে।



জাগতিক কোন জীবনোপকরণই ভালবাসার মত অত দামি নয়। ভালবাসা সংগ্রামে, ভালবাসা সেবায়, ভালবাসা সাধনায়, ভালবাসা সৃষ্টিতে, ভালবাসা ত্যাগে। যৌক্তিক ও পবিত্র ভালবাসার সম্পর্কে অযাচিত হস্তক্ষেপ মারাত্মক রকমের বিড়ম্বনা বয়ে আনে। নিজেকে অতিমাত্রায় সেরা বা তুলনামূলক শ্রেষ্ট প্রমাণের চেষ্টায় মূলত: অহংকারী হবার পথকেই প্রশস্ত করে। ভালবাসায় প্রসারিত হৃদয়ে অতি পেরেশানি থাকবে না, হতাশাবোধ থাকবে না, অপ্রাপ্তির গ্লানি থাকবে না।ভালবাসাই পারে আপনাকে সাধারণ থেকে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ বানাতে, মহৎ থেকেও মহত্তর পর্যােয়ে উন্নীত করতে।



ভালত্ব কিংবা খাটিত্বও আক্রান্ত হতে পারে মূর্খদের দ্বারা কিংবা অশুভ শক্তির দ্বারা। তবে ভালবাসাতেই প্রাণের মুক্তি, মনের পুষ্টি ও বিবেকের সুস্থ বিকাশ।আপনি ভালবাসা শূণ্য হলেনতো মূল্যহীন হয়ে পড়লেন। ভালবাসাবোধের অভাব ঘৃণা ও হিংসার উদ্দীপক।এটা ঠিক আপনি ভালবাসলেও স্বার্থপরদের কাছে ঘৃণিত হয়ে ওঠতে পারেন।কারণ নিষ্ঠুরতায় অভ্যস্ত পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী তার বিপরীত বৈশিষ্টধারী কারো অস্তিত্বকে সহজে মেনে নাও নিতে পারেন।



ভালবাসা মানবিকগুণ সম্পন্ন মানুষের বড় শক্তি।ভালবাসতে পারার সক্ষমতা জগতের অন্যতম বড় যোগ্যতা।নিজে অন্যের ভালবাসা পাওয়া কিংবা অন্যকে ভালবাসতে পারা কোনটাই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভালবাসা অর্থপূর্ণ হয় যখন আবেগ ও বিবেকের সমন্বয় ঘটে, জ্ঞান ও সাধনার সমন্বয় হয়, ত্যাগ ও অর্জনে ভারসাম্য থাকে। সবার সবকিছু থাকা জরুরী নয় তবে ভালবাসার বোধ থাকাটা সবার জন্যই জরুরী।ভালবাসাপূর্ণ হৃদয়ই সূক্ষানুভূতি সম্পন্ন হৃদয়।কারো অর্থবিত্ত, পান্ডিত্য কিংবা ক্ষমতা- কোনটাই মূল্যবান হবে না যদিনা তিনি ভালবাসাপূর্ণ মনের মানুষ হন।



সুখ ও শান্তিময় পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ভালবাসাপূর্ণ হৃদয়ের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই।প্রবল প্রতাপশালী, ক্ষমতাশালী দাপুটে মানুষও নিজের শক্তি ও সামর্থ্যে গর্ব অহংকারী হয়ে অনেক নিষ্ঠুর কর্মও হাসিমুখে সম্পাদন করে যদি না তার হৃদয়টা ভালবাসাপূর্ণ না হয়।পানি, বৃক্ষ ও গুল্ম লতা শূণ্য মরুভূমির মতই শুষ্ক সে হৃদয়। ভালবাসা বান্ধব পরিবেশের জন্য স্বাধীনতা অপরিহায্য। ভালবাসারবোধ শূণ্য মানুষ প্রকৃত মানুষ নয়। ভালবাসা ছাড়া মানুষ সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে পারে না।



সেই নদী একটি মৃত নদী যেই নদীতে পানি নেই, সেই দেহ একটা মৃত লাশ যেই দেহে প্রাণ নেই, ভালবাসা ব্যতীত হৃদয় তেমনি অস্তিত্বহীন ও নিষ্ক্রিয়।ভালবাসা ছাড়া হৃদয় পতিত জমি কিংবা বিরান ঘরের মতো।মুখে ভালবাসি বললেই ভালবাসার সব হয়ে যায়না। ভালবাসা একটি অব্যহত প্রক্রিয়া। প্রাণের অস্তিত্বের বিলয় ঘটলেও অনেক সময় ভালবাসার অস্তিত্ব থাকে। বন্দিত্ব, নির্যাাতন, শক্তি ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রেমময় সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়না। বন্দিত্ব হউক শারীরিক কিংবা মানসিক, দাসত্ব হউক রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক, বঞ্চনা হউক সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক-সবই হয়রানিমূলক।



নিজের ভালটাই অন্যের উপর চাপানো, নিজের বোধ বিবেচনাকেই সবচেয়ে সেরা প্রমাণের চেষ্টা, নিজেকে উন্নত- রুচিশীল-সৃজনশীল-সৃষ্টিশীল ভেবে অন্যকে তুচ্ছ ও পশ্চাদপদ মনে করা, নিজেকে দোষ ত্রুটি ও ভুলের উর্ধ্বে মনে করে অপরের ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয়-নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা চরম আমিত্ববোধের প্রকাশ। যে নিজের আবেগ অনুভূতি, স্বপ্ন-ভালবাসা, ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা ও কর্মকে নিজের পরিসর ছাড়াতে পারেনি সে বৃহত্তর কল্যাণে নিবেদিত হবে কেমন করে? আমিত্ববোধ যাবতীয় সংকীর্ণতা ও নীঁচুতার সংমিশ্রণে সৃষ্টি। ফলে যে নিজস্ব গন্ডির বাইরেই বেরুতে পারেনি তাকে ব্যাপক কোন কর্মতৎপরতায় সরব পাওয়ার আশাটা দুরাশা ও দুরাকাঙ্খা মাত্র।আপনি যদি আপনার ‘আমিত্বকে’ ভুলতে না পারেন তবে অন্যের জন্যে নিজেকে বিলাতে পারবেন না।



যখন স্বেচ্ছাকৃত বা বাধ্যগত বন্দিত্বের হয়রানি থাকবে না, আমিত্বের পেরেশানি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া সম্ভবপর হবে তখন বিচ্ছিন্নতার সুরেও আপনি ভালবাসার মূর্ছনা খুঁজে পাবেন। দরুণ ভাষার জন্যে কিংবা দেশের ভালবাসায় যারা জীবন দিয়েছে তাদের প্রাণ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, রক্ত জমিনকে সিক্ত করেছে, অশ্রুস্ক্তি প্রিয়জনদের আহাজারি বাতাসে মিশেছে তবে তারা জাতির প্রেরণার অফুরন্ত উৎস হয়েছেন। তাদের ভালবাসা ততদিনই জীবন্ত থাকবে যতদিন সেই ভাষা থাকবে, সেই জাতি থাকবে।



বন্দিত্ব আর বন্ধ্যাত্ব এর মাঝে পার্থক্য আছে।বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয় অজ্ঞতার কারণে, মূর্খতার কারণে, অন্ধপ্রেম কিংবা অযৌক্তিক আবেগের কারণে। আর বন্দিত্ব আসে সামর্থ্যহীনতা, মুখাপেক্ষীতা, নির্ভরশীলতা ও অক্ষমতা থেকে। স্বক্ষমতার উন্নয়ন ছাড়া বন্দিত্ব ঘুঁচবেনা। বন্দিত্ব মানে শুধু কারাগারে থাকা নয় ঘরে থেকেও যদি নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন ক্ষমতা না থাকে, নিজের জান ও মালকে পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ না থাকে তবে সেটাও বন্দীত্ব। কারাগারের বন্দী নিজেকে বন্দী ভাবছেন অথচ যিনি হাউজকে সন্তুষ্ট করার জন্যে বাধ্য হয়ে মিথ্যা রিপোর্ট লিখছেন, উর্ধ্বতনকে রাজি খুশি করার জন্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রশংসা করছেন, নিজের মনের বিরুদ্ধে-বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কাজে বাধ্য হয়েও নিজেকে স্বাধীন ভাবছেন।যার নিজেকে নিজের মতো করে পরিচালনার ক্ষমতা নেই, নিজের সময়কে নিজের মনের মতো করে ব্যয়ের সামর্থ্য নেই, যার যোগ্যতা ও সামর্থ্য অন্যের স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করে সে মুক্ত স্বাধীন জীবনের প্রকৃত স্বাদ পাবে কেমন করে?



আর কাছে থাকা মানেই যে আন্তরিকতা-হৃদ্যতা-একতা-সংহতির বহি:প্রকাশ এমনটা নাও হতে পারে।দৃশ্যত বহু দূরে অবস্থান করেও কার্যছত মনের অনেক কাছাকাছি অবস্থান করা যায়। আবার বস্তুগত জগতে অনেক বেশি নিকটে থেকেও আত্মিক জগতে অনেক বেশি অচেনা-অজানা থেকে যেতে পারে।মানুষ স্বার্থের প্রয়োজনে, সমাজের চাপে, চাহিদা মেটানোর তাগিদে, উদ্দেশ্য হাসিলের অভিপ্রায়ে, বাধ্যবাধকতার কারণে নিকটে থেকেও চিন্তার অনৈক্য, দৃষ্টিভঙ্গিগত ভিন্নতা, জীবনবোধগত বিশ্বাসে বৈপরিত্যের ফলে মনো:জগতে বহু দূরে অবস্থান করতে পারেন।পরস্পরের সব সম্পর্কই ভালবাসার সম্পর্ক নয়। সম্পর্ক হয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে, পরিস্থিতির উন্নয়নের স্বার্থে; যা ইতিবাচকও হতে পারে আবার নেতিবাচকও হতে পারে।কিন্তু ভালবাসার সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক, সমন্বয়ের সম্পর্ক, সৃষ্টি ও বিকাশের সম্পর্ক।



ভালবাসার নির্দিষ্ট কোন আকার নেই, রুপ নেই, সীমানা নেই। ভালবাসার সম্পর্ক ছড়িয়ে পড়ে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে, পরিবার থেকে পরিবারে, জাতি থেকে জাতিতে, প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠানে, জড় থেকে জীবে, উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে, স্রষ্টা থেকে সৃষ্টিতে, এক জগত থেকে আরেক জগতে।যার ভালবাসার জগত যত বড় মানুষ হিসেবে সে তত বেশি বড়। যার ভালবাসা যত বেশি প্রসারিত তার চিন্তা-জ্ঞান-বিবেক ততবেশি শক্তিশালী। তাই জানা-বুঝা-মানার সমন্বয়েই জ্ঞানবান মানুষ ফলবান বৃক্ষের ন্যায় মূল্যবান হয়ে ওঠে।ক্ষুদ্র পরিসরে চর্চিত আইনের উর্ধ্বে ওঠে ঐশ্বরিক আইন তথা প্রাকৃতিক আইনকেও চর্চায় আনার সক্ষমতা অর্জন করে। এভাবেই সামর্থ্যে ক্ষুদ্র সীমাবদ্ধ মানুষও আকাশের মত বিশালতা, সাগরের মত উদারতা আর পাহাড়ের মত দৃঢ়তা নিয়ে বড় হয়ে ওঠে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাল লাগল +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.