নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী এমন এক মহাবির্পযয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি নেই ,আবার কখনো অতির্বষণ। শুষ্ক মৌসুমে মারাÍক খরা শস্যহানি; আবার প্রলয়ঙ্কারী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের পৌণ:পুণিকতা। ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে ঋতু বৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। একদিকে গ্রীষ্ম ও বর্ষা প্রলম্বিত হচ্ছে,অন্যদিকে শীতকাল সংকুচিত হচ্ছে। শরৎ ও হেমন্তের অস্তিত প্রায় বিলুপ্ত। পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে এর পেছনে রয়েছে জলবায়ুর পরির্বতন। এই যে ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাগরে নিুচাপ, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলাবদ্ধতা, অসময়ে বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর টেকসই উন্নয়ন ও মানবজাতির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বড় হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর Intergovernmental Panel on climate Change-IPCC “বিজনেস আজ ইউজুয়াল” পটভূমিতে হিসেব করে দেখিয়েছে যে ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা ৪.২ ডিগ্রী বাড়বে।
প্রতিদিনের গড় তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, আদ্রতা ও বারিপাতের তথ্যের ভিত্তিতে কোনো এলাকার যে অবস্থা প্রকাশ করা হয় তা হল Weather। এবং এই প্রাকৃতিক বিষয়গুলিরই ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়া অবস্থাকে Climate বলে। যেসকল প্রাকৃতিক Components দ্বারা আমরা আবহাওয়া বা জলবায়ুকে নির্দেশ বা নির্ধারণ করি; সেগুলি হল: বায়ুর Temperature, Pressure, Movement, Humidity এবং Precipitation। কিছু প্রাকৃতিক Factors রয়েছে যার দ্বারা নির্ধারিত হয় কোন স্থানের জলবায়ু কেমন হবে। সেগুলি হলঃ Latitudinal Location, Height of the place, Distance from the sea, Wind movement pattern, Ocean Current, Distance from the hills or the mountains, Slope of the place, Characteristics of the soil, Distance from the forest or the vegetation covered region ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যদিও মানুষের কর্মকান্ড দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। জলবায়ুর উপাদানগুলির পরিবর্তনই জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দেশক। জলবায়ু পরিবর্তন একটি Global Issue। সাধারণভাবে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তন যা প্রাকৃতিক ভাবে ঘটে তাকে Climate Change বলে।
জলবায়ুর পরিবর্তন এর নেতিবাচক দিক ভেবে মানব সভ্যতা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত। এ সমস্যাগুলিকে প্রাকৃতিক ও সামাজিক দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রাকৃতিক ভাবে আমরা যেসকল সমস্যার সম্মুখিন হতে পারি তা হলÑ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন, বন্যা হবার প্রবণতা বৃদ্ধি, খরার স্থায়িত্ব ও তীব্রতা বৃদ্ধি, স্থলে টর্নেডো এবং সমুদ্রে সামুদ্রিক ঝড় এর ঘটনা ঘটবার Frequency বৃদ্ধি, তাপ প্রবাহের তীব্রতা বৃদ্ধি, পানির Quality ও Quantity পরিবর্তন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, হিমবাহের গলন ইত্যাদি। আর আর্থসামাজিকভাবে পানি সংশ্লিষ্ট সম্পদের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে এবং মোটামুটি হারে তা বিভিন্নভাবে দেখা দিচ্ছেও বটে, পানি ব্যবহারের সাধারণ মান অবনতি (যেমন: নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের মানুষ বাজার থেকে বিশুদ্ধ পানি কিনে খাচ্ছে), কৃষি ও বনজ সম্পদ ভিত্তিক ক্ষতি, খাদ্য নিরাপত্তা, মানুষের স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত ক্ষতি, বসতির ক্ষেত্রে- অধিবাসীদের স্থানাস্তর এবং জীবিকার ক্ষতি, উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা, শিল্প-শক্তি, দুর্যোগ সাড়া ও উদ্ধার পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে নব নব জটিলতা সৃষ্টি হবারই কথা। আর তা যদি হয় কোন উন্নয়নশীল দেশের উপর তাহলে তার উচ্চমাত্রা সহজেই উপলব্ধির যোগ্য।
পৃথিবীর আবহাওয়ার গড় অবস্থার পরিবর্তন উন্নত বিশ্বের কর্মকান্ডের ফলেই ঘটছে। উন্নত বিশ্ব “জলবায়ু পরিবর্তন” বিশেষ করে “বিশ্ব উষ্ণায়ন” প্রক্রিয়ায় অন্যতম বড় দায়ী । পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মূল উৎস হলো কয়লা, পেট্রোলিয়াম, ডিজেলের মত জ্বালানি ব্যাবহার, বন নিধন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক শিল্পায়ন ইত্যাদি। অকেজো ও মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহনে ব্যবহুত জ্বালানি ভালভাবে নিঃশেষ না হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কার্বন-ডাই-অক্্রাইড নিঃসরিত হয়। মনুষ্যসৃষ্ট দূষণের কারণেই গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বনীকরণ ও মরুকরণের ফলে ভূমিতে প্রতিফলনীয়তা পরিবর্তন ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক সৌর শক্তি শোষণের পরিমাণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত সালফারের এরোসল মেঘমালাকে পরিবর্তিত করে। ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের কারণে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তরের পরিবর্তন জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। জলবায়ুর পরিবর্তনের গড় জলবায়ুর মাত্রা উন্নীত হবে। তবে প্রকৃতপক্ষে গড় নয়, আবহাওয়ার চরম ভাবাপন্নতাই ক্ষতি ঘটাবে বেশি। এতে ঘটবে প্রচন্ড খরা ও ঝড়, পরিণামে ঘটবে মৃত্যু। শিল্প বিপ্ল¬বের পর থেকেই বায়ুমন্ডলে তাপ ধরে রাখতে সক্ষম গ্যাস সমূহের পরিমান বাড়ছে। ফলে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বিজ্ঞানের ভাষায় একে Greenhouse Effect বলে। আর গ্রীনহাউজ প্রভাবের জন্য দায়ী গ্যাসসমূহকে গ্রীনহাউজ গ্যাস বলে। গত শতাব্দিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বেড়েছে ২৫%, নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমান বেড়েছে ১৯% এবং মিথেনের পরিমান বেড়েছে ১০০%। বিশ্ব উষ্ণায়ন, আবহাওয়ার ধরন এবং ঋতু বৈচিত্র পাল্টে দিচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ United Nations Framwork Convention on Climate Change (UNFCCC) অনুযায়ী- পৃথিবীর বিভিন্ন অভ্যান্তরীণ প্রক্রিয়া, বাহ্যিক শক্তি, যেমন-সূর্যালোকের ঘনত্বের তারতম্য এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণ অন্যতম। IPCC-International Pannel for Climate Change এর দাবি অনুসারে বর্তমান সময়টি হল গত ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ। IPCC এর ২০০৭ প্রতিবেদন সারাংশ হলঃ ২০ শতকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বেড়েছে ০.৬-০.২ ডিগ্রি সে.। এবং গত ৩০ বছরে প্রতি দশকে বৃদ্ধি হার হল ০.১৭ ডিগ্রি সে.।শেষ ৫০ বছরের উষ্ণায়ন মানুষের কর্মকান্ড দ্বারাই বেশী হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীন হাউজ গ্যাস তথা কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি। যদি গ্রীন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে বিশ্ব উষ্ণায়নও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এবং এ উষ্ণায়ন ২১০০ সালের মধ্যে ১.৪-৫.৮ ডিগ্রি.সে. এ পৌছবে। উন্নত বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানীর ফলে বায়ুদূষণ প্রতিক্রিয়ার ফলশ্র“তিতে ২০৬০ সালের পরে non melanoma skin ক্যান্সারের ঘটনা সংখ্যা শতকরা ৬ থেকে ৩৫ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্র সমতল বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বৃহৎ শহর ও উপকূলের উর্বর নিম্নাঞ্চল প্ল¬াবিত করে লক্ষ লক্ষ জনসাধারণকে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করবে। এটি বিরাট সংখ্যক Environmental Refugees তৈরি করবে খাদ্য ঘাটতি এবং তার প্রেক্ষিতে কিছু কিছু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও আর্দ্র অবস্থা Bacteria এবং অন্যান্য বিষাক্ত উৎপাদক, যেমন- ফাংগাস থেকে নি:সৃত বিষাক্ত পদার্থ (Aflatoxins) বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তার ফলে খাদ্য দূষিত হয়ে নষ্ট হওয়ার পরিমাণ সম্ভবত বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে চাষাবাদের সময়কাল সংকূচিত হতে পারে এবং উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে। পৃথিবীর উষ্ণতাবাড়ার নেতিবাচক প্রভাব বনাঞ্চলে পড়লে প্রাকৃতিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে, প্রাণীকূল, ভূমি, পানি ইত্যাদির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। উচ্চহারে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও অপচয় এবং এরোসল ¯েপ্রসহ অন্যান্য পরিবেশ বিনষ্টকারী কীটনাশকসমূহের উৎপাদন ও ব্যাবহারের মাধ্যমে ফ্লোরোফ্লুরো কার্বন ডাই অক্্রাইড গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় নানা রোগের উপসর্গ সৃষ্টির পাশাপাশি বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়বে। এই গ্যাসগুলো ওজোন স্তরকে হালকা করে সৃষ্টি করছে ফাটল। জলবায়ু পরিবর্তনে ফলশ্র“তিতে উপকূলীয় নিম্মাঞ্চলে বসবাসরত প্রায় দু’কোটি মানুষ বাস্তহারা হবে। খরা, বন্যা ও লবণাক্ততার ফলে ফসলের উৎপাদন মারাত্মক ভাবে হ্রাস পাবে। পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশের দক্ষিণের বিরাট অংশ তলিয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে ।
সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের যে আকস্মিকতা, দ্রুততা ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে তার পেছনে প্রধানত মানুষের কর্মকান্ডই দায়ী। এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সকল বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে তা মোকাবেলার জন্য এখন থেকেই কর্মপন্থা প্রণয়নের দিকে নজর দেয়া। প্রত্যেকটা দেশ স্বতস্ফুর্তভাবে “আন্তর্জাতিকভাবে কর্মসূচী গ্রহণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। যে সব দেশ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদেরকে সতর্কতামূলক পথ অবলম্বন করবে। আই, পি, সির চিহিৃত তিন প্রকার অভিযোজন প্রক্রিয়া Retreat , Accomoationএবং Protection - গুলো মনোযোগী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জমিকে কৃষি উপযোগী করতে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। গণমাধ্যম জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কম্যুনিটি রেডিও দ্রুত কাজ করতে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলার কৌশল সম্পর্কে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত গবেষণা ও তথ্যের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালনা করা দরকার। কাঠামোগত পরিকল্পনার পাশাপাশি অবকাঠামোগত বিষয়াদি, যেমন-ব্যাপক ভিত্তিতে বনায়ন, জনসাধারণকে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সহনশীল করে তোলা ইত্যাদি কর্মসূচী বাস্তবায়ন দরকার। প্রতিটি দেশকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রকৃতিতেও যাতে ক্ষতিকর সকল গ্যাস বেশি মাত্রায় শোষিত হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। উন্নত দেশসমূহ যদি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাহলে বায়ুমন্ডলে সি,এফ, সি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবেনা। জনসংখ্যার বৃদ্ধি রোধ করলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবেশে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা রোধ করা যাবে। ওজোনস্তরের ক্ষয়রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে নিয়মিত প্রকাশনা চালূ রাখতে হবে। সরকারকে উপকূলীয় অঞ্চল, পানি সম্পদ ও কৃষির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে সহযোগিতা করতে হবে। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবীদরা যেসব নীতি নির্ধারণী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, তার মধ্যে আছে, কার্বন/জ্বালানিকর, বিক্রয়যোগ্য পারমিট, কার্বন জ্বালানির উৎস থেকে সাবসিডি প্রত্যাহার, কার্বনমুক্ত উৎসবের জন্য ভর্তুকি ও কর সুবিধা প্রদান, রিফান্ড ব্যবস্থা, কর্মদক্ষতার মান অর্জন বা প্রযুক্তি, জ্বালানির মিশ্রণ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা, পণ্য নিষিদ্ধকরণ, স্বেচ্ছামূলক চুক্তি, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ ইত্যাদি। জলবায়ুর পরিবর্তনে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে অব্যাহতি লাভের উপায়ই হচ্ছে অধিক হারে গাছ লাগানো।
বাংলাদেশে প্রতিদিন জলবায়ু বিপন্নদের সংখ্যা বাড়ছে। নদী ভাঙ্গন, প¬াবন ইত্যাদি কারণে মানুষ ঘরবাড়ি, জমি হারিয়ে পরিবেশ উদ্বাস্তু হচ্ছে যারা পরবর্তীতে শহরাঞ্চলে বস্তিতে মানবেতর জীবন যাপন করে। Intergovernmental Panel on Climate Change এর চতুর্থ সমীক্ষা রিপোর্টেও বাংলাদেশের জলবায়ু জনিত পরিবর্তন গুলো নিম্নে উলে¬খ করা হলো-বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে (১৯৮৫-১৯৯৮) মে মাসে ১০ সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে ০.৫০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।বাংলাদেশে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ৮,৩০,০০০ হেক্টর আবাদি জমির ক্ষতি করেছে। বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভয়াবহ বন্যার পূনরাবৃত্তি ঘটে গত ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৭ সালে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে।গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কি.মি. নদীতে প্রবেশ করছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন কমবে প্রায় ৮% এবং গমের উৎপাদন কমবে প্রায় ৩২%।
ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাগরে নিুচাপ, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলাবদ্ধতা, অসময়ে বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। সমুদ্র তলদেশের উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রাথমিকভাবে ১২০ হাজার বর্গ কি.মি. এলাকা সরাসরি প্ল¬াবন জনিত ক্ষতির সম্মুখীন হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশব্যাপী বৃষ্টির পরিমান বাড়বে। ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে প্রতি বছর মে-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ধ্বংসাত্মক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে। উদাহরনস্বরূপ বলা যেতে পারে- ১৫ নভেম্বর ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ,২৫ মে ২০০৯ সালে আইলার আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে যায় এবং অনেক মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। বায়ুন্ডলের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করেছে। এর ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩৫ ভাগ এলাকা সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামুদ্রিক লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে উপকূলীয় নদ-নদীর লবণাক্ততা বাড়িয়ে দেবে। এতে করে মৎস সম্পদ ও কৃষিখাতে অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। খরা জলবায়ু পরিবর্তনেরই একটি ফল। কোন এলাকায় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হলে সেখানে খরা দেখা দেয়। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে কয়েকটি জেলায় যে মঙ্গা দেখা দেয় তার জন্য প্রধানত দায়ী হলো খরা। অতিবৃষ্টির ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাথে সাথে নদীভাঙ্গনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিপন্ন দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই বাংলাদেশের করণীয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আলোচনায় কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখা যাতে অভিযোজনের জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় তহবিল পায়। গ্রীনহাউজ গ্যাস নি:সরণ কমানোর জন্য উন্নত বিশ্বের উপর আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও অভিযোজনের উপায় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় মানুষ ও গবাদি পশুপাখিকে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরকে আধুনিকায়ন এবং ঘূর্ণিঘড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো সক্রিয় হতে হবে। দেশের প্রধান নদ-নদী গুলো যথারীতি খনন করতে হবে। জলবায়ু বিপন্নতা বিষয়টি উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ করা। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে ইত্যাদি।
জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫-২.৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেলে প্রাণী ও উদ্ভিদের এক তৃতীয়াংশ প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন হবে । নানা ধরণের রাসায়নিক পর্দাথ র্বজ্য হিসেবে ফেলার কারণে মাটি দূষিত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে, মানুষের অধিক ফসল ফলানোর আশায় মাটিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার দেয়ায় মাটির গুণাগুণ আশংকাজনক হারে কমছে । অরণ্য নিধনের প্রধান কারন হলো, মানুষের চাষের জমির জমির চাহিদা মেটাতে । প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ হাজার র্বগ কি.মি অরণ্য কাটা হয় শুধুমাত্র চাষের জমির জন্য। এই অরণ্য নিধন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে একটি বড় ভূমিকা রাখছে। এর ফলে জলবায়ুরও পরির্বতন ঘটছে ।
বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, চিন, মিশর, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, নেদারল্যান্ডসহ পৃথিবীর বেশ কটি নীচু এলাকার দেশ জলবায়ু পরির্বতনের বিপদের সম্মুখীন। IPCC -হিসেব করেছে যে ১৮১টি দেশকে জলবায়ুর পরির্বতনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্যে ১০০ বছরে মোট ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে ।র্অথাৎ প্রতিবছর দরকার হবে ৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে খরচ হবে ১.২ বিলিয়ন ,ব্রাজিলের জন্যে ২৩.৭৬ বিলিয়ন ,চীনের জন্যে ১১.৫৬ বিলিয়ন এবং ভারতের জন্য ২২.৪৮ বিলিযন ডলার। কয়েকটি শিল্পোন্নত দেশে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ১ মিটার বাড়ার র্অথনৈতিক মূল্য আলাদাভাবেও হিসেব করা হয়েছে। এতে দেখা যায় নেদারল্যান্ডের জন্যে এই ব্যয় ৫ বিলিয়ন ডলার, জাপানের জন্যে২৮ বিলিয়ন ডলার, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে ২০০ থেকে ৪৭৫ বিলিয়ন ডলার। র্অথাৎএদেশগুলোকে এক বিশাল র্অথনৈতিক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে ।
র্বতমানে জলবায়ু পরির্বতন দারিদ্র নিরসন প্রক্রিয়া এবং উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরির্বতন রোধ করা না হলে ভবিষ্যতে আমাদেও সব উন্নয়ন উদ্যোগ বির্পযস্ত হবে। কিন্তু আন্তরিক, সঠিক ও র্কাযকর জলবায়ু নিরোধক র্কমসূচি (Mitigation ) দারিদ্র নিরসন, জনগণের জীবন জীবিকার সম্প্রসারণ, র্অথনৈতিক অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়নের সহায়ক হতে পারে ।তাই জলবায়ু পরির্বতন যেমন সমস্যার সৃষ্টি করছে, তা আবার আমাদের ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বির্নিমাণ ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে ; যদি আমরা এ বিষয়ে সঠিক নীতি ,গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও পদ্ধতি, সামাজিক উদ্যোগ ও র্কমসূচি গ্রহণ করতে পারি ।
উদ্ভিদ ও প্রাণী যাই হোক না কেন তার বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। খাদ্য বা খাবার ছাড়া জীব জগতের অস্তিত্ব কল্পনা করা বৃথা। মানব কুলের জন্যও খাদ্য অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে মানুষ আজ খাদ্য নিরাপত্তার সম্মুখীন। বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বায়নের প্রভাবে উন্নত দেশ গুলো আরও উন্নত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলো খাদ্য নিরাপত্তার হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা বলতে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর জন্য সহজলভ্য খাদ্য শস্য ও পুষ্টিলাভকে বুঝায়। অর্থাৎ খাদ্য চাহিদার আলোকে খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ। কৃষি ও অকৃষি খাতে কর্মসংস্থান ইত্যাদি খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিশেষ উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয় । বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ‘অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ’ একটি বইয়ে মন্তব্য করেছেন, “খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টি যেকোন সমাজের জন্য অতীব গুরুত্বপুর্ণ বিষয়,জনভাওে আক্রান্ত বাংলাদেশের জন্য তো বটেই। খাদ্য নিরাপত্তার সাথে জড়িত দারিদ্র বিমোচন।এর সাথে জড়িত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি,মানুসের আয় বৃদ্ধিও বিষয়গুলো।” খাদ্য নিরাপত্তা বলতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাপ্যতা বা একজন মানুষের কাছে লভ্যতা বুঝায়। একটি পরিবারকে তখনি খাদ্য নিরাপদ বলা যাবে , যখন পরিবারের সদস্যরা ক্ষুধা ও অনাহারে ভোগে না।পুষ্টি নিরাপত্তা ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা অর্থহীন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর মতে, “খাদ্য নিরাপত্তা হচ্ছে সব মানুষের জন্য সব সময় পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধান করা।” USDA(United states Deparment of Agriculture এর মতে, “একটি পরিবারের সব সদস্যদেও খাদ্য নিরাপত্তার অর্থ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে যে পরিমান খাদ্যেও প্রয়োজন তাই খাদ্য নিরাপত্তা।” বিশ্ব খাদ্য শীর্ষ সম্মেলন,১৯৯৬ ইং সালে প্রদত্ত খাদ্য নিরাপত্তা সংজ্ঞা , , “food security exists when all people, at all times, have physical and economic access to sufficient safe nutritious food which meet their dietary needs and food preferences for an active and healthy life.” অর্থাৎসব সময়ে সব মানুষের কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদার বিপরীতে পছন্দমত, পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তিই খাদ্য নিরাপত্তা।
বর্তমান বিশ্বে খাদ্য পরিস্থিতি মোটেও স্বস্তিকর নয়।খাদ্য ঘাটতির আশংকা প্রায়ই উঁকিঝুকি দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে পরিবেশ বিপর্যয় ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে খাদ্য সমস্যা স্থায়ূী রূপ নেবে। আর এর সাথে রয়েছে বিশ্বায়ন। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২০ সাল ও তার পরবর্তী অধ্যায় খাদ্যেও ক্ষেত্রে এক তমসাচ্ছন্ন অধ্যায় হিসেবে দেখা দেবে। এরকম সংকটের মূখে দরিদ্র দেশগুলোর সামনে বিকল্প কোনকিছু না থাকলেও, আমদানি নির্ভও ধনী দেশগুলোর আছে বাড়তি দাম দিয়ে কিনিবার সামর্থ্য।এসমস্ত দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথ থাকে একটাই, আর তা হল উৎপাদনের উপর জোর দেয়া।এর জন্য তারা বিভিন্ন অর্থলগ্নী কারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়, বা প্রযুক্তি সাহায্য নেয়। তাই দেখা যায়, কিছু প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপাওে বিভিন্ন দেশের উৎপাদন ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা কওে চলেছে। এরকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলÑ আমেরিকার গোল্ডম্যান সাচস, ব্ল্যাক রক, ইমার জেন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং সৌদি আরবের সৌদি স্টার এগরিকালচারাল ডেভলপমেন্ট। বিশ্বেও খাদ্য ব্যবস্থা বা খাদ্যদ্রব্য মুষ্টিমেয় কিছু দেশের হাতে রয়েছে। যার ফলাফল ভয়ানক আকার ধারন করেছে। বেশ কিছু দেশে চরম খাদ্য ঘাটতি রয়েছে,এর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশেই রয়েছে ২০ টি দেশ।এই মূহুর্তে গোটা বিশ্বেও প্রায় ১০০ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষ রয়েছে। ( দৈনিক প্রথম আলো, ১০.১২.২০০৯)
ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (অইএফআই) প্রকাশিত গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্্র ২০০৮ (জিএইচআই) এ ৩৩ টি ঝুকিপূর্ণ দামের তালিকায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ।আন্তর্জাতিক খাদ্য ইনস্টিটিউট মতে, ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত চালের দাম থাকবে উচুঁতে।ইতোমধ্যে কাগজে-কলমে আগামী কয়েক বছরের ধান-চাল-গম-ভুট্টা বিক্রিও হয়ে গেছে। সুতরাং বাংলাদেশেসহ প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরীন খাদ্য উৎপাদন না বাড়িয়ে কোন উপায় নেই। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৫০% পরিবার বছরের কোন না সময় খাদ্য সংকটে থাকে, ২৫% পরিবার নিয়মিত ভাবে সারা বছর খাদ্য সংকটে থাকে, ১৫% পরিবার ১ বেলা খেয়ে পরের বেলায় খাদ্য নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকে, ৭% পরিবার কখনই তিন বেলা খেতে পায় না। এজন্যই প্রয়োজন খাদ্য নিরাপত্তা দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যে নিশ্চয়তাই “প্রকৃত খাদ্য নিরাপত্তা”।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দশমিক তির মিটার বাড়লে বাংলাদেশের উপক’লীয় এলাকায় কাড়বে লোনা পানির প্রভাব।এর প্রভাবে শুধু ধানের উৎপাদন কমবে বছওে পাচ লক্ষ টন। ঘাটতি পঢ়বে বিশুদ্ধ খাবার পানির ও কমবে স্বাদু পানির আয়তন। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে আদ্রতা কমবে, কমবে বৃষ্টিপাত এতে সৃষ্ট খরার কারণে অনাবাদী জমির পরিমান বৃদ্ধি পাবে। ক্ষুদ্রআয়তনের কৃষি ভূমির বাংলাদেশে এর প্রভাব আরও বেশি।বিশেষ কওে খাদ্যেও খনি হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হবে। এছাড়া মাত্রারিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি,হাইব্রিড ও উফশী বীজ আমদানি, জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি-এসবের নেতিবাচক প্রভাবের কারণেও খাদ্য নিরাপত্তা সংকট তৈরি হচ্ছে। বিশ্বে আনুষ্ঠানিক ভাবে সবচেয়ে গরিব দেশের সংখ্যা এখন ৪৯। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এল.ডি.সি গুলোর (স্বল্পোন্নত দেশ) উন্নযনে বিশ্বব্যাংক , আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ বাজারমূখী নীতি অনুসরণকে প্রধান শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় খাতের নিয়ন্ত্রনহীন বাজার নির্ভরতার ত্র“টিপূর্ণ নীতি অনুসরন করতে গিয়ে বাংলাদেশ বিপদে পড়েছে। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ মাঝে মাঝে এটার দাম কমাও ওটার দাম বাড়াও বলে থাকেন। এতে গরিব দেশ গুলোর শুধ ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। কার্যকর ইতিবাচক ফলাফল খুব কমই পাওয়া যায়। তাছাড়া বিদেশী মোড়লদেও প্রেসক্রিপশনে আজ পর্যন্ত কোন দেশ গরিব দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। দক্ষিন কোরিয়া , মালয়শিয়া ও সিঙ্গাপুরের মত দেশগুলোর উন্নয়ন ঘটেছে তাদেও মেধা ও শ্রমের বিনিময়ে।তাইসময় এসেছে অন্ধভাবে বাজারমূখী নীতি অনুসরণ করার পথ পরিহার করার।
খাদ্য নিরাপত্তায় করনীয় হচ্ছে,খাদ্য শস্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিষয়ে কৃষকের শিক্ষা সম্প্রসারণ , কৃষিতে প্রযুক্তির সমাবেশ ও সম্প্রসারণ, বহুমত্রিক শস্য উৎপাদন করা। আধুনিক বিশ্বে গণমাধ্যম তথা রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট প্রযুক্তি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। কৃষিতে দেশ বিদেশের নানা প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা এসব গণমাধ্যম প্রচার করলে, কৃষকরা এর সুফল সম্পর্কে জানতে পারবে। তারা প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী হবে। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কুটনীতিক দুরদৃষ্টির প্রয়োজন।বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন দু’টি দেশের সঙ্গে এখন একটি সখ্যতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। যা হবে টেকসই এবং আমাদেও স্বার্থেও অনুকুলে। প্রতিবেশি ভারতের সাথে রয়েছে ৫৪ টি নদীর অভিন্ন সম্পর্ক। নদীগুলোর ন্যায্য পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে দক্ষ কুটনীতিক তৎপরতার প্রয়োজন।
পৃথিবী এমন এক মহাবির্পযয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি নেই ,আবার কখনো অতির্বষণ। শুষ্ক মৌসুমে মারাÍক খরা শস্যহানি; আবার প্রলয়ঙ্কারী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের পৌণ:পুণিকতা। ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে ঋতু বৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে। একদিকে গ্রীষ্ম ও বর্ষা প্রলম্বিত হচ্ছে,অন্যদিকে শীতকাল সংকুচিত হচ্ছে। শরৎ ও হেমন্তের অস্তিত প্রায় বিলুপ্ত। পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে এর পেছনে রয়েছে জলবায়ুর পরির্বতন। এই যে ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাগরে নিুচাপ, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলাবদ্ধতা, অসময়ে বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর টেকসই উন্নয়ন ও মানবজাতির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বড় হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর Intergovernmental Panel on climate Change-IPCC “বিজনেস আজ ইউজুয়াল” পটভূমিতে হিসেব করে দেখিয়েছে যে ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা ৪.২ ডিগ্রী বাড়বে।
প্রতিদিনের গড় তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, আদ্রতা ও বারিপাতের তথ্যের ভিত্তিতে কোনো এলাকার যে অবস্থা প্রকাশ করা হয় তা হল Weather। এবং এই প্রাকৃতিক বিষয়গুলিরই ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়া অবস্থাকে Climate বলে। যেসকল প্রাকৃতিক Components দ্বারা আমরা আবহাওয়া বা জলবায়ুকে নির্দেশ বা নির্ধারণ করি; সেগুলি হল: বায়ুর Temperature, Pressure, Movement, Humidity এবং Precipitation। কিছু প্রাকৃতিক Factors রয়েছে যার দ্বারা নির্ধারিত হয় কোন স্থানের জলবায়ু কেমন হবে। সেগুলি হলঃ Latitudinal Location, Height of the place, Distance from the sea, Wind movement pattern, Ocean Current, Distance from the hills or the mountains, Slope of the place, Characteristics of the soil, Distance from the forest or the vegetation covered region ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যদিও মানুষের কর্মকান্ড দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। জলবায়ুর উপাদানগুলির পরিবর্তনই জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দেশক। জলবায়ু পরিবর্তন একটি Global Issue। সাধারণভাবে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তন যা প্রাকৃতিক ভাবে ঘটে তাকে Climate Change বলে।
জলবায়ুর পরিবর্তন এর নেতিবাচক দিক ভেবে মানব সভ্যতা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত। এ সমস্যাগুলিকে প্রাকৃতিক ও সামাজিক দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রাকৃতিক ভাবে আমরা যেসকল সমস্যার সম্মুখিন হতে পারি তা হলÑ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন, বন্যা হবার প্রবণতা বৃদ্ধি, খরার স্থায়িত্ব ও তীব্রতা বৃদ্ধি, স্থলে টর্নেডো এবং সমুদ্রে সামুদ্রিক ঝড় এর ঘটনা ঘটবার Frequency বৃদ্ধি, তাপ প্রবাহের তীব্রতা বৃদ্ধি, পানির Quality ও Quantity পরিবর্তন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, হিমবাহের গলন ইত্যাদি। আর আর্থসামাজিকভাবে পানি সংশ্লিষ্ট সম্পদের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে এবং মোটামুটি হারে তা বিভিন্নভাবে দেখা দিচ্ছেও বটে, পানি ব্যবহারের সাধারণ মান অবনতি (যেমন: নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের মানুষ বাজার থেকে বিশুদ্ধ পানি কিনে খাচ্ছে), কৃষি ও বনজ সম্পদ ভিত্তিক ক্ষতি, খাদ্য নিরাপত্তা, মানুষের স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত ক্ষতি, বসতির ক্ষেত্রে- অধিবাসীদের স্থানাস্তর এবং জীবিকার ক্ষতি, উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা, শিল্প-শক্তি, দুর্যোগ সাড়া ও উদ্ধার পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে নব নব জটিলতা সৃষ্টি হবারই কথা। আর তা যদি হয় কোন উন্নয়নশীল দেশের উপর তাহলে তার উচ্চমাত্রা সহজেই উপলব্ধির যোগ্য।
পৃথিবীর আবহাওয়ার গড় অবস্থার পরিবর্তন উন্নত বিশ্বের কর্মকান্ডের ফলেই ঘটছে। উন্নত বিশ্ব “জলবায়ু পরিবর্তন” বিশেষ করে “বিশ্ব উষ্ণায়ন” প্রক্রিয়ায় অন্যতম বড় দায়ী । পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মূল উৎস হলো কয়লা, পেট্রোলিয়াম, ডিজেলের মত জ্বালানি ব্যাবহার, বন নিধন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক শিল্পায়ন ইত্যাদি। অকেজো ও মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহনে ব্যবহুত জ্বালানি ভালভাবে নিঃশেষ না হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কার্বন-ডাই-অক্্রাইড নিঃসরিত হয়। মনুষ্যসৃষ্ট দূষণের কারণেই গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বনীকরণ ও মরুকরণের ফলে ভূমিতে প্রতিফলনীয়তা পরিবর্তন ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক সৌর শক্তি শোষণের পরিমাণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত সালফারের এরোসল মেঘমালাকে পরিবর্তিত করে। ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের কারণে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তরের পরিবর্তন জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। জলবায়ুর পরিবর্তনের গড় জলবায়ুর মাত্রা উন্নীত হবে। তবে প্রকৃতপক্ষে গড় নয়, আবহাওয়ার চরম ভাবাপন্নতাই ক্ষতি ঘটাবে বেশি। এতে ঘটবে প্রচন্ড খরা ও ঝড়, পরিণামে ঘটবে মৃত্যু। শিল্প বিপ্ল¬বের পর থেকেই বায়ুমন্ডলে তাপ ধরে রাখতে সক্ষম গ্যাস সমূহের পরিমান বাড়ছে। ফলে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বিজ্ঞানের ভাষায় একে Greenhouse Effect বলে। আর গ্রীনহাউজ প্রভাবের জন্য দায়ী গ্যাসসমূহকে গ্রীনহাউজ গ্যাস বলে। গত শতাব্দিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বেড়েছে ২৫%, নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমান বেড়েছে ১৯% এবং মিথেনের পরিমান বেড়েছে ১০০%। বিশ্ব উষ্ণায়ন, আবহাওয়ার ধরন এবং ঋতু বৈচিত্র পাল্টে দিচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ United Nations Framwork Convention on Climate Change (UNFCCC) অনুযায়ী- পৃথিবীর বিভিন্ন অভ্যান্তরীণ প্রক্রিয়া, বাহ্যিক শক্তি, যেমন-সূর্যালোকের ঘনত্বের তারতম্য এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণ অন্যতম। IPCC-International Pannel for Climate Change এর দাবি অনুসারে বর্তমান সময়টি হল গত ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ। IPCC এর ২০০৭ প্রতিবেদন সারাংশ হলঃ ২০ শতকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বেড়েছে ০.৬-০.২ ডিগ্রি সে.। এবং গত ৩০ বছরে প্রতি দশকে বৃদ্ধি হার হল ০.১৭ ডিগ্রি সে.।শেষ ৫০ বছরের উষ্ণায়ন মানুষের কর্মকান্ড দ্বারাই বেশী হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীন হাউজ গ্যাস তথা কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি। যদি গ্রীন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে বিশ্ব উষ্ণায়নও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এবং এ উষ্ণায়ন ২১০০ সালের মধ্যে ১.৪-৫.৮ ডিগ্রি.সে. এ পৌছবে। উন্নত বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানীর ফলে বায়ুদূষণ প্রতিক্রিয়ার ফলশ্র“তিতে ২০৬০ সালের পরে non melanoma skin ক্যান্সারের ঘটনা সংখ্যা শতকরা ৬ থেকে ৩৫ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্র সমতল বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বৃহৎ শহর ও উপকূলের উর্বর নিম্নাঞ্চল প্ল¬াবিত করে লক্ষ লক্ষ জনসাধারণকে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করবে। এটি বিরাট সংখ্যক Environmental Refugees তৈরি করবে খাদ্য ঘাটতি এবং তার প্রেক্ষিতে কিছু কিছু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও আর্দ্র অবস্থা Bacteria এবং অন্যান্য বিষাক্ত উৎপাদক, যেমন- ফাংগাস থেকে নি:সৃত বিষাক্ত পদার্থ (Aflatoxins) বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তার ফলে খাদ্য দূষিত হয়ে নষ্ট হওয়ার পরিমাণ সম্ভবত বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে চাষাবাদের সময়কাল সংকূচিত হতে পারে এবং উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে। পৃথিবীর উষ্ণতাবাড়ার নেতিবাচক প্রভাব বনাঞ্চলে পড়লে প্রাকৃতিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে, প্রাণীকূল, ভূমি, পানি ইত্যাদির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। উচ্চহারে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও অপচয় এবং এরোসল ¯েপ্রসহ অন্যান্য পরিবেশ বিনষ্টকারী কীটনাশকসমূহের উৎপাদন ও ব্যাবহারের মাধ্যমে ফ্লোরোফ্লুরো কার্বন ডাই অক্্রাইড গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় নানা রোগের উপসর্গ সৃষ্টির পাশাপাশি বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়বে। এই গ্যাসগুলো ওজোন স্তরকে হালকা করে সৃষ্টি করছে ফাটল। জলবায়ু পরিবর্তনে ফলশ্র“তিতে উপকূলীয় নিম্মাঞ্চলে বসবাসরত প্রায় দু’কোটি মানুষ বাস্তহারা হবে। খরা, বন্যা ও লবণাক্ততার ফলে ফসলের উৎপাদন মারাত্মক ভাবে হ্রাস পাবে। পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশের দক্ষিণের বিরাট অংশ তলিয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে ।
সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের যে আকস্মিকতা, দ্রুততা ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে তার পেছনে প্রধানত মানুষের কর্মকান্ডই দায়ী। এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সকল বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে তা মোকাবেলার জন্য এখন থেকেই কর্মপন্থা প্রণয়নের দিকে নজর দেয়া। প্রত্যেকটা দেশ স্বতস্ফুর্তভাবে “আন্তর্জাতিকভাবে কর্মসূচী গ্রহণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। যে সব দেশ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদেরকে সতর্কতামূলক পথ অবলম্বন করবে। আই, পি, সির চিহিৃত তিন প্রকার অভিযোজন প্রক্রিয়া Retreat , Accomoationএবং Protection - গুলো মনোযোগী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জমিকে কৃষি উপযোগী করতে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। গণমাধ্যম জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কম্যুনিটি রেডিও দ্রুত কাজ করতে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলার কৌশল সম্পর্কে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত গবেষণা ও তথ্যের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালনা করা দরকার। কাঠামোগত পরিকল্পনার পাশাপাশি অবকাঠামোগত বিষয়াদি, যেমন-ব্যাপক ভিত্তিতে বনায়ন, জনসাধারণকে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সহনশীল করে তোলা ইত্যাদি কর্মসূচী বাস্তবায়ন দরকার। প্রতিটি দেশকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রকৃতিতেও যাতে ক্ষতিকর সকল গ্যাস বেশি মাত্রায় শোষিত হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। উন্নত দেশসমূহ যদি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাহলে বায়ুমন্ডলে সি,এফ, সি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবেনা। জনসংখ্যার বৃদ্ধি রোধ করলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবেশে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা রোধ করা যাবে। ওজোনস্তরের ক্ষয়রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে নিয়মিত প্রকাশনা চালূ রাখতে হবে। সরকারকে উপকূলীয় অঞ্চল, পানি সম্পদ ও কৃষির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে সহযোগিতা করতে হবে। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবীদরা যেসব নীতি নির্ধারণী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, তার মধ্যে আছে, কার্বন/জ্বালানিকর, বিক্রয়যোগ্য পারমিট, কার্বন জ্বালানির উৎস থেকে সাবসিডি প্রত্যাহার, কার্বনমুক্ত উৎসবের জন্য ভর্তুকি ও কর সুবিধা প্রদান, রিফান্ড ব্যবস্থা, কর্মদক্ষতার মান অর্জন বা প্রযুক্তি, জ্বালানির মিশ্রণ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা, পণ্য নিষিদ্ধকরণ, স্বেচ্ছামূলক চুক্তি, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ ইত্যাদি। জলবায়ুর পরিবর্তনে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে অব্যাহতি লাভের উপায়ই হচ্ছে অধিক হারে গাছ লাগানো।
বাংলাদেশে প্রতিদিন জলবায়ু বিপন্নদের সংখ্যা বাড়ছে। নদী ভাঙ্গন, প¬াবন ইত্যাদি কারণে মানুষ ঘরবাড়ি, জমি হারিয়ে পরিবেশ উদ্বাস্তু হচ্ছে যারা পরবর্তীতে শহরাঞ্চলে বস্তিতে মানবেতর জীবন যাপন করে। Intergovernmental Panel on Climate Change এর চতুর্থ সমীক্ষা রিপোর্টেও বাংলাদেশের জলবায়ু জনিত পরিবর্তন গুলো নিম্নে উলে¬খ করা হলো-বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে (১৯৮৫-১৯৯৮) মে মাসে ১০ সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে ০.৫০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।বাংলাদেশে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ৮,৩০,০০০ হেক্টর আবাদি জমির ক্ষতি করেছে। বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভয়াবহ বন্যার পূনরাবৃত্তি ঘটে গত ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৭ সালে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে।গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কি.মি. নদীতে প্রবেশ করছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন কমবে প্রায় ৮% এবং গমের উৎপাদন কমবে প্রায় ৩২%।
ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাগরে নিুচাপ, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলাবদ্ধতা, অসময়ে বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। সমুদ্র তলদেশের উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রাথমিকভাবে ১২০ হাজার বর্গ কি.মি. এলাকা সরাসরি প্ল¬াবন জনিত ক্ষতির সম্মুখীন হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশব্যাপী বৃষ্টির পরিমান বাড়বে। ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে প্রতি বছর মে-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ধ্বংসাত্মক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে। উদাহরনস্বরূপ বলা যেতে পারে- ১৫ নভেম্বর ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ,২৫ মে ২০০৯ সালে আইলার আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে যায় এবং অনেক মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। বায়ুন্ডলের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করেছে। এর ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩৫ ভাগ এলাকা সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামুদ্রিক লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে উপকূলীয় নদ-নদীর লবণাক্ততা বাড়িয়ে দেবে। এতে করে মৎস সম্পদ ও কৃষিখাতে অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। খরা জলবায়ু পরিবর্তনেরই একটি ফল। কোন এলাকায় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হলে সেখানে খরা দেখা দেয়। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে কয়েকটি জেলায় যে মঙ্গা দেখা দেয় তার জন্য প্রধানত দায়ী হলো খরা। অতিবৃষ্টির ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাথে সাথে নদীভাঙ্গনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিপন্ন দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই বাংলাদেশের করণীয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আলোচনায় কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখা যাতে অভিযোজনের জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় তহবিল পায়। গ্রীনহাউজ গ্যাস নি:সরণ কমানোর জন্য উন্নত বিশ্বের উপর আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও অভিযোজনের উপায় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় মানুষ ও গবাদি পশুপাখিকে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরকে আধুনিকায়ন এবং ঘূর্ণিঘড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো সক্রিয় হতে হবে। দেশের প্রধান নদ-নদী গুলো যথারীতি খনন করতে হবে। জলবায়ু বিপন্নতা বিষয়টি উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ করা। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে ইত্যাদি।
জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫-২.৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেলে প্রাণী ও উদ্ভিদের এক তৃতীয়াংশ প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন হবে । নানা ধরণের রাসায়নিক পর্দাথ র্বজ্য হিসেবে ফেলার কারণে মাটি দূষিত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে, মানুষের অধিক ফসল ফলানোর আশায় মাটিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার দেয়ায় মাটির গুণাগুণ আশংকাজনক হারে কমছে । অরণ্য নিধনের প্রধান কারন হলো, মানুষের চাষের জমির জমির চাহিদা মেটাতে । প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ হাজার র্বগ কি.মি অরণ্য কাটা হয় শুধুমাত্র চাষের জমির জন্য। এই অরণ্য নিধন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে একটি বড় ভূমিকা রাখছে। এর ফলে জলবায়ুরও পরির্বতন ঘটছে ।
বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, চিন, মিশর, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, নেদারল্যান্ডসহ পৃথিবীর বেশ কটি নীচু এলাকার দেশ জলবায়ু পরির্বতনের বিপদের সম্মুখীন। IPCC -হিসেব করেছে যে ১৮১টি দেশকে জলবায়ুর পরির্বতনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্যে ১০০ বছরে মোট ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে ।র্অথাৎ প্রতিবছর দরকার হবে ৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে খরচ হবে ১.২ বিলিয়ন ,ব্রাজিলের জন্যে ২৩.৭৬ বিলিয়ন ,চীনের জন্যে ১১.৫৬ বিলিয়ন এবং ভারতের জন্য ২২.৪৮ বিলিযন ডলার। কয়েকটি শিল্পোন্নত দেশে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ১ মিটার বাড়ার র্অথনৈতিক মূল্য আলাদাভাবেও হিসেব করা হয়েছে। এতে দেখা যায় নেদারল্যান্ডের জন্যে এই ব্যয় ৫ বিলিয়ন ডলার, জাপানের জন্যে২৮ বিলিয়ন ডলার, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে ২০০ থেকে ৪৭৫ বিলিয়ন ডলার। র্অথাৎএদেশগুলোকে এক বিশাল র্অথনৈতিক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে ।
র্বতমানে জলবায়ু পরির্বতন দারিদ্র নিরসন প্রক্রিয়া এবং উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরির্বতন রোধ করা না হলে ভবিষ্যতে আমাদেও সব উন্নয়ন উদ্যোগ বির্পযস্ত হবে। কিন্তু আন্তরিক, সঠিক ও র্কাযকর জলবায়ু নিরোধক র্কমসূচি (Mitigation ) দারিদ্র নিরসন, জনগণের জীবন জীবিকার সম্প্রসারণ, র্অথনৈতিক অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়নের সহায়ক হতে পারে ।তাই জলবায়ু পরির্বতন যেমন সমস্যার সৃষ্টি করছে, তা আবার আমাদের ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বির্নিমাণ ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে ; যদি আমরা এ বিষয়ে সঠিক নীতি ,গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও পদ্ধতি, সামাজিক উদ্যোগ ও র্কমসূচি গ্রহণ করতে পারি ।
উদ্ভিদ ও প্রাণী যাই হোক না কেন তার বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। খাদ্য বা খাবার ছাড়া জীব জগতের অস্তিত্ব কল্পনা করা বৃথা। মানব কুলের জন্যও খাদ্য অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে মানুষ আজ খাদ্য নিরাপত্তার সম্মুখীন। বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্বায়নের প্রভাবে উন্নত দেশ গুলো আরও উন্নত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলো খাদ্য নিরাপত্তার হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা বলতে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর জন্য সহজলভ্য খাদ্য শস্য ও পুষ্টিলাভকে বুঝায়। অর্থাৎ খাদ্য চাহিদার আলোকে খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ। কৃষি ও অকৃষি খাতে কর্মসংস্থান ইত্যাদি খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিশেষ উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয় । বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ‘অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ’ একটি বইয়ে মন্তব্য করেছেন, “খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টি যেকোন সমাজের জন্য অতীব গুরুত্বপুর্ণ বিষয়,জনভাওে আক্রান্ত বাংলাদেশের জন্য তো বটেই। খাদ্য নিরাপত্তার সাথে জড়িত দারিদ্র বিমোচন।এর সাথে জড়িত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি,মানুসের আয় বৃদ্ধিও বিষয়গুলো।” খাদ্য নিরাপত্তা বলতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাপ্যতা বা একজন মানুষের কাছে লভ্যতা বুঝায়। একটি পরিবারকে তখনি খাদ্য নিরাপদ বলা যাবে , যখন পরিবারের সদস্যরা ক্ষুধা ও অনাহারে ভোগে না।পুষ্টি নিরাপত্তা ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা অর্থহীন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর মতে, “খাদ্য নিরাপত্তা হচ্ছে সব মানুষের জন্য সব সময় পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধান করা।” USDA(United states Deparment of Agriculture এর মতে, “একটি পরিবারের সব সদস্যদেও খাদ্য নিরাপত্তার অর্থ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে যে পরিমান খাদ্যেও প্রয়োজন তাই খাদ্য নিরাপত্তা।” বিশ্ব খাদ্য শীর্ষ সম্মেলন,১৯৯৬ ইং সালে প্রদত্ত খাদ্য নিরাপত্তা সংজ্ঞা , , “food security exists when all people, at all times, have physical and economic access to sufficient safe nutritious food which meet their dietary needs and food preferences for an active and healthy life.” অর্থাৎসব সময়ে সব মানুষের কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদার বিপরীতে পছন্দমত, পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তিই খাদ্য নিরাপত্তা।
বর্তমান বিশ্বে খাদ্য পরিস্থিতি মোটেও স্বস্তিকর নয়।খাদ্য ঘাটতির আশংকা প্রায়ই উঁকিঝুকি দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে পরিবেশ বিপর্যয় ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে খাদ্য সমস্যা স্থায়ূী রূপ নেবে। আর এর সাথে রয়েছে বিশ্বায়ন। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২০ সাল ও তার পরবর্তী অধ্যায় খাদ্যেও ক্ষেত্রে এক তমসাচ্ছন্ন অধ্যায় হিসেবে দেখা দেবে। এরকম সংকটের মূখে দরিদ্র দেশগুলোর সামনে বিকল্প কোনকিছু না থাকলেও, আমদানি নির্ভও ধনী দেশগুলোর আছে বাড়তি দাম দিয়ে কিনিবার সামর্থ্য।এসমস্ত দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথ থাকে একটাই, আর তা হল উৎপাদনের উপর জোর দেয়া।এর জন্য তারা বিভিন্ন অর্থলগ্নী কারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়, বা প্রযুক্তি সাহায্য নেয়। তাই দেখা যায়, কিছু প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপাওে বিভিন্ন দেশের উৎপাদন ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা কওে চলেছে। এরকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলÑ আমেরিকার গোল্ডম্যান সাচস, ব্ল্যাক রক, ইমার জেন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং সৌদি আরবের সৌদি স্টার এগরিকালচারাল ডেভলপমেন্ট। বিশ্বেও খাদ্য ব্যবস্থা বা খাদ্যদ্রব্য মুষ্টিমেয় কিছু দেশের হাতে রয়েছে। যার ফলাফল ভয়ানক আকার ধারন করেছে। বেশ কিছু দেশে চরম খাদ্য ঘাটতি রয়েছে,এর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশেই রয়েছে ২০ টি দেশ।এই মূহুর্তে গোটা বিশ্বেও প্রায় ১০০ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষ রয়েছে। ( দৈনিক প্রথম আলো, ১০.১২.২০০৯)
ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (অইএফআই) প্রকাশিত গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্্র ২০০৮ (জিএইচআই) এ ৩৩ টি ঝুকিপূর্ণ দামের তালিকায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ।আন্তর্জাতিক খাদ্য ইনস্টিটিউট মতে, ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত চালের দাম থাকবে উচুঁতে।ইতোমধ্যে কাগজে-কলমে আগামী কয়েক বছরের ধান-চাল-গম-ভুট্টা বিক্রিও হয়ে গেছে। সুতরাং বাংলাদেশেসহ প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরীন খাদ্য উৎপাদন না বাড়িয়ে কোন উপায় নেই। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৫০% পরিবার বছরের কোন না সময় খাদ্য সংকটে থাকে, ২৫% পরিবার নিয়মিত ভাবে সারা বছর খাদ্য সংকটে থাকে, ১৫% পরিবার ১ বেলা খেয়ে পরের বেলায় খাদ্য নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকে, ৭% পরিবার কখনই তিন বেলা খেতে পায় না। এজন্যই প্রয়োজন খাদ্য নিরাপত্তা দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যে নিশ্চয়তাই “প্রকৃত খাদ্য নিরাপত্তা”।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দশমিক তির মিটার বাড়লে বাংলাদেশের উপক’লীয় এলাকায় কাড়বে লোনা পানির প্রভাব।এর প্রভাবে শুধু ধানের উৎপাদন কমবে বছওে পাচ লক্ষ টন। ঘাটতি পঢ়বে বিশুদ্ধ খাবার পানির ও কমবে স্বাদু পানির আয়তন। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে আদ্রতা কমবে, কমবে বৃষ্টিপাত এতে সৃষ্ট খরার কারণে অনাবাদী জমির পরিমান বৃদ্ধি পাবে। ক্ষুদ্রআয়তনের কৃষি ভূমির বাংলাদেশে এর প্রভাব আরও বেশি।বিশেষ কওে খাদ্যেও খনি হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হবে। এছাড়া মাত্রারিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি,হাইব্রিড ও উফশী বীজ আমদানি, জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি-এসবের নেতিবাচক প্রভাবের কারণেও খাদ্য নিরাপত্তা সংকট তৈরি হচ্ছে। বিশ্বে আনুষ্ঠানিক ভাবে সবচেয়ে গরিব দেশের সংখ্যা এখন ৪৯। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এল.ডি.সি গুলোর (স্বল্পোন্নত দেশ) উন্নযনে বিশ্বব্যাংক , আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ বাজারমূখী নীতি অনুসরণকে প্রধান শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় খাতের নিয়ন্ত্রনহীন বাজার নির্ভরতার ত্র“টিপূর্ণ নীতি অনুসরন করতে গিয়ে বাংলাদেশ বিপদে পড়েছে। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ মাঝে মাঝে এটার দাম কমাও ওটার দাম বাড়াও বলে থাকেন। এতে গরিব দেশ গুলোর শুধ ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। কার্যকর ইতিবাচক ফলাফল খুব কমই পাওয়া যায়। তাছাড়া বিদেশী মোড়লদেও প্রেসক্রিপশনে আজ পর্যন্ত কোন দেশ গরিব দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। দক্ষিন কোরিয়া , মালয়শিয়া ও সিঙ্গাপুরের মত দেশগুলোর উন্নয়ন ঘটেছে তাদেও মেধা ও শ্রমের বিনিময়ে।তাইসময় এসেছে অন্ধভাবে বাজারমূখী নীতি অনুসরণ করার পথ পরিহার করার।
খাদ্য নিরাপত্তায় করনীয় হচ্ছে,খাদ্য শস্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিষয়ে কৃষকের শিক্ষা সম্প্রসারণ , কৃষিতে প্রযুক্তির সমাবেশ ও সম্প্রসারণ, বহুমত্রিক শস্য উৎপাদন করা। আধুনিক বিশ্বে গণমাধ্যম তথা রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট প্রযুক্তি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। কৃষিতে দেশ বিদেশের নানা প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা এসব গণমাধ্যম প্রচার করলে, কৃষকরা এর সুফল সম্পর্কে জানতে পারবে। তারা প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী হবে। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কুটনীতিক দুরদৃষ্টির প্রয়োজন।বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন দু’টি দেশের সঙ্গে এখন একটি সখ্যতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। যা হবে টেকসই এবং আমাদেও স্বার্থেও অনুকুলে। প্রতিবেশি ভারতের সাথে রয়েছে ৫৪ টি নদীর অভিন্ন সম্পর্ক। নদীগুলোর ন্যায্য পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে দক্ষ কুটনীতিক তৎপরতার প্রয়োজন।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২১
এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার লিখা। লেখকের জন্য শ্রদ্ধা রইল।
এই বিষয়ে লিখা লিখি কে উৎসাহ দেয়া দরকার।
(কয়েকটি লাইন, প্যারা বার বার এসেছে, দয়া করে একটু রিভিউ করে নিবেন, প্রতিটি বিষয় হেডিং এর আন্ডারে নিয়ে আসলে লেখাটি আরো চমৎকার হবে।)
আমি সামান্য ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ২ টি লিখা লিখেছি- আমাদের স্ট্র্যাটেজি কেমন হওয়া দরকার, আমরা মাঠ পর্যায়ে কি করছি এইসব নিয়ে।
দয়া করে পড়বেন, মন্তব্য জানাবেন।
জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনা নিয়ে-
Click This Link
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে-
Click This Link