নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মা আমার কাছে সৌন্দর্য, মুক্তি, অধিকার ও সম্মানের প্রতীক। আমার মা আমার হৃৎস্পন্দন,ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার উৎস। শৈশব থেকে কৈশর, কৈশর থেকে যৌবন প্রাণপ্রিয় মাকে ঘিরে অজস্র স্মৃতি হৃদয় পটে ভেসে ওঠে। মা উচ্চারনের সাথে সাথে মনের ভিতর যে অনুভূতির সৃষ্টি হয় সেই অনুভুতি মা এবং সন্তানের মনের সঙ্গে সৃষ্টি করে বিনি সূতার মালা। এখানে আকাশ সীমাবদ্ধ হয়ে সমুদ্রও হেরে যায় মায়ের গভীরতার কাছে। এই মিষ্টি শব্দ উচ্চারনের সাথে সাথে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে একটি স্নেহ ভালোবাসায় ভরা মুখচ্ছবি। মাকে স্মরণ করে লেখা ‘আমার মা’শীর্ষক কবিতাটি-
আমার সুখেই যার অন্তহীন সুখ
আমার হাসিমুখ ভুলায় যার দু:খ
সে আমার মা, মা জননী
যাকে পেয়ে ধন্য আমি, ধন্য ধরণী
শুয়ে পাশে মাথায় হাত বুলানো
স্বপ্ন আশা ভরে বুকে জড়ানো
সে আমার মা, মা জননী
যাকে পেয়ে ধন্য আমি, ধন্য ধরণী
যখন অসহায় এক মানুষ ছিলাম আমি
সেবা, লালন,পালন; কপালে দিয়ে চুমি
সে আমার মা, মা জননী
যাকে পেয়ে ধন্য আমি, ধন্য ধরণী
মমতাময়ী নয়ন সদা খুঁজে ফিরে
তার প্রিয় খোকা কখন বাড়ি ফেরে
সে আমার মা, মা জননী
যাকে পেয়ে ধন্য আমি, ধন্য ধরণী
কেউ কি পারবে আমাকে ফিরিয়ে দিতে মায়ের সাথে কাটানো ছেলেবেলার দিনগুলো। শৈশবের উচ্ছাস, কৈশরের উদ্যাম খুব আনন্দমুখর ছিল।তখন সবুজ শ্যামল প্রকৃতির মাঝে মুক্ত বিহঙ্গের মত ছুটেছি,উদার আকাশের নিচে নিমল বাতাসে স্বাধীনতার স্বাদ পেযেছি।সে যে কী ভীষণ দুরন্তপনা আর ক্ষেপ্যামি, দাও ফিরিয়ে সেই প্রাণচাঞ্চল্য চাইনা আজকের জ্যাঠামি। সুখানুভূতি আর প্রশান্তির শিহরণ কোথায় হারিয়ে গেল! পাখির কিচির মিচির, কবুতরের বাকবাকুম শুনা নাহি আর হল! আমাকে নিয়ে আমার মায়েরও আনন্দের অন্ত ছিলনা।কোন কিছু সৃষ্টির মধ্যেই আছে আনন্দ আছে গর্ব। সুরকার যখন নতুন কোন সুর সৃষ্টি করেন, কবি যখন লেখেন নতুন কোন কবিতা এমনকি রাঁধুনি রাধেন নতুন কোন পদ তখন এক ধরনের তৃপ্তি, এক ধরনের উত্তেজনা ছেয়ে যায় তার মনে। কিন্ত এক জন যখন মা হন তখন সৃষ্টির আনন্দতো আছেই তার সাথেও যোগ হয় এক ধরনের পূর্ণতা যা জীবনের সব সৃষ্টির আনন্দকে ছাপিয়ে যায়। তাইতো আমার কাছে আমার মা যেমন প্রিয় আমার মায়ের কাছেও আমি তেমনি। ‘মায়ের কাছে’- শীর্ষক কবিতাটি-
আমার সব অর্জন ম্লান হয়ে যায়-
মায়ের ভালবাসার কাছে।
আমার সব দু:খ দূর হয়ে যায়-
মাকে পেলে পাশে।
চোখের অশ্রু আচলে মুছে-
মুখে হাসি ফুটিয়েছে মা।
পিঠ চাপড়ে উৎসাহ জুগিয়েছে-
নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে মা।
মা যে আমার চোখের মণি,
আমার ভালবাসার ধন।
মা যে আমার প্রানের ধ্বনি,
জুড়ে থাকে হৃদয় মন।
আর কেউ নেই মায়ের মতন,
সবচেয়ে প্রিয় মা।
পৃথিবীর সব মণি মুক্তা রত্ন-
সব থেকে দামি মা।
যার কাছে গেলে নিজেকে-
সবচেয়ে সুখি মনে হয়।
যার হাত মাথায় পেলে-
স্বর্গসুখ পেয়েছি বোধ হয়।
মা ছাড়া আর বলো কে আছে-
যে আমায় নিয়ে ভাবে?
তাইতো মায়ের ভালবাসার কাছে-
জগতটাকেই তুচ্ছ মনে হবে।
পৃথিবীতে আমি যখন ছোট্র একটি শিশু ছিলাম আমার সবচেয়ে বড় অবলম্বন ছিল আমার মা। আমি কেন প্রতিটি শিশুর কাছে জন্মদায়িনী মা সবচেয়ে আপন। প্রতিকূল পৃথিবীতে মা আমাকে তার অগাধ মমতা, প্রগাঢ় আদর দিয়ে বড় করেছেন। পরম আশ্রয় মায়ের মমত্ববোধের কাছে বাঁধা পড়ে আছি আজও। যে মা জননী জন্মদায়িনী মায়ের উষ্ণগর্ভে আমার জন্ম, যার বুকের দুধ খেয়ে আমি লালিত, যার স্নেহ মমতা সোহাগে আমার জীবন বিকশিত- সেই মা আমার জীবনের সুখ দুঃখ আর আশা আকাঙ্খার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। মা যেন আমার জীবন, আমার হৃৎস্পন্দন। নাড়ির এই সম্পর্ক আমি কেন কোন সন্তানই আগ্রাহ্য করতে পারেনা। পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েই প্রথম যাকে দেখে তিনি মা। মা এই ছোট্র এক সিলেবল শব্দটিতে বেজে ওঠে কতনা সূরের মুর্ছন। এই মিষ্টি শব্দটি উচ্চারনের সঙ্গে সঙ্গে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে একটি স্নেহ ভালোবাসায় ভরা মুখচ্ছবি। মাও সন্তান একে অপরের পরিপূরক। একজন ছাড়া অপর জন অপূর্ণ। এই দুটি সত্ত্বার মাঝে এক গভীর স্নেহ ভালোবাসার বন্ধন। মায়ের মনে সন্তানের জন্য যে অপার স্নেহ মায়ামততা তার নেই কোন তুলনা। সন্তানের আনন্দ সুখ ব্যাথা, বেদনার মাঝে একাত্ম হয়ে থাকে মায়ের আনন্দ, বেদনা সবকিছু। তাইতো ‘মাগো তুমি’ শীষক কবিতাটি-
পৃথিবীতে মাগো তুমি খোদার সেরা দান,
সবার চেয়ে প্রিয় বলে এ’মন প্রাণ।
দরদ মাখা তোমার স্নেহের নেইকো তুলনা,
তোমার আদর পেতে মনে জাগে বাসনা।
কষ্টে-যন্ত্রণাতে আমার চোখে এলে পানি,
আঁচলে অশ্রু মুছে, শুনাও শান্তনার বাণী।
মায়াবী হাত মাথায় রেখে আর্শির্বাদ কর যখন,
সকল দুঃখ- বেদনা ভূলি আমি তখন।
তোমার স্নেহে ভালবাসায় ভরেছে আমার মন,
পেতে তোমার সোহাগ চাইযে সারাক্ষণ।
উপদেশ দিয়ে তুমি যখন কর দু’আ,
পূরণ হয়ে যায় মনের সকল চাওয়া পাওয়া।
মাগো তুমি বড়ই ভাল, নেই যে কোন তুল,
সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির মাঝে তুমি ফুটন্ত এক ফুল।
মাগো তুমি আমার বড়ই বেশী আপন,
তোমার মুখে হাসি দেখলে তৃপ্ত হয় জীবন।
পৃথিবীতে মা'ই হলো আমার নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। জীবেনর চরম সংকটকালে পরম মমতার ছোঁয়া যার কাছে পাই সে মা। মায়ের কাছে আমি তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ তেমনি মা'ও আমার কাছে মূল্যবান। যে মায়ের গর্ভে মায়ের রক্তে-মাংসে বেড়ে উঠেছি, সুখে কিংবা দুঃখে সর্বপ্রথম সেই মাকেই স্মরণ হয়। আমার ছোটবেলায় জোৎস্না রাতে ওঠানে মাদুর পেতে প্রাণখোলা আসর বসতো।বড় চাচ্চুর দরাজ গলায় পুথিঁ পড়া শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম। দাদি চাদনী রাতে ভূত পেত্নীর গল্পশুনাতেন, কখনো ভয়ে কখনো আবেগে শিহরিয়ে ওঠতাম। কি এক দারুণ অনুভুতি! আমগাছের ছাযায় মাদুর পেতে লেখতাম, পড়তাম। উচ্চস্বরে আবৃত্তি করতাম।ঝড়ের দিনে ছোটফুফুর সাথে আম কুড়াতাম।গাছে উঠে কাঠাল পাড়া, জঙ্গলে গাছে লুকানো, খুঁজে না পেয়ে আম্মুর পেরেশান হওয়া, বাইসাইকেল নিয়ে বেড়ানো- এসবই স্মৃতি।
এখান থেকে সেখানে কলাগাছের ভেলায় ভাসা,মন যেথা চায় ওখানে বৃষ্টির পানিতে ভেজা,পা পিছলে কাদাঁয় পড়া দলবেধে বষার পানিতে গোসল, হৈচৈ করা- এক অন্যরকম আনন্দ ছিল।বড়ফুফুর জোরসে ধরে গোসল করানো , নতুন জামা পড়ে ঈদগাহে যাওয়া, জামান কাকার চোখ ফাঁকি দিয়ে ডাংগুলি খেলা, বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা, পিচ্ছিল মাঠেও লবনদারি, গোল্লাছুট, হাডুডু খেলা- সত্যি অসাধারণ ছিল।এখনও বেড়াতে গেলে দেখি বিশাল তেতুল গাছটা আছে, তেতুল খাবার মানুষও আছে, জাম গাছটাও কালের স্বাক্ষী হয়ে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ভাবি আজও কেউ ঢিল ছুড়ে, কিন্তু আমিও আছি অন্য কোথাও, অন্যরুপে।
মনে পড়ে ছিপ দিয়ে মাছ ধরেছি, নৌকায় চড়ে শাপলা তোলা, আমলকি-বড়ই-খেজুর-বংকই-করমচা-কামরাঙ্গা খাওয়া,কাচা পাকা আম ভতা আর আচার খাওয়ার কথা।এখনও পশ্চিম পাশ্বের পুকুরটা আছে,তবে লালটুকটুকে গাভিটা নেই; সাদা কালো ডোরাকাটা সেই বিড়ালটা নেই,হাঁস মুরগির ছুটাছুটি নেই।আগে বৈদ্যুতিক লাইট নয় হারিকেন ছিল,বৈদ্যুতিক ফ্যান নয় হাতপাখা ছিল।ট্যাঙ্ক,হরলিক্স,ওভালটিন ছিলনা,আখের গুড় আর লেবুর শরবত ছিল। খেজুরের রস, তালের রস, মধু ছিল; দুধ,মাছ,শাকসবজি,হাস মুরগি ছিল।ছিলনা ইটের দালান, ফ্রিজ, কম্পিউটার, টিভি; তবে আন্তরিকতা, ভালবাসা সুখশান্তি ছিল।
যাদের সীমাহীন কষ্ট আর ত্যাগ আজকের আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে
পেরেছি কি তাদের মুখে প্রশান্তির হাসি ফোটাতে;দায়িত্ব কতব্যতো কিছু আছে
অকৃত্রিম স্নেহ মমতা দিয়ে যারা লালন পালন করেছে, তাদের ঋণ শুধ হবার নয় প্রতিজ্ঞা করেছি-আমার জীবন দিয়ে হলেও যেন সেসব মানুষের কল্যাণ হয়।
সবশেষে আমার মায়ের জন্যে দোয়া চেয়ে কলেজে পড়াকালিন সময়ে লেখা ‘মাকে মনে পড়ে’ নামক একটি কবিতার মাধ্যমে শেষ করছি।
ক্যাম্পাসের সম্মুখে মুক্ত মাঠে
রয়েছে রঙ বেরঙের শত ফুল ফুটে।
যখনি দেখি সেই ফুলের রূপ,
মনের পর্দায় ভেসে ওঠে মায়ের মুখ।
নানান রুপের সমাহারে পুষ্পকানন
রূপ তাদের নেই কারো মায়ের মতন।
সাধারণ রূপ নয় সে রূপের খনি,
বড়ই প্রিয় যেন চোখের মণি।
মায়ের মত আপন নেই কেহ ভবে,
এত নিরাপদ আশ্রয় দ্বিতীয় নাহি পাবে।
মায়ের যত্নে গড়া আমার এই দেহ,
তার চেয়ে বেশী প্রিয় নেই আর কেহ।
আমি বড় বেশী ভালবাসি মাকে,
ছুটে যেতে চায় মন দেখতে তাকে।
যখন অতি বেশী মাকে মনে পড়ে,
নানান শূণ্যতা এসে ধরে ঘীরে,
আবেগে চোখের জল ঝরে পড়ে।
©somewhere in net ltd.