নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এনজিও মানে Non- Government Organization, বাংলায় ‘নয় সরকারি সংস্থা’ অর্থাৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর দলিলে লেখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এনজিও হচ্ছে কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপ কর্তৃক তৈরি করা একটি বৈধ সংগঠন যা সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত না হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। অলাভজনক সংগঠন যারা দেশ, সমাজ ও মানুষের উন্নয়নের জন্য নানামুখী কাজ করে থাকে। এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন বিদেশি দাতাদের অর্থায়নের ভিত্তিতে সরকারকে উন্নয়নে সহযোগীতা করা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয় অবদান রাখা। অসহায়ত্ব ও অক্ষমতাকে পুজিঁ করে উন্নয়নের নামেই এনজিওর ব্যপকতা ও তৎপরতা। আকার, প্রকার, উদ্দেশ্য, অঞ্চল, প্রকৃতিভেদে বাংলাদেশে এখন অনেক এনজিও কাজ করছে। বাংলাদেশে এনজিওগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ব্রাক, আশা, প্রশিকা, অক্সফাম, গ্রামীণ ব্যাংক, সেইভ দ্য চিলড্রেন, মুসলিম এইড, একশন এইড,এডুকেশন ওয়াচ ইত্যাদি। অনেক এনজিও ব্যবসা বাণিজ্যও করছে তবে তাদের রয়েছে ইনকাম জেনারেটিং প্রজেক্টের আইনগত বৈধতা। বাংলাদেশের এনজিওগুলো সামাজিক উন্নয়নে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেগুলো হলো,১.ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ ২.নারী ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়ন ৩.শিক্ষা কার্যক্রম ৪.স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ৫.মানবাধিকার ও আইনি কার্যক্রম ৬.আদিবাসী উন্নয়ন ৭.পরিবেশ ৮.উন্নয়ন গবেষণা ৯. বাজার গবেষণা ১০. ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা উন্নয়ন ১১.গ্রামীণ উন্নয়ন ১২. মানব সম্পদ উন্নয়ন ১৩.জেন্ডার ১৪. পরিবেশ ১৫.মিডিয়া ১৬.কৃষি ১৭. কর্মসংস্থান ইত্যাদি।
এনজিও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত অমুনাফাভিত্তিক এক ধরনের বিশেষ স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন। সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সাহায্য হতেই যার সূচনা। একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রবৃদ্ধি ও কার্যকরণের সম্প্রসারণ ঘটে। এনজিও শুধু জাতীয়ভাবেই নয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও রয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং পল্লী উন্নয়নে কাজ করছে এসব এনজিও। বর্তমানে এনজিওগুলোর মূল কাজ হচ্ছে মানুষের মধ্যে যে আত্মবিকাশের ক্ষমতা আছে সেটা কাজে লাগানো। মানুষ যেন নিজেই নিজের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া। এই প্রক্রিয়া থেকে সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী যখন লাভবান হন তখন তাদের মধ্যে একটি বিশেষ আত্মতৃপ্তি কাজ করে, তাদের সামাজিক মর্যাদা বাড়ে- যা তাদের আরো সামনে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। এনজিওগুলো দেখে যে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী/ লোকালয়ের মানুষদের কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী তারা কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের সব জায়গাতেই এরা কাজ করে থাকে। এদের মধ্যে কিছু কিছু শহরকেন্দ্রীক, কিছু আছে গ্রাম কেন্দ্রীক, আবার কিছু এনজিও আছে যারা শহর ও গ্রাম উভয় এলাকাতেই কর্মপরিচালনা করে। এনজিওগুলোর কাজ বিশেষ ভৌগোলিক এলাকা ভিত্তিক-ও হয়ে থাকে, যেমন চর/উপকূলীয়/পার্বত্য এলাকা কেন্দ্রীক এনজিও। এছাড়া তারা বিশেষ জনগোষ্ঠীকে নিয়েও কাজ করে, যেমন- প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী, শ্রমজীবি শিশু, কিংবা নির্যাতিতা নারী। এনজিওর কাজ বহুমুখী, সেখানে কাজের ক্ষেত্রও ব্যাপক। মাঠ পর্যায়ে ছোট-বড় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাথে মেশা, তাদের সমস্যার কথা সরকার ও সমাজের প্রতিষ্ঠিত মহলকে জানানো, তাদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া, এর জন্য দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করা, সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন প্রজেক্ট পরিচালনা করা- নানা স্তরে এনজিওতে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে।
এনজিওতে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে। তাই এনজিওতে কাজে দরকার সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের সুযোগে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা সম্ভব একেবারে কাছ থেকে। উন্নয়নমূলক কাজে সরাসরি নিজেকে নিয়োজিত করতে পারাটা আনন্দের। তবে এনজিওদের ব্যপারে সমালোচনাও আছে। বাংলাদেশে অধিকাংশ এনজিও-র তহবিল, মূলধন বা বিনিয়োগ আসছে খ্রীস্টান সংগঠন সমূহের পক্ষ থেকে। দরিদ্র ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ৪০% ভাগের উপর মুনাফা বা সুদ নেয়ার পরও সরকারকে কর দেয় না, সম্পূর্ণ করমুক্ত সুবিধা পায়। এনজিও ব্যুরোর নিয়মানুযায়ী প্রতিটি প্রকল্পের ১৫ভাগ টাকা প্রশাসনিক ব্যয়ের জন্য রেখে বাকি ৮৫ভাগ টাকা কর্মসূচির কাজে ব্যয় করতে হবে। অথচ এমনও দেখা যায়, প্রকল্পের বরাদ্দের শতকরা ৮০ভাগ যায় পরিবহন ও বিদেশী কর্মকর্তা উপদেষ্টাদের পেছনে। ১৫ভাগ ব্যয় হয় স্থানীয় কর্মচারীদের পেছনে এবং টার্গেট গ্রুপের জন্য ব্যয় হয় শতকরা মাত্র ৫ভাগ।
এনজিওতে কাজ খুবই প্রাণবন্ত এবং বহুমাত্রিক। প্রাথমিক কাজ হচ্ছে, এনজিওটিকে সামাজিকভাবে পরিচিতি করানো, এনজিওটিকে রেজিস্টার্ড করা, ওয়েবসাইট তৈরি, এনজিওটি কোন্ কোন্ বিষয়ের উপর কাজ করবে তা সুনির্দিষ্ট করা। এনজিওতে কাজের ধরনকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে প্রজেক্ট ভিত্তিক, এবং আরেকটি হচ্ছে পার্মানেন্ট বা স্থায়ী ভিত্তিক। প্রজেক্ট ভিত্তিক কাজগুলোতে কর্মীরা চুক্তি ভিত্তিতে নিযুক্ত হন। অর্থাৎ প্রজেক্টের মেয়াদ যতদিন থাকবে, ঐ পদের জন্য তারা ততোদিনই কাজ করবেন। এনজিওতে কিছু পদ আছে যেগুলোকে বলা হয়ে থাকে রেগুলার পজিশন। প্রজেক্টের সাথে এগুলো সরাসরি সম্পৃক্ত থাকে না। এগুলোকে সুপারভাইজরি পজিশন-ও বলা হয়ে থাকে। স্থায়ীদের বেতন-ভাতাদি নির্দিষ্ট কোনো প্রজেক্টের উপর নির্ভর করে না। স্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরতদের কর্মক্ষেত্র এবং কাজের ধরন সাধারণত অন্যান্য সেক্টরগুলোর মতোই হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার জনশক্তি এনজিওতে কর্মরত। এনজিও তে বেতন কাঠামো নির্ভর করে ঐ প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার উপর। আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো দেশি এনজিওগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি বেতন দিয়ে থাকে। এন্ট্রি লেভেলের কর্মীদের বেতন ১০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। কর্মীকে কোন্ এলাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার উপরেও অনেক সময় বেতনের পরিমাণ নির্ভর করে। এন্ট্রি লেভেলে বেতন কম থাকে কারণ আদর্শগতভাবে এনজিও কোনো ব্যবসায়িক লাভের জন্য কাজ করে না। তাই এনজিওর লক্ষ্য থাকে কর্মীদের যত কম বেতন দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ উন্নয়নের কাজে লাগানো যায়। বেতন শুরুতে কম থাকলেও পরবর্তীতে পদোন্নতির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাবে। এনজিওতে পদোন্নতির ধরনটা অন্যান্য সেক্টরগুলো থেকে অনেকটাই আলাদা। বেশিরভাগ এনজিওতে পদোন্নতি ‘সময় ভিত্তিক’ না হয়ে ‘পারফর্মেন্স ভিত্তিক’ হয়ে থাকে। ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোতে “Annual Performance Appraisal System ” থাকে, যা বছর শেষে কর্মীদের কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করে। তাই, অন্যান্য সেক্টরের মত এখানে একটি নির্দিষ্ট সময় কাজ করলেই পদোন্নতির নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না, বরং তা নির্ভর করে কর্মীর কৃতিত্ব ও কর্মদক্ষতার উপর। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এনজিওতে কর্মরত অবস্থায় একজন যেমন নানামুখী কাজ শিখতে পারেন, ঠিক তেমনি ভাবে নিজের কর্ম দক্ষতা দিয়ে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার উজ্জ্বল করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার আব্দুল্লা আল মামুন বলেন: ‘It is a challenge. Initially you have to move a lot, you have to work a lot, you have to learn a lot.’
বাংলাদেশ সরকারও দেশের উন্নয়নে এনজিওর অবদানকে স্বীকার করে। এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপের মধ্যে আছে,১. পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারীদের অর্থসংস্থা ২.এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ৩.সরকার-এনজিও পরামর্শ পরিষদ। বাংলাদেশে এনজিওদের সংগঠন রয়েছে। যেমন Association of development Agencies in Bangladesh (ADAB), Federation of NGO’s in Bangladesh. বাংলাদেশে Ngo নিবন্ধন নিতে হয়-১.সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদফতর। নিবন্ধনভূক্ত ৫১,০০১ টি। তন্মধ্যে ১৬ হাজারের অধিক বেসরকারি সংস্থার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। ২.মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধীনে মহিলা অধিদফতর। নিবন্ধনভূক্ত ১৫,৩২৫ টি। ৩.বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন অফিস অব দ্য জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস। নিবন্ধনকৃত ৯,০৩১ টি।৪.বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রনাধীন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। নিবন্ধনকৃত ৩২৯ টি। ৫.প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। নিবন্ধনকৃত ২৩৫৬ টি। দেশী ২১৪১, বিদেশী ২১৫ টি। বাংলাদেশে নিবন্ধিত এনজিও ৭৮,০৪২ টি। অর্থাৎ প্রতি ১৯২৩ জনে একটি এনজিও। প্রতি পৌনে এক বর্গমাইলে একটি এনজিও।
বিদেশী অর্থ আনতে হলে এনজিও বিষয়ক বুর্যোনর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। দেশী এনজিওগুলোর বিদেশী দাতা সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহের খাত আছে ১৫ টি। দাতা সংস্থা -১.ইউরোপ-আমেরিকার ধনী রাষ্ট্র। যেমন: আমেরিকা, সুইডেন,নরওয়ে,কানাডা,ফ্রান্স। ২. মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ধনী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের এনজিওগুলোতে সর্বোচ্চ তহবিল জোগানদানকারী হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সংস্থা ইউএসএআইডি এবং ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ সংস্থা অক্সফাম। এছাড়া উল্লেখযোগ্য হলো সুইডিশ ফ্রি চার্চ এইড, ফোর্ড ফাউন্ডেশন,কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি সার্ভিস ওভারসিস (কিউসো), কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এইড (সিডা), ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্ট (ড্যানিস), নরওয়েজিয়ান এইড ফর ডেভেলপমেন্ট (নোরাড),সুইস ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এসডিসি) প্রভৃতি।তহবিল জোগানদাতারা সাধারণত দুভাবে তহবিল দেয়। একটি হচ্ছে প্রকল্পের ওপর অনুদান আর অন্যটি হচ্ছে সাধারণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্য অনুযায়ী। অনুদান সাধারণত ৩ থেকে ১২ বছরের জন্য দেওয়া হয়। তহবিল পাওয়ার জন্য প্রথমে প্রার্থীকে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠাতে হয়। তহবিল পাওয়ার পর কার্যক্রম সম্পর্কে নিয়মিত (কখনো ত্রৈমাসিক,কখনো দ্বিমাসিক, কখনো মাসিক) প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। মাঝে মাঝে তহবিল জোগানদার সংস্থার প্রতিনিধি প্রকল্প পরিদর্শন করে। আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ খ্রিস্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তহবিল জোগান দিতে বেশি আস্থাবোধ করে এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলোও টার্গেট গ্রুপ অ্যাপ্রোচ নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশে বেশকিছু মুসলিম এনজিও কাজ করছে, যারা তহবিল পেয়ে থাকে সৌদি আরব, লিবিয়া, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি রাষ্ট্র ও তাদের নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সংস্থা থেকে।
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ২৩৩টি বিদেশী এনজিও কাজ করছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব এনজিও’তে ৩৪২ জন বিদেশী নাগরিক এবং ১৫ হাজার ৮১৫ জন বাংলাদেশী কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে কর্মরত আছে বলেও জানান তিনি। কোনো এনজিও বিদেশী নাগরিক নিয়োগ করতে চাইলে সংস্থার অর্গানোগ্রাম অথবা এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অনুমোদিত প্রকল্পে বিদেশী বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োগের সংস্থান থাকতে হয়। নিয়োগের শর্তানুযায়ী যথাযথভাবে বিদেশি নিয়োগ করা হয় এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়ে তারা এদেশে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে কোনো বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন না। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিক সংস্থার প্রধান কার্যালয় যে দেশে অবস্থিত সেই দেশ থেকে বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করেন। প্রকল্পে অর্থের সংস্থান থাকলে বাংলাদেশের চলমান প্রকল্প থেকে বাংলাদেশি মুদ্রায় বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করেন। সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে বিদেশি২৩৩টি এনজিও’র মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মোট ৭০টি এনজিও রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনজিও রয়েছে ৩৬টি এবং জাপানভিত্তিক এনজিও’র সংখ্যা ১৯টি। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এনজিও’র সংখ্যা ১০টি, বেলজিয়ামভিত্তিক ৩টি, কানাডাভিত্তিক ৮টি, ডেনমার্কভিত্তিক ৫টি, ফিনল্যান্ডভিত্তিক ২টি, ফ্রান্সভিত্তিক ৮টি, জার্মানভিত্তিক ৬টি, হংকংভিত্তিক ২টি, ভারতভিত্তিক ২টি, আয়ারল্যান্ডভিত্তিক ১টি, ইতালিভিত্তিক ৩টি, কুয়েতভিত্তিক ২টি, নেদারল্যান্ডভিত্তিক ৯টি, নিউজিল্যান্ডভিত্তিক ২টি, নরওয়েভিত্তিক ৪টি, কাতারভিত্তিক ১টি, সৌদি আরবভিত্তিক ৬টি, দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ১১টি, স্পেনভিত্তিক ৪টি, সুদানভিত্তিক ১টি, সুইডেনভিত্তিক ৬টি, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ৯টি, থাইল্যান্ডভিত্তিক ১টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ২টি।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটেও এনজিও গুরুত্বপূর্ণ। ইউএনডিপির-র মতে, ২০০১ সালে পাকিস্তানে এনজিওর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজারের মতো। ধারণা করা হয়, প্রকৃত সংখ্যা ২৫ থেকে ৩৫ হাজার। মার্কিন অর্থ সাহায্যেও ৯২ শতাংশ ব্যয় হয় পাকিস্তানে কর্মরত মার্কিন এনজিওগুলোর দ্বারা। বিদেশী সাহায্যেও ৪০ শতাংশের বেশি অর্থ কনসালটেন্সি বাবদ দাতা দেশগুলোতে ফিরে যায়। ভারতে এনজিওর সংখ্যা প্রায় ১৫লাখ। এর মধ্যে ২৬.৫ শতাংশ ধর্মীয়, ২১.৩ শতাংশ সামাজিক কর্মকান্ড, স্বাস্থ্য খাতে ৬.৬ শতাংশ, ১৭.৯ শতাংশ সংস্কৃতি ও খেলাধুলা বিষয়ে কাজ করে।
বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৪০ হাজার আন্তর্জাতিক এনজিও রয়েছে। ১৯৯৫ সালে আরব দুনিয়াতে ১লাখ ৭৫ হাজার এনজিও কাজ করত। ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনী ইরাক দখলের পর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২লাখ ২৫ হাজারে। UNDP এর মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০০ সালে ৩৪ মিলিয়ন এইডস আক্রান্ত, ১০০ কোটি স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, ২৫০ কোটির পয়:নিষ্কাশনের সুবিধা নেই, ১০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানি পায়না, ৮৪ কোটি অপুষ্টির শিকার, ৮৫ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক নিরক্ষর। ১৯৯৮ সালে ২৮০ কোটি মানুষের দৈনিক আয় ২ মার্কিন ডলারের নিচে ছিল। তন্মধ্যে ১২০ কোটি হতদরিদ্রের দৈনিক আয় ১ মার্কিন ডলার। এই সংখ্যাটা বেড়েই চলছে। ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনকারীরা মনে করছে দেশের শতকরা ৯৯ ভাগ সম্পদ রয়েছে কেবলমাত্র শতকরা এক ভাগ লোকের হাতে। বিশ্বের মোট আয়ের মাত্র পাঁচ শতাংশের সমান পৃথিবীর ৪০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের আয়। বিশ্বের প্রতি দুইটি শিশুর মাঝে একজন গরীব। আর বিশ্বের ২০% ধনী লোকদের আয়ের পরিমাণ সারা বিশ্ব আয়ের চার ভাগের তিন ভাগ! অন্যকথায়, মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের কাছে পৃথিবীর মোট আয়ের ৭০ শতাংশ যায়। পৃথিবীর ৪১টি দরিদ্রতম (৫৬৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার) দেশের মোট মাথা পিছু সম্পদের তথা জিডিপি বিশ্বের সর্বাধিক মাত্র ৭ জন ধনী ব্যক্তির মোট সম্পদের চেয়ে কম! ফলে দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোটা মানবিক বটে।
ইউনিসেফ এর তথ্যানুসারে আজ বিশ্ব জুড়ে প্রতিদিন ২২ হাজার শিশু মারা যায় এবং তারা অভাব ও অনাহারে নীরবে প্রাণ হারাচ্ছে দরিদ্রতর পাড়াগাঁয়ে। অথাৎ প্রতি মিনিটে ১৪ টি শিশুর মৃত্যু ঘটে।ইউনিসেফের তথ্যানুসারে আরো জানা যায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটায়। গত বছর ২০১০ সালে পরিসংখ্যানে দেখা যায় জন্ম হওয়ার পর থেকে ৫ বছর বয়সেই ৭.৬ মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হয়ে যায়।১ বিলিয়ন মানুষ সঠিক স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত!ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের-২০০৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘৮০ ভাগ শিশু রক্তস্বল্পতার ভুগছে। ফলে শিশুদের নিয়ে কাজের প্রয়োজনীয়তাটা আছে।
বর্তমানে সামাজিক সমস্যা মানুষকে অক্টোপাসের ন্যায় ঘিরে রেখেছে। দুর্বল পারিবারিক সম্পর্ক, মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত শিশুদের রাস্তায় রাত যাপন, নারীদের উপর চাপানো বঞ্চনা, প্রবীণদের আশ্রয়হীন হয়ে পড়া এবং দুর্নীতির নগ্ন বহি:প্রকাশ জাতীয় উন্নয়নকে বাধাঁগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশে যুবকদের ৭৮.২৫% দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছে। বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারীর ৮২% ১৫-৩০ বছরের মধ্যে, ১৬% ১৫ বছরের নিচে। ২০০৮ সালেই মাদকাসক্তদের সংখ্যা ছিল ৮৫ লাখ, ঢাকাতেই ১লাখ ২০ হাজার। আর এই মাদকাসক্তদের ৮৫% বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের সাথে জড়িত। ঢাকার মোট জনসংখ্যার ৬ভাগ বস্তিতে বসসাব করে। ফলে যেসব সামাজিক সমস্যার সমাধানের প্রয়োজন সেগুলো হলো দারিদ্র্য, পথশিশু, কিশোর অপরাধ,মাদকাসক্তি, নারীর প্রতি সহিংসতা, দুর্নীতি, সহায়হীন বার্ধক্য ও অসহায়ত্ব। সচেতনতা না বাড়লে এসব সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করা যাবে না।
সন্ত্রাসবাদ সমস্যাটির মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে সর্বাধিক হুমকির সম্মুখীন করেছে। পৃথিবীতে ১২ মিলিয়ন শরণার্থী এবং ৫ মিলিয়ন অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত শরণার্থী রয়েছে। ১ম বিশ্বযুদ্ধে ৩৮০ বিলিয়ন ডলার, ২য় বিশ্বযুদ্ধে ৩.১ ট্রিলিয়ন ডলার, ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৫৭০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে সমরাস্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরির জন্যে সামরিক খাতে প্রতিবছর ৯০০ বিলিয়ন (৯০ হাজার কোটি) ডলার খরচ হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের মতো দেশে প্রতি ২০ বছরে যা কিছু উৎপাদন হয়, মানবিক ও বস্তুগত সম্পদ; সেই পরিমাণ সম্পদ প্রতিবছর ব্যয় হয় ধ্বংসের কাজে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ও মানবতার পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।
বাংলাদেশে ১ কোটি সাড়ে ১২ লাখ ভূমিহীন ও প্রা্ন্তিক চাষী রয়েছে। দেশে নিরক্ষর ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে নিম্নবিত্ত, ভাসমান মানুষ ও বস্তির সংখ্যা। ২০০০ সালের দিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরের ৬০ লাখ মানুষ বাস করে বস্তিতে এবং ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে। ২০০৫ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। সবোচ্চ সংখ্যক দরিদ্র মানুষের বসবাসের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয়। ঢাবির পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. মো: আতাহারুল ইসলামের মতে, ২০৫০ সালের দিকে জনসংখ্যা হবে কমপক্ষে ১৮.৮ কোটি এবং সর্বোচ্চ ২৪.৪ কোটি। কোনও কোনও সংস্থার মতে ২০৫০ সালে ২৮ কোটিও নাকি হতে পারে। অনুমান করা যায় ২০৫০ সালে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০ হাজার ছোট, মাঝারি, বড় নগর থাকবে, থাকবে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ গ্রাম। ফলে এদের জীবন-জীবিকা নিয়ে আজকের ভাবনাটা যৌক্তিক।
আমাদের এমন একটি পলিসি ইনস্টিটিউট নেই যেই সংগঠনটি Social policy, political strategy, economics, military, technology, culture- এসব বিষয়ে Research এবং Advocacy করবে। বিশ্বে ৪৫০০টিরও বেশি পলিসি ইনস্টিটিউট আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় brain box বলা হত। স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তীতে International affairs, security studies, foreign policy গুরুত্ব পায়। বিভিন্নভাবে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গড়ে ওঠে। যেমন: ১.স্বাধীন সুশীল সমাজ কর্তৃক-এনজিও ২.বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (Independent Research, Consultancy, Influencing) ৩. সরকার বা রাষ্ট্রের পৃষ্টপোষকতায় ৪.কর্পোরেট গ্রুপ বা ব্যবসায়ীদের পৃষ্টপোষকতায় ৫.রাজনৈতিক দল কর্তৃক ৬. ব্যক্তিগত বা সমষ্টির মুক্ত উদ্যোগে ৭.বৈশ্বিক, আঞ্চলিক সংগঠনের মাধ্যমে। এটি স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকায় এবং কোন ধরনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় নিরপেক্ষভাবে ও মুক্তভাবে দেশের স্বার্থ,জাতীয় স্বার্থ, মানবতার স্বার্থে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এনজিও গুলো প্রেসার গ্রুপ হিসাবে কাজ করতে পারে। Pressure-group, Interest-group এবং Lobbies এর মধ্যে সবসময় পার্থক্য নির্ণয় করা কঠিন। চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে যে কোন সমমনা জনগোষ্ঠীকে বুঝায় যারা সমাজের অপরাপর গোষ্ঠীসমূহকে তাদের নিজস্ব মতানুযায়ী আচরণের দাবি করে। প্রভাবশালী মহলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, ক) স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী খ) প্রচারণা গোষ্ঠী (Promotional groups) . যে কোন সংগঠিত বা অসংগঠিত জনসমষ্টি যারা স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে চাপ প্রয়োগের কৌশল অবলম্বন করে।
দুর্নীতিকে সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারলে রাষ্ট্রের প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে। টিআইবির রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার এবং ২০১০ সালের জরিপে ১০ মাত্রায় ২.৩% দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসাবে স্বীকৃত।স্বাধীনতাযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের মানুষ ৭৫হাজার কোটি টাকার সাহায্য প্রদান করেছিল তবু আমরা দেশটাকে গড়তে পারিনি। এপর্যন্ত যত বৈদেশিক অনুদান এসেছে তার ৭৫ ভাগ লুট হয়েছে। দুর্নীতিকে বৃহত্তর স্বার্থে রুখতেই হবে।
২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভুমি সমুদ্র গর্ভে চলে যাবার আশংকা রয়েছে। আসবে খাদ্য উৎপাদনে আঘাত। উদ্বাস্তু ভুমিহারাদের চাপ কমাবে আবাদী জমি। পরিবেশ বিপর্যয়রোধে ও মান উন্নয়নে, মানব সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ, মহামারী, খরা, বন্যা, নদী ভাঙ্গন ও প্রাকৃতিক ও নাগরিক দুর্যোগকালীন সময়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট ( আইএফপিআরআই) প্রকাশিত গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০০৮(জিএইচআই) এ ৩৩ টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশের ৩৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সব সময় জোগাড় করতে পারেনা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষণায় দেশের খাদ্য সংকটের যে চিত্রটি দেখা যায়, ৫০% পরিবার বছরের কোন না সময় খাদ্য সংকটে থাকে,২৫% পরিবার নিয়মিত ভাবে সারা বছর খাদ্য সংকটে থাকে,১৫% পরিবার ১ বেলা খেয়ে পরের বেলায় খাদ্য নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকে,৭% পরিবার কখনই তিন বেলা খেতে পায় না।বিশ্বে প্রতি বছর যত খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে, তার অন্তত ৩০% থেকে ৫০% অপচয় হচ্ছে। নষ্ট হওয়া এই খাদ্যের পরিমান প্রায় ২০০ কোটি টন। ব্রিটেনে প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের হিসেব অনুযায়ী ২০৭৫ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯৫০ কোটি। ড: টিম ফক্সের ভাষায়, যেখানে বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যান, সেখানে এই অপচয় মেনে নেয়া যায় না। কেউ খাবে কেউ খাবে না এটা হতে দেয়া যায় না।
আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষার সমন্ময়ে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। উন্মুক্ত এবং পথশিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা, বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী ও বিষয়ভিত্তিক গবেষকদের বৃত্তি প্রদান, আবাসিক ও অনাবাসিক স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা। গরীব ও মেধবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ তহবিল প্রকল্প চালু করা। শ্রেণী-ভিত্তিক বৃত্তি প্রকল্প চালু করা। অনলাইনে পড়াশোনা করার শিক্ষা বিষয়ক সাইট, লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল বা ই-লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা, ব্যক্তিগত লাইব্রেরী-পারিবারিক লাইব্রেরী-সামষ্টিক উদ্যোগে লাইব্রেরী গড়ে তোলায় সহযোগিতা, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, রিসার্চ ইনস্টিটিউট করা যেতে পারে।
সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দিবস পালনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্লাড গ্রুপিং, ফ্রি-মেডিক্যাল চেকআপ, ডায়বেটিস চেকআপ, চক্ষুশিবির স্থাপন, রক্তদান কর্মসূচী, বিশেষায়িত ও জেনারেল হাসপাতালের মাধ্যমে স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা প্রদান, ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, ডিপ্লোমা ট্রেনিং ইনসটিটিউট প্রতিষ্ঠা, গ্রামঞ্চলে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে ধাত্রী তৈরি, পল্লী চিকিৎসক তৈরি, চিকিৎসা সেবা প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা। যেখানে ডাক্তার ও জনসংখ্যার গ্রহণযোগ্য স্টান্ডাড অনুপাত হচ্ছে ১:৫০০ সেখানে বাংলাদেশে ১:৫০০০। হেলথ ওয়াচ নামের এক বেসরকারি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়,বাংলাদেশে একজন চিকিৎসক গড়ে প্রতিটি রোগীর পেছনে সময় দেন মাত্র ৫৪ সেকেন্ড।বাংলাদেশে কিডনি ফাউন্ডেশন এবং বিএসএমএমইউ-সমীক্ষা থেকে এটা প্রতিয়মান হয় যে, বতমানে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ লোক দীঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০হাজার রোগীর কিডনি সম্পূণভাবে অকেজো হয়ে মারা যায়।এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৮ লক্ষ ক্যান্সার রোগীর ৭ লক্ষই চিকিৎসা পাচ্ছে না।
গণমাধ্যম বিষয়ে গবেষণা, সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ও পেশাজীবি আচরণ তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা, সাংবাদিকদের ফেলোশীপ প্রদান, পুরস্কার প্রদান, কর্মসংস্থান তৈরি, দৈনিক/ সাপ্তাহিক/মাসিক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, রেডিও, অনলাইন পত্রিকা, নিউজ এজেন্সী গঠন। দেশীয় সংস্কৃতির লালন ও বিকাশ, পরিবর্ধন ও লালনে সময়োপযোগী পদক্ষেপ, আগ্রাসী সাংস্কৃতির প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, উন্মুক্ত সংস্কৃতির চর্চার পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখা ইত্যাদিসহ সাংস্কৃতিক বিকাশে সহযোগিতা করা। ই-বুলেটিন, ই-জার্নাল, ই-বুক, ই-লাইব্রেরী, ম্যাগাজিন, ব্লগ, অনলাইন নিউজ সাইট তৈরি করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, কমনওয়েলথসহ একাধিক সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক দশকে বাংলাদেশে বেকারত্ব বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ, কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার কমেছে ২ শতাংশ। এই হার বজায় থাকলে ২০১৫ সালে মোট বেকারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬ কোটিতে। শিক্ষিত জনসাধারণের মধ্যে এই হার সবচেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারত্ব বাড়ার হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর কর্মবাজারে প্রবেশ করছে প্রায় ২৭ লাখ আর চাকরি পাচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার। অর্থাৎ মাত্র ৭ শতাংশ। আইএলওর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ বেকার, বর্তমান কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ২ শতাংশ।ফলে বেকারত্ব নিরসনে বেসরকারি উদ্যোগে কমসংস্থান সৃষ্টি হওয়াটা খুব বেশি জরুরী।
যারা প্রবাসে থাকেন তাদের অনেকেরই নিজ দেশের প্রতি, নিজ দেশের মানুষের প্রতি, নিজ জাতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ২২ কোটি লোক নিজ জন্মভূমিতে থাকে না। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। বিশ্ব অভিবাসীদের ৪ শতাংশ আমাদের হলেও রেমিট্যান্সের মাত্র আড়াই শতাংশ আমাদের ভাগে আসে।
পৃথিবীতে যত শ্রম বিক্রি হয় তার ৬৬ শতাংশ নারী থেকে আসে। কিন্তু শ্রমের জন্যে যে বিনিময় হয় তার মাত্র ১০ শতাংশ পায় নারী। পৃথিবীর মোট সম্পত্তির শতকরা একভাগ মালিকানা নারীর।
বাংলাদেশের এনজিও সংস্থা নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর সমালোচনা করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আইনে বলা হয়েছে, বেসরকারি সংস্থা বা কোন ব্যক্তি অনিয়মের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন জানাতে পারবে। এর দ্বারা বোঝা যায়, সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যেটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে। আইনটি সরকারের মন্ত্রণালয়কে কোন বেসরকারি সংস্থার প্রজেক্ট পুন:বিবেচনা বা বাতিল করার ক্ষমতা প্রদান করেছে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবীদের তাদের প্রজেক্টের কাজে বিদেশ ভ্রমণের পূর্বে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আর্টিকেল ১২ এর নাগরিকের ব্যক্তি ও রাজনৈতিক অধিকারের লংঘন। সরকারের সমালোচনার জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর অর্থায়ন বন্ধ করেছে। সংস্থাটির কর্মকর্তা আদিলুর রহমান খান ও এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানকে গ্রেফতার ও হয়রানি করেছে।অপর এক প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উপরও নজরদাড়ি বাড়ানো হয়েছে। গত মে মাসে সংস্থাটির পরিচালক (তদন্ত) মোহাম্মদ নূর খানকে অপহরণের চেষ্টা চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দ্বারা বিচার-বর্হিভূত হত্যাকান্ডের সমালোচনার জন্য তাকে হুমকি শুনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে সরকারের সাথে এনজিওদের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। ২০০১ সালের আগে আওয়ামীলীগ শাসনামলে কতিপয় এনজিও-র বিরুদ্ধে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক এবং তার ফলে সেসব এনজিও-র উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ দিয়ে শুরু, আর ২০০১ সালের নির্বাচনের পর প্রকাশ্যে এই দ্বন্দ্ব দেখা যায় বিএনপি-প্রশিকার দ্বন্দ্ব আকারে। এরপর ছোট-মাঝারি আকারের অনেক এনজিও সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা লাভ করে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এসে এই দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করে, যা’র প্রকাশ দেখি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রশিকা থেকে কাজী ফারুকের বহিস্কারের মধ্যে।
কেইস স্টাডি-১: লায়ন্স ক্লাব
১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩৮ বছর বয়স্ক সিকাগোর ব্যবসায়িক নেতা গবষারহ Melvin Jones এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২০ সালে এটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্টান রুপে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯২৫ অন্ধদের নিয়ে কাজ শুরু করে। ১৯৪৫ সালে UN সম্পর্ক,যুক্ততা হয়। যৌথ উদ্যোগে কাজ শুরু হয়। ১৯৫৭ সালে Youth Program চালু করে। ১৯৬৮সালে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা হয়। বিশ্বে ৪৬,০০০/= শাখা ক্লাব আছে। ২০৬ টি দেশে ১.৩৮ মিলিয়ন সদস্য আছে। টার্গেট গ্রুপ-১.শিশু ২.তরুণ ও যুবক ১,৪৪,০০০ লিওস, ১৪০ টি দেশে, ৫৭০০ লিও ক্লাব ৩.ছাত্র কাজ: ১.পরিবেশের যত্ন নেয়া ২.ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান ৩.রোগ্ন ও প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা প্রোগ্রাম: Peace poster Contest, Essay Contest,Tours,Summit,Camping season
কেইস স্টাডি-২:বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন
১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে মিরপুরে ২০ শয্যা বিশিষ্ট লায়ন্স আই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালে আগারগাওয়ে ২.২৫ বিঘা জমি কেনে। ১৯৮৪ সালে নিজস্ব জমিতে পাঁচ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়। ২০০৪ সালে লায়ন্স আই হাসপাতাল আই ইনস্টিটিউটে উন্নীত হয়। প্রজেক্ট:১.আই ইন্সটিটিউট এন্ড হাসপাতাল২.ডেন্টাল ক্লিনিক ৩. ENT ক্লিনিক Physiotherapy Clinic 5.Mother & Child Care Center 6.BLF Education Fund এদের আছে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি। বাংলাদেশে ১০ হাজার লায়ন্স মেম্বার রয়েছে। ৩১০৩ জন আজীবন সদস্য। আজীবন সদস্য ২০০০ টাকা। Patron ship ১০,০০০/= কমিটি:চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যান,সেক্রেটারী জেনারেল,ট্রেজারার,জয়েন্ট সেক্রেটারী জেনারেল,জয়েন্ট ট্রেজারার। Administrative Committee: 1.Membership 2.Club Branch 3.Leadership Development 4.Public Relations 5.Retention. Activities Committee: 1.Services for Children 2.Opportunities for youth 3.Youth Camp & Exchange Program 4.Environmental 4.Community 5.Diabetes Awareness. Club officers: 1.Manuals & Guides/ Governance 2.Forms 3.Finance 4.Awards
কেইস স্টাডি-৩: ব্র্যাক
কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো বিশ্বখ্যাত এনজিওগুলোকে পেছনে ফেলেছে ব্র্যাক। সুইজারল্যান্ডের সাময়িকী ‘দ্য গ্লোবাল জার্নাল’র বিচারে বিশ্বের এক শ’ সেরা এনজিও’র তালিকায় শীর্ষে বাংলাদেশের ব্র্যাক। যুক্তরাষ্ট্রের উইকিপিডিয়া ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্রের পার্টনারস ইন হেলথ, যুক্তরাজ্যের অক্সফাম,সেভ দ্য চিল্ড্রেনকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান দখল করেছে বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি- ব্র্যাক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর ত্রাণ ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে কাজ শুরু করে ব্র্যাক। ফজলে হাসান আবেদ প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের ‘সর্ববৃহৎ’ এই এনজিওটি বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১২টি দেশে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের জন্য কাজ করছে। ‘দ্য গ্লোবাল জার্নাল’ বলেছে, মানবিক ত্রাণ ও পুনর্বাসন থেকে শুরু করে পরিবেশ রক্ষা, জনস্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা কার্যক্রম, মাইক্রোফাইন্যান্স থেকে মেধাস্বত্ব ছাড়াও বহু ক্ষেত্রে বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এনজিওগুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। প্রভাব, উদ্ভাবন ও স্থায়িত্ব- এই তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশ্বের ৪৫০টি এনজিওর ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্য গ্লোবাল জার্নাল ২০১২ সালে প্রথমবার এই তালিকা প্রকাশ করে। সে সময় ব্র্যাকের অবস্থান ছিল চতুর্থ। এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়, “ব্র্যাকের বিশাল ব্যাপ্তি ও প্রভাব আমাদের মনে বিস্ময় জাগায়। এ সংস্থা প্রায় ১০ কোটি মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে।” পাঁচ লাখ ঋণগ্রহীতার মধ্যে ব্র্যাক প্রায় এক হাজার কোটি ডলার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করেছে।
বর্তমানে এর ১ লাখ ২০ হাজার কর্মী বিশ্বব্যাপী ১১টি দেশে ১৪ কোটি মানুষের জীবন-সংগ্রামে সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্র্যাক একটি নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে, যা উন্নয়ন কর্মসূচিকে সামাজিক উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বিত করেছে এবং একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান ও সেবাগ্রহীতাদের স্বাবলম্বনের পথে এগিয়ে দিয়েছে। সামাজিক সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিয়ে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভুল-ভ্রান্তিগুলো দূর করে অল্প খরচে এবং দক্ষতার সঙ্গে ব্র্যাক তার কাজের পরিধির দ্রুত বিস্তার ঘটিয়েছে। ব্র্যাক একটি উন্নয়ন সংস্থা। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতায়নের অঙ্গীকার নিয়ে এ সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। জনগোষ্ঠীভিত্তিক ব্র্যাকের বিভিন্ন উদ্ভাবনা যথা-ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, আইন সহায়তা, সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ, জীবিকা সংস্থান, অতিদরিদ্রদের সম্পদ হস্তান্তর, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ প্রভৃতির মাধ্যমে সমাজের অধিকারবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের সুপ্ত সম্ভাবনা বিকাশের পথ খুঁজে পেয়েছে।
রূপকল্প : ব্র্যাকের রূপকল্পে বলা হয়েছে এমন একটি পৃথিবী, যেখানে কোনো ধরনের শোষণ ও বৈষম্য থাকবে না এবং প্রতিটি মানুষের নিজস্ব সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ থাকবে।
লক্ষ্য : ব্র্যাকের লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, ব্যাধি এবং সামাজিক অবিচার দূরীভূত করে দরিদ্র মানুষ এবং জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের পথকে প্রশস্ত করা। বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে বড়মাপের ইতিবাচক পরিবর্তন এনে সমাজের সব নারী ও পুরুষের সম্ভাবনার বিকাশ করা।
মূল্যবোধগুলো : ব্র্যাকের মূল্যবোধের মধ্যে রয়েছে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী মনোভাব, সততা ও নিষ্ঠা, সর্বজনীনতা এবং কার্যকারিতা।
কেইস স্টাডি-৪: দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ
বিশ্বব্যাপী বিরাজমান ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্রত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের জন্ম। একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা হিসেবে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ১৯৭৭ সালে যাত্রা শুরু করে। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার ২২ টি দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে এনজিও ব্যুরোর রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্তির মাধ্যমে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ কাজ শুরু করে। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট গতানুগতিক কোন এনজিও বা দাতা সংস্থা নয়। এটি একটি বিশ্বাস, একটি প্রতিশ্রুতি ও একটি সামাজিক আন্দোলন। বিশ্বাসটি হলো, প্রতিটি মানুষ অমিত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মগতভাবে প্রাপ্ত সেই অমিত সম্ভাবনাই তাকে করতে পারে দারিদ্র্যমুক্ত এবং আত্মনির্ভরশীল। মানুষ যদি তার ক্ষমতার সৃজনশীল বিকাশের সুযোগ পায়, সে যদি আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়, তাহলে সে নিজেই তার ভাগ্যোন্নয়নের দায়িত্ব নিতে পারে। নিজ ভবিষ্যতের কারিগর হতে পারে। এ চেতনাবোধ থেকেই দি হাঙ্গার প্রজেক্ট সারা বাংলাদেশে একটি গণজাগরণ সৃষ্টি করতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। যার লক্ষ্য সমাজের প্রতিটি মানুষকে উজ্জীবিত ও সংগঠিত করা। একজন উজ্জীবক ও সংগঠিত মানুষ নিজের জীবনের হাল নিজেই ধরতে পারবে। নিজের অবস’ান থেকে নিজস্ব সম্পদকে প্রাথমিক পুঁজি করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে একক বা সমাজের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট সরাসরি কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে না। তবে মানুষকে এমনভাবে ক্ষমতায়িত করে যাতে তারা তাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেরাই কর্মসূচি বেছে নিতে পারে। তেমনি কিছু সফল কর্মকাণ্ড ও উদ্যোগের বর্র্ণনা নিচে দেয়া হলো:নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইউনিয়নভিত্তিক কর্মপরিকল্পনায় উজ্জীবকরা ইউনিয়নব্যাপী একক ও দলবদ্ধভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আয়বৃদ্ধি, নারী উন্নয়ন তথা সার্বিক অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে গুরুত্বর্পূণ অনুপ্রেরণামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে শতাধিক উজ্জীবকের অনুপ্রেরণায় স্বল্পবিত্তের জনগণকে নিয়ে সারাদেশের ১,৫০০’র অধিক স্থানীয় সংগঠন গড়ে উঠেছে, যার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয় সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনগুলো তারা নিজেরাই পরিচালনা করে। সংগঠনের সদস্যগণ নিয়মিত সভা করে এবং নিজেদের সমস্যা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেয়।দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর স্বেচ্ছাব্রতী উজ্জীবকরা সারাদেশের শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং মান উন্নয়নে অসংখ্য উদ্যোগ পরিচালনা করছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশু, নারী ও বযস্ক মানুষদের মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে উজ্জীবকদের পরিচালনায় শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান। আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর সহযোগিতায় কারিগরি দক্ষতা অর্জন করে সারাদেশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে।
ইউএসএইড মিশন ডিরেক্টর জানিনা জারুজেলকি জানিয়েছে, দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে ইউএসএইড ‘এনজিও হেল্থ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্টে’ আরও ২২৫ কোটি টাকা (২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ‘এনজিও হেল্থ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্ট’র অনুদান ছিল ৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতোমধ্যে সূর্যের হাসি ক্লিনিক, ২৬টি এনজিও, ৩৩০টি ক্লিনিকে প্রায় ছয় হাজার কমিউনিটি হেল্থ ওয়ার্কারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। নতুন এ পার্টনারশিপের মাধ্যমে বৃহত্তর শহরে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে প্রাথমিক সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দরিদ্র মা-নবজাতকের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। ১৯৭১ সাল থেকে ইউএসএইড প্রায় মিলিয়ন ডলার দিয়ে এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিল, যা ২০১৩ সালে ছিল দুইশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রজেক্টের মাধ্যমে যেসব প্রোগ্রাম বা স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় সেগুলো হলো- প্রমোশন ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউশন, প্র্যাক্টিস অ্যান্ড প্র্যাক্টিসেস, এক্সপান্ড ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড ইকোনোমি অপরচ্যুনিটি, ইমপ্রুভ হেল্থ অ্যান্ড এডুকেশন সার্ভিসেস, ইনক্রিজ রিলিজ্যান্সি টু ক্লাইমেট চেঞ্জ।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের ব্যাপক বিস্তারের শুরু মূলতঃ ১৯৯০-এর দশকে। অল্প সময়ের মধ্যে দেশ কতগুলো প্রাকৃতিক দূর্যোগের শিকার হয়, যেমন- ১৮৮৮, ১৯৯৬ ও ৯৮ এর ব্যাপক বন্যা। এসময় বাংলাদেশে বেশ কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়ঃ বাংলাদেশ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে, নারী শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহন করে, গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে মাঠপর্যায়ে বিস্তৃত করে। নতুন নতুন এইসব কর্মসূচীতে সরকারের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনের বদলে বেসরকারী পর্যায়ের অংশগ্রহন প্রধান হয়ে ওঠে, সরকার থাকে তাদের সহযোগীর ভূমিকায়। এই পর্যায়ে দেখি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এনজিও ‘ব্যবসা’র প্রসারঃ অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় ব্র্যাক স্কুল (আসলে ছোটবড় সকল এনজিও), সেনিটেশন কার্যক্রমে ব্র্যাক (এবং অন্যান্য এনজিও), ক্ষুদ্রঋণে গ্রামীন (সেই সাথে আশা এবং অন্যান্য এনজিও)। এইসব গণমুখী কার্যক্রমে শুরুতে জনসেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসলেও সকল এনজিও কার্যক্রমেই মুনাফা লাভের বিষয়টা অবিচ্ছেদ্যভাবে বিদ্যমান, যা’ এনজিওদের ক্রমবর্ধমান “নিজস্ব সম্পত্তি” এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জীবনযাপনে দৃশ্যমান (যদিও কাগজে-কলমে এটা কোন এনজিও স্বীকার করে না)। এসময় বিদেশী রাষ্ট্র এবং দেশীয় সরকার নিজ নিজ স্বার্থে এনজিওদেরকে সকলপ্রকার সমর্থন দিয়ে যায়। বিদেশী রাষ্ট্র উন্নয়ন অনুদান প্রদানের মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব জারি রাখতে চায়, দেশীয় সরকার জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য নানান খাতে ব্যয় করা থেকে রেহাই পায়। সরকারসমূহের পাশাপাশি এই সময় বিশ্বপুঁজির আরেক শক্তিশালী পক্ষকে দেখা যায়, এটা হলো জায়ান্ট কর্পোরেট যাকে সংক্ষেপে MNC বলা হয়। আলোচ্য এনজিও কার্যক্রমে এদের স্বার্থটা হচ্ছে নিজ নিজ পণ্যের (প্রযুক্তি, ভোগ্যপণ্য, ইত্যাদি) বাজারের বিস্তার। যেমন, এনজিওদের সেনিটেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে প্রথমে শেখানো হলো টয়লেট এবং খাবার গ্রহনের আগে+পরে ভালো করে (ছাই দিয়ে) হাত পরিস্কার করতে হবে, এখন এসেছে ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’ যেখানে শেখানো হচ্ছে লাইফবয় সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। একইভাবে আর্সেনিক সম্পর্কিত গবেষণা ও সচেতনতা বৃদ্ধি প্রকল্পের মাধ্যমে বোতলজাত পানির বাজার তৈরী করা হয়েছে।
এনজিওতে কাজ করতে হলে দরকার মানসিকতা, ধৈর্য, সাহস, পরিশ্রমী মনোভাব, সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে জানা। গ্রামীণ অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা মৌলিক একাউন্টিং ব্যবস্থাপনাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, কম্পিউটারে দক্ষতা, রিপোর্টিং, উপস্থাপন দক্ষতা, উপস্থিত বুদ্ধি, অভিযোজনশীলতা এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণের অদম্য ইচ্ছা। বড় বড় এনজিওগুলোতে বাংলাদেশে আপনার পারফরম্যান্স ভালো থাকলে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশেও কাজের ক্ষেত্র খুলে যেতে পারে। সফলভাবে এনজিওতে ক্যারিয়ার গড়তে গুরুত্বপূর্ণ চারটি দক্ষতার প্রয়োজন। ১. ভালো উপস্থাপন কৌশল: এনজিওতে কাজ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভালো উপস্থাপন কৌশল। এনজিওদের টার্গেট গ্রুপ বা তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে সংস্থার কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করানোর জন্য যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় তার প্রত্যেকটিতেই ভালো উপস্থাপন জানা প্রোফেশনাল। উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রকৃত ম্যাসেজটি টার্গেটগ্রুপের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন, যথাযথভাবে বুঝানোর ওপর পরিমাপ হয় যোগ্যতা। চিন্তাভাবনাগুলো Logically বিন্যস্ত হতে হবে। প্রত্যেকটির যৌক্তিক ব্যাখ্যা থাকবে। হতে হবে উন্নয়নমূলক চিন্তাবিদ ও বিজ্ঞানমনস্ক। ২. ভালো লেখার ক্ষমতা: আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হলো ভালো রাইটিং স্কিল। ডাটা অ্যানালাইসিস, রিপোর্টিং মূল্যায়ন ইত্যাদির জন্য ভালো লিখিত উপস্থাপনার বিকল্প নেই যে কোনো এনজিওতে প্রোজেক্ট প্ল্যানিংকে লিখিতভাবে উপস্থাপনার জন্য।
সফল এনজিও প্রোফেশনালরা তাদের নিজ ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য কোনো না কোনভাবে নিম্নের ধাপগুলোর মধ্যেই নিয়োজিত থাকেন। এনজিওতে কাজের প্রধান ধাপগুলো যথাক্রমে- প্রকল্প সনাক্তকরণ, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও গবেষণা, রিপোর্টিং, পুন:পরিকল্পনা। কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে করার জন্য এনজিওগুলোতে প্রধানত যে পদ রয়েছে তা হলো-চেয়ারম্যান, পরিচালক পর্ষদের অধীনে পরিচালকবৃন্দ, গবেষণা পর্ষদের অধীনে গবেষকবৃন্দ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এইচ আর ম্যানেজার, জনসংযোগ কর্মকর্তা, প্রোজেক্ট ম্যানেজার, প্রোগ্রাম ম্যানেজার,কর্মসূচি সংগঠক। প্রোজেক্টের সুন্দর উপস্থাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিভিন্ন ডোনার এজেন্সি এসব প্রোজেক্ট প্রোপোজাল দেখেই সাহায্য দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ইংরেজিসহ ভালো অনুবাদও গুরত্বপূর্ণ। রিপোর্ট লেখাসহ বড় সমস্যাকে ছোট করে বুলেট পয়েন্টে তুলে ধরা জানতে হবে।
যে কোনো এনজিওর সাফল্য নির্ভর করে এর টিম ওয়ার্কের ওপর। টিমওয়ার্ক মূলত একই উদ্দেশ্যে একটি সংঘবদ্ধ কর্ম। প্রকল্প ব্যবস্থাপককে এজন্য তার টিমের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হয়। টিম ভালো করলেই প্রোজেক্ট আউটপুট ভালো হবে। আর টিম খারাপ করলে প্রোজেক্টে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এজন্য প্রকল্প ব্যবস্থাপককে সংস্থার মিশন-ভিশনের সঙ্গে প্রকল্পের যোগসূত্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হয় তার টিমকে। সবাই যাতে একই উদ্দেশ্যে সমানভাবে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারে তার জন্য নিতে হয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে প্রকল্পকে কাজে পরিণত করতে একদল কর্মীর সম্মিলিত প্রয়াস থাকে।
এনজিওর জন্য আরেক গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হলো নেতৃত্বের গুণাবলী। তবে একাডেমিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রিধারী হতে হবে। কিছু বড় বড় এনজিও’র ফান্ড রেইজিং নামে পৃথক বিভাগও থাকে যারা সংশ্লিষ্ট এনজিও’র ফান্ড সংগ্রহের জন্য কাজ করে। বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি এনজিও স্থানীয় সম্পদের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়ে থাকে। বাকি অধিকাংশ এনজিওই পরিচালিত হয় বাইরের দাতা সংস্থাগুলোর আর্থিক অনুদানে। আবার কিছু আন্তর্জাতিক এনজিও বাংলাদেশে তাদের কান্ট্রি অফিসের মাধ্যমে সরাসরি বাস্তবায়ন করে থাকে। তবে ফান্ড পেতে হলে দাতারা প্রথমেই বিবেচনা করেন এ ফান্ড কাজে লাগানোর সক্ষমতা আছে কি-না। কোন দাতার কাছে প্রোজেক্ট প্রোপোজাল সাবমিট করলেন, আপনার পরিকল্পনাও দাতাদের পছন্দ হলো, কিন্তু তারা তখন চিন্তা করতে থাকে আপনার এনজিওর সক্ষমতার কথা;তাদের অর্থ কতোটা নিরাপদ ও ফলপ্রসূ। তবে দাতারা প্রথমে ছোট ফান্ডের বিষয়টিকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এরপর সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে পুনরায় বড় অর্থ সাহায্য আসতে পারে। দাতারা আপনার এনজিওর প্রকল্প ব্যয় ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় নিয়েও আগ্রহী। অর্থাৎ তারা দেখে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে কতটা ভারসাম্য আছে।
বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশসমূহে এনজিওগুলোর কাজ করার বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দাতা সংস্থাগুলো সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এনজিও পরিচালনার ওপর জোর দিচ্ছে। ১৯৯৯-এর তথ্যমতে দেশী এনজিও ১২৮০, বিদেশী এনজিও ১৪৯ এবং বিদেশী সাহায্যপুষ্ট এনজিও প্রকল্পের সংস্থা ৬,৪২৪টি। এই বিপুল সংখ্যক এনজিওতে কাজ করছে বিপুল জনশক্তি। প্রতিদিনই কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে দক্ষ ও অদক্ষ জনগোষ্ঠীর। এনজিও’র বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যে জনশক্তির প্রয়োজন তার চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী থেকে। কাজেই বাংলাদেশের শিক্ষিত, দক্ষ, তরুণ তরুণীদের জন্য কাজের বিশাল দুয়ার খুলে গেছে।
বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করতে হলে প্রথম ধাপ হলো অনুমতি গ্রহণ বা বৈধতা অর্জন। বাংলাদেশে এনজিওদের গঠনগত আইনী বৈধতার জন্য বিধিবদ্ধ সংস্থা হলো সমাজসেবা অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, NGO Affairs Bureau এবং Joint Stock Company উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত স্ব-স্ব নিয়ম-নীতির পদ্ধতিগত পরিমাপের আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ তাদের আইনগত বৈধতা প্রদান করে থাকে। উল্লেখ্য যে, বৈদেশিক কোনো আর্থিক ও কারিগরী সাহায্য সহযোগিতা পেতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট এনজিও’কে NGO Affairs Bureau হতে রেজিস্ট্রার হতে হবে বা রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে। Co-Operative Society এবং Voluntary Organization হতে হলে অবশ্যই প্রথমে সমবায় অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার হতে হবে।
যে কোনো এনজিও’র টিকে থাকাটা নির্ভর করে বৈদেশিক সাহায্য ও নিজস্ব সম্পদের ওপর। বাংলাদেশের অধিকাংশ এনজিও মূলত দাতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তাদের সুবিধাভোগীদের সেবা দিয়ে থাকে। এ সেবার মেয়াদ বিভিন্ন প্রকল্পের ছকে বাঁধা থাকে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেবার সমাপ্তি ঘটে। তখন আবার খুঁজতে হয় নতুন নতুন প্রোজেক্ট। বিকল্প কোনো ফান্ড। নিজস্ব ফান্ড তৈরি তাই গুরুত্বপূর্ণ। এনজিওদের কাজের ফলে দরিদ্র, শ্রমজীবী, নারী, প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু, আদিবাসী, দলিত, দুর্গম এলাকার মানুষের নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে মূলস্রোতের জনগোষ্ঠীর মনোভাবের পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। স্বাধীন দেশে সংবিধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদ ও অঙ্গীকার অনুযায়ী সকল মানুষের অধিকার সমান - একথাটি জানা বোঝা ও চর্চ্চায় এনজিওরা একটা বড়ো ভূমিকা রেখেছে। সর্বোপরি বিভিন্ন ইস্যুতে দেশের মানুষের মনোগঠন পরিবর্তনে তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে এনজিওরা কাজ করে না এমন কোনো ক্ষেত্র প্রায় নেই। তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ, মানবাধিকার, পরিবেশ-প্রতিবেশ, নারী অধিকার ও মতায়ন, আইন সহায়তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন, ভূমি ও ভূমিহীনদের অধিকার, লোক ও গণসংস্কৃতি, গবেষণা ও গণগবেষণা, শিশু অধিকার, দুর্যোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা, নাটক ও গণনাটক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, এইডস ও যৌনকর্মী, মাদকাসক্তি ও পুনর্বাসন, প্রতিবন্ধী, কুটির শিল্প, কৃষি ও উন্নয়ন, হাইব্রিড বীজ, সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও দলিত, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, যুব, কিশোর-কিশোরী, আর্সেনিক, বনসংরক্ষণ, নার্সারি উন্নয়ন ও বনায়ন, দিনমজুর, সংগঠন নির্মাণ, নিরাপদ মাতৃত্ব, বিশ্বায়নবিরোধী আন্দোলন, মৎস্যজীবী, হাওর-উন্নয়ন, বস্তিবাসী ও বস্তি উন্নয়ন, প্রবীণ, স্থানীয় সরকার, এমডিজি, দুর্নীতি, জলবায়ূ, আইন, লোকজ্ঞান, উপকরণ উন্নয়ন, জেন্ডার ও উন্নয়ন, ক্ষুদ্রঋণ, পলিসি অ্যাডভোকেসি, মাদক ও ধূমপানবিরোধী আন্দোলন, তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি, শ্রম অধিকার, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু করে। এ সকল কাজ বাস্তবায়নের সকল ক্ষেত্রে তাদের অর্জন সমান না হলেও বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের সক্রিয় দেখা যায়।
২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:২২
হোসনি জুবাইরি বলেছেন: ভাল লাগল।
৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৫
হোসনি জুবাইরি বলেছেন: ভাল মন্দ দুই স্বাদই থাকে। ভালর স্বাদ অন্য রকম।
৪| ২৬ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০
অন্যসময় ঢাবি বলেছেন: বিসিএস এর জন্য নেট ঘেঁটে আপনার এই লেখা পেলাম; তথ্য উপাত্তের স্রোতে বলতে গেলে একদম ভেসে গেলাম। অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৩৪
ফারজুল আরেফিন বলেছেন: এনজিও সম্পর্কিত অনেক অজানা তথ্যের জন্য ধন্যবাদ।
ক্ষুদ্র ঋণ মানুষকে শেষ পর্যন্ত কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করছে বলে পত্রিকায় পড়েছিলাম।