নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এনজিওদের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল ও গ্রামীণ উন্নয়ন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ (এক)

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:০২

টিবর সিটোকভস্কি বলেছেন, এক দিকে প্রাণহীন বিশাল প্রাচুর্য্য , অন্যদিকে দারিদ্র্য প্রকৃতপক্ষে গভীর বিশৃঙ্খলারই প্রকাশ ও চিহ্ন। দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক বিষয়। সাধারণভাবে জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা ও নিম্নতম সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার অপারগতাকেই আমরা দারিদ্র্য বলি।অর্মত্য সেন বলেন, চাহিদানুসারে মৌলিক বিষয়গুলো অর্জন বা করতে পারার যে স্বাধীনতা, তার অভাবই হলো দারিদ্র্য।বেঞ্জামিন পেজ ও জেমস সিমন্স বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি তার অধিকাংশ প্রতিবেশী কর্তৃক ভোগ্য সুযোগ সুবিধা অর্জনে অসমর্থ হয়, এটি তখন ঐ ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের অক্ষমতা তৈরি করে এবং তার আত্ম মর্যাদা ও আত্ম শ্রদ্ধাকে কমিয়ে দেয়। এটিও এক ধরনের দারিদ্র্য।Green (2006) বলেছেন, দারিদ্র্য হচ্ছে ঐতিহাসিক ও সামাজিক বাস্তবতার ফলাফল।



পঞ্চাশের দশকে মার্কিন সমাজে দারিদ্র্য বিমোচনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।এই সময়ে জনগণের আচার আচরণ পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। শিক্ষা সংস্কার ও কমিউনিটি ভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী নেয়া হয়। অথচ ১৯৮৮ সালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ৩৩.৬% লোক দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করতো। বাংলাদেশও বৈশ্বিক বাস্তবতার বাইরে নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর শতকরা হার ছিল ১৯৮১সালে ৭১, ১৯৮৫ সালে ৫৫.৬, ১৯৯১ সালে ৪৭.৫, ১৯৯৫ সালে ৪৭.৫, ২০০০সালে৪৪.৩, ২০০৫ সালে ৪০.৪, ২০১০ সালে ৩১.৫।



উন্নয়নের মূল লক্ষ্য মানুষ তথা মানবিক উন্নয়ন।উন্নয়নের অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে মানবিক ক্ষেত্র।তৃণমূল স্তর থেকে পরিকল্পনা নেয়া ও পরিচালনা করা হলে সেই উন্নয়ন কার্যাক্রম বেশী কার্যনকর হবে। কেননা এতে এককটি সমাজের স্বজাতিক জ্ঞানকে কাজে লাগানো যাবে।আর গ্রামীণ কমিউনিটির উন্নয়ন করতে চাইলে ঐ জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ধ্যান ধারণা ও জ্ঞানের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।তৃণমূল পর্যা্য়ের জনগণের সাথে মিশে তাদের সমস্যার সমাধান কৌশল অনুসন্ধান খুব গুরুত্বপূর্ণ।এক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক উন্নয়ন, সমাজ উন্নয়ন তথা চূড়ান্ত অর্থে মানুষের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার সম্পর্কিত ধারণা থাকতে হবে। গ্রাম পর্যাযয়ে কার্যনক্রম পরিচালনায সঠিক পরিকল্পনা নিতে চাইলে তুলনামূলক বিশ্লেষণ, পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভংগী, এমিক দৃষ্টিভংগী, কেইস স্টাডি-দরকার হবে।



স্বেচ্ছায় দান খয়রাত কিংবা রিলিফ ব্যবস্থা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে সত্যি কিন্তু এই ব্যবস্থায় দারিদ্র্য বিমোচন অসম্ভব। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান বলেছিলেন, গরীব মানুষ আরও গরীব হচ্ছে।কয়েকজন লোক ধনী থাকবে আর বাকী সব গরীব থাকবে-এটা কোন মতেই আল্লাহর হুকুম হতে পারে না।গ্রামের মানুষদের রক্ষায় আর কেউ করবে না। নিজেদেরই চেষ্টায় অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সমবায়ের নীতি মানতে হবে।সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি নিজেরই হাতে। দুনিয়াতে দুটো জিনিস আছে। একদিকে হলো আপনাদের মেহনত বা শ্রম, শরীরের বা হাতের শক্তি। আর অন্যদিকে আছে পুজিঁর শক্তি, টাকার শক্তি।যতক্ষণ দুটো ভিন্ন ভিন্ন থাকবে ততক্ষণ যারা শ্রমিক, যারা মেহনত করছে, তারা তাদের ভাগ পাবে না।শ্রমের সংগে পুজিঁর যোগ হলে আপনাদের মত শক্তিশালী কেউ থাকবে না।সমবায়ের তিনটি মূল নীতি হচ্ছে, পুজিঁ সৃষ্টি, সংঘবদ্ধ হওয়া, শৃংখলার সঙ্গে ম্যানেজারের নির্দেশমত কাজ করা। সমবায়ের নীতির ভিত্তি চরিত্র। দেশের লোক যদি চরিত্রবান না হয়, তাদের মধ্যে যদি সততা না থাকে, তারা যদি বিশ্বাসী না হয়, তাহলে কোন সুফল পাওয়া যাবে না।তাই সততার সংগে চলতে হবে, ভালভাবে খাঁটতে হবে এবং হিসাব করে খরচ করতে হবে।



তিনি আরো বলেছিলেন, সৎ প্রচেষ্টা ও শৃংখলাবোধ উন্নতির প্রথম শর্ত। জ্ঞান বুদ্ধির যথার্থ ব্যবহারেই উন্নতি সম্ভব।যদি কোন জাতি তাদের চোখ, হাত ও বুদ্ধির ভাল ব্যবহার না করে, তবে বলতে হবে তারা আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধেই চলছে। আগের নিয়ম চলবে না, নতুন নিয়ম শিখতে হবে। বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষ করতে হবে।আর ঈমান ঠিক করতে হবে, কেননা ঈমান ঠিক না থাকলে মানুষের মধ্যে সততা থাকে না এবং একতাও থাকতে পারে না। বেঈমান জাতিকে আল্লাহ উন্নত হতে দেন না। ওয়ার্কশপ, কোল্ড স্টোরেজ, ডেইরীর মাধ্যমে অনেকের চাকুরী হয়েছে।ক্যানিং ফ্যাক্টরী ও রাইস মিলের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। আমাদের সব লোক এখন শুধু কৃষিকাজ করে বাঁচতে পারবে না।তাই বেশি করে শেয়ার কিনুন যাতে ইন্ডাস্ট্রি করা যায়, যেখানে ছেলেপেলেরা চাকরী করতে পারবে।ভাল ভাল প্লান তৈরি করুন। কোন কোন রিক্সাওয়ালা আঠার বছর রিকসা চালিয়ে পঞ্চাশ টাকাও জমাতে পারে নি অথচ সমবায়ের সাথে যুক্ত শত শত মেম্বার আট মাসের মধ্যে রিকসার মালিক হয়েছেন। আপনারা হিংসার বদলে মহব্বত সৃষ্টি করুন, ফাঁকির বদলে কঠিন পরিশ্রম করুন-উন্নতি আপনাদের অবধারিত।



গেলব্রেথ বলেছেন, যাদের লোন নেবার প্রয়োজন নেই, এসব বৃহৎ সংস্থাসমূহই ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহভাজন। যাদের লোনের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, দেখা যায় তারা ব্যাংকের নিকট আকর্ষণীয় খরিদ্দার নয়।কতিপয় বস্তুগত লক্ষ্যমাত্র অর্জন না করা পর্য।ন্ত কল্যাণ বা সুখ সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয়না। এসব লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সকল ব্যক্তির বস্তুগত মৌলিক চাহিদা পূরণ, সৎ উপায়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রত্যেকের সুযোগের লভ্যতা এবং আয় ও সম্পদের সুষম বন্টন।



বিশ্বের সর্ব বৃহৎ এনজিও BRAC এর প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ।এটি পূর্বে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন এ্যাসিস্ট্যান্স কমিটি, পরে Bangladesh Rural Advancement Committee নামে পরিচিতি লাভ করে। সারাদেশে ৫৭৭২৪জন কর্মরত, নিয়মিত ২৩৯৭৪জন।যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের মানুষের কল্যাণে যুক্তরাজ্য থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে তহবিল গঠনের মাধ্যমে সিলেটের শাল্লা, দিয়াই ও বানিয়াচং থানায় ১৯৭২ সালের ৩১শে অক্টোবর পর্যরন্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যেক্রম চলে। রিলিফ দিয়ে কোন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনধারণের মান স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করা যায় না- এমন উপলব্ধির পর দীর্ঘমেয়াদী পেশাভিত্তিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয় ব্রাকের কর্মীগণ।দ্বিতীয় পর্যাতয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর ডিসেম্বর পর্যয়ন্ত নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে কৃষি, মৎস চাষ, ব্যবহারিক শিক্ষা, গণকেন্দ্র, স্বাস্থ্য পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ উল্লেখযোগ্য।এই সমস্ত কর্মসূচিতে সমাজের যে কোন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারতো এবং সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারতো।অচিরেই দেখা গেল এসব সুযোগ ও সম্পদ সমাজের একশ্রেণীর সুবিধাভোগী মানুষের হাতে কেন্দ্রীভুত হচ্ছে।গরীব দু:খীরা তেমন কিছুই পাচ্ছেনা। এথেকে ব্রাক অনুভব করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুসের অংশগ্রহণ ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন অসম্ভব।১৯৭৬ সালে ভূমিহীন শ্রমজীবীদের অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজ শুরু করে।



প্রতিষ্ঠানটির ৮০% কর্মকাণ্ডই চলে নিজেদের অর্থায়নে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি,ব্র্যাক ব্যাংক ব্র্যাকের একটি অঙ্গসংগঠন।দারিদ্র্য বিমোচন ও দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন--এই দুই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্র্যাক তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষুদ্রঋণ তথা উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্র্যাক যে বহুমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। ফজলে হাসান আবেদ বলেন, "মানুষের জন্য কাজ করতে হবে ব্র্যাক শুরু করার সময় এই ছিল একমাত্র চিন্তা। কখনও ভাবিনি যে, ব্র্যাক হবে পৃথিবীর সবচাইতে বড় এনজিও, এও ভাবিনি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আমি একটা বিষয়ে সবসময় সচেতন থাকার চেষ্টা করেছি। এমন কোনো কাজ আমি করতে চাইনি, যে কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারব না। যে কাজই করিনা কেন, ভালভাবে করব, এটাই আমার নীতি।



ব্র্যাক শুরু করার সময় অর্থের পরিমাণ খুব বেশি ছিলনা। কিন্তু অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করায় পরবর্তী সময়ে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো কার্যক্রমে তহবিল জোগান দিয়েছে। প্রথম যে বিদেশি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাককে অর্থ প্রদান করেছিল, সেটি হল, অক্সফাম-জিবি। অক্সফাম প্রায় দুই লক্ষ পাউন্ড দিয়েছিল। ব্র্যাক আজ বাংলাদেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকায় সহায়তা জুগিয়ে যাচ্ছে। এদেশের সব কয়টি জেলায় ব্র্যাক সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। দেশের ৭৮ শতাংশ গ্রামে এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। এ ছাড়া স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে ব্র্যাককে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফগানিস্তানেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আফগানিস্তানে ব্র্যাক সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।



মূলত ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় অঙ্কুর আকারে ব্র্যাকের সূচনা হয়েছিল। সে বছর ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা এবং সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মনপুরা এই তিনটি স্থানে অগণিত মানুষের মৃত্যু হয়। দ্বীপগুলো পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। এ সময় ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, শেলে তাঁর সহকর্মী কায়সার জামানসহ আরও কয়েকজন মিলে গড়ে তোলেন 'হেলপ' নামের একটি সংগঠন। এসময় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের রিলিফ দেওয়া, তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করা প্রভৃতি কাজ করেছেন। শুরুতে নিজেরা টাকা তুলে সেই টাকা দিয়ে কাজ করেছেন। পরে জার্মানির একটি সংস্থা ত্রাণ কাজ চালানোর জন্য তাঁদেরকে ৩ মিলিয়ন ডয়েচ মার্ক অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। ফজলে হাসান আবেদ ইংল্যান্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য 'অ্যাকশন বাংলাদেশ' নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। অ্যাকশন বাংলাদেশ'-এর সদস্যরা পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের মানুষের উপর যে নৃশংসতা চালিয়েছে তা পৃথিবীর মানুষকে জানানোর চেষ্টা করেন। পরে তাঁরা উপলব্ধি করেন, কেবল প্রচারমূলক কাজেই তাঁদের তত্পকরতা সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। সীমান্তবর্তী মুক্তাঞ্চলগুলোতে সাহায্য পাঠানোর জন্য তাঁরা গড়ে তুলেছিলেন আরেকটি সংগঠন 'হেলপ বাংলাদেশ'।



১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ব্র্যাকের জন্ম। সর্বজনশ্রদ্ধেয় কবি বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কাজী ফজলুর রহমান, আকবর কবীর, ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, এস আর হোসেন এবং ফজলে হাসান আবেদ--এই সাতজনকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হয়। বোর্ড ফজলে হাসান আবেদকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করে। কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলেন ব্র্যাকের প্রথম চেয়ারম্যান। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সৈয়দ হুমায়ুন কবীর ২০০১ সাল পর্যন্ত ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।



লন্ডনে ফজলে হাসান আবেদের একটি ছোট ফ্ল্যাট ছিল। একাত্তরে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে কাজ করার সময় তিনি নিজের খরচ চালানোর জন্য ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন। বিক্রি করে পেয়েছিলেন ৬৮০০ পাউন্ড। লন্ডনের একটি ব্যাংকে এই অর্থ তিনি রেখে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, ঐ অর্থ দিয়ে তাঁর পরবর্তী তিন-চার বছরের খরচ চলে যাবে। এবার ব্র্যাকের কাজ শুরু করার জন্য ফজলে হাসান আবেদ লন্ডনের ব্যাংক থেকে ঐ অর্থ তুলে দেশে নিয়ে এলেন। এ ছাড়া কলকাতার ব্যাংকে ভিকারুল ইসলাম চৌধুরীর অ্যাকাউন্টে ছিল ২৫ হাজার রুপি। এই ৬৮০০ পাউন্ড এবং ২৫ হাজার রুপি দিয়ে শুরু হল শাল্লার মানুষের জন্য 'রিলিফ এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন' কর্মসূচি। সুতরাং বলা চলে, ব্র্যাকের প্রথম 'ডোনার' হচ্ছেন ফজলে হাসান আবেদ। ঢাকায় ভিকারুল ইসলাম চৌধুরীর আইন ব্যবসার অফিস ছিল ৯৫ মতিঝিলে। সেখানেই দুজন সেক্রেটারি আর আবেদ এই তিনজন মিলে ব্র্যাকের দাপ্তরিক কাজ চালাত। এটাই ব্র্যাকের প্রথম অফিস।



১৯৭৪ সালের শেষ দিকে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। রংপুরের রৌমারিতে অনেক শিশু মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছিল।১৯৭৫ সালের জানুয়ারী মাসে দুর্ভিক্ষপীড়িত রৌমারিতে ব্র্যাক কাজ শুরু করল। পঁয়ত্রিশ হাজার ছেলেমেয়ে সকালে এবং রাতে দুবেলা খাবার পেত। দুর্ভিক্ষে মৃত্যু ঠেকাতে তাঁরা প্রথমে সেখানে খাদ্যপ্রাপ্তিটা নিশ্চিত করেছিলেন। তারপর অপুষ্টির শিকার হয়ে যারা মৃত্যুমুখে এসে দাঁড়িয়েছিল, তাদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন পুষ্টিকেন্দ্র। ত্রাণসামগ্রী বিতরণে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতির প্রতিবাদ করেও যখন কোনো ফল হল না, তখন তারা রৌমারি থেকে ব্র্যাকের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়ে চলে আসেন। এরপর ব্র্যাক কাজ শুরু করে মানিকগঞ্জে। মানিকগঞ্জে হল ব্র্যাকের তৃতীয় প্রজেক্ট।



১৯৭৩ সালে ব্র্যাক ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি শুরু করে। সেই সময় ব্র্যাক শাল্লায় কাজ করছিল। শাল্লা অঞ্চলে অনেক মত্স্যরজীবী ছিলেন। তাঁদের প্রয়োজন ছিল নৌকা এবং জালের। জাপান থেকে জাল বানানোর নাইলন সুতা কিনে আনা হল। নৌকা বানানোর কাঠ আনা হল আসাম থেকে। জেলেদের জাল তৈরি করার জন্য সুতা দেওয়া হল। নৌকা তৈরি হল সাত-আটশ। তারপর জেলেদের গ্রাম ধরে ধরে গ্রুপ তৈরি করে নৌকাগুলো তাঁদের মধ্যে বিতরণ করা হল। এভাবে জেলেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হল। গ্রুপ ঋণ এবং একক ঋণ--প্রাথমিকভাবে এই দুটি ধারাতেই ব্র্যাক ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত শুধু গ্রুপ ঋণ দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে শুরু হল একক ঋণ।



ব্র্যাক ১৯৭৯ সালে শুরু করে রুরাল ক্রেডিট অ্যান্ড ট্রেনিং প্রোগ্রাম (আরসিটিপি)। ঋণদান এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন--এই দুটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে তাঁরা একসঙ্গে ১৮টি থানায় আরসিটিপি চালু করলেন। তখন সার্ভিস চার্জ নেওয়া হত দশ শতাংশ। কিন্তু এই ঋণের পেছনে যা খরচ হত, সার্ভিস চার্জ নিয়ে সেটা উঠে আসত না। কিছু লোকসান থেকেই যেত। অবশ্য দরিদ্র মানুষেরা ঋণের টাকা ঠিকমত ফেরত দিচ্ছিলেন। তারপরও কিছু ভর্তুকি দিয়ে কর্মসূচি চালাতে থাকলাম। দাতাদের ভর্তুকিতে চলবে--তখন পর্যন্ত এই ছিল তাদের চিন্তাভাবনা। ২০০৫ সালের ব্র্যাক বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি ৪৮ লক্ষ ৪০ হাজার দরিদ্র ও ভূমিহীনকে সংগঠিত করে ১,৬০,১৯৭টি গ্রাম সংগঠন তৈরি করেছে এবং ঋণ কার্যক্রমের আওতায় ১,৬৫,৭৯৪ মিলিয়ন টাকা বিতরণ করেছে। বাংলাদেশে পোলট্রি শিল্পের বিকাশে ব্র্যাক অগ্রণী এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। হাঁসমুরগির রোগ প্রতিরোধে টিকাদানের কাজও শুরু করে ব্র্যাক। প্রতিগ্রামে একজন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভ্যাকসিনেটর বানানো হল। দু'শ মহিলাকে দিয়ে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের সূচনা হয়েছিল, কিছুদিনের মধ্যেই সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল চল্লিশ হাজারে।



ব্র্যাকই সর্বপ্রথম গ্রামের মহিলাদের হাইব্রিড মুরগি পালনে উত্সাাহিত করেছিল। শুরুতে সাভারস্থ ফার্ম থেকে হাইব্রিড মুরগির ডিম সংগ্রহ করা হত। সেই ডিম দেশি মুরগির ওমে রেখে বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তখন সরকারের বেশ কয়েকটি হাইব্রিড মুরগির ফার্ম ছিল। কিন্তু তাদের তেমন কোন প্রচার ছিল না। মানুষ তাদের কথা জানত না। ব্র্যাক সরকারি ফার্ম থেকে প্রতি মাসে এক লাখ হাইব্রিড মুরগির বাচ্চা কিনে গ্রামে গ্রামে সরবরাহ করত।পোলট্রি খাদ্যের প্রধান উপাদান হচ্ছে ভুট্টা। ফজলে হাসান আবেদ সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেরাই ভুট্টার চাষ করবেন। ১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভুট্টার বীজ আনা হল। প্রথম বছর ভুট্টা চাষ হল দুশ একর জমিতে। প্রথমে কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী ছিলেন না। কৃষকদের বলা হল, প্রতিকেজি ছয় টাকা দামে সব ভুট্টা ব্র্যাক কিনে নেবে। হাঁস-মুরগির অসুখের মত গরুর অসুখও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এক বড় ধরনের সমস্যা। ব্র্যাক এই সমস্যার দিকেও নজর দিল। গ্রামের এস.এস.সি. পাশ বা ফেল করা কিছু ছেলেমেয়ে জোগাড় করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্যারাভেটেরিনারিয়ান হিসেবে তৈরি করা হল।



ব্র্যাককর্মীদের স্যালাইন তৈরির প্রক্রিয়া এবং স্যালাইন খাওয়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হল। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শেখাতে শুরু করল। ...১৯৮০ সালে আমরা পাঁচটি বৃহত্তর জেলাকে (সিলেট, ফরিদপুর, বরিশাল, যশোর, খুলনা) স্যালাইন কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এল। ...ব্রাক স্যালাইন কর্মসূচি নিয়ে তিনটি পর্যায়ে কাজ করেছিল। প্রথম পর্যায় ১৯৮০-১৯৮৩, দ্বিতীয় পর্যায় ১৯৮৪-১৯৮৬ এবং তৃতীয় পর্যায় ১৯৮৭-১৯৯০। সারা বাংলাদেশে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে একজন মহিলাকে লবণগুড়ের স্যালাইন বানানো শেখাতে সময় লেগেছিল দশ বছর। খাওয়ার স্যালাইন কর্মসূচির পাশাপাশি ব্র্যাক শিশুদের প্রাণঘাতী ৬টি রোগ প্রতিরোধে ইউনিভার্সাল চাইল্ড ইমু্নাইজেশনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দেশের বিরাট এলাকা জুড়ে সফল টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করেছে। কার্যক্রম চালাবার জন্য সরকার এবং ব্র্যাক দেশের এলাকা ভাগ করে নিয়েছিল। এই কর্মসূচি চলেছে ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত।



ব্র্যাক ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি শুরু করে। বর্তমানে দেশের ৪২টি জেলার ৮ কোটি ৩২ লক্ষ মানুষকে এর আওতায় আনা হয়েছে। ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে যারা কাজ করেন, তাঁদেরকে বলা হয় 'স্বাস্থ্যসেবিকা'। স্বাস্থ্যসেবিকারা সকলেই তাদের এলাকার ব্র্যাক গ্রামসংগঠনের সদস্য। এরা এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রদান করেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্বাস্থ্যসামগ্রী বিক্রয় করেন, সাধারণ অসুখ-বিসুখে চিকিত্সাঠ প্রদান করেন, মৌলিক স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা তথ্য সংগ্রহ এবং প্রয়োজনে রোগীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে বলেন। স্বাস্থ্যসেবিকাদের কাজে সহায়তা জুগিয়ে তাকে আরও জোরদার করে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী থেকে 'কমিউনিটি হেলথ প্যারামেডিক' নিয়োগ দান করা হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এঁদেরকে বলা হয় 'স্বাস্থ্যকর্মী'। স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মসূচির আওতাধীন খানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিষয়ক সেবা পরিবীক্ষণ এবং গর্ভবতী মায়েদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবিকাদের কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করেন। ব্র্যাক ৩৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছে। ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে সমাজভিত্তিক আর্সেনিক নিরসন প্রকল্প, নবজাতকের জীবনরক্ষা কার্যক্রম এবং ক্ষুদ্র স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প। এ ছাড়া ২০১০ সালের মধ্যে পয়ঃনিষ্কাশন ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্যলাভের জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্র্যাক সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।



২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ব্রাকের ৩১,৮৭৭টি প্রাথমিক স্কুল এবং ১৬,০২৫টি প্রি-স্কুল রয়েছে। আনুষ্ঠানিক স্কুলগুলোতে যেতে-না-পারা কিংবা ঝরে-পড়া ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ দানের মাধ্যমে ব্র্যাকের দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যকেই পূরণ করছে। এই শিক্ষার্থীদের ৬৫ শতাংশই মেয়েশিশু। শুরুতে ব্র্যাক স্কুলে ১৪,৪৭১ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাদের দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণ বৈকল্য উত্তরণে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অন্তর্গত ছেলেমেয়েদেরও ব্র্যাকের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।



গ্রামবাংলার কারুশিল্পীদের পণ্য বিপণনের মাধ্যমে এই কারুশিল্পের বিকাশ ও সমৃদ্ধির জন্য গড়ে তুলে 'আড়ং'।১৯৭৬ সালে মানিকগঞ্জে কাজ করতে গিয়ে 'আড়ং' গড়ে তোলার ভাবনা এসেছিল। রেশমসুতা তৈরির উদ্দেশ্যে ঐ এলাকায় ভেরেণ্ডা গাছ লাগানো শুরু হল। দরিদ্র মহিলাদের রেশমপোকা পালনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হল। প্রায় দু-তিনশ মহিলা এনডি রেশমের গুটি তৈরি করতে লাগলেন। এগুলোর গুটি থেকে স্পিনিং করে সুতা বানিয়ে রেশমের কাপড় তৈরির কাজ শুরু হল। এসব কাপড় বাজারজাত হতে থাকল। ঢাকার কয়েকটি দোকানে এগুলো বিক্রি হত। কিন্তু পণ্য সরবরাহের পর টাকা পেতে পেতে দু-তিন মাস কেটে যেত। এমতাবস্থায় পণ্য সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে অর্থপ্রাপ্তি দ্রুত নিশ্চিত করার ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় 'আড়ং'। ১৯৭৮ সালের প্রথম দিকে 'আড়ং'-এর কার্যক্রম শুরু হয়। ব্র্যাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্ট 'আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন'। ১৯৮৩ সালে এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় মানিকগঞ্জে। 'আড়ং'-এর কারুপণ্যের একটি বৃহত্‍ অংশের জোগান দেয় 'আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন'।'আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন'-এর মাধ্যমে বহু গ্রামীণ নারী কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। যাঁরা হাতের কাজ জানেন, তাঁদেরকে এখানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয় এবং হাতেকলমে কাজ শেখানো হয়।



২০০২ সালের জানুয়ারী মাসে ব্র্যাক অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে Challenging the Frontiers of Poverty Reduction - Targeting the Ultra Poor (CFPR-TUR) কর্মসূচি চালু করে। সমাজের প্রান্তসীমায় অবস্থানকারী পরিবারকে চিহ্নিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্ণায়ক রয়েছে। এই পরিবারগুলো অতি দারিদ্র্যের কারণে প্রচলিত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় ঋণ গ্রহণ করতে পারে না। এদের জন্য ব্র্যাক একটি কার্যকর ও গতিশীল ভর্তুকিনির্ভর কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে জাতীয় ক্ষেত্রে অবদান রাখার লক্ষ্য নিয়ে ২০০১ সালে শুরু করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। সমাজের চাহিদা এবং প্রয়োজনের প্রতি সজাগ দৃষ্টিপাত, সৃজনশীল নেতৃত্ব তৈরি, শিক্ষা এবং জ্ঞানসৃষ্টিকে সামনে রেখে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তার কার্যক্রম শুরু করে। ব্র্যাকের আরেকটি উদ্যোগ ব্র্যাক ব্যাংক। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ব্যাংক। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের বিকাশে সহায়তা প্রদান করাই এই ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানে এই ব্যাংকের ১২টি শাখা অফিস এবং ২৯০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ইউনিট (এসএমই) রয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক সর্বাধিকসংখ্যক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সেবা প্রদান করছে এবং প্রতিবছর সেবার আওতাবহির্ভূত সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের প্রতি সেবার হাত প্রসারিত করে কার্যক্রমের পরিধি বাড়িয়ে চলেছে।



ফজলে হাসান আবেদ বলেন, 'মানুষ হয়ত মনে করে, আমি একজন সফল মানুষ। আমি নিজের কাজে খুশি কিন্তু আত্মতৃপ্ত নই। এটা ভাবতে ভাল লাগে যে, আমি মানুষের জন্য কাজ করছি। যাদের কথা কেউ ভাবে না আমি তাদের কথা ভাবছি। তাদের জন্য কিছু করতে পেরেছি। বাংলাদেশে বাস করে কারও পক্ষে আত্মতৃপ্ত হওয়া সম্ভব নয়। মানুষের দুঃখ, কষ্ট, দারিদ্র্য দেখে আত্মতৃপ্ত হওয়া যায় না। মানুষ যে কত অসহায় হতে পারে আমি কাজ করতে গিয়ে তা দেখেছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই মানুষগুলোর জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারলাম কই? তারপরও আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে আমরা সামান্য হলেও অবদান রাখতে পেরেছি। আমরা দরিদ্র মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছি, এখনও করছি। তবে এও বলি, এখনও অনেক মানুষ দরিদ্র রয়ে গেছে, তাদের জন্য আমরা এখনও কিছুই করতে পারিনি।'



ইউনুস দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম শুরু করেন ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্ভিক্ষের সময়। তিনি বুঝতে পারেন স্বল্প পরিমাণে ঋণ দরিদ্র মানুষের জীবন মান উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। সেই সময়ে তিনি গবেষণার লক্ষ্যে গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। ১৯৭৪ সালে মুহাম্মদ ইউনুস তেভাগা খামার প্রতিষ্ঠা করেন যা সরকার প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় অধিগ্রহণ করে।



মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন গরিব বাংলাদেশীদের মধ্যে ঋণ দেবার জন্য। তখন থেকে গ্রামীণ ব্যাংক ৫.৩ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করে। ঋণের টাকা ফেরত নিশ্চিত করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক "সংহতি দল" পদ্ধতি ব্যবহার করে। একটি অনানুষ্ঠানিক ছোট দল একত্রে ঋণের জন্য আবেদন করে এবং এর সদস্যবৃন্দ একে অন্যের জামিনদার হিসেবে থাকে এবং একে অন্যের উন্নয়নে সাহায্য করে। ব্যাংকের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে গরিবকে রক্ষা করার জন্য ব্যাংক অন্যান্য পদ্ধতিও প্রয়োগ করে। ক্ষুদ্রঋণের সাথে যোগ হয় গৃহঋণ, মৎস খামাড় এবং সেচ ঋণ প্রকল্প সহ অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যাবস্থা। গরিবের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য উন্নত বিশ্ব এমন কি যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশসমূহকে গ্রামীণের এই মডেল ব্যবহার করতে উদ্ভুদ্ধ হয়।



ড.ইউনুস লিখেছেন, গরীবদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ঋণ ছাড়াও আরো অনেক সমস্যার সঙ্গে মুখোমুখি হতে হয়। শিক্ষার সমস্যা (গ্রামীণ শিক্ষা), স্বাস্থ্যের সমস্যা (গ্রামীণ কল্যাণ), মার্কেটিং এর সমস্যা (গ্রামীণ চেক), কৃষির সমস্যা (গ্রামীণ কৃষি), মৎস্য ও পশুপালন সমস্যা (গ্রামীণ মৎস্য), প্রযুক্তির সমস্যা (গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কমুনিকেশান্স), বীমার সমস্যা (গ্রামীণ ব্যবসা বিকাশ) বিদ্যুতের সমস্যা, চুলার সমস্যা (গ্রামীণ শক্তি), ইত্যাদি। প্রতিটি সমস্যার মোকাবেলার জন্য একটি করে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছি। যখনি সমস্যার মুখোমুখি হতে চেয়েছি তার সমাধানের জন্য একটা পৃথক কোম্পানি সৃষ্টি করেছি। এমনভাবে করেছি যাতে কোম্পানি নিজের আয়ে নিজে চলতে পারে। পরমুখাপেক্ষি হয়ে যেন কোম্পানিকে থাকতে না হয়। একটি কোম্পানির পতন হলে সে-যেন আর পাঁচটি কোম্পানিকে টেনে নিচে নামিয়ে ফেলতে না-পারে। প্রতিটি কোম্পানিই উদ্ভাবনমূলক কোম্পানি। আগে কোনদিন কাজ করা হয়নি এমনভাবে, নতুন ভঙ্গীতে, নতুন কনসেপ্ট দিয়ে সমস্যার সমাধান পাওয়ার চেষ্টা করেছি। এদের মধ্যে অনেকগুলি কোম্পানি পৃথিবীতে দৃষ্টান্তমূলক কোম্পানি হিসেবে ইতিমধ্যেই দাঁড়াতে পেরেছে। গ্রামীণ টেলিকমের মাধ্যমে গ্রামীণ ফোনের মোবাইল ফোন গরীব মহিলাদের হাতে পৌঁছানোর কনসেপ্ট সারা পৃথিবীর টেলিকম জগতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গীর সৃষ্টি করেছে। গ্রামীণ শক্তি সৌর শক্তির মাধ্যমে পরিবারভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামীণ শক্তির মাধ্যমে এবছরই ১০ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারে সৌরবিদ্যুৎ পৌছানো সম্পন্ন হবে। দৈনিক গড়ে এক হাজার নতুন পরিবারে সৌরশক্তি স্থাপন করছে এই কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলিতে কারো ব্যক্তিগত মালিকানা নেই। এগুলি হলো ”ট্রাস্টের” মত প্রতিষ্ঠান। মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। কারো জন্য মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে এইসব কোম্পানি সৃষ্টি করা হয়নি। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের কোনো সুযোগই রাখা হয়নি। গ্রামীণ বা অন্য কোন নামের কোন প্রতিষ্ঠানে আমার কোন শেয়ার বা মালিকানা নেই। গ্রামীণ ব্যাংকেও আমার কোন শেয়ার নেই। কাজেই কোন কোম্পানির কোন মুনাফার অংশ আমার কাছে আসার কোন সুযোগ কখনো ছিল না, আজও নেই। কোন গ্রামীণ কোম্পানির বোর্ড মিটিং-এ উপস্থিতি বা পরিচালনার জন্য আমি কোন সম্মানী বা ভাতা কোন সময় নেইনি।



তিনি আরো লিখেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। চট্রগ্রামের জোবরা গ্রামে। ৮৫৬ টাকা নিজের পকেট থেকে ঋণ দিয়ে। এরপর আমি জামানতকারী হয়ে জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে ঋণ দেয়া শুরু করলাম। ১৯৭৮ সালে কৃষি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব আনিসুজ্জামানের সহযোগিতায় এটাকে রূপান্তরিত করা হলো কৃষি ব্যাংকের একটি প্রকল্প হিসেবে। আমার প্রস্তাব গ্রহণ করে তিনি আমার তত্ত্বাবধায়নে পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ শাখা প্রতিষ্ঠা করে দিলেন জোবরা গ্রামে। নাম দেয়া হলো ‘কৃষি ব্যাংক, পরীক্ষামূলক গ্রামীণ শাখা’। এর পরের বছর ১৯৭৯ সালে এটা আরো বৃহত্তর আকার ধারণ করলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর জনাব গঙ্গোপাধ্যায়ের আগ্রহে, ও আমার প্রস্তাবে। কৃষি ব্যাংকের প্রকল্প থেকে এবার হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকল্প। পুরো টাংগাইল জেলা জুড়ে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হলো। সকল রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক এই প্রকল্পের অংশীদার হলো। প্রকল্পের প্রধান কার্যালয় করলাম টাংগাইল জেলায়। এজন্যে আমি আকুর টাকুর পাড়ায় বসবাস শুরু করি। এই প্রকল্প পরিচালনার জন্য। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত টাংগাইলের আকুর টাকুর পাড়াতেই কাটালাম। এই প্রকল্প পাঁচ জেলায় সম্প্রসারিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে আমার অমত সত্ত্বেও প্রধান কার্যালয় ঢাকায় শ্যামলীতে স্থানান্তরিত করলাম। ১৯৮৩ সালে আমার প্রস্তাবে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিতের উৎসাহে এবং রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের সমর্থনে ‘গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩’ প্রণয়ন ও জারী করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প এবার ‘গ্রামীণ ব্যাংকে’ রূপান্তরিত হলো। নতুন আইন কাঠামোতে ব্যাংকের মালিকানা বিন্যাস নিয়ে আমি ঘোরতর আপত্তি তুললাম। এতে সরকারের মালিকানা রাখা হয়েছে ৬০%। অর্থাৎ এটাকে সরকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমি এই কাঠামো নিয়ে অগ্রসর হতে নারাজ হলাম। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করলেন যে তিনি শিগগিরই মালিকানা পাল্টে দিয়ে একে বেসরকারী ব্যাংক বানিয়ে দেবেন। কিন্তু সে কাজটি করার সুযোগ তিনি পেলেন না। তিনি এর আগে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে গেলেন। তাঁর উত্তরসূরি জনাব সায়ীদুজ্জামান সে কাজটি করে দিলেন ৮ জুলাই ১৯৮৬ সালে। মালিকানা বিন্যাস পরিবর্তন করে অধ্যাদেশ সংশোধন করে দিলেন। এবার মালিকানা হলো ৭৫% গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের, ২৫% সরকারের। এই অনুসারে বোর্ডের গঠন ও পরিবর্তন হলো। বোর্ডে ৯ জন ঋণগ্রহীতাদের প্রতিনিধি, ৩ জন সরকারের, পদাধিকার বলে থাকবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ৩১শে জুলাই ১৯৯০ সালে আরেকটি সংশোধন হলো। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেবে পরিচালনা পর্ষদ- সরকার নয়। ১৯৯০ সাল থেকে এপর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক এভাবেই চলে আসছে। বর্তমানে ঋণগ্রহীতাদের শেয়ারের অংশ ৯৭ শতাংশ। সরকার ৩ শতাংশ। সরকারের শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে চলে আসার কারণে হচ্ছে সরকার শুরুতে যে মূলধন দিয়েছিল তার পরিমাণ আর কখনো বাড়ায়নি। এদিকে ঋণগ্রহীতাদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। তাঁরা প্রত্যেকে শেয়ার কিনেছেন। প্রতি শেয়ারের মূল্য ১০০ টাকা। একজন ঋণগ্রহীতার সঞ্চয়ী হিসাবে টাকার পরিমাণ ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলে তিনি ১০০ টাকা দিয়ে একটা শেয়ার কিনতে পারেন এবং তিনি কিনেনও। ফলে ঋণগ্রহীতাদের শেয়ারের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এই কারণেই তাদের শেয়ারের পরিমাণ ৯৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকার যদি মূলধনের পরিমাণ না বাড়ায়, আর ঋণগ্রহীতাদের শেয়ারের পরিমাণ যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তবে সরকারের শেয়ারের আনুপাতিক অংশ ক্রমান্বয়ে আরো কমে যেতে থাকবে। ৮৫৬ টাকা দিয়ে যে উদ্যোগের শুরু হয়েছিল এখন সে ব্যাংক ৮৪ লাখ ঋণগ্রহীতাকে বছরে বারো হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। ঋণগ্রহীতাদের নিজস্ব সঞ্চয়ী তহবিলে এই মুহূর্তে জমা আছে সাত হাজার কোটি টাকা। গরীব মহিলারা নিজস্ব সঞ্চয়ী আমানতে সাত হাজার কোটি টাকা জমা রেখেছে শুধু তাই নয়, এটাকার পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। তাদের নিজস্ব পেনশন ফান্ড আছে। তাদের ছেলেমেয়েদেরকে পৌনে তিনশ’ কোটি টাকা শিক্ষা ঋণ দিয়েছে উচ্চ শিক্ষার জন্য। প্রতি বছর আরো শিক্ষাঋণ দিয়ে চলেছে। ১৯৯০ সালের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধনগুলি করে ব্যাংকের মালিকানা ঋণগ্রহীতাদের হাতে তুলে দেওয়ার কারণে এবং সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পরিচালনা পর্ষদের হাতে ন্যস্ত করার কারণেই গ্রামীণ ব্যাংক একটি মজবুত ও সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পেরেছে।



(চলবে)

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১৪

অগ্নি সারথি বলেছেন: নামটাই ভূল লিইখ্যা ফালাইছেন উস্তাদ। Bangladesh Rural Advancement Committee নয় এখন এটা Building Resources Across Communities হবে।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২০

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: সংশোধন করেছি। স্যারকে ধন্যবাদ!

২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৩

কস্ট বিদ বলেছেন: লেখাটা একটূ বড় মনে হল, ভাল

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২২

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: বড়। তবে কস্ট বিদেরতো কষ্ট পাবার কথা নয়।

৩| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: তথ্যবহুল শ্রমসাধ্য লেখা। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

ধন্যবাদ, ভাই আনিসুর রহমান।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২২

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই আপনাকেও।

৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:১৭

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন:
আনিসুর রহমান ভাই, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংক্রান্ত এই নিয়ে আপনার ৩ টি আর্টিকেল পড়লাম। অনেক শ্রম সাপেক্ষ লিখা, এর মধ্যে "দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ: ভূমিকা, বিতর্ক ও বিকল্প ভাবনা" লিখাটা থিসিস আকারে এছেসে। এই লেখাটির পরবর্তী অংশের সাথে অন্য লেখা সমূহের সমন্বয় আশা করছি।

এনজিওর অপরিহার্যতা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যত: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত
Click This Link

দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ: ভূমিকা, বিতর্ক ও বিকল্প ভাবনা
Click This Link

এনজিওদের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল ও গ্রামীণ উন্নয়ন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ (এক)
Click This Link


প্রায় সব বড় বড় উন্নয়ন সহযোগীরাই উচ্চ সুদের ক্ষুদ্র ঋণ এ জড়িয়ে পড়ছেন যার ভালো খারাপ দিক "দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ: ভূমিকা, বিতর্ক ও বিকল্প ভাবনা" লিখায় বিস্তারিত এসেছে, খুবই করুন চিত্র তুলে ধরেছেন মাঠ পর্যায়ের।(কেন, নিজেরদের আয় বাড়াতে?)

"দীর্ঘ মেয়াদী সাস্টেইনএবল ডেভেলপমেন্ট এ ক্ষুদ্র ঋনের নেগেটিভ প্রভাব প্রতিষ্ঠা" এবং "প্রাকৃতিক সার , প্রাকৃতিক বীজ স্বত্বে আধাপিত্য নিয়ে কৃষকের প্রাকৃতিক চাষাবাদ কে দমিয়ে তার উপর এনজিও দের বাণিজ্যিক প্রভাব প্রতিষ্ঠা "" --এই দুয়ের সমন্বয় এবং এনজিও দের ব্যবসায়িক লাভ ক্ষতির বাস্তবতায় প্রকৃত উন্নয়ন কতটা হচ্ছে এর উপর একটা ব্রিফ এবং নিরপেক্ষ পর্যালোচনা চাই।

কর্মসংস্থান এর ক্ষেত্র হিসেবে এনজিও সমূহ যে ব্যাপক অপরচুনিটি তৈরি করছে এই বিষয়ে সংশয় নেই।


আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৫৪

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: Known formerly as the Bangladesh Rehabilitation Assistance Committee and then as the Bangladesh Rural Advancement Committee (currently, BRAC does not represent an acronym), BRAC was initiated in 1972 by Sir Fazle Hasan Abed at Sulla in the district of Sylhet as a small-scale relief and rehabilitation project to help returning war refugees after the Bangladesh Liberation War of 197

http://en.wikipedia.org/wiki/BRAC_(NGO)

অগ্নি সারথি, লেখক সম্ভভত নামটি সঠিকই লিখেছেন, আপনি আগের নামটির কথা বলেছেন! দেখুন উইকিপিডিয়ায়।

৬| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৫৮

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: Bangladesh Rehabilitation Assistance Committee, এটি ছিল পূর্বের নাম, Building Resources Across Communities এর রেফারেন্স পেলে ভালো হত।

কিন্তু পরিষ্কার বলা আছে,
(currently, BRAC does not represent an acronym)

ব্রাক এখন আন্তর্জাতিক!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.