নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা: উপেক্ষিত বাংলাদেশের স্বার্থ

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪০

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন কর্মসূচী প্রণয়ন করা এবং মুক্তবাজার অর্থনীতিকে গতিশীল করার উদ্দেশ্য ১৯৪৭ সালে জেনেভাতে GATT চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক নির্ধারণের প্রয়োজন থেকেই GATT জন্মলাভ করে। গ্যাট মূলত: কোন বাণিজ্যিক সংস্থা নয়, এটা একটা বাণিজ্যিক চুক্তি। গ্যাট চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে চুক্তিটিকে একটি বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সংস্থায় রূপান্তর করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রয়োজনেই ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত গ্যাটের কর্তৃত্বকে আরো শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে চুক্তিটির আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়, অবশেষে ১৯৮৬ সালে গ্যাটের উরুগুয়ে রাউন্ড আলোচনার মধ্য দিয়েই চুক্তিটি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় রূপান্তর লাভ করে। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারী GATT আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।



GATT এর উদ্ভব: ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পথে যুক্তরাষ্ট্রের ছোট একটি শহরে ব্রেটন ও উড্সে অনুষ্ঠিত হয় এক কনফারেন্স। এই কনফারেন্সে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা গঠন, যুদ্ধোত্তর রাষ্ট্রসমূহের পুণর্গঠন ও উন্নয়ন সাধন এবং বাণিজ্য ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ব্রেটন উডস্ কনফারেন্সে এ মর্মে প্রস্তাব গৃহীত হয় যে, উক্ত বিষয়গুলোর প্রয়োগকল্পে সঠিক কাঠামো নির্মাণের উদ্দেশ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠন করা যুক্তিযুক্ত হবে। প্রস্তাবিত তিনটি বহুজাতিক ব্যবস্থা নিুরূপ: বিশ্বব্যাংক (IBRD), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (ITO) । যার প্রধান কাজ হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সমস্যা সমূহ পর্যবেক্ষণ ও সমাধানের উপায় বের করা।



১৯৪৫ সাল নাগাদ প্রথম ২ টি সংস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিন্তু তৃতীয়টি নিয়ে দেখা দেয় বিবাদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য কতিপয় রাষ্ট্র বাণিজ্য ব্যবস্থা তদারকির জন্য একটি পরিবর্তনশীল সংস্থা হিসাবে গ্যাটের জন্ম দেয় ১৯৪৭ সালে। গ্যাট জন্মলাভের পর মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে মার্কিন প্রশাসনের সমর্থনে ১৯৪৯ সালে হাভানা কনফারেন্সে ITO প্রতিষ্ঠার জন্য চার্টার গৃহীত হয়। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদন না করায় ITO জন্মলাভে ব্যর্থ হয়। তার পেছনে কারণ হিসাবে বিশ্লেষকেরা ধারণা পোষণ করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উপলব্ধি শক্তিতে মনে করেছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে তার হস্তক্ষেপ অনিবার্য। এছাড়া হাভানা চার্টার ITO প্রতিষ্ঠানের জন্য যে সুপারিশ করেছিল তাতে তৃতীয় বিশ্বের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি ছিল অনেক জরুরী। শিল্পোন্নত দেশ সমূহের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাণিজ্যিক কার্যকলাপে যে অসততা ও অনৈতিকতার জাল বিস্তারের মধ্য দিয়ে পণ্যের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েমের অপচেষ্টা অনবরত চালিয়ে আসছিল। হাভানা চার্টারে ITO প্রতিষ্ঠার মূল দলিলে এসব বন্ধ করার বিধি বিধান রাখা হয়েছিল জোরালো ভাবে।



উন্নয়নশীল দেশসমূহের গ্যাট উন্নত দেশ সমূহের অনুকূলে একথা উল্লেখ করে জোরেসোরে দাবি করে ITO প্রতিষ্ঠা করতে। এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ১৯৬৩ সালে একটি পর্ষদ গঠন করে যার কাজ হবে কিভাবে ITO গঠন করা যেতে পারে তা চিহ্নিত করা। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেস অনবরত এটি গঠনের ব্যাপারে ভেটো প্রয়োগ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ পর্ষদ একটি সম্ভাব্য বিকল্পের সুপারিশ করেছিল। যার প্রেক্ষিতে ১৯৬৪ সালে জাতিসংঘ পর্ষদ প্রদত্ত বিকল্পের ভিত্তিভূমিতেই UNCTAD প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, এবং এক সময় মনে হয়েছিল যে, ১৯৬৪ এর UNCTAD ১৯৪৭ এর গ্যাটের প্রতিস্থাপক হবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বোতভাবে গ্যাটকে সমর্থন করায় গ্যাট পর্যায়ক্রমে শক্তিশালী হতে থাকে। সুতরাং বলা যায় যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ITO) সকরুন তিরোধানের পর গ্যাট ক্রমশ স্থায়ীরূপ লাভ করে। মূলত: গ্যাটই হল প্রথম বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটা সাধারণ ব্যবস্থায় বিধি গড়ে তোলে এবং কিছু সংখ্যক নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী হয়।



GATT থেকে WTO: বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিভিন্ন পরিসর পর্যালোচনা, বাণিজ্য বিরোধের নিস্পত্তি, শুল্ক সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সমূহ অন্য কোনো বিধি বিধান তৈরী ও পরস্পর মেনে চলার আয়তনে মর্কিন য্ক্তুরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলোর মডেলে গ্যাট গড়ে উঠেছিল এবং একটি ফোরাম হিসাবে কাজ করে আসছিল। ১৯৪৭ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে প্রথম চুক্তি স্বাক্ষরিত করার পর সাত দফা আলোচনার (যা রাউন্ড নামে পরিচিত ) মাধ্যমে গ্যাট পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত গ্যাটের পাঁচটি রাউন্ড বা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়- জেনেভা, এনেসি, টরকোয়ে, জেনেভা ও দিলন রাউন্ড৩। এগুলো ছিল মূলত: শূল্ক অবাধকরন সম্পর্কিত, কিন্তু ১৯৬৪ -৬৭ সালে অনুষ্ঠিত কেনেডি রাউন্ড এবং এর পরবর্তী রাউন্ডগুলোর প্রকৃতি ছিল ভিন্নতর ও পরিধি ছিল ব্যাপক।



কেনেডি রাউন্ড (১৯৬২-৬৭) : কেনেডি রাউন্ড তার পূর্ববর্তী রাউন্ডগুলোর তুলনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে কারণ এই রাউন্ডে বেশী সংখ্যক দেশ পণ্য এবং বিষয়ের উপর আলোচনা হয়। এখানেও মূলত: শুল্ক হ্রাসের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। যেহেতু এসময় বাণিজ্যে অশুল্ক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা গুরুত্বপূর্ণভাবে আবির্ভূত হয়, সেহেতু এর উপরও কিছুটা আলোচনা করা হয়। অনুরূপভাবে কৃষি বাণিজ্যকেও অবাধ করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলে। এই সময় শিল্পজাত দ্রব্যের উপর ৩০% শুল্ক হ্রাসের ব্যাপারে ঐক্যমত হয়।



টোকিও রাউন্ড (১৯৭৩-৭৯): টোকিও রাউন্ডটি বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এ রাউন্ডটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হয় যখন বিশ্ব ‘তেল সংকট’ জনিত কারণে গভীর মন্দার মধ্যে নিমজ্জিত ছিল। শুল্ক হ্রাস করার বিষয়টির সঙ্গে বিশ্ব কৃষি বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা এই রাউন্ডে স্থান পায়। পণ্য সঞ্চালনে অশুল্ক জনিত সম্পর্কে বাধা, বাণিজ্য ভর্তুকি এবং ট্রপিক্যাল প্রোডাক্টর সম্পর্কে ১১ টি চুক্তি এ রাউন্ডে সম্পাদিত হয়। ১৯৭৯ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে ৩৫ ভাগ পণ্যের শুল্ক হ্রাস পায়। এর পূর্বে শুল্ক ছিল ৪০ শতাংশ এটা ছিল টোকিও রাউন্ডের জন্য অভূতপূর্ব সাফল্য। এ রাউন্ডেও কৃষিজাত পণ্য গ্যাটের বাইরে থেকে যায়। টোকিও ঘোষণার মাধ্যমেই গ্যাট প্রথমবারের মত প্রাথমিক পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল, ন্যায্য ও লাভজনক পর্যায়ে স্থিরীকরণের গুরুত্ব, আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও টোকিও রাউন্ডের মধ্যেমে গ্যাটের সার্বিক সাফল্য অর্জিত হয়নি।



উরুগুয়ে রাউন্ড (১৯৮৬-৯৪): ১৯৯৮ সালে উরুগুয়েতে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মাঝ দিয়ে উরুগুয়ে রাউন্ডের বীজ বপন করা হয়। এই বৈঠকে ঐক্যমত স্থাপিত হয় য়ে, বিশ্ববাণিজ্য অবাধকরনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কয়েক বছর পূর্ব প্রস্তুতি এবং আলোচনার পর অবশেষে এই রাউন্ডের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। আর ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে তারই ফলাফল সম্বলিত ড্রাফট ফাইনাল এ্যাক্ট (DFA) শীর্ষক প্রায় ৫৫০ পৃষ্ঠার খসড়া দলিল গ্যাটের সাবেক মহাপরিচালক আর্থার ডাংকেল, সদস্য দেশগুলোর বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করেন। এর ভিত্তিতে ১৯৯৩ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর তারিখে চুড়ান্ত দলিল প্রণয়ন করা হয়। গ্যাটের উরুগুয়ে রাউন্ড WTO এর প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় অবদান রাখে। এ রাউন্ডে গ্যাট সংক্রান্ত কতকগুলো অনুচ্ছেদের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে। উরুগুয়ে রাউন্ড এর আলোচ্য সূচীতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে:শুল্ক ডাম্পিং নিয়ে আলোচনা করা হয়। এসব ক্ষেত্রে বাধাসমূহ দূর করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়। গ্যাটের প্রচলিত ভূমিকা সংশোধন করা উচিত কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেবাখাতে গ্যাটের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।



উরুগুয়ে রাউন্ড আলোচনার মাধ্যমে যে সকল ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন চুক্তি হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কৃষি, স্যানিটেশন, বস্ত্র ও পোশাক, সার্ভিসেস, বিনিয়োগ, ডাম্পিং প্রতিরোধ, কাস্টমস্ ভেলুয়েশন জাহাজীকরণপূর্ব পরিদর্শন, উৎপাদন সূত্রের বিধিমালা, ভর্তুকি, সেফগার্ড, বিবাদ নিস্পত্তি, বাণিজ্যনীতি পর্যালোচনা, সরকারি ক্রয় ইত্যাদি। বিভিন্ন চুক্তিতে যেসব শর্ত রয়েছে প্রত্যেক সদস্য দেশকে তা মেনে চলতে হবে, তবে কোনো কোনো ক্ষতি স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য ভিন্নতর হারে কিছু অব্যাহতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যেক সদস্য দেশকে নিশ্চিত করতে হবে যেন তাদের আইন ও নিয়মাবলী বিভিন্ন চুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।



WTO এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৫৩ । বিশ্ববানিজ্যের প্রায় ৯০ ভাগের বেশী বানিজ্য এই ১৫৩ টি দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে । আরো ৩০টির মতো দেশ সদস্যপদ লাভের জন্য আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের ঐক্যমতের প্রয়োজন হয়। WTO এর সবোর্চ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহনের দায়িত্ব মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের (Council of Ministers) ওপর ন্যস্ত । মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন (Council of Ministers) অন্তত দুবছরে একবার মিলিত হয়। এরপরের স্তর রয়েছে (General Council) যা জেনেভায় নিযুক্ত সদস্য দেশসমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। তবে কখনো কখনো সদস্য দেশ সমূহের রাজধানী থেকে প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে থাকে। এর পরের পর্যায়ে রয়েছে Goods Council, Services Council এবং Intellectual Property Council যেগুলো General Council এর কাছে রিপোর্ট পেশ করে থাকে। এগুলো ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য বিশেষায়িত কমিটি, ওয়াকিং গ্র“প এবং ওয়ার্কিং পার্টি। যেগুলো বিভিন্ন চুক্তি এবং নানাবিধ বিষয়াবলী নিয়ে কাজ করে,সেগুলো হল Trade and Environment, Trade and Development (Subcommittee on Least-Developed Countries), Regional Trade Agreements, Balance of Payments Restrictions, Budget, Finance and Administration.



মন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুরে, দ্বিতীয় সম্মেলন ১৯৯৮ সালে জেনেভায়, তৃতীয় ১৯৯৯ সালে আমেরিকার সিয়াটলে, চতুর্থ সম্মেলন ২০০১ সালে কাতারের দোহায়, পঞ্চম সম্মেলন মেক্সিকোর কানকুনে ২০০৫ সালে, ষষ্ঠ সম্মেলন ২০০৯ সালে হংকংয়ে এবং সর্বশেষ সম্মেলন জেনেভায় ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয়।



বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সচিবালয় জেনেভায় অবস্থিত এবং এর প্রধান একজন মহাপরিচালক।বর্তমান এর মহাপরিচালকেন নাম প্যাসকল লেমি। এর কোন শাখা অফিস নেই। যেহেতু সদস্যদের সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সেহেতু সচিবালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন ক্ষমতা নেই। সচিবালয়ের মূল ক্ষমতা হচেছ বিভিন্ন পরিষদ, কমিটি এবং মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তিতে ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সচিবালয় সহায়তা করে থাকে।



WTO এর প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ হলো-

পারস্পরিক সহায়তা নীতি: এ নীতির অর্থ হলো বাণিজ্যের বাধাসমূহ হ্রাস করে বাণিজ্যের ভারসাম্য রক্ষা করা অর্থাৎ এক দেশকে যখন শুল্ক ক্ষেত্রে কোন সুবিধা প্রদান করা হবে তখন সেই দেশেও এর বিনিময়ে সুবিধা প্রদান করবে। এ নীতি যদিও পারস্পরিক লেনদেনের উপর নির্ভরশীল বলে মনে হয় তবুও এটি সবদেশের জন্য সুবিধাজনক নয়। এটা উন্নত দেশের পারস্পরিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে যতটুকু সুবিধাজনক অনুন্নত দেশের ক্ষেত্রে ততটুকুই অসুবিধাজনক। যেমন: অনুন্নত দেশসমূহ কাঁচামাল উৎপাদনকারী অপরদিকে উন্নত দেশগুলো তৈরি দ্রব্য উৎপাদনকারী। আবার উন্নত দেশসমূহ তৈরী করে অধিক দামে তৃতীয় বিশ্বে বেশী দামে বিক্রয় করতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উন্নত দেশগুলো দ্বারা মূল্য নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে পারস্পরিক সহায়তা নীতির মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্ব প্রকৃতপক্ষে অগ্রসর হতে পারছে না।

বৈষম্যমূলক আচরণ না করা: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির মূল কথা হলো বৈষম্যমূলক নীতি অবলম্বন না করা, আন্তর্জাতিক বিনিময় যেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে পড়ে।

বাণিজ্য বাধা দূর করা: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সকল বাধা রয়েছে সেসব বাধা চিহ্নিত করে অপসারণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা গ্যাটের অন্যতম প্রধান নীতি।

শুল্ক কমানো: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্ক সংক্রান্ত বাধাসমূহ কমাতে হবে। এক্ষেত্রে সকল দেশের সুবিধা সমান হতে হবে। অর্থাৎ সকল দেশের বাণিজ্য শুল্কের পরিমাণ যেন একই রকম হ্রাস পায়।

Most Favoured Nation (MFN): যুদ্ধোত্তর বিশ্বের গ্যাট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দিক নির্দেশকে নীতি হিসাবে Most Favoured Nation (MFN) নীতি প্রবর্তন করে। এ নীতি বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সমতা স্থাপন করে। তাই এই চুক্তি সদস্যভূক্ত নির্দিষ্ট কোনো দেশকে কোনো বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করে না। কেবলমাত্র চুক্তিভূক্ত দেশের সামগ্রীকে একই পর্যায়ে বিবেচনা করে।

এছাড়াও আরও কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে।যেমন-উরুগুয়ে রাউন্ড চুক্তির বিভিন্ন বিষয়ের বাস্তবায়ন কাজে তদারকি করা। অধিকতর ন্যায়ভিত্তিক মুক্ত বাণিজ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করা। বাজারগুলোতে ক্রমবর্ধমান প্রবেশাধিকার এবং সম্ভাব্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।



WTO এর কার্যাবলী :বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা WTO ১৯৯৫ সালে কার্যক্রম শুরু করে। WTO ই একমাত্র বিশ্ব সংস্থা যা বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়াবলী আলোচনা করে। শুধু আলোচনাই করে না এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। কার্যাবলী সমূহ হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনা করে এবং সেগুলো সংগঠিত করে। সদস্য দেশগুলোর মাঝে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা করে, একটি ফোরাম হিসাবে দায়িত্ব পালন করা। রাষ্ট্রসমূহের বাণিজ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করে থাকে। এ সকল সমস্যা যেন সংঘাতে রূপ না নেয় সে বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। সদস্য রাষ্ট্রসমূহের বাণিজ্য নীতি পর্যালোচনা করে, প্রসারিত করে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারনে স্বচ্ছতা এবং সহযোগীতা নিশ্চিত করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য নীতি তৈরী করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশ গুলাকে সাহায্য করে। উন্নয়নশীল, অনুন্নত এবং স্বল্প আয়ের দেশসমূহকে কারিগরি সহায়তা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়ম শৃঙ্খলার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে। এছাড়াও অর্থনৈতিক গবেষণা এবং বিশ্লেষনেরও একটা কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে। এর মাধ্যমে নিয়মিত বার্ষিক প্রকাশনা এবং গবেষণার রিপোর্টে নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্যিক চিত্র তুলে ধরা হয়। অন্যান্য বহুজাতিক অর্থনৈতিক সংস্থা যেমন- বিশ্বব্যাংক, আই.এম.এফ এর সাথে গভীর সহযোগীতার সম্পর্ক রক্ষা করে।



WTOএর বাণিজ্য নীতিঃ WORLD TRADE ORGANIZATION এর নিজস্ব কিছু বাণিজ্য নীতিমালা আছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-

NON DISCRIMINATION: WTO এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ২ টি প্রধাান বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। প্রথমটি হলো অধিক ক্ষমতাশালী জাতিগুলোর শাসন এবং দ্বিতীয়টি হলো জাতীয় পরামর্শ প্রদান নীতি। নিয়ম আছে যে, সদস্য দেশগুলো কোটামুক্ত, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করবে। WTO এর MFN (MOST FAVOURED NATIONS) RULE অনুযায়ী যেকোন সদস্য রাষ্ট্র তার ইচ্ছানুযায়ী অপর যেকোন সদস্য দেশের সাথে বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করবে এক্ষেত্রেকোন প্রকার বৈষম্য করা হবে না। WTO এর সকল সদস্য একটি নিশ্চিত ও একই অবস্থান থেকে বাণিজ্য করবে। এছাড়া পরামর্শ প্রদান নীতির ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে, দেশের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে বিদেশী সামগ্রীকে বাজারে ঢুকিয়েছে শুল্ক মুক্তভাবে।

Reciprocity: অধিক ক্ষমতাশালী জাতিগুলোর শাসনের কারণে অবাধ বাণিজ্যের সীমাবদ্ধতা নিয়ে একটি আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হয় । যাতে প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের বিশ্ব বাজারে প্রবেশাধিকার অর্জনের ক্ষমতা থাকে। প্রত্যেক সদস্য দেশসমূহ পারস্পারিক সহযোগিতা করবে অর্থ ও প্রযুক্তি দিয়ে । আলোচনার মাধ্যমে অধিকতর ভালো সমাধান ও উপদেশ দিবে।



Binding and Enforceable Commitment: বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিলো- বিনা শুল্কে সদস্য দেশসমূহ বাণিজ্য করবে এতে কোন বাঁধা বা সীমাবদ্ধতা থাকবেনা। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এমন কোন বিষয় থাকবে না যা আপোষ বা আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা যাবে না। কোন দেশ যদি ক্ষতিসাধন করে তাহলে ঐ দেশের সম্পূর্ণ ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।



Transparency: সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাণিজ্য নীতি স্বচ্ছ থাকবে এবং জবাবদিহিতা থাকবে। প্রত্যেক দেশ তার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ব্যবসা-বাণিজ্য এগুলো অপরাপর দেশকে প্রভাবিত করবে। WTO বাণিজ্য নীতিমালার মাঝেমাঝে পরিবর্তন সাধন করা হয়। সদস্য দেশগুলোর আলোচনায় বিভিন্ন দেশের বার্ষিক বাণিজ্য প্রতিবেদন দেখা হয় ও ভবিষ্যদ্বানী করা হয় এবং আমদানী-রপ্তানীর দিক তুলে ধরা হয়।



WTO বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এখানে তিন ধরনের দিক নির্দেশনা দেয় আছে। ১. অর্থনীতির বাইরে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি দেশ বার্ষিক কি পরিমাণ লক্ষ্য অর্জন করবে তা ঠিক করা। ২. উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা। ৩.অর্থনৈতিক কারণে বাণিজ্যিক হস্তক্ষেপের অনুমোদন দেওয়া।



সম্মেলন সমূহ এবং উল্লেখযোগ্য ঘোষনা: এ পযর্ন্ত বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার সর্বমোট ৭টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৭। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:



সিঙ্গাপুর সম্মেলন (৯-১৩ ডিসেম্বর’১৯৯৬ সাল): বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ৯-১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গ্াপুরে। এই সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে অন্ততঃ ১৯ টি প্রসঙ্গ অন্তর্ভূক্ত ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ছিলো নিম্নরূপÑ প্রতিযোগিতা ও বিনিয়োগ নীতি; সরকারী ক্রয় নীতি ; বাণিজ্য সহজীকরণ প্রচেষ্টা।



জেনেভা সম্মেলন(১৮-২০ মে ১৯৯৮ সাল): বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৮-২০ মে এর ১৯৯৮ সালে। এই সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে কোন নতুন বিষয় অন্তর্ভূক্ত হয়নি। প্রথম সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলোর পর্যালোচনার ও অগ্রগতির পর্যবেক্ষণ এবং পরবর্তিতে সিয়াটলে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রী পর্যায়ের তৃতীয় সম্মেলনের বিষয়বস্তু নির্ধারন করাই ছিলো এই সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ইলেক্ট্রনিক বাণিজ্য থেকে উদ্বুত বিষয় নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে মতৈক্য হয় এ সম্মেলনে।



সিয়াটল সম্মেলন (৩০ নভেম্বর-৩ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সাল): সিঙ্গাপুর ও জেনেভাতে অনুষ্ঠিত প্রথম ও দ্বিতীয় সম্মেলনে ক্ষোভ সঞ্চারিত হলেও তেমন কোন বিক্ষোভ দানা বাঁেধনি। কিন্তু ১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর হতে অনুষ্ঠিত WTO এর তৃতীয় সম্মেলনে ব্যাপক বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। সমগ্র বিশ্বের প্রায় ৭০০টি সংগঠনের ৪০ হাজারেরও বেশী মানুষ সিয়াটল সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন না হলেও বিশ্বায়ন বিরোধীতার ব্যাপারে সবাই ছিল এক ও অভিন্ন।সম্মেলনের অভ্যন্তরেও ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। এতো তীব্র বিক্ষোভ সত্ত্বেও নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো এ সম্মেলনে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল- পরিবেশ রক্ষায় কোন চুক্তি না হলেও কোন পরিবেশ চুক্তি যেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যাহত না করে তা পর্যবেক্ষণের জন্য “Community On Trade and Development” গঠন করা হয়। শ্রমের গুণগত মান নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। শ্রমিকের অধিকার ঠিকমতো রক্ষা হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়। এ সম্মেলনে মুক্ত বাজার নীতির পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতে শ্রমের অবাধ প্রবেশাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। পরবর্তী সম্মেলনগুলোতে এ দাবী উচ্চারিত হয়েছিল। WTO কেবল ১৯৯৯ সালেই ১৬৭ টি আন্তর্জতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে।



দোহা সম্মেলন ( ৯-১৩ নভেম্বর ২০০১ সাল): ২০০১ সালের ৯-১৩ নভেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় WTO এর মন্ত্রী পর্যায়ের চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সিয়াটল হতে দোহা এ দুটি সম্মেলনের মধ্যবর্তী সময়কালে শুধু বিশ্বায়ন বিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে তাই নয়। অনেক পুঁজিবাদী দেশের অর্থনৈতিক সংকট প্রকট হয়েছে। যেমন: ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি দক্ষিণ আফ্রিকায়, ১৯৯৭-৯৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালায়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে, ১৯৯৮ সালের প্রথমার্ধে দক্ষিণ কোরিয়ায়, একই বছরের মাঝামাঝি রাশিয়া এবং ১৯৯৯ সালের প্রথমার্ধে ব্রাজিল ও ইকুয়েডরে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট দেখা যায়। অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে শ্রমিক ধর্মঘট সংগঠিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত দোহা সম্মেলনকে নির্বিঘ্ন করতে স্থান নির্বাচনের কৌশল ছাড়াও গ্রহণ করা হয়েছিল ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি। এ কারণে দোহা সম্মেলন শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল।



দোহা সম্মেলনে নিম্নলিখিত চারটি বিষয়কে মূল কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল: ১.অনুমোদিত সমঝোতা-আলোচনার অন্তর্ভূক্ত বিষয় ( কৃষি ও সেবা খাতের বাণিজ্য বিষয়ক সাধারণ সমঝোতা)। ২.অনুমোদিত পর্যালোচনা ( বাণিজ্য সংক্রান্ত মেধাস্বত্বাধিকার ও বিনিয়োগ ব্যবস্থা)। ৩.নতুন সমঝোতা আলোচনা-অকৃষি খাতে বাজারে প্রবেশের সুবিধা বাণিজ্য ও পরিবেশ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালায় (এন্টিডাম্পিং, ভর্তুকি, পাল্টা পদক্ষেপ বা আমদানী শুল্কারোপ, আঞ্চলিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা) স্বচ্ছতা ও বিরোধ নিরসনে অভিন্ন বিধি অনুসরণ। ৪. সিঙ্গাপুর ইস্যু ( বিনিয়োগ নীতি ও বাণিজ্য প্রতিযোগিতা নীতি, সরকারী ক্রয়ে স্বচ্ছতা এবং বাণিজ্য পকিল্পনা সহজীকরণ)। দোহা সম্মেলনের খসড়ায় এমন অনেক বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছিল যা মূল আলোচ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত ছিল না।এতে স্বল্পোন্নত দেশের প্রতিনিধিগণ তীব্র আপত্তি উত্থাপন করেন। অবশেষে মূল দলিলের সাথে নিম্মলিখিত তিনটি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণা;বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ; ট্রিপস ও জনস্বাস্থ্য নিয়ে সমঝোতা।



দোহা সম্মেলনে উল্লেখ্য বিষয় ছিল বাণিজ্য সংক্রান্ত মেধাস্বত্ত্ব আইন ও জনস্বাস্থ্য :‘দোহা’ ঘোষণায় বাণিজ্য সম্পর্কীত বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে গৃহিত প্রস্তাব গুলো ছিলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বিরল অর্জন। দোহা সম্মেলনে Trade Related Intellectual Property Rights (TRIPS) ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে ১৭,১৮ ও ১৯ নং অনুচ্ছেদে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭ নং অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে একটি পৃথক ঘোষণা দেয়া হয়।



ভৌগলিক নিদের্শনার জন্য সার্বজনীন ব্যবস্থা : দোহা ঘোষণার ১৮ নং অনুচ্ছেদে মদ ও তরল পদার্থের ভৌগলিক নির্দেশনার প্রজ্ঞাপন এবং নিবন্ধিকরণের জন্য একটি সর্বজনবিদিত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সদস্যরা একমত হয়।



জীব বৈচিত্র্য, ঐতিহ্য ও লোকাচার বিদ্যাঃ TRIPS চুক্তির ১৯ নং অনুচ্ছেদে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং ঐতিহ্য ও লোকাচার সংক্রান্ত বিষয়গুলো সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। TRIPS ও জনস্বাস্থ্য চুক্তির ফলে যেসব দেশে এইডস্, ম্যালেরিয়া এবং অন্যন্য সংক্রামক ব্যাধি মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব দেশে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ আমদানী ও ক্রয় করার ক্ষেত্রে পেটেন্ট কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেনা এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে পেটেন্ট বিধি কার্যকর করার সময়সীমা ২০১৬ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।



কৃষিঃ দোহা সম্মেলনে WTO এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক কৃষি সংক্রান্ত ১২১ টি প্রস্তাব বিবেচনায় আনা হয় এবং কৃষি চুক্তির প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে বাজারমুখী ব্যবস্থা প্রবর্তনে অঙ্গীকার পুনঃব্যক্ত করা হয়। দোহা সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো কৃষি বিষয়ক চুক্তির প্রশ্নে নিম্নলিখিত বিষয়ে সর্বাÍক আলোচনায় সম্মত হয়:উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ বাণিজ্যিক সুবিধা সমূহের অঙ্গীকার। সব ধরনের রপ্তানী ভতুর্কির পরিমাণ কমিয়ে আনা এবং পর্যায়ক্রমে এর বিলোপ সাধন করা। অবাধ বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর জাতীয় আজ্ঞাধীন এমন বিধি নিষেধ গুলো কমিয়ে আনা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য বিশেষ এবং পৃথক ব্যবস্থা সকল আলোচনার অবিচ্ছেদ্য অংশ বিবেচনা করা।



অকৃষি পণ্যের বাজার সুবিধাঃ দোহা ঘোষণায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর রপ্তানী পণ্যের উপর সর্বোচ্চ শুল্ক বৃদ্ধির গতিসহ সব ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক জনিত বাঁধা দূরীকরণের ব্যাপারে আলোচনায় সম্মতি জ্ঞাপন করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পণ্যের বিশদ বিবরণ উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। পারস্পারিক সম্মতির মাধ্যমে শুল্ক হ্রাস সহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থের উপর জোর দেওয়ার কথা উক্ত ঘোষণায় ব্যক্ত করা হয়েছে।



সেবা খাতঃ সেবা খাতের বাঁধাগুলো তুলে ফেলার ব্যাপারে আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে GATSএর ১৯ নং ধারার অধীনে ২০০০ সালের জানুয়ারীতে শুরু হওয়া আলোচনাকে বিবেচনা করা হয় এবং অধিক সংখ্যক খাত এবং ব্যক্তির চলাচল ইস্যুকে আলোচনার জন্য বিবেচনা করা হয়।



সিঙ্গাপুর ইস্যু: দোহা সম্মেলনে সিঙ্গাপুর ইস্যুগুলো পুনরায় উত্থাপিত হয়। সিঙ্গাপুর ইস্যু দোহা সম্মেলনে ব্যাপক বির্তকের সৃষ্টি করে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো এই নীতির বিরোধীতা করে। অনেক বির্তকের পর এই আপোষ করা হয় যে, সুনির্দিষ্ট মতৈক্যের ভিত্তিতে একটি কার্যপ্রণালীর মাধ্যমে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।



বাণিজ্য ও পরিবেশ: উন্নয়নশীল দেশগুলোর তীব্র বিরোধীতা সত্ত্বেও আফ্রিকান ইউনিয়নের সহায়তায় পরিবেশ বিষয়ে একটি সমঝোতায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয়। বাণিজ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়টি দোহা ঘোষণার ৩১ ও ৩২ নং অনুচ্ছেদে অন্তর্ভূক্ত করা হায়। সর্বোপরি দোহা ঘোষণায় ধনী দেশগুলোর কাছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজার সুবিধা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়। WTO এর দোহা সম্মেলনকে মোটামুটি সফল বলা যায়।



কানকুন সম্মেলন (১০-১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সাল): ২০০৩ সালের ১০-১৩ সেপ্টেম্বর ম্যাক্সিকোর অবকাশ নগরী কানকুনে অনুষ্ঠিত ৫ম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ব্যাপক গণবিক্ষোভ, দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষক লি কিয়াংহৈর আÍহত্যা এবং সর্বোপরি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য মত প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ সম্মেলনে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে ‘G -21’ কোয়ালিশন গড়ে উঠেছিল। সিঙ্গাপুর ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলেও কোন সমঝোতা হয় নি। কানকুন সম্মেলনে কৃষি বিষয়ক আলোচনার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলো যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল তা হলো- কৃষিজাত পণ্য রপ্তানীর ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাতহার করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং ইউরোপের কৃষকদের অভ্যন্তরীন সহায়তার আওতায় যে ভর্তুকি দেয়া হয় তার পরিমাণ তদারকির জন্য কঠোর নীতিমালা প্রনয়ণ করা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানী পণ্যের বাজার সুবিধা বাড়ানোর জন্য উন্নত দেশে বিদ্যমান শুল্ক হার ব্যাপক মাত্রায় কমানো। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ সম্মেলনে কিছু সফলতার দিক হচ্ছে, এ সম্মেলনে নেপাল ও কম্বোডিয়া WTO সদস্য পদ লাভ করে। বাণিজ্য সক্রান্ত মেধাসত্ত্ব আইন এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে জেনেভাতে যে ঐক্যমত হয়েছিল এ সম্মেলনে তা বহাল রাখা হয়।



হংকং সম্মেলন (১৩-১৮ ডিসেম্বর ২০০৫ সাল): ২০০৫ সাল সালের ১৩-১৮ ডিসেম্বর হংকং এ WTO ৬ষ্ঠ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলন সিয়াটল কিংবা কানকুনের মতো ব্যাপক বিক্ষোভ সংগঠিত না হলেও বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ সহস্রাধিক লোক বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং বিশ্বায়ন বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। বিক্ষোভকারীরা WTO কে ‘গরীরের স্বার্থ বিরোধী’ সংগঠন বলে আখ্যায়িত করে ও বৈঠকে বিরোধীতা করে। এ সম্মেলনে ১৪৯ টি দেশ অংশগ্রহন করে। হংকং সম্মেলনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলো গ্রহন করা হয়:২০০৮ সাল হতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ও কোটা মুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়। উন্নত দেশগুলো ২০১৩ সালের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহার করবে।অকৃষি পণ্যের শুল্ক কমাতে হবে এবং এমনভাবে কমাতে হবে, যেখানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর চাহিদার প্রতিফলন ঘটবে। সেবা খাতকে অবাধ বাণিজ্যের আওতায় আনলেও এ সকল খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অবস্থা ও চাহিদা বিবেচনা করতে হবে। যাহোক সংকট ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একথা বলা যায় যে, হংকং সম্মেলনে যোগদানকারী দেশগুলো শেষ পর্যন্ত কয়েকটি বিষয়ে (কৃষি, সেবা, বাণিজ্য) নূন্যতম ঐক্যমতে পৌঁছাতে পেরেছে।



জেনেভা সম্মেলন (৩০ নভেম্বর -২ ডিসেম্বর ২০০৯ সাল):সুইজারল্যন্ডের রাজধানী জেনেভায় ২০০৯ সালের ৩০ নভেম্বর - ২ ডিসেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ৭ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে -বহু পক্ষিয় বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা ; সামপ্রতিক বিশ্ব, অর্থনৈতিক পরিবেশ । জেনেভা সম্মেলন কোন ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়। বিশ্বব্যপি মন্দা দেখা দেয়ায় আলোচনার গতি আরো পিছিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০১০ সালের মধ্যে দোহা উন্নয়ন আলোচনা শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়। উল্লেখ্য বাণিজ্যের সাথে উন্নয়নকে জুড়ে দিতেই দোহা রাউন্ড শুরু হয়েছিল ৮ বছর পূর্বে। ২০০১ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ৪র্থ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্যের দোহা পর্বের সূচনা করা হয় কিন্তু কৃষি নিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বিরোধ আর শিল্প পণ্যের জন্য উন্নত দেশগুলো কতটা ছাড় দিবে গরীবদের এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। মূলতঃ কৃষির উপর ভতুর্কি কমানো এবং অকৃষি পণ্যের শুল্ক হ্রাসের ক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য কোন অগ্রগতি না হওয়ায় দু বছর পর পর সম্মেলন করার বাধ্যবাদকতা মানা হয় নি।



বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য পদ লাভের পদ্ধতি: বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য পদ লাভের একটি ব্যতিক্রম পদ্ধতি রয়েছে। এখানে এক জাতি এক সদস্য পদ নীতি গ্রহণ করা হয় না। কোন দেশের সদস্য পদ লাভের দ্রুততা নির্ভর করে MFN (Most Favored Nation) নীতি এবং সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চলমান বাণিজ্য নীতির উপর। এই প্রক্রিয়ায় কোন দেশের সদস্য পদ লাভ করতে হলে গড়ে পাঁচ বছর সময় লাগে। তবে এ সময় আরও বাড়তে পারে যদি সংশ্লিষ্ট দেশ তাদের চুক্তির অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হয় অথবা রাজনৈতিক অবস্থার অবনতি হয়। কোন দেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য পদ লাভের ইচ্ছা করলে সাধারণ পরিষদে একটি আবেদন করতে হবে এবং তাদের বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিভিন্ন চুক্তি অনুযায়ী গৃহীত সকল অর্থনৈতিক নীতি মেনে নিতে হবে। সদস্য পদ লাভে ইচ্ছুক দেশ একটি স্মারকের মাধ্যমে আবেদন জমা দিবে যা Working Party বাছাই করবে। Working Party মূলত: বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা, আবেদনকারী দেশের আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি ও আইন পর্যালোনা করবে। Working Party দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যে, সদস্য পদ লাভের শর্তসমূহ আবেদনকারী দেশের আছে কি না। এ পক্রিয়ার প্রান্তিক সময়ে সদস্য পদলাভে ইচ্ছুক দেশকে কিছু দিকনির্দেশনা ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কিছু নিয়ম মেনে নিতে হবে। চুড়ান্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট দেশ ও Working Party এর মাঝে দ্বিপাক্ষিক পণ্য ও সেবা সামগ্রীর বাজারে প্রবেশাধিকার ও শুল্কের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় প্রদানের অঙ্গীকার করা হয়। নতুন সদস্য বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় কোন প্রকার বৈষম্য ছাড়াই সমভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অংশগহণের জন্য আবেদন করতে পারবে। দ্বিপাকিক্ষক আলোচনা শেষে Working Party একটি ‘অন্তর্ভূক্তি প্যাকেজ’ সাধারণ পরিষদ ও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে পাঠিয়ে দিবে। যার সংক্ষেপ Working Party এর সকল সভাসমূহে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যার মধ্যে থাকে সদস্য পদ লাভের নীতিমালা (draft membership treaty) এবং সেই দেশের অঙ্গীকারনামা। চুড়ান্ত পর্যায়ে সাধারণ পরিষদ ও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে সদস্য পদ লাভের প্রস্তাব চুড়ান্ত অনুমোদন করা হয়। তবে সদস্য পদ লাভের পূর্বেই আবেদনকারী দেশের আইনসভা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট সকল চুক্তি ও অঙ্গীকারনামা পূরণ করতে হয়।



বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য সংখ্যা ১৫৩, যার মধ্যে প্রতিষ্ঠাকালীন উরুগুয়ে রাউন্ডেই সদস্য হয় ১২৩ টি। ২৭ জাতির European Unionএর প্রতিনিধিত্ব করে European Communities. বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য পদ লাভ করতে হলে সম্পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হতে হয় না, বহি:র্বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করার স্বাধীনতাসহ একটি স্বায়ত্বশাসিত ভূ-খন্ড হলেই এর সদস্য হয়। যেমন: চীন কর্তৃক তাইওয়ানের স্বাধীনতা বিনষ্ট হওয়ার পরও ২০০২ সালে " Separate Customs Territory of Taiwan, Penghu, Kinmen and Matsu" নামে সদস্য পদ লাভ করে। স্থায়ী সদস্য নয় এমন ৩০ টি পযবেক্ষক সদস্য রয়েছে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার, যারা সদস্য পদ লাভের জন্য আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। ইরান, ইরাক ও রাশিয়া এখনও পর্যবেক্ষক সদস্য। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থাও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার পর্যবেক্ষক। ১৪ টি রাষ্ট ও ২ টি ভূ-খন্ডের সাথে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কোন অফিসিয়াল সম্পর্ক নাই।



বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার চুক্তিসমূহ:বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ৬০ টিরও অধিক চুক্তি সম্পাদন করেছে। যা আন্তর্জাতিক আইনগত দলিলের মর্যাদা পেয়েছে। সদস্য দেশ সমূহকে অবশ্যই উক্ত চুক্তি সমূহে স্বাক্ষর ও অনুমোদন করতে হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চুক্তি সমূহ হলো: Agreement on Agriculture (AoA), The General Agreement on Trade in Services, Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights Agreement (TRIPs), Agreement on the Application of Sanitary and Phytosanitary Measures, Agreement on Technical Barriers to Trade (TBT)



Agreement on Agriculture (AoA):কৃষি সংক্রান্ত এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। এই চুক্তিটি উরুগুয়ে পর্যায়ে আলোচিত হয় এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন সময় ১ জানুয়ারী ১৯৯৫ সালে। এ চুক্তির তিনটি central concepts, or " pillars" রয়েছে। যথা: Domestic support, Market Access, Export subsidies.

Domestic support: কৃষি সংক্রান্ত চুক্তির কাঠামোতে তিনটি পর্যায়ে তা সহযোগীতা প্রদান করে থাকে। যথা: ১. Green box ২. Amber box ৩. Blue box. Green box পর্যায়ে পরিবেশগত বিষয় সংক্রান্ত কর্মসূচিতে নির্ধারিত পরিমাণ সহযোগীতা বার্ষিক প্রদান করে থাকে। Amber box পর্যায়ে আভ্যন্তরীন কৃষি উন্নয়ন ক্ষেত্রে সহযোগীতা প্রদান করে থাকে। Blue box উৎপাদন সীমিতকরণ প্রকল্পের জন্য ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। আভ্যন্তরীন সহযোগীতা প্রদান প্রকল্পের অর্থ ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য ভর্তুকি হিসাবে প্রদান করার কথা থাকলেও দেখা যায় তা সীমিত সংখ্যক উৎপাদনকারীর হাতে চলে যায়। যেমন: বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্ধেক সাহায্য চলে যায় শতকরা ১ শতাংশ লোকের হাতে এবং আমেরিকার শতকরা ৭০ শতাংশ চলে যায় ১০ শতাংশ উৎপাদনকারীর হাতে।

Market Access: আমদানী রপ্তানী শুল্ক হ্রাস অর্থাৎ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্যদের মধ্যে শুল্কবিহীন বাণিজ্য ব্যবস্থা। ১৯৯৫ সালে (AoA) তে শুল্ক হ্রাসের যে পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় তা হলো: উন্নত দেশ সমূহের জন্য শুল্ক হ্রাসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ৩৬%, যার মধ্যে আগামী ছয় বছরে কমপক্ষে ১৫% কমাতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ সমূহের জন্য ২৪% শুল্ক হ্রাসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় যার মধ্যে প্রতি ১০ বছরে হ্রাস করার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ১০%। Least Developed Countries (LDCs) ভূক্ত দেশ সমূহকে এ শুল্ক হ্রাস করা হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তবে তাদের জন্য শর্ত প্রদান করা হয় যে, এ সকল দেশ ভবিষ্যতে তাদের শুল্ক বৃদ্ধি করতে পারবে না।

Export subsidies:এখানে বলা হয় উন্নত দেশ সমূহ তাদের রপ্তানী ভর্তুকির ক্ষেত্রে কৃষি দ্রব্যের শতকরা ৩৫% এবং সাধারণ মূল্য তালিকায় ২১% হ্রাস করবে। আর এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য তারা ২০০০ সাল পর্যন্ত সময় পাবে।



The General Agreement on Trade in Services:১৯৮৬ সালে উরুগুয়ে পর্যায়ের পূর্বে সেবা খাত যেমন: জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, পোস্টাল সার্ভিস, শিক্ষা এ জাতীয় বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। অনেক সেবা আভ্যন্তরীণ হিসাবে বিবেচিত হত যা দেশের সীমানার বাইরে যাওয়া কঠিন ছিল। উরুগুয়ে পর্যায়েই বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পরে ইন্টারনেটের উন্নতির কারণে দূরে শিক্ষা গ্রহণ, প্রকৌশল, স্বাস্থসেবা, স্থাপত্য বিদ্যা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সারাবিশ্বব্যাপী একটি নেটওয়ার্কের আওতায় এসে যায়। যার ফলে সেবা খাত সমূহ দ্রুত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আওতায় আসে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় চার ধরনের দ্রব্যাদি দেশীয় সীমানার বাইরে বাণিজ্যের জন্য অনুমোদন প্রদান করা হয়। যথা:

ধরণ ১: Cross border supply: এ ধরনের সেবা কোন সদস্য দেশের ভূখন্ড হতে অন্য কোন সদস্য দেশের ভূখন্ডে রপ্তানি করতে পারবে। এক্ষেত্রে সেই বিক্রেতাকে ক্রেতা দেশে উপস্থিত না থাকলেও চলবে।

ধরণ ২: Consumption abroad: এ ধরনের সেবা কোন সদস্য দেশের ভূখন্ড হতে অন্য কোন সদস্য ভুক্তা তা ক্রয় করতে পারবে। এক্ষেত্রেও বিক্রেতার উপস্থিতি না থাকলেও চলবে।

ধরণ ৩: Commercial presence: যে সকল দেশে সেবা সমূহ সরবরাহ করবে সেখানে সরবরাহকারীর উপস্থিতি থাকা শর্ত।

ধরণ ৪: Presence of a natural person: একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসাবে সরবরাহকারী সরবরাহকৃত দেশের ভূখন্ডে উপস্থিত থাকবে।

সেবার খাত : সেবার খাত হিসাবে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা " W /120 list" এর কথা উল্লেখ করে।



Trade- Related Aspects of Intellectual Property Rights Agreement (TRIPs): মেধাস্বত্ব অধিকারের বিষয়টি ডওচঙ ও টঘঈঞঅউ এর মত আন্তর্জাতিক ফোরামে বহু বছর ধরে আলোচনা পর্যালোচনা চলছিল। উন্নত দেশ সমূহের চাপের মুখে উরুগুয়ে রাউন্ডে এ বিষয়টি গ্যাটের আলোচনায় অন্তর্ভূক্ত হয়। বুুদ্ধিভিত্তিক (Intellectual Property)বলতে বুঝায় কোন ব্যক্তি বা কোম্পানী । উদ্ভাবিত নতুন সামগ্রী, ডিজাইন বা প্রযুক্তি; আর অধিকার বলতে বুঝায় উদ্ভাবনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের রয়্যালিটি পাবার একচেটিয়া অধিকার। সাধারণত: এই অধিকার প্রদান করা হয় প্যাটেন্ট (প্রযুক্তি বা ডিজাইন উদ্ভাবনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা বিশেষ প্রতীক বা চিহ্ন), গ্রন্থস্বত্ব বা ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেষনের মাধ্যমে। উরুগেুয়ে রাউন্ডে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে দুই ধরনের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উন্নত দেশসমূহের চাপের মুখে তাদের প্রস্তাবটিই পাশ হয়।



উন্নত দেশ সমূহের প্রস্তাবনা ছিল, বিশ্বের সব দেশেই অভিন্ন বুদ্ধিভিত্তিক আইন চালু থাকা উচিত এবং এক্ষেত্রে মডেল হিসাবে শিল্পোন্নত দেশসমূহের আইনগুলোকেই গ্রহণ করা উচিত। তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তির অধিকার সমূহ শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় সীমিত বিধায় এসকল দেশে বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তির অধিকার বাড়াতে হবে। সরকার কোন দায়িত্ব ও বাধ্যবাদকতা আরোপ করে বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তির অধিকার সীমিত করতে পারবে না। সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে বুদ্ধিভিত্তিক দিতে হবে বলে মত দেয় যুক্তরাষ্ট্র। আর ইইসি ভূক্ত দেশসমূহ সামাজিক শৃঙ্খলা, নৈতিকতার পরিপন্থি এমন আবিস্কার অথবা অথবা জীবতাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন গাছপালা ও প্রাণীজাত উৎপাদন এর বাইরে থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব করে গ্রন্তস্বত্ত্বের মেয়াদ কমপক্ষে ৫০ বছর এবং প্যাটেন্টের মেয়াদ কমপক্ষে ২০ বছর করতে হবে। বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তির প্রভাব বাণিজ্যের উপর পড়ায় এ বিষয়টির দায়িত্ব গ্যাটকেই নিতে হবে। গ্যাটের অধীনে বাণিজ্যের মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত বিষয় আসার পর যদি কোন দেশ এই বিধান মেনে চলছেনা বলে অভিযোগ উঠলে ঐ দেশ প্রতিহিংসা মূলক ও প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।



শিল্পোন্নত দেশ সমূহের পক্ষ থেকে যেসব দাবী উত্থাপন করা হয় তার মধ্যে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে। প্রথমত: প্যাটেন্টকে সাধারণ অধিকার থেকে ব্যক্তি বা কোম্পানীর একচেটিয়া অধিকারে নিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত: মেধাস্বত্বের অধিকার বহুজাতিক কোম্পানীর হাতে চলে যাওয়ায় সামাজিক প্রয়োজনভিত্তিক আবিস্কারের ফলে অগ্রাধিকার পাবে মুনাফা ভিত্তিক উৎপাদন। এর মাধ্যমে উন্নত দেশ সমূহই লাভবান হবে। উন্নয়নশীল দেশ সমূহ বলে যে, এধরনের লাগামহীন মেধা সম্পদের অধিকার প্রদানের অর্থ হবে প্রযুক্তির একচেটিয়া বিকাশের সুযোগ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের লাইসেন্স বিক্রি করে অর্থ উপার্যনের একচেটিয়া ব্যবস্থাকে মেনে নেওয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে তৃতীয় বিশ্বের ১৪ টি দেশ (চীন, ভারত, কিউবা, মিশর, আর্জেন্টিনা, চিলি, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, নাইজেরিয়া, পেরু তানজানিয়া প্রভৃতি) দেশ একটি বিকল্প প্রস্তাব করে।



বিকল্প প্রস্তাবের উল্লেখযোগ্য দিক হলো: নিজ দেশের প্যাটেন্ট যোগ্যতার সীমা, প্যাটেন্টের মেয়াদ ও মালিকানা শর্তাবলী নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বশাসনের অধিকার স্বীকৃতি দিতে হবে। বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রন্থস্বত্ব ও প্যাটেন্ট মালিকদের একচেটিয়াত্ব পরিহার এবং সরকার ও অন্যান্য ব্যক্তি বা সংস্থার নতুন উদ্ভাবনগুলো কাজে লাগানোর সুযোগ দিতে হবে। প্যাটেন্ট ও গ্রন্থস্বত্বের অধিকার যাতে ভারসাম্য না হারায় সেজন্য কিছু দায়দায়িত্ব বেধে দেওয়ার কথা বলা হয়। যেমন: সরকার যদি প্রযুক্তি ব্যবহারের বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করে তাহলে সেক্ষেত্রে এর বিনিময়ে প্যাটেন্ট মালিকের যথাযথ অর্থ পাওয়া। প্যাটেন্ট অধিকারীর দায়িত্বের মধ্যে থাকবে আবিস্কারের স্পষ্ট এবং পরিপূর্ণ দেয়া, বিদেশে এই আবিস্কারের প্যাটেন্টের জন্য আবেদন ও রেজিষ্ট্রেশন সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য প্রদান, প্যাটেন্ট রেজিষ্ট্রেষনের পর কোন কোন দেশে আবার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্যাটেন্ট প্রাপ্ত আবিস্কারকে উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা এবং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরকে ব্যাহত করে বা প্রতিযোগীতার পরিপন্থি কাজে করে এমন ক্রিয়া-প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকা। প্যাটেন্ট মালিকদের নিকট থেকে এই দায়িত্বগুলো পালন না করার ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ থাকবে।



প্যাটেন্ট সংরক্ষণ থেকে কিছু জিনিষ বাদ যাবে। যথা: নৈতিকতা, শৃঙ্খলা পরিপন্থি সেগুলো পরিহার করতে হবে। কোন প্রাণী বা উদ্ভিদ প্রজাতি, অথবা প্রাণী বা উদ্ভিদ উৎপাদনের জীবতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া পদ্ধতি, কিংবা পূর্ব থেকেই বিরাজমান আছে এমন কোন উপাদান, মানুষ এবং প্রাণীর মেডিকেল চিকিৎসা প্রদান এবং পারমাণবিক পদার্থ সমূহ প্যাটেন্টের আওতার বাইরে থাকবে। তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের উক্ত দফাগুলো ছাড়াও প্রতিনিধিদের মাধ্যমে খুব জোড়ালোভাবে বলেছে কোন ট্রিপস চুক্তিকেই গ্যাটের অন্তর্ভূক্ত করা বা গ্যাট সিস্টেমের অধিকার ও দায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত করা যাবে না। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের এসব দাবী শিল্পোন্নত দেশসমূহ তাদের প্রত্যাখ্যান করে। এ প্রস্তাবের উপর আলোচনা করতেও তারা রাজী ছিল না। এমনকি শিল্পোন্নত দেশসমূহের প্রস্তাব মেনে না নিলে অনুন্নত দেশ সমূহের উপর একতরফা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয় হয়। শেষ পর্যন্ত উরুগুয়ে রাউন্ডে শিল্পোন্নত দেশসমূহের প্রস্তাবের আলোকেই বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা গৃহীত হয়।



অনুন্নত দেশসমূহের এ পর্যন্ত নিজেদের প্যাটেন্ট আইনের মাধ্যমে যেভাবে অন্যদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারত চুক্তি অনুযায়ী সে সুযোগ এখন আর থাকছে না। কোন ব্যক্তি, সংস্থার বা দেশের ও গবেষণালব্ধ ফলাফল এখন থেকে আর কারও সহজে ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে না। ট্রিপস নয়া শর্তানুযায়ী বহুজাতিক সংস্থাসমূহ তাদেরকে অনুকরনের দেশীয় অনেক সংস্থার উৎপাদন ও গবেষণা বন্ধ করে দিতে পারবে। তাদের যুক্তি হবে এসব দেশের পূর্বে নেয়া প্যাটেন্টসমূহ তাদের আবিস্কার ফরমূলার ভিত্তিতেই উৎপাদন করে চলছে। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বের ঔষধ ও ভোগপণ্য উৎপাদন করে চলছে। এর ফলে তৃতীয় বিশ্বের ঔষধ ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদন শিল্প এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে।



Agreement on the Application of Sanitary and Phytosanitary Measures: এ চুক্তিটি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার প্রথম উরুগুয়ে রাউন্ডে ১৯৯৫ সালে গৃহীত হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির অংশ। এ চুক্তির অধীনে সদস্য দেশসমূহ একই সাথে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সেনিটেশন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অংশ হবে তবে এক্ষেত্রে আমদানীকৃত দ্রব্যের মান সংরক্ষিত হবে।



Agreement on Technical Barriers to Trade (TBT): এ চুক্তিটি উরুগুয়ে রাউন্ডে আলোচিত হয়। আর এ চুক্তিটি ১৯৯৫ সালে GAT থেকে WTO তে রূপান্তরের সময় এ চুক্তিটি গৃহীত হয়। এ চুক্তির অধীনের বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার অধীনে নীতিমালা প্রণয়ন, মান যাচাই এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরোপিত অযথা বাধা সমূহ দূর করবে।



উন্নত বিশ্ব ও WTO:উন্নয়শীল বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞ সাধারনভাবে এটা ধারনা করে থাকেন যে পুজিবাদি বিশ্ব তথা পশ্চিমা বিশ্ব গোটা বিশ্ববাজার দখলের একটা হীন কৌশল হিসেবে মুক্তবাজার অর্থনীতির তত্ত্ব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে GATT বা WTO প্রতিষ্ঠা করেছে। উন্নত দেশসমূহ আধুনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদন করে থাকে বলে তাদের দ্রব্যের গুনগত মান যেমন ভাল তেমনি মূল্যে ও প্রতিযোগিতা মূলক। তা সত্ত্বেও সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ সংরক্ষন মূলক নীতি অবলম্বন করে কোন রকম উন্নত বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল। কিন্তু উন্নত দেশসমূহ বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থা কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে নানা দিক দিয়ে সমাজতান্ত্রিক এবং সংরক্ষন নীতি অবলম্বনকারী উন্নয়নশীল দেশসমূহের ওপর বাজার উন্মুক্ত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকে। এভাবে অনেক দেশ বলা চলে বাধ্য হয়ে তাদের বাজার উন্মুক্ত করে। ফলে তাদের দেশসমূহে স্থানীয় শিল্পসমূহ ডুবতে বসেছে। এবং দেশের বাজার বিদেশী পণ্যের বাজারে পরিনত হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় যে TRIPS (Trade Related Intellectual Property Rights) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা ও ধনী দেশসমূূহের পক্ষে পক্ষপাতমুলক।এ চুক্তি দরিদ্যের স্বার্থনক্ষার ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখেনি। TRIPS এর আওতায় প্যাটেন্ট করা দ্রব্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী অহেতুক অতিমাত্রায় মূল্য নির্ধারন করে থাকেন, তাও সর্ম্পুন্ন উন্নয়নশীল দেশসমূহের ভোক্তাদের প্রতিকূলে।



স্বল্পোন্নত দেশসমূহ ও WTO: স্বল্পোন্নত দেশসমূহ হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দূবর্লতম অংশ । ভয়াবহ দারিদ্য, দুবর্ল অর্থনীতি, অনুন্নত প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং মানবসম্পদের অপ্রতুলতা স্বল্পোন্নত দেশের সাধারন চিত্র হিসেবে হিসেবে বিবেচনা করা হয়। WTO চুক্তিসমূহের প্রত্যেকটিতে অবশ্য স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। বিশেষ সুবিধা হলো: ১.চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সমূহের সুবিধা প্রদান। ২.এসব দেশের বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহন। ৩.এসব দেশর WTO সংক্রান্ত কার্যাবলী বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরীতে সাহায্য করা। ৪.কতিপয় বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যহতি প্রদান। ১৯৯৭ সালে Trade Initiatives and technical assistance for least developed countries সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বাণিজ্যিক ক্ষমতা বৃদ্ধি কল্পে একটি সমন্বিত কাঠামো তৈরি করা হয়। এ উদ্দেশ্য ৬টি আন্তসরকার সংস্থাকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। স্বল্পোন্নত দেশসমূহ সংক্রান্ত সাব কমিটির সহায়তায় Trade and Development সংক্রান্ত কমিটি স্বল্পোন্নত দেশসমূহের প্রয়োজন সমূহ তদারক করে থাকে। এ কমিটির দায়িত্ব হচেছ -চুক্তিসমূহ বাস্তবায়ন, কেীশলগত সহযোগিতা , বিশ্ববানিজ্য সংস্থায় অধিক মাত্রায় অংশগ্রহন নিশ্চিত করা।



WTO বিশ্বের দেশগুলোর বানিজ্য স্বার্থ রক্ষায় সম্পূর্নরুপে ব্যর্থ হচেছ । কারন WTO তে অর্ন্তভূক্তিতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের চ্যালেজ্ঞের মুখোমুখি হচ্ছে। যেমন-স্বল্পোন্নত দেশসমূহের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেশি হওয়ায় বিদেশী বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এদের জন্য কঠিন। Agreement on Agriculture (AoA)এ চুক্তিতে আভ্যন্তরীণ ভর্তুকির বিধান থাকায় উন্নত দেশ সমূহ তাদের কৃষি উৎপাদনের জন্য বড় অংকের ভর্তুকি প্রদান করে যা উন্নয়নশীল দেশ দিতে পারে নি। উরুগুয়ে রাউন্ড চুক্তির মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারনের যে সম্ভাবনা ছিল, সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যা তাকে সম্পূর্নরূপে নষ্ট করে দিয়েছে। ফ্রি লেবার বা দরিদ্র দেশের সুলভ শ্রমিকদের শিল্পোন্নত দেশে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা তা করছে না। অবাধ বাণিজ্য থাকায় দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফলে বেকারত্ব ও দারিদ্যতা ভয়াবহ ভাবে বাড়ছে।



স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ও WTO: অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের মত বাংলাদেশের ও প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল ভয়াবহ দারিদ্য, দুবর্ল অর্থনীতি, অনুন্নত প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং মানবসম্পদের অপ্রতুলতা । তাই বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সুবিধা অজনের লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতিটি সম্মেলনেই তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ দাবিগুলো পেশ করে আসছে। নিুে সেগুলো আলোচনা করা হল।



উরুগুয়ে রাউন্ড ও বাংলাদেশ: ১৯৮৬ সালে উরুগুয়েতে ১০৭টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গ্যাট বৈঠক শুরূ হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর ৮ম রাউন্ডের চুক্তি হিসেবে ডাংকেল প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই প্রস্তাবে ২ হাজার পন্যের শ্রল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া উরুগুয়ে রাউন্ডে আলোচনায় শিল্পজাত পন্যের বাজার উন্মুক্ত করনের বিষয়টি বেশি অগ্রগতি সাধিত হয়। আর এই চুক্তির মধ্যে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ন ছিল টেক্সটাইল ও তৈরী পোষাকের বাজার উদারীকরন সম্পর্কীত Agreement on Textile and Clothing যা সংক্ষেপে ATC নামে পরিচিত। ATC অনুসারে ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সালের জানুয়ারীর মধ্যে চারটি পর্যায়ে টেক্সটাইল ও তৈরী পোষাকের উপর Multi Fiber Agreement এর আওতায় নির্ধারিত কোটার অবসান হয়।



এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বেশ কিছু ক্ষতির সম্মুখিন হয়। চুক্তি বাস্তবায়নের পর ইউরোপের দেশগুলো কোটা তুলে নিলে বাজার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। ফলে উন্নত বিশ্বের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।সেই সাথে দেশের বেকার সমস্য বাড়বে। যা অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলবে। চুক্তিতে শিল্পপণ্যের ৪০% শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে।শিল্পজাত পন্য রপ্তানীতে সংশ্লিষ্ট দেশ আগের মত আর ভর্তূর্কি পাবেনা। এজন্য উন্নয়নশীল দেশ ৮ বছর ও উন্নত দেশ ২ বছর সময় পাবে। বাড়তি চাপ পড়বে ক্রেতাদের উপর। আবার রপ্তানী তে ভর্তূকি দেয়ার ফলে যাদের রপ্তানী বেড়েছিল তার আর সেই সুযোগ পাবে না। ফলে এসব দেশের রপ্তানী কমে আসবে । সুতরাং বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেবাখাতে নিয়ন্ত্রন থাকবে না ফলে উন্নত বিশ্বের বিনিয়োগের কাছে স্থানীয় বিনিয়োগ মার খাবে। বানিজ্য সম্পর্কীত মেধাসত্ত্ব বা TRIP চুক্তির ফলে কপিরাইট ট্রেডমার্ক ও পেটেন্ট মালিকানাতে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশকে মোটা অংকের বিনিময়ে উন্নত প্রযুক্তি কিনতে হবে বহুজাতিক কোম্পানী গুলো থেকে। বানিজ্য সম্পর্কীত বিনিয়োগ ব্যবস্থা বা TRIM চুক্তির ফলে বিদেশী কোম্পানীগুলো দেশীয় কোম্পানীগুলোর মত অবাধ আমদানি রপ্তানী করার সুযোগ পাবে ফলে দেশীয় রপ্তানী গুলো মার খাবে।



সুতরাং দেখা যাচ্ছে উরুগুয়ে রাউন্ড চুক্তির ফলে বাংলাদেশ যে টুকু সুবিধা পেয়েছে তার চেয়ে অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয়েছে বেশি।



সিঙ্গাপুর সম্মেলন ও বাংলাদেশ: এই সম্মেলন থেকে শুরূ হয় ধনী দেশসমূহের আর্ন্তজাতিক কূটকৌশল প্রয়োগের নানা কার্যকলাপ। প্রথম বৈঠক হিসেবে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে নানাভাবে বুঝিয়ে উন্নত ধনী দেশগুলো বানিজ্য উদারীকরন, বহুপাক্ষিক বানিজ্য, অবাধ বানিজ্যের জন্য সংরক্ষন নীতির সংকোচন, কৃষিখাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নামক অর্থিক শর্তারোপ,তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ও বিনিয়োগ এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি আদায় করে নেয়। অথচ এরই মধ্যে উন্নত দেশগুলো নিজস্ব খাতগুলোকে ব্যপক ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদিত ও কৃষিজাত ও শিল্পজাত পণ্য ছড়িয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের মত স্বল্পোন্নত দেশেসমূহের বাজারে। ফলে বাংলাদেশের মত স্বল্পোন্নত দেশসমূ১১০হ উপেক্ষিত হয়। বাংলাদেশ তার প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।



সিয়াটল সম্মেলন ও বাংলাদেশ: বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুুপ যে খসড়া ঘোষনা প্রস্তুত করেছিল তাতে সম্মিলিত সম্মতি মেলেনি। সভার বাাইরে পুলিশের সাথে খন্ডযুদ্ধ ও কার্ফুজারি এবং পরবর্তিতে জরুরি অবস্থা ঘোষনা সব মিলিয়ে ধনী দেশগুলোর কাজের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোর বিক্ষোভ কর্মসূচি এক ভিন্ন মাত্রা সংযোজিত করে। ফলে এই সম্মেলন ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশ এই সম্মেলন থেকে কিছূই অর্জন করতে পারেনি।



দোহা সম্মেলন ও বাংলাদেশ: এই সম্মেলনে বাংলাদেশের দাবি ছিল উন্নত বিশ্বের কাছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজার সুবিধা প্রদান। দোহা ঘোষনায় স্বল্পোন্নত দেশেগুলোর বাজার সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।এই ঘোষনায় বলা হয়েছে যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর চলমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় একটি শক্তিশালী অবস্থান থেকে কার্যকর ভাবে সম্পৃক্ত করতে হলে বানিজিকভাবে উপকৃত হবে এমন ধরনের বাজার সুবিধাই এই সব দেশকে দিতে হবে এসব দেশকে রপ্তানি ভিত্তি সমপ্রসারন ও রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রপ্তানি সহায়ক কারিগরি ও প্রযুক্তি সহায়তা দিতে হবে।এই সম্মেলনেই ধনী দেশগুলো কর্তৃক Development Agenda গৃহিত হয়।যেখানে ২০০৫ এর ১ জানুয়ারীর মধ্যে বানিজ্য উদারীকরন নির্ভর নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার কথা বলে ঐ ঘোষনায় সিঙ্গাপুর ইস্যুকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ এই সম্মেলনে অনেক আশ্বাস পেলে ও দোহা ঘোষনার দুবছর পর ও বিশাল অংকের সুফল থেকে বঞ্চিত থেকে গেছে।



কানকুন সম্মেলন ও বাংলাদেশ: এই সম্মেলন যা কিনা ঘটনাবহুল সম্মেলনে রুপান্তরিত হয়েছে। কারন এই সম্মেলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং এর কারন হিসেবে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন ধনী দেশগুলো কোন ছাড় না দিয়েই এক তরফা তাদেরই বানিজ্যিক স্বার্থ সিদ্ধির চাপ অন্যায়ভাবে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তুু আফ্রিকা, এশিয়া ,ল্যাটিন আমেরিকার সচেতন দৃঢ়চিত্ত দেশগুলো তা মানেনি। ব্যর্থতার প্রধান দুটি কারন হল: র) উন্নত বিশ্বের কৃষি ভর্তুকি হ্রাস না করার সিদ্ধান্ত রর) আাপত্তি সত্ত্বেও সিঙ্গাপুর ইস্যুটি সম্মেলনে উঠানো।



ঢাকা ঘোষনা : কানকুন সম্মেলনের পূর্বে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর একটি সম্মেলন। এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার গৃহিত হয় যা ঢাকা ঘোষনা নামে অভিহিত। এই ঘোষনার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো: কোটামুক্ত ও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা। বিশেষ ও পার্থক্য মূলক ব্যবস্থার প্রসার। অদক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকদের অস্থায়ী ভিত্তিতে অবাধ যাতায়াত। স্বল্পোতম সময়ের সধ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সকল প্রকার রপ্তানীজাত পণ্যদ্রব্যের জন্য পূর্বানুমান ভিত্তিক। রুলস অব অরিজিনস শিথিল করার প্রস্তাব। উন্নত বিশ্বের বাজারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রার বাজার সংরক্ষনের দাবি। শ্রমিকদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিতকরন। সেবা খাতে পণ্য রপ্তানীর নির্বাহ খরচ এবং সরবরাহ সময় কমানো ঢাকা ঘোষনার এই দাবিগুলার মধ্যে বেশিরভাগই দাবিই উপেক্ষিত হয়। ফলে বাংলাদেশ তার প্রত্যাশিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া জাতিয় আয়ে সেবাখাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। অথচ বাংলাদেশ সেক্ষেত্রে ভাল ফলাফল নিয়ে আসেনি।



হংকং সম্মেলন ও বাংলাদেশ: কানকুন সম্মেলন কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সমাপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে হংকং এ এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের ভূমিকা ছিল একেবারেই গৌন। এলডিসিভূক্ত দরিদ্র দেশগুলো তাদের তৈরী পোশাক ,চামড়া সহ অন্যান্য পন্য ধনীদেশগুলোর বাজারে প্রবেশের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা চায় এবং ধনীদেশগুলোর শ্রম বাজারে তাদের সস্তা শ্রমের অবাধ যাতায়াত। কিন্তু ধনী দেশগুলো এসব ব্যাপারে কোন রুপ ছাড় দিতে নারাজ। বরং হংকং সম্মেলনে প্রায় এক সপ্তাহব্যপী আলোচনা যুক্তি পাল্টাযুক্তি এবং দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষে সিদ্ধাস্ত গ্রহনের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষেভের মুখে ১৪৯টি দেশের সম্মত ঘোষনায় সবচেয়ে বঞ্চিত দেশটির নাম বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রও জাপান সহ উন্নত দেশগুলো ট্যারিফ সূচিভুক্ত ৯৭ শতাংশ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদানের ঘোষনা করলে বাংলাদেশকে তার বাইরে রাখা হয়। কারন বাকী ৩ শতাংশের মধ্যে আছে বাংলাদেশের সম্ভানাময় গার্মেন্টস শিল্প। মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্র পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প এই সুবিধা পাবেনা। এছাড়া সার্কভূক্ত দেশ ভারত ও শ্রীলংকা বাংলাদেশের পক্ষে দাড়ায়নি। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটি হল বাংলাদেশের দক্ষ নেতৃত্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার অভাবেই বাংলাদেশেকে বিশ্ববানিজ্য সংস্থার হংকং সম্মেলন হতে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে।



WTO এর সাফল্য ব্যর্থতা: বিশ্বকে একই ছাতার নিচে এনে ধনী - দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে অবাধ বাণিজ্য স্থাপনের জন্য সৃষ্ঠি হয়েছিল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। অথচ শুরু থেকেই সংস্থার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এক বিতর্কিত করে তুলেছে। এর সাফল্য যেমন আছে তেমনি রয়েছে ব্যর্থতা। তবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এর ব্যর্থতাই বেশি। যেমন: বাণিজ্য ক্ষেত্রে বৈষম্য। ভর্তুকি কমানোর কথা থাকলেও কতকগুলো দেশ ভর্তুকি কমাবে বা বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা সহজ করবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। WTO এর সিদ্ধান্তই সঠিক এবং প্রত্যেক দেশকে তাই মেনে চলতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিচারকের ভূমিকায় দেখা যায়, যেখানে ন্যায়ের পক্ষ থেকে সরে আসে । ভারসাম্যপূর্ণ নীতির অভাব, সময় অপচয়, বুদ্ধিবৃত্তি সংরক্ষন, বিরিয়োগ, সেবা খাতের বাণিজ্য এবং কৃষির সংযুক্তি । অধিকাংশ সম্মেলন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সমাপ্ত হয় তবে অন্যান্য সংস্থার তুলনায় WTO ট্যাক্স এবং বাণিজ্যের বিষয়ে কিছুটা সফলতা অর্জন করেছে। যেমন- ভোটের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কোন দেশের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা নেই, স্বল্প ট্যাক্সের মাধ্যমে মুক্ত বাজার বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো ও ভর্তুকি কমানো ,বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা ইত্যাদি।





মূল্যায়ন: WTO এর নীতিমালা মূলত বিশ্ব বানিজ্য ব্যবস্থা তদারকির জন্য প্রণীত হয়েছে। WTO বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি দেশের ওপর তার একটা প্রতিকূল বা অনুকূল প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এর প্রতিকূল প্রভাবই বেশি পড়বে। অধিকাংশ স্বল্পোন্নত দেশগুলো উন্নত বিশ্বের চাপে তাদের বাজারসমূহকে পূর্নমাত্রায় উদার করে দিয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ি যথাযথ বিনিময় তারা পায়নি। বিদেশী পন্যসামগ্রী অবাধে প্রবেশ করায় এ দেশগুলোর শিল্প কারখানা একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেকারত্ব ও দারিদ্র ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার এ বিরুপ প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উন্নত দেশসমূহের সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের দ্রব্যের গুনগত মান বাড়াতে হবে, মানবসম্পদ উন্নয়নে সর্বতোভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা ,ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্যসামগ্রী বহুমুখীকরন প্রক্রিয়া করতে হবে। আর এসব ব্যবস্থা গ্রহনের উপরই নির্ভর করছে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারা।



বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যর গুরুত্ব বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বিশ্ব বাণিজ্যকে শৃঙ্খলিত ও সব রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা বা WTO। কিন্তু সংস্থাটি উন্নত বিশ্বের পৃষ্টপোষকতা করায় অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।ফলে সংস্থাটি বেশ বিতর্কিত হয়ে পড়েছে।



তথ্যসুত্র:

প্রফেসরস সাধারন জ্ঞান, আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী (অক্টোবর ২০০৪) পৃ. ৭৯৩

ফেরদৌস হোসেন, গ্যাট থেকে ডব্লিউটিও(ঢাকা, প্রগেসিভ পাবলিশার্স,১৯৯৬) পৃ. ০৪

প্রফেসরস সাধারন জ্ঞান, আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী

ফেরদৌস হোসেন, গ্যাট থেকে ডব্লিউটিও(ঢাকা, প্রগেসিভ পাবলিশার্স,১৯৯৬) পৃ.৯

ফেরদৌস হোসেন, গ্যাট থেকে ডব্লিউটিও পৃ.৫৭

http://www.wto.org

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, ডিসেম্বর ২০০৯

বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ(সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ঢাকা ২০০৪) পৃ. ১৭২

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, ডিসেম্বর ২০০৯

http://www.wikipedia.com

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ঢাকা ২০০৪) পৃ.২৮৭

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ঢাকা ২০০৪) পৃ.৪৮

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ঢাকা ২০০৪) পৃ.৮৮

সেলফ অ্যাসেসমেন্ট বিসিএস ডাইজেষ্ট, মিলারস প্রকাশনী





মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:০৩

সোহানী বলেছেন: সমৃদ্ধ ও তথ্যবহুল লিখা। তবে লিখাটি কয়েকটি ভাগে হলে পড়তে সুবিধা হতো।

লিখায় +++++

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১০

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: আপনার অসুবিধার জন্যে দু:খিত। সামনে খেয়াল রাখবো।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:০৫

সোহানী বলেছেন: সমৃদ্ধ ও তথ্যবহুল লিখা। তবে লিখাটি কয়েকটি ভাগে হলে পড়তে সুবিধা হতো।

লিখায় +++++

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১০

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: আপনার অসুবিধার জন্যে দু:খিত। সামনে খেয়াল রাখবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.