নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যেয়

আনিসুর রহমান এরশাদ

আমি আমার দেশকে অত্যন্ত ভালবাসি ।

আনিসুর রহমান এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হতাশ বেকার, উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও ক্ষতিগ্রস্ত জাতি

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪২

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন থেকে পাশ করেছেন। সরকারী চাকুরীর বয়স শেষ হয়েছে। বেকার জীবন যাপন করছেন। সে বলল-‘‘কি করবো বলো? পরীক্ষার হলে যাবার আগেই অনেকে প্রশ্ন পেয়েছে শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায়। কয়েকটি ব্যাংকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। ভাইভাতে কোন প্রশ্ন না করেই বাদ দিয়েছে।যদি ৪/৫ লাখ টাকা দিতে পারতাম কিংবা মামা খালুর জোর থাকত তবে আর এতদিন বেকার থাকতে হতনা। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি পেয়েও বেকার জীবন যাপন করছি। সার্টিফিকেটের কোনই মূল্য নেই। এম এ পাশ করাটাও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে-সব কাজতো করতে পারিনা। অনেকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেও একটি চাকরি ভাগ্যে জোটেনি। যাকে ভালবাসতাম তার অভিভাবকরা জোর করে অন্যত্র তাকে বিয়ে দিয়েছে। বিরহ ব্যথা,একবুক ঘৃণা ও সীমাহীন কষ্ট নিয়ে না মরে বেঁচে আছি। যদি ধর্মে নিষেধ না থাকত আত্মহত্যা করতাম।’’



ওর কথা শুনে আমার ভীষণ কষ্ট লাগলো। বেকার জীবন থেকে মুক্ত হবার জন্য আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে। বেকারত্বের দু:সহ ভার নিয়ে বেকারদের অর্থকষ্টে দিন কাটে। নিজের ও পরিবারের ভরণপোষণের টাকা আয়ের জন্য উত্তম উপায় না পেয়ে অনেকে অসত্ পথে গিয়ে টাকা আয় করে, আবার অনেকে সবকিছু ভুলে যাওয়ার জন্য অন্ধকার পথে পা বাড়ায়। বেকারত্ব থেকে হতাশা, অত:পর রাগ, ক্ষোভ, অসন্তোষ, অবিশ্বাস ও অস্থিরতার মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে তারা। এসব নেতিবাচক আবেগ-অনুভূতি এক পর্যায়ে তাদের অনেককে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার পথে। কেউ অসত্ পথে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছেন, কেউবা মাদকের মধ্যে জীবনের স্বস্তি খুঁজে ফিরছেন। আবার কেউ কেউ সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও নষ্ট হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করছেন।



বেকার জীবনে ব্যর্থতা ও হতাশা সবসময়ই আক্রান্ত করতে পারে। চেষ্টা ও সংগ্রামে বিফল হয়ে কেউ যখন নিজের ও অপরের জন্য ধ্বংসাত্মক কাজে নিজেকে নিয়োগ করে, তখন সেটা কেবল তার নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। হতাশ তরুণরা যে সকল অপরাধকর্মে সহজেই জড়িয়ে পড়ে, তার মধ্যে মাদকাসক্তি প্রধান। চাকরি না পেয়ে অনেক তরুণ ব্যবসাও করছেন। এদের সংখ্যাটা কম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, প্রতিটি তরুণই শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি চায়। কিন্তু বার বার চেষ্টা করেও চাকরি না পেয়ে যখন যে বেকার থাকে তার মধ্যে মানসিক যন্ত্রণা বা মনোবেদনা তৈরি হয়। এই মানসিক যন্ত্রণা ভোলার জন্য অনেকে অন্ধকার পথে পা বাড়ায়। কেউ মাদকাসক্ত হয়, আবার কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। বেকার তরুণরা দুটি কারণে হতাশ, প্রথমত ভবিষ্যত্ গড়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং দ্বিতীয়ত পরিবারের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারা।



মানস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, চাকরি না পাবার ব্যর্থতা থেকে অনেক তরুণ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ লাখ বলা হলেও আমার মতে এ সংখ্যা ১ কোটি। দেশের মাদকাসক্তদের মধ্যে ৫০ ভাগই তরুণ। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ ভাগ চাকরি না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত।



বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম। ঘরে যাদের বেকার ছেলে আছে, সেসব অভিভাবক হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের সমস্যা। বেকার সন্তানদের নিয়ে আজ তারাও হতাশ। চাকরির অনিশ্চয়তা থেকে তরুণ সমাজে হতাশা বাড়ছে। সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তরুণদের এই হতাশা ও ক্ষোভ প্রতিনিয়ত নানারকম ধ্বংসাত্মক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। তারুণ্যের স্বপ্ন-সম্ভাবনা শিক্ষাঙ্গন পেরিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ পর্যন্ত কতটুকু টিকে থাকে, আর কতটা স্বপ্নভঙ্গের বেদনা ও হতাশায় বিলীন হয়, তার কোনো সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যানও কারো জানা নেই।



বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার আছেন কেবল আফগানিস্তানে, ৬৫ শতাংশ। এর বাইরে ভারতে এর হার ৩৩ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশের বেশি, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।



বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৪১ লাখ মানুষের কাজ আছে। এর অর্থ মাত্র ২৬ লাখ মানুষ বেকার। তবে জরিপেই বলা আছে, পরিবারের মধ্যে কাজ করে কিন্তু কোনো মজুরি পান না, এমন মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১১ লাখ। এ ছাড়া আছে আরও এক কোটি ছয় লাখ দিনমজুর, যাঁদের কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই।



বিশ্বব্যাংক মনে করে, সরকার কম দেখালেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর ওপর এখন প্রতিবছর নতুন করে ১৩ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছেন। সুতরাং নতুন কর্মসংস্থান তৈরির চাপ রয়েছে অর্থনীতির ওপর। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের হার ২ শতাংশ বাড়ানো গেলে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। আর তাহলেই ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হওয়া সম্ভব।



আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের (আইএলও) তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। বেকারত্বের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৫ সালে মোট বেকারের সংখ্যা ছয় কোটিতে দাঁড়াবে। সংস্থাটির মতে, বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম।



এ ছাড়া জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্যমতে, দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯০ থেকে ৯৫ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী বেকার যুবকের সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ। কিন্তু ২০০৫ থেকে ১০ সালের মধ্যে তা প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি ৩২ লাখে।



বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০১২ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র সাত লাখ। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষিত অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যাঁরা শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন, তাঁরাও আছেন। সামগ্রিকভাবে পরিসংখ্যানগুলো বলছে, এঁদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে কিছু করার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে নিজের যোগ্যতার চেয়ে কম মানের কাজ করতে বাধ্য হন।



বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক, অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত মনে করেন, প্রতিবছরই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিক্ষার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক নীতি এবং অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় না করলে এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে।



বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০১২ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। তাঁদের মধ্যে ৯২ হাজার ৭৪৭ জন স্নাতক পাস, এক লাখ ২৮ হাজার ৪৮১ জন স্নাতক সম্মান এবং ২১ হাজার ৩৮০ জন কারিগরি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া এক লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ জন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, দুই হাজার ৩৮৫ জন স্নাতকোত্তর (কারিগরি) এবং এক হাজার ৭৬৩ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্যদিকে বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট অর্জন করেন দুই হাজার ৩৩৫ জন।

তবে কারিগরি ও বিশেষায়িত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরির বাজারে ভালো চাহিদা আছে।



সকল মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা-মা আশা করেন ছেলে লেখাপড়া করে চাকরি করবে। তখন তাদের একটু সুখ হবে। বাবা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়ার জন্য টাকা যোগাড় করেন। ছেলের লেখাপড়া শেষ হয় কিন্তু চাকরি না পাওয়ায় বাবার কষ্ট শেষ হয় না।

ছেলেও বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারে না। মা বাবার মুখে স্পষ্ট দেখা যায় হতাশার ছায়া। ছেলেEEE পাস করার আগে কখনও ভাবেনি এরকম হবে। চাকরীর জন্য এপ্লাই করা, পরীক্ষা দেয়া-ভাইভাতেই ডাক পাওয়া যায়না। বিডি জবস এ কয়েকশ এপ্লাই হয়ে যায়। সিভির হার্ডকপি বাংলার ঘরে ঘরে পৌছে যায়। তারপরেও ভাইভা দেবারও যোগ্যতা অর্জন হয় না। বড় ভাইদের সহায়তায় বহুবার সিভির ফর্মেট চেঞ্জ হয়। বেকার বড় একা হয়ে পড়ে। ঘীরে ধরে শুন্যতা, বের হয় দীর্ঘ শ্বাস।নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মত, নির্জন নদীর মত , বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত, মৌন পাহাড়ের মত, আজীবন দন্ড প্রাপ্ত সাজা প্রাপ্ত আসামির মত- বড় একাকিত্ব অনুভব করে।



‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে’- প্রবাদটির বাস্তবতা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। দিন দিন শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়ছে না চাকরির বাজার। শৈশব থেকে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হলেও পূরণ হচ্ছে না তাদের সে স্বপ্ন। অনেক কষ্ট, সাধনা আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচের পর উচ্চশিক্ষা অর্জন করে বেকার হয়ে বসে থাকায় সে স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। কাজ না পেয়ে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিক্ষিত বেকার শ্রেণির সংখ্যা।



রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ, অবকাঠামোগত অনুন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি, কারিগরি শিক্ষার অভাব, নিয়োগে দলীয়করণ, আত্মীয়করণ ইত্যাদির কারণে দিন দিন বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা। অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৩-তে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের মোট শ্রমশক্তির পরিমাণ ৫.৪১ কোটি। এদের মধ্যে ৩.৭৯ কোটি পুরুষ ও ১.৬২ কোটি মহিলা।



বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর ব্যাংকিং খাত ছাড়া অন্য কোথাও উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। দেশে কারিগরি শিক্ষার অভাব আর উদ্যোক্তার অভাবে শিক্ষিত বেকার বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।



বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষিত বেকার আসলে আমাদের নিজেদেরই তৈরি। যাদের শিক্ষিত বলা হচ্ছে তারা অনেকটা গৎবাঁধা নিয়মে শিক্ষিত হয়েছে। আমাদের দেশেই অনেক কারখানা যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে পাচ্ছে না। উন্নত বিশ্বে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্বেচ্ছাশ্রমে জড়িত। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষিতরা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত নয়। যত শিক্ষার্থী পাস করে বের হচ্ছে সে অনুপাতে শিল্প গড়ে ওঠেনি। তাই নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে নিতে হবে। এ জন্য সহজ শর্তে ঋণব্যবস্থা চালু করা উচিত। অনলাইনের মাধ্যমে আয় করেও যাতে বেকার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায় সে জন্য কম্পিউটার সেন্টার সেবা দিতে সরকারি-বেসরকারি সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।



তরুণ বয়সে সব ধরনের আবেগ-অনুভূতির তীব্রতা বেশি কাজ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে তরুণদের জীবনে হতাশা, রাগ, ক্ষোভ, অসন্তোষ, অবিশ্বাস ও অস্থিরতা ইত্যাদি নেতিবাচক আবেগ-অনুভূতির সংযোগ ঘটানোর পরিবেশ, সুযোগ ও ব্যবস্থা অনেক বেশি সক্রিয়। শিক্ষাক্ষেত্রে যেমন, তেমনি শিক্ষা সমাপ্তির পর বেকার জীবনে কিংবা কর্মজীবনেও হতাশ হয়ে ওঠাটাই যেন বেশিরভাগ তরুণের নিয়তি। এ দেশের তরুণ সমাজ সৃষ্টিসুখের উল্লাসে যতটা মাতে, তার চেয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডেই যেন সাড়া দেয় বেশি। শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তরুণদের হতাশা ও ক্ষোভ প্রতিনিয়ত নানারকম ধ্বংসাত্মক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে।



যার টাকার কিংবা মামা খালুর জোর নেই তিনি যদি পড়াশোনা করে থাকেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে। তবে ভাইবা পর্য ন্ত মেধার জোরে যেতে পারলেও তাকে প্রশ্ন করা হবে- বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে । চাকরির লাইন ঘাট না জানলে ফালতু সময় নষ্ট হবে শুধু। এদেশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে মামা-খালুর একটা ব্যাপার আছে। টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়েও নানা কথা শোনা যায়। এ সিস্টেমে তলে তলে নিয়োগের কাজ শেষ করে ফেলা হয়। ওপরে ওপরে পত্রিকায় বিশাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নানা টেস্ট-ফেস্টের আয়োজন করা হয়। সবই লোক দেখানো ব্যাপার। আই ওয়াশ। বেকারের সার্টিফিকেট আছে- মূল্যায়ন নেই, কণ্ঠ আছে- আওয়াজ নেই, মন আছে- মনের মানুষ নেই, স্বপ্ন আছে- স্বপ্ন পূরণের নিশ্চয়তা নেই, সাধ আছে- সাধ্য নেই!



প্রথম শ্রেণীর একজন নাগরিক গ্রাজুয়েট বেকার এদেশে ভাততো দূরের কথা একটু ছাইপাশ খেয়ে যে বেঁচে থাকবে সে উপায় নেই। চালের দাম না হয় ৫০ টাকা। কিন্তু যারা রোজ কম করে হলেও ৫ টাকা দামের ১০খানা সিগারেট খান, মাঝে সাঝে বন্ধুদের সাথে চায়ের বিলটাও শোধ করেন, প্রতি সপ্তায় সেলুনে যেয়ে চুল দাড়ি কাটান, ফুটপাতের মার্কেট থেকে অন্যের ব্যবহৃত কাপড় নতুন করে কিনে পড়েন, শরীররটা অসুস্থ্য হলে চিকিৎসা করান-তাদের কথা ভেবে দেখুন। সরকারি চাকরির আবেদন করতে গেলেই ২৫০-৩০০ টাকার পোষ্টাল অর্ডার করতে হয়। মাসে যদি অমন দশ-বিশখানা ইন্টারভিউ থাকে তবে। খরচতো আর কম হয় না। অর্থের যোগানদাতা যদি হয় ‘দ্যা স্টেট ব্যাংক অব আব্বু‘স পকেট। ওয়ে অব মারিং কাটিং।



অপদার্থ বেকার বন্ধু, বাবার নাক সিঁটকানো, এত্তো পড়ালেখা করেও ছেলের কোন গতি হয়নি দেখে মায়ের চোখ সর্বনাশা পদ্মার মতো হওয়া সবই যেন নিয়তি । ছোট ভাইয়ের চোখে অবিবেচক- সে বুঝেনা দশজনের মতো আমাদের মামা, খালু বা কাকারা কেউ অত ক্ষমতাবান নয়। বোনের কোন বায়না মিটাতে না পারার অক্ষমতা-এলাকাবাসী কিংবা আত্মীয়দের চোখে একটা উচ্ছিষ্ট। প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় খরচ কমা। তবে পিঠটা এখন একেবারেই দেয়ালে ঠেকে গেছে। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, হয় মরে যাই, নয়তো চাকরী চাই।



বেকারের বিকেলের দিকে কিছুটা ব্যস্ততা থাকে কয়েকটা টিউশনি থাকায়। ছাত্র থাকা অবস্থায় টিউশনি না করে আব্বুর টাকায় চললেও বাসা থেকে টাকা বন্ধ করায় পেট চালাতে বাধ্য হয়ে টিউশনি শুরু করে অনেকে। এতে দিন বেশ ভালোই কেটে যায়। কিন্তু লজ্জা কাটে না। ছাত্রজীবনে ভালো ছাত্র হিসেবে সুনাম,এসএসসি থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত ভালো রেজাল্ট, অনেক ভালো কিছু করার স্বপ্ন-সবই অর্থহীন মনে করে তখন। চাকরীতে যোগদানের বয়স শেষ হয়ে যাওয়া মানে সার্টিফিকেটিগুলো অর্থহীন হয়ে যাওয়া।



কতই না স্বপ্ন থাকে মা বাবার! কিন্তু সন্তান তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যর্থ হলে মা ভালোভাবে কথা বললেও আব্বু ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলেন না। এমনকি চাকরী হচ্ছে না জন্য খোঁটাও দেন। বাসায় যাওয়াই ছেড়ে দেয় অনেক বেকার। বন্ধুরা ভালো চাকরীতে থাকলে ভুল করে দেখা হয়ে গেলে দ্রুত দু কথা সেরে পালিয়ে আসে বেকার।



যারা চাকরি বা কাজ দেবার যোগ্যতা রাখেন তাদের নিজস্ব দাদাল সৃষ্টি করা আছে। সরকারি চাকরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০-১২ লাখ, ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৫-৭ লাখ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি হয়। যাদের টাকা আছে তাদের যোগ্যতার প্রয়োজন নাই নামে মাত্র সার্টিফিকেট থাকলে চাকরি হয়। যাদের টাকা দেবার ক্ষমতা নাই তাদের শত যোগ্যতা থাকলেও চাকরি হয়না। একটা চাকরির জন্য বেকারদের জুতোর তলা ক্ষয় হয়ে যায় তবুও চাকরি হয়না। অন্য কিছু বা ব্যবসা করবে সে পুঁজিও নাই পিতা-মাতা দিতে পারে না, অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েকে লেখা-পড়া শিখিয়েছেন। সে কি করবে? তাকেও একটা কিছু করতে হবে, জীবন বাঁচাতে হবে, সংসারের হাল ধরতে হবে, বাবা-মাকে তাদের বাঁর্ধক্যে অবসরের সুযোগ দিতে হবে। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে বেকারত্ব ঘুচলে ভালো না হলে আজীবন স্থায়ী বেকার জীবন।



বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। গত পাঁচ বছরে ব্যাংকে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অন্যান্য সম্পদ হিসেব করলে কোটিপতির সংখ্যা আরো বেশি হবে। কিন্তু সেই হিসেবে বাড়ছে না নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধনীদের সম্পদ উৎপাদনশীল কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর অন্যান্য দেশে থাকলেও বাংলাদেশে তা হচ্ছেনা। সব সরকারের কাছ থেকে অবৈধভাবে নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন কিছু ব্যক্তি। কিন্তু সেই সম্পদ উৎপাদনশীল কাজে লাগানো হচ্ছে না। ফলে সমাজে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। এর জন্য সম্পদের মালিক ও সরকারে নীতিনির্ধারকরা অনেকাংশে দায়ী বলে করছেন অর্থনীতিবিদরা।



কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এক থেকে ৫০ কোটিরও বেশি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ১৩৫ জন। যা ২০০৯ সালে ছিল ২৩ হাজার ১৩০ জন। দেশ স্বাধীন হবার আগে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২২ পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ১৯৭৫ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে যাদের হিসাব ছিল, তাদের মধ্যে কোটিপতি ছিলেন মাত্র ৪৭ জন। এখন ৪৬ হাজারের বেশি কোটিপতি থাকলেও বাড়ছে না কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। পাচঁ বছরের মাথায় কোটিপতির সংখ্যা দ্বিগুন হলেও চাকরিতে নিয়োগদানের হার মাত্র ২০ শতাংশ। অর্থাৎ কোটিপতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকার মানুষের সংখ্যা। দেশে বেকারের সংখ্যা কত তা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে।



আমরা হতাশ বেকার, মাদকাসক্ত তরুণ আছে এমন দেশ চাইনা । চাই এমন স্বাধীন বাংলাদেশ যেখানে থাকবেনা হতাশা, বেকারত্বের গ্লানি, মাদকের মরণছোবল। সুখ শান্তিতে, হাসি আনন্দে ভরে উঠবে প্রিয় এই দেশ এমনটাই প্রত্যাশা।







মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০২

সোহানী বলেছেন: চমৎকার লিখা কিন্তু কারো নজরে এলো না কেন বুঝছি না। নাকি আমাদের ব্লগার বন্ধুরা সবাই স্বকার।

যাহোক, আমি কিছুদিন আগে বেকারত্ব নিয়ে সিরিজ লিখেছিলাম। সত্যই চারপাশের হতাশ ছেলেপেলেদের দেখে খুবই খারাপ লাগে। আর সরকারতো এ ব্যাপারে কানে তুলা দিয়ে থাকে যেন বেকারত্বের দায় একান্ত পরিবারে আর ব্যাক্তি নিজের।

সবচেয়ে দূ:খ হয় যখন দেখি মেধাবী ছেলেগুলো ধুকে ধুকে মরে। আর যারা অপদার্থ, সন্ত্রাসী রা গাড়ি হাকিয়ে যায়। আসলে ওরা সন্ত্রাসী হবেই না কেন আমরাইতো ওদের ওই পথে ঠেলে দিচ্ছি।

সহমর্মিতা থাকলো আর আমার লিখায় কিছু পথের দিশা দেয়ার চেস্টা করেছি যদি সময় থাকে পড়তে পারেন।
বেকার বন্ধুদের জন্য কিছু উপদেশ

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০১

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: জ্বি পড়েছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

ডি মুন বলেছেন: দারুণ লেখা। তথ্যবহুল।

প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।

আর আপনি ঠিকই বলেছেন, ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে’- প্রবাদটির বাস্তবতা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: লেখা প্রিয়তে নিয়ে লেখকের প্রিয়তে আসলেন।

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৫

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: সোহানী বলেছেন: চমৎকার লিখা কিন্তু কারো নজরে এলো না কেন বুঝছি না। নাকি আমাদের ব্লগার বন্ধুরা সবাই স্বকার

আমিও তাই বলি, ব্লগার শুভাকাংখীরা কই???

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৫

আনিসুর রহমান এরশাদ বলেছেন: আপনি সহ যাদের নজরে এসেছে তাদেরকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.