![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক চিৎকার করে হুংকার দিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে – “থামুন, বন্ধ করুন এইসব। কোন অধিকারে আপনারা আমাদের জিম্মি করে রেখেছেন? আপনাদের মত এই দেশ আমাদেরও। আমরা গর্বিত, আমরা বীরের জাতি, আমরা বাঙ্গালী।
বলার সাহস নেই তা না। আমার এই লেখাই আমার সাহসিকতার পরিচয় বহন করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু, ১৬ কোটি মানুষের মাঝে আমি একা চিৎকার করে কিইবা হবে?
খুব অবাক হয়ে চারপাশ দেখছি কিন্তু আফসোস মুগ্ধ হতে পারছিনা। মনে মনে নিজেকেই নিজে বলছি – ‘হায়রে আমার অভাগা দেশ, তোমার রুপে কেউ মুগ্ধ হতে পারছেনা! লাখো প্রানের বিনিময়ে তোমাকে পেলেও আজ তুমি অতি মূল্যহীন’।
আমাদের অতি প্রিয় দেশমাতৃকা যখন চরম দুঃসময় পার করছে, তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে রীতিমত আমাদের শঙ্কিত হবার কথা তখন আমরা নির্দ্বিধায় ভাবছি কাঁচামরিচের কেজি প্রতি দর কত? পেয়াজের মুল্য ঢাকায় বেশি কিন্তু রাজশাহীতে কম কেন? আজকাল রিকশায় উঠলেই ১০ টাকা ভাড়া! এখন মোড়ের দোকানি আর ভাল চা বানায় না বলে আড্ডা জমেনা!
এইসব চিন্তা থেকে আমি কাউকে বিরত থাকতে বলছিনা কারন এইসব চিন্তা নিয়েই আমাদের জীবন আর এইসব চিন্তাই আমাদের উজ্জীবিত করে রেখেছে। আমরা কতই না সাধারন! কিন্তু, আমরা কতটা স্বার্থপর!
অবশ্যই আমরা প্রচন্ড রকম স্বার্থপর কারন আমরা ভুলে যাই যে, যেই সাধারণত্বের লেবাজ আমরা পরে ঘুরি তা শুধুই ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই না। কেননা, আমাদের মত কিছু সাধারন মানুষই এই দেশের ভাষা, স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্যো রক্ষার জন্য অসাধারন কিছু ঘটনার জন্ম দিয়েছিল। যেইসব ঘটনার নীরব স্বাক্ষী হয়ে গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে আমাদের শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ এবং বুদ্ধিজীবি কবরস্থান।
আমি জানতাম যে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়েছিল যদিও আমি কখনোই তা বিশ্বাস করিনি কারন আমি জানি সত্যিকার অর্থে আমার দেশ ভাগ হয়েছে ১৯৭১ সালে। কিন্তু, এখন ২০১৩ সাল আর আমরা যা দেখছি তা প্রতিনিয়তই আমাদের ধারনা পাল্টে দিচ্ছে। এখন দেশ অনেক ভাগে বিভক্ত তাও প্রতিদিন ঐ ভগ্নাংশের পোষ্টমর্টেম হচ্ছে এবং প্রতি মূহুর্তে খন্ড-বিখন্ড হচ্ছি আমরা।
যেইসব বীরদের আত্ব-ত্যাগের বিনিময়ে এই পতাকা এসেছে তাকে আমরা রাঙাচ্ছি নিজের ইচ্ছামত রঙে, যেই ভাষার জন্য আমদের ছাত্র সমাজ পৃথিবীতে ইতিহাস গড়েছিল সেই ছাত্র সমাজ আজ রাজনীতির থাবায় গুরুতর ভাবে আসক্ত।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যারা সত্যটা জানেন তাঁরা নিশ্চয় জাতি হিসাবে আমাদের বীরত্বের কথাও জানেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতার ভাষণ শিহরিত করেছিল তৎকালীন জেড ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকেও। সকল বাঙ্গালীর মত তিনিও জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পরেছিলেন দেশের স্বাধীনতা রক্ষায়। শেখ হাসিনা যেমন গর্ভবতি অবস্থায় গৃহবন্দী ছিলেন তেমনি বেগম খালেদা জিয়াও পাকিস্তানী দোসরদের কাছে জিম্মি ছিলেন।
বেঈমানের শাস্তি বেঈমান-ই দেয়। মেজর জিয়া একবার না বহুবার বেইমানী করেছেন। প্রথমবার তিনি দেশের সাথে বেইমানী করেছেন জাতির পিতাকে হত্যা করে। দ্বিতীয়বার, কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে। তৃত্বীয়বার, মাত্র ৪ মাসে ১১০০ সামরিক ও বেসামরিক বাঙ্গালীকে অকারনে ফাসির দড়িতে ঝুলিয়ে এবং সবচেয়ে বড় এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ যেটি উনি করেছেন তা হলো গোলাম আযমের মত নরপিশাচ কে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলায় ফেরত এনে। এছাড়াও, ১৯৮০ সালে তৎকালীন শর্ষীনার পীর সাহেবকে এদেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরুস্কারে ভূষিত করেন, অথচ উনার মাদ্রাসাতেই ক্যাম্প গেড়েছিল পাক হায়নারা। হয়ত নয় বছরে মেজর জিয়া তা ভুলে গিয়েছিলেন।
কিন্তু, আমরা কেন ভুলব? কিছুদিন আগে শাহবাগের আন্দোলনে আমিও অংশগ্রহন করি, আর সব তরুনের মত আমিও বিভিন্ন শ্লোগানে আকাশ বাতাস কাপিয়ে তুলি। প্রায় প্রতি রাতেই আমি বাসায় ফিরি ভাঙ্গা গলা নিয়ে। সারারাত ভাবি পরেরদিন কি শ্লোগান দিব, সকল যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের আন্দোলন কে তুলে ধরি। দেশে এবং দেশের বাইরের পরিচিত প্রায় সবাইকেই আহবান জানাই আমাদের সাথে গলা মিলাতে। প্রথম মহাসমাবেশের দিন অশ্রুসিক্ত হয়ে যাই শুধু এটা ভেবে যে, কেন এখন সরাসরি যুদ্ধ হচ্ছেনা আর কেনইবা আমি শহীদ হচ্ছিনা। জীবিত রাজাকারদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ যদি একবার হয় তবে দেখিয়ে দিতাম যে এখনও আমরা লড়তে জানি, আর লড়াই করে জয়ীও হতে পারি। এইসব চিন্তার মাঝের একটা বিলবোর্ড চোখে পড়ল যেখানে লেখা ছিল – আমরা যুদ্ধ দেখিনি, রাজাকাররাও আমাদের যুদ্ধ দেখেনি, এখন সময় দেখিয়ে দেবার। এই বিলবোর্ড দেখে আমি নিজেকে সত্যিকারের একজন যোদ্ধা মনে করতে থাকলাম। এটা ভাবলাম যে, হ্যাঁ এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবই। আর যদি মৃত্যু হয় তবে আমার এপিটাফ এ আমার নামের আগে শহীদ লেখা থাকবে এবং মৃত্যু তারিখের নিচে লেখা থাকবে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ’। ভেবেছিলাম আমাদের তরুনরা সকল বাধা উপেক্ষা করে আসলেই পারবে এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে, তাঁরা সত্যিকার অর্থে নতুন এক বাংলাদেশের জন্ম দিতে যাচ্ছে। কিন্তু, খুব দ্রুতই আমার ভুল ধারনা ভেঙ্গে গেল।
অবাক হয়ে দেখলাম নয় মাসের অবর্ননীয় ত্যাগের প্রাপ্তি এই স্বাধীন বাংলাকে যুদ্ধাপরাধী মুক্ত করতে আমরা খুব দ্রুতই বাধনহারা হয়ে পড়লাম এবং দ্রুতই এই আন্দোলন গতি হারাল। বুঝতে পাড়লাম সবার কাছে এইটা আসলে কোন আন্দোলন ছিলনা বরং ছিল একটা উৎসব এবং একটা পুনর্মিলন। নিজেকে নিজেই বলতে লাগলাম- ‘হায়রে তারুন্য, হায়রে উদ্দীপনা, হায়রে অস্থিরতা। আমরাই প্রমান করলাম যে আমরা মোমবাতি, জললাম দাউ দাউ করেই তবে নেভার আগে পত পত একটু বেশিই করলাম’।
আজকে আমরা দাড়িয়ে আছি এক কঠিন সংকটের মুখোমুখি। আমাদের একটি জাতিগত আন্দোলন তৈরি করতে পারে অনেক বড় ও কল্পনাতীত পরিস্থিতি। কেন আমরা এখনও একই জায়গায় পরে আছি? কেন আমরা এই আন্দোলন করিনা যে- আমাদের ছোট্ট ভাই বোনেরা কেন হরতালের আগুনের ভয়ে পরীক্ষা দিতে যাবেনা? আমার বাবা কেন অফিস থেকে বাড়িতে ফিরতে ভয় পাবে?
আচ্ছা, আপনি যদি প্রচন্ড রকম একটা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে রাস্তায় পরে থাকেন, ঠিক সেই সময় যদি একজন হিন্দু আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় আপনি কি তা গ্রহন করবেননা? ঠিক একই প্রশ্ন আমি একজন হিন্দু, খ্রীষ্টান বা বৌদ্ধ কেও করতে চাই।
সত্যিকারের সোনার বাংলা সেদিনই হবে যেদিন সব বিভেদ ভুলে আমরা এক সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে বলব ‘জয় বাংলা, জয় অসহিংসতা, জয় ঐক্যমত’।
স্বপ্ন দেখা আমাদের জাতিগত অধিকার, আর সেই অধিকার থেকেই বলতে চাই- আমি স্বপ্ন দেখবই, কারন স্বপ্ন ছাড়া বাস্তবতার অস্তিত্ব কি?
©somewhere in net ltd.