![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধর্ম নিয়ে গবেষনা করি। ধর্মের আবেদন খুজে বের করার চেষ্টা করি।
ভালো মানুষ হওয়ার জন্য চাই ভালো একটি মন। তো সেই মন গঠনের উপাদানগুলি কি ? পবিত্র কোরআন এর আয়াত হচ্ছে সেই মন গঠনের উপাদান যে মন হয় ধৈর্যশীল, আন্তরিক ও বিনয়ী। পবিত্র কোরআন যে মন গঠন করে তা হচ্ছে আন্তরিক ও বিনয়ী একটি মন। সেই মনটি সদা জাগ্রত আল্লাহর বোধ নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। আল্লাহর বোধ তৈরি হওয়ার কারনেই কিন্তু কোরআন যে মন গঠন করতে চাই তা সফল হয়। কুরআন বলছে -
"পরম করুনাময়-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।"
(সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৬৩)।
পবিত্র কোরআনে বিশ্বাসী, কোরআন এর শিক্ষা অন্তরে ধারণকারী ব্যক্তি যখন বাসা থেকে বের হয় জাগতিক কাজকর্মের জন্য, তখন কিন্তু সে বাধ্য থাকে সকলের সাথে আন্তরিক ও বিনয়ী আচরন করার জন্য কারন তার মন গঠন হয়েছে কুরআনের আয়াত দিয়ে যে আয়াত তাকে বলছে, তুমি পরম করুনাময়ের বান্দা , প্রিয় বান্দা তখনই যখন তুমি নম্রতা অবলম্বন করছো, আন্তরিকতার সাথে চলাফেরা করছো, বেহুদা তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো। জ্ঞানহীন, অজ্ঞ ব্যক্তির সাথে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ভদ্রভাবে এড়িয়ে চলছো।
জাগতিক প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন পরিবেশে ভ্রমন করি, বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমাদের সময় পার করতে হয়, এ সময় যে কোনো কারনে একজন মানুষ উত্তেজিত হতে পারে। এ সময় কুরআন দ্বারা প্রভাবিত একজন ব্যক্তির মনে পড়ে যায় সেই আয়াতটি যে আয়াতটি তাকে উত্তম চরিত্রের অধিকারি করেছে -
...“যারা নিজেদের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।'' (পবিত্র কুরআন, অধ্যায় ৩, সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৩৪)
কুরআন বলছে, তোমার রাগ নিয়ন্ত্রন করো আর ক্ষমা করে দাও। হতে পারে অফিসে আসার সময় বাসওয়ালা খারাপ ব্যবহার করেছে, রিক্সাওয়ালা জোর করে ভাড়া বেশি নিয়েছে, পরিবারে আপন কেউ কষ্ট দিয়েছে, কোনো বন্ধু ইনসাল্ট করেছে ইত্যাদি। তো তাদের প্রতি রাগ দেখিয়োনা বরং তাদের ক্ষমা করে দাও।
আর তা করলে সৎকর্মশীল হওয়া যাবে এবং রবের ভালোবাসা পাওয়া যাবে আর পাওয়া যাবে নেয়মতে পরিপূর্ন জান্নাত -
“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।
যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।”(পবিত্র কুরআন, সূরা আল ইমরান, ৩:১৩৩,১৩৪)
কুরআন মানুষের মধ্যে এমন নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করে যা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত কল্যানকর। কুরআনে বিশ্বাসী ব্যক্তি ও অবিশ্বাসী ব্যক্তির মধ্যে কত পার্থক্য একটু লক্ষ্য করুন, বিশ্বাসী ব্যক্তিকে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতির মাধ্যমে উত্তেজিত করা হলেও সে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমা করে দেয় এবং সে মনে একটা আনন্দ অনুভব করে, সুবহানআল্লাহ্। সে ভাবে এর জন্য আল্লাহ্ আমাকে ভালোবাসছেন, এর জন্য আল্লাহ্ আমাকে ক্ষমা করবেন এবং বিশাল এক পুরষ্কার দিবেন। আর অবিশ্বাসী, তার মনে ক্ষোভ, ঘৃনা বদমেজাজ ভাব ছাড়া কিছুই থাকে না কারন তার মন গঠনে ব্যপক গলদ রয়েছে। কুরআন দ্বারা তার মন গঠন হয়নি আর কুরআন ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো মতাদর্শ নেই যে একজন মানুষকে এভাবে উপদেশ দিয়ে উত্তম আচরনের অধিকারী করে। কুরআন মানুষকে আচরনের একটা মাপকাঠি ঠিক করে দেয় -
...”এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্টা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের গৃহ।”
(পবিত্র কুরআন, সূরা রা’দ, অধ্যায় ১৩, আয়াত ২২)
মহান আল্লাহ বললেন আমার সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য্য ধরো, নামায প্রতিষ্ঠা করো, দান করো আর মন্দের বিপরীতে ভালো করে। দেখুন, আয়াতটিতে আল্লাহর প্রতি জাগ্রত বোধ তৈরির পাশাপশি নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। “যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে”। কেউ খারাপ আচরন করেছে তারা তার জবাব মন্দভাবে না দিয়ে উত্তম আচরন করে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। কুরআনের দাবি হচ্ছে মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করতে হবে আর তা করতে হবে রবের সন্তুষ্টির জন্য বিনিময়ে পাওয়া যাবে পরকালে মহাপুরষ্কার। এভাবে পবিত্র কোরআন আল্লাহর প্রতি বোধ এবং নৈতিক মূল্যবোধকে এক এক সুতোয় গাঁথে। কুরআন দ্বারা গঠিত মনের ব্যক্তি মন্দ বিষয়ের সম্মুখিন হলেও হতাশ না হয়ে ধৈর্যশীল হয় এবং ভালো আচরন দ্বারা মন্দের মোকাবেলা করে আর সে মনে আনন্দ অনূভব করে কারন ঐ যে কুরআন তাকে বলেছে এ কাজের জন্য তার জন্য মহাপুরষ্কার রয়েছে। কি চমৎকার ব্যাপার, দেখুন, অপ্রীতিকর পরিস্থিতির এবং মন্দ বিষয়ের সম্মুখিন হয়েও কুরআন দ্বারা গঠিত মনের ব্যক্তি অন্যরকম আনন্দ অনুভব করে। এজন্যই বোধহয় উস্তাদ নোমান আলি খান একটা লেকচারে বলেছিলো কুরআন হচ্ছে একটা চশমার মত, চশমা পরলে যেমন চারিদিকের রং বদলে যায় ঠিক কুরআনও মানুষের জীবন বদলে দেয়, কোরআনের চোখ দিয়ে দেখলে সব কিছু বদলে যায় জীবন হয়ে ওঠে সুন্দর ও শান্তিময়।
ধৈর্যশীলতা এবং ক্ষমাশীলতা এ দুটি গুনকে পবিত্র কোরআন খুবই গুরুত্ব দেয় এবং জান্নাতে যাওয়া অন্যতম গুন হিসেবে উপস্থাপন করে। এ গুন দুটি মানুষকে আন্তরিক ও বিনয়ী করে তোলে, উত্তম চরিত্রবান করে। কুরআন বলছে -
"অবশ্যই যে সবর করে ও ক্ষমা করে নিশ্চয় এটা দৃঢ় সাহসিকতার (দৃঢ় চিত্ততার) কাজ।"(অধ্যায় ৪২, সূরা আশ-শুরা, আয়াত ৪৩)
ধৈর্যশীলতা এবং ক্ষমাশীলতা মহান আল্লাহ দৃঢ় চিত্ততা বা দৃঢ় সাহসিকতার কাজ হিসেবে গন্য করলেন। আমরা জানি কাউকে মারধর করা, নিজের প্রভাব খাটানো সাহসিকতার কাজ কিন্তু মহান আল্লাহ এখানে বলছেন কাউকে ক্ষমা করে দেওয়া অত্যন্ত সাহসিকতার কাজ। চমৎকার ! আসলেই, তাই এই সাহস অর্জন মোটেই সহজ না। আবার সহজও বটে।
পবিত্র কোরআন এর আয়াতই হচ্ছে সেই মন গঠনের উপাদান যে মন হয় ধৈর্যশীল, আন্তরিক ও বিনয়ী যা সদা জাগ্রত আল্লাহর বোধ নিয়ে, আল্লাহভীতি নিয়ে অগ্রসর হয়।
#হৃদয়ের আলো আসমানিগ্রন্থ।
©somewhere in net ltd.