![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার বিপ্লবকে স্বাগত জানিয়ে ও এর গুরুত্ব ও তাত্পর্য তুলে ধরে পরের কয়েকদিন দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ এবং দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। ওইদিন ইত্তেফাক ‘নব উত্থান’ এবং দুদিন পর (১০ নভেম্বর সোমবার) ‘স্বাধীনতা, আমার স্বাধীনতা’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। অন্যদিকে দৈনিক সংবাদ ‘মুক্তি সংগ্রামের অগ্রনায়কের ভূমিকা’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। আর দৈনিক বাংলা ৮ নভেম্বর প্রথম পৃষ্ঠায় দুই কলামজুড়ে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এসব সম্পাদকীয়তে বলা হয়, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর অগ্রনায়ক জিয়াউর রহমান জাতির এক সঙ্কটজনক সময়ে এগিয়ে এসেছেন। অনিশ্চয়তা ও দিশেহারা জাতির জীবনে সঠিক পথনির্দেশের সুস্থ ও সুস্পষ্ট কর্মধারার ভিত্তি রচনার সুকঠিন ও মহান দায়িত্ব পালনে তার সময়োচিত প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তা জাতিকে সঙ্কট উত্তরণের পথনির্দেশ দিয়েছে। গতকাল ৭ই নভেম্বরে যে প্রভাতের সূচনা হয়েছে তা ছিল দেশের বীর সিপাহী ও আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণঢালা আনন্দোচ্ছ্বাসে মুখর। গত ৩রা নভেম্বরের অ্যাডভেঞ্চারিস্ট ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের পতনের সংবাদ পাওয়া মাত্র রাজধানীর জনতা আনন্দ কলরবে ছুটে আসে রাজপথে। দেশ, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সেনাবাহিনীসহ দেশের বিভিন্ন স্তরের লোক যে কতটা সজাগ সচেতন, তা হর্ষোত্ফুল্ল সৈনিক-জনতার কণ্ঠধ্বনিতে বারবার সমুদ্র কল্লোলের মত মন্দ্রিত স্বরে বেজে উঠেছে।
পঁচাত্তরের ৮ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ এবং দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত সম্পাদকীয় তুলে ধরা হলো।
নব উত্থান
‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলিয়া কিছু নাই। কিন্তু মানবপ্রকৃতি মানুষের মতই স্টেবল বা স্থিতিশীল।’ কথাটা বলিয়াছেন সমাজতত্ত্ববিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাক আইভার। এই কথার অন্তর্নিহিত সত্যের প্রতিফলন ঘটিয়াছে গতকাল শুক্রবার, দেশের বীর সিপাহী ও জনতার অভ্যুত্থানের ভিতর দিয়া। গতকাল শুক্রবার (৭ই নভেম্বর, ১৯৭৫) প্রত্যুষে মেজর জেনারল এম জিয়াউর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের চীফ মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটর ও সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করিয়াছেন। দায়িত্বভার গ্রহণের পর জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে মেজর জেনারেল এম জিয়াউর রহমান বলিয়াছেন : বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার এবং অন্যদের অনুরোধে আমাকে চীফ মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটর ও সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়েছে। এ দায়িত্ব ইনশাআল্লাহ আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। সর্বস্তরের জনগণের প্রতি একই ভাষণে মেজর জেনারেল এম জিয়াউর রহমান স্ব-স্ব স্থানে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মাধ্যমে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাইয়াছেন।
গতকাল ৭ই নভেম্বরে যে প্রভাতের সূচনা হইয়াছে তাহা ছিল দেশের বীর সিপাহী ও আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণঢালা আনন্দোচ্ছ্বাসে মুখর। গত ৩রা নভেম্বরের অ্যাডভেঞ্চারিস্ট ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের পতনের সংবাদ পাওয়া মাত্র রাজধানীর জনতা আনন্দ কলরবে ছুটিয়া আসিয়াছে রাজপথে। দেখা গিয়েছে লরি ও ট্রাকের অন্তহীন মিছিল। লরি ও ট্রাকের মিছিল বা জমায়েতের সর্বত্র পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া অবস্থান করিয়াছেন বীর সিপাহী ও সাধারণ জনগণ। একই সাথে তাহারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে অর্জিত বিজয়ের আনন্দ ও উল্লাস প্রকাশ করিয়াছেন। দেশ, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সেনাবাহিনীসহ দেশের বিভিন্ন স্তরের লোক কতখানি যে সজাগ সচেতন, তাহা হর্ষোত্ফুল্ল সৈনিক-জনতার কণ্ঠধ্বনিতে বারবার সমুদ্র কল্লোলের মত মন্দ্রিত স্বরে বাজিয়া উঠিয়াছে।
গতকাল্যকর ঘটনায় কার্যতঃ ইতিহাসের স্বাভাবিক ধারা ও শিক্ষাই উচ্চকিত হইয়া উঠিয়াছিল। জনগণের আস্থা ও সমর্থনই যে দেশের শাসন-ক্ষমতার একমাত্র সোপান, এই সত্যের প্রতিফলন ঘটিয়াছে বহুবারের মত আর একবার। প্রমাণিত হইয়াছে এই সত্যই যে, জনগণের অধিকার এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও পুনরুজ্জীবনের পথে যে কোন চক্রান্তই অন্তরায় সৃষ্টির চেষ্টা করুক, তাহা শেষ পর্যন্ত নস্যাত্ হইয়া যাইবেই।
গতকল্যকার বীর সৈনিক ও জনতার অভ্যুত্থানকে বিবেচনা করিতে হইবে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামী ইতিহাসের আলোকে এবং নিতে হইবে সেই ইতিহাস হইতে পরিপূর্ণ শিক্ষা। দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে বাদ দিয়া, তাহাদের অধিকারের কথা চিন্তা না করিয়া, তাহাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি যথোচিত দৃষ্টি না দিয়া রাজনীতি, সমাজনীতি বা অর্থনীতি কোনটাই হইতে পারে না। মানুষ লইয়াই দেশ এবং মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণ চেষ্টার মধ্য দিয়াই গড়িয়া উঠে দেশের সার্বভৌম আত্ম। এই হিসাব ও বিবেচনার এতটুকু ব্যত্যয়, এতটুকু বিচ্যুতি ঘটিলেই অনিবার্যভাবে দেখা দেয় জনতার রোষবহ্নি ও প্রতিরোধ শক্তি। সময় আপন গতিতে বহিয়া চলিয়াছে, সাথে সাথে বহিয়া চলিয়াছে জনগণের সার্বভৌমত্বের ধারাও। যে কোন দেশের উত্থান ও পতনের মধ্যে এই ঐতিহাসিক সত্যেরই প্রতিফলন দেখা যায়। গতকাল্যকার সৈনিক জনতার বিশাল ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের পতন হইয়াছে, প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে জনগণের সার্বভৌমত্বের ঘোষণা। এই ঘোষণা এখন যথোচিত ব্যবস্থা ও কার্যসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হইবে। জাগ্রত করিতে হইবে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গভীর দায়িত্ববোধ।
গতকাল্যকার উত্থানের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক সৈনিক জনতা জনাব মোশতাক আহমদ ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রতি যে প্রত্যাশা, আস্থা ও সমর্থন প্রকাশ করিয়াছেন উহা ইতিহাসের এক নজিরবিহীন অধ্যায়। দেশ ও জাতির ভবিষ্যত্ নির্ধারণে সৈনিক জনতার এই রায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখিবে ইহাই আমাদের বিশ্বাস।
স্বাধীনতা, আমার স্বাধীনতা
বনের পাখীর দুঃখ খাঁচার পাখী বুঝিলেও বুঝিতে পারে, কিন্তু বনের পাখীর মুক্ত জীবনের আনন্দ খাঁচার পাখীর বুঝার আওতার বাহিরে। কথাটা ‘রিটোরিক’ বা নিছক আবেগ-উচ্ছ্বাস প্রসূত বলিয়া বোধ হইতে পারে, তবু স্বীকার করিতে হয় জাতীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এই আবেগ উচ্ছ্বাসটুকুই পরম সত্য। যে কোন দেশের যে কোন জাতির সব চাইতে বাঞ্ছিত ধন যাহা তাহা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। বাঙ্গালী কবির প্রশ্ন ছিল, ‘স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?’ ইতিহাস ঘাঁটিয়া এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজিলে দেখিতে পাই যাঁহারা আত্মসম্ভ্রমহীন, যাহাদের মনুষ্যত্ব বোধের অভাব, শুধু তাঁহারাই স্বাধীনতাহেন পরম ধনের মূল্য দেয় নাই। তাহাদের স্বাভাবিক পরিণতিলাভ ঘটিয়াছে ইতিহাসের উপেক্ষা, ঘৃণা ও বিস্মৃতিতে। অপরপক্ষে যাঁহারা আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন, সাত পুুরুষের বহমান জীবনধারা, ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্যকে রক্ষা করা যাঁহাদের জীবনবোধ, মমত্ববোধ ও দাযিত্ব কর্তব্যের অংশ, তাঁহারা জাতি হিসাবে ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়ের অধিকারী। শত বাধা বিপত্তি, হাজার প্রতিকূলতা ও অন্তরায়ের মধ্যেও যাঁহারা দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নিজ নিজ রক্ত ধমনীর প্রবাহে অনুভব করিয়াছেন, এই পবিত্র অনুভূতি ও উপলব্ধির জন্য অকুণ্ঠচিত্তে সবকিছু বিসর্জন দিয়াছেন, তাঁহাদের কেহ বা কোনকিছুই পরাজিত করিতে পারে নাই। না কোন বহিঃশত্রু, না কোন আভ্যন্তরীণ গোলযোগ। যে কোন দেশ, যে কোন জাতি একটি অনন্য সূত্রের উপর দাঁড়াইয়া এক ও অভিন্ন কণ্ঠ সোচ্চার করিয়া তুলিতে পারে এবং সেই সূত্রটির নাম জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
বাংলাদেশ হয়ত দরিদ্র দেশ। উন্নয়নশীল দেশ। শতাব্দীর নানা শোষণ ও লাঞ্ছনা-বঞ্চনায় বহুবিধ সমস্যা এখানে জমিয়া উঠিয়াছে। কিন্তু জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এই দেশ, এই জাতি গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ও কীর্তির অধিকারী। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এই জাতি কখনো আপোষ করিতে শিখে নাই।
এই দেশের গহীন নদী, নীল বিস্তৃত আকাশ, বৈচিত্র্যময় নিসর্গের মতই স্বাধীনতা এই জাতির প্রিয় উচ্চারণ, বহু বাঞ্ছিত প্রাণের ধন। বারবার হায়েনারা এই দেশের উপর লোভ-লালসার চকচকে সবুজ চোখ রাখিয়াছে। এই জাতি কখনো হায়েনাদের বিরুদ্ধে একমন একপ্রাণ হইয়া রুখিয়া দাঁড়াইতে দ্বিধা করে নাই। এই জাতির বহমান ইতিহাসের ধারায় সাময়িক ব্যর্থতা হয়ত আছে, দুনিয়ার কোন জাতির ইতিহাসইবা তাহা নাই, দুঃখ-দুর্ভোগের চিহ্নও হয়ত আছে, কিন্তু নাই জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিচ্যুতিজনিত গ্লানি বা অপমানের কালিমা। জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে এই দেশ-প্রাণ জাতি সকল সময়ই নিজেদের ক্ষুদ্র ভেদাভেদ, স্বার্থচিন্তা, আত্মকলহ ও পারস্পারিক হানাহানি ভুলিয়া ঐক্যবদ্ধ হইয়াছে। পর্বতের ন্যায় অটল ও বজ্রের ন্যায় তীব্র কঠোর হইয়াছে। ইহা জাতি হিসাবে আমাদের গর্বের বিষয়।
গত ৭ই নভেম্বরের সুপ্রভাতে সৈনিক-জনতার বিশাল-ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থানে যে বক্তব্যটি পুনরায় কম্বুনাদে মুখরিত হইয়াছে, তাহা আর কিছু নহে, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বেগ-বিস্তারি ঘোষণা। যে কোন বাধা আসুক, যে কোন প্রতিকূলতা দেখা দিক, হায়েনার নখরে যত শক্তিই থাকুক, জাগ্রত জনতা সেইসবের পরোয়া করে না, ইহাই ৭ই নভেম্বরের অনন্য অভ্যুত্থানের বক্তব্য। দেশে বর্তমানে বিরাজমান সাময়িক বিভ্রান্তি ইত্যাদি হইতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী কোন শক্তি বা মহল যদি মনে করেন যে আভ্যন্তরীণ শাঠা-ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক তত্পরতা চালাইয়া ইহার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাত্ করার ইহাই মোক্ষম সময়—আমরা স্বার্থহীনভাবে তাহাদের জানাইয়া দিতে চাই যে, তাহাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত প্রমাণিত হইবে। কারণ, বাঙ্গালীরা শুধু স্বাধীনতা ছিনাইয়া আনিতেই জানে না উহাকে রক্ষা করিতেও জানে।
মুক্তি সংগ্রামের অগ্রনায়কের অগ্রণী ভূমিকা
স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর অগ্রনায়ক জিয়াউর রহমান জাতির এক সংকট সময়ে এগিয়ে এসেছেন। অনিশ্চয়তা ও দিশেহারা জাতির জীবনে সঠিক পথনির্দেশের সুস্থ ও সুস্পষ্ট কর্মধারার ভিত্তি রচনার সুকঠিন ও মহান দায়িত্ব পালনে তার সময়োচিত প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তা জাতিকে সংকট উত্তরণের পথনির্দেশ দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসারসহ সকলের অনুরোধে পূর্বাহ্নে মেজর জেনারেল জিয়া প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও চীফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্বভার সাময়িকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সংকট মুহূর্তে গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন কাঠামোতে স্বাভাবিক ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি স্থায়ী ভূমিকা ও অবদান পালনে ক্ষণিকের জন্য দ্বিধান্বিত ছিলেন না।
জনতার ভালবাসায় ও অভিনন্দনে সিক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নির্ভীক সেনানী হিসেবে তিনি মুহূর্তের জন্যও ক্ষমতাগর্বে আত্মহারা হননি। বাংলাদেশের মানুষের মনে মেজর জেনারেল জিয়ার নাম সুপ্রতিষ্ঠিত। একাত্তরের পঁচিশে মার্চে জাতির হতভম্ব ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ার পর ২৬ মার্চের প্রাতে স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়ে জাতির অন্তরে সংগ্রামের প্রেরণা যুগিয়েছিল। অকুতোভয় সেনানী সেদিনই সর্বপ্রথম উদাত্ত কণ্ঠে স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীকে সংগ্রামে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারাদেশের মানুষ বাংলার দেশপ্রেমিক বীর সৈনিকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জাতীয় মুক্তি অর্জন করেছে। উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়ার সেই ঐতিহাসিক সংগ্রামী ভূমিকা চিরঅম্লান হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
শুক্রবার এক ঐতিহাসিক, অভূতপূর্ব বিপ্লব সূচিত হলো জাতির জীবনে। স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর নায়ক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে অপার সাফল্যে জয়যুক্ত সিপাহী-জনতার মিলিত এই বিপ্লব। সশস্ত্র বাহিনী এবং জনগণের ইচ্ছায় সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্বের সঙ্গে সাময়িকভাবে প্রধান সামরিক শাসনকর্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন জেনারেল জিয়া। দেশের আপামর মানুষের সঙ্গে ঐতিহাসিক এই বিপ্লবী অভিযাত্রীর শরিক সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস, পুলিশ এবং আনসার বাহিনী। সিপাহী এবং জনতার এমন অভেদ্য, নিশ্ছিদ্র ঐক্য তুলনাহীন। মুক্তিসংগ্রামকালীন দিনের সেই দুর্লভ মুহূর্তগুলোর সঙ্গেই শুধু এর তুলনা চলে।
রাজধানী ঢাকার রাজপথ শুক্রবারের প্রথম কাকডাকা ভোরে প্রত্যক্ষ করেছে অনন্য, অতুলনীয় এক দৃশ্য। রাস্তায় রাস্তায় স্বতঃস্ফূর্ত গণমিছিল, সিপাহীদের সঙ্গে জনতার মিলিত উল্লাস, জয়ধ্বনির উল্লাস, আনন্দের কলকল্লোল। কণ্ঠে উচ্চারিত নিনাদ : বাংলাদেশ জিন্দাবাদ অভিন্ন একটি আবেগে, দেশপ্রেমের একাগ্র একটি অনুভূতিতে উদ্বেলিত সমগ্র রাজধানী নগরী—গোটা দেশ। প্রাণের সঙ্গে প্রাণের স্পর্শে একাত্ম হয়েছে সৈনিক এবং জনগণ। যে ঐক্য আকীর্ণ হয়েছিল এতদিন সংশয়ে, তাকে আবার অবিনাশী সত্যে প্রতিষ্ঠিত করল সেই জাগ্রত চেতনা যার নাম স্বাধীনতা। যার নাম দেশপ্রেম। জাতির ঐক্যবদ্ধ শক্তির এই নব উত্থান, তার বৈপ্লবিক সত্তার এই উদ্বোধন আবার প্রমাণ রাখল, বাঙালি জাতির স্বাধীনতাকে খর্বিত করার সাধ্য নেই কোন চক্রান্তের, দেশী-বিদেশী কোনো প্রতিক্রিয়াশীল স্বার্থবুদ্ধির। কারো ক্ষমতা নেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার, দুর্বল করার।
ছয়ই নভেম্বরের মধ্যরাত্রির ঘন তমিস্রা ভেদ করে দেশপ্রেমিক সৈনিকদের অকুতোভয় অভিযাত্রা নিষ্কম্প এই প্রত্যয়ের অবিচল, এই অঙ্গীকারের ঘোষণাই রেখেছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের সংগ্রামী এই জাতির সামনে। ঘোষণা রেখেছে তাবত্ বিশ্ববাসীর কাছে। যে নিদারুণ উত্কণ্ঠায় বিভ্রান্তির কয়েকটি ঘণ্টা অতিক্রম করছিল দেশবাসী বিনিদ্র একটি রাত জেগে, তার অবসান কামনার প্রতিটি মুহূর্তে উন্মুখ উত্কর্ণ হয়েছিল তারা। সেই প্রতীক্ষার শেষ হলো প্রভাতের আলোর বিচ্ছুরণে আকস্মিক অন্ধকারের ঘোর কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। রাজপথে তখন স্বাধীনতার অতন্দ্র সিপাহীদের বিজয় পদধ্বনি। সেই বিজয়কে নন্দিত করার জন্যে মুহূর্তে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে এলো অগণিত নরনারী। রাজপথ হলো উদ্বেলিত একটি জনসমুদ্র, সারা শহর ক্ষান্তিহীন মিছিল নগরী। বিজয় তোপধ্বনির সঙ্গে প্রভাতের বাতাসে সাড়া জাগালো জনতার উল্লাসধ্বনি। অজস্র কণ্ঠের কল্লোলে, প্রত্যাশায় সচকিত নিনাদে ছিন্নভিন্ন হলো সেই তমসা, যা হঠাত্ জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল এক আশাহত বিমূঢ়তায়। শুক্রবারের নির্মেঘ আকাশ এবং নতুন সূর্যরশ্মিখচিত উজ্জ্বল প্রভাত আবার ছিনিয়ে আনল জাতির পরাভবহীন বিশ্বাসকে। ছিনিয়ে আনল তার অনিবার আকাঙ্ক্ষা, আশা এবং আত্মচেতনার সুতীক্ষষ্ট বোধকে।
বিভেদ এবং প্রতিক্রিয়ার শক্তি আজ পরাভূত। সংশয় এবং আচ্ছন্নতার কুটিল মেঘ আলোকিত আকাশ থেকে নিষ্ক্রান্ত। তা হলেও আত্মতুষ্ট হলে চলবে না কাউকেই। অতীতের ভ্রান্তির সর্বনাশা পরিণাম থেকে নতুন করে শিক্ষা নিতে হবে। নতুন শপথ নিতে হবে ঐক্যের এই প্রেরণাকে নিয়ত জাগ্রত রাখতে। সতর্ক থাকতে হবে যাতে বিভেদের শক্তি কোনো দুর্বলতার ছিদ্রপথে আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। অসামান্য দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে এই মুহূর্তে প্রতিটি দেশপ্রেমিককে
লেখক - জাকির হোসেন
২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৪৩
আলিম আল রাজি বলেছেন: ভাল লাগলো। তবে সরাসরি পেপার কাটিং গুলো স্ক্যান করে দিলে আরো ভালো হতো।।।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ৭:০৫
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত বলেছেন: সেনাবাহীনীর সিপাহীদের সাথে লু;গি পড়া জনগণ মিশে গিয়েছিল ইতিহাসে শুধুই একবার, ৭ই নভেম্বর|
সেনা বাহিনীর গাড়িতে শত শত সৈনিকের সাথে শত শত সাধারন মানুষ আনন্দ করেছে|
ট্যা;ক ও সামরিক যানের উপড় এই প্রথম মুক্তি পাগল জনগণকে দেখেছিলাম|