নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শীতের রাতে নীরবতার ঘনত্বে একা বাড়িতে মুভি দেখার আনন্দটাই অন্য রকম। রাত তখন সারে ন'টা। বাচ্চা দুটো উপরে বেড রুমে ঘুমাচ্ছে। আমি নীচে সিটিং রুমে টিভি দেখছি। মাঝে মাঝে একা থাকতে আমার খুব ভালো লাগে। সারা ঘর জুরে নৈশব্দের স্তব্ধতায় ঝিম ধরানো অনুভুতি। রবিন অফিসের কাজে স্কটল্যান্ড গিয়েছে দু'দিন হলো । কাল সকালের ফ্লাইটেই লন্ডন ফিরবে।
মুভির ভেতরে পুরোই ডুবে গিয়েছিলাম; হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে চমকে উঠলাম,
- এমন সময় কে এলো!
আমার ভিক্টোরিয়ান স্টাইল ডুপ্লেক্স বাড়িতে ঢুকতেই ছোট একটা কাঁচের হলের মত রয়েছে, সেখানে কাঁচের দরজাটাও সবসময় ভেতর দিক থেকে বন্ধ থাকে। কাঠের দরজা খুলেই দেখি কাঁচের হলওয়ের বাইরে শ্বেতাঙ্গ এক ১৬ কি ১৭ বছর বয়সী হ্যংলা পাতলা ছেলে কি যেন বলছে বেশ অনুনয় বিনয় ভঙ্গিতে। ভেতর থেকে আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এতো রাতে দরজা খোলা ঠিক হবে না। কিন্তু ভীষণ মায়াও লাগছে ছেলেটার জন্য। নিশ্চয়ই খুব বিপদে পরেছে।
তাই উপরে গিয়ে বেডরুমের জানালা খুলে নীচের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলাম,
- কি হয়েছে।
সে খুব অস্থিরতার সাথে বলল,
- আমি কি একটা ফোন করতে পারি? প্লিজ প্লিজ!
একেবারে কুইন্স ল্যঙ্গুয়েজে কাঁটা কাঁটা ইংরিজিতে ছেলেটি খুব করে বলছে, ও ফোন হারিয়ে ফেলেছে, তাই ও ওর বাবাকে একটা ফোন করতে চায়।ফোন করাটা খুবই জরুরী। কেমন যেন একটা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছিল ছেলেটার কথা বলার ভঙ্গিতে ।মনে হচ্ছে কেউ ওর পিছু ধাওয়া করছে। এদিক ওদিক তাকাছে আর আমার সাথে কথা বলছে। আমি তখন নাম্বারটি নিয়ে ডায়াল করতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এলো,
- ইউ ডায়াল এন ইনভেলিড নাম্বার।
ছেলেটাকে জানাতেই সে আবার অনুরোধ করলো যাতে আমি আরও একবার কল করি। দ্বিতীয় বারেও একই কথা ভেসে এলো । ওকে সেটা জানাতেই মন খারাপ করে নিঃশব্দে ধীর গতিতে চলে গেল। খুব খারাপ লাগছিলো ছেলেটার জন্য। কার ছেলে কে জানে! এরকম কত অনাথ বাচ্চা রয়েছে যাদের ঘর বাড়ির ঠিক নেই! কিন্তু ছেলেটার কথা বলার স্টাইল শুনে মনে হলো সে ভালো পরিবারের ছেলে এবং ভালো কোন স্কুলে হয়তো পড়ে। বেশ ওয়েল ম্যানারড।
মুভি দেখা আর হলো না। থেকে থেকেই ছেলেটার কথা মনে পরছে। বিছানায় শুয়ে বই পড়তে পড়তে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি।
এ বাড়িটি আমারা অল্প কিছু দিন হয় কিনেছি।প্রায় পঞ্চাশ কি ষাটটি বাড়ি দেখার পর এ বাড়িটিই আমার পছন্দ হয়েছে।বেশ খোলা মেলা আর সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো বাগানটি। বাড়িটি যখন দেখতে আসি তখন মার্চের শেষের দিক। বাড়িটির বাগানের মাঝখানে একটি হালকা গোলাপি ম্যাগ্নলিয়া গাছে তখন ফুলে ফুলে ভরা। সবুজ ঘাসের উপর গোলাপি ফুলের পাপড়ি পড়ে গোলাপি গোল আকৃতির গালিচার মত হয়েছিলো । মনে হচ্ছিলো স্বর্গের কোন এক বাগানে চলে এসেছি। কী সুন্দর সতেজ স্নিগ্ধ গন্ধ চারিদিকে! সেই মুহূর্তেই ঠিক করলাম, আর কোন বাড়ি দেখা নয়, এই বাড়িটিই আমার চাই।
রবিন বাড়িটি কিনতে চায়নি যদিও । কারন, বাড়িটির বাগানের ওপাশেই কবরস্থান। আর, উপরে দক্ষিণ দিকের বেডরুম থেকে কবরস্থান পরিষ্কার দেখা যায়। চাঁদনী রাতে টুম্বস্টোন গুলোকে দেখে মনে হয় কেউ সারিবেঁধে সাদা তাবু টাঙিয়ে রেখেছে। কেমন যেন একটি অন্যরকম মায়া রয়েছে বাড়িটিতে। রবিনকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে শেষমেশ, বাড়িটি কেনা হলো।
সেমি-ডিটাচ ৭৫ কুইন্স এভেনিউ বাড়িটির চাবি হাতে পাই ০৬/০৬/০৬ তারিখে । এই তিন ছয়ে সম্বলিত তারিখটিও নাকি অশুভ , আমার কলিগরা বলছিলো। কিন্তু আমি ওসব কুসংস্কারে কান দেই না কখনোই । এটা যে অশুভ সেটা রবিনকে বলিনি। বললেই আবার বাগড়া দেবে।মনে মনে সামান্য ভয়ও পাচ্ছিলাম।কিন্তু সেই ভয়টিই কেন জানি আলাদা শক্তি প্রয়োগ করে আমাকে আরও বেশী আকর্ষণ করছিলো বাড়িটি নেয়ার জন্য । এরই মধ্যে নিজের মনেই একটি গাণিতিক সমাধানও করে ফেলেছিলাম। শুনেছি ৭ এবং ৫ দুটো নাম্বারই ভীষণ লাকি। তাই আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো ৭৫ সম্বলিত শুভ নাম্বারটি তিন ছয়ের অশুভ পরিস্থিতিকে পরাজিত করবেই। কাজেই ভয়ের কিছু থাকলেও সেটা জয় হবেই। ছেলেমানুষি এই ব্যাখ্যায় নিজেকে বেশ পটিয়েও ফেলেছিলাম । তারপর, বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই দ্বিধা দ্বন্দ্ব মুক্ত হয়ে উঠে পড়লাম আমার স্বর্গসম বাড়িটিতে জুন মাসের মাঝা মাঝি সময়ে।
বাড়িটিতে যারা আগে ছিল তারা এতোটুকু যত্ন করেনি বাড়িটির । এই বাড়িটিকে নিজের আপন ঘর বানাতে আমার বেশ পরিশ্রম এবং সময় দিতে হয়েছে।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে একদিন রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে আমি একা রান্নাঘরে কাজ করছি, হঠাৎ মনে হলো কে যেন আমার বাড়ি ঘেঁষে সরু রাস্তা বয়ে গেছে সেখানে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে ফেন্সের উপর দিয়ে আমার দিকে দেখে আছে। ভালো মত দেখতে গিয়ে দেখি কেউ নেই।
- ধুর, কি সব ভাবনা মাথায় আসে! মনে হয় কলিগদের কাছে কিছু সাইকপ্যাথের গল্প শুনেছি বলে এসব হালুসিনেশন হচ্ছে।
দুদিন আগের ঘটনা , কাজে যাবার সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, বাস আসতে ৩০ মিনিট আর আমার কাজের জায়গায় হেঁটে যেতেও ৩০ মিনিট লাগবে, তাই মনস্থির করলাম হেঁটেই চলে যাই কাজে।
হাঁটছি , এমন সময় বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেলো। আমি হাঁটার বদলে দৌড়াতে শুরু করলাম। রাস্তায় কোন মানুষ নেই। একটা গাড়ি এসে সাইড করে থেমে আমাকে লিফট দিতে চাইলো।বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য একবার ভাবছিলাম উঠে যাই গাড়িতে। আবার কি যেন ভেবে, ধন্যবাদ দিয়ে না করে দিলাম। লোকটা গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
কাজে এসে কলিগদের বলতেই, তারা বলছিলো ভাগ্যিস আমি ঐ অচেনা মানুষের গাড়িতে উঠিনি। এই এরিয়াতে নাকি একটা ভয়ংকর সাইকপ্যাথ এবং সিরিয়াল কিলার রয়েছে যে নাকি মেয়েদের লিফট দেবার নাম করে গাড়িতে তুলে নেয়, তারপর আর সে মেয়েটার কোন হদিস পাওয়া যায় না। এসব শুনে বেশ ভয়ই লাগছিলো। আর দু'দিন পরে এই হ্যলুসিনেশন! মাথা পুরোই গেছে।
ক্রিসমাসের ছুটিতে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। আমারও কাজ নেই। ভাবছিলাম এবারে বড় করে ক্রিসমাস ডিনারের আয়োজন করবো আমার বাসায়। সাথে হাউজ ওয়ারমিং পার্টিটাও হয়ে যাবে। নতুন বাসায় অনেককেই বলা হয়নি। এক সপ্তাহ আগে থেকে শপিং চলছে।রবিন সবসময়ই কিছু ভুলভাল শপিং নিয়ে আসে। ওকে আনতে বলেছিলাম চীজ পেস্ট্রি আর সে ভুল করে নিয়ে এসেছে পরক পেস্ট্রি।আমরা তো শুকরের মাংস খাই না। শুধু শুধু ফেরত দেবার ঝামেলায় না গিয়ে ওগুলো শেয়ালের জন্য রেখে দিলাম।সন্ধ্যার পরে বাগানে অনেক শেয়াল আসে, খাদ্যের সন্ধানে। সেটা ভেবেই সন্ধ্যার পরে আমাদের বাগানের শেষ মাথায় একটি বড় গাছ আছে সেখানে ওগুলো রেখে ফিরছিলাম। এমন সময় কে যেন পেছন দিক দিয়ে বলছে,
- আমার বাবা অন্ডেল নদীর দুই নম্বর ব্রিজের কাছে আছে।
ঘুরে তাকাতেই দেখি সেই ছেলেটি যার বাবাকে আমি ফোন দিয়ে পাইনি।
মাথা ঘুরে আমি ওখানেই সেন্স হারালাম।
আমাকে ঘরে নিয়ে আসা হলো।আমার জ্ঞান ফেরার পর পুলিশ স্টেশনে ফোন দিলাম এবং একটি রিপোর্ট লিখলাম। আমার সাথে এ কদিন যা যা হয়েছে সব খুলে বললাম। আমি এখন নিশ্চিত, ঐ সিরিয়াল কিলার আমার বাসার আশপাশ দিয়ে ঘরাঘুরি করছে এবং আমাদের কোন ক্ষতি করতে চাচ্ছে। ভয়ে আমি কদিন ঘর থেকেই বের হয়নি। রবিনও অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।
তারপর সব খোঁজ খবর নিয়ে যা জানলাম সেটা শুনে তো আমাদের অবস্থা খারাপ, সাথে পুলিশেরও মাথা খারাপ, এটা কি করে সম্ভব!
আমার বর্ণনা অনুসারে এবং ফোন নাম্বার ট্রাকের মাধ্যমে জানা গেল ঐ ছেলেটি পাঁচ বছর আগে মারা গিয়েছে কোন এক গ্যাং ফাইটে লিপ্ত হয়ে । ওকে কবর দেয়া হয়েছে আমার বাগান ঘেঁষেই একটি কবরে। আর ওর বাবা চার বছরের একটু বেশী সময় ধরে নিখোঁজ। আমার দেয়া স্টেটমেন্ট অনুযায়ী পুলিশ ওর বাবার হাড়গোড় খুঁজে পায় আমার বাসা থেকে আধ মাইল দূরে অন্ডেল নদীর দুই নম্বর ব্রিজের পাশে একটি বড় ঝোপের ভেতর মাটির নীচ থেকে।
এই ঘটনা এবং পুলিশি হ্যারেসমেন্টের পরে এই বাড়িতে এক মুহূর্তও কেউ থাকবে না। তাই শেষ পর্যন্ত বাড়িটি বিক্রির জন্য চেষ্টা করা হলো। কিন্তু মার্কেটে এই বাড়ির দাম খুবই কমে গিয়েছে এবং এ বাড়ির কোন ক্রেতাই পাওয়া যাচ্ছে না। এ বাড়ি পানির দরে বিক্রি করার অবস্থাও আমাদের নেই। এরপর শক্ত ডিসিশন নিলাম, এ বাড়িতেই আমরা থাকবো। একটা ভালো কাজ তো হয়েছেই । ঐ ছেলেটির বাবাকে তো খুঁজে পাওয়া গেলো চার বছর পর।
৭৫ তো সত্যিই ৬৬৬ কে জয় করেছে।শক্তিশালী মন হয়তো নানান ব্যখায় দুর্বল মনকে সান্তনা দেয় এভাবেই , মেনে নেয়ার শক্তি যোগায়।
আসলে, বাগানের ওপাশে শুয়ে থাকা মানুষগুলো তো আমাদের কোন ক্ষতিই করেনি এ পর্যন্ত। আমরা কেন অকারনেই হয়রান হয়ে পরছি। মনস্থির করলাম, এ বাড়ি আমি আর ছাড়ছি না। নীরব মানুষ গুলোর নীরব পায়চারি আমি মাঝে মাঝে শুনতে পাই। কিন্তু আমার একদমই ভয় করে না। এই নিরবতাই বেশ ভালো লাগে এখন।
ছবিঃ গুগোল ইমেজ
০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:০৯
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
২| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭
নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লাগলো।
০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৮:১০
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: এখন আমি এই গল্পটা পড়বো না।
সকালে পড়বো।
কারন বাসায় আমি একা। এমনিতেই আমি যথেষ্ঠ ভীতু মানুষ।
০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৪২
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: ঠিক আছে পড়ে জানিয়েন।
৪| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:০৯
শের শায়রী বলেছেন: আপনার ভুতের গল্পগুলো বেশ জম্পেশ হয়। ভালো লাগা নাকি ভীতু লাগা জানবেন।
০৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৪৪
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
আসলে আমার ভুতেরা সাধারণত ভালো ভুত। এরা ভয় দেখায় না। আমি হরর লেখি না , সুপার ন্যচারাল আমার পছন্দ।
৫| ১০ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৫৭
হাসান মাহবুব বলেছেন: শেষটা বেশ ভালো লাগলো।
১৩ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪২
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ
৬| ১১ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৪১
ফয়সাল রকি বলেছেন: ভুত ভয় পাই... কাজেই পড়া ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না ।
১৩ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩
গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: ভয়ের কিছু নাই। আমার ভুতেরেয়া ভয়ংকর নয়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৪
প্রেক্ষা বলেছেন: বাবাগো কি ভয়ংকর,আমি প্রচন্ড ভীতু তারপরও কেন যে ভূতের গল্প পড়ে মজা পাই জানি না।
গল্পে একরাশ মুগ্ধতা