![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের কতই না অদ্ভূত অদ্ভূত সব শখ থাকে। কেউ শখ করে পশু-পাখি পোষে, কেউ বাগান করে, কেউ আবার নানান ধরণের জিনিস সংগ্রহ করে। পাশাপাশি গান গাওয়া, ছবি আঁকা, ঘূরতে যাওয়া, বই পড়া এগুলোতো আছেই। শখ হিসেবে মানুষের সংগ্রহ করার এই জিনিসগুলোর মধ্যে অনেক কিছূই থাকে, যেমন: বিখ্যাত ব্যাক্তিদের অটোগ্রাফ, কয়েন, পুরনো মূর্তি, বিভিন্ন দেশের পুরনো ঐতিহ্য এমনকি পানীয়র ক্যান পর্যন্ত। এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজে সংগ্রহ করার মতো জিনিস হচ্ছে ডাকটিকেট।
ডাকটিকেট কী:
ডাকটিকেটের কথা তো তোমরা শুনেছই, কেউ কেউ দেখেছও। বাসায় কোন চিঠির খাম পেলে সে খামটাকে একটু উল্টে পাল্টে খেয়াল করলে দেখবে, খামের উপর আঠা দিয়ে ছোট ছোট সুন্দর ছবিওয়ালা এক ধরণের কাগজ লাগান হয়। সেই কাগজের এক কোণায় আবার দেশের নাম, সে কাগজের দাম, সাল এবং অনেক সময় কাগজের উপর দেয়া ছবির বিষয়বস'ও লেখা থাকে। সাধারণত এর আকার হয় চারকোণা, তবে অনেক দেশে তিনকোণা বা গোল ধরণেরও দেখা যায়।
মূলতঃ এটাকেই ডাকটিকেট বলা হয়। আবার অনেক সময় দেখবে, খামের ওপর কোন কাগজের ডাকটিকেট লাগানো নেই, কিন্তু খামের কোণায় ডাকটিকেটের মতো একটা সীল লাগান আছে। তখন সেই সীলটাকেই ডাকটিকেট ধরা হয়। কাউকে চিঠি, বই বা অন্য কোন জিনিস ডাকের মাধ্যমে পাঠাতে গেলে খামের উপর নির্দিষ্ট মূল্য মানের ডাকটিকেট লাগাতে হয়।
মোবাইল আর ইন্টারনেটের যুগে এখন তো বলতে গেলে আমাদের আর চিঠি-পত্র লেখার তেমন একটা দরকার হয় না। কিন্তু একটা সময়ে, যখন এসব প্রযুক্তি কিছুই ছিল না তখন চিঠিই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতির ফলে চিঠির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন কমে আসছে। কিন্তু, তাই বলে চিঠি লেখা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তুমি চিঠি লেখ, আর না লেখ; এখনও বহু মানুষ দেশের ভেতরে এবং বাইরে তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে চিঠি আদান-প্রদান করেন। আর এই সকল চিঠিপত্র সংগ্রহ করা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিলি-বন্টনের জন্য সরকারের ডাক বিভাগ নামে একটা আলাদা বিভাগই নিয়োজিত আছে, যার মাধ্যমে দেশের পুরো ডাক-ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ডাক টিকেট এলো কেমন করে:
একসময় ডাকবিভাগের নিয়ম কানুন ছিলো বেশ অদ্ভুত ধরণের। যেমন ধরো, ডাক বিভাগের মাধ্যমে কেউ চিঠি পাঠালে তাকে কোন অর্থ খরচ করতে হতো না। কিন্তু যে ব্যক্তি এই চিঠিটা পাবে তাকে চিঠি তোলার জন্য অর্থ প্রদান করতে হতো। তাই অনেক সময়ই দেখা যেতো নিম্ন আয়ের লোকজন বা অন্য অনেকেই টাকার অভাবে অনেক প্রয়োজনীয় চিঠি তুলতো না। ফলে ডাক বিভাগেই সে চিঠি জমা পড়ে থাকতো। আবার অনেক সময় অপরিচিত কারও চিঠিও কেউ পয়সা খরচ করে তুলতে চাইতো না। ফলে এটা আসলে ডাকবিভাগের উপযোগিতা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিলো।
সে সময়ের একটা ঘটনা বলি তোমাদের। উনিশ শতকের ঘটনা। সে সময় ইংল্যান্ডের ডাকবিভাগের প্রধান ছিলেন স্যার রোল্যান্ড হিল। একদিন তিনি ইংল্যান্ডের এক গ্রামে বেড়াতে গেছেন। হঠাৎ দেখেন এক ডাকপিয়ন সেখানে এক বাড়িতে চিঠি বিলি করছে। ডাকপিয়নটি একটি বাড়িতে চিঠি দেবার জন্য বাড়ির লোকদের ডাকছিলো। এসময় একটি কিশোর ছেলে এসে ডাকপিয়নের কাছ থেকে খামটা নিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখলো। তারপর চিঠিটা পিয়নকে ফেরত দিয়ে বাড়িতে চলে গেলো। রোল্যান্ড হিল কৌতুহলী হয়ে সেই ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো- সেটা কার চিঠি ছিলো? আর তারা চিঠিটা পিয়নকে ফেরতই বা দিলো কেন?
উত্তরে হিল যা জানলেন সেটা হচ্ছে- ছেলেটির বাবা অনেক দূরে কাজ করে। চিঠিটা ছিলো তার বাবার। চিঠিটা নেড়েচেড়ে ছেলেটি আসলে দেখেছিলো ওর ভেতরে টাকাপয়সা কিছু আছে কিনা। কারণ তার বাবা বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। কিন্তু টাকা পাঠাননি দেখে তারা চিঠিটা আবার পিয়নকে ফেরত দিয়ে দেয়। কারণ চিঠি তোলার মতো যথেষ্ট টাকা তাদের কাছে ছিলো না।
এই ঘটনা রোল্যান্ড হিল ভাবিয়ে তোলে। তিনি শীঘ্রই ডাক ব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা ভাবলেন। এবং এক সময় উপায় হিসেবে তিনি ডাকটিকেটের প্রচলনের কথা ভাবলেন। তারপরে তার চেষ্টায় চিঠির প্রেরককে টাকা খরচ করে চিঠি পাঠানোর নিয়ম চালূ করা হয়। যাতে চিঠির প্রাপক টাকা পয়সা ছাড়াই তা পিয়নের কাছ থেকে তুলতে পারে।
১৮৪০ সালের ১ মে তারিখে ইংল্যান্ডে প্রথম ডাকটিকেটের প্রচলন ঘটে। সে টিকেট পেনিব্ল্যাক নামে বিখ্যাত। মূলতঃ তখন থেকেই রোল্যান্ড হিল এর তত্ত্বাবধানে ইংল্যান্ডে একটা উন্নত ডাক-ব্যবস্থার বিকাশ হতে শুরু করে। এর আগে ডাক ব্যবস্থাটি খুব একটা গোছানো ছিল না। পত্রবাহক, রানার, ঘোড়া বা অন্য যানবাহনের সাহায্যেই তখন চিঠি পত্র আদান প্রদান হত।
©somewhere in net ltd.