নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পটুয়াদের কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৩

লুপ্তপ্রায় পটুয়াদের এখন আর চোখেই পড়ে না। কারা পটুয়া ? কাদের বলা হয় পটুয়া ? পটুয়ার বুলি অনেকটা এ রকম ‘গাজী কালু দুই ভাই আড়াঙ্গি উড়াইল/ জংগলার যত ব্যাঙ দোঁড়িয়া পলাইল/ একী বাঘ নেকী বাঘ চোখ পাকাইয়া চায়,/সুন্দর বন্য বাঘটায় বৈরাগী লইয়া যায়।... গোয়ালার মায় বলে কোমর ভাঙ্গা বুড়ি/ বাঘ মারিতে লইয়া যায় দোয়ার বান্ধা লরী..............।/ ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষের পটুয়াদের চিনতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কেননা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের অবশ্যই পরিচয় রয়েছে, যারা কাপড়ে পট এঁকে নানান কাহিনী গেয়ে বেড়ায় এবং এমন করেই জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে। আমাদের চিত্রকলার ইতিহাসে কামরুল হাসান একজন অন্যতম চিত্রকর। তিনি নিজেকে ‘পটুয়া’ বলে পরিচয় দিতে খুব সুখ অনুভব করতেন। তাই বলে ‘পটুয়া’ আর ‘চিত্রকর’ একই ব্যক্তি নন। ‘পটুয়া’ আর ‘চিত্রকরে’র মধ্যে পৃথক সত্ত্বাও রয়েছে।

পটুয়ারা কোন ধর্মের অর্ন্তগত ? এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় তাদের কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম নেই। সনাতন এবং ইসলাম উভয় ধর্মের উপাদান তাদের ধর্মে দেখা যায়। এ ধর্ম বিষয়ে তাদের মধ্যে অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে।

পটুয়ারা যাযাবর জাতি ছিল। শুরুতে যদিও সবাই যাযাবর ছিল, ধীরে ধীরে আবার অনেকেই বাসস্থান স্থাপন করে। বাসস্থান নির্মাণ পর্বের আরও অনেকদিন পর পর্যন্ত পটুয়ারা যাযাবর ছিলো। উঁচু সমাজের কাছে তারা কখনোই যথার্থ সম্মান পায়নি এবং এখনো এ অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।

আজ হিন্দুদের কাহিনী আর মুসলমানদের জীবন নিয়ে দিনাতিপাত করতে দেখা যায় পটুয়া স¤প্রদায়কে। তাদের কেউ কেউ নামাজও পড়ে এবং হিন্দু পুরানের কাহিনী অবলম্বনে বস্ত্রে ছবি এঁেক ছবি নিয়ে কাহিনী বলে পেট চালায়।

পটুয়াদের আজকাল আর তেমন একটা দেখাই যায়না। গ্রামীণ জনগণের নিকট থেকে জানা যায়, তারাও নাকি আজকাল আর পটুয়াদের তেমন আর দেখতে পান না। মাঝে-মাঝে দেখতে পেলেও সেটা ফসল পাবার পরের দিনগুলোতেই পাওয়া সম্ভব ছিল। আর আজকাল তো ফসল কাটার পরের দিনগুলোতেও পটুয়াদের দেখতে পাওয়া যায়না।

পটুয়ারা আজকাল আর সেই পটুয়া নেই। তারা নেমে গেছে পেটের দায়ে নেমে গেছে বিভিন্ন রকম পেশায়। কেউ রিকশা চালায়, কেউ কারখানার শ্রমিক, কেউবা আবার ফেরি করে বেড়ায়। কারণ সা¤প্রতিক বাংলাদেশ, এক জনবহুল দরিদ্র দেশ। পটুয়াদের মুখ থেকে কাহিনী শুনে সময় খরচের সময় তাদের যেমন নেই , তেমনি নেই পটুয়াদের শ্রমের বিনিময় দেওয়ার সামর্থ্য। তাই অন্যান্য সমস্যাসহ অন্নসংস্থানজনিত সমস্যার কারণে এ স¤প্রদায় আজ বিলুুপ্তির পথে।

এতো বড় দুর্যোগ আর বিলুুুপ্তির হাত থেকে নিজ অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক পটুয়া এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তারা এখনো এই সংকটের লগ্নে তাদের পিতৃব্যবসাকে আকড়ে ধরে রয়েছে। এমন কি তাদের নতুন প্রজন্মকেও এ পেশায় নিয়োজিত রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে, যেন পটশিল্প হারিয়ে না যায়।

এদেশে শিল্পের অনেক শাখার চর্চার জন্য রয়েছে নানা চর্চাকেন্দ্র কিংবা একাডেমী। কিন্তু পটশিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে কোনো একাডেমী নেই। তাই পটুয়ারা নিজেরাই আঁকাআঁকির এবং কাহিনী শেখানোর, এমনকি পটে ছবি আকার জন্য রঙ বানানোর শিক্ষাও তাদের নতুন প্রজন্মকে দিয়ে থাকে। কিন্তু এমন করে আর ক’দিন টিকে থাকা যায়? পটুয়াদের পটের কাহিনী এলাকা ভেদে বিভিন্ন রকম হয়। কোথাও মহাভারতের কাহিনী, কোথাও রামায়ণ-চন্ডীমঙ্গলের কাহিনী এবং কোথাওবা কারবালার যুদ্ধ, বিবি সোনাভান কিংবা গাজীর পট খুবই বিখ্যাত।

বাংলাদেশের পটে যে কাহিনী খুবই প্রচলিত কিংবা জনপ্রিয়, তা নানান কারণে পশ্চিমবঙ্গে ভৌগলিক ও ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কারণে তেমন জনপ্রিয় নয়। আর এ কারণে পটুয়ারাও এলাকার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পটের ছবি ও কাহিনীকে নির্মাণ করে।

পটুয়া স¤প্রদায়ের বিলুপ্তির সম্ভাবনা নেপথ্যে আরও নানান কারণ বিদ্যমান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ ধর্মীয় মৌলবাদ। হিন্দু মৌলবাদীরা চায় না পটুয়ারা মুসলমান রীতিতে জীবনযাপন করুক কিংবা নামাজ পড়–ক। পক্ষান্তরে মুসলমান মৌলবাদীরাও চায় না পটুয়ারা কোনো রামায়ণ-মহাভারতাশ্রিত কোনো কাহিনী প্রচার করে বেড়ায়। অথচ পটুয়াদের সংস্কৃতি বলতে যা বুঝায়, তা গড়ে উঠেছে, হিন্দু-মুসলমানের উভয় সংস্কৃতির দ্বৈত সংমিশ্রণে। তার কারণও রয়েছে অতীতের গর্ভে। পটুয়ারা ছিল হিন্দু স¤প্রদায়ভুক্ত এবং সে স¤প্রদায় থেকে বিতাড়িত হয়ে ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় পেয়েছিল। কিন্তু আশ্রয় পাওয়ার পরও তাদের আর সেই হিন্দু সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন করে জীবনযাপন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই আজও পটুয়ারা রয়ে গেছে না হিন্দু, না মুসলমান- এ অবস্থায়। সুতরাং তাদের কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের অর্ন্তভুক্ত বলে বিবেচিত করার মধ্যে সংশয় থাকা স্বাভাবিক। তাদের বর্তমানে পরিচয় তারা মানুষ এবং পেশায় পটুয়া।

তাদের বিলুপ্তির সম্ভাবনার পেছনে আরও কারণের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকেও সনাক্ত করা যায়। কিন্তু তাই বলে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির বিরোধীতা করা যায় না। বরং বিজ্ঞানের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের উচিত নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাঁিচয়ে রাখা।

একসময় পটুয়ারা গ্রামীণ বিনোদনের চাহিদা মেটাতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে গ্রামেও পৌঁছে গেছে রেডিও, টেলিভিশন, ভি সি আর, সিনেমা এবং সর্বশেষ ইর্ন্টানেট-এর মতো অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি। এসব বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক উপাদানের সঙ্গে ‘টেক্কা’ দেওয়ার শক্তি পটুয়াদের নেই। প্রশ্ন হল, যেখানে পটুয়াদের শ্রমের বিনিময়ে গ্রামের মানুষ দেয় না বা দিতে পারে না, সেখানে টাকা খরচ করে এ হিন্দী কিংবা বাংলা সিনেমা কেন বা কিভাবে তারা দেখে? আসলে এ দেখার প্রতি মানুষের নতুন সৃষ্টির প্রতি আকর্ষিত হওয়ার কারণটিও রয়েছে। পটুয়ারা এখন আর নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারছেনা বলেও মার খাচ্ছে। পৃথিবীতে সমাজ ও সময়ের সঙ্গে যারা তাল-লয় রেখে অগ্রসর হতে পারেনি, তাদের প্রায় প্রত্যেকই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ কথাটি পটুয়াদেরকে আজ ভালো করে জেনে নিতে হবে।

অনেকে আজকাল মনে করেন কী লাভ এ পটুয়া স¤প্রদায়কে বাঁচিয়ে রেখে ? এ যুগ এবং সমাজকে কী দিতে পারে তারা? আসলে এ প্রশ্ন কোনো যৌক্তিক প্রশ্ন নয়। কারণ পটুয়া স¤প্রদায়ের অনেক অবদান রয়েছে আমাদের সংস্কৃতিকে। এ যুগ বিজ্ঞানের যুগ হলেও পটুয়া যে কাজ করে, রেডিও বা চিত্রকর কি তা পূরণ করতে পারে? কিংবা পটুয়ারা যেভাবে গ্রামের মানুষের চোখের সামনে একটি বিষয়কে কাছে থেকে বুঝাতে পারে, তেমনভাবে প্রভাব ফেলতে পারে কি টেলিভিশন? পারলেও কতোটা পারে? এসব নিয়ে আজকাল বিতর্ক রয়েই গিয়েছে। তারপরও বলা যায়, পটুয়াদের যুগ উপযোগী করে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তারা এমন কাজও করতে পারবে, যা চলচ্চিত্রকার কিংবা আধুনিক চিত্রকরের পক্ষেও সম্ভব নয়। তাই তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে।

পটুয়াদের ইতিহাসও খুব প্রাচীন। বৈদিক যুগেও ওদের অস্তিত্ব ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। খ্রীষ্টপূর্ব কয়েক শতাব্দীতেও ওদের অবস্থান ছিল। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের ইতিহাসে, কালিদাসের সংস্কৃত সাহিত্যে পটুয়াদের পরিচয় পাওয়া যায়। সুতরাং এত শতাব্দী ধরে যারা পেশাকে বাঁিচয়ে রাখতে পেরেছে, তারা কি এখন সত্যি বিলুপ্ত হয়ে যাবে? আমাদের দেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ। এ দেশে হিন্দু পুরানের কাহিনী তত একটা জনপ্রিয়তা পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং পটুয়াদের প্রয়োজনে এ ভূ-খন্ডে মুসলমান কাহিনীর কিংবা প্রয়োজনীয় কাহিনীর ব্যাপক চর্চা প্রয়োজন অথবা সা¤প্রতিক সমস্যা নিয়েও ওরা চালাতে পারে শক্তিশালী আন্দোলন। পরিবার পরিকল্পনা,যৌতুক প্রথা, বৃক্ষরোপণ, জনসংখ্যা সমস্যা নিয়েও শুরু হতে পারে নতুন যাত্রা। যুগ ও সমাজ কী চায়, তা পটুয়াদেরকে গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। তা না হলে তাদের আর নতুন জন্ম নেয়া সম্ভব নয়। নতুন করে চলতে না পারলে পটুয়ারা বিলুপ্তির করাল গ্রাসে হারিয়েও যেতে পারে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:২০

আমিনুর রহমান বলেছেন:




এই ব্যাপারে সরকারে হস্তক্ষেপ আশু জরুরি।


গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট +++

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই মতামত ভালো লেগেছে । ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। অনেক ভালো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.