![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।
এক সময় প্রেস ফটোগ্রাফারও ছিলাম আমি। কিন্তু যখন দেখলাম ছবি তোলার কোনো প্রতিভাই আমার নেই, তখন বিনা সংকোচেই ছেড়ে দিলাম ছবি তোলার কাজ। কাজটি আমি ঠিকই করেছিলাম। কারণ অনেকের মতো ফায়ারিং স্কোয়াড টাইপের ছবি তোলা কোনোদিনই আমার ভালো লাগেনি।
‘শীঘ্রই বের হবে জসীম উদ্দিন অসীম-এর গোমতি নদীর এপার ওপার শীর্ষক গোমতি নদী সিরিজের কিছু সংখ্যক ফটোগ্রাফসহ ফটোগ্রাফি বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ-প্রসঙ্গ:ফটোগ্রাফি।...’ এটি একটি বইয়ের বিজ্ঞাপনের লেখা। বইয়ের এ বিজ্ঞাপনটি প্রথম বের হয়েছিলো ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ‘প্রসঙ্গ:চলচ্চিত্র’ শীর্ষক প্রকাশনায়। সেই প্রকাশনার প্রচ্ছদও তৈরী হয়েছিলো আমারই ‘গোমতি নদীর এপার-ওপার’ সিরিজের একটি ফটোগ্রাফ দিয়েই। দুঃখজনক বিষয়, আমার একটি পারিবারিক দুর্ঘটনায় সেই প্রবন্ধের পান্ডুলিপিটিও হারিয়ে যায়। সাংবাদিকতা বিষয়ক কয়েকটি প্রবন্ধ কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ ও সাপ্তাহিক ‘নিরীক্ষণ’-এ প্রকাশিত হয়েছিলো। সেগুলো হয়তো কখনো খুঁজে পাবো। কিন্তু ফটোগ্রাফি বিষয়ক কোনো প্রবন্ধ কোথাও ছাপাতে দেইনি। সুতরাং সেগুলো পাওয়ার আশাও এখন শেষ। সেসব লেখা খোঁজ করতে কুমিল্লা শহরের পুরনো কাগজের দোকানগুলোতেও গিয়েছিলাম। পাইনি। আমার বামপন্থী বন্ধু অশোক দেব জয় ও স্বপ্না দেবনাথকে নিয়ে এক জায়গা থেকে কিছু নেগেটিভ, পারিবারিক ছবি, একশো’র মতো বই উদ্ধার করা গেলেও বাকি সবই হয়েছে লাপাত্তা।
লাপাত্তা হয়েছে আমার অসম্ভব প্রিয় পান্ডুলিপি ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু’। এ পান্ডুলিপির একটি প্রবন্ধ বা স্মৃতিকথাও কোথাও ছাপাতে দেইনি। কুমিল্লায় ছাপা হওয়াও সম্ভব ছিলো না। ‘নিরীক্ষণ’ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহকে এর একটি লেখা দেখালে তিনি আমাকে দিয়ে লেখাটি পড়ান। আমার কন্ঠে সবটা লেখা শোনার পর বলেন, আমি একজন সাহসী সম্পাদক বটে। কিন্তু এ লেখা ছাপাতে পারবো না। তুমি বরং এ লেখা আগরতলা বা কলকাতায় পাঠাও।
১৯৯৭-৯৮ সালে কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থার বাসিন্দা সাংবাদিক মোঃ হাসানুল আলম (বাচ্চু) কয়েকবার আমার বাসায় এলেন। বললেন, একটি পত্রিকা বের করবেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পত্রিকা। আমাকে তিনি সেই কাজে সঙ্গে চান। আমি অত্যন্ত আগ্রহ দেখালাম। কারণ আমার পছন্দের লেখার বিষয়ের সঙ্গে তার চিন্তাও সম্পূর্ণ মিলে যায়। তাকে তাই আমার আগ্রহ দেখালেও ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু’ পান্ডুলিপিটি দেখতে দেইনি। বোধ হয় তাকে অতটা বিশ্বাস করিনি তখনও। কারণ তিনি যদি পরে আমাকে না রাখেন। না হাসান ভাই বিশ্বাস ভঙ্গ করেননি। কিন্তু সরকারী প্রশাসন তাকে তার ‘সংখ্যালঘু বার্তা’ নামক পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি দেয়নি। আমি হতাশ হলাম। তাকে আবারও চেষ্টার জন্য বারবার অনুরোধ করলাম। তিনি বললেন, প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। ২০০১ সালে সরকার বদল হলো। ক্ষমতায় এলো চারদলীয় জোট সরকার। জোটের অন্যতম শরীক জামাত। সুতরাং ‘সংখ্যালঘু বার্তা’ পত্রিকার ডিক্লারেশন একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে গেল। ২০০২ সালে আমার সেই পান্ডুলিপিটি হারায়। দীর্ঘদিন ধরে হাসান ভাইয়ের সঙ্গেও দেখা নেই আর।
ঠিক তখনই হারিয়ে গেছে ‘কুমিল্লায় সংখ্যালঘু’ সিরিজের আমার তোলা অসংখ্য ছবিও। সেসব ছবির গল্প এখনো মাথায় রয়েছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের কথা বিবেচনা করে এসব ছবি তুলিনি আমি। ১৯৯২ সালের পর থেকেই কখনো কখনো তুলেছিলাম মনের টানেই। ডকুমেন্টারী বই করবো ভেবে।
১৯৯৮ সালের দিকে কুমিল্লা শহরের নানুয়া দিঘির পূর্বপাড়ের সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ বিষয়ে একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এক ফিল্ম কালারড ছবি তুলেছিলাম। প্রথমে গিয়েছিলাম ‘আমোদ’ এর জন্য ছবি নিতে। ফ্ল্যাশগান ছিলো না। ভালো ছবি পাওয়া যায়নি। তখন এক অসুস্থ বৃদ্ধাকেও পেয়েছিলাম। যিনি বারবারই বলছিলেন, আমাকে তাড়াতে এত ব্যস্ততা কেন? কতক্ষনই বা বেঁচে থাকবো আর ? আমি কি একটু স্থির হয়েও মরতে পারবো না?
কুমিল্লায় রবীন্দ্র নজরুল স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোরও অনেক ছবি তুলেছিলাম। অভয় আশ্রম, ভিক্টোরিয়া কলেজ, রামমালা ছাত্রাবাসের সঙ্গেও রবীন্দ্রস্মৃতি জড়িত। ঐতিহাসিক শাহসুজা মসজিদের কথা রবীন্দ্রনাথের ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসে রয়েছে। ‘রাজর্ষি’ অবলম্বনে নাটক ‘বিসর্জন’ আমাদের বাংলা অনার্স সিলেবাসে পাঠ্য ছিলো। সেখানেও গোমতি নদীর কথা রয়েছে। গোমতির কথা রয়েছে নজরুলের গানে কবিতায়ও। রবীন্দ্র-নজরুল বিচরণ করছেন গোমতি নদীর এপার ওপার দু’পারেই। নজরুল স্মৃতিবিজড়িত শহর কুমিল্লা ও মুরাদনগরের দৌলতপুর ও বাঙ্গরার রাশি রাশি ছবি আমি তুলেছিলাম ১৯৯৬ সালেই। দৌলতপুরে প্রথম যাই ১৯৯৮ সালে প্রয়াত সেই গ্রামেরই নজরুল গবেষক বুলবুল ইসলামের সঙ্গে। বুলবুল তখন কুমিল্লায় এলে প্রায়ই আমাদের বাসায় থাকতেন। আড্ডা দিতেন সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ পত্রিকা অফিসে।
১৯৯৮ সালে বুলবুল ইসলামের মৃত্যুর আগে বুলবুল ইসলাম সম্পাদিত ২১ তম নজরুল মৃত্যুবার্ষিকী স্মারক ‘বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে’-তে প্রকাশের জন্য আমার ছবি নেয়া হয়। কুমিল্লায় নজরুল স্মৃতি ধরে রাখা প্রায় পাঁচটি কালারড ফিল্ম তখন বুলবুল ইসলামকে আমি দেই। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই মুকুল ইসলাম মোসলেমসহ তার ঢাকার কয়েক বন্ধুর কাছে বারবার গিয়েও আমার ফিল্মগুলো আর ফেরৎ পাইনি। সেসব ফিল্মে আমার তুলে দেয়া বুলবুল ইসলামের অনেক ছবিও ছিলো। ফেরৎ পাইনি নজরুল বিষয়ক আমার কিছু লেখা ও বইপত্রও, যা বুলবুল আমার বাসা থেকে নিয়েছিলেন। সেই সংকলনে দেয়ার জন্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর একটি লেখাও আমি তখন সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। পরে তা বুলবুল ইসলামের মৃত্যুতে আর প্রকাশিত হয়নি । স্মারকটির নির্দেশনায় ড. আশরাফ সিদ্দিকী ।
তবে পরে আমি বুঝতে পেরেছি যে ছবি তোলার মেধা আমার নেই। যখন ঢাকায় ছিলাম, আনোয়ার হোসেনসহ অনেকের প্রদর্শনী দেখে আমার তা মনে হয়েছিল। আর্ট ফটোগ্রাফিতে আমাদের দেশ পিছিয়ে নেই। ড. নওয়াজেশ আহমদের একক প্রদর্শনী দেখার সুযোগ কখনোই হয়নি আমার। তার ছবি যা দেখেছি, শুধুই পত্রিকায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃক তার নির্বাচিত ছবি নিয়ে ‘বাস্তবের অন্বেষা’ শীর্ষক এ্যালবামটিও অসাধারণ লেগেছে আমার কাছে।
টাইম ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন বিদেশী পত্রিকায় শত শত ছবি দেখেছি আমি, যে যুগে ইন্টারনেট ছিল না। তবে এসব ছবি দেখতে গিয়ে চোখ আমার বরাবরই নিবদ্ধ ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের সেই নয় বছরের কিশোরীর ছবিটিতে, যার নগ্ন শরীরের চামড়া মার্কিনীদের নাপাম বোমায় ঝলসে গিয়েছিল। এসব ছবি দেখে বুঝলাম ছবি তোলা আমার দ্বারা হচ্ছে না। তাই ছেড়ে দিলাম ২০০৪ সালে এসে।
আরেকটি বিষয়, ছবি তুলতে গিয়ে আমি বুঝেছি, আমার মতো ক্ষুদ্র ফটোগ্রাফারও যখন অসংখ্যবার ভয়াবহ বিপদে পড়েছি, তখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছি যে প্রেস ফটোগ্রাফি কতো ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশা। তাছাড়া ছবি তুলতে গিয়ে আমি সংবাদপত্রের পরিচয়ও পারতপক্ষে দিতাম না, যেহেতু বেশিরভাগ সময় আমি আর্ট ফটোগ্রাফি করেছি। এছাড়া কখনোই আমি বহুল প্রচারিত কোনো সংবাদপত্রে কাজ করিনি, যদিও এখনো পর্যন্ত কেবল নেশা নয়, পেশাই আমার সাংবাদিকতা।
১৯৯৭ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় যখন প্রিন্সেস ডায়ানা মারা যান, তখনও অনেক ফটোগ্রাফারকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ি করা হয়। । ফটোগ্রাফাররা খুনের দায়ে কেউ কেউ অভিযুক্তও হন। দুঘর্টনার পরই ঘটনাস্থল থেকে অনেক ফটোগ্রাফারকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় তাদের মোটর সাইকেল-ক্যামেরা-ফিল্ম। বারবার হানা দেয়া হয় বার্তা সংস্থা সমূহের অফিসেও। ফটোগ্রাফাররা তখন তখন ডায়ানার পিছু নিয়েছিল।
২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী কুমিল্লার সুয়াগাজীতে আসবেন। সেদিনই আবার খালেদা জিয়াও আসবেন কুমিল্লার বুড়িচংয়ে। তার পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার পত্রিকা ‘শিরোনাম’ দৈনিক হিসেবে প্রথম বাজারে বের হবে রঙিন ক্রোড়পত্রসহ। তার কয়েকদিন পরই আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি ক্যামেরা নিয়ে গেলাম ছবি তুলতে। বাড়তি কোনো ল্যান্স নেই। সঙ্গে আছেন দৈনিক শিরোনামের চীফ রির্পোটার সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ। প্রথমে গেলাম সুয়াগাজীতে। মোটর সাইকেলে যাইনি আমরা। গেলাম বাসে। পথে যানজটে দেরী হলো। গিয়ে দেখি শেখ হাসিনা অনেকটা বক্তৃতাও দিয়ে ফেলেছেন। পারভেজ নোটবুক বের করে পয়েন্ট টুকতে লাগলেন। পকেট টেপ রেকর্ডারও তার সঙ্গে ছিলো। আমি রিপোর্টার কাম ফটোগ্রাফার। ছবি আমাকে তুলতেই হবে। আমি দৌড় দিলাম ভিড়ের ভিতর দিয়ে সোজা মঞ্চের দিকে। ব্যারিকেড পার হওয়ার আগেই হাতে ধরলো সেনাবাহিনীর এক সদস্য। ‘শিরোনাম’ পত্রিকা তখনও আমাদের আই ডি কার্ড দেয়নি । তবু ক্যামেরা দেখিয়ে সেনাসদস্যকে বললাম, আমি সাংবাদিক, শেখ হাসিনার ছবি তুলবো। এবার সে বললো, এভাবে যাওয়ার নিয়ম নেই। আমি দৌড় দিলাম মঞ্চের দিকে। এবার সে আমার পেছন থেকে কোমরের বেল্টে ধরলো। আমি বললাম, যেতে না দিলে চিৎকার দেবো। সে এক ধরনের ভয়ে ছেড়ে দিলো আমাকে।
এবার যেই মঞ্চের কাছে গেলাম, আবার নতুন বিপদ। নিরাপত্তা ফোর্স ‘এস এস এফ’ যেতে দেবে না। শেখ হাসিনা তখন আর প্রধানমন্ত্রী না হলেও তার জন্য কড়া নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছিলো। আমি বললাম, মাত্র একটি ছবি তুলেই চলে যাবো, দাঁড়াবো না। বিপক্ষে জবাব এলো,,যেতে দেওয়া সম্ভব নয়। আমি তখন দৌড় দিয়ে মঞ্চে উঠে গেলাম। দু’জন সৈন্য আমাকে ধরে নামালো। আমি বললাম, মঞ্চ পর্যন্ত এত কষ্ট করে এসে ছবি ছাড়াই চলে যাবো ? মাত্র একটি ছবি তুলে নেই। এস এস এফ-এর হ্যাঁ শোনার আগেই শেখ হাসিনার মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে শাটার ক্লিক করলাম। সঙ্গে সঙ্গেই মোট দু’জন সৈন্য পেছন থেকে আমার দু’হাতে ধরে কয়েকহাত পেছনে এনে বললো, মঞ্চ থেকে নামুন। না হয় ক্যামেরা রেখে দেবো। ক্যামেরা রেখে দেওয়ার ভয় ওরা তার আগেও একবার দেখিয়েছিল, যখন কোন পত্রিকার আই ডি কার্ড দেখাতে পারিনি। আমি চলে এলাম নিচে। ততক্ষনে আমি যেদিক দিয়ে ব্যারিকেড ভেদ করে মঞ্চের দিকে গিয়েছিলাম, সেদিক দিয়ে জনগণ মঞ্চের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে চাচ্ছে। শেখ হাসিনার বক্তৃতাও শেষ পর্যায়ে। আমাকে যে প্রথম আটকাতে চেয়েছিল, সেই সেনা সদস্য চোখ লাল করে বললো, আপনি আর এদিকে আসবেন না।
মঞ্চে আমি যখন উঠেছিলাম, তখন কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের মাইক্রোফোন ও ফটোগ্রাফার ছাড়া কোনো লোকাল প্রেস ফটোগ্রাফারকে দেখিনি। অথচ তার কয়েকমাস পর শেখ হাসিনা যখন আবার বিরোধী দলীয় নেত্রী, তখন এলেন কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে। অনেক ছবি তুলেছিলাম সেদিন। কোথায় গেল বাধা, আর কোথায় গেলো এস এস এফ। হায় ক্ষমতার পরিবর্তন!
‘খালেদা জিয়াকে আজ যে করেই হোক, খুব কাছে থেকে দেখবো। আবার যদি প্রধানমন্ত্রী হয়ে যায়, তবে তো থাকতে হবে কয়েকশ হাত দূরে।’ আমার সঙ্গে কয়েকমিনিট এমন কথাগুলো যিনি বলেছিলেন, তার বয়স ৫০ এর নিচে হবে না। চেহারায় তার নিম্নবিত্তের ছাপ।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এক কর্মসূচীতে খালেদা জিয়া কুমিল্লায় এসেছিলেন। কিছুক্ষনের জন্য বিশ্রাম নেন সার্কিট হাউসে। হাউসের দরজায় দাঁড়ানো সেই লোক খালেদা জিয়া যখন দোতলায় উঠেন, তখন খালেদা জিয়ার কাছেই ঘেঁষতে পারেননি। ভিড়ের চাপে ছিটকে পড়েছিলেন। তারপরও আশা ছাড়লেন না সেই লোক। খালেদা জিয়ার নামার অপেক্ষায় থাকলেন। বিশ্রাম শেষে খালেদা জিয়া যখন নামেন, তখন পুলিশের তাড়া খেয়েও এই লোক অবস্থান ঠিক রাখেন। পরক্ষনেই একদল যুবকের ধাক্কায় বৃদ্ধ লোকটি একেবারেই নীচে পড়ে যান। খালেদা জিয়ার কাছাকাছি জায়গা দখল করেছে তখন দলীয় অসংখ্য যুবক। খালেদা জিয়া গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি ছেড়ে দিলো। বৃদ্ধ তখন উঠে দাঁড়িয়েছেন। আমি কাছাকাছি গিয়ে বললাম, চাচা খালেদা জিয়াকে কাছে থেকে দেখলেন? বৃদ্ধ ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘খালেদা জিয়া এমন কী যে একেবারে কাছে থেকেই তাকে দেখতে হবে!’
একসময় যদিও প্রেস ফটোগ্রাফার ছিলাম আমি, পরে এ কাজ ছেড়েছি। যখন দেখলাম ছবি তোলার কোনো প্রতিভাই আমার নেই, তখন বিনা সংকোচেই ছেড়ে দিতে পেরেছিলাম এ ছবি তোলার কাজ। কাজটি আমি ঠিকই করেছিলাম। কারণ অনেকের মতো ফায়ারিং স্কোয়াড টাইপের ছবি তোলা কোনোদিনও আমার ভালো লাগেনি। এমন ব্যর্থ কাজ করার চেয়ে কাজটি না করাই আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১
জসীম অসীম বলেছেন: শিবিরকে গালিগালাজ করা শিবিরের একটি স্কোয়াডের কৌশলগত নমুনা। আপনি শিবির বলেই মনের দু:খে আমাকে শিবির শিবির বলে মুখে ফেনা তুলছেন। আমি শিবির করলে আপনি আর আমার পিছনে লাগতেন না। আমাকে একজন বললেন আপনি নাকি শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৭
জসীম অসীম বলেছেন: আমি বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিয়ে লেখালেখি করি অনেক আগে থেকেই। আমার এ লেখায়ও এ কথা বলা আছে। এ লেখায় আমার বামপন্থী বন্ধু অশোক দেব জয় ও স্বপ্না দেবনাথের নাম দেখে আপনার মাথা খারাপ হয়েছে ? এ লেখায় আমি প্রস্তাবিত সংখ্যালঘু বার্তা পত্রিকার কথা লিখেছি। আমি হিন্দুদের নিয়ে কিছু পোস্ট দিলেই আপনি পুরো লেখাটি না পড়ে শিবির শিবির বলতে থাকেন। আপনি যে কোন ধরনের ‘হরিণা-১৯৭১’ , আমার বেশ সন্দেহ হচ্ছে। শিবির আজকাল এতটা ছদ্মবেশে চলে গেছে ? তবু অনুরোধ থাকলো, সৃষ্টিশীল মতামত দিয়ে ব্লগের নান্দনিক মান বৃদ্ধি করুন। রুচিসম্মত বাক্য ব্যবহারে উৎসাহী হোন।
২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৪
জনাব মাহাবুব বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পারলাম আপনার ভিতরে অহমিকা অনেক বেশি।
আপনার ছবি বা লেখা কাউকে দেখতে না দেওয়া বা কোথাও ছাপাতে না দেওয়াতে কোন বীরত্ব নেই।
ফটোগ্রাফার হলেন অথচ সেই সব ফটো কাউকে দেখতে দিচ্ছেন না, এটা কেমন কথা।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৪
জসীম অসীম বলেছেন: মাহাবুব ভাই, আমার অহমিকা আমাকে ধ্বংস করে ফেলেছে? ছবি দেখাতে না চাওয়াতে বীরত্ব নেই ঠিক, কিন্তু ব্যর্থ ছবি প্রকাশ করাতেও কৃতিত্ব নেই ভাই। তারপরও কখনো কখনো ছবি শেয়ার করবো। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫
নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: আমাকে তাড়াতে এত ব্যস্ততা কেন? কতক্ষনই বা বেঁচে থাকবো আর ? আমি কি একটু স্থির হয়েও মরতে পারবো না?
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০১
জসীম অসীম বলেছেন: ভাই মতামত ভালো লেগেছে । ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। অনেক ভালো।
৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কোনো একটা পোস্টে আপনাকে বলেছিলাম- এত হতাশ না হওয়ার জন্য। আপনি কী কী করেছেন তার একটা সুন্দর তালিকা দিলেন, কিন্তু বলছেন আপনার দ্বারা প্রেস ফটোগ্রাফি সম্ভব না।
আমার মনে হচ্ছে, আপনি বেশ ইমম্যাচিউর। প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেতা বা মন্ত্রী-ভিআইপিদের সামনে সব সময় যাওয়া যায় না নিরাপত্তার কারণে। এ জিনিসটা আপনার বোঝা উচিত ছিল।
আপনি বেশ দায়িত্বহীনও মনে হচ্ছে। আপনার পাণ্ডুলিপি এতবার হারায় কীভাবে? ছবি মানুষকে দিয়ে দিচ্ছেন, কিন্তু সেগুলো কীভাবে দিতে হয় তা খেয়াল রাখেন নি।
আর সর্বোপরি, আপনার লেখাগুলো অগোছালো ও অপরিণত মনে হচ্ছে।
আপনাকে এ কথাগুলো বলছি বিশেষ একটা উদ্দেশ্য নিয়ে, যার মধ্যে আপনার মঙ্গল নিহিত রয়েছে।
সব সময় পজিটিভ হোন। আপনার লেখায় আমি নেগেটিভ সাইড দেখছি পুরোটাই। লেখার মধ্যে নিজের অপারগতা বা ব্যর্থতা এতো বলার দরকার নেই। দায়ির্ব সচেতন হতে শিখুন। নিজের বস্তু যদি নিজেই রক্ষা করতে না পারেন, অন্যের বস্তু আপনার দ্বারা রক্ষিত হবে- এমনটা ভাবা যায় না।
গা ঝারা দিন। নিশ্চয়ই আপনার জন্য অনেক শুভ সুন্দর দিক অপেক্ষা করছে।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০২
জসীম অসীম বলেছেন: ভাই, সোনাবীজ ...ছাই, আমি মনে হয় খুব নৈরাশ্যবাদী। আপনার সাহসী মতামত এবং স্পষ্টতার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমার মধ্যে ইমম্যাচিউরিটি রয়েছে নি:সন্দেহে। ভি.আই.পি-দের ছবি তোলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছিল, কারণ তখন মেইল ইন্টার্নেটের ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত, আঞ্চলিক দৈনিকগুলোতে। দায়িত্বহীনতার চেয়ে আমার এক ধরনের উগ্রতাও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। যে মেয়ের সঙ্গে প্রেম করলাম দু’বছর, তার সঙ্গে সংসারও করলাম দু’বছর। কিন্তু একদিন মত-পথের পার্থক্যের জন্য তার মায়ের সঙ্গে রাগ করে আমি বাসা ছেড়ে সেই যে চলে এলাম, আর গেলাম না। তার মা আমার ভাড়া বাসায় থাকতে এসেছিলেন। ‘গোমতি নদীর এপার ওপার’ উপন্যাসসহ কতো লেখা যে সে সময়ে হারিয়েছিলাম, ভাবলেও লেখার জন্য কান্না আসে। না থাক আমার লেখার কোনো মান, কিন্তু আমার লেখাগুলো যে আমার কতো আপন ছিলো, বুঝাতে পারবো না ভাই। এই এখন যেমন লেখার কথা মনে পড়াতে চোখ ঠেলে জল বের হচ্ছে। কারণ আমি এ লেখার জন্য আমার জীবনটাকে প্রায় বাদই করে দিয়েছি। আর ভাই নজরুলের ছবিগুলো দিয়েছিলাম ১৯৯৬-১৯৯৮ সালের দিকে। নেগেটিভ আকারে। ছবি প্রিন্ট করারও পয়সা ছিল না। যিনি নিয়েছিলেন, সেই নজরুল গবেষক ছিলেন আর্থিকভাবে আমার চেয়েও গরীব। লেখাগুলো অবশ্যই অগোছালো এবং অপরিণত। এটা ঠিক কী কারণে, আমি জানি না। তবে মনে হয়, চর্চা ও একাগ্রতার অভাব, চাকুরি না করতে পারার দুশ্চিন্তা, কখনো কখনো বেকার হওয়ার কারণে আর্থিক অনিশ্চয়তাও এতে প্রভাব ফেলেছে। সর্বশেষ মেধাশুন্যতা তো রয়েছেই। আপনার পরামর্শে আমি এর মধ্যে অনেক হতাশা কাটিয়েও উঠেছি। পজিটিভ হতে চেষ্টা করছি। এতটা সময় আপনি আমার পরামর্শে এবং দিক নির্দেশনায় ব্যয় করছেন এত ব্যস্ততার দিনেও, সে জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা। সর্বশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন । অনেক ভালো।
৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১১
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকা কী এখনো প্রকাশিত হয়?
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৮
জসীম অসীম বলেছেন: জি ভাই, ১৯৫৫ সালের ৫ মে থেকে এখনো প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়মিত বের হয়। আমি ওখানে ২০০০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাজ করতাম। ওই পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেছিলাম ১৯৮৯ সালের দিকে। সাংবাদিকতার কাজ শুরু করি ১৯৯৫ সালের শেষদিকে।ওয়েবসাইটও রয়েছে তাদের।
৬| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কমেন্টে খুব খুশি হলাম। আপনার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে গুণটি আমি লক্ষ করলাম তা হলো আপনার সহনশীলতা ও ধৈর্য। যেসব লেখা হারিয়ে গেছে সেগুলোর জন্য আর দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। আপনি নতুন করে লিখুন। ক্রিয়েটিভ এবং নৈর্ব্যক্তিক লেখা লিখুন। ব্যক্তিজীবনে ব্যর্থতা সবারই কম বেশি আছে। কিন্তু সেগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকলে সামনে এগোনো যাবে না। নতুন ভাবে উদ্যম গ্রহণ করুন। একটা গল্প বা কবিতা বা প্রবন্ধ ঝটপট লিখে পোস্ট করুন। লেখা থেকে ব্যর্থতার ছাপ চিরতরে দূর করে দিন। তারপর একদিন যখন সাফল্য আসবে, তখন আপনার এসব ব্যর্থতার ইতিহাস বিজয়ীর মতো উদ্ভাসিত হতে থাকবে।
বন্ধু তোমার ছাড়ো উদ্বেগ,
সুতীক্ষ্ণ করো চিত্ত----
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১
জসীম অসীম বলেছেন: ভাই সোনাবীজ অথবা ... আপনার মতামত পড়ে মনে হচ্ছে শরীরে আবার প্রাণবন্ত রক্ত প্রবেশ করেছে। যদি কোনোদিন কৃতিত্ব আসে আমার জীবনে , তাহলে নি:সন্দেহে আপনিও তার অংশীদার থাকবেন। কারণ আপনি আমার বর্ষাকালের কোকিল ভাই, বসন্তের কোকিল নন। হৃদয় থেকে অশেষ শ্রদ্ধা আপনাকে। ভালো থাকবেন। ভালো আপনাকে থাকতেই হবে।
৭| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: অহমিকার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসুন --- আত্মবিশ্বাসী হোন --নিজকে তুলে ধরুন -- নিজকে আরো সহজ করে ছেড়ে দিন --- দেখবেন জীবন সুন্দর ---নিজের লেখা ও ছবিগুলোর উপর জোড় দিন, যাদের দিয়েছেন আবার সংগ্রহ করুন ---
শুভকামরনা রইল
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩
জসীম অসীম বলেছেন: আপনার মতামত প্রাণবন্ত ।অশেষ শ্রদ্ধা আপনাকে। ভালো থাকবেন।
৮| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪
ইনসোমনিয়াক দাঁড়কাক বলেছেন:
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২
জসীম অসীম বলেছেন: ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৫
হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: শিবির রগ কাটাতে ওস্তাদ!