নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিপোর্টারের ডায়েরি:‘দূষিত লোক দিয়ে রাষ্ট্র চলে না

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৯

১.

২০০৪ সালের শেষের দিকে একদিন রাতে ‘কুমিল্লার কাগজ’ অফিসে বসে কাজ করছিলাম। এমন সময় অফিসে এসে হাজির হলেন এক ভদ্র মহিলা, তার যুবতী মেয়েকে নিয়ে। মেয়েটির নাম ফাতেমা নাইয়ার ফেরদৌসি ইভা। কুমিল্লার কাগজে ইভা-র প্রচার বিষয়েই এসেছিলেন তারা। আমি তখন কম্পিউটারে বসে কাজ করলেও কান পাতা ছিল তাদের বিভিন্ন কথাবার্তাতেই।

ইভার শিক্ষিতা মা বললেন, ‘আমার মেয়ে...এটা করে ফেলেছে। সুতরাং তার এই কৃতিত্বের খবর আপনাদের কাগজেও তো ছাপা হওয়া দরকার। আরও কাগজ তার এ কৃতিত্বের খবর ছেপেছে। ...ইত্যাদি।’ পত্রিকায় উপস্থিত অন্যান্য সাংবাদিকরাও

বললেন, তার কাভারেজ ধীরে ধীরে হোক। আমি কোনো মন্তব্যই করলাম না। শুধু ভাবলাম, একজন শিক্ষিত মা হয়েও কিভাবে মেয়ের এমন সর্বনাশ করেন। কারণ মিডিয়া এমন কৃতিত্বের খবর প্রচার করবেই। কিন্তু কৃতিত্বটার পরিমাণ কতোটুকু? প্রচার বিষয়ে যাদের এমন মোহ থাকে, তারা কি কাজ নিয়ে খুব বেশিদূর যেতে পারে? বাচ্চাদের উৎসাহ দেওয়া ভালো, কিন্তু তাদের ভিতর অহংকার ঢুকিয়ে দেওয়া মোটেও ঠিক নয়।

এ প্রসঙ্গে ১৯৯২ সালের একটি ঘটনা এখনও আমার মনে পড়ে। নবম শ্রেণির এক কিশোরীর নামে উপন্যাস ছাপানোর কারণে ঢাকা শিশু একাডেমির বিপ্রদাস বড়–য়া ওই কিশোরীর বাবাকে খুব বকে দিয়েছিলেন। আজ আমি বুঝি, বিপ্রদাস বড়–য়া সেদিন একেবারে ঠিক কাজটিই করেছিলেন।



১৯৯৮ সাল। আমি তখন কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘আমোদ’ পত্রিকায় কাজ করি। তখনই একদিন ছবি তুলতে গেলাম একটি প্রোগ্রামে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমীতে। দিনটি ছিলো অক্টোবরের ২৪ তারিখ। মন ছিল খুব খারাপ। কারণ বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় দেখেছিলাম আমার মায়ের কিডনীর অসুখের বেগতিক অবস্থা। বাবা নার্স খালাম্মাকে দিয়ে রক্তের স্যালাইন মার হাতে পুশ করিয়েছেন। কুমিল্লা শহরের পশ্চিম চানপুর এলাকায় ‘পাখির মা’ নামে নার্স খালাম্মা পরিচিত ছিলেন। তিনি চাকুরি করতেন কুমিল্লা সদর হাসপাতালে। কিন্তু মা অস্থিরতায় বারবার সুঁই খুলে ফেলতে চাচ্ছিলেন। অবশ্য এমন অবস্থার মাত্র ১৫ দিন পরই ৫ নভেম্বরে মা মারাও গিয়েছিলেন। মায়ের অসুস্থতার কথা ভুলেই প্রোগ্রামে গেলাম। কারণ তখন মা প্রায় সব সময়ই অসুস্থ থাকতেন।

কুমিল্লা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় [ইউনিক] আয়োজিত সেই সেমিনারে বক্তব্য রেখেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তখনকার গভর্ণর লুৎফর রহমান সরকার, রোটারী ক্লাবের প্রাক্তন জেলা গভর্ণর ও সাবেক মন্ত্রী আজিজুল হক এবং কুমিল্লা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম শামসুল হকসহ আরও অনেকে।

আজিজুল হক বক্তব্য দেয়ার সময় কে যেন পেছন থেকে ‘রাজাকার’ বলে আস্তে একটু চেঁচিয়ে প্রায় লুকিয়ে যায়। অবশ্য তাকে কেউ খুঁজতেও যায়নি। আর প্রফেসর এম শামসুল হকের বক্তব্য ছিল চমৎকার। তিনি এক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও উপাচার্য ছিলেন। তার সঙ্গে আমার ২০০১ সালে সরাসরি কথা হয় কুমিল্লা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কুমিল্লা হাউজিং এস্টেটের প্রশাসনিক ভবনে বসে।

কুমিল্লার সাপ্তাহিক ‘নিরীক্ষণ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা স¤পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ তখন কুমিল্লা বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও কুমিল্লা পদ্ধতিক জনক আখতার হামিদ খানের ওপর একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। ওই গ্রন্থের পান্ডুলিপি রচনার সময় আমি তাকে সাধ্যমত শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেছিলাম। আমি ছিলাম তখন তার ‘নিরীক্ষণ’ পত্রিকার সহকারী স¤পাদক। ওই সময় প্রায়ই আমার যাওয়া হতো ভি.সি এম শামসুল হক সাহেবের কাছে। তিনি অনেক মূল্যবান কথা বলতেন। ঠিক তখন তার বলা একটি কথা এখনো আমার মনে বাজে : ‘দূষিত পানি দিয়ে জীবন বাঁচে না, আর দূষিত লোক দিয়ে রাষ্ট্র চলে না। তাই যদি দেশ বা রাষ্ট্রের জন্য কিছু করতে চাও, তাহলে প্রথমে দুষ্কর্ম থেকে দূরে থাকো। তারপর সঙ্গ ত্যাগ করো যতো দুশ্চরিত্র লোকের।’ এম.শামসুল হক বাংলাদেশের একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। প্রবীণ এই লোকটি কথা বলতেন সত্যিই চমৎকারভাবে। বাড়ি ছিল তার কুমিল্লার লাকসামের মুদাফফরগঞ্জের পাশাপুরে। ঢাকায় থাকতেন ধানমন্ডির ৯ নম্বর রোডের ৬/এ নম্বর বাড়িতে। এমন মেধাবী মানুষ আমাদের রাষ্ট্রে সত্যিই বিরল।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.