নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুমিল্লা শহরে প্রেম করার জায়গা নেই!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০০

ক্লিওপেট্রা। প্রাচীন মিশরের সুন্দরী রাণী। কিংবদন্তী এ রাণীর নামটি আমাদের অঞ্চলে খুব একটা পাওয়া না গেলেও এখনও এখানকার ঘরে ঘরে শিরি-ফরহাদ আর লায়লী-মজনু নাম দেখা যায়। ক্লিওপেট্রা নামে কোনো বাবা-মা তার সন্তানের নাম রাখে না। কোথাও কোথাও অবশ্য শিরি নামটি যেন বিবর্তিত হয়ে, হয়ে গেছে শিরিন। শিরি-ফরহাদ, লায়লী-মজনুর জন্মদিন কবে, জানা নেই। তবে ভালোবাসার নিজেরও যে একটা জন্মদিন আছে, তা আগে কতোজন জানতো? এখন ১৪ ফেব্র“য়ারী তারিখে ভালোবাসা দিবস বা ভালোবাসার জন্মদিন পালনে এ শহরে এখন ধুম লেগে যায়। কিন্তু সারা বছর ধরে প্রেমের খবর আর কে রাখে! সারা বছর তো প্রেম পালনে ধুম লাগেনা, তখন মানুষ প্রেম করবে কোথায়? কারণ প্রেম-ভালোবাসার জন্য তো স্থানও একটি ফ্যাক্টর।

প্লেটনিক ভালোবাসার কথা আমরা শুনেছি। বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসের শিষ্য ছিলেন প্লেটো। তার ধারণায় শরীরের স্পর্শ থাকলে প্রেমের পবিত্রতা নষ্ট হয়। আমাদের মধ্যযুগের কবিরা প্লেটনিক প্রেমের মতোই দেহহীন আরেক প্রেমের কথা বলে গেছেন। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম। কিন্তু এ প্রেমের অন্তরালেও মানব-মানবীর রক্তমাংসের প্রেম ছিলো। আর এ যুগে

ভালোবাসা হয়ে গেছে যেন পুরোই যন্ত্রনির্ভর। বিশেষ করে মোবাইল, ই-মেইল, ফেইসবুক, ইন্টারনেটনির্ভর প্রেম। তারপরও কুমিল্লা শহরের শুভেচ্ছা কার্ডের দোকানগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে প্রতিবছরই ভালোবাসা দিবসটিকে কেন্দ্র করে অনেক শুভেচ্ছা কার্ড বিক্রি হয়েছে। কুমিল্লার বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটের প্রসাধনী দোকানগুলোর এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ওসব দোকানে প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বিভিন্ন নামীদামী ব্র্যান্ডের পারফিউম। কিন্তু ছেলেমেয়েরা আজকাল প্রেম করবে কোথায়? নিরাপদ জায়গাটুকু কোথায় ? ফাস্টফুডের দোকানগুলোতেও খুব ভীড় হয় কোনো কোনো সময়। চায়নিজ রেস্টোরেন্টে প্রেম করে কি প্রকৃতির পরশ পাওয়া যায়? শহরের ফুল দোকানগুলোতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য সারাবছরই প্রচুর ফুল আমদানী করা হয়। বিশেষ করে লাল গোলাপ। রোমের ধর্মযাজক ও কবি ভ্যালেন্টাইন নরনারীর প্রেম নিয়ে সাম্রাজ্যের রাজার রোষানলের শিকার হোন। প্রেমের কবিতা লেখার জন্য প্রথম শতাব্দীর দিকের কোনো এক ১৪ ফেব্র“য়ারী তারিখে ভ্যালেন্টাইনের শিরচ্ছেদ করা হয়। হায়রে প্রেম! হায়রে কবি! হায়রে প্রেমের কবিতা!

বাংলা ভাষাতেও এমন প্রেমের কবিতা লেখা হয়েছে। কিন্তু প্রেমের কবিতা লেখার জন্য কাউকে জীবন দান করতে হয়েছে, এমন নজির পাওয়া যায়নি। তবে বাঙালী জাতি তার মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েও আজ সারা বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

‘এমন পিরীতি কভু নাহি দেখি শুনি। পরানে পরান বান্ধা-আপনা আপনি।।’

-চন্ডীদাস

প্রেমের কবিতার জন্য সংস্কৃত ভাষার মহাকবি কালিদাসের ‘মেঘদূত’ ইতিহাস প্রসিদ্ধ। রবীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়’ গল্পের অমল-চারুলতার পরকীয়া প্রেমকে ধরে গবেষক নীরদ সি চৌধুরী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার বৌদি কাদম্বরী দেবীর পরকীয়া প্রেমকে আবিষ্কার করেছিলেন। প্রেম নিয়ে লিখেননি তেমন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তবে সবাইকে হার মানিয়ে প্রেমের কবিতা লিখেছেন কবি জীবনানন্দ দাশ। তার ‘ধূসর পান্ডুলিপি’ প্রেমের কাব্য হলেও ‘বনলতা সেন’ তার অমর প্রেমের কাব্য। ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে’- জীবনবাবুর এ লাইন এ অঞ্চলের মানুষ কতো লক্ষ-কোটি বার উচ্চারণ করেছে, জানা নেই।

কুমিল্লাও এক প্রেমের নগর। প্রচলিত আছে, কুমিল্লা শহরের মেয়েরা সারাদেশের সেরা সুন্দরী। কবি নজরুল জীবনে দু’বিয়ে করেছিলেন। প্রেমের বিয়ে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন তিনি। বাঁধা পড়েন কুমিল্লার মেয়েদের বাঁধনে। একজন গ্রামের মেয়ে। অন্যজন কুমিল্লা শহরেরই বাসিন্দা ছিলেন। একজন মুসলিম, অন্যজন হিন্দু। একজন নার্গিস। অন্যজন প্রমীলা সেনগুপ্ত। কিন্তু বর্তমানে কুমিল্লার প্রেমের পরিবেশ কেমন? প্রেমিক প্রেমিকাদের নিরিবিলি একটা কথা বলার পরিবেশ কি বর্তমান কুমিল্লায় আর আছে? প্রায়ই প্রতœতত্ত্বের অনন্য নিদর্শন কুমিল্লার কোটবাড়িতে আসা পর্যটকরাও গণছিনতাইয়ের শিকার হোন। ছিনতাইকারীদের গুলিতে একবার ওখানে আহত হয়েছেন প্রাক্তণ এক স^াস্থ্যমন্ত্রীর এপিএসের গাড়ি চালক। কিছুদিন আগে ঐ এলাকায় এক নববধূ ধর্ষিত হন। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। রাজেশপুর-জামবাড়ি-ময়নামতির পাহাড়ে ছোটখাটো অঘটনতো লেগেই থাকে। এ অবস্থায় প্রেম করার পরিবেশ যে কতো বদলে গেছে, তা সহজেই বুঝতে পারা যায়।

তবে কুমিল্লার তরুণ-তরুণী কিংবা বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ কিভাবে-কোথায় তাদের ভালোবাসা সফল করবে ? সে বিষয়ে আলাপ হয় কিছু লোকের সঙ্গে। তারা জানান:

কুমিল্লা শহরে যদি নিরিবিলি কথা বলার ও প্রেম করার নিরাপদ একটু জায়গা থাকতো, তবে আনন্দে বুকটা থৈ থৈ করতো। প্রেমিকার সামনে এ কথা বললেন, এক তরুণ কবি। প্রেমিকা ততক্ষণে মুখ খুলে বলে ফেলেন একঝাঁক কথা। বলেন, কথা বলার জায়গা না থাকাও একটা অনিয়ম। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। কুমিল্লা বোটানিক্যাল গার্ডেনে পাওয়া এ প্রেমিক জুটির মতো অতটা সাহস অনেকেই দেখাননি। পত্রিকার লোক প্রেম করার জায়গা বিষয়ে প্রশ্ন করছে শুনে ভয়ে দু’তিন প্রেমিক জুটি টিকেট কেটে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গেই বোটানিক্যাল গার্ডেন ছেড়ে চলে যায়। এ প্রশ্নের উত্তরে শহরের একজন সঙ্গীত শিল্পী বলেন, কখনোই এ শহরে কথা বলার তেমন জায়গা ছিলনা। শহরের বাইরে নিরিবিলি পরিবেশ থাকলেও সেখানে তেমন নিরাপত্তা নেই। যেমন-দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে কুমিল্লার কোটবাড়িতে। তা আসে অনেক সময় দলবদ্ধভাবে। পিকনিক করতে। তখন কি আর মনের কথা আপন প্রেয়সীকে খুলে বলার তেমন সুযোগ ঘটে। দু’জন মিলে সেসব জায়গায় গেলে প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। তিনি আরও বলেন, নিরিবিলি কথা বলার জায়গার অভাববোধ করতে দেখা গেছে রুচিশীল পরিবারের মানুষদের। কুমিল্লার বোটানিক্যাল গার্ডেন, ধর্মসাগরপাড়, পৌরপার্ক ও ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে বসে কথা বলতে পারে, এমন পরিবেশ আছে বলে আমি মনে করিনা। ফাস্ট ফুডের দোকানগুলো চলে ইংরেজি সংস্কৃতির ধাঁচে। ওখানে আমাদের সংস্কৃতির উত্তরসূরি মানুষ স^স্তিবোধ করতে পারে বলে আমার মনে হয়না। তাছাড়া ফাস্টফুডের দোকানগুলো বাণিজ্যিকভাবে তৈরি। ওদের কাছে বাণিজ্য বড়, কথা বলার রুচিশীল পরিবেশ বড় কথা নয়। তবে হ্যাঁ, রুচিশীল পরিবেশ আর গোপন পরিবেশ এক কথা নয়। অভিযোগ রয়েছে শহরের কয়েকটি ফাস্টফুডের দোকান, টেলিফোন দোকান ও ফটো স্টুডিওতে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে গোপনে কথা বলার মস্ত বড় সুযোগ রয়েছে। ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যয়নরত এক বামপন্থী ছাত্রনেতা বলেন, এখন এ শহরে নিরিবিলি কথা বলার, প্রেম করার একটু হলেও পরিবেশ রয়েছে, তবে তা উচ্চবিত্তদের দখলে। সে স্থানগুলো হলো রেস্টুরেন্ট বা ফাস্ট ফুডের দোকানগুলো। আমরা গোমতি অববাহিকার মানুষ হলেও গোমতি পাড়ের নিরাপত্তাহীন জায়গায় দরিদ্র না হলে কেউ যায় না। সেখানে রয়েছে এক মনোরম স্থান। সে স্থানের শহরতলীর চানপুর গোমতি ব্রীজের কাছে যদি বেশ ঘন হয়ে বৃষ্টি নামে, তখন উপায় কী হবে? না ভিজে কোন উপায় নেই। তাছাড়া যদি একবার ছাত্রছাত্রী জুটির অভিভাবকরা খবর পেয়ে যায়, তাহলে পালাবারও পথ থাকেনা। বর্ষাকালে এ গোমতি নদীর পার বসার অযোগ্য হয়ে পড়ে। ধর্মসাগরের বাণিজ্যিক নৌবিহারও এখন বন্ধ রয়েছে। ধর্মসাগরের রাজহংসীতে বসে একান্তে মনের কথাটি বলার সুযোগও এখন আর নেই। চারদিকে সন্ত্রাসও খুব বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় একান্তে কথা বলার জায়গা দূরে থাক, একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রেম করতে হচ্ছে কুমিল্লার প্রেমিক-প্রেমিকাদের ।

আপনি নিজে কোথায় আপনার একান্ত কথাগুলো কাউকে বলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে সেই ছাত্রনেতা হাসতে হাসতে বলেন, আমার মনের একান্ত কথা বলার প্রয়োজন আমি কখনোই বোধ করিনা। বাঙালির হƒদয় থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে প্রেম। আমার কাছেও কোন মানবী আজ পর্যন্ত প্রেম নিবেদন করেনি। আমি নিজে একজনকে মোবাইলে মাঝে মধ্যে প্রেম নিবেদন করে মনের একান্ত গোপন কথাটি বলতে চাইতাম। কিন্তু শেষের দিকে ফোন করার পয়সাই আমার থাকতো না বলে আমি চেষ্টাও করিনি। এখন প্রতি রাতে শহরের একটি চা-দোকানে যাই আড্ডা মারতে। একান্তে কথা বলার জায়গা খুঁজেও মরি না।

একজন ষ্টুডিও মালিকের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, কুমিল্লা শহরের অনেক ষ্টুডিওর ভিতরই আগে একান্তে কথা বলার নিরাপদ জায়গা ছিল। ১০০/১৫০ টাকার বিনিময়ে আধা ঘন্টা-এক ঘন্টার জন্য অনেক ষ্টুডিও’র ভিতরে ভাড়া দেয়া হতো বলেও অভিযোগ রয়েছে। যারা এমন ষ্টুডিও ভাড়া নেন, তাদের কাছে ষ্টুডিও’র ইনডোরই হলো একান্তে কথা বলার অন্যতম জায়গা। কিন্তু আজকাল প্রত্যেকের হাতেই মোবাইল ক্যামেরা। পারতপক্ষে স্টুডিও-র দিকে কেউ যায় না।

ভিক্টোরিয়া কলেজের অর্থনীতি [সম্মান] বিভাগের শেষ বর্ষের এক ছাত্র বলেন, এ শহরে একান্তে কথা বলার মতো কোনো জায়গা আছে বলে আমি মনে করি না। সেখানে গাড়ি-ঘোড়া কম থাকে, সে জায়গাকেই আমি একান্তে কথা বলার জায়গা বলে বিবেচনা করি। যেমন কুমিল্লা শহরের ভারত সীমান্তবর্তী জামবাড়ি বা রাজেশপুর ফরেস্ট এলাকা। ওখানকার ঘন অরণ্যেই প্রিয়তমাকে মনের কথাটি খুলে বলা যায়।

কুমিল্লা শহরের এক নামকরা ডাক্তারের মুখোমুখি হলে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি মনে করি না এ শহরে একান্তে কথা বলার কোন জায়গা আছে। তাই আমি আমার বউকে সেসব বলি গাড়ি চালানোর সময়। তাছাড়া গাড়ি চালানো আমার খুব শখ। যে কথাটি আমি ড্রয়িংরুমে কিংবা বিছানায় পর্যন্ত বলতে পারিনা, সে কথাটি আমি অনায়াসেই গাড়িতে বলে ফেলতে পারি। তখন দুর্ঘটনার ভয় আমার থাকে না।

কুমিল্লা শহরে সত্যি কি প্রেমিক-প্রেমিকাদের পারস্পরিক একান্ত কথা বলার কোন জায়গা নেই? এ প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে বলা যায়, এ শহরে এখন আর আগের মতো গাছগাছালি ঘেরা কোন দৃষ্টিনন্দন স্থান নেই। এ রকম একটি স্থান কৃত্রিম উপায়ে নির্মাণ করতে পারলে এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও ছিল ব্যাপক। কিন্তু অর্থ বিনিয়োগ এবং পরিকল্পনার অভাবে এমন স্থান নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। স¤প্রতি সংরাইশ এলাকার এক কলেজ ছাত্রী প্রেমিকের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে গিয়েছিল কুমিল্লা শহরের ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজার ছাদের কাছের সিঁড়িতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘পড়বি পড় মালীর ঘাড়ে।’ নিজের বাবা-মায়ের হাতেই ধরা পড়ে মেয়েটি। ছেলেটি দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে রাস্তার চলন্ত রিকশার নিচে পড়ে যায়। এ করুণ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে মেয়েটি হাসতে হাসতে চোখের পানি বের করে ফেলে।

তার মনে থাকতো সব সময় অভিভাবক ভীতি। একবার প্রচন্ড গরমের দিন সে চানপুরের পেয়ারা বাগানে গিয়েছিল। প্রেমিক আগেই অপেক্ষা করছিল সেখানে। সহসা সে মেয়েটি দেখল তার বড় ভাই ও ভাইয়ের বন্ধুরা পেয়ারাবাগান ঘেরাও করে আসছে। এ দৃশ্য দেখে প্রেমিকটি আগেই পালায়। মেয়েটি তখন ঝোঁপঝাড় শনবন পাড়ি দিয়ে রতœাবতী খেয়া দিয়ে পালাতে গিয়ে পা পিছলে নদীতেই পড়ে গিয়েছিল। অবশ্য সেই পেয়ারাবাগানটি এখন আর নেই। মেয়েটি বলে, কলেজ ক্যা¤পাস না ছাড়তে পারলে আমার মোটেও শান্তি লাগতো না। ওসব করে তখন আমার লেখাপড়ার মান অনেক নেমে গিয়েছিল। আমার সেই প্রেমিকটি পরে অন্য একটি মেয়েকে বাবা-মা’র অনুরোধে বিয়ে করে ফেলে।

অজিতগুহ কলেজের ছাত্র মোবারক হোসেন বলেন, পড়াশোনার একঘেয়েমি হতে মাঝে মধ্যে কিছুটা অবসর পেতে ঝলমলে রোদেলা দুপুরে প্রায়ই ক্যাম্পাস ছাড়ি আমি। চলে যাই ময়নামতি পাহাড়ে। আমার বিশ্বাস পাহাড়ে বসেই মনের একান্ত কথাটি আপনজনকে বলা যায়। অবশ্য সেখানে নিরীহ মানুষ পেলে চাঁদাবাজরা লাঞ্ছিত করে। একবার আমি নিজেও সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিয়ে বেঁচেছিলাম। তারপরও যাই। কী করবো। প্রেম করার সে রকম জায়গা তো আর নেই। কুমিল্লা পৌরপার্কের চেহারা আমার পছন্দ হয়না। উন্নয়নের কোন ছোঁয়া নেই। তবে আমরা রিকশায় করে ময়নামতি যাওয়ার পথেও নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় দারুন মগ্ন হই। তবে রিকশাওয়ালার সামনে তেমন কথা বলতে পারি না। পাহাড়ে ওঠেই প্রিয়তমার সুন্দর হাসি-হাসিমাখা মুখ দেখি। পাহাড় থেকে নেমে আসার আগে প্রেমিকা আবার কালো বোরখাটি দিয়ে তার শরীর ঢেকে নেয়।

আমি অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি আমার প্রেমিকাকেই বোরখা পরা অবস্থায় দেখে তার বাবাও চিনতে পারে না। বোরখা পরে সেই মেয়েটি পার্কেও আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। কিন্তু পৌরপার্কের সামনে প্রায়ই পুলিশ ভ্যান এসে ছাত্রছাত্রীদের ধরে। তাই ভয়েও যাই না ওদিকে।

৫০ বছরের এক গৃহিণীকে এ প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ত্রিশ বছরের এ সংসার জীবনে স^ামীর সঙ্গে তেমন কোন জায়গাতেই আমি যাইনি। সে সময় গৃহিণীদের আজকালকার মেয়েদের মতো প্রতিদিন বের হতে দেয়া হতো না। এখনকার ছেলেমেয়েরা লজ্জার মাথা খেয়ে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহায়েও একান্তে কথা বলার জায়গার খোঁজ করে। আমরা ঘরের বাইরে তেমন কথা বলার জায়গার কথা ভাবতেও পারতাম না।

সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত কুমিল্লার একজনকে এ প্রশ্ন করলে উত্তরে সে বলে, একান্তে কথা বলার জন্য কোন বিশেষ জায়গার দরকার নেই। সব জায়গাই উপযুক্ত। কেন প্রেম করেন? এ প্রশ্নের উত্তরে সেই সন্ত্রাসী যুবকটি বলে, দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে দারিদ্র্য। এ দু:সময়ে প্রেম না করলে বাঁচার কোন আশা থাকবে না।

এমন আরও অনেকের অভিমতের ভিত্তিতে জানা যায়, এ শহরে প্রকৃত অর্থে প্রেম করার কিংবা একান্তে কথা বলার জায়গা আসলে নেই। শহরের পুকুর-দীঘিও ক্রমাগত ভরাট হচ্ছে। মন বাড়ে, এমন জায়গা নেই। পুরনো গোমতি দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে, যে গোমতির উভয় তীর ঘিরে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠতে পারতো একান্তে কথা বলার অন্যতম একটি স্থান। সব মিলিয়ে এমন একটি স্থান এ শহরে এখনো নেই, যেখানে নির্ভয়ে মানুষ চুটিয়ে প্রেম করবে। এর চেয়ে দু:খের সংবাদ প্রেমিক-প্রেমিকাদেও জন্য আর হতে প ওে কি? সুতরাং এ বিষয়ে এই এক্ষুনি কুমিল্লা শহরের প্রেমিক-প্রেমিকাদেও দল বেঁধে আন্দোলনে নামতে হবে। প্রেম একটি শিল্প। এর সফলতা কামনায় আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।















মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৪

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: কুমিল্লায় আপনার মত শিবির বেড়ে গেছে; শিবিরদের প্রেমের যায়গা পতিতালয়।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৬

জসীম অসীম বলেছেন: শিবির যে কে, তাতো মতামতেই প্রকাশ পাচ্ছে। ১৯৭১-নাম ধারন করে এ প্রজন্মের অত্যাধুনিক শিবির প্রেমের বিরোধিতা করবে, এ তো নতুন নয়। ১৯৭১-ওদের পূর্বসূরীরা আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন করেছিল। প্রেম-ভালোবাসার স্বাধীনতার কথা বললে আপনার মতো মানুষেরা তো পাগল হবেনই। নিজে শিবির হয়ে অন্যকে শিবির বলে গাল দেয়া শিবিরের একটি কৌশল।

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: প্রেমের জয় হোক ! B-)

ক্যান্টনমেন্টের আশেপাশে কিছু ভালো জায়গা দেখেছিলাম , অনেকে বেড়াতে যায় !

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩০

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো লাগলো আপনার মতামত। কুমিল্লায় এখনো কিছু নৈসর্গিক জায়গা রয়েছে। হয়তো ভবিষ্যতে এগুলোও ক্ষয়ে যাবে। ভালো থাকবেন।

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: সাট-আপ ইডিয়ট শিবির; আপনার দেশ পাকিস্টানে গিয়ে মরেন।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪২

জসীম অসীম বলেছেন: নিজে শিবির হয়ে অন্যকে শিবির বলে গাল দেয়া শিবিরের একটি কৌশল।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৭

জসীম অসীম বলেছেন: লেখা নিয়ে মতামত না লিখে, সমালোচনা না করে শুধু শিবির শিবির বলে মুখে ফেনা তোলা শিবিরের একটি রণকৌশল। লেখার জবাব ওরা অস্ত্রে দিতে চায়। এই যেমন আপনি লেখার বিষয়ে মতামত না দিয়ে শিবির শিবির বলে মুখে ফেনা তুলেন। শিবির চায় না সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি। কিন্তু আমি মুসলিম, হিন্দু আমার প্রাণ। নাম ‘জসীম অসীম’। এমন নাম শিবির কেন পছন্দ করবে ? সুতরাং আমার পিছে তো লাগবেই। যতœশীল হোন, প্রাসঙ্গিক হোন, অহিংস হোন, সাংস্কৃতিক হোন এবং বাংলাদেশের হিন্দুদের নিজের মতো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ মনে করুন, প্লিজ।

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৮

যাযাবর বেদুঈন বলেছেন: কেন কুমিল্লার ময়নামতি কিংবা টমসনের এখানে ভাল কিছু চাইনীজ আছে আর ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতেও কিছু ভাল জায়গা আছে। ওখানে নিরালায় প্রেম করলেই হয়।

প্রেম জায়গার অভাবে থেমে থাকবে এটা কোন কথাই হতে পারেনা। ;)

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫১

জসীম অসীম বলেছেন: । ভাই, প্রেম কিন্তু জায়গার অভাবে থেমে থাকে না। কিন্তু প্রেম করার একটি নৈসর্গিক পরিবেশ পাওয়া গেলে অনেক ভালো হয়। মতামত চমৎকার আপনার। ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.