নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কুমিল্লার সিনেমা হলগুলো

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৪

কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো অবশিষ্ট রয়েছে কয়েকটি সিনেমা হল। কান্দিরপাড়ের ‘দীপিকা’ ও ‘দিপালী’ সিনেমা হলটি ভেঙ্গে বর্তমানে সেখানে বহুতল ভবন হচ্ছে। শহরের রাজগঞ্জের ‘মধুমতি’ সিনেমা হল ও চকবাজারের ‘রূপালী’ সিনেমা হলটি এখনো চালু রয়েছে। রাজগঞ্জ-মনোহরপুর এলাকার ‘রূপকথা’ সিনেমা হলটি অনেকবছর যাবতই বন্ধ রয়েছে। কান্দিরপাড়ের ‘লিবার্টি’ হলটি ১৯৭১ সালের স^াধীনতা যুদ্ধের পরে একবার চালু হলেও অনেক বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে। এ সিনেমা হলের মূল মালিক রামচান ক্ষেত্রীকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনারা গুলি করে মেরেছিল। তারপর এ সিনেমা হলটি চালু হলেও বকেয়া করজনিত সমস্যায় শুল্ক বিভাগ এ হলটিকে বন্ধ করে দেয়। কুমিল্লা শহরের মোট ছয়টি হলের মধ্যে চারটি সিনেমা হলই বর্তমানে বন্ধ রয়েছে । বাকি দুই সিনেমা হল রাজগঞ্জের ‘মধুমতি’ ও চকবাজারের ‘রূপকথা’ হলে এখনো নিয়মিত ছবি প্রদর্শিত হয়। দর্শক সংখ্যাও একেবারে কম নয়। বড় পর্দার এই হলগুলোতে বর্তমানে কারা ছবি দেখছে? কেমন ছবি দেখছে? সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শ্রমজীবি মানুষেরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সিনেমা দেখে। বিশেষ করে উত্তরবাংলা থেকে আগত হাজার হাজার রিকশা চালক। মধ্যবিত্ত পরিবারের দর্শকরা এই ইন্টার্নেটের যুগে পারতপক্ষে হলে এসে আর ছবি দেখেন না। কারণ তাদের দেখার মতো সে রকম রুচিসম্মত ছবি এখন আর এসব হলে প্রদর্শিত হয় না। যদি সে রকম ছবি প্রদর্শিত হতো কিংবা হলের পরিবেশ যদি হতো সে রকম রুচিস্নিগ্ধ, তাহলে মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো আবার সিনেমা হলে ছবি দেখতে হয়তো আসতো। কিন্তু বর্তমানে যে নিম্নমানের ছবি তৈরি হচ্ছে, তাতে করে মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষ বাধ্য হয়েই হলবিমুখ হয়েছেন। কোনো এক সময় সিনেমা এবং সিনেমা হলের এ অবস্থা ছিলো না। এমন অবস্থার জন্য দায়ী হলো বর্তমানে টিভি চ্যানেল এবং অনলাইন গণমাধ্যমের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। এসব স্যাটেলাইট চ্যানেলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ভাষার রকমারী অনুষ্ঠান স¤প্রচার হওয়ায়ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী হলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের গৃহিণী নারীরা এখন ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেলে প্রতিনিয়ত সিরিয়ালে মশগুল বলে মহা অভিযোগ রয়েছে। এসব হিন্দী সিরিয়ালের নেশায় তারা টিভিতে প্রদর্শিত হিন্দি ছবিও খুব একটা দেখেন না বলেও বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। দেশি-বিদেশী বাংলা-ইংরেজি ও হিন্দী ছবি টেলিভিশন ছাড়াও একসময় মানুষ সিডি, ভিসিডি-তে দেখতো। এখন ইন্টার্নেটের জোয়ারে পৃথিবীর সব দেশের ছবি এখন নিজের মোবাইলে-কম্পিউটারে লোড করে ঘরে বসে কিংবা যত্রতত্র বসেই দেখতে পারছে। আর রয়েছে এ সময়ের বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেইসবুক’-এর মতো বিভিন্ন যোগাযোগ ও বিনোদন মাধ্যমের অবাধ ব্যবহার। আর তাই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাতারা আজকাল তাদের সিনেমার নায়িকাদের ‘সেক্সবম্ব’ হিসেবে ব্যবহার করেন। আর এসব দেখতে এখানকার কিংবা এখনকার দর্শকরা অতি উৎসাহী। ‘ভালগার’ ছবির নায়িকা না হলে দর্শকরাও ছবিকে নেয় না। ভালো ছবি প্রদর্শন তাই সাহসের কিংবা দু:সাহসের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকম সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়া সব সময় সম্ভব হয় না। কারণ সাহস দেখাতে গিয়ে ব্যবসায়িকভাবে মার খাওয়ারই বেশি সম্ভাবনা থাকে। দর্শকরা ছবিতে যৌনতা না থাকলে ছবি দেখতে চায় না। দর্শকদের কাছে নায়িকাদের শরীরের চাহিদা এখন মারাত্মক বেড়ে গেছে। তাই ছবিতে নারীদের শরীর দেখানোর প্রতিযোগিতায় নির্মাতারাও এখন খুবই ব্যস্ত। আর সিনেমা হলগুলো ব্যস্ত এসব প্রায়নগ্ন ছবিগুলো প্রদর্শনে। এখনকার অধিকাংশ দর্শক ছবির নিদেশনা, সঙ্গীত ও পোশাক পরিকল্পনায় নান্দনিক মান কেমন, তা নিয়ে উৎসাহ দেখান না। কেবল নারীদের কিংবা নায়িকার শরীরের খোঁজ করেন। এমন অবক্ষয়ের কাল কখনো আগে দেখা যায়নি। নায়িকার আকর্ষণীয় শরীর এখন সিনেমার কাহিনীর চেয়েও বেশি আকর্ষনীয় তাদের কাছে। এ নিয়ে একজন সিনেমাবোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, অমর চলচ্চিত্র শিল্পী সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’ ছবির জবুথবু ইন্দির ঠাকুরণের মতো চরিত্র দেখলে আজকালকার দর্শকরা হল ছেড়েই চলে যাবেন। নায়িকা নাচবেন সখীদের নিয়ে, এ দৃশ্য বাস্তবে অবাস্তব হলেও দর্শকরা দেখতে উৎসাহী।

তারপরও দর্শক চাহিদা ও ব্যবসায়িক দিক মনে রেখে কুমিল্লার সিনেমা হলগুলো ছবি প্রদর্শন করে। উত্তরবাংলার যেসব রিকশাচালক কুমিল্লা শহরে রিকশা চালায়, ওদের সিনেমা দেখার ভালো সময় রাত। সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর এমন রাতের বেলা সিনেমা দেখার সময় সিনেমার কাহিনীতে মুড়িমুড়কির মতো গুলি না ফুটলে, শরীর না ছুটলে, ওদের শান্তি লাগে না। কারণ এখন ওলটপালট হয়ে গেছে আমাদের সামাজিক বাস্তবতা। সিনেমায়। দৃশ্যপট বদলে গেছে সিনেমারও। রুচি বদলে গেছে দর্শকেরও। সিনেমায় এখন চাপাতির দারুণ ছড়াছড়ি। নিম্নবিত্ত দর্শক এখন এসব দেখতেই খুব নেশায় থাকে। সিনেমার চাপাতি সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যা¤পাসেও, এমনকি শহরের পাড়ায় পাড়ায়। নতুন অধিকাংশ সিনেমায়ও চাপাতির ব্যবহার এখন মারাত্মক বেশি। কারণ দর্শকদের মধ্যে কলেজের ছাত্র ও পাড়া মহল্লার যুবকরাও রয়েছে। পাড়ামহল্লার সন্ত্রাসীরা এসব ছবি দেখতে- অস্ত্রের ব্যবহার শিখতে এবং নারীর শরীর নিয়ে যেসব ছলাকলা প্রদর্শন হয়, তার জন্যে প্রায়ই চলে আসে সিনেমা হলে।

প্রযোজনা সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা যেসব কাহিনী, গান, অভিনয় উপহার দেন দর্শকদের, তার বিষরস ছড়িয়ে পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাই সবাইকে সচেতন থাকা উচিৎ এ সময়ের সিনেমার প্রতিও। এখনকার সিনেমার নাম হয় ইবলিশ, শয়তানের আজরাইল, খাইছি তরে, পালাবি কোথায়, তেরো পান্ডা এক গুন্ডা, গুন্ডা পুলিশ- ইত্যাদি। যেমন দর্শক, তেমন ছবি। কিংবা যেমন ছবি তেমন দর্শক। তাই

নায়ক সালমানশাহ মরে গেলে যেসব দর্শক আত্মহত্যা করে, সিনেমার কাহিনীর কোনো নায়ক খুন করলে এরাও খুন করে বসতে পারে। আগের শিল্পসম্মত ছবি কিংবা জহির রায়হানের নান্দনিক ছবির প্রতি ওদের প্রচন্ড বিতৃষ্ণা। সুস্থ ধারার ফিল্ম নিয়ে ওদের কোনো মাথাব্যথা নেই। সেলুলয়েডের ফিতায় ভর করে নায়িকার শরীরে শরীরে যৌনতা এলে সিনেমাহল হয় ওদের সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা। এসব কারণে সিনেমার এবং সিনেমাহলগুলোর এখন দারুণ দুর্দিন। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অভিযোগ, এতকিছু করেও সিনেমাকে টেকানো যাচ্ছে না। নগ্নতার সংমিশ্রণের পরও ব্যবসায়িকভাবে বিপর্যস্ত দেশের সিনেমা মাধ্যম। সেই দুর্দিনের ঢেউ লেগেছে সর্বত্রই। কুমিল্লাও এর ব্যতিক্রম নয়। আর তাই খোদ কুমিল্লা শহরেই এখন ছয়টি সিনেমা হলের মধ্যে চারটি হল বন্ধ হয়ে গেছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯

রেজাল্টস বাংলা ডট কম বলেছেন: ওহ মাই গড!!! জসিম ভাই, আপনি ব্লগ লিখেন?? আমি তো জানতাম ই না!! আজ পেয়ে গেলাম। আমাকে চিনতে পেরেছেন? কুমিল্লা বার্তা-জামাল ভাই-ত্রিবেণী-তানভির, তারেক, সাকিব-মারধর, মাথা ন্যাড়া আরও কত্ত কি!!! (খুব কস্ট লাগে সেসব কথা মনে হলে)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০১

জসীম অসীম বলেছেন:

ব্লগ লেখা দক্ষতা যোগ্যতা নেই আমার। একেবারেই নতুন। টাকার অভাব দূর করতে পারিনি ভাই। কারণ আমার যোগ্যতা নেই। তাই কারো অধীনে স্থায়ীভাবে চাকুরিও করা হয়নি আমার। আমি তোমাকে কেন না চিনবো ভাই রা...। ভালো থেকো আজীবন আকাশের মতো। আর অতীতের দু:খের স্মৃতি ভুলতে চেষ্টা করো ভাই। ভালো থেকো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.