নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে হবে।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০২

দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যে হাল হয়েছে, কখনো কখনো মনে হয়, তারা বুঝি ১৯৭১ সালে দেশ স^াধীন করে খুব ভুলই করেছিলেন।

দেশের পাঠ্য ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের পরিপূর্ণ ইতিহাস আজও নেই। বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেয়া হয়েছে যারা সামরিক বাহিনী থেকে এসে মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ করেছেন। সাধারণ মানুষ থেকে যারা যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন, তাদের কেউ বীরশ্রেষ্ঠ নন। নারী মুক্তিযোদ্ধাদের বেলাতেও এমন অবহেলা পরিলক্ষিত হয়েছে। নারী মুক্তিযোদ্ধারা কেউ বীরশ্রেষ্ঠ নন। ১৯৭১-এর ধর্ষিতা নারীকে ‘বীরাঙ্গনা’ বলেই শান্ত্বনা দেয়া হয়েছে। তার ত্যাগকে যথাযথ মূল্যায়ন করা কি হয়েছে ? তারপর আবার যে হারে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পয়দা হয়েছে, সেটাও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অবমাননাকর। সেই দু:খে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাই নিজেকে আর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয় না। এমন ঘটনা আমি নিজেও দেখেছি। আর তাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের এমন অবহেলা দেখে আমার প্রায়ই পারস্যের মহাকবি ফেরদৌসির কথা খুব মনে পড়ে যায়। ফেরদৌসির প্রতি সে দেশের ক্ষমতাসীন রাজার অবহেলার কথা মনে পড়ে।

‘শাহনামা’ মহাকাব্যের রচয়িতা মহাকবি আবুল কাসেম তুসী। এ মুসলমান কবির জন্ম হয়েছিলো ইরানের তুস নগরে। ফেরদৌসী ছিলো তাঁর উপাধি।

আফগানিস্তানের গজনী প্রদেশের বাদশা সুলতান মাহমুদের রাজকবি এ ফেরদৌসি বিভিন্ন রাজাদের সুমতি আর দুর্মতির কাহিনী নিয়ে জনম ভর কাব্য রচনা করে গেছেন। এসব কাহিনী তিনি শোনাতেন বাদশাহ মাহমুদকে।

নিজ দেশ ইরানে ফেরদৌসির যথার্থ মূল্যায়ন ছিলো না। তাই তিনি গজনিতেই শুরু করলেন তার কাব্যচর্চা। বাদশাহ সুলতান মাহমুদ কবিকে আশ্বাস দিলেন তার এক ছত্র কবিতার জন্য তাকে একটি করে সোনার আশরফী মোহর দেবেন। ফেরদৌসি ত্রিশ বছরের সাধনায় রচনা করলেন ত্রিশ হাজার ছত্র। তার মাতৃভাষা ফারসীতেই। কিন্তু সময়মতো কথা রাখতে পারেননি বাদশাহ। রাজসভার তথাকথিত সভ্যদের কুমন্ত্রণায় ভুল করে বসলেন এই বাদশাহ ।

মহাকবি ফেরদৌসি ছিলেন গরীব ঘরের সন্তান। রাজার দেয়া অর্থ পেলে গরীবের কাজে লাগাবেন ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু রাজার ভন্ড সভাসদগণ রাজাকে এতো সোনার মোহর না দিয়ে বরং কবিকে রূপার মোহর দিতে বলেন। কথামতো রাজা তাই করতে চাইলেন। কবি ছিলেন বড়ই অভিমানিনী। দরিদ্র হতে পারেন, কিন্তু ‘মুখের জবান’কে খুবই গুরুত্ব দিতেন। তাই কবি মনের দুঃখে বাদশাহ’র কোনো মুদ্রা না নিয়েই নিজ জন্মস্থানে ফিরে গেলেন। এদিকে কিছু সময় গত হওয়ার পর রাজা তার ভুল বুঝতে পেরে ত্রিশ হাজার সোনার আশরফী মোহরই পাঠিয়ে দিলেন কবির বাড়িতে। কিন্তু ততোক্ষণে সবই শেষ। কবি মনের দুঃখে মারা গেছেন।



মহাকবি ফেরদৌসি একদা বাদশাহর কাছে যে অবজ্ঞা পেয়েছিলেন, তেমন অবজ্ঞা, যেন আজ বাংলাদেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের। এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আজ বিবিধ ষড়যন্ত্রেরও শিকার। তারা যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা অপমান বোধ করছেন। এমনকি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের উপদ্রবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা একেবারেই নিষ্পেষিত, এমনও অভিযোগ রয়েছে। আর যেখানে কুখ্যাত রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়, সেখানে তো আর বলার কিছুই নেই। এই স্বাধীন দেশে কুখ্যাত রাজাকারগণ মন্ত্রী-সচিব এমনকি প্রেসিডেন্টের পদও আঁকড়ে ধরেছিলেন। বি.এন.পি সরকারের প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাস সে রকমই একজন রাজাকার ছিলেন। এমন দেখে আপনি কী বলবেন।

যেসব মুক্তিযোদ্ধা একাত্তরে দেশ স^াধীন করতে গুলিতে-বোমা বিফোরণে আহত হয়েছেন, তাদের যন্ত্রণা তাই বর্তমানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়েও মর্মান্তিক। কেননা তাদের মহান ত্যাগে অর্জিত এ বাংলাদেশের আজকের যে পরিণতি, তা দেখে তারা নিশ্চয়ই সুখী হতে পারবেন না। এমন দুর্নীতিগ্রস্ত একটি দেশ দেখতে তারা এ মহান মুক্তিযুদ্ধ করেননি। ১৯৭১-এর বধ্যভূমি কোনো কোনো শহরে হয়ে গেছে এখন রাজাকারদের রাজপ্রাসাদ, গ্রামে কোথাও সবজিক্ষেত। সারাদেশে এমন নজির অসংখ্যই রয়েছে।

অথচ আর এক দশক পর এমন একদিন আসবে, যেদিন হয়তো আর একজন মুক্তিযোদ্ধাও বেঁচে থাকবেন কী না সন্দেহ রয়েছে। সেদিন ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেখিয়ে ভাস্কর্যে-শহীদমিনারে-স্মৃতিসৌধে সারাদেশকে ছেয়ে ফেললেও মুক্তিযোদ্ধাদের তেমন কাজে আসবে না। তাই বেঁচে থাকা অবস্থাতেই এদেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে হবে। মহাকবি ফেরদৌসির বেঁচে থাকা অবস্থায় যে বাদশা তার মূল্য বুঝেননি, কবি মরে যাওয়ার পর সে বাদশা কবিকে ঠিকই চিনেছিলেন। কিন্তু তখন আর কাজে আসেনি। সুতরাং মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রেও একই উদাহরণ আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একবিন্দু হলেও বিশ্বাসী, তাদেরকে রাজাকারতন্ত্র প্রতিহত করতেই হবে। যে রক্তস্নাত দেশের সর্বোচ্চ পদ রাজাকাররা অপবিত্র করেছে, সে দেশের রক্তভেজা পতাকা ছুঁয়ে তার প্রায়শ্চিত্য করতে হবে। তা না হলে আমরাও আমাদের উত্তরসূরীদের কাছে দায়ী থেকে যাবো।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.