নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডায়েরি: লেখাই আমার শত্রু

১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬

কুমিল্লা জেলা প্রশাসন অফিসে আমি কখনো পত্রিকার ডিক্লারেশন চেয়ে আবেদন করিনি। বিভিন্ন কারণে তার প্রয়োজনও নেই। এর অন্যতম কারণ অবশ্য লিখতে না পারা।
অন্য পত্রিকার চাকুরি করে এবং কারো কারো পত্রিকা পরিচালনা করেও দেখেছি, মনের চাওয়া মতো আসলে লেখা যায় না। কোনো কোনো লেখা লিখলেও নিউজ ভিউজ লেখা যায় না। হয়তো সাহিত্যধর্মী কিছু লেখা যায়।
1998 সালে আরেকজনের পত্রিকার ডিক্লারেশনের আবেদনের সঙ্গে নেপথ্যে ছিলাম আমি। যদিও সেই পত্রিকার ডিক্লারেশন বা ঘোষণাপত্র আর হয়নি। এর কারণ অবশ্য সেই পত্রিকার নামকরণ করেছিলাম ‘সংখ্যালঘু বার্তা’। যদি আমি কখনো প্রশাসনের কাছে আবেদন করে পত্রিকার ডিক্লারেশন পেতামও, শেষে তা টিকিয়েও রাখতে পারতাম না শুধু আমার লেখার জন্যই। আমার ওই না লেখা কথাগুলো আমাকে প্রায়ই হত্যা করতে চায়।
কুমিল্লার ‘দৈনিক রূপসী বাংলা’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল ওহাব একবার আমাকে বলেছিলেন, আমি নাকি যে কোনো লেখাকেই বন্দুক-ছুরি-বোমা হিসেবে দেখি। ঠিক। অনেকটা তা-ই। তিনি আমার প্রবণতা আসলে ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন।
কুমিল্লা শহরের একজন ব্যক্তি বর্তমানে বেশ ধনী। তাঁর মা কিছুকাল আগেও মানুষের ঘরে ঘরে ভিক্ষে করেছেন। ওই মাকে আমি কোনো কারণে শ্রদ্ধা করলেও তার পুত্রের ধনী হওয়ার অবৈধ পন্থাকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না।
আরেকজন ‘এলিট’ রয়েছেন এই শহরেই। যার আপন দাদা ছিলো একটি অঞ্চলের কুখ্যাত চোর। ঠিক চোর নয়, চোরের সর্দারই বলা যায়। এসব এখন নাম-ঠিকানাসহ লিখলে আমি খুন হয়ে যেতে পারি। এমনকি তার আরও কয়েক আত্মীয়েরও পেশাই ছিলো চুরিবিদ্যা।
আমার এক বন্ধু অনেকদিন পরই বাংলাদেশে ফিরেছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস শহর থেকে। তাকে বললাম, ও দেশে ভিক্ষুক রয়েছে কেমন?
সে বললো, অনেক। তাকে বললাম, ‘দৈনিক প্রথম আলো’র 21 এপ্রিল 2006 সংখ্যার একটি খবর থেকে জানতে পারি, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস শহরে গৃহহীনের সংখ্যা 90 হাজার। ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার সুযোগ রয়েছে মাত্র 10 হাজার লোকের। কথাটি কি ঠিক? বন্ধুটি বলে, আমার মনে হয় গৃহহীনের সংখ্যা আরও বেশি হবে। অথচ দেখুন, আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র কতো উঁচুমার্গের দেশ ।
আসলে অনেক ‘শালা’ই সত্য তথ্য লুকোতে চায়, লুকোতে চায় নিজের প্রকৃত কিংবা পূর্ব পরিচয়। আমার এক দূর সম্পর্কের ‘মামা’ পানি উন্নয়ণ বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। কী বালের ইঞ্জিনিয়ার! শিক্ষিত চোর। এমন চুরিই করেছিলেন যে, সেই চুরির টাকায় কুমিল্লা ও ঢাকা শহরে কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন । অথচ হায়! সরকারের দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানে তিনি একবারও আটক হননি। এমনই ‘যাদুবিদ্যা’ শিখেছেন তিনি। অথচ তার ছাত্রজীবনে তিনি কতো না গরীব ছিলেন। অবশ্য সরকারী চোর হওয়ার পর এলাকায় তার খুব দামও বেড়ে যায়। আসলে এ কাল যেন চোরেরই কাল।
1999 সালে কুমিল্লার গোমতি নদী ভাঙ্গনের সময় আমি অনেকবারই পানি উন্নয়ণ বোর্ড, কুমিল্লা অফিসে গিয়েছিলাম। তখন প্রতিদিনই বারবার ফোনও করতাম গোমতি নদীর ‘পানির স্কেল’ জানার জন্য। তারপর দেখি কিছু অবাক কান্ড...যা এখন আর বলতে চাই না। কারণ বলে আমি আসলে তা হজমও করতে পারবো না। আমি তো সন্নাসী নই। এখন আবার সন্তানও রয়েছে।
আসলে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস-দুর্যোগ হলে কিছু কিছু ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে কামাইও বেড়ে যায়। যেমন ‘খাদ্য বিভাগ এবং ...’। মানুষের দুর্ভোগকে কেন্দ্র করে যারা ‘বাড়তি ইনকাম’-এর দুঃস্বপ্ন দেখে, তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কতো ঝুঁকি বাড়ে...তা তো অনেকেই জানেন।
একবার, সম্ভবত 2005 সালের ডিসেম্বরে, যতীন্দ্র মোহন গোস্বামীর কথা শুনছিলাম, কুমিল্লার চান্দিনার রামমোহনের যতীন্দ্র বাবু। শিক্ষক মানুষ। তার মেয়ে রত্না গোস্বামীর আমন্ত্রনে গিয়েছিলাম তার বাড়িতে। তিনি একদা জেলা ন্যাপের সদস্যও ছিলেন।
তিনি বলেন, আমি এক অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলাম বলে আমাকে কুমিল্লার বরুড়ার খোশবাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দাউদকান্দি উপজেলার রঘুনাথপুরে 8 থেকে 10 বার বদলি করা হয়। তিনিই একবার আমাকে তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক গোপন কথা বলেন। তার মধ্যে একটি কথা এ রকম, ভারত যে গঙ্গা নদীতে তার প্রকৌশলীদের দিয়ে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করেছে, তার মাশুল দেয় বাংলাদেশের প্রকৃতি আর এখানকার হিন্দুরা। ভারত গঙ্গা নদীর মূল ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর নেমে আসা সরব-নীরব নির্যাতনকে প্রতিরোধ করতে পারে না। বড় বেশি বিষন্ন মনে তিনি আমাকে এসব কথা বলেন। কেন যতীন্দ্র বাবু আমাকে এমন সব কথা বললেন? যতীন্দ্রবাবুর মেয়ে রত্না গোস্বামী বলেন, বাবা এভাবে বেফাঁস কথা বলে জীবনে অনেক বিপদে পড়েছেন। তবু বাবার অভ্যাস বদল হলো না। আসলে যতীন্দ্রমোহন্ গোস্বামী কি কথাগুলো মিথ্যে বানিয়ে বলেছিলেন? যতীন্দ্র গোস্বামীর নিজের মুখ যেমন তার শত্রু, তেমনি আমার নিজের লেখাও আমার শত্রু। আমার আর্থিক অবস্থান যদি একটু শক্ত হয়, তাহলেই শুরু করবো আমার সেসব আত্মঘাতী বেফাঁস যত লেখা প্রকাশের কাজ। গতানুগতিক কোনো ‘রিপোর্ট’ ফর্মে নয়, অনেক ফর্মেই ওঠে আসবে সেসব লেখাগুলো। আমার সেসব লেখাই হয়তো একদিন আমার মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে যাবে। তবে সেসব লেখায় আমি আমাকেও কোনো ছাড় দেবো না কখনোই। এমনকি আমার যে কী পরিমাণ নারীপ্রীতি ছিলো, তাও প্রকাশ করে দেবো। এই প্রতিজ্ঞা পাঠকের কাছে রইলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.