নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেয়ের রূপকথার সঙ্গে ছিল দারুণতর মিল

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮


কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে 2002 সালের দিকে পড়তো একটি মেয়ে। সমাজকল্যাণ বিষয়ে।
সে থাকতো কুমিল্লা শহরের মৃণালিনী দত্ত হোস্টেলে। আর তাঁর বাড়ি ছিলো হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের সাতবর্গ গ্রামে।
তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল কুমিল্লায়। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কুমিল্লা সংসদের গণসংগীতের একটি মহড়াকালীন সময়ে।
সেই মেয়েটির নাম ছিলো মুক্তা রায়। মধুর সুরে গান গাইতে পারতো।
তবে সে কুমিল্লা জেলা উদীচী-র কোনো সংগীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতো না।

মুক্তা রায় প্রায়ই বলতো, দাদা, ‘উদীচী’ হলো কৃষ্ণচূড়া ফুল। গাঢ়তর লাল। গণসংগীত তো সবুজ-শ্যামল হয় খুব কমই। অধিকাংশই রক্তের মতো লাল। এই রক্তাক্ত গানগুলো আমার কণ্ঠে তেমন উঠে না।
আমি মূলত একজন সংবাদ ও সাহিত্যকর্মী। ছাত্রজীবনে বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম। কিন্তু আমার প্রায়ই মনে হতো সাহিত্য মাধ্যম সংগীত মাধ্যমের মতো অত সহজে গণমানুষের কাছে যায় না।
তাই প্রায়ই আমি সংগীতের চর্চা শুরু করতাম। কিন্তু সেই চর্চা আমার কখনোই নিয়মিত ছিলো না।

আমি তখন [2001-2003] কুমিল্লার ‘দৈনিক শিরোনাম’ পত্রিকায় ‘রিপোর্টার কাম ফটোগ্রাফার’ পদে চাকুরি করতাম। সেই পত্রিকার অফিসে প্রায়ই আসতো মুক্তা রায়। রাজনীতির কথা বললেই বলতো, দাদা-রাজনীতি হলো সংগঠনভিত্তিক। একা একা রাজনীতি করা যায় না। কিন্তু আমি সংগঠন করার মতো যোগ্যতা রাখিনা। তাই কোনো পার্টি করার কথাও ভাবি না। তবে রাজনৈতিক চেতনা আমি লালন করি এবং তা অবশ্যই সুস্থ রাজনৈতিক চেতনা। তাই আপনাকেও বলছি, এই যে আপনি রাজনীতি করেন, যদি অর্থের লোভ, নারীর লোভ কিংবা ক্ষমতার লোভ মন থেকে বিসর্জন দিতে না পারেন, তাহলে রাজনীতি করার কোনো যোগ্যতা বা কারণই নেই আপনার।

আমার চেয়ে বয়স অনেক অল্প হলেও মুক্তা রায়ের বোধশক্তি ছিল তীব্র। সমালোচনা করতে পারতো চোখের সামনেই। এতে বিন্দুমাত্রও সে সংকোচবোধ করতো না। পেছনে মন্দ বলার চেয়ে সামনাসামনি সত্য বলার তীব্র সাহস ছিলো তার।
মনোবল ছিল দৃঢ়। তার চোখের ভিতরের গোল অংশ দু’টো ছিলো ঠিক যেন প্রতিমার মতোই। দুর্গা প্রতিমার মতো। এ কথা তাকে আমি অনেকবারই সরাসরি বলেছি মুক্তা রায়কে।

কিন্তু মুক্তা রায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটি ঠিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো না। কারণ সে সর্বদা ‘দাদা’ বলেই ডাকতো আমাকে এবং শ্রদ্ধাও করতো ওই সে রকমই।
তার অনেক বান্ধবী লেখালেখি করলেও মুক্তা রায় কখনোই সে রকম লেখালেখিও করতো না। তারপরও উদীচী-র কোনো কোনো কর্মকান্ডে সে আমাদের সহযোগিতাও করতো। সে সময়ে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সে আমাকে কয়েকটি লেখাও লিখেছিলো। তার সব লেখার মধ্যে ঠিক এই লেখাটিই আমার কাছে তার সর্বাপেক্ষা মানসম্পন্ন লেখা বলে মনে হয়েছে।
আরও মনে হয়েছে, লিখলে তার দ্বারা ভালো ফলাফল পাওয়া নিশ্চিত সম্ভব ছিলো। তারপরও সে বলতো, লেখালেখির প্রতিভা তার নেই এবং আসলেও সে তেমন কোনো লেখালেখি করতো না। কবিতাসহ কিছু লেখালেখি করতো তাঁর বান্ধবী স্নিগ্ধা রায়।
তবে মুক্তা রায়ের ছোট্ট ছোট্ট কিছু লেখায় গণমানুষের মুক্তির বাসনা আমি দেখেছি, যা অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকের লেখাতেও আজকাল থাকে না। অথচ আমি মনে করি, লেখাতে লেখকের গণমুক্তির দায় নেয়াও উচিৎ। আমার কাছে সংরক্ষিত মুক্তা রায়ের সেই লেখাটি নিচে উপস্থাপন করা হলো:

‘‘একজন ভ্রমণ প্রিয় মানুষ,
ধূমপান না করা তরুণ,
কমিউনিষ্ট ফটো সাংবাদিক দাদা,
আগেই বলেছি, আমি আশা করবো লক্ষ্য অর্জনের অভিপ্রায়ে অনুপ্রাণিত থাকবেন। আমি সত্যিই খুব খুশি, অপারেশন সাকসেসফুল। শোষিতের অধিকার আদায় করা, অত্যাচারীর কালো হাত ভেঙ্গে দেওয়া, ঐক্যবদ্ধ হওয়া...আমাদের লাখো মানুষের সন্তানের স্বীকৃতি চাই।
তখন আমি ছোট, দুরন্ত কৈশোর। দিনের পর দিন...। আমি আজ বড় হয়েছি। অশান্ত মন।
ফুটপাথে সার বেঁধে ঘুমানো রেলস্টেশনের ভাসমান মানুষ, চব্বিশ ঘন্টা রোগীর মতোই। কি করবো! দু:সহ জীবন। আমাদের জীবন... কুকুরের জীবন। উপার্জন খাত নির্দিষ্ট...ব্যয় খাতের সীমা নেই। জীবন ‎‎‎‎হুমকির মুখে। জামায়াত শিবিরের রাজনীতি জাতির মেরুদন্ড?
অবস্থা ভাল যাচ্ছেনা। নিরন্তর জ্বালা। ঘুমবিহীন...একা বসে থাকা...। নীতিহীন-আদর্শহীন শিক্ষক শিরোমনিরাই এখন শিরদাঁড়াহীন...দুই নম্বরি শিক্ষাদান করে থাকে।
কি লিখবো। শব্দহীন মুখ। আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ...।
একসময় কুমিল্লাই ছিল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী। ফুলের বাগান। কুমিল্লা আজ নিজেই অসুস্থ। প্রশ্নের মুখোমুখি। অতৃপ্ত বছরের পর বছর। পিছন ফিরা...কেউ ফিরে দেখেনা। আকাশ ছোঁয়া চক্ষুলজ্জাহীন মাফিয়া চক্র ক্ষমতাবান। বৃথা পরিশ্রম। কেঁদে দিয়েছি। ভেসে যাওয়া হয়নি।
মনের কথা জানা: শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার মাঝে পেয়েছি উন্নত জীবনের সন্ধান, আত্মপ্রকাশ।
নিবেদক:
মেয়ের রূপকথার সঙ্গে দারুণ মিল।
অত্যন্ত বিশ্বস্ত
...নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক...
আবার আসিব ফিরে। ’’

এই লেখায় মুক্তা রায়ের অনেক লেখনী-দক্ষতা ফুটে উঠেছে। লেখার প্রথমেই সে লিখেছে ‘আমি সত্যিই খুব খুশি...অপারেশন সাকসেসফুল।’ এ কথা দিয়ে সে কুমিল্লা উদীচী-র গণমুখি লিফলেট প্রচারের বিষয়টি বুঝিয়েছিলো। তখন সুরভী দে সরকার ও অন্যান্য আরও অনেকেই এই লিফলেট প্রচার করে আমাদের সংগঠনকে সহায়তা করতো। আমি যখন কুমিল্লায় ‘উদীচী’ করেছি, তখন [2002-2003] কুমিল্লা উদীচী-তে অভ্যন্তরীন বিরোধ ছিলো। তাই লিফলেট প্রচারে কিছু ঝুঁকিও ছিলো। কিন্তু মুক্তা রায় আরও অনেকের সঙ্গে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে সাহসের সঙ্গেই কুমিল্লা উদীচী প্রকাশিত ও গণঅধিকার সংরক্ষিত লিফলেট বিতরণ করেছিলো। বিনিময়ে এককাপ চা-ও তাকে খাওয়ানো যায়নি কোনোদিনও। কারণ বিনিময় নিয়ে গণমানুষের জন্য কাজ করার শিক্ষা সে তার পরিবার থেকেই কক্ষনোই পায়নি।
তার পরিবারের সাংস্কৃতিক ভিত্তিও ছিলো দৃঢ়। প্রতিটি কাজেই, প্রতিটি কথাতেই সে তার স্বাক্ষর রাখতো। আমি মনে করি সত্যি সত্যিই এ মেয়ের রূপকথার সঙ্গে ছিলো দারুণতর মিল। কারণ, বাস্তবে আজকাল অনেক মেয়েই লোভী হয়...দেশ সমাজের আলাপে আড্ডায় তারা শরীক হতেই চায় না। সেদিক থেকে মুক্তা রায় ছিলো একেবারেই ব্যতিক্রম।
তাই বয়সে আমার চেয়ে অনেক অনেক ছোট হওয়ার পরও শুধু স্নেহই নয়, রীতিমত শ্রদ্ধা করতাম তাকে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

খেলাঘর বলেছেন:


কি লিখলেন, কেন লিখলেন?

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৬

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই, আমার মনে হয় আজকাল যেমন অনেকেই বলেন, ‘মেয়েরা টাকা-পয়সা ছাড়া আর কিছুই চিনে না’ , সেই আপত্তিকর অভিযোগের জবাবে মনে হয় এ মেয়ের কথা লিখতে ইচ্ছে হলো। কারণ যে দেশটাকে প্রাণভরে ভালোবাসতো। তরুণী বয়সেও সে বাণিজ্যিক স্রোতে তার মন ভাসায়নি। সে যেখানেই থাকুক, আমার বিশ্বাস, দেশের কাজে নিশ্চয়ই কোনো না কোনোভাবে নিবেদিত রয়েছে। ভিন্ন কিছু মনে হলে পরামর্শ মাথা পেতে নেব। মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০১

বালিকাবধু বলেছেন: "তুমি যে আমার প্রেমের বেদনা"!!!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৮

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই, তার সঙ্গে আমার কোনো প্রেম ছিলো না। তবে মনে হচ্ছে লেখার সঙ্গে তার এ ছবিটি অপ্রাসঙ্গিক হয়েছে। কিন্তু আমি ছবিটি ডিলেট করতে পারছি না। তাছাড়া এখন চলে যাচ্ছি অন্য কাজে। হয়তো আগামীকাল আবার ‘সামু-তে আসা হবে। তারপরও অনেকের মতামতে হয়তো এমন পোস্টের দোষগুণ নির্ণয় করতে পারবো। হয়তো এটা এক ধরনের পরীক্ষানির্ভর পোস্ট হতে পারে। আপনাদের মিলিত মতামতে আমি হয়তো শেষ যুক্তিটা খুঁজে পাবো। যদি এমন পোস্ট বিবেকসম্মত না হয়, তা হলে আমি সত্যি দুঃখিত। মতামতের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩১

বালিকাবধু বলেছেন: ছবিটি ডিলেট করা ঠিক হবে না!

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৫

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই , ভালো থাকবেন। চিরকাল। এই কামনা করছি। মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৪

খেলাঘর বলেছেন:


ঠিক আছে।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই খেলাঘর, যখন আপনি লিখলেন, ‘কি লিখলেন কেন লিখলেন’ , তখন আমার বুকের ভিতরটা ধক করের উঠলো। একজন লেখক কিংবা ব্লগার হিসেবে চরম দায়িত্বহীনতা, অযোগ্যতা এবং পরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি, বুঝতে পারলাম। এটি কোনো পোস্টই হতে পারে না। একান্ত ব্যক্তিগত দিনলিপি-র অংশ এটি। তাই ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম।আপনাদের সহনশীল মতামতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পেলাম। ভালো থাকবেন।

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২৯

দীপংকর চন্দ বলেছেন: শুভকামনা জানবেন ভাই। অনিঃশেষ।

ভালো থাকবেন। সবসময়।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫২

জসীম অসীম বলেছেন: ভাই, এটি কোনো পোস্টই হতে পারে না। একান্ত ব্যক্তিগত দিনলিপি-র অংশ এটি। তাই ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আপনাদের সহনশীল মতামতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পেলাম। ভালো থাকবেন। চিরকাল। এই কামনা করছি। মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ। অশেষ কৃতজ্ঞতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.